৮৫০ মেগাওয়াটের মুলা ঝুলছে। সেই মুলায় চড়ে দেশের গার্জেনেরা গজরাচ্ছেন। টেন্ডার ছাড়া হয়েছে। ফেল কড়ি মাখ তেল। তেলটাই মাখতে হবে, কেননা গ্যাস নেই। থাকলেও ৮০% পি এস সি সরিকদের থেকে কিনে খেতে হবে। ৮৫০ মেগাওয়াটের টেন্ডার খিলাড়ীদের সাফ বলে দেয়া হয়েছে যে আমাদের ওসব গ্যাসট্যাস নেই - তোমরা ফুয়েলঅয়েল আর ফার্নেসঅয়েল দিয়ে কাম চালিয়ে নাও।
এই ফুয়েলঅয়েল আর ফার্নেসঅয়েল কি বস্তু? আমাদের যেমন ভাল নাম আর ডাকনাম থাকে, ফুয়েলঅয়েল আর ফার্নেসঅয়েলও একই জিনিস। এই ক্রুড থেকে পেট্রোল আর আলকাতরা চুষে নেবার পরে যা বাকি থাকে সেটাই ফুয়েলঅয়েল। ক্রেতা কে, তার ওপর ভিত্তিকরে বিভিন্ন নামে একে ডাকা হয়। একে জাল দিলে হালকা ডিজেল, ভারী ডিজেল, ভারী ফার্নেসঅয়েল এগুলো বের করা যায়। ডিজেলের কাটতি আছে এমন দেশে যেমন ইউরোপে, সেখানে তাই করা হয়। যেখানে ডিজেলের বাজার ছোট, কিন্তু বেশ ঠান্ডাপড়ে, সেখানে এই জ্বলিয়ে ঘর গরম করা হয়। আবার এটাকে সরাসরি জাহাজ, কারখানায় খাইয়ে দেয়া যায়। তবে ঐ ঘর গরম আর জাহাজ কারখানার কাটতি গাড়ী চালানোর ডিজেলের তুলনায় কিছুই না। আর সুয়েজ খালের পূব দিকে ফুয়েল ওয়েলের দামটাও কমতির দিকেই থাকতো। পূব থেকে পশ্চিমে এই জিনিস আনতে হলে সুয়েজের হয় মালিক কে টাকা দিতে হবে, নয়তো আফ্রিকার পাছা ঘুরে আসতে হবে। এতে পোষায় না। তাই ঐ মাল পূবেই থাকতো, শস্তাতেই থাকতো।
তবে কি জানেন, আজকাল কিসব ক্র্যাকার/ফ্র্যাকার/আপগ্রেডার বলে যন্তরমন্তর বেরিয়েছে। দাদার আমলের পরিশোধনাগারের আগায় এগুলো লাগিয়ে নিলে আর ফুয়েল ওয়েলে ভাসতে হয় না। আর নতুন যত কারখানা বসছে, সেগুলো আর শুধু আর পরিশোধনাগার, এক একটা পেট্রোকেমিকেল কম্প্লেক্স। খালি তেল পরিশোধন করেই এরা থেমে থাকে না, পেট্রল কেরোসিন তো আছেই, ঐ ফুয়েল অয়েলেও পেঁদিয়ে পেট্রল, কেরোসিন, ডিজেল করে ছাড়ে। যে হতছাড়া ক'ছটাক ফুয়েল অয়েলে 'আমি বউ হব না রে' বলে নড়তে চায় না, সেগুলোকেও ছেড়ে কথা কয় না, ওগুলোকেও অনুঘটক, ভ্যাকুয়াম ইত্যাদি দিয়ে ঝেটিয়ে বিষ ঝেড়ে কেমিকেলের কারখানার কাচামাল করে নেয়।
এই ক'বছরেই সিঙগাপুর, চীন, সৌদি আরব, কুয়েত, থাইল্যান্ড আর চীনের পরিশোধনাগারগুলো টপাটপ সব এইসব যন্তরমন্তর বসিয়েছে। তাদেরই দোষ দেই কেন। বড়লোক দেশগুলো তো যত্তসব গাছপেয়ারু সবজেমনাদের খপ্পড়ে পড়ে গেছে। সেখানে নতুন বড় পরিশোধনাগার বা কেমিকেল কারখানা ফাঁদবেন কি? যেগুলো আছে সেগুলোরই নাভিশ্বাস। আইনের খবরদারি, ভোক্তার চোখরাঙানী, খরচ আর খরচ। টিমটিম করে যেগুলো জ্বলছে, সেগুলো ক'বছর টেকে কে জানে। তো সবাই তাই তাঁকিয়ে আছে পূবদিকের এই ঝাঁ চকচকে নতুন ইষ্টিলের কারখানাগুলোর দিকে। গাছপেয়ারু সবজেমনাগুলো আবার একটু দূরকানা। দূরদেশে তাদের চোখরাঙানী নেই।
কিন্তূ আমাদের ফুয়েল ওয়েলের সাথে এর সম্পর্কটা কি?
আছে আছে! আগে তো পশ্চিমে আসতো ক্রুড - তারপর এখানের কারখানায় সেটা চিপে তেল-কেমিকেল বের করে বাজারে ছাড়া হত। এখন আসবে পরিশোধিত পেট্রল, ডিজেল, কেমিকেল। সেগুলো আসবে সুয়েজের পূব দিক থেকেই। আর যেসব নতুন কারখানা এগুলোর যোগান দেবে, সেগুলোর বেশীরভাগই চাইবে শস্তার কাঁচামাল ব্যাবহার করতে। আর ঐদিকে শস্তার কাচামালটা যেন কি?
জ্বী, সেটা হল আমাদের অতি স্নেহের ফুয়েল অয়েল!
এবারটায় একটু আঁক কষি, কি বলেন?
৮৫০ মেগাওয়াটের কারখানা চালাতে বছরে ২ মিলিয়ন টন ফুয়েল অয়েল লাগবে । এটা আমার নিজের হিসাব, যেখানে আমি ধরে নিয়েছি এই বিদ্যুত কেন্দ্রগুলি ২৫% এফিশিয়েন্ট আর ফুয়েল ওয়েলের এনার্জিডেন্সিটি কেজিপ্রতি ৪০ মেগাজুল। এইখানে পাবলিক প্রশ্ন করলে বুয়েটি আফা-ভাই বেরাদরেরা একটু ডান হাত দিবেন । এই ফুয়েল ওয়েলে সয়লাবের দিনে দাম টনপ্রতি ৩৫০-৫০০ ডলার এর দিকেই থাকে। ৩৫০ এর দরেও বছরে ৭০০ মিলিয়নের ধাক্কা। সামনে আসছে শুভ দিন, কেমিকেল মার্কায় ভোট দিন।
আবার ৮৫০ মেগাওয়াটের কারখানা চালাতে বছরে ৪০ বিসিএফ এর মত গ্যাস লাগার কথা (৬০% এফিসিয়েন্সিতে, এখানেও বুয়েটী ভাইয়ের এই গবেটের ভুলচুক ঠিক কইরা দিয়া কয়টা নেকি হাসেল করেন)। এই গ্যাস আমাদের আছে। সরকার যদি বাজারদর দিতে রাজী হয় তাহলে চাইলে শেভরন, কেয়ার্ন দুজনেই হামলে পড়ে আমাদের এই গ্যাস যোগাড় করে দেবে। ১০০% বাজার দরে টেন্ডার ধরলে অশীতিপর তিতাসও হঠাত পূনর্যৌবন লাভ করবে। দেশে পাওয়া না গেলে বর্মা-ভারতও তিন পায়ে খাড়া হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ । এক বিসিএফ এর দাম বাজাএর ৫-৬ মিলিয়ন ডলারের মত। ৫ এর দরে খরচা গিয়ে দাঁড়ায় ২০০ মিলিয়নের মত।
এখন কইনছাইন দেখিঃ
১। দেশের জন্য কোনটা বড় বিলা? ৭০০ মিলিয়নের খরচা, নাকি ২০০ মিলিয়নের খরচা?
২। বাজার দরে গ্যাস কিনা বড় গুনাহ, নাকি ফুয়েল ওয়েল বাজার দরে কিনা বড় গুনাহ?
৩। দেশের ২০০ মিলিয়নের সম্পদ (যেটা এখনো আবিস্কার হয়নাই) বাঁচাতে রাস্তায় নেমে পুলিশের বাড়ী খেলে বেশী সোয়াব, নাকি ৭০০ মিলিয়নের হুন্ডি লিখে দেয়া হলেও বাসায় বসে থাকায় বেশী সোয়াব?
(ছবি সত্ব ; ইন্টারনেট)
মন্তব্য
বিনিয়োগের প্রশ্নে টাকার পরিমানটাই কি শেষ কথা ???
স্বপ্নদ্রোহ
ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নটি বুঝতে পারছি না। আরেকটু বিষদ বলুন।
সম্ভবতঃ এরকম কিছু বুঝাতে চেয়েছেন যে, ঐ ২০০ মিলিয়নের হ্যাপা তথা গ্যাস উত্তোলনের সাথে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ইত্যাদি( বিরোধীরা যেমন বলেন আর কি) জড়িয়ে আছে।
৭০০ মিলিয়নের হ্যাপার সাথে আবার ওসব কিছু নেই। কোন বিদেশী কোম্পানীকে এখানে আসতে দিতে হচ্ছেনা, আমরা কেবল কিনে আনছি।
যদি এই প্রপঞ্চ ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে এ থেকে আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের একটা বাজার মুল্য ও বের করা যেতে পারে
পোষ্ট আপনার নামের মতোই
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ঘরে তালা লেগে আছে, চাবি উধাও। চাবিওয়ালাকে বলা হল তুমি তালা খুলতে পারলে আমি তোমার থেকে চাবিটা কিনে নেব, বাজার দরে। না পারলে তোমার সময়ের টাকা পাবে, কিন্তু এর বেশী না। এর মানে কি আমি আমার বাড়ীর মালিকানাটাই চাবিওয়ালাকে দিয়ে দিলাম?
---
৭০০ মিলিয়নের হ্যাপার সাথে আবার ওসব কিছু নেই
৮৫০ মেগাওয়াতের বিদ্যুত দেশেই তৈরী হবে। সেটারো একটি অংশ কিনতে হবে বাজার দরেই। নিজের দেশের বিদ্যুত বাজার দরে কিনলে সার্বভৌমত্বে আঁচড় পড়ে না, কিন্তু গ্যাস কিনলে সার্বভৌমত্বে ভাটা পড়ে।
---
কোন বিদেশী কোম্পানীকে এখানে আসতে দিতে হচ্ছেনা
দায়উ, সুমিটোমো, চায়না ন্যাশনাল এগুলো বাংলাদেশী কোম্পানী? শর্টলিস্টে গেটকোর মত কোম্পানীও আছে।
আরে, আমি বলছিনা তো। যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যাচ্ছে বলে রাজপথে নেমেছেন আমি তাদের যুক্তি দিলাম মাত্র।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
পেপার-প্রত্রিকায় প্রায় লেখে গ্যাসের চাপ নেই,মানে কি গ্যাসের সরবরাহ কম,গ্যাস কম উত্তোলন হচ্ছে,নাকি গ্যাসের মজুদ কম । যেটাই ধরুন না কেন, আপাতদৃষ্টে কোন স্বল্পমেয়াদি সমাধান সরকারের কাছে নেই বা ভাল একটা উপায় বাতলাবার ক্ষমতা তার নেই। তাই ওনাদের মর্জি হল একটা প্রস্তাব দিয়ে দিল। মাংগো পাব্লিকের কাছে দেখাতেও তো হবে- ওনারা আপ্রান চেষ্টা কর যাচ্ছে। তাই টাকার হিসাব করলে হবে সবসময়?
দারুণ !
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
পড়লাম, কিন্তু হুট করে মন্তব্য করতে ইচ্ছা হচ্ছে না এরকম একটা ব্যপারে। একটু ভেবে আবার আসছি।
ও হ্যাঁ, এমন একটা পোষ্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
আমিও একটু ভাইবা আসি। কঠিন কুইজ জিগাইলেন ভাইজান...
চমৎকার।
৮৫০ মেগার জন্য গ্যাসের মোটামোটি একটা ধারনা পেয়েছিলাম। ফার্নেস অয়েলের হিসাবটাতে চমৎকৃত হলাম। কোন ধারনাই ছিলনা। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
এক বিসিএফ এর দাম বাজাএর ৫-৬ হাজার ডলারের মত। - সম্ভবত বলতে চেয়েছিলেন ৫-৬ মিলিয়ন ডলারের মত। আইওসি গূলো দিচ্ছে সর্বোচ্চ ৩ মিলিয়ন ডলারে (কিছু কম)।
আপাতদৃষ্টিতে এর মানে দাঁড়াচ্ছে বাজার দরে গ্যাস আমদানী করেও ফার্নেস অয়েলের চেয়ে বেশ কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। খুব ভাল। খুব ভাল। যখন মায়ানমার থেকে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস ভারতে গ্যাস রপ্তানীর জন্য বাংলাদেশ সম্মত হয়েছিল, তখনও সার্বভৌমত্বের কথা উঠেছিল। সেটা করা গেলে এখন তো এমনকি মায়ানমার থেকে গ্যাস আমদানী করেও অপেক্ষাকৃত কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত।
আমার ধারনা খুব কম লোকই ফার্নেস অয়েলের এই হিসাবের ব্যাপারে জানে। ভাল ভাল। সরকার হয়ত একঢিলে কয়েকটা পাখি মারতে চেয়েছে। সার্বভৌমত্বের কথাও উঠল না, আন্দোলনের সুযোগ নেই, বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটা মোটামোটি ব্যবস্থাও হল।
(আমি নিশ্চিত গ্যাসের থেকে ফার্নেস অয়েলে পরিবেশ দুষনের মাত্রা অনেক বেশি হবে।) – রাখেন আপনার পরিবশ। আর টাকা? আরে ম্যাক্রো ইকোনোমিক ইন্ডিকেটর গুলো (!?!) ঠিক থাকলেই তো হচ্ছে। সেগুলি কী সেই প্রশ্ন থাক।
আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এক বিসিএফ এর দাম বাজাএর ৫-৬ হাজার ডলারের মত। - সম্ভবত বলতে চেয়েছিলেন ৫-৬ মিলিয়ন ডলারের মত। আইওসি গূলো দিচ্ছে সর্বোচ্চ ৩ মিলিয়ন ডলারে (কিছু কম)
আপনার কথাই ঠিক। আমি এমসিএফ এর দাম বিসিএফ এ দিয়ে দিয়েছিলাম। ব্লগে ঠিক করে দিয়েছি।
--
আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সঠিক। আর কিছু না পারুক। আমলকি রাজনীতি ভালই পারে।
নতুন মন্তব্য করুন