আমার মরোক্কান সহকর্মীর চারবছুরে ছেলের হাতখড়ি হয়েছে। রটারডাম মওলানা মসজীদের রবিবার-মাদ্রাসায় যায় সে। সমবয়িসী পিচকিপাচকিদের সাথে ফরাসে বসে সামনে পিছে ঝুঁকে ঝুঁকে আরবী বর্ণমালা শেখে। গর্বিত মা আইফোনে করে ছেলের বর্নমালা আবৃত্তি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। গত সপ্তায় দুপুরের খাবারের ফাঁকে সবাইকে সেই আবৃত্তি শুনিয়ে ছেড়েছে। ছোট ছাঁটা বাদামী চুলের ফর্সা ডালিমগালের ফুটফুটে একটা ছেলে। হিজাববতী মায়ের অনুরোধে লাজুক চেহারা নিয়ে তাদের বাসার মেঝের অপরূপ শোভা অবলোকন করতে করতে সে মিহি গলায় আবৃত্তি করলঃ
"আবজাদিন হাওয়াজিন হুতিয়া কালমান সা'ফাদ ক্বুরিসাত সাহুদ যাগুশ"
তারপর ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল। ছোট ভিডিওটি ফুরল।
খাবার টেবিলে সবাই বাহ বাহ করছে। আমিও একটু দাঁত ক্যালালাম। কিন্তু মনে মনে বল্লাম, ছো! কচু হয়েছে। তোমার ছেলে কিসব আবোলতাবোল বলছে, আর তুমি গাধা মেয়ে তা নিয়ে এত লাফালাফি করছ। একদম হয়নি।
প্রীয় পাঠক, যদি এ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে আপনি বড়শিতে গেঁথেছেন। এবার সেপিয়া বা সাদাকালোর একটা ফ্ল্যাশব্যাকে ডুব দিই চলুন। প্রাথমিক স্কুলে আরবী ছিল আপনার? তাহলে নিশ্চয়ই কান পাতলে আপনিও কাঠের টেবিলে চিকন বেতের সপাং সপাং আর কোন এক আঞ্চলিক টানের হুঙ্কার শুনতে পান। আমার স্কুলের হুজুর নিজের নাকি গলায় তারস্বরে চিতকার করে করে ও বেতের বিটে বিটে আমাদের চিতকার করিয়ে করিয়ে সবার মগজে টাট্টু করে দিয়েছেঃ আলেফ-বা-তা-সা, আলেফ খাআড়া, বা এর নিচে এক নক্তা, তা এর উপর দুই নক্তা, সা এর উপর----। সপাং সপাং। আরো জুরে আরো জুরে। এরিও রুল ১২, বেতের বাড়ী এগ্গানোও মেডিত ফইত্ত ন'। ফির সে আলেফ খাড়া,
এই না হল ছহিহ্ আরবী বর্ণমালা।
আরেকটা ফ্ল্যাশব্যাক। এবারে আংশিক রঙীন। অমিতাভ বাচ্চনের একবার মুসলমান হবার সখ পেয়ে বসল। কথা নেই বার্তা নেই, ফিনফিনে সালোয়ার কুর্তা পড়ে মোনাজাতে বসে যেত আর আল্লারাখ্খাআআআ বলে চিতকার দিয়ে সে এক চীলের পিছনে পিছনে ঘুরতো। চীল বেচারা বিরক্ত হয়ে তার মাথার ওপর ইয়াব্বড় এক তাবিজ ফেলে তাকে কুপোকাত করতে চাইতো, কিন্তু বাচ্চন বেটা দরকারের চাইতে বেশী লাম্বু বলে সেই তাবিজ ধরে ফেলতো। তারপর সেই তাবিজ নিয়ে কত আদেলখাপনা।
সেই চীলে ফেলা তাবিজে লেখা থাকতো ٧٨٦ বা ৭৮৬। তখন বড়দের জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম যে এই সংখ্যা দিয়ে কোনভাবে সৃষ্টিকর্তার নাম বোঝায়। কিন্তু ঠিক কিভাবে বোঝায়, সেটা কেউ তখন পরিস্কার করতে পারেনি। শঙ্কু নাকি ফেলুদায় ক্রিপ্টোগ্রামের কথা জেনে আলেফ-বা-তা-সা তে এক-দুই-তিন বসিয়ে চেষ্টা করে দেখেছি। কিন্তু যোগফল তো ৭৮৬ হয় না। কিছুদিন চিন্তায় ছিলাম, সিনডা কি?
মাঞ্জার সিজন নাকি লাট্টুর সিজন ঠিক কোনটা এরপরে ঘটেছিল মনে নেই। তবে এমনই কিছু অতীব জরুরী কার্যক্রম চলে আসায় ৭৮৬ এর মর্মোদ্ধারে সেযাত্রায় আর মনোনিবেশ করা যায়নি।
কাট!
বাংলা যেমন অনেক প্রাকৃতের মধ্য দিয়ে এসেছে, আরবী লিখিত রূপেও তার ব্যাতিক্রম কিছু হয়নি। আমিরাতে চড়ে যে আরবীতে বিমানের সেফটি ব্রিফিং শুনেছি আর ধানমন্ডি ঈদগাহে কোরবানীর ঈদের খুদবায় যেমটি শুনেছি, আমি নিশ্চিত যে তার পার্থক্য শুধু আঞ্চলিকতাতেই নয়, সময়েও। এই দুইয়ের পার্থক্যকে কি আমি চর্যাপদের বাংলা ও ফারুকীয় বাংলার মধ্যকার পার্থক্যের সাথে তুলনা করতে পারি? যাই হোক, কোরান সংকলনের আগে আরবী দেখতে কেমন ছিল, তা খুঁজতে গিয়েই ৭৮৬, এর রহস্য আমার কাছে কিছুটা পরিস্কার হল। সেকালে আসলে আরবী বর্ণমালা আমাদের পরিচিত আরবী বর্ণমালার মতই ছিল না। দেখতে, শুনতে, ক্রমে সব দিক থেকেই তা ছিল আলাদা। এই বিষয়টা আমার কাছে নতুন হালেও আরবী জানা লোকেদের কাছে এটা পানিভাত।
প্রাক-ইসলামী আরবী তার ফিনিশিয় উতপত্তিকে অস্বীকার করতে পারেনি। তাই ইসলামের আগের সেই আরবীর বর্ণমালার ক্রম ফিনিশিয় থেকে উদ্ভূত আরসব ভাষার বর্ণমালার মত একই ক্রমে সাজানো। এখানে দেখুন।। ইসলামের শুরুর দিকে আটপৌরে জীবনে মানুষ এই পুরাতন বর্ণমালাই ব্যাবহার করেছে। এখানে সবচাইতে পুরাতন (৬৪২খৃ) আরবী লেখাগুলোর একটির নমুনা দেখা যাবে। আরবী পড়তে পারলে এখানে ওপর থেকে চার নম্বর লাইনের ডান দিক থেকে "শুরু করছি পরম করুনাময়ের নামে" আরবীতে চোখে পড়তে পারে। আমার আলেম ভাইয়েরা নক্তা, জের, যবর পেশ এর অভাব বোধ করছেন কি?
ইসলাম নতুন বর্ণমালা দিয়েছে, কিন্তু আরবদেশের আমজনতা তার পুরোটা খায়নি। কিন্তু আমরা যারা আরবীকে দুর থেকে চিনি, তারা ইসলামের দেয়া আরবীতে চুর হয়ে গেছি। যার মায়ের ভাষা আরবী, সে কিন্তু সেই প্রাক ইসলামী বর্ণ মালাই এখনো শেখে। সেখানে আরবী বর্ণমালার ক্রম আলেফ বা তা সা জিম হা খা, নয়, বরং আলেফ বা জিম দাল হা জা ইত্যাদি। সংক্ষেপে আবজাদ । আর সেটাকেই আরব-মাগরেবের পিচকিগুলি শেখে একটি বিশেষ শ্লোক আওড়ে, যেটি শুনে আমি নাক সিটকেছি গত সপ্তাহে।
ভারতীয় সংখ্যামালা আরবীতে ঢুকে যাবার আগে, আরবীতে আলাদা করে কোন সংখ্যামালাই ছিল না। ২৮টি বর্ণ দিয়েই বিভিন্ন সংখ্যা নির্দেশ করা হত। আর সংখ্যা নির্দেশের ক্রমটি হল সেই আবজাদ - ক্রমে। এই আবজাদ ক্রমের সংখ্যাগুলোকে যদি পরম করুনাময়ের নামের শ্লোকটির বর্ণগুলোতে বসানো হয়, তাহলেই হিসাব মিলে যায়। যোগফল কত হয় বলুন তো?
আল্লারাখ্খাআআআ!
(ছবিসত্ত্ব , ফ্লিকার http://farm2.static.flickr.com/1315/1023768016_a6a65d41b7.jpg?v=0)
মন্তব্য
১
পাঁচ দিলাম। থামবেন না!!
লোকে বলে আরবী নাকি এমন একটা ভাষা, যেটা খুব আরামে ট্র্যাকব্যাক করা যায়? ঠিক?
আপনি কি পুরাই আরবী জানেন?
২
আজকে জানলাম নিউ ইয়র্ক টাইমস পইড়া, যে বাবা নাকি আরবী শব্দ। ওরা বাবারে বলে বাব্বাহ, আমরা বলি বাবা বা আব্বা।
৩
ক্যান জোরে কন নাই কিল্লাই? সৎ সাহস নাই?
হীব্রুতে বাবাকে নাকি আব্বা বলে। এক ইহুদী বন্ধুর কাছ থেকে শোনা।
--------------------------------------
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বাবা তুর্কি।
- খাস আরবরাও 'বাবা' বলে। আমরাও বলি। (জার্মানরা বলে 'পাপা')
আমার মনেহয় এই শব্দগুলোর উৎস কোনো না কোনো ভাবে 'একই'। নাহলে ভাষাভেদে এই অবিস্মরণীয় মিল হবার কথা না।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমার এক চৈনিক বান্ধবীও আব্বাকে "বাবা" বলে!!!!!
ইন্টারেস্টিং।
হ, তাইওয়ানেও আব্বারে বাবা ডাকে, তয় আম্মা ডাকে নানীরে!
লেখাটি ভালো লাগল।
==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
আগের মত এই লেখাটাও ইন্টারেস্টিং হয়েছে।
--------------------------------------
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সরকারী স্কুলে মনে হয় ক্লাস সেভেন আর ক্লাস এইটে আরবি শিক্ষা বাধ্যতামূলক। আমি দুই বছরই যতদূর মনে পড়ে আরবিতে সর্বোচ্চ পেয়েছিলাম মাইরের ঠ্যালায়। আর কোনো বিষয়ে আমি আমার মেধাবী সহপাঠীদের টেক্কা দিতে পারি নাই স্কুলজীবনে। রাজুলুন আলিমুন ছাড়া এখন কিসুই আর মনে নাই। এ কারণেই মনে হয়, মাইরের উপ্রে ওষুধ নাই ঠিকই, কিন্তু এই ওষুধের কার্যকারিতা দ্রুত লোপ পায়।
মধ্যপ্রাচ্যগামী কর্মীদের জন্য সহজ আরবী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করার অনুরোধ জানাই, পাশাপাশি সরকারী স্কুলের ক্লাস সেভেন এইট থেকে আরবী আর সংস্কৃত শিক্ষার ব্যবস্থাটি তুলে দেয়ার দাবি জানাই। পরিবর্তে দেশের আইন ও বিচারের ওপর একটি কোর্স চালু করার অনুরোধ করি। এতে করে দেশের আইন কাঠামো সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের মৌলিক জ্ঞান অর্জিত হবে।
সহমত।
আমার জানা মতে বোয়েসেল (আদম বেপারীদের ঘুষ জমা দেয়ার অফিস) থেকে খুব বেসিক আরবী শেখার ব্যাবস্থা ছিল, এখন আর আছে কি না কে জানে। তবে সৌদি আরবের কেটারিং কোম্পানী সোডেক্সো যে তাদের উপমহাদেশীয় ও ফিলিপিনো কর্মচারীদের আরবী ও ইংরেজী শেখায়, সেটা আমি নিশ্চিত। তবে এগুলো কিছুই না, আরো অনেক বেশী দরকার।
- আমার নানী বলেছিলেন ৭৮৬-এর ব্যবহারটা নাকি আকবর শুরু করেছিলেন। আমি অবশ্য এই তথ্য ঘেঁটে দেখিনি কখনো। নানী কোন সূত্র থেকে বলেছেন সেটাও জিজ্ঞেস করা হয়নি। তবে ভদ্রমহিলা পড়তেন অনেক, তাই হয়তো বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম।
তানবীন (যের-যবর-পেশ) যুক্ত আরবীর ব্যবহার আমি যদ্দূর জানি এই উপমহাদেশের কর্ম। আরও প্রিসাইজলী বললে 'কলকাতা প্রিন্ট' বলে একটা ভার্সন আছে ছাপা কোরানের। খুব সোজা আর স্পষ্ট করে লেখা, তানবীন সহকারে। আমিও রিডিং পড়ে যেতে পারি অনায়াসে।
কোরানের মূল প্রিন্টে তানবীনের ব্যবহার নেই। কারণ যেমনটা বললাম, এর ব্যবহার অনুসরণ করা হয়েছে কেবল এই উপমহাদেশে।
নানা সূত্র থেকে মাক্কী ও মাদানী আরবীতে যে কয়েকটা বই (কিতাব) দেখেছি আমি, কোনোটাতেই তানবীনের ব্যবহার নেই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তানবীন এবং হরকত ব্যবহার হয় উচ্চারনের সুবিধার জন্য। সেই কারনে অধিকাংশ লেখায় এর ব্যবহার নায়, ভিনদেশী ধার্মিকরা ভুল উচ্চারন করে সর্বনাশ করে ফেলবে এই ভয়ে এর প্রচলন করেছিলো হাজ্জাজ-ইবন-ইউসুফ। এইখানে একটা তুলনামূলক চিত্র পাবেন।
- মাই মিসটেক।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি যে স্কুলে পড়েছি সেখানে শুরু থেকেই বাংলা, ইংরেজী আর আরবী সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হত। এতে ফলাফল হচ্ছে এই যে, এখন পর্যন্ত এই তিনটা ভাষার কোনটাই ঠিকমত শেখা হয়নি। মূলতঃ একটা ভাষা শেখার যে সঠিক পদ্ধতি (শোনা > বলা > পড়া > লেখা), তা আমাদের স্কুলগুলোতে সাধারণতঃ অনুসরণ করা হয়না বলে আমাদের ভাষাজ্ঞান এত দুর্বল।
আমাদের দেশে আরবী শেখানো হয় শুধু কোরআন পড়ার উদ্দ্যেশ্যে, অর্থ বোঝার জন্য নয়। তাই এখানে কোনক্রমে বানান করে করে আরবী পড়তে পারলেই শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরা হয়। এখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ে সমান অজ্ঞ।
আমাদের স্কুলে আরবী ব্যাকরণ কন্ঠস্থ করানো হয়েছে, কিন্তু শব্দার্থ শেখানো হয়নি। এতে আমরা ভাষার কারিকুরী শিখেছি, কিন্তু আমাদের শব্দভাণ্ডার নেই। এতে আমরা হারক্বাত বা তানওয়ীন ছাড়া আরবী পড়তে পারি, কিন্তু অর্থ বলতে পারিনা।
আমাদের দেশে আরবী একটা দেবভাষা। তাই তার ইতিহাস, বিবর্তন, অর্থ পড়ানো হয় না, জানানো হয়না। এসবে এর মহিমা হ্রাস পায় বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশে আরবীর প্রাথমিক পাঠ হয় ক্বায়েদা বাগদাদী দিয়ে যা এককালে বাগদাদী লিপি রীতি অনুসরণ করে ছাপা হত। এই ছাপার ক্ষেত্রে আবার কোলকাতার ছাপা আর লক্ষ্মৌয়ের ছাপা ভিন্ন প্রকারের। এখনকার বাংলাদেশের অধিকাংশ আরবী বই-পুস্তক কোলকাতার ছাপারীতি অনুসরণ করে করা। লক্ষ্মৌ ছাপা কোলকাতা ছাপার চেয়ে একটু জটিল।
******************************************
আমি প্রাথমিক পর্যায়ে (পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত) মাতৃভাষার বাইরে দ্বিতীয় কোন ভাষা শেখানোর বিপক্ষে - তা ইংরেজীই হোক আর আরবীই হোক। একটা ভাষা ঠিকভাবে শেখার জন্য চার বৎসর যথেষ্ঠ। দুই বৎসরের ভাষা শিক্ষার কোর্স করে ইউরোপের নানা দেশতো বটেই এশিয়ার চীন, জাপান, কোরিয়ায় পর্যন্ত আমাদের ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা গ্রহন করতে পারছে। সেখানে বারো বৎসর ধরে ইংরেজী শিখিয়েও ছেলেমেয়েরা ঠিকমত ইংরেজী পড়তে-বলতে-লিখতে পারেনা, শুনে অর্থ বোঝেনা। ভাষাশিক্ষার এই গলদটা ধরতে হবে, দূর করতে হবে।
******************************************
কয়েকদিন ধরে দুর্দান্ত শুধু নিয়মিত পোস্টই দিচ্ছেননা, সাথে বিষয় বৈচিত্র্যেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন। "ডাইরেক ফাঁচ"।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
---
একদম একমত।
১.
দারুণ লেখা! কৌতূহলজাগানিয়া!!
২.
ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত আরবী আর কৃষি বিজ্ঞান পরীক্ষায় সবসময় প্রথম হয়েছি।
আমাদের আরবী পরীক্ষা দেবার ধরণটা ছিলো একটু অন্যরকম। একজন কবিতা মুখস্থ করে আসতো, আরেকজন আরবী হাদিসের অর্থ ও ব্যাখ্যা। পরীক্ষার হলে ৩৫ জন ছেলে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে যেতো। তারপর সময় ও সুযোগ বুঝে পরীক্ষার খাতা এক হাত থেকে আরেক হাতে ঘুরতো। খুব ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যেতো ক্লাসের ৪/৫ জনের পরীক্ষার খাতায় ভিন্ন ভিন্ন ধরণের আরবী হাতের লেখা। এভাবেই চলছিলো।
অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় আরবী শিক্ষক ঠিক করলো আরবীতেও মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চন হবে। যেই কথা সেই কাজ। পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র খুলে দেখি একটা অক্ষরও বুঝি না। এমনিতেও আরবী পড়তে পারি না। তার উপর যবর-যের-পেশ ছাড়া আরবী পড়তে পারার প্রশ্নই আসে না। কী আর করা।
"উবু -দশ-বিশ-তিরিশ-চল্লিশ" কিংবা "আকাশ থেকে পড়লো এসে ছোট্ট একটা বুড়ি" অথবা চোখ বন্ধ করে উপর থেকে কলম ফেললে যে উত্তরটার কাছাকাছি পড়ে ইত্যাদি লটারি পদ্ধতি ব্যবহার করে পরীক্ষা শেষ করলাম।
বলাইবাহুল্য সর্বোচ্চ ২৮টা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে সেবারও আরবীতে প্রথম হই আমি।
হা হা হা! এইটা আমার মনেই ছিল না।
ধন্যবাদ।
লেখা 'দুর্দান্ত' হইসে!
দুর্দান্ত দুর্দান্ত !!!
_________________________________________
সেরিওজা
দুর্দান্ত ছাড়িয়েও পঁচাশ ক্রোশ!! ক্লাস এইটে আরবিতে ফেল করার ভয়ে নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে বিয়াপক মাইর খাইসিলাম। লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা...
হুজুরদের মাইর তবারকের মত।
মজার তো !
...........................
কেউ আমাকে সরল পেয়ে বানিয়ে গেছে জটিল মানুষ
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বিষয়বৈচি্ত্র্য এবং লেখার ঢং দুইয়েই
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
দুর্দান্ত!!!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইসলাম নতুন বর্ণমালা দিয়েছে, কিন্তু আরবদেশের আমজনতা তার পুরোটা খায়নি। কিন্তু আমরা যারা আরবীকে দুর থেকে চিনি, তারা ইসলামের দেয়া আরবীতে চুর হয়ে গেছি। যার মায়ের ভাষা আরবী, সে কিন্তু সেই প্রাক ইসলামী বর্ণ মালাই এখনো শেখে। সেখানে আরবী বর্ণমালার ক্রম আলেফ বা তা সা জিম হা খা, নয়, বরং আলেফ বা জিম দাল হা জা ইত্যাদি। সংক্ষেপে আবজাদ । আর সেটাকেই আরব-মাগরেবের পিচকিগুলি শেখে একটি বিশেষ শ্লোক আওড়ে, যেটি শুনে আমি নাক সিটকেছি গত সপ্তাহে।
আমরা যে রীতিতে আরবী বর্ণমালা শিখি, সেটাই স্ট্যান্ডার্ড রীতি (এ রীতিতে অক্ষরগুলোর সাদৃশ্য অনুযায়ী বর্ণানুক্রমিক সাজানো হয়)। আরবদের জন্যও তাই প্রযোজ্য। এখানে ইসলামি-প্রাক ইসলামি, আরব-বাংলাদেশী কোন দ্বন্দ্ব নাই। আবজাদ একটি প্রাচীন লিখিত রূপ যা সেমেটিক বিভিন্ন ভাষার মধ্যে দেখা যায়। আবজাদ অতীতে একসময় আরবদের মাঝে বেশ প্রচলিত ছিল যখন আরবরা সংখ্যার ব্যবহার জানত না। ওই সময় বর্ণ তথা আবজাদ দিয়ে তারা সংখ্যা প্রকাশ করতো যেমনটা আপনি বলেছেন। উপমহাদেশ থেকে সংখ্যার ব্যবহার শিখে আরবরা নিজেদের ভাষায় সংখ্যার প্রচলন করার পর আবজাদ ব্যবহার সীমিত হয়ে আসে। এ সময় থেকেই সম্ভবত ‘হিজায়ি রীতি’ বা ‘নতুন রীতি’র প্রচলন হয়। তবে আরবরা এখনো ‘আবজাদ’ রীতিতেও বর্ণমালা শেখে, তাড়াতাড়ি শেখার জন্য। যে শ্লোক বা ছন্দের কথা বলেছেন, তার জন্যই তাড়াতাড়ি শেখা হয়। আমাকে এক আরব বলেছিল এখানে অক্ষরগুলো সাজানো হয়েছে উচ্চারণের ভিত্তিতে। হালকা উচ্চারণের বর্ণগুলো একসাথে, মাঝারিগুলোকে একসাথে, তীক্ষ্ণ উচ্চারণের বর্ণগুলো একসাথে এভাবে ধাপে ধাপে সাজানো হয়েছে। গ্রুপ করার ফলে এটা মুখস্থ করা বা মনে রাখা সহজ। কিন্তু বইপত্র, রেফারেন্স কোথাও এ রীতি অনুসরণ করা হয় না। আরবদেরকে আপনি বর্ণমালা বলতে বললে তারা ‘আলিফ, বে, তে, সে...’ এভাবেই বলবে। আবার তারা আবজাদও শেখে, কারণ একই গোত্রের বর্ণ দিয়ে সহজে বিভিন্ন শব্দ গঠন করার সুবিধা পাওয়া যায়। আমরা ঐ লেভেলে আরবি শিখি না, তাই আবজাদ জানারও প্রয়োজন হয় না।
@ তাবভীর
আপনার এরকম সুন্দর মতামত আমার লেখার আনন্দকে দ্বিগুন করে দেয়। অনেক ধন্যবাদ, আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য।
----
আপনি ঠিকই বলেছেন,
"আমরা যে রীতিতে আরবী বর্ণমালা শিখি, সেটাই স্ট্যান্ডার্ড রীতি"
এবং
"আরবরা এখনো ‘আবজাদ’ রীতিতেও বর্ণমালা শেখে"
এবং
আমরা ঐ লেভেলে আরবি শিখি না, তাই আবজাদ জানারও প্রয়োজন হয় না।
এগুলো আমারও বক্তব্য। যার আরবী ভাষার আসলেই দরকার, সে শেখে সহজ পথে, মনে রাখার মত করে। আর আমাদের আরবী শেখাটা একটা বড় ভনিতা। যে ভাষা নিজেই বুঝিনা, তা দিয়ে সৃষ্টিকর্তার মন জয় করতে চাই।
এই বিষয়ে জানা-শোনা কম তাই স্পেকুলেটিভ কোন মন্তব্য করলাম না। তবে আরবীতে বিভিন্ন রকম সাজানোর অর্ডার আছে, এতটুক বুঝলাম। আমাদের অর্ডারটা 'বেঠিক' এমনটা কোথাও দেখলাম না।
আর পোলাপানের আরবী শেখানোটা একটা ধর্মীয়/সাংস্কৃতিক/ইমোটিভ বিষয়। একেকজন একেকভাবে দেখে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
ঠিক বেঠিকের তো প্রশ্ন না, প্রশ্ন হইল কার্যকারিতা। বিতর্কের দুইটা স্তর।
প্রথমটা হইল আজকের। বাংলাদেশে সহজ আধুনিক ও প্রচলিত আরবীশিক্ষার দরকার। আরবীকে শুধু যদি দেবভাষা করে রাখা হয় তাহলে সেটার প্রসার একটা বিশেষ ভাবে ঘটবে ঠিকই, কিন্তু তার কার্যকারিতাও একটি বিশেষ দিকেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
দ্বিতীয় বিতর্কটা ছয় শতকের। কেন নতুন বর্ণমালার প্রয়োজন হল? আবজাদ ক্রম (আসলে সিরিয়াকের একটি রূপ) এর সমস্যাটা কি ছিল? এখানে অনেক কৌতূহল জাগানিয়া স্পেকুলেশন/কন্সপিরেসি থিওরী আছে। কিছু কলোনিয়াল, কিছু ওরিয়েন্টাল আবার কিছু ইসলামের ভিতর থেইকা। পরে কমু।
দুর্দান্ত পোস্ট।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
নতুন মন্তব্য করুন