বিশ্ববাজারে আপরিশোধিত তেলের দাম পড়তে শুরু করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার সাথে সাথে জ্বালানীর চাহিদাও কিছুটা নিথর হয়ে আসলে দাম ভবিষ্যতে হয়তো আরো পড়বে। এই প্রেক্ষিতে সরকার তেলের দাম কমাচ্ছেন। ৯১ অক্টেন পেট্রলের (পেট্রল) দাম এখন ৭৮ টাকা, আর ৯৮ অক্টেন পেট্রলের (অক্টেন) দাম ৮০ টাকা রাখা হবে শুনছি। তামিম নাকি বলেছেন দাম আরো কমতে পারে।
দেশে পেট্রলের দামের সাথে স্থানীয় দ্রব্যমুল্য বা পাব্লিক ট্রান্সপোর্টের দামের পারস্পরিক সম্পর্কটা অদ্ভুত; তেলের দাম বাড়লে এগুলোর দাম বাড়ে, কিন্তু তেলের দাম কমলে এদের দাম আনুপাতিক হারে কমে না। তাই তেলের দাম কমল আর নিম্ন/মধ্যবিত্তের ভাগ্যের সিকা ছিড়ল – তা তো আর নয়। দাম কমালে বরং সরকারের রাজস্ব আয় কমে, আর তখন আবার আমাদের কৃষিখাতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ন ভর্তুকি সরিয়া নেয়ার আরেকটা উছিলা যোগাড় হয়।
ভারতে এই সেপ্টেম্বর মাসেও পেট্রলে লিটার প্রতি দাম ছিল ৫৮.৯ রুপি ছিল; ১.৪ টাকা/রুপি দরে তা ৮২.৪ টাকার সমান। দাম আরো কমানোর একটা ধুয়া উঠেছিল, কিন্তু সেখানের সরকার বলে দিয়েছেন যে তা সহসাই আর হচ্ছে না।
বার্মায় পেট্রলের বাজারের প্রায় পুরোটাই কালো। সরকারি ভাবে এই কিছুদিন আগে ৫০০% দাম বাড়িয়ে পেট্রলের দাম গ্যালন প্রতি ৩০০০ খ্যাত করা হল, কিন্তু কিনতে গেলে ৪৫০০-৫০০০ খ্যাতই পড়বে, যা কিনা বাংলা টাকায় প্রতি লিটার ৭০-৮০র মত।
এখন কইন ছাইন দেহি,
১. রাইফেলসের জওয়ান আর সিমান্ত এলাকায় পদ্মা-মেঘনা-যমুনার ডিলারদের ঈমান ও দেশপ্রেম কতটুকু টনটনে হলে আজকের দামেই শিলচর, আগরতলা, রাথেডুয়াং বা সিতবির রাস্তায় বাংলাদশী পেট্রলই সহজলভ্য হবে না?
২. সি এন জির এই বাজারে মধ্যবিত্তের আর কয়জন গাড়িতে পেট্রল পোড়ায়? তাহলে পেট্রলের দাম কমালে লাভটা কার?
৩. আবার দাম কমানোর আগে তামিমের কি শিন্ডে আর লুন-থির সাথে পরামর্শ করে নেয়া উচিত?
(ছবিসত্ত্ব রয়টারের)
মন্তব্য
ভারতে যদি ৮৩ টাকা হয়, বাংলাদেশের ৭৮ টাকার সাথে পার্থক্য দাঁড়ায় ৬.৪%. এই মার্জিনে লাভের জন্য আদৌ চোরাচালান হয়?
বিশ্ববাজারে তেলের দাম বিশেষ পড়বে না, কারণ ওপেক ইতিমধ্যে উৎপাদন কমিয়েছে, বলেছে দাম পড়া অব্যহত থাকলে তারা আরো কমাবে।
পেট্রল পাম্প থেকে লিটারদরে কিনে নিয়ে পাচার করার ধারনাটা কৌতুহলউদ্রেককর, তবে বাস্তব নাও হতে পারে।
এখানে ডিলারের কমিশন বাবদ ২-৩%, আয়তন ছাড়ের ২-৩% আর মুসক বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে পাচারকারির মার্জিন নিতান্ত ফেলনা নয়। আর যদি তেলটাই মাগনায় পাওয়া যায় - তাহলে খরচা-মার্জিনের তো আর তফাত থাকে না।
মাগনা পেলে তো ভাই সবই পাচার হতে পারে, দেশের বাজারে বিক্রিও হতে পারে।
চোরাইচালানি তো এক ধরনের ব্যবসা, যেখানে অত্যধিক লাভ। চিনি আসে, সাইকেল আসে, সাবান সোডা যায়। তেল যায় ভারত, সার পাচার হয় মায়ানমার খবরে দেখি।
সীমান্ত ঠিক না করলে তো কিছুই ঠিক রাখা যাবে না।
দুর্দান্ত যথার্থই বলেছেন। ভেড়ামারার আশেপাশে গেলে তেলবাণিজ্যের রমরমা টের পাওয়া যায়। ট্যাঙ্কার থেকেই ওখানে দেদারসে হাপিস হয়ে ডানেবামে চলে যায়। খুলনার কথা বাদই দিলাম।
হাঁটুপানির জলদস্যু
হুম, উত্তর খুজতাছি !
--------------------------------------------------------
আপনি কৃষিখাতে ডিজেলের যে ভর্তুকির কথা বলছেন তাতে আসলে প্রকৃত কৃষক কোন উপকার পায় না। এসব টাকা-পয়সা চোর জোচ্চোরদের পকেটে চলে যায়। অতএব তেলের দাম কমানোই সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত। এবং সে সাথে অন্যান্য পণ্য ও সেবার কমদামও নিশ্চিত করতে হবে। তেল চোরাচালান তো আর চটের বস্তায় করে হয় না। তার জন্য বড় ট্যাঙ্কার লাগে। এতবড় একটা ট্রাক দেশের প্রশাসন, পুলিশ, বিডিআরের চোখের সামনে দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে যাবে আর তারা বসে তামুক খাবে?
তবে হ্যাঁ, যদি অন্যান্য পণ্যের দাম না কমে তাহলে এক্ষেত্রে লাভ কার কইতে পারি না। আমাদের না এটুকু নিশ্চিত।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
আপনি কৃষিখাতে ডিজেলের যে ভর্তুকির কথা বলছেন তাতে আসলে প্রকৃত কৃষক কোন উপকার পায় না।
আপনি হয়ত ভর্তুকির বিতরন নিয়ে অনিয়মের কথা বলছেন। অনিয়মের কারনে যাদের সুবিধা পাওয়ার কথা, তাদের সবাই পাচ্ছেন না - মানলাম। সরকার চাইলেই এই অনিয়ম দূর করতে পারে। কিন্তু তেলে দাম কমিয়ে ভর্তুকি বাদ দিয়ে দিলে অনেক কৃষকই মারা পড়বেন।
তেল চোরাচালান তো আর চটের বস্তায় করে হয় না। তার জন্য বড় ট্যাঙ্কার লাগে। এতবড় একটা ট্রাক দেশের প্রশাসন, পুলিশ, বিডিআরের চোখের সামনে দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে যাবে আর তারা বসে তামুক খাবে?
চটের বস্তায় নয় তবে, প্লাস্টিকের ব্যাগ আর ড্রামে সাইকেল ভ্যানে করে দেদারসে হয়, বিশেষ করে কুমিল্লা আর সিলেট এলাকায়। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী ও সুন্দরবন এলাকায় হয় শ্যালোচালিত নৌকায়। কিছু লিঙ্ক দেখুন
১. http://infochangeindia.org/20060504213/Agriculture/Features/Smuggling-to-combat-starvation.html
২. http://www.silchar.com/news/news.html
আখাউড়া/আগরতলার এলাকার মানচিত্রটি যুম করে দেখুন। সীমানার ওপরই গড়ে উঠেছে জনপদ বাজার। উভয় পক্ষের প্রশাসন, পুলিশ ও সিমান্তরক্ষীরা এখানে শুধু হুকাই খায় না, আড়তদারিও করে।
নতুন মন্তব্য করুন