দেখতে দেখতে এসে গেল সেই দিন। এইতো আগামী ৭ ডিসেম্বর কোপেনহাগেনে শুরু হবে অনেক প্রতিক্ষিত ঐতিহাসিক পরিবেশ জলছা।
জলছার পোশাকি নাম হল কপ ১৫। নামশুনে মনে হতে পারে যে এখানে ১৫টা (রসগোল্লা) কপ কপ করে গিলে ফেলা হবে বা সবাই মিলে শামসু কসাইকে হেইও বলে বলে ১৫ বার চাপাতির কোপ মারতে দেখবেন। জলছার মধ্যে রসগোল্লার মত মিঠা আর চাপাতি মত সুরুখ্ ললনাদের হয়তো আনাগোনা থাকলেও থাকতে পারে, তবে গিলা বা কোপানোর মত কিছু এখানে হবে বলে মনে হয় না। এর আগে আরো ১৪টা এই জাতীয় জলছা হয়ে গেছে, এটা হল ১৫ লম্বর। কপ বা COP হল কনফারেন্স অব পার্টিজ, আরজ হয় যে, তাবত দুনিয়ার জমিদার মোড়লেরা তেনাদের সেরা সব কাওয়াল আর বাহাসিদের নিয়ে একসাথে বসবেন। এর আগে জলছা ১৪টা হলেও সবগুলো কিন্তু তেমন জমেনি। তিন লম্বরেরটা বেশ হিট করেছিল (কিওটো, ১৯৯৭), এর পরের ছয় লম্বরও (হেগ, বন, ২০০০-২০০১) কিছু দর্শক মেতেছিল বটে।
কিওটো হিট হওয়ার পিছনে কারন আছে। কিওটো আগে দুনিয়া গরম হয়ে যাচ্ছে এমন কথা ইস্কান্ডিনেভিয়া বা জার্মানীর কোনাকাঞ্চির রাজনীতে কিছু আওয়াজ পাওয়া গেলেও বড়দের রাজনীতির এর কোন জায়গা ছিল না। কিওটো গিয়েই দুনিয়া গরম মাজহাবের একদম 'গলি থেকে রাজপথ' হয়ে গেল। এখানেই পর্থম ফাস্ট বিশ্বের আমির ফকির সব দেশ এক কাতারে দাঁড়িয়ে কলমা পড়ে ঈমান আনল যে (১) দুনিয়া গরম হয়ে যাচ্ছে , (২) মানুষের কীর্তিকলাপেই এই গরমভাব বাড়ছে, (৩) বনি আদম তাড়াতাড়ি লাইনে না আসলে গরম বাড়তে বাড়তে ডাইরেক কেয়ামত হয়ে যাবে। বেবাকতেই আমিন বলল, এক কাফের আম্রিকা ছাড়া; সে না বলল হ্যাঁ, না বলল না। তাবত বিশ্বের জমিদার মোড়ল সাইজের ৩০-৪০টা দেশ তওবা পড়ে নিয়ত বেন্ধে নিল যে তারা চামে চামে ২০১২ নাগাদ লাইনে এসে যাবে। তবে এই নিয়তগুলো ছিল নফল আমলের নিয়ত। করলে করলাম, না করলে না করলাম। এই লাইনে আসার আবার তিনটা দরজা বানানো হইল। এখন যেই মোড়ল যেই দরজায় যাক, সেটা তেনার অভিরূচি। আর এই নিয়তের মধ্যে আবার একটা কিন্তু রেখে দেয়া হল, একটা এক্সপায়ারি ডেট, ২০১২ সাল। ২০১২ সালের পরে কারো কোন দায় দায়িত্ব নাই।
২০০০ সালের হেগ এর ছয় লম্বর জলছায় আম্রিকা জব্বর এক খেল দেখাল। এতদিন 'মাটির তৈরী আদমেরে করিনা কুর্নিশ' এই জাতীয় বদাওয়াজ তোলার পর আম্রিকানদের আমিরে আলা কিলিন্টন ঠাস্ করে বলে বসল যে তেনারা ঈমান আনতে পারেন যদি তাবত দুনিয়ার আমির ফকির সক্কলে আমরিকার দুনিয়া গরম করা কালো ধুঁয়া নগদ পয়সায় কিনে নেয়। এই নিয়ে আম্রিকান কবিয়ালের সাথে জার্মান কবিয়ালের কয়েক রাতভর এক জম্পেশ লড়াই হয়েছিল। সাথে সাথে বিরটিশ হারমোনিয়াম, জাপানি করতাল আর ডেনমার্কের ঢুলি, সে কি টপ বাজিয়েছিল, সে আর বলার মত না। কিন্তু শেষে কিছু ইতর মিসকিন আতরাফ টাইপ দেশের বেক্কল পাবলিক ইস্টেজে উঠে পড়ায় শো'আর চলতে পারেনি।
পরের বছর ২০০১ এ সাড়ে-ছয় লম্বরের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্যান্ডেল মেরাপ গিয়ে বসল জার্মানীর বনে। এরই মধ্যে আবার আমরিকার মজলিশে শুরায় হেরফের হয়ে গেল। কিলিন্টনকে ডিঙ্গিয়ে বাচ্চাবুশ হল আম্রিকার আমিরে আলা। এসেই ঘোষনা 'এইসব কিওটো ফিওটো আবার কি। আমরিকা এর মধ্যে নাই। টেক টু টেক, নোট টেক টু গো। '। তবে সবাই তো আর পাগল না, তারা নাবুজ নাবালক বাচ্চাবুশের কথায় মাইন্ড না করে জলছাটা ভালয় ভালয় শেষ করল। কাজের কাজ কিছু কিন্তু আসলেই হল। কালোধুঁয়ার একটা আড়ং এর কথা ফাইনাল হয়ে গেল। আর ফকির মিস্কিন দেশগুলো, যেগুলো দুনিয়া গরম হলে হল শুকায়ে হাবিয়া না হয় দরিয়ায় সয়লাব হয়ে যাবে, সেগুলোর জন্যও কিছু যাকাত ফেত্রার ব্যাবস্থা রাখা হল, তবে কতটুকু তেজারতে কতটুকু যাকাত উসুল করতে হবে এটার মাসলা হাসিল হল না।
যাউগ্গা এই ফাউ কামে কিওটো আর বন থেকে হেগে আসার কারন হল যে এই ঐতিহাসিক কপ ১৫তে কিওটোর সেই নফল নিয়তগুলিকে কে ফর্জে আইনে রূপান্তরিত করা নিয়ে বিশাল বাহাস হবে। সেই সাথে সেই যে বন এ বসে যাকাত ফেতরার কথা হয়েছিল, এই দফায় সেটা নিয়ে একটা ফতোয়া আসতে পারে। আমাদের ওয়াজিরে আযম ছাহেবাও তেনার যাবেন সেখানে তাবত মিসকিন আতরাফ দেশের পক্ষে আরজ গুজার পেশ করতে। এটাকে শুরুতে একটা বেরহমি মনে হতে পারে। আমাদের ওয়াজিরে আযম সারা জীবনে এতবড় সভায় নিজের দেশের হয়ে মুখফুটে দুটো কথা বলেছেন বলে মনে পড়েনা। এখন আত্কা তাবত মিসকিন আতরাফ দেশের হয়ে দফা দফা দাবী হাসিল করে ফেলবেন, এই উচ্চাশা করি না। তবে তিনি যদি নভেম্বরের মত আরেকটা বক্তিমা দেন, তাহলে কিন্তু তিনি ফকিরের দোয়া পাবেন। তিনি যেহেতু আমাদের প্রতিনিধি, তাই আমাদের হয়ে তিনি কি চাইবেন, সেটার দিকেই চেয়ে আছি।
আমার দাবী সাদামাটা - বাংলাদেশে যে বিনীয়োগ হবে তার পুরোটাই পরিবেশ বান্ধব। টাকা নাই, প্রযুক্তি নাই, তাই অভাবে স্বভাব নষ্ট। দূর্নিতী আর পরিবেশের প্রতি অবগ্গা। আমাদের বিনীয়োগ চাই, প্রযুক্তি চাই আরে এই দুইটাই চাই সাততাড়াতাড়ি। কন্সাল্টেন, অনুদান আর বক্তিমা চাই না।
আমেরিকা, চীন, ভারতের ঘোষনা আমাকে আরো আশাবাদী করেছে যে, বিনীয়োগ আর প্রযুক্তির সূযোগের ব্যাপক প্রসার ঘটতে আর দেরী নেই।
আপনার কি মনে হয়? কপ ১৫ তে কি বাংলাদেশের কোন বাস্তবিক অর্জন আশা করার আছে?
(ছবিসত্বঃ কপ ১৫ ওয়েবসাইট)
মন্তব্য
বিন্দুমাত্র না!!!
=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
কাম সারছে। কেন রে ভাই? বাংলাদেশ কি এতই ফেলনা?
১১ এর আগে কপ ছিলো না সেটা একটু খোলাসা কইরেন,,,,
আংশিক ঠিক। ১১ এর আগে কপ (কনফারেন্স) ঠিকই ছিল মপ (মিটিং) ছিল না। খোলাসা করি।
কনফারেন্স অব পার্টিজ বা কপ হইল গিয়া ১৯৯২ সালের রিওর আর্থসামিটে যারা যারা জাতিসংঘের সমঝোতা প্রস্তাব (কনভেনশান) সই করেছিলেন, তাদের কনফারেন্স, প্রথমটা হয় বার্লিনে ১৯৯৫ সালে।
আর মিটিং অব পার্টিজ বা মপ হইল গিয়া ১৯৯৭ সালের তিন নম্বর কিওটোতে প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তি (কিওটো প্রটোকল) এ সই করেছে, তাদের মিটিং। আর এখানে আপনি ঠিক যে প্রথম মপ হয় ১১ নম্বর কপের সময়।
- বাংলাদেশেও কপ হোক, এইটা আমার দাবী।
বাজারে শুনি আগুন লাগছে জিনিষপাতির দামে। কপকপ কইরা নাটোরের কাচাগোল্লা নিধন করার সাথে সাথে মড়লদের পাক পাও আমগো দেশের নাপাক জমিতেও পড়ুক।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমিন। সুম্মামীন।
--
অফটপিক। এইখেপের মিটফারের সুন্দরীর ছবি না তুললে খবরই আছে।
টেন্ডার কবে দিতেছে ?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এর মধ্যে আবার টেন্ডারও হবে নাকি? কন কি!
খরচাপাতির বিষয় আছে না ?! এতো এতো কাড়ি কাড়ি টাকা আসবে সেগুলো যাতে "সঠিক লোকেদের" হাতে যায় সেটা দেখতে হবে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমার লেখাটি পোষ্ট করার পর দেখলাম আপনার পোষ্টটি, ভাগ্যিস প্রেক্ষাপট এক হলেও লেখার মূল বিষয় এক হয়নি।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
কি মনে হয়, পাবে কিছু বাংলাদেশ ?
এই খবরটি আশার বাণী শোনাচ্ছে।
----------------------------------------------------------------------------
zahidripon এট gmail ডট কম
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
আশা করার কোন কারণ দেখছিনা। কিছু বাইরের ফান্ড যোগাড় হবে, জাতীয় বাজেট থেকে কিছু থোক বরাদ্দ হবে। শেষ কাজ-কর্ম হবে অষ্টরম্ভা। টেন্ডারের কথাতো হাসিব বলেই দিয়েছেন। মিল্-জুল্ করে খাবার জন্য সব আমলেই এইসব আন্তর্জাতিক গরম বিষয়গুলো খুবই উপাদেয়।
ভাববেন না এই রাস্তায় বাংলাদেশই একমাত্র। রাঘব বোয়াল থেকে চুনোপুটি সব দেশেই ক্ষমতাসীনরা এই রাস্তায় খানাদানা করে কিন্তু কোথাও বিশেষ কাজ হয় না।
তবে কাজ যে একেবারে হয় না তা নয়। নিজের ঘাড়ে স্থানীয়ভাবে সমূহ বিপদ আসলে তখন স্থানীয়ভাবে কিছু কাজ করা হয়। কিন্তু কোন বেকুবই এই কথাটা বোঝার চেষ্টা করেনা যে সমস্যাটা একেবারেই স্থানীয় নয়। গরম দুনিয়াকে ঠাণ্ডা করতে হলে দুনিয়াজোড়া একসাথে কাজ করতে হবে।
মালদ্বীপ তলিয়ে গেলে বা বাংলাদেশ ডুবে গেলে ওবামা-গর্ডনদের দেশ "জুদি" পর্বতের চূড়ায় উঠে যাবে না। তখন "আর্ক" বানানোর ফুরসতটাও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন