“মঈন ডাক্তারের মতো ডাক্তার হয় না!” কথাটা বলেই একগাল হাসলেন নাইমুল সাহেব।
“গরুদের চিকিৎসা করেন যিনি সেই মঈন ডাক্তার? সেই বিখ্যাত মঈন ডাক্তার? তার কথাই বলছেন?” জিজ্ঞাসা করি আমি।
বেশীরভাগ সময়ই তিনি আমার কথা শুনে ব্যাজার হবেন নাকি খুশী হয়ে উঠবেন তা ঠাউরে উঠতে পারেন না। এবারেও তাই তার ধার দিয়ে গেলেন না।
“নাহ্!” বলে হাঁফ ছেড়ে ধপ করে একটা চেয়ারের উপর বসলেন নাইমুল সাহেব – “আমি কি গরু যে আমার গরুর ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হবে? বলছিলাম উত্তরা ৫ নম্বরের মঈন ডাক্তারের কথা। যেনতেন লোক নন তিনি। আর্মির ডাক্তার, জাঁদরেল লোক – কেবলমাত্র রোগী দেখেই, কোন টেষ্ট – ফেষ্ট না করেই বলে দিতে পারেন কি রোগ হয়েছে! ”
“সে ত আমিও বলতে পারি! যেমন ধরুন – আপনার এই মুহুর্তে পেছন দিকটায় ব্যথা করছে।”
“আরে! আপনি কিভাবে জানলেন? আপনি কি ডাক্তার?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন নাইমুল সাহেব।
“যেভাবে ধপ করে চেয়ারের উপর বসলেন তাতে করে চেয়ার নিজেই ব্যথা পেয়েছে। আপনার পশ্চাতেও যে ব্যথা হবে সেটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।”
“আপনি মশাই খালি বাজে বকেন।” বিরক্ত হয়ে বললেন নাইমুল সাহেব : “গতকাল রাত থেকেই পেছন দিকটায় কেমন ব্যথা হচ্ছে। ভাবছি বিকেলের দিকে একবার মঈন ডাক্তারের ওখানে ঢু মারবো।”
আমি বললাম “সাবধানে থাকবেন। আর্মির লোকেরা সাধারনত ভালো হয় না। সুযোগ পেলেই দেখবেন আপনার পশ্চাৎদেশে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে!”
“আপনি মশাই বাজে বকায় ওস্তাদ! আপনার মতো লোকেরা দেশ চালাচ্ছে দেখেই দেশের এই হতচ্ছাড়া ভাব। মঈন ডাক্তারের মত আর্মিরা দেশ চালালে আর দেখতে হত না। দেখতে না দেখতেই দেশ তীব্র বেগে এগিয়ে যেত! কতবড় অফিসার অথচ উপাধি কিনা জেনারেল! যার অর্থ সাধারণ! ”
আমি একটুও না ঘাবড়ে বললাম, “তা যা বলেছেন! আর দেখতে হত না! তীব্র বেগে এগোতে গিয়ে তাল সামলাতে না পেরে উল্টে পড়তো।”
রাতের খাবারের দাওয়াত। এ কারনে সারাদিন কিছু খেলাম না আর। পেট ঠিকমত চাগিয়ে না উঠলে খাবার বাগিয়ে আরাম পাওয়া যায় না। বিকেল হতে না হতেই সেজেগুজে বগলে একটা ছাতা গুঁজে গুজগুজ করতে করতে নাইমুল সাহেবের বাড়ীর পথ ধরলাম। কথায় আছে না – খাবারের আগে আর মারের পরে থাকতে হয়। এই আপ্তবাক্য মাথায় রেখেই পেটের সাথে সাথে মাথাও উত্তপ্ত হয়ে উঠার আগেই তাই যাত্রা করা।
সদর দরজা খুলেছিলেন নাইমুল সাহেব নিজেই। আমাকে দেখেই তিনি খুশী হয়ে উঠলেন। “আরে আপনি দেখি রান্নার আগেই চলে এলেন! আপনার এই পেট নিয়ে পাড়াপাড়ি – এই পেটুকপনা আর গেল না দেখছি।” হাসতে হাসতে বললেন তিনি।
আমি সাধারণত আমার পরিচিত মানুষজনের কটুবাক্য গায়ে মাখি না। আমি জানি-বিনে পয়সায় খাবার খেতে গেলে উপরি হিসাবে কিছু কটুবাক্য আচার হিসাবে কপালে জোটে। তাই তার কথার প্রত্ত্যুত্তরে না গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “মঈন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন বুঝি? তা ডাক্তার কি বললেন? রোগ ধরতে পেরেছেন?”
নাইমুল সাহেব বললেন, “আরে মশাই আর বলবেন না। মঈন ডাক্তারের উপাধি জেনারেল হলে কি হবে! রোগ ধরার বেলায় তিনি অসাধারণ!”
আমি রান্নাঘরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বাড়তি আগ্রহ দেখিয়ে বললাম, “খুলে বলুনতো ঘটনা কি? ডাক্তার কি বলেছেন? আপনার রোগের কদ্দুর কি করলেন?”
তখনো খাবার আসতে খানিক সময় দেরী আছে। ইত্যবসরে চাগিয়ে ওঠা ক্ষিধেটা চাপিয়ে রাখার জন্য – বা আরেকটু চাগিয়ে দেবার জন্য এই চাপাচাপি।
নাইমুল সাহেব মন খারাপ করে বললেন, “আর বলবেন না ব্যথাটা পেছন দিক থেকে কি করে যেন মাথায় গিয়ে উঠেছে!”
আমি অবাক হই, কিন্তু কিছু বলি না। তাকে মন খুলে কথা বলবার অবকাশ দিই। নাইমুল সাহেব বলতে থাকেন।
“মঈন ডাক্তারকে সবকিছু খুলে বলার পর তিনি একটা প্লাস্টিক গ্লাভ পরে বললেন –“ খুলুন!”
“জ্বি? সবকিছুইতো খুলে বললাম। আবার নতুন করে কি খুলবো?”
ডাক্তার সাহবে খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, “প্যান্ট খুলুন। দেখতে হবে না কি হয়েছে? নিন, প্যান্ট খুলে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন ওখানে।”
লজ্জার মাথা খেয়ে – তার নিজের মাথা নীচু করে অধোবদনে শুয়ে পড়লেন নাইমুল সাহেব। মঈন ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলেন, “জনাবের কি ধুমপান করার অভ্যাস আছে?”
নাইমুল সাহেব বললেন, “জ্বি ধুমপান করি। কিন্তু এখনতো করছি না। তাহলে বুঝলেন কি করে? ধোঁয়া বের হচ্ছে বুঝি!”
“নাহ্! এই মুহুর্তে বের হচ্ছে না। তবে যখন ধুমপান করেন তখন মনে হয় বের হয়। চারপাশটা কেমন কালচে মেরে গেছে দেখছি।” পেছনে হাত দিয়ে কি যেন খোঁজাখুঁজি করতে করতে বললেন ডাক্তার সাহেব।
তিনি নাইমুল সাহেবের পশ্চাৎদেশে খানিকটা আঙুল ঢুকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “ব্যথা লাগছে?”
নাইমুল সাহেব না – বোধক ভঙ্গি করলেন। ডাক্তার সাহেব তার আঙুলটা আরেকটু ঢুকিয়ে আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, “এবার ব্যথা করছে?”
নাইমুল সাহেব বললেন, “আরেকটু উপরে, আরেকটু ভেতরের দিকে।”
মঈন ডাক্তার তার হাতের প্রায় কনুই পর্যন্ত ভেতরে ঢুকিয়ে একটা জায়গায় টিপ দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানটায় ব্যথা করছে?”
টিপ দেবার সাথে সাথেই নাইমুল সাহেব তীব্র আর্তনাদ করে বললেন “উরে বাবারে! ডাক্তার সাহেব – দয়া করে আস্তে টিপুন। সাংঘাতিক ব্যথা লাগছে!”
রোগ ধরতে পেরে মঈন ডাক্তার খুশী হয়ে উঠলেন। হাত বের করে নিতে নিতে বললেন, “হুম! আপনার টনসিল ফুলেছে। এই অষুধ কটা লিখে দিচ্ছি। নিয়মিত খাবেন – টনসিল ফোলা সেরে যাবে।”
নাইমুল সাহেব আমাকে বললেন, “দেখলেন মশাই! কোন টেষ্ট – ফেষ্ট করতে না দিয়েই কত সহজে রোগ চিকিৎসা করেন আর্মির ডাক্তারেরা! এদের দিয়ে দেশ চালাতে পারলে আর দেখতে হত না। ধাই ধাই করে উন্নতির সিঁড়ি টপকানো যেত অনায়াসেই।”
আমি দ্বিরুক্তি না করে বললাম, “পুচ্ছদেশ হোক আর বাংলাদেশ হোক। আর্মির লোকেরা পোদে আঙুল না দিয়ে কিছু করতে পারে না।”
নাইমুল সাহেবের মুখে দেখে মনে হল তিনি খুশী হবেন নাকি ব্যাজার হবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
মন্তব্য
হোহ হোহ হোহ!! জটিল!! দুঃখের মধ্যেও হাসলাম খুব এই গল্প পড়ে।
বটে?
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...
ও বাজী হাইসতে হাইসতে হেট বিষ ।
হাহাহাহাহাহাহা...হিহিহিহিহিহি...হোহোহোহোহো...মুহাহাহাহাহাহা...
দৃশা
আফা
বেশি হাইসেন না। হেট বিষের লগে লগে টনসিলও হুলি যাইতে হারে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
খাইছে...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
অসাধারণ জট্টিল হইছে কমরেড !
ফাটাফাটি ধরণের ঝাক্কাস মজা পাইলাম।
-------------------------------------------------
'অত্তাহি অত্তনো নাথো, কোহিনাথো পরোসিয়া'
নিজেই নিজের প্রভু, অন্য কোন প্রভুর প্রয়োজন নাই।
ব্যাপার না, কমরেড! আমরা আমরাই তো!!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
ভয়ংকর ব্যাপার !
আপনে মিয়া এতো ভালো লেখেন আর হুদাহুদি ট্রলিং করেছেন এদ্দিন,কাজটা কি ঠিক হইলো?
গুরু
বিদেশের মাটিতে পাসপোর্ট হারাইলে এমনই হয়!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না! :-|
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমি বাকরুদ্ধ।
হাঁটুপানির জলদস্যু
কেন? টনসিল ফুলেছে নাকি?
কি মাঝি? ডরাইলা?
আমিও বাক হারাইলাম।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
আমি বাক হারাইলাম, মানে কিন্তু, আমি কোন মন্তব্য করি নাই এই পোস্টে।
আমি সজ্ঞানে বলিতেছি যে, এই স্থানে মানী ব্যক্তিবর্গের সম্মানহানির সূক্ষ্ম চেষ্টা করা হইসে এবং আমি তাতে শামিল হই নাই।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
সৌরভ,
উহু মানী ব্যক্তিদের মান ধরে টানাটানি করার ক্ষমতা আমার নাই। আমি শুধু "ঈ" আর "ই" নিয়ে টানাটানি করেছি।
কি মাঝি? ডরাইলা?
জব্বর হইছে
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
তা ইয়ে মানে, দ্রুহী ভাইয়ের টনসিল কি ভাল হইসিল শেষ পর্যন্ত ?
______ ____________________
suspended animation...
আঙুলের কথা মনে পড়া মাত্রই টনসিল সেরে গিয়েছিলো।
কি মাঝি? ডরাইলা?
সর্বনাশ!
কার? আমার না নাইমুল সাহেবের?
কি মাঝি? ডরাইলা?
পাসপোর্ট পাইছেন?
আজ বিকালেই নতুন পাসপোর্ট পাইলাম। আগামী হপ্তায় আই-৯৪ অ্যাপ্লাই করতে হবে।
আমি গবেট সব ইমিগ্রেশন ডকুমেন্টগুলো ভুল করে ব্যাগে দিয়ে দিছিলাম।
কি মাঝি? ডরাইলা?
বেস্ট অফ লাক!
ধন্যবাদ।
কি মাঝি? ডরাইলা?
ভয়াবহ।
- আমি চিন্তা করি ডাক্তার সাবের হাত কত্ত লম্বা দেখছেন নি। এক্কেবারে টনসিল পর্যন্ত...
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন