পশ্চিম থেকে দস্যুরাজের কবল থেকে পালিয়ে ছুটতে ছুটতে হিমালয়ের পাদদেশের এসে আশ্রয় নেয় কিছু দস্যু। যে আশ্রয়টির অস্থায়ী হবার কথা ছিল, সে আশ্রয়ের উর্বর রূপমাদকে আটকা পড়ে দস্যুরা, তারা পালাতে পারে না।
আশ্রয়ের দেবী মহামায়ার মত শতরূপা, সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এবং কখনো ভয়ঙ্করী। তাকে নিয়ে যে কবিতে লেখে, সে দেবীর গান শুনতে পায়। আর যার কামারাধনা দেবী গ্রহন করেন, তার নির্বাণ লাভ হয় দেবীর চুড়ান্ত প্রসাদ পেয়ে ।
পূর্বদেশ থেকেও আসে আরেক দস্যুদল। দেবীর মাটিমাখা সন্তানদের হাতে অস্ত্রতুলে দিয়ে তারাও দেবীকে অধিকার করে নিতে চায়। ছদ্মবেশে তারা সেই দেবীর কাছে আসে, তাকে পায়, তাকে ব্যাবহার করে।
এই যে কথাগুলো বললাম, এর সাথে ভারতের ইতিহাস ও বর্তমানের সাথে কোন মিল খুঁজে পাচ্ছেন? আমি বলছি অতীতের ব্রাহ্মন-ক্ষত্রীয় শাসিত ভারতের কথা। শের-শায়রীবাজ মোঘল আর চরিত্রহীন ফিরিঙ্গী দস্যুদের উড়ে এসে জুড়ে বসার কথা। বলছি এক হাতে কপট লাল-নিশান আর আরেক হাতে একে-৪৭ বয়ে বেড়ানো চীনা চোরাকারবারীর কথা। বলছি মোঘল-ফিরিঙ্গী-চীনা দস্যুর হাতে বিপাকে পড়া সুন্দরী, বিদূষী কিন্তু নিরূপায় ভারতবর্ষের কথা। বলছি দলিতের পাঁচ-কম-কুড়ি বছুরে ছেলের কথা, যে হাতে নিয়েই বলে দিতে পারে কোনটা দেশী তামাঞ্চা আর কোনটি আসল পিস্তল।
অভিশেক চওবের পরিচালনা আর বিশাল ভরদ্বাজের প্রযোজনায় নতুন ছবি ইশ্কীয়া দেখে ভারতের অতীত বর্তমান ভবিষ্যতকে ঘষে-ঠেসে একটি তেলচিত্রের ক্যানভাসে পুরে ফেলার প্রচেষ্টার মত লাগে। এটা অভিশেকের প্রথম পরিচালনা, তবে মন-হাত খুলে কাজ করেছে বোঝা যায়। নাসিরুদ্দিন-আরশাদ-বিদ্যার মত তুখোড় খেলোয়াড়দের কাছ থেকে ঠিক ঠাক খেলা আদায় করে নিয়েছে।
বিশাল যে হাতগুটিয়ে দুরে বসে ছিল তা বলে মনে হয় না; তার মকবুল আর ওমকারা যথাক্রমে শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ আর ওথেলোর যথোপযুক্ত বলিউডি সংস্করনগুলোতে সে ভারতের বর্তমানকে যেভাবে দেখিয়েছে তাতে তার কাজের প্রতি একটি দূর্বলতা গড়ে ওঠে। তাই যে ছবিতে বিশাল টাকা খাটায়, সেটাতেও যে সেরকমই আলো ছায়ার (চোখের আর মনের) খেলা চলতেই থাকবে, সে আর অবাক কি? চিত্রনাট্যটি বেরিয়েছে বিশালের হাত গলেই। কড়া পাকের উর্দুতে চোবানো ভুপালী টানের হিন্দীতে মগজভুনার মত গভীর, সদ্য ভাঙা কাঁচা মরিচের মত তাজা, আর ভাপ ওঠা আটার রুটির মত মোলায়েম সব সংলাপ। চরম সুখাদ্য।
গুলজারের লেখা ছবির অসাধারন গানগুলোও বিশাল-রেখা ভরদ্বাজ যুগলের কাছ থেকে সন্তানের মমতা পেয়েছে। ভাতিজা আলী খান ও কম যাননি। ছবির এই গানটি শুনছি এখন।
|
স্পেগেটি ওয়েস্টার্ন এর আদতে বলা গল্পে মফস্বল ভারতকে দেখানো হয়েছে বটে, তবে মঞ্চসজ্জায় মেক্সিকো আর নাচের তালে ফ্লামেঙ্কো ছিটেফোটা যত্ন করে রেখে দেয়া হয়েছে। বলিউড কি 'শোলে'কে অত সহযে ভুলতে পারে?
আমি যে প্রিন্টটি দেখেছি সেটার এডিটিং এর ধারবাহিকতার ধার কিছুটা কম ছিল। দৃশ্য থেকে দৃশ্যে যাবার সময় ফ্রেমকে আঁধাআধা চিরে ফেলে ডিসলভ/ফেড-ইন ইত্যাদির কেরদানি গল্প থেকে মনযোগ টেনে নেয়। এডিটর আপা কারিগরিক ক্যারামতি করার লোভ সামলাতে পারেনি। একশান দৃশ্যগুলোকে খেলো মনে হয়েছে।
(লেখাটির শিরোনাম দিয়েছি এই ছবির একটি গানের কথা থেকে। ছবিসত্বঃ ইন্টারনেট)
মন্তব্য
দুর্দান্তদা, না বলে একটা মুভি রিভিউ পড়িয়ে ফেললেন। ট্যাগে থাকলে ভেতরে ঢুকতামই না। মাঝপথে এসে রিভিউর গন্ধ পেলাম। তখন আর না খেয়ে উঠে যাওয়ার উপায় নেই।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ভুলে ভালে পড়েই যখন ফেল্লেন, কি আর করা।
ছবিটা দেখেছেন? কেমন লেগেছে?
দেখি নাই বলেই তো বললাম। দেখার আগেই জেনে গেলাম।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ঈমানে কই। আমি গল্প বলে দেইনি। দেখেন। ভাল লাগবে।
ইশকিয়া দেখলাম! সত্যি-ই অসাধারণ লাগ্লো! কিন্তু আপনি যা চমৎকারভাবে একটা ভিন্ন চেহারা সামনে এনে দিলেন ভাবি-ই নি সে ব্যাপারে! রিভিউ ঠিক বলা যায় কিনা বলতে পারবো না, বাট এই ছবি-কচকচিটা মাশাল্লা ভালোই লাগ্লো...
গানটা ভালোই লাগলো, যদিও আমার উর্দু হিন্দির প্রতি অ্যালার্জি আছে...
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
- খাইছে, হিন্দি সিনেমা দেখারও টাইম পান!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সেরকম হিন্দী হইলে দেখি না আবার?তারওপর যদি আবার এইপদের তারকাবেষ্টিত ফিলিম হয়, তাইলে তো কথাই নাই। দেইখা ফালাও ধুসর খাঁ, এইটাতে সবার জন্যই কিছুমিছু আছে।
দেখার ইচ্ছে প্রবল। অনলাইন কোথা পাই বলুনতো?গানগুলি শুনেছি, অপূর্ব লেগেছে।
videomasti.net সাইটটাতে খুঁজে দেখেন।
ওকে দেখবো। ধন্যবাদ।
এই যে মুভিটা।
আপনার বিবেচনাবোধে আস্থা আছে
দেখার চেষ্টা নিব।
-------------------------------------------------------------------
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়
চমতকার রিভিউ, তার চেয়েও চমতকার গানটা।
খুব শীঘ্রই দেখব।
অসাধারণ লাগল
মুভিটার খোঁজ এখনো পাই নাই তাই বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারছিনা। তবে পোস্টের শুরুটা যেমন হয়েছিল তাতে আমার আশা বহুদূর উঠেছিল। শেষে ফিল্মে মোড় নেবে বলে ভাবতে পারিনি।
"ওমকারা" হয়তো ওথেলোর ভালো সংস্করণ হয়নি, তবে চমৎকার মুভি হয়েছে। বিশেষতঃ সাঈফ-কারিনা-কঙ্কণা-অজয়ের অভিনয় মনোজ্ঞ। "মকবুল" ম্যাকবেথ হয়নি মোটেও। সেখানে ইরফানের চেয়ে টাবুর অভিনয় বরং ভালো লেগেছে।
নামটা মনে হয় "অভিষেক চৌবে" হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন