..কির পোলা! হারাম..! দরজা খোল! পড়ে গেল, পড়ে গেল! বাপ তোর পায়ে পড়ি, তাড়াতাড়ি বাহির হ!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ের কথা। দ্বিতীয় বর্ষের ফিল্ডওয়ার্ক করতে এসেছি রাঙামাটি। অন্তঃসারশূন্য ফিল্ডওয়ার্ককে সার পূর্ণ পিকনিক বলাই ভাল। শিক্ষকদের হাতে-কলমে শিক্ষাদানের ব্রতকে স্ব-উদ্যোগে পেটে-পায়খানায় পরিবর্তন করে ফেলার পদ্ধতিটা শিখে গেছি ততদিনে! আমাদের আসার খবরটা যথাযথ কতৃপক্ষের গোচরে আনার দায়িত্বটুকু দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ডাক বিভাগকে। করিতকর্মা ডাক বিভাগের করিতকর্মের ফল আমরা হাতেনাতে পেলাম রাঙামাটি পৌঁছানোর পর! যে চিঠি এক মাস আগে পৌঁছানোর কথা, সে চিঠি আসার আগেই আমরা এসে গেলাম রাঙামাটি! ফলাফল-থাকার জায়গার কোন বন্দোবস্ত নাই!
প্রতি বছর ফিল্ডে আসার আগে বিভিন্ন ধরনের কমিটি গঠন করা হয় কাজ ভাগ করে দেয়ার জন্য। ফুড কমিটি, ট্রান্সপোর্ট কমিটি, মেডিক্যাল কমিটি, ইত্যাদি । আমি সোৎসাহে "চাঁদ দেখা কমিটিতে" নাম লেখালাম! ফুড কমিটি খাদ্য জোগায়, ট্রান্সপোর্ট কমিটি যাতায়াত, মেডিক্যাল দেয় ঔষধ, আর চাঁদ দেখা কমিটি জোগায় আশেপাশের তাবৎ সুন্দরীদের খোঁজ!
কমিটির সদস্যরা খেটেখুটে একটা থাকার জায়গা বের করলো। খাটাখাটুনির চোটেই কিনা কপালে খাট জুটল না! জুটল রাঙামাটি টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারের একটা পরিত্যাক্ত বাড়ি- সেখানেই খানা এবং পায়খানা! তিরিশ জন ছাত্রের জন্য একখানা পায়খানা! খানা-খাদ্যের কোন কমতি নেই! যত আপত্তি ছাড়তে গিয়ে- "খাও বেশী ছাড়ো কম" এই হচ্ছে মূলনীতি! ইউরোপ-আমেরিকার যা থাকে আমাদের তা ছিল না! বাসের মধ্যে পায়খানার ব্যবস্থা ছিল না। বাসে বসে খানা সম্ভব ছিল, কিন্তু পায়খানা সম্ভব ছিলনা কস্মিনকালেও! ঢাকা থেকে রাঙামাটির সুদীর্ঘ যাত্রাপথে দুটি বিরতিতে পেট ও মন ভরলেও, খালি করার ব্যাপারটা জনপ্রিয় ছিল না কারও কাছেই!
বাসস্থান নির্ধারিত হবার পর শুরু হল ধুন্ধুমার যুদ্ধ! কে কার আগে পায়খানায় যাবে তার প্রতিযোগিতা! ভাগ্যবান নজরুল সর্বপ্রথম গিয়ে ঢুকলো দুনিয়াবী স্বর্গে! দুনিয়ায় কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। কিংবা বলা যেতে পারে -কেউ কাউকে আগে ছাড়তে দেয় না! দুর্জনেরা নজরুলের স্বর্গপ্রাপ্তি মেনে নিতে পারল না। তাদের প্রতিবাদের পদাঘাত পায়খানার দরজায় আঘাত হয়ে পড়তে লাগলো। দরজা জিনিসটা অবলা নয় যে সয়ে যাবে-- ফলাফল পাওয়া গেল হাতেনাতে! কিছুক্ষণ পর দেখা গেল দরজার নীচের অংশ স্ব-স্থান ত্যাগ করেছে! উৎসাহী দর্শকেরা দরজার পতিত স্থান দিয়ে নজরুলের পতিত বস্তু দেখায় মনযোগ দিল! বেচারা নজরুল লজ্জা সইতে না পেরে ঘুরে বসলো "সম্মুখ সমরের চাইতে পশ্চাদপসারণ মঙ্গলময়"- উক্তিটি প্রমাণের স্বার্থে! দুষ্ট বালকেরা নজরুলের পশ্চাদ্দেশে খোসপাঁচড়ার দাগ দেখা যায় কিনা তা নিয়ে বাজী ধরা শুরু করলো।
প্রতিদিন সকালবেলা এবং সন্ধ্যাবেলা ফিল্ড থেকে ফিরে আসার পর পরই যত গোলযোগ- বাকি সময়টুকু বেচারা পায়খানা অদ্ভুত এক একাকীত্বে ভোগে!
প্রথম দিন ফিল্ড থেকে ফিরে গোলযোগ শুরু হয়ে গেছে। "ছোটখাট শ্যামল" ভাবল, মারামারিতে গিয়ে কাজ নেই! বরং কাপ্তাই লেকে কিছু সার দিয়ে এলেই হয়। যেই ভাবা সেই কাজ- একটা হারিকেন সাথে নিয়ে শ্যামল চললো "কাপ্তাই লেক বধ কাব্য" রচনা করতে। কিয়ৎকাল বাদে শ্যামলের প্রলয়ংকরী চিৎকার ও চার/পাঁচ জনের ছুটে যাওয়া! মুখে পানি ছিটিয়ে শ্যামলের জ্ঞান ফিরিয়ে আনার পর সে যা বললো, সেটাকে ভদ্র ভাষায় ভাষান্তরিত করলে দাড়ায়, "হারিকেনের আবছা আলোয় বসে ছাড়ার সময় সে দেখলো তার নিক্ষিপ্ত প্রথম গোলাটি ছোট ছোট লাফ দিচ্ছে!" এটা দেখেই সে বাক্য হারা- সেই সাথে জ্ঞানও! সাহসীরা টর্চের আলো ফেলে যা বুঝল সেটা হচ্ছে- আবছা অন্ধকারে শ্যামল কাপ্তাই লেকের ঢালে যে কাব্য নিক্ষেপ করেছে সেটা গিয়ে পড়েছে কাপ্তাইবাসী এক ব্যাঙের ঘাড়ে।
আমাদের সাথে পড়তো কার্জন হলের প্রাণ "প্রেম কিশোর"। সে এতই বিখ্যাত যে ভোরের কাগজ আধা পৃষ্ঠা ব্যয় করে তার হাস্যকর কার্যকলাপ নিয়ে একটা ফিচার বের করেছিল- সাথে ছিল তার দন্ত বিকশিত ছবি! কার্জন হলের তাবৎ মেয়ে এক ডাকে "কামাল" ওরফে "প্রেম কিশোর" কে চিনে। না চিনলেও- ডাক শুনে চিনে নিতে দেরি হয়না মোটেই! তাকে নিয়ে অন্য কোনদিন গল্প হবে। আগে গল্পে ফিরে যাই। সেই কামাল ওরফে প্রেম কিশোর খায় যেমন - ছাড়েও তেমন! মহাজ্ঞানী-মহাজন যে পথে করে গমন, সবাই সেই পথে যেতে চায় কিন্তু আমাদের কামাল একবার যে পথে গমন করে সেই সুবাসিত পথে গমনের ইচ্ছা আর কারোরই থাকে না। সুতারাং আইন করে দেয়া হয়েছে- কামাল সবার পরে গমন করবে।
দ্বিতীয় দিন সকাল বেলায় আবিষ্কার করা হলো কামাল ওয়েস্টার্ন গল্পের নায়কদের মতো আইন ভেঙ্গেছে! শুধু ভাঙ্গলে ও একটা কথা ছিল। এক্কেবারে ভেঙ্গে আঁটকে আছে- বার বার ফ্লাশ করেও দুর করা যাচ্ছেনা কিছুতেই! জিনিসটা দেখতে অনেকটা চানখারপুলের মিতালী হোটেলের কাবাবের মতো। সমস্যা হচ্ছে প্রেম কিশোরের প্রক্রিয়াজাত কাবাব এতই শক্ত যে পানির ছুরি দিয়ে টুকরো করা যাচ্ছেনা। ফরমালিন দেয়া মাছের মতোই তার অবস্থা! অবশেষে শামীম একটা বুদ্ধি বের করলো। বুদ্ধি অবশ্য বের হবারই কথা! সুবাসিত কাবাবের গন্ধ এতই তীব্র যে তা ভেতর থেকে সবকিছু টেনে আনা শুরু করছিল। বুদ্ধির অবস্থান স্বভাবতই সেসব জিনিসের উপরে - তাই আগে বের হবে এটাই স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার। শামীম দৌড়ে গিয়ে কোথা থেকে একটা লাঠি জোগাড় করে আনল। তারপর একজন বালতিতে করে পানি ঢালল এবং শামীম লাঠি দিয়ে গুঁতিয়ে সেই কাবাব টুকরো করলো।
এভাবে কোনকিছু বেশিদিন চলতে পারে না, আর তাই ব্যাপারটি গুরুত্বসহকারে যথাযথ কতৃপক্ষের গোচরে আনা হল। সেইদিন সন্ধ্যায় ফিল্ড থেকে ফিরে আবিষ্কার করলাম। বিল্ডিং এর পেছনে একটা গর্ত করে তার উপর কাঠের একটা পাটাতন দেয়া হয়েছে। এবং চারপাশে মুলি বাঁশের বেড়া দিয়ে দেয়া হয়েছে। যেখানে রান্নাবান্না করা হয়- জায়গাটা তার খুব কাছেই। যেন খেয়ে উঠেই দৌড় দেয়া যায়- সে চিন্তা মাথায় রেখেই বানানো হয়েছে বলে ভ্রম হয়। তারপর বাকী পাঁচ দিন আর সমস্যা হয়নি। "খানায় বসে পায়খানা" কিংবা "পায়খানার অদূরে খানা" দুটোই চলতে লাগলো।
লেখাটি ইতিপূর্বে সামহোয়্যারইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল
মন্তব্য
জটিল বস!!!
আরও ছাড়েন
পুরান মাল বাদ দিয়া নতুন কিছু ছাড়েন।
------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
খেলুম না। এইটা আগেও পড়ছি! নতুন কিছু দ্যান!
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
হ নতুন মাল ছাড়েন...
ইয়ে দ্রৌহী ভাই ভাবীসাব এখন কই?
দৃশা
ভাবীসাব বাপের বাড়ী নাইওর গেছে!
__________
কি মাঝি? ডরাইলা?
আহা, এইরম পোস্ট নাই...
ঘটনা কী? পুরান মালের আড়ত ধইরা টান দিলেন যে?
কি মাঝি? ডরাইলা?
- ভাবী আবার বাপের বাড়ি নাইওর যাইবো কবে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আর যাইবো না মনে হয়।
কি মাঝি? ডরাইলা?
- তাইলে তো আপনের কপালে উলু, আর আমরাও হমু বঞ্চিত, এই টাইপের 'মাল' পড়া থেকে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
"মাল" পড়বে মানে?
কি মাঝি? ডরাইলা?
- আপনে এরকম আরেট্টা লেখা ল্যাখেন, হাতে কলমে দেখাই!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আচ্ছা। সেটা করা যাবে কিন্তু "মাল" পড়ার সাথে আমার লেখা নামানোর সম্পর্ক কী?
কি মাঝি? ডরাইলা?
- নাহ্, আমারে দিয়া আপনে কথাটা কওয়াইবেনই দেখতাছি!
আমি আসলে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগি মাঝে মাঝেই। আপনার এই ল্যাখা পইড়া বিশেষ ফল পাইছিলাম। তাই কইতাছিলাম আরকি!
এখন মাল পড়া না কইয়া গু পড়াও কইতে পারি। কিন্তু সেটা কি সবার সামনে কওয়াটা ঠিক হইবো?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি পুরাপুরি বিভ্রান্ত।
আমি ব্যাখ্যা দিচ্ছি - সঠিক কিনা আপনেই বলেন?
আপনার কথা হচ্ছে আমার লেখা পইড়া আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সেরে গেছে। হইতে পারে আমার লেখা প্রিন্ট কইরা রাখছিলেন, পরে মনের ভুলে কাগজটা গিলে ফেলেছেন। এতে করে পেট খারাপ ও ফলাফলে পেট পরিষ্কার। কোষ্ঠকাঠিন্য গায়েব!
দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে -- লেখা পইড়া পেটে মোচড় দিয়া উঠছে। এক মোচড়ে কঠিন পদার্থ যা ছিল সব গুড়া গুড়া হয়ে গেছিল। পেট পরিষ্কার।
এখন তাড়াতাড়ি কইয়া ফালান কোনটা সঠিক। শিক্ষানবিসের সাথে আলাপ কইরা প্যাটেন্ট কইরালামু।
কি মাঝি? ডরাইলা?
ওল্ড ওয়াইন।
অনবদ্য!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
অনেক ধন্যবাদ তীরুদা।
কি মাঝি? ডরাইলা?
ফিক ফিক -------।
নতুন মন্তব্য করুন