বন্ধুদের কাছে স্পেনের কথা শুনেছি আর রোদেলা, বন্ধুত্বপরায়ন আর মজাদার খাবারের দেশ হিসাবে সেখানে যাবার ইচ্ছাটা আরো প্রবল হয়েছে। গতবছর কি এক আগ্রহে ইউরোপে আরব শাসন নিয়ে কিছু বই পড়ে আন্দালুস নিয়েও একটা আগ্রহ জমে ওঠে। এই বসন্তে তাই দুইসপ্তাহ ছুটি নিয়ে চলে গেলাম স্পেনে।
স্পেন বড় দেশ। স্পেনিয়ার্ডেরা নিজের দেশে রেল আর হাইওয়েতেই বেশী চলাচল করে। ইউরোপের সবদেশের মত অধুনা স্পেনের জাতীয় বিমান কম্পানী ইবেরিয়া কমদামি নো-ফ্রিল বাচ্চা প্রসব করেছে, ভুয়েলিং নামে। এখন সেটাও বেশ লোকপ্রিয়। আমার ইচ্ছেটা হল কয়েকটা শহর ঘুরে দেখা। এই স্কুল হলিডের মরশুমে চারটি প্রানীর টিকেট খরচা, এই নোফ্রিলের দামেও পোষাবে না। আর লাগেজ নিয়ে রেলে রেলে ঘোরাটাও একটা ঝক্কি। তাই ভাবলাম মওলার নাম নিয়ে গাড়িটা নিয়েই ফিল্ডে নেমে পড়ি।
সাব্যস্ত হল যে বেলজিয়াম, ফ্রান্স আর পিরেনিজ পেরিয়ে আমরা আতলান্তিক উপকুলবর্তী বাস্ক দেশটায় একটা সপ্তাহান্ত জিরিয়ে নেবো। তারপর স্পেনের বুক চিরে দক্ষিনমুখী মাদ্রিদ হয়ে গ্রানাডা, সেখানেও কিছুদিন। তারপর ভুমধ্যসাগর মুখী হয়ে ভ্যালেন্সিয়ায় আর বার্সেলোনায় এক এক রাতকাটিয়ে আবার উত্তরদিয়ে ফ্রান্স পেরিয়ে বাসা। মোটমাট সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার। ঘরে আমারা দুজনেই গাড়ি চালাই, সংসারের প্রয়োজনেই। পালাকরে চালিয়ে নেব, এই আশাতেই বুক বাঁধলাম।
|
হল্যান্ডের স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের বাপমায়েরা ছুটি নিলেও তাবত দুনিয়ার কাছে এই দুটি সপ্তাহের সাথে বছরের আর দুটি সপ্তাহের কোন তফাত নেই। আমরা যাত্রা শুরু করছি শুক্রবারে। তাই আমাদের কাছের শহর রটারডাম থেকে সেই প্যারিস অব্দি সবাই ঘুম থেকে জেগেই রিজিগের সন্ধানে বেরুবেন, এবং সকাল সাতটা থেকে নয়টা অব্দি রাস্তা জমজমাট রাখবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাই আমরা রাত চারটার দিকেই ঘুমন্ত বাচ্চাদুটিকে রাতের পোশাকেই বিছানা থেকে আলগোছে সরাসরি গাড়িতে নিয়ে কম্বলগুজে দিয়ে, এক এক বড় কাপ কড়া এরাবিকা মেরে রওনা হলাম। নাঈমা প্রথমে হাল ধরল, কথা থাকল যে প্যারিস পেরিইয়ে নাস্তা সেরা আমার পালা আসবে।
বুল্ভার্খ পেরিফেরিক বা ল্য পেরিফ(প্যারিসে বাইপাস হাইওয়ে) দিনরাত চব্বিশঘন্টাই জমজমাট। লে মিসেরাব’ থেকে প্যারিস প্রতিরক্ষা দেয়ালের কথা মনে থাকবে কারো কারো। ১৯২০ এর দিকে এসে সেই দেয়াল অবহেলায় খসে পড়ে। পুরাতন দেয়ালের সেই পরিত্যাক্ত খালি জায়গায় কয়েক দশক ধরে গড়ে তোলা হয়েছে এই বাইপাস রাস্তা। শুধু ফ্রান্সেরই না, এটিকে সারা ইউরোপের হাইওয়েগুলোর যেকতগুলো বড় বড় জংশান আছে, তার একটি বলা যায়। ২০০২ সালে এই রাস্তায় নাকি দৈনিক ১ মিলিয়নের বেশী গাড়ি চলেছে। আট লেনের হওয়া সত্ত্বেও এতে হর হামেশাই বাম্পার-টু-বাম্পার জাম লেগে যায়।
৬ ডিগ্রির হিম ঠান্ডা অন্ধকারে আমাদের গ্রামের দুই লেনের রাস্তা থেকে সুর সুর করে সুনসান E19 তে এসে নামলো আমাদের আউডি a6। সিডিতে কোল্ডপ্লের এক্স এন্ড ওয়াই গানগুলো শুনতে শুনতে আমি হারিয়ে গেলাম ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আর নীল আকাশের নিচের এক হলুদ হলুদ লেবু আর লেবুফুলের সুবাসে ভরা এক আন্দালুসী লেবুবাগানে।
(চলবে; লেবুর ছবিটি এখান থেকে নেয়া)
মন্তব্য
চমৎকার লাগলো!
একদম এই রকমের একটা প্ল্যান করে রেখেছি, ফ্রান্স ঢুকে প্যারিস হয়ে আটলান্টিকের পাড় ধরে স্পেন আর পর্তুগাল... অবশ্য এতো লম্বা ট্যুর, আপনারা দুইজন বলেই পেরেছেন, একা একা সম্ভব না।
ছবি চাই, ছবি!
=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
খাইছে, কত্তো বড় ঘর!
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
স্পেন দেশটার ছবি দেবেন প্লিজ। আর অবশ্যই লেবুবাগান।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
আউডির স্পিডেই চালান না কেন?
- লেবুর রস খাওয়া শেষ হলে পরের পর্বটা ঝপাৎ করে নামিয়ে দিয়ে যাইয়েন বস। খালি গেলাস নিয়া আর কতোক্ষণ!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনার সাথে ঘুরে আসবো। লেবুর ছবি তো দেখিনা লেখাটা ডালপালা মেলবে বলে মনে হচ্ছে। শিরোনামটা ভালো লাগল।
লেবুটা তো দেখতে পেলাম না!
হ্যাপি মাদারস ডে
রবিন ভাই, আমিও ধুগোর লগে একমত।
পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
দূর্দান্ত...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পরের পর্বটা নামায়ে ফেলেন জলদি।
নামকরণটাও 'দুর্দান্ত' হয়েছে!
ফেসবুকে ফটু দেন তাড়াতাড়ি। আর জাতির দাবির সাথে আমিও একমত।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
লেখাটা আবার পড়ে মজা পেলাম। আপনি কি আমার ফেসবুকে আছেন?
নতুন মন্তব্য করুন