জেলার নাম লালকুপি - ৮

দুর্দান্ত এর ছবি
লিখেছেন দুর্দান্ত (তারিখ: শনি, ২০/১২/২০০৮ - ৫:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto ডিসেম্বরের শেষের দিকে এসে এদিকটায় উতসবের আমেজ এড়ানো যায় না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সরকারি ক্রিস্মাস ট্রি আর রংবেরঙ্গের আলো ঝলমল। টাউনহলের সামনের গাছটা হয় সবচাইতে বড়, এর সাজসজ্জাও বেশী জাঁকজমক। সউথ হল্যান্ডে ক্রিস্মাস ট্রির মত কনিফেরাস গাছ এম্নিতে গজায় না। এক দুই মিটারের গাছগুলোকে আবর্তনে চাষ করা হলেও তালঢ্যাঙ্গাগুলো আসে পুর্ব ইউরোপ থেকে ট্রাকে চড়ে। ছোট ছোট শহরের মধ্য হাল্কা প্রতিযোগীতা চলে কাদের গাছ কত ঊঁচু, কোনটির আলোকসজ্জা কত চড়া।

পাড়ায় পাড়ায় ছেলেবুড়োদের ক্যারলের মহড়া। আমাদের পাড়ার মাছধরার সরঞ্জামের দোকানে বাজিপটকা বিক্রির ব্যানার ঝুলে গেছে ১৫ তারিখ থেকে। বছরের কিছুদিন এখানে বাজিপটকা বিক্রির লাইসেন্স মেলে হাতে গোনা কিছু দোকানের। ডাউনটাঊনে অবশ্য মরোক্কান বা চীনাদের পাড়ায় চোরাই বাজিপটকা পাওয়া যায়। নববর্ষের রাতে আকাশবাতাশ ভরে যাবে বাজিপটকায়।

এই আয়োজন, মহড়া, হাল্কা উত্তেজনার মধ্য আমার ছোটবেলার রায়রেবাজারের শবেবরাত বা দুর্গাপুজার সাথে জোর করে কিছু সমান্তরাল খুঁজি। মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরবার পথে রাস্তার সাজ দেখতে দেখতে নিজ হাতে তৈরি মরিচাবাতির কথা বলি। বড়ই গাছের কয়লা, সোরা, ইউরিয়া, অক্সাইড, খাসির ভুঁড়ি দিয়ে তৈরি ঝিল্লির বৈশিষ্ট, কোন লবনে কি রঙ, বাঁশ কাগজকে কেন ধুয়ে নিতে হবে, আর কতটুকে ঝিল্লিতে মরিচাবাতি কতদুর লাফাবে, এইসব।

--
২০০৩ এই হবে, রয়াল অপেরা হাউসে সুইনি টড আমার দেখা প্রথম লন্ডনি গীতিনাট্য। মূল গল্পসুত্র একজন নাপিতের রক্তাক্ত প্রতিশোধকে ঘিরে; আরো আছে বেশকিছু কৌতূহল উদ্রেককর সুস্বাদু আনুষাঙ্গিক গল্পানু। গালভরা শোনালেও প্রথম দর্শনে আমার বদহজম হয়েছিল - অর্ধেক বুঝিনি নিজের ইংরেজির সীমাবদ্ধতায়, বাকিটা প্রযোজনার দুর্বলতাই হবে হয়ত। তবে গানগুলির সুর আর কিছু কিছু কথা মগজে এঁটে গিয়েছিল। শীতের ধুসর বিষন্নতায় তাই ঘুরে ঘুরে তার কিছু মনে পড়ে। গত বছর টিম বার্টন, জনি ডেপ আর হেলেনা বনহ্যাম কার্টার - ত্রিমুর্তির করা ছবিটা দেখি। প্রেম, প্রতিশোধ আর সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে লেখা এই গীতিনাট্যটির চলচিত্রায়ন নিয়ে শুরুতে কিছুটা সমালোচনা এসিছিল, কিন্তু এখন এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।

সুইনি টড থেকে আমার প্রিয় তিনটি গান এখানে জুড়ে দিলাম। প্রথমটি সুইনির সাথে ভন্ড নাপিত পিরেলির (সাশা ব্যারন) প্রতিযোগীতা, দ্বিতীয়টি মিসেস লাভেট আর সুইনির "লন্ডনির মাংস দিয়ে পাই বানিয়ে লন্ডনির কাছেই বেচার" ফন্দি ফিকির। শেষটি, আমার সবচাইতে পছন্দের, সুইনির হাতের মুঠোয় জাজ টারপিন। আশা করি ভাল লাগবে।

(ছবি সত্ত্ব ign.com)


মন্তব্য

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

বহুদিন পরে লেখলেন, মিয়া ভাই! সুইনি টড! আমি মুভিটা দেখি নাই, কিন্তু কয়েকদিন আগেই লন্ডনের অতিশয় ক্ষুদ্র ইউনিয়ন থিয়েটারে সুইনি টডের একটা দারুন প্রোডাকশন ছিল, সেইটা দেখার কপাল হইলো। জব্বর মজা পাইছি! সন্ডহাইমের আরো মাল আসছে লন্ডনে - সেগুলাও দেখতে হইবো।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

দুর্দান্ত এর ছবি

ইউনিয়নে মিকাডোর সুনাম শুঞ্ছিলাম। দেখতে পারলাম না।
চলে নাকি মিকাডো কোনখানে?

শিক্ষানবিস এর ছবি

আমাদের তো আর হলে দেখার সৌভাগ্য হয় না। কম্প্যুতে দেখে নিয়েছি। সুইনি টড দেখে বেশ ভাল লেগেছিল। আমাদের তো আসলে মিউজিক্যাল দেখাই হয় না। এদেশের অধিকাংশ দর্শকই মিউজিক্যাল শুনলে দৌড়ে পালান। কিন্তু মিউজিক্যাল দেখা শুরু করার পর কিন্তু এ ধরণের সিনেমাই আমার বেশী ভাল লাগছে। মিউজিক্যাল সিনেমা বোধহয় কখনই খুব একটা খারাপ হয় না।
সুইনি টডে যে পরিমাণ ভায়োলেন্স দেখানো হয়েছে সেটা অনেক দর্শকই খেতে পারতো না। এখানেই বোধহয় গীতিনাট্য কাজে দিয়েছে। কমেডি বা মিউজিক্যালের মাধ্যমে অনেক ভারী জিনিসকে হালকা করে ফেলা যায়। সুইনি টডে এই কাজটি খুব মুন্সীয়ানার সাথে করেছেন টিম বার্টন। তার বউ যথারীতি ফাইট ক্লাবের মূর্তিতেই হাজির হয়েছে। ফাইট ক্লাবে অবশ্য তার চরিত্রটা এন্টি-হিরো ছিল না।

গত বছর টিম বার্টন, জনি ডেপ আর হেলেনা বনহ্যাম কার্টার - ত্রিমুর্তির করা ছবিটা দেখি।

ভালই বলেছেন। এর আগের এডওয়ার্ড সিজরহ্যান্ড্‌স দেখে অন্তত বার্টন আর জনি ডেপ এর দ্বিমূর্তির বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। এবার একসাথে তিনজন এলো।

সুইনি টডের যে তিনটা গানের লিংক দিলেন তিনটাই ভাল লেগেছিল। অবশ্য এসব গান ছবির সাথে দেখতে বেশী ভাল লাগে। যেমন নাপিতের সহকারীর জোয়ানার প্রেমে পড়ে যাওয়ার পরের গানগুলোও পরিস্থিতি বিচারে ভাল লেগেছিল। সেখানে অনেকটা "মাই ফেয়ার লেডি" টাইপ ভাব ছিল।

দ্রোহী এর ছবি

স্যুইনি ট্যড হলে গিয়ে দেখেছিলাম। এককথায় অসাধারণ লেগেছিল। সর্বশেষ দেখেছি "দ্য ডে দ্য আর্থ স্টুড স্টিল!" গত হপ্তায়।


কী ব্লগার? ডরাইলা?

দুর্দান্ত এর ছবি

ধন্যবাদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।