প্রাক-রাফায়েলিয় ভ্রাতৃসভা

দুর্দান্ত এর ছবি
লিখেছেন দুর্দান্ত (তারিখ: রবি, ২৩/০৮/২০০৯ - ৮:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoমিউট্যান্ট নিঞ্জা টার্টেলদের মনে পড়ে? রাফায়েল, মাইকেলেঞ্জেলো, লেওনার্দো আর দোনাতেলো। মধ্যযুগের কাত্রোসেন্তো বা প্রাক-রেনেসা যুগের শিল্পে প্রত্যেক শিল্পীর মধে বিষয় ও বিন্যাসের স্বাতন্ত্র ছিল, তাকে ভেঙ্গেচুরে রেনেসাঁর এই শিল্পীরা একটি আদর্শকে প্রতিষ্টা করতে চান। হোক তা ছবি, বা ভাষ্কর্য বা স্থাপত্য। সবকিছুই নিখূঁত, ঠিক যেখানে যেটা যতটুকু হওয়া চাই, সেটা সেখানেই। তাদের কাজে সব পুরুকেই বলিষ্ঠ দেবতা, সব নারীই তন্বী দেবী, সব শিশুই দেবশিশু, সব আকাশই বেহেশতি, খিলান মানেই কয়েক্ টি বিশেষ ধরনের, তোরন মানেই একটি বিশেষ মাপের, সব চরিত্রই দূরে কোথায় দূরে তাঁকিয়ে, এমনটি করেই দেখাতেন। রং এর ব্যাপারে তারা বেশ রক্ষনশীল, সবখানেই ধুসর বা বাদামীর প্রাচূর্য। আলোর চাইতে অন্ধকারটাকেই তাদের বেশী পছন্দ। আর বিন্যাস মানেই পিথাগোরাসের মাপে বাঁধা। তবে রেনেসার দিনও একদিন ফুরোল। ইউরোপের মূলভুখন্ডে ম্যানারিজম, বারোক, রকোকো, ফ্লেমিশ ঘরানা এল এবং গেল। রুবেন, বের্নিনী, কারাভাজ্জিও এরা কাজ অনুপঙ্খিকতা নিয়ে, গাড় রঙ আর নতুন বিন্যাস নিয়ে বেশ নতুন নতুন সব নিরীক্ষাধর্মী কাজ করলেন। এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরেও ইংল্যান্ডের লোকজন কেন যেন সবাই সেই রাফায়েল - মাইকেলেঞ্জেলোতেই আটকে থাকলো। রয়াল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা জশুয়া রেনল্ড তো নিয়ম বেঁধেই দিলেন। দুনিয়া উচ্ছন্নে যাক, ইংল্যান্ডে ছবি এঁকে খেতে হলে রেনেসার ম্যানারিজমের বাইরে যাওয়া চলবে না। ছবি আঁকতে হয়, ঘরে বসে আঁকো - তা সে ল্যান্ডস্কেপ হোক আর যিশুর ছবি হোক। লন্ডনের শিল্পাংগনের হর্তাকর্তারাও এই ছকের বাইরে আঁকা ছবিকে গোনায় ধরে না। সমালোচকেরা, মানে যাদের কথায় শিল্পীর যশ-খ্যাতি বাড়ে, তাদের প্রায় সবাই আবার একাডেমিরই ফসল কি না। তাই কেউ একটু এদিক সেদিক গেলেই তাকে নিয়ে এমন সমালোচনা শুরু হয় যে, চক্ষুলজ্জা থাকলে একাডেমির ছাঁট ও ছাদের নিচে ফিরে আসতে কারোরই বিশেষ কালক্ষেপন হয় না।

কিন্তু সবাই সেকথা মানবে কেন? একদিকে শিল্পবিল্পব অন্যদিকে ইউরোপ থেকে অভিবাসনের কারনে নতুন ধারনা আর নতুনত্বের প্রতি আগ্রহ তো বেড়েই চলেছে। আর কয়েকজন তরুন যখন তাদের একাগ্রতা আর উদ্যমকে একটি বিন্দুতে অধিশ্রয়ন করে, তখন সেই বিন্দুতেই জ্বলে ওঠে নতুনের স্ফুলিংগ, একদিন সেই স্ফুলিংগ ছড়িয়ে পড়ে, পৃথিবী বড় কিছু একটা পায়। তারুন্যের ধর্মই যে এই। ১৮৪৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনের গাওয়ার স্ট্রিটের এক বাড়ীতে রয়াল একাডেমির এমনি তিনজন তরুন ছাত্র একসাথে হয়ে নিয়ম ভাংগার শপথ নিল। জন মিলে, দান্তে রসেটি আর বিল হান্ট মিলে শপথ নিল, যে করেই হোক ম্যানারিজমের শিকল ছিন্ন করতেই হবে। রেনেসার আগের কাত্রোসেন্তোর বিষয়বৈচিত্রতা ও রেনেসাঁর পরের অনুপঙ্খিকতা, গাড় রঙ ও নতুন বিন্যাস - এগুলো নিয়ে তারা কাজ করবে, একাডেমি আর লন্ডনের শিল্পাংগনের পান্ডারা পারুক তো তাদের ঠেকাক।

মন্ত্র এক, সদস্য (এখনো) তিন, আর গোড়াতেই দেখা দিল দুটি ভিন্ন মানসিকতা । মিলে আর হান্ট বাস্তববাদী, এদিকে দান্তের বাস ভাবনগরে। মিলে আর হান্ট কে টানে রেনেসাঁর পরের ঘরানাগুলো, আর দান্তে পড়ে আছেন প্রাক-রেনেসাঁর কাত্রোসেন্তোদের মঠে। কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে তারা একজোট – তারা তাদের ছবিতে স্বাধীনভাবে নিজের মতপ্রকাশ করবেন ও প্রকৃতিকে যতটা সম্ভব বাস্তবভাবে দেখাবেন, আর কথা রইল তারা তাদের ছবিতে নিজের নামের বদলে ভাতৃসভার অদ্যাক্ষর 'পি আর বি' সই করবেন। শুরু হল ‘প্রাক-রাফায়েলিয় ভাতৃসভা’।

একের পর এক ছবি এঁকে গেলেন তারা। শপথ মেনেই। হয়তো তখনো নিয়ম থেকে অতটা দূরে যেতে পারেনি, বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বাইরে কেউ পি আর বির কাজ খেয়ালই করেনি। তাই শুরুর দু’তিন বছর এমন গেল, যেন কিছুই হয়নি। তারপর হঠাত যেন বোমা পড়ল। ১৮৫১ সালে মিলে’র ‘Christ in the House of His Parents’, হান্ট এর “A Converted British Family Sheltering a Christian Missionary from the Persecution of the Druids” আর দান্তের “Ecce Ancilla Domini” জনসম্মখে প্রকাশ করা হল। প্রতিটি ছবিই ধর্মীয় বিষয় অবলম্বনে।

From Sachalayatan

মিলের ছবিটি যিশূ, ম্যারি আর যোসেফকে তাদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে। ছুতার যোসেফ তার কারখানায় সহকারি নিয়ে একটি দরজা বানাতে ব্যাস্ত, বালক যিশু বাবার সহায়তায় এক বাটি হাতে সাধারন পশমের কৌপিন পড়ে সাবধানে হেটে আসছেন।

From Sachalayatan

হান্টের ছবিতে একজন রোমান মিশনারি আশ্রয় নিয়েছে ইংল্যান্ডের আদিবাসীদের একটি কূঁড়েতে, আর বাইরে সেই মিশনারির সংগী আরেকজন মিশনারিকে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

From Sachalayatan

আর দান্তের ছবিটি দেবদূত গ্যাব্রিয়েল দৈব গর্ভাবস্থার খবরটি দিতে কিশোরী ম্যারিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছেন, এমন সময়ের।

ছবি তিনটি প্রথম প্রদর্শিত হতেই, যেন সারা লন্ডনে ঢী ঢী পড়ে গেল।

দান্তের অসমাপ্ত ছবিটাতে কিছুটা রহস্য মেশানো ছিল। ম্যারিকে রানীর বেশে না দেখিয়ে সাধারন এক মেয়ের মতই আকলেন তিনি। গ্যাব্রিয়েলকেও তার গতানুগতিক পাখা না দিয়ে তাকে এমন ভাবেই আকলেন, যেন গ্যাব্রিয়েল একজন রক্তমাংশেরই মানুষ। হান্টের ছবিটাতে মিশনারিকে সম্মানজনক ভাবেই দেখা গেল, তবে গোল বাধালো ইংরেজ আদিবাসীদের সাজসজ্জায়। সারা পৃথিবী যখন ইংরেজ সিংহের সামনে মাথা নত করে আছে, যেখানে ইংরেজ সভ্যতার দন্ডবাহক, সেখানে হান্ট কিনা তার ছবিতে ইংরেজদের দেখাচ্ছেন পশুর ছালচামড়া গায়ে নেটিভদের মত করে? কি অনাচার। গাব্রিয়েল আর হান্টকে আরো কথা শুনতে হল তাদের ছবিতে চরিত্রের উদ্ভট (!) বিন্যাস আর গাড় রঙ নিয়ে।

তবে মিলের ছবিটা বাজিমাত করে দিল। এতে বাস্তবতা এতটাই প্রকট, বিশেষ করে ম্যারির অতিসাধারন চেহারা দেখে চার্লস ডিকেন্স এতই চটে গেলেন যে তিনি লিখলেন “...so hideous in her ugliness that ... she would stand out from the rest of the company as a Monster, in the vilest cabaret in France, or the lowest gin-shop in England.” এই ছবি নিয়ে হুড়োহুড়ির মাত্রা তুঙ্গে পৌছুলো যখন খোদ রানী ভিক্টোরিয়া আর কৌতুহল সংবরন করে লোক পাঠালেন, যেন ছবিটা বাকিংহামে পাঠানো হয় তাকে দেখাবার জন্যে।

(চলবে?)


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চলবে মানে? দৌড়াবে!!! হুটহাট করে কিন্তু থামা চলবেনা।

তেল-গ্যাসের বিশেষজ্ঞর ভিতরে যে এই রস আছে তাতো কখনো জানতে পারিনি। অবশ্য যে দেশে থাকেন তাতে শিল্পরসিক না হয়ে কি উপায় আছে?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

আমি কিছুতেই বিশেষজ্ঞ নই, তবে অনেক বিষয়েই বিশেষ-অজ্ঞ। আপনার মন্তব্যে পরের পর্ব লেখার উতসাহ পেলাম।

চশমাওয়ালি এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------
ল্যাসিক করাতে ভয় পাই আর লেন্স ভাল লাগে না।

---------------------------------------------
ল্যাসিক করাতে ভয় পাই আর লেন্স ভাল লাগে না।

দুর্দান্ত এর ছবি

চোখ টিপি

s-s এর ছবি

হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।

সিরাত এর ছবি

বাহ। মজা লাগলো তো!

সমুদ্র [অতিথি] এর ছবি

চলুক!

মামুন হক এর ছবি

অবশ্যই চলবে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

খালি পরের পর্ব না, পুরোটাই শেষ করতে হবে।

আলোচ্য ছবিগুলোর সাথে সাথে যদি রেঁনেসা আর তার পরবর্তী ম্যানারিজম ছিন্ন করার প্রয়াস হিসাবে আঁকা ছবিগুলোর কিছু দিতেন, তবে পোস্ট টা আরো তথ্যবহুল হবে।

দুর্দান্ত এর ছবি

ধন্যবাদ। পরের পর্বে আরো ছবি দেয়ার ইচ্ছা রইল।

মূলত পাঠক এর ছবি

এমন বিদগ্ধ বিষয়ে শিরোনামেই বানান ভুল থাকা উচিত নয়। ওটাকে ভ্রাতৃসভা করে দিন না চটপট! হাসি

ভেতরেও কিছু বানান ভুল রয়েছে। তবে এ সব বাদ দিয়ে, লেখার বিষয় ও বর্ণনা ভালো লাগলো।

দুর্দান্ত এর ছবি

শিরোনাম ঠিক করে দিলাম। ধন্যবাদ।

রাফি এর ছবি

জ্ঞানী পোস্ট।।
চলুক...

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

দুর্দান্ত এর ছবি

তবে তাই হোক।

সুজন চৌধুরী এর ছবি

রাফায়েল - মাইকেলেঞ্জেলোর পেইন্টিং আর প্রাক-রাফায়েলিয় ভাতৃসভার পেইন্টিং পাশাপাশি দিয়ে তুলনামূলক আলোচনা দিলে বিষয়টা আরো মজার হয়। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।


লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ

দুর্দান্ত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। এই সিরিজটাকে আমি 'পি আর বি' দের জীবন নিয়েই লিখতে চাই।
তবে আপনার আইডিয়াটা মন্দ না। একদম একই বিষয় নিয়ে তো তারা ছবি আকেননি, তাই তূলনাগুলো সরাসরি করা কঠিন। তাছাড়া আমার সীমিত গ্য়আনেও তা কুলাবে না।
তবু যখন সাহস দিলেন একটা প্রথম চেষ্টা করি। ভুলভাল সব আপনার হিল্লায়।

রাফায়েলের কাথারিনা আর মিলের ইভ অফ সেন্ট আগনেসকে পাশাপাশি রাখলে কি হয় দেখি চলুন। আমার কাছে এই দুটি ছবির বিষয় প্রায় সমার্থক মনে হয়েছে ; দুটোতেই উচু বংশের দুই যৈবতি কৈন্যার স্বপ্নবিভোরতা - কিংবা আরেকটু ঘোলা করে বললে দুটোই পুরুষের চোখ দিয়ে দেখা নারীরহস্য।

রাফায়েলের কাথারিনা হলেন আলেক্সান্দ্রিয়ার সেই সেন্ট কাথারিনা। সেই যে, যিনি ঘোষনা দিয়েছিলেন যে তিনি এমন পুরুষকেই বিয়ে করবেন যে কিনা রূপেগুনে বংশ মর্যাদায় তাকেও ছাড়িয়ে যায়। তারপর ঘটনাক্রমে সিজারের সাথে বিরোধ ও শাহাদাতবরন, দি এন্ড। রাফায়েলের ছবির স্বপ্নাতুর কাথারিনা সাপের মত মোচরানি দিয়ে সাঝের বেলায় চাকায় ভর দিয়ে তার সেই অচেনা মনের মানুষের স্বপ্নে বিভোর, নাকি তিনি খোদার প্রেমে মশগুল - সেটা বোঝা যায় না। রাফায়েল তো আবার তার ছবিতে আবেগ প্রদমিত করতে ওস্তাদ, তাই কাথারিনার মনে কথা আমরা জানলাম না।

মিলের ছবিটি কিট্স এর একই নামের কবিতার নায়িকা ম্যাডেলেইন কে নিয়ে। পিরফকিরের কথায় বিশ্বাস করে একদম ফাইস্সা গিয়েছিলেন ইনি। এই ছবিতে ম্যাডেলেইনকে দেখা যাচ্ছে তার অচেনা মনের মানুষের ভাবনায় বিভোর হয়ে আয়নার সামনে।

এখন বিন্যাস নিয়ে বলি। কাথারিনা ছবিতে ফ্রেমের মাঝামাঝি উলম্ব রেখা টানলে তার দুই পাশে বস্তু আর রং এর প্রতিসাম্য চোখে পড়বে। মাথা আর দুটি হাত এই উলম্ব রেখা বরাবর রাখা। পিছনে দিগন্ত রেখা আবার ফ্রেমকে দুটি আনুভুমিক অংশে ভাগ করেছে। ওজনের ধারনা ঠিক রাখতে এই রেখার ওপরে হালকা রং আর নিচে গাড় রং এর ব্যবহার করা হয়েছে। ছবিটির তিনটি চরিত্র মানে খোদা (বাম-উপর কোনের আলো), কাথারিনা আর চাকা (আসলে মনে হয় চাকার পাশের অন্ধকার মানে সিজার) এই তিনটিকে বাঁধা ধরা হয়েছে বাম ওপর কোনা থেকে ডান নিচের কোনা বরাবর ওরেফ ছাঁটে। ওপরে আর বাম -এ ভাল, আলো, গল্পের শুরু ইত্যাদি আর ডান বা নিচে খারাপ, অন্ধকার, গল্পের শেষ - এগুলোও রেনেসাঁর বাধা নিয়ম।

মিলের ছবিতে প্রথমেই চোখে পড়বে যে দুটি মাত্র চরিত্রের ছবির ফ্রেম পোর্টেট না হয়ে ল্যান্ডস্কেপ, অবিশ্যি একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে আসল ছবিটি পোর্টেট ফ্রেমেরই, শুধু রাফায়েলের নিয়ম মানবো না তাই বলেই অমনটি করা - এমনটি হতেই পারে। ফ্রেমটি উলম্ব তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু রং বা বস্তুর প্রাতিসাম্য নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই - তবে একটা প্রাতিসাম্য আছে, সেটা হল আকারের। বামের ভারী পর্দার সাথে ডানে দাঁড়ানো ম্যাডেলেইনের একটা ভারসাম্যের ধারনা হয়। তবে আলোর উত্সটি ফ্রেমের ডানে, আর আলোটি পড়েছে মাটিতে, ফ্রেমের নিচে। একই সাথে দুটি রাফায়েলীয় নিয়ম মানে ডান থেকে বামের ভাল খারাপের ক্রম ও উপর আর নিচে যথাক্রমে হালকা গাড় রং এর ব্যাবহার, এগুলো ভাঙগার চেষ্টা করা হয়েছে। আর শেষ দাওটিতে বাজিমাত করেছেন মিলে তার ছবির দ্বিতীয় চরিত্রটিকে নিয়ে।

এখন আপনার একটা কুইজ, মিলের ছবির দ্বিতীয় চরিত্র টি কে?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কিছু মনে করবেন না একটা বাজে প্রশ্ন করি। আপনি কি গণিত/ পদার্থবিজ্ঞান/ প্রকৌশলের ছাত্র ছিলেন? প্রশ্নটা এই জন্য করা যে ছবি সংক্রান্ত আপনার ব্যাখ্যা জিওমেট্রিক সিমেট্রি, জিওমেট্রিক ফর্মেশন, রিফ্লেকশন, প্রজেকশন ইত্যাদিতে ভর্তি। আমি নিজেও কোন ছবি দেখতে গেলে মাথায় এই সমস্ত জিনিষ ঘোরে। এটিকে আমি আমার সীমাবদ্ধতা বলে মনে করি। অবশ্য এইভাবে চিন্তা করলে বেশিরভাগ ছবি বোঝা যায়। যেমন প্রথমেই আমি ছবি দুটো পাশাপাশি না দেখে আপনার ব্যাখ্যা পড়লাম। ব্যাখ্যা পড়েই ছবি দুটোর খুঁটিনাটি মনে থাকল। পরে ছবি দুটো দেখার সময় আগে পড়া গল্পের মত লাগল।

তবে এই ধারায় ছবি ব্যাখ্যার বাইরে অন্য যে ধারাগুলোর ব্যাখ্যা চোখে পড়ে তার একটিতে অন্যদের সাথে তুলনা আর গল্প করতে করতেই রাত কাবার করে। দ্বিতীয় ধারার ব্যাখ্যা বাংলাদেশে বেশ প্রচলিত। সেখানকার ব্যাখ্যা উৎপল শুভ্রদের খেলার বর্ণনার মত, পড়বেন কিন্তু কিছু বুঝবেন না। আর বেশির ভাগ জায়গায় "বিশেষণে সবি শেষ বলিতে না পারি ধরণের"। এরচেয়ে আপনার এই গাণিতিক ব্যাখ্যাই চলুক, তাতে আমার মত ছবি-অজ্ঞ মানুষ অন্ততঃ কিছু বুঝবে।

আবারো ধন্যবাদ এই সিরিজটার জন্য।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

ধন্যবাদ। ধরা খেয়েছি দেখাই যাচ্ছে, তবে তা আপনার কাছে খেয়েছি বলে আমি নিলাজ। আমি নিজে ব্যাক্তিগত ভাবে ছবির বিন্যাসে আগ্রহী, তাই আমার আলোচনাটাও সেদিকটাতেই থেকে গেছে। এর বাইরে যেতে হলে আরো কাজ করতে হত, তা আমার কুড়েমিতেও সইবে না, বিদ্যাও কুলাবে না। দুটি ঘরানার মধ্যে বিষয় নির্বাচন বা বিন্যাসের বৈসাদৃশ্যটা যেভাবে হাতে গুনে ঠাস করে করা যায়, তেমনি দুজন শিল্পীর ব্যাক্তিগত শিল্পবোধ, তুলির প্রচালন, সেই বিশেষ কাজটি দর্শকের মনের ঠিক কোথায় নাড়া দেয় ইত্যাদি গুনগত গভীর আলোচনা আমি পড়তে বা শুনতে পারি ঠিকই কিন্তু চাইলেও নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় লিখতে বা বলতে পারি না।
--
আমি কোন প্রকৌশলী নই, আমার অঙ্কের দৌড় ওইদিকে যাবার মতই নয়। তবে আমার কিন্তু ভাল প্রকৌশলীদের শিপ্লীই মনে হয়, আবার ভাল শিল্পীদের প্রকৌশলী। ছবির দুনিয়া ছেড়ে সংগীতে চাইকফস্কি, রহ্মানিনভ বা কুইন্সি জোন্স, এদের প্রকৌশলী ভাবতে আমার দ্বিধা নেই। আপনি প্রকৌশলী?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি নিজেও আপাততঃ বিষয়, পূর্বকথন (যদি থাকে), বিন্যাসের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য, মেসেজ ইত্যাদি পর্বেই সীমাবদ্ধ। এগুলোকে যদি আঙ্গিকগত আলোচনা বলেন তবে তাই সই। গুণগত আলোচনা যে এক আধটু পড়েছি তার বেশিরভাগ মাথার উপর দিয়ে গেছে কিছুটা লেখকের ভাষার জড়তায় আর কিছুটা আমার এই বিষয়ে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা না থাকায়। আপনি আপনার মত করে লিখে যান। আমার বিশ্বাস, তা আমাদের ভালই লাগবে।

***********

ভালো প্রকৌশলীকে শিল্পী অথবা ভালো শিল্পীকে প্রকৌশলী বলা যায় কিনা এই বিতর্কটা অন্য কোন লেখার জন্য তোলা থাক। আর আমি পেশায় যন্ত্রপ্রকৌশলী।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

বস, এই সব বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত একটু আগ্রহ আছে। কাজেই সিরিজ়টা একটু চালু করেন প্লিস।

পছন্দের পোস্টে রাখলাম।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

মূলত পাঠক এর ছবি

ছবির গঠন নিয়ে মন্তব্যে আলোচনাটা চমৎকার লাগলো। এই পথে একটা গোটা লেখা দিন না!

অবাঞ্ছিত এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা। এড়িয়ে গেল কিভাবে!

এমন লেখা প্রতিদিন আসুক!

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

সিরাত এর ছবি

লেখাটায় তিন দিয়েছিলাম - এই ধরনের আরেকটি লেখার লোভে এক তারা বাড়িয়ে দিলাম।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পাঁচ মাস হতে চল্‌ল ভ্রাতা! এই সিরিজের আর পোস্ট কই?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।