এমনিতে ক্লুনিকে আমার একটা ভাল ব্র্যান্ড মনে হয়, একারনে যে এই বান্দা যে ছবি জড়িত থাকে তাতে উপভোগ্য কিছুমিছু থাকে। তার সেকশন এইট কোম্পানির (এখন বোধহয় উঠে গেছে) যতগুলো ছবি দেখেছি, সেগুলোতে নিরাশ হইনি। ২০০৭ এ রাস্তা ঘাটে মাইকেল ক্লেটন এর পোস্টারে 'ট্রুথ ক্যান বি এডজাস্টেড' এই স্লোগানটি মনে গেঁথে ছিল। গতকাল যখন টিভির চ্যানেল ঘুরে ভাগ্যক্রমে এক জায়গায় এসে দেখলাম ছবিটির শুরুর নাম দেখাচ্ছে, তখন আর চ্যানেল ফেরাইনি।
ছবির পরিচালক গিলরয়ের এটাই পয়লা পর্থম পরিচালনা। ম্যাট ডেমনের বোর্ন সিরিজটি দেখে থাকলে গিলরয়ের সাথে আপনি মোটেই অপরিচিত নন; বোর্ন ছবি তিনটির চিত্রনাট্য গিলরয়ের হাত গলেই বেরিয়েছে। আর ডেভিল'স এডভোকেট? অথবা প্রুফ অফ লাইফ? দেখেছেন? ভাল লেগেছে নিশ্চই; এগুলোও এরই চিত্রনাট্য।
মাইকেল ক্লেটন ছবির পরিচালনার আগে গিলরয় বোধ করি সিডনি লুমের ছবিগুলোকে চষে ফেলেছিল। লুমে কে মনে পড়ছে না, সেই যে 'টুয়েল্ভ এংগ্রী মেন' আর 'ডগডে আফ্টার নুন' বা 'কিউ এন্ড এ' বানিয়েছিল, সেই লুমে। মাইকেল ক্লেটন ছবিটি দেখার পর আমার কেন যেন লুমের ছবিগুলোর সেই চিরপরিচিত 'নির্বিকার পাবলিকের হঠাত সিস্টেমের বিরুদ্ধচারন' আর 'এখন বিবেক আছে আবার তখন বিবেক নাই' ধরনের চরিত্রগুলোর মতই লাগলো।
ছবির শুরুটা মনে হয় ইচ্ছা করেই একটু ছেড়াবেড়া করে করা হয়েছে। বড় উকিল দপ্তরের মাঝারি চাকুরে মাইকেল প্রধান চরিত্র। আমেরিকার সেই ছাই সিল্কস্যুট-আইভি লীগ এর দুনিয়ায় তার আনাগোনা হলেও পরিস্কার ভাবে সেখানে সে আগন্তুক ও কিছুটা অবাঞ্ছিতও। সেই উঁচুতলায় তার কোন বন্ধু নেই। তার নাকের তলা দিয়ে নতুন নতুন ছেলে-ছোকড়ার দল আসে আর উঁচুতলার মই বেয়ে উপরে উঠে যায়, আর মাইকেল তাদের ফেলে যাওয়া ভেজাল মেটায়। লিটিগেশান দলে কেন যেন তাকে নেয়া হয়না। সাক্ষীসাবুদ সাইজ করা, যেখানে লাগে সেখানে ডলারের এনভেলপ পকেটে গুঁজে দেয়া তার কাজ। কিছু পারিবারিক সমস্যা আছে তার। আমেরিকায় উকিলের পেশায় থেকেও সে ৭৫ হাজার ডলারের দেনা শোধ করতে না পেরে পাতি গুন্ডার ধমক খায়।
নিজের চোখে সে তার অফিসের বাঁধা 'মেথর'! কিন্তু মাথা বিগড়ে যাওয়া সহকর্মী ছাড়া তাকে কেই বা চিনেছে? ভাইবোন আর নিজের বাচ্চা ছেলেটিও তাকে ঠিক চেনেনা। থেকে থেকে তাকে প্রশ্ন শুনতে হয় 'হু আর ইউ?'।
ছবিতে অহেতুক তাড়াহুড়া নেই। তবে গল্পটি মন নাড়িয়ে দেবার মত গতিশীল।
চরিত্রগুলো কথা বলতে পছন্দ করে, হাজার হোক তারা উকিল বা এক্সিকিউটিভই তো। একদিন অফিসের মফস্বল শাখায় মাইকেলকে পঠানো হয় একটা সাময়িক ঝামেলার সামাল দিতে। সেই ঝামেলা সামলাতে গিয়ে সে নিজেই জড়িয়ে পড়ে। ঘটনা গড়ায় এবং দুটি বিষ্ফোরন দিয়ে ছবির গল্পের অবসান ঘটে।
২০০৭ এ পিসমেকার বা ওশেন সিরিজে যে ধরনের হলকা মেজাজের ক্লুনির সাথে আমাদের মোলাকাত হয়েছে, এই ছবিটি সেই ইমেজের বিপরীতে ভারসাম্য আনার চেষ্টা হলে অবাক হব না। মাইকেল ক্লেটনকে কি এই ছবির হিরো ভাবা যায়? নাকি মাইকেলের দশ বছুরে স্বপাতুর নিষ্পাপ ছেলেটিই ছবির আসল হিরো? মাইকেলের বিবেক আছে কি নেই, নীতিবোধের প্রতি তার শ্রদ্ধা কতটুকু, এইসব সহ আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর তোলা থাকে ছবির শেষ কয়েকটি মিনিটের জন্য।
যারা আমার মত মাঝে মাঝে স্বপ্নে এস ৫৫০ এর সিটে বসে রিয়ারভিউ মিররে নিজেকে দেখে মিটিমিটি হাসেন, তাদের জন্য কিছু সুন্দর মসৃণ দৃশ্য ও শব্দ আছে এই ছবিতে। ছবিতে আরো আছে টিল্ডা সুইন্টন ও সিডনি পোলক। ২০০৭ এ শ্রেষ্ঠ ছবি, পরিচালনা ও চিত্রনাট্য সহ সাতটি মনোনয়ন পেয়েছিল এই ছবিটি।
দেখুন, ভাল লাগবে আশা করি।
মন্তব্য
গত উইকএন্ডেই দেখলাম ছবিটা, ফাটাফাটি লাগসে... কালেকশানে রাখার মতো ছবি। জর্জ ক্লুনি আসলেই একটা বস লোক।
=======================
যদি আমি চলে যাই নক্ষত্রের পারে —
জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
মাইকেল ক্লেটন দারুণ একটা মুভি।
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
তা আর বলতে...
ক্লুনির প্রতিটা মুভি খুব আগ্রহ নিয়া দেখতে বসি আর হতাশ হই (সাইরিয়ানা বাদে), 'মাইকেল ক্লেটন' অনেক প্রত্যাশা নিয়ে দেখেছি - মোটামুটি ভালই। 'মাইকেল ক্লেটন'-এর ট্রেইলার -
তবে গণহত্যার উপর দর্ফুর নাও ডকুমেন্টারি মুভিটির জন্য তাকে শ্রদ্বা জানাই।
ক্লুনি আরো অনেককেই নিয়মিত হতাশ করে। যেমন আমার পরিচিত একজনের হতাশার কারন ক্লুনির চুলের রং, আরেকজনের ধারনা ক্লুনির কিছু ছবি বেশ ধীরগতির আর ভারিক্কী আতলামীতে ভরা। আমি নিজেই কিছু ছবিতে হতাশ, কারন পিসমেকার, কনফে ওফ এ ডে মা, সোলারিস ইত্যাদি ব্যতিরেকে কিছু ছবিতে তার বিপরীতে ভাল স্ত্রী-চরিত্র বা নায়িকাকে দেখা যায়নি।
আপনার ক্লুনি হতাশার রহস্য কি?
একেকটার কারণ একেকটা - বুঝিয়ে বলতে হলে মুভির লিস্ট নিয়ে বসতে হবে
রিভিউ ভালো লাগল, দেখার আগ্রহ জেগেছে। নামানো শুরু করলাম।
==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
হাই ডেফিনিশন পেলে একটু সময় করে সেটা নামান। ঠকবেন না...
=======================
যদি আমি চলে যাই নক্ষত্রের পারে —
জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
রিভিউতে পাঁচ তারা !! কারণ অনেক সুন্দর- গুছিয়ে লিখেছেন।
সমস্যা হলো মুভিটা আমাকে একদমই টানে নাই। এককথায় ভালো লাগে নাই। গিলরয় যদি লুমে'কে অনুসরণ করে সজ্ঞানে বা অবচেতনে, আমার মনে হয় সে পুরাই ব্যর্থ। লুমের বেশিরভাগ কাজ এক কথায় ক্লাসিক ...
_________________________________________
সেরিওজা
আপনিও লুমে'র মুরিদ? আসেন হাত মিলান। বাপের ব্যাটা লুমে।
আসলেই। ক্লুনি শিখে গেছেন কিভাবে একদিকে হলিউডি বিগ বাগেটের ছবি করে মার্কেটে থাকতে হয় এত বছর, আর অন্যদিকে সমান্তরালে ছোট বাজেটের 'ইন্ডি ফিল্ম' করতে হয়, যেখান থেকে ক্রিয়েটিভ স্যাটিসফ্যাকশন আসে। 'সিরিয়ানা' ভাল লেগেছিল, 'মাইকেল ক্লেটন'-ও , কিন্তু হালের 'আপ ইন দি এয়ার' খুব ভাল লেগেছে।
অফটপিকঃ 'বার্ন আফটার রিডিং' - আরেক দারুণ ক্লুনি-পিট জুটির ছবির শুটিং, ২০০৭-এ আমাদের ডর্মের উল্টোদিকে হয়েছিলো। আমরা বন্ধুরা পিট, ক্লুনি, ম্যাল্কভিচ-কে দেখার জন্য পরপর দু'দিন পার্কে লাঞ্চের সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম। ক্লুনি-কে পাওয়া যায়নি কিন্তু ব্র্যাড পিটকে দেখে আমাদের আনন্দ দেখে কে! আমার পাশেই ফ্র্যানসিস ম্যাকডর্মেট দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছিলেন, আমি দেখে পাশে দাঁড়ানো বান্ধবীকেও গুতালাম, কিন্তু সবাই তখন এত উত্তেজিত পিটকে দেখার জন্য, যে বেচারী কোনো পাত্তাও পেলো না! ঃ)
ভাল থাকবেন।
- শরতশিশির -
পুনশচঃ আগের মন্তব্য প্লিজ মুছে দেবেন, কিছু বানান ভুল ছিল।
আমার 'বার্ন আফটার রিডিং' দেখার অভিজ্ঞতাটি অনেক কারনে স্মরনীয়। আমাদের সবার প্রীয় সুবিনয় মুস্তফি'র সাথে তার পাশে বার্বিকানে বসে দেখেছিলাম এই ছবিটি। একে কুন ব্রাদার্স এর কাজ তারওপর একই ছবিতে ফিল্ম এ ম্যাল্কোভিচ-ক্লুনি-পিট। আর যা গল্প, চোখা ও সময়োপযোগী।
----
আপনি কি জর্জটাউনে নাকি? বাপরে!
না, নিউইয়র্কে। আর একটাই আছে ইউনি ''বাপরে!" বলার।
- শরতশিশির -
নিউইয়র্ক হইলে তো ব্রুকলিন হাইট্স। ওইদিকে কোন স্কুলের ডর্ম? পেস নাকি সুনি?
---
ফ্র্যানসিস ম্যাকডর্মেট = ফ্রান্সেস ম্যাকডর্মান্ড? আবারো বাপরে! আসেন পায়ের ধুলা দেন।
আমি ভাবিনি উত্তর দেবেন, তাই আর দেখা হয়নি।
না, এত বড় শহর, ব্রুকলিন হাইটস খালি জায়গা নাকি!
আপনি আপার ওয়েস্ট সাইড চিন্তা করেন - ওখানে 'লীগ'-এর একটা স্কুল আছে, না?
-----------
রাইট, ফ্র্যান্সিস ম্যাকডর্মান্ড। সম্ভবত কোয়েন ব্রাদার্সেরও একটা নিশ্চয়ই ছিল, কিন্তু আমরা ব্যস্ত ছিলাম পিটকে নিয়ে, তাই সেটাও খেয়াল ছিল না!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
ফাহিম, খেকশিয়াল, ওয়াইল্ড স্কোপ, আশরাফ মাহমুদ, সুহান রিজওয়ান ও শরত শিশির - সময় করে লেখাটি পড়ে আপনাদের সুন্দর মন্তব্য করবার জন্য ধন্যবাদ।
রিভিউ বড়োই ভালু পাইলাম। সিনিমার কথা আরো লিখেন।
আহা, "ডগ ডে আফটারনুন"-এর কথা মনে করিয়ে দিলেন। মুভি দেখতে দেখতে দর্শক (পর্দার ভিতরে ও বাইরে) একসময় ব্যাংক ডাকাতের দলে চলে যায়। এই সাইকোলজির কাছাকাছি একটা ধরণের নাম "স্টকহোম সিনড্রম"। দর্শককে একই সাথে ঘাতক ও নিহতের জন্য সহানুভূতিশীল করার মত ক্ষমতা লুমের আছে। আমি লুমেকে ভালু পাই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রিভিউ ভাল লাগল। সিদ্ধান্ত নিলাম ছবিটা দেখতে হবে।
ছবি-টবি দেখা হয়ে উঠছে না তেমন একটা...। সচলায়তনের একটা রিভিউয়ের সূত্র ধরেই ক্লুনির ‘আপ ইন দ্য এয়ার’ ছবিটা দেখলাম কিছুদিন আগে। কোন বিস্তারিত ব্যাখ্যায় না গিয়ে বলব – খুব ভাল লেগেছে আমার কাছে ছবিটা।
(বাই দ্য ওয়ে ... লোকজন দেখি ছবি ডাউনলোডের কথা বলে... কেউ একটা লিংক দিলে বাধিত হব।)
(অফ-টপিক @ দুর্দান্ত, গত কয়দিনের লেখাগুলি খুব মনযোগ দিয়ে পড়েছি, ব্যাক্তিগত বিভিন্ন ব্যাপারে মন খুবই খারাপ থাকায় মন্তব্য করা হয়ে উঠেনি, আপনার ‘কানেক্টেড-১০০’ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছে ছিল। কিন্ত ব্যাপারটা পুরানো হয়ে গেছে এখন...। দেখা হলে হবে আশারাখি।)
এখনো দেখা হয় নাই। এই উইকেণ্ডেই দেখুম।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
নতুন মন্তব্য করুন