বেঁচে থাকতে হলেই খেতে হয়। আর খাওয়ার জন্যই বাজারে যাওয়া। ইংরেজী না জানার কারণে খাবারের বদলে খাবি খেতে হবে তা কে ভাবতে পেরেছিল?
দেশে থাকাকালীন সময়ে ‘ইয়েস’, ‘নো’, ‘ভেরি গুড’, ‘থ্যাঙ্কিউ’ – এই চারটা শব্দ সম্বল করে ভালভাবেই পড়ে ছিলাম। “পড়ে তো আছই বাপু! আবার নতুন করে পড়ার জন্য আমেরিকায় আসতে হবে কেন?” –বন্ধু-বান্ধবের সাফ কথা।
আমেরিকায় আসার প্রস্তুতি হিসাবে নীলক্ষেত থেকে নীল মলাটের “একুশ দিনে ইংরেজী শিখুন ” বইটি কিনে এনে পড়তে শুরু করে দিলাম।
বন্ধুবান্ধবের অমানবিক ব্যবহার সইতে না পেরে একদিন বিমানে চড়ে বসলাম আমেরিকায় চলে আসার জন্য। সেইদিন থেকে – ঠিক সেই মূহুর্ত থেকে আমার ইংরেজিতে কথা বলার সূচনা।
বিমানে বসে বসে বিরক্ত হবার দশা, বেশ ক্ষুধাও পেয়েছে – এমন সময় পীনোন্নতপয়োধরের মালকিন এক সুবেশী এসে বললো, “মে আই হেল্প ইউ স্যার? ডু য়্যু ওয়ান্ট টু ইট সামথিং!”
আমি যাকে বলে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। চেহারা দেখে না – আমার ক্ষুধা পেয়েছে বুঝতে পারলো কীভাবে সেটা চিন্তা করে! অবাক হয়ে গেলে আমার পেটে বোমা মেরেও একটা ইংরেজি শব্দ বের করা যায় না।
“আই ইট রাইস!” এই একটা বাক্য ছোটবেলায় এতবার শিখেছি যে একেবারে দাড়ি – কমা সহ মুখস্থ হয়ে গেছে! তাই কথাটা বলতে খুব একটা চিন্তা করতে হল না।
পীনোন্নতপয়োধরা কী বুঝল জানি না – তাকিয়ে দেখলাম আপনমনে মাথা নাড়তে নাড়তে বিমানের পেছন দিকটায় চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে তার কাণ্ড দেখে হতবাক হয়ে গেলাম! আমি একা ভাত খেতে চাইলাম, আর সে কী না সবাইকে ভাত দিচ্ছে! একুশ দিনে ইংরেজী শিক্ষার মাহাত্ম্য টের পেতে শুরু করলাম তক্ষুণি।
আমেরিকায় পৌঁছে এক পরিচিত বাংলাদেশী পরিবারের ঘাড় ভেঙে খেতে শুরু করলাম। তারা তিনদিনের মাথায় আমাকে ঘাড় থেকে নামিয়ে দিলো – একটা বাসা ভাড়া করে মালপত্রসহ নামিয়ে দিয়ে এল। শুরু হল নতুন জীবন।
যাদের জীবন আছে, তাদেরকেই জীব বলা হয়। আর জীব মাত্রেরই ক্ষুধা পায়। প্রাকৃতিক নিয়মেই আমারও ক্ষুধা লাগতে শুরু করলো। আমিও তাই ঠিক করলাম বাজার করে আসা যাক। বাসা থেকে বের হয়ে কিছুদূর এগিয়ে দেখি একটা "চমৎকার বাজার"। “সুপারমার্কেট” শব্দটির মানে তাই হবার কথা নয় কি?
সুপারমার্কেট দেখি আসলেই সুপার! ভেতরে সারি সারি করা তাকে বোঝাই জিনিসপত্র। এত তাক দেখে আমার নিজের তাক লেগে গেল! মোরগ কোথায় পাওয়া যায় সেটা আর তাক করে উঠতে পারলাম না। উপায়ন্তর না দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম কাউকে জিজ্ঞাসা করবো। ইংরেজিতে কথাটা কীভাবে বলব তা ঠিক করতে করতে একজন লোক খুঁজে বের করলাম। যে মানুষটার কাছে গেলাম তাকে দেখেই মনে বিস্ময় জেগে উঠলো – লম্বায় আমি তার কোমর সমান!
“হোয়্যার ক্যান আই গেট আ কক? আই অ্যাম হাংগ্রি। আই হ্যাভ টু ইট আ হোল কক টুনাইট।” একবাক্যে কথা কটা বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।
লোকটা আমার কথা শুনে হেসে ফেললো, তারপর তার দুপায়ের ফাঁকের দিকে আঙুল তাক করে বললো, “রাইট হিয়ার স্যার! বাট ইউ ক্যান্ট বাই ইট – ইটস্ নট ফর সেল!”
আমার বিস্ময়ের পারদ আরও উঁচুতে উঠলো। অবাক হয়ে ভাবলাম – কি আজব দেশ এই আমেরিকা! দুপায়ের ফাঁকে দিব্যি একটা মোরগ গুঁজে নিয়ে অবলীলায় ঘুরে বেড়ায় মানুষজন। যতই ভাবি আর অবাক হবার মাত্রা বাড়তে থাকে।
“আই ডোন্ট ওয়ান্ট ইউর কক স্যার। আই ওয়ান্ট এ ফ্রোজেন কক! ” লোকটাকে আশ্বস্ত করার জন্যই বললাম। দুপায়ের ফাঁকে রাখা মোরগ খেতে খুব একটা ইচ্ছা করছিল না।
লোকটা আমার দিকে না-বোধক দৃষ্টি হেনে কটাক্ষ করে বললো, “আই অ্যাম সো সরি স্যার। উই ডোন্ট সেল অ্যানি ফ্রোজেন কক হিয়ার।”
“ইন দ্যাট কেস, আই উইল টেক দ্যা ফ্রেশ কক দ্যাট ইউ কেপ্ট ইন বিট্যুইন ইউর লেগস।” অনন্যোপায় হয়ে বললাম আমি।
“স্যরি স্যার। দিস কক ইজ নট ফর ইউ। ইউ বেটার গো অ্যান্ড টক টু আওয়ার ম্যানেজার।” লোকটা হাসতে হাসতে বিষম খেতে খেতে বললো।
কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না। আমি খেতে পাই না আর সে বিষম খাচ্ছে – ব্যাপারটা সহ্য হল না আমার। হঠাৎ করেই চটে উঠলাম – চটেমটে চটিজোড়া চটচটিয়ে ম্যানেজারের কাছে গিয়ে বললাম, “স্যার, আই ওয়ান্ট টু বাই আ কক ফ্রম দ্যাট পারসন। বাট লুকস লাইক হি ডাজন্ট ওয়ান্ট টু সেল হিজ কক।”
আমার কথা শুনে ম্যানেজার মহাশয় আকাশ থেকে ধপাস করে মাটির পৃথিবীতে নেমে এলেন। তিনি হাসতে হাসতে বললেন, “স্যার, উই ডোন্ট সেল অ্যানি কক। ইউ বেটার লিভ দিস প্লেস - আদারওয়াইজ আই উড হ্যাভ টু কল দ্যা ঠোলাজ।”
ম্যানেজারের কথা শুনে মেজাজ এত খারাপ হল আর বলার মত না। রেগেমেগে তক্ষুণি দোকান থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
সেইদিন থেকে, ঠিক সে মূহুর্ত থেকে আমি আর মোরগ খাই না।
মন্তব্য
উ-লা-লা-লা!!!
জাঝা ময় পোস্ট!
উ-লা লা বেইবি!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
মোরগের চেয়ে মুরগি ভালো। চিক!
চিক চিক করে বালি কোথা নাই কাদা
দুই ধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা
ঘরে বউ আছে আমার। চিক চিক করা একেবারে নিষিদ্ধ! চিকের টিকিটি ধরলেও নিজের চিক হারাবার ঝুঁকি এসে পড়ে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
"পুরুষ মানুষ দুই প্রকার; জীবিত - বিবাহিত!"
আপনার টিভিতে 'চিকচ্যানেল' দেখা যায়?
আমার টিভিতে ঝিরঝির ছাড়া কিচ্ছু দেখা যায় না। তবে বিনে পয়সায় নজরুল সংগীত শোনার ব্যবস্থা আছে আমার।
কি মাঝি? ডরাইলা?
ফ্রি নজরুল সংগীত? হিংসায় জ্বলে-পুড়ে যাই। রোজা রমজানের দিনে আবিয়াইত্যা পোলাপাইনের বদদোয়া নিয়েন না, মহোদয়!
ফ্রি! তবে আপাতত কড়ি ফেলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ফোনালাপে ফ্রি নজরুল সংগীতের ব্যবস্থা আছে।
ভাইরে দৌড়ের উপর আছি। নজরুল সংগীত শোনার সুযোগ হয় না।
কি মাঝি? ডরাইলা?
লালন মরলো জল পিপাসায় থাকতে - - -
হাসেন ভাই হাসেন। আপনাদেরই দিন।
আমার জন্য - Water Water everywhere!
But not a drop to drink!
কি মাঝি? ডরাইলা?
- নেক্সট টাইম গিয়া কইবেন হাঁস কিনুম। দেখুমনে হালায় হাঁসের পাত্তা কই দেখায়
হাঁস তো মুরগ না যে দুই পায়ের চিপায় লইয়া কক কক করবো!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এই কক কক না আরও কক আছে,
এই ককেরে নিব আমরা সেই ককেরো কাছে!
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...
আচ্ছা, আসলেই তো। মুরগারে ইংরাজিতে কি কমু?
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
হা হা হা হা......"হোয়্যার ক্যান আই গেট আ কক? আই অ্যাম হাংগ্রি। আই হ্যাভ টু ইট আ হোল কক টুনাইট।"......মাঝরাতে হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেলে যদি এই ডায়ালগ পড়তে হয়,তো ঘুম কি তার জায়গায় থাকে?......হা হা হা হা...good jokes!...যায় আবার ঘুমাতে! Thanks দ্রোহী ভাই...
ধন্যবাদ ধ্রুব হাসান ভাই।
আপনার হাসানোর কদ্দুর কি করলেন?
কি মাঝি? ডরাইলা?
হাসানোর কাজতো আমার নারে ভাই, জনস্বার্থে ব্রাকের কাম...thanks again
কঠিন
আমারে ১খান করুণ ঘটনা মনে করায়ে দিলেন।
আমি ১ ছেড়ির ধারে কোক চাইছিলাম হে আমারে কয়
কও কী?
জটিল গল্প টাইম পাইলে পোস্টাবোনে।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
ওহ দ্রোহী শেষ পর্যন্ত আপনে বাই-কিওরিয়াস নিকলা!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
দ্রোহী ভাই অন ফায়ার। প্রথমে টনসিল, এরপর "কক"। কই যাইয়া যে শেষ হয়।
______ ____________________
suspended animation...
হাসতেই আছি ,
কক কক কক
রুস্টার কইবেন মুরগ কিনবার চাইলে এর পর থেইকা,
চুকস কইলে মুরগী দিবো।
চিকস কওনের দরকার নাই , জান বাঁচাকি ফরজ কাম। ঘরে বউ থাকতে চিকস কিয়ের !!
হেব্বি মজা পাইছি, হেবি। অনেক দিন পর প্রান খুলে হাসলাম।
ছিঃ ছিঃ তুঝে লইজ্জাভি নেহি আতি...বেশরম বেগেরেত...অচলিল।
তোর ঘরমে ক্যায়া বাপ-ভাই নেহি হে অসভ্য ইতর লম্পট।তুম বেটালোগছে কক খুঁজতা হে?
দৃশা
আবে..এ
তুনে কেয়া কিয়া? সাব লোক তুঝকো বদ্দা কেহনে লাগা?
কিঁউ?
কি মাঝি? ডরাইলা?
জট্টিলস্! ওরে, মাঝি এবার সত্যই ডরাইসে!...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
আস্ত বিপ্লব রহমান,এমন কি চশমা আর গোফ শুদ্ধা।
হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
:) :) :) :) :)
কি মাঝি? ডরাইলা?
ছি ছি ছি ...।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ছি ছি? কেন? এইটাতো গল্প, সত্যি সত্যি কি আর ঘটেছে নাকি?
কি মাঝি? ডরাইলা?
ছি ছি ছি...
অচলিল হয়েছে।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
অচলিলতার কোন সংগা নাই।
কি মাঝি? ডরাইলা?
==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।
ভাগ্য ভালো বিশাল উচ্চতার লোকটা গে না। তাইলে তো হইছিলোই।
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
আস্ত বিপ্লব রহমান! কক শুদ্ধা।
-------------------------------------------------
'অত্তাহি অত্তনো নাথো, কোহিনাথো পরোসিয়া'
নিজেই নিজের প্রভু, অন্য কোন প্রভুর প্রয়োজন নাই।
হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ॥
কক কক কক কক কক কক॥
কি মাঝি? ডরাইলা?
সু-মারাত্মক!!
ছি !!!
তুমি এত খারাপ !!!!!!!!!
একটা কাম করলে ভালো লাগতো
একটা গল্প ছাড়ছিলাম সামনে আগানোর লাইগা কেউ দেখি আগাইতাছে না- আগায়া লও।
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
দারুণস্
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
দারুন।
নতুন মন্তব্য করুন