আমিনি ও তার দল কোরান হাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। বলছে যেখানে কোরানের বানী নারীকে পুরুষের সমান অধিকার দেয়নি, সেখানে দেশের আইনে নারীর সমান অধিকার বাস্তবায়নের পথে যেকোনো পদক্ষেপ কোরানের ও সুন্নাহ'র পরিপন্থী। আমিনি নিজেকে একজন কোরান বোদ্ধা দাবী করে। কি জানি, তার সে দাবী বাস্তব হতেও পারে। তবে কিনা, অন্তত কোরানের যেসব আয়াত উল্লেখ করে সে নারীর অসম অধিকারের কথা বলছে, সেসব কোরানে আছে।
সুরা নিসা'র ৩৪ নম্বর আয়াতটি এই বিষয়ে প্রসিদ্ধ। এখানে সুনির্দিষ্ট ও পরিষ্কার করে নারী ও পুরুষ অসমতা ঘোষণা করেছে। কোরানে এর সমার্থক উদাহরণ বহুবিধ। আরেকটি ব্লগে কোরানে নারী-পুরুষের অসমতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়ে গেছে, তাই এখানে সেগুলো উল্লেখ করছিনা। কোরান ও আমিনির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিয়েম্পি ও এশুর অবস্থান কোথায় হবে সেই আলোচনায় যেতেও রুচি হচ্ছেনা। আমিনি প্রশ্নে সরকারের কার্যকলাপে এটা মনে হতে পারে যে তারা ঠিক আমিনির সাথে একমত নয়। এটা বিশ্বাস করতে পারিনি। আমিনি আন্দোলনে নেমেছে 'কোরান রক্ষা করতে'। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তো বলেছে যে তার সরকার কোরান-সুন্নাহর পরিপন্থী কোন আইন প্রণয়ন করবেনা। এরা একই গন্তব্য নিরিখে চলছে, মতভেদ শুধু তরিকায়। আওয়ামী সেকুলারি নিয়েও আলোচনা হয়ে গেছে এখানে।
শুধু রাজনীতি আর রাজপথে থেমে থাকি কেন? দেশের যেকোনো আড্ডায় একধরনের মানুষ পাওয়া যায়। এরা 'হালকার-ওপর-ঝাপসা-মত' মুসলিম। ঈদ-মিলাদের-জুমা'র বাইরে ইসলাম ধর্মের বিধিনিষেধ আর আচার-অনুষ্ঠানে এদেরকে আপনি পাবেন না। ভারত ও হিন্দু প্রসঙ্গে নেতিবাচক উদাহরণ দিতে এদের উৎসাহ প্রবল। পাকিস্তান প্রসঙ্গে এদের মনের জানালা খোলা, কিন্তু সেটা তারা সব মজলিশে এলান করেনা। ইসলামের ফাঁকফোকর নিয়ে আলোচনা শুরু হলে এরা একটু নড়েচড়ে, হাসি থামিয়ে, ঠোঁট কামড়িয়ে গম্ভীর হয়ে বসবে। কথা এগোলে বা একটু আক্রান্ত-বোধ করলে এদের শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হবে। পুরোপুরি তথ্য ও যুক্তিনির্ভর আলোচনায় এরা ধুম করে 'অন্যের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কটুকথা বলার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?' বা এই জাতীয় কিছু কৈফিয়ত চেয় বসবে।
এই দলের যারা এক কাঠি সরেস, তারা নানান রূপকথার আলোকে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে আমিনি ও তার দল কিভাবে কোরানের বানীকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে, এবং কিভাবে ইসলাম আমিনীর চাইতেও আধুনিক। তাদের সেই চেষ্টা সাধারণত উচ্চস্বরে হয় ও উত্তেজনায় ভরপুর থাকে, কিন্তু সেউ চেষ্টা নিষ্ফলতার নাগপাশ ছিন্ন করতে পারেনা। তাদের নিজস্ব তথ্যই (বা তার অনুপস্থিতি) তাদের পরাজিত করে, এবং ব্যাতিক্রমহীন ভাবে ইসলাম আর আমিনি যে একই শতাব্দীর মাল, এই সত্যটি দিনের আলোর মত ঝিকমিক করে। কোরান ও প্রগতিশীল ইসলামের শখের প্রবক্তা তার দশম শ্রেণীর ইসলামিয়াত ক্লাসে মুখস্থ করা কোটেশনগুলোকে আর মনে করতে না পেরে শেষমেশ হাল ও হাঁফ একসাথে ছাড়ে।
একদিকে কোরান নারী ও অমুসলিমের অধিকার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বিষম, অন্যদিকে বাংলাদেশের সংবিধান কোন ধরনের বৈষম্যকেই স্বীকার করেনা। বাংলাদেশের সংবিধানের দুটো জায়গার সাথে আমিনি ও কোরানের বক্তব্য সাংঘর্ষিক। সংবিধানের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের ধারা ১১ তে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের তৃতীয় পরিচ্ছেদের ধারা ২৮এ লৈঙ্গিকসহ সকল বৈষম্যকে অস্বীকার করা হয়েছে। এই অবস্থায় একদিকে কোরান, সুন্নাহ আর অন্যদিকে আমাদের সংবিধান তথা বাংলাদেশ ধারনাকে একযোগে সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি দেশের মানুষের সাথে মশকরা করা ছাড়া আর কিছু না। এই বিচারে আমিনির নারী-বিষম আইনের আবদারটি যেমন অসাংবিধানিক, ঠিক তেমনি প্রধানমন্ত্রীর কোরান ও সুন্নাহর খেলাপ আইন প্রণয়ন না করার প্রতিশ্রুতিও সংবিধান-সিদ্ধ নয়।
যে হালকার ওপর ঝাপসা-মত মানুষগুলোর কথা আগে বললাম, সংবিধানের সাম্যবাদ প্রশ্নে এদের অবস্থান কোথায়? এরা কি প্রয়াত বাবার জমি নিজের বোনের সাথে ঠিকঠাক ভাগ করে নিতে চায়? এরা কি কর্মক্ষেত্রে নারীর নেতৃত্ব প্রশ্নাতীত ভাবে মেনে নেয়? এরা কি সাধারণ নির্বাচনে পুরুষ প্রার্থীর চাইতেও শিক্ষিত ও যোগ্য নারী প্রার্থীকে ভোট দিতে পিছপা হয়না? মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় যেখানে মেয়েরা ছেলেদের চাইতে ভাল ফলাফল করে, সেখানে কারিগরি ও উচ্চশিক্ষায় ছেলেরা কিভাবে ৩:১ অনুপাতে মেয়েদের চাইতে এগিয়ে থাকে - এই প্রশ্ন কি তাদের চিন্তিত করে?
দিনের শেষে দুজনেই সমান পরিশ্রান্ত হয়ে এরা যখন দুজনের আণবিক সংসারে ফেরে, তখন এদের পরিচারক-হীন বাসায় চা করে নিয়ে আসে কে? কে এদের ঘর মোছে? কাপড় ধোয়? বাচ্চা-পোষে? আমি আমার পরিচিতদের চেহারাগুলো মনে করে একে একে মনে মনেই তাদের এই প্রশ্নগুলো করলাম। প্রতিবার উত্তরে পেলাম নারী ও পুরুষ অসমান। বিষম। সমান নয়।
আমিনি ও তার দল বাংলাদেশে সবসময়ই ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পুরোপুরি একমুখী করতে না পারা, খোলাখুলি সমকামিতার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা না দিতে পারা, ইত্যাদি নানান কারণে বাংলাদেশের কিছু কিশোর-শাবাবকে মাদ্রাসায় যেতেই হবে, এবং তাদেরকে অবলম্বন করে আমিনিরা রাস্তায় নেমে আসাতেই থাকবে। কিন্তু মূলধারার রাজনীতিতে এদেরকে সচরাচর খেলনার ভূমিকায় দেখা যাবে, আমিনি বা তার অনুসারীদের মধ্যথেকে মূলধারার রাজনীতির খেলোয়াড় উঠে আসার কোন সম্ভাবনা আমি দেখিনা।
এই হিসাবে তাদের কার্যকারিতা সীমিত। আমিনি ও তার দল দেশের জন্য একটা আপদ। কিন্তু দেশের মূলধারার রাজনীতি ও জনগণের একটি বড় অংশই যদি সরবে ও নীরবে সংবিধানের বিপরীতে থেকে যায়, তখন সেটা আর আপদ থাকেনা, সেটা তখন হয়ে দাঁড়ায় মহাবিপদ।
মন্তব্য
একজাক্টলি! বহুবার আমার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে।
একজাক্টলি! আমি কতবার যে আমার স্ত্রীর কাছে নত হই তার ইয়ত্তা নেই। সে আমার যে এফিশিয়েন্টলি চাকুরী করে, বাচ্চা পেলে রান্না বান্না করে দিন পার করে। আবার রাতে ঘুম থেকে দু'বার উঠে বাচ্চার দেখভাল করে। তার জায়গায় দু'দিন থেকে আমার নাভিশ্বাস উঠে যায়। অবশ্যই অনেক ক্ষেত্রেই সমান সুযোগ এবং শিক্ষা পাওয়া নারী পুরুষের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। এবং এইটাই পুরুষদের নারী বিদ্বেষের কারন।
একমত।
আমার মতো অনেকেই যারা শুনে শুনে মুসলমান, তাদেরকে এই বিষয়ে চোখ খোলার জন্য আপনি একটা কাজ করতে পারেন: কোরআনের যে যে আয়াতে নারীকে বেশী অধিকার/গুরুত্ব দেয়া হয়েছ, পুরুষকে বেশী অধিকার/গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে, এবং যেখানে সমতার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর একটা তালিকা প্রস্তত করতে পারেন।
অপেক্ষায় রইলাম
বাংলাদেশে কোরআনের আইন চলে না। তাই কোরআনের সাথে বৈষম্য আছে নি নাই সে তর্ক বৃথা। আপনি বরং বলুন সংবিধানের ১১ ধারা আসলেই মানা হয় কিনা। না মানলে সরকার বা বিচার বিভাগ এর দায় নেয় কিনা। না নিলে আমরা সেটা নিয়ে কথা বলি না কেন। আপনার মতামত জানতে চাইছি।
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/15997
(সুরা নিসা : ৩৪) পুরুষেরা নারীদের উপর কতৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে ও তারা হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্ক্ষা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/37984
সম-অধীকার?
সুরা আন নিসার আয়াত ৩৪ কি বলে দেখি আসুন [১-৫]:
অনুবাদ:
সম্পত্তির ব্যাপারে সুরা আন নিসা আয়াত ১১:
অনুবাদ:
সুতরাং পরিষ্কারভাবে কুরানে বলে দেয়া আছে নারীর অবস্থান কি রকম হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। যদি নারীর সম-অধীকারের জন্য ভিন্ন আইন করা হয় তাহলে প্রথমে কুরআনের বিপক্ষে অবস্থান নিতে হবে। আপনি যদি সেই অবস্থান নিতে চান তাহলে আপনাকেও এর বিপক্ষে অবস্থান নিতে হবে। রাজী আছেন?
[১] http://noblequran.com/translation/surah4.html
[২] http://quran.com/4
[৩] http://www.bangla-quran.co.uk/index.php
[৪] http://www.mukto-mona.com/Articles/nondini/bikolangoNari.htm
[৫] http://en.wikipedia.org/wiki/Women_in_Islam
এভাবে ছাড়া ছাড়া না। দেখি আমি একটা তৈরী করার চেষ্টা করবো। আপনার গুলো আপনি একসাথে একটা মন্তব্যে জড়ো করে রাখেন। সম্ভব হলে গুগল ডকে রেখে আমাকে শেয়ার দেন। কোনো প্রিজুডিস থেকে নয়, একাডেমিক আলোচনার মতো আমি করতে চাই। একটা ফাইলে রাখলে তুলনামুলক আলোচনা করতে সুবিধা হবে।
এখানে দেখেন। বেশ গোছানো।
''তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করিতে পার'' - আল্-কুরআন, সুরা - বাকার, আয়াত - ২২৩, অনুবাদ - ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-১৯৯৬, অষ্টাদশ মুদ্রণ, তৃতীয় সংস্করণ। এর কিছু পরের লাইনেই সঙ্গমে রাজী না হলে স্ত্রীকে চিকন শলাকা দিয়ে পিট্টু দেয়ার আদেশও দেয়া হইছে।
আমার এক নারী-অধিকার নিয়ে হম্বি-তম্বি করা এবং চমৎকার আঁকিয়ে এক বোনকে এটা দেখাতে উত্তর পেলাম - 'এর নিশ্চই কোন ভালো ব্যাখ্যা আছে, সব তো আমরা জেনে বসে নেই' ইত্যাদি।
কাহারো লাগিয়া মোরা...
হুম। তবে আমি একটু পিছিয়ে আসতে চাইছি। হঠাত ঝোঁকের মাথায় কমিট করে ফেলেছিলাম। এই মুহূর্তে এই খাত আমার কাছে আনপ্রোডাক্টিভ। তাই সময় দিতে চাইছি না। আগে দুনিয়ার (পড়ালেখার) কাজ সারি। কিছু মনে করবেন না যেন
"কোরআনের যে যে আয়াতে নারীকে বেশী অধিকার/গুরুত্ব দেয়া হয়েছ, পুরুষকে বেশী অধিকার/গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে, এবং যেখানে সমতার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর একটা তালিকা প্রস্তত করতে পারেন।"
এই প্রসঙ্গে দুটি কথা বলতে চাই।
এক। কোরআন থেকে মুসলিমদের জন্য অস্বস্তিকর আয়াত দাখিল করলে তারা কাউন্টার একটা আয়াত উপস্থাপন করে মনে করে, ভালো-খারাপে কাটাকুটি হয়ে গেল। ভাল আয়াত থাকলেই খারাপ আয়াতগুলো অকার্যকর হয়ে যায় নাকি?
দুই। কোরআনের সমালোচকদেরকে কেন প্রস্তুত করতে হবে এই তালিকা? কোরআন থেকে চেরি-পিক করে অভ্যস্ত ইসলামবাদীরা তো ঠেকায় না পড়লে অস্বস্তিকর আয়াতগুলি সযত্নে এড়িয়ে যায়। ব্যাকফুটে গেলেই কেবল তারা এই তুলনার ঢেঁকুর তোলে। ধর্মপ্রচার বা ধর্মের মহিমা ফলাও করে জানানর সময় এই তুলনার কথা তাদের মনে থাকে না!
কাটাকুটি করার কথা তো আমি বলিনি। শুধু খারাপটা শুনবেন ভালোটা শুনবেন না কেন? এত অল্পেই বিরক্ত হলে চলে? আমি তো কোরানের মহিমা কীর্তন করে কোন পোস্ট দিচ্ছি না। কারণ সেটা ধর্মের প্রচার হচ্ছে বলে আপনিই হয়তো নীতিমালার ধারা দেখিয়ে দিবেন।
মনে হয়তো থাকে না। সেজন্যই তো বললাম তুলনামূলক আলোচনা করা দরকার। আপনি চেরি পিক করবেন, আবার অন্যেরা চেরি পিক করলে দোষ-- কেমন হয়ে গেল না? আমি কখনোই ফ্রন্টফুটে ছিলাম না যে ব্যাকফুটে যাওয়ার প্রশ্ন আসবে। গায়ে পড়ে বিতর্ক বাধানোর চেষ্টা করে লাভ হবে না। কারণ আমি এসব তর্কে যাব না।
বাংলাদেশে কার্যকরী মুসলিম পারিবারিক আইনে ইতিমধ্যেই এমন আইন আছে, যা কোরানিক আইন সম্মত নয়। একটা উদাহরন দেই- বাংলাদেশী মুসলমান পুরুষ একাধিক বিয়ে করতে পারেন, কিন্তু তাকে অবশ্যই আগের স্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে। এই অনুমতি নেয়ার বিষয়টি কিন্তু কোরানে নেই অর্থ্যাৎ কোরানের আইন মতে মুসলমান পুরুষ বর্তমান স্ত্রীর অনুমতি তোয়াক্কা না করেই আরেক বিয়ে করতে পারেন কিন্তু এটি রাষ্ট্রের আইন বিরোধী।
এ ক্ষেত্রে সুশীল মুসলমানরা বলতে পারেন- কোরানে তো কোথাও বলা হয়নি, অনুমতি নেয়া যাবেনা। অনুমতি নিলে সমস্যা কোথায়?
কোন সমস্যা নেই কিন্তু একই যুক্তি তাহলে খাটবে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে। কোরানে সম্পদ বন্টনের যে হিসেব দেয়া হয়েছে তাকে ন্যুনতম ধরলে সমস্যা কী? অর্থ্যাৎ বলে দেয়া অনুপাতের কম কন্যা সন্তানকে দেয়া যাবেনা, তাহলে এটি ইসলাম বিরোধী। কিন্তু এর বেশী দিলে সেটি ইসলাম বিরোধী তেমন কিছু কি কোরানে কোথাও বলা আছে?
দেখা যাচ্ছে আইয়ূব খান পঞ্চাশ বছর আগে এসব ইস্যু যেভাবে ম্যানেজ করতে পেরেছে, আমাদের এখনকার নীতিনির্ধারকরা তা পারছেননা।
আর আপনার মতো আমারো জিজ্ঞাসা, আলাদা করে নারী নীতি তৈরী করে কেনো বলতে হবে নারীদের সমান অধিকার? সংবিধান তো সমান অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েই রেখেছে। অতোটুকু বাস্তবায়ন করতে পারলেই তো কাজ হয়ে যেতো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
বৃথা না, যেখানে বলা হচ্ছে "সরকার কোরান-সুন্নাহর পরিপন্থী কোন আইন প্রণয়ন করবেনা"। সুতরাং তুলনা আসতেই পারে।
হাসিনা মনে হয় এই কথা যতটা না আমিনীর ভয়ে বলছে, তারচেয়ে বেশি আম্লীগের ভয়ে বলছে। তারা দেশের হাটেমাঠেঘাটে কাঁচি হাতে যেইভাবে বাউল মুড়িয়ে ইসলাম রক্ষায় নেমেছে! প্রধানমন্ত্রীরও তো ভয়ডর আছে, নাকি?
ঠিক কথা।
পুরোপুরি একমত।
ওইগুলো ছাড়াও আরো দুই একটা দল আছে। এদের মধ্যে একদল হচ্ছে অনেক লেখাপড়া(!) করা ডিগ্রিধারী যারা কোরানিক আয়তের সাহায্যেই নারীদেরকে যতটা সম্ভব নিচে নামিয়ে বলবে "এবং এইভাবেই ইসলাম নারীকে অতি উচ্চ মর্যাদা দিয়েছে"। এদের বক্তব্যের দুইটা উদাহরণ দেইঃ
১। পুরুষের চার বিয়ের ব্যবস্থা করে ইসলাম নারীকে অসাধারণ সম্মান দেখিয়েছে - এর ফলে নারীদের কম্প্যানিয়নশিপ বাড়ে, ঘরের কাজকর্মে সুবিধা হয় এবং সুখ দুঃখের কথা আলোচনা করার মত মানুষ পাওয়া যায়।
২। যৌনদাসত্ব খারাপ হবে কেন? ধরা যাক কোন যুদ্ধে কোন দল পরাজিত হলো এবং পরাজিত দলপতি নিহত হলো। এখন এই দলপতির যদি একটা অবিবাহিত মেয়ে থাকে তাহলে যুদ্ধবন্দী হওয়া তার জন্য অসম্মানজনক, সেক্ষেত্রে বিজয়ী কেউ যদি তাকে যৌনদাসী হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে সে তার সম্মান(!) রক্ষা করে থাকতে পারবে।
দুই উদাহরণের একটাও আমি বানিয়ে দেইনি, দু'জন অতি উচ্চশিক্ষিত(!) ব্যক্তি আমাকে ঠিক এই দুইটা কথাই বলেছেন। দু'জনেই সার্টিফিকেটের বিচারে আমার চেয়ে শিক্ষিত। এদের চিন্তার ধারা দেখলে একই সাথে অবাক আর অসহায় লাগে।
আরেকদল আছেন যাঁরা আরো এককাঠি সরেস। এদের কথাবার্তা খুব সোজা, "তোমার যুক্তি মানি, কিন্তু এইসব নিয়ে কথা বলতে হয় না। আল্লাহতাআ'লা আমাদের ভালোর জন্যই......"
এই দলের একজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম কয়েক সপ্তাহ আগে। তাঁকে যখন কাউকে মেরে ফেলার বিনিময়ে টাকা দিয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলার রীতির কথা বললাম তিনি ওই ধরণের সভ্যতাবিবর্জিত দেশগুলোর উপরে প্রচন্ড চটে গেলেন, এদেরকে যে ঠেঙিয়ে সভ্যতা শেখানো দরকার সেটাও বুঝে গেলেন। এরপরে যখন বললাম এই প্রথা ইসলামে সমর্থিত, প্রথমে বিশ্বাস করলেন না - রেফারেন্স চাইলেন ( এখানে এবং এখানে) । রেফারেন্স দেখার পরে পুরো উল্টে গেলেন, এখন তিনি ওই প্রথার সমর্থক। গায়েবী বিধান বলে কথা!
আরেক অতিশিক্ষিত বলে গেছেন, "কোনকিছু যুক্তি দিয়ে বিচার করতে হলে আগে সেটা অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে হয়..."
সম অধিকার এবং ইসলামিক অবিচার নিয়ে তর্ক করতে গিয়ে কম আজব প্রাণী দেখিনি। অন্ধ হতে রাজি না হওয়ায় হারিয়েছিও অনেক কিছুই, কিন্তু কি করবো, স্বভাব যায়না
মজা পাইলাম যুক্তি দুইটা দেখে। শিক্ষিত হওয়াটা আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে র্যাশনাল থিংকিং এর ক্ষমতা অর্জন করতে পারা। আপনার শেষ উদাহরনের লোকটি যদি (শিক্ষিত/অশিক্ষিত যাই হোন) যুক্তির পথ অনুসরণ করতেন, তাহলে ওই অমানবিক প্রথার ব্যাপারে তার মনোভাব ধরে রেখে সেটা ওই প্রথার উৎসের দিকে সঞ্চারিত করতে পারতেন। কিন্তু কী আর করা যাবে, যুক্তিশীল হওয়াটা মনে হয় এত সহজ না।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থ, রাষ্ট্রের বিদ্যমান আইন বা সংবিধান কোনটাই আসলে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ক্ষমতা, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে টাকা-কড়ি। সংসদে একটা সিট দিলে বা একটা প্রতিমন্ত্রীত্ব দিলে ঈশ্বর আর তার গ্রন্থকে আলমারীতে ভরে রাখা যায়। প্রতিপক্ষকে একঘরে করার জন্য সংবিধান বা দলের গঠনতন্ত্রকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে ঈশ্বরের সোল এজেন্ট হওয়া যায়।
রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সাধারণ চরিত্রকে ধারণ করে। নাগরিকের সাধারণ চরিত্রের সবচে' কার্যকর বহিঃপ্রকাশ দেশের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিভাত হয়। যুক্তিকে গ্রহন করতে অক্ষম, অথবা সুবিধা মতো যুক্তিকে বর্জন করতে পারঙ্গম নাগরিকদের কাছ থেকে মানবিক আচরণ বা যুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনে ভুমিকা আশা করা যায় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হুম।
দুর্দান্ত এর দুর্দান্ত মতামত ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
"দিনের শেষে দুজনেই সমান পরিশ্রান্ত হয়ে এরা যখন দুজনের আণবিক সংসারে ফেরে, তখন এদের পরিচারক-হীন বাসায় চা করে নিয়ে আসে কে? কে এদের ঘর মোছে? কাপড় ধোয়? বাচ্চা-পোষে? আমি আমার পরিচিতদের চেহারাগুলো মনে করে একে একে মনে মনেই তাদের এই প্রশ্নগুলো করলাম। প্রতিবার উত্তরে পেলাম নারী ও পুরুষ অসমান। বিষম। সমান নয়। "
ভয়ঙ্কর সত্য কথা। অনেক ভালো লাগছে আপনার লিখাটা।একজন নারী হিসেবে নিজেদের এই অবমাননা দেখে মরমে মরে যাই প্রতিনিয়ত।
কোরান বুকে নিয়ে রাস্তায় নামা ওইসব ছাগলের বাচ্চারা কি তাদের মায়ের অধিকার নিশ্চিত করেছে? নারী পুরুষ তুলনা করার সময় তার বউ আর তার অধিকারের তুলনা না করে, কিন্তু তার বাপ আর মায়ের তুলনা করে না কেন? প্রত্যেকটা নারী একজন স্ত্রী, একজন মা, একজন বোন। আমিনীরা নারী নীতির বিরুদ্ধে চিল্লানোর সময় কার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করে। বাড়ি ফিরে তারে ভাত বেড়ে দেবে কোন আদম?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আরেক মহাত্মার বাণী কোট করি - ভদ্রলোক পিএইচডি - ক্যানাডার প্রথম তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা থেকে।
"কোন নারী হিজাব না পরলে পরকালে তার স্বামী, বাবা এবং বড় ছেলেকে দায়ী করা হবে। কাজেই নারীকে হিজাব পরানোর দায়িত্ব এই তিনজনের উপরেই সবচেয়ে বেশী বর্তায়।"
বাবা আর স্বামীর কথা বাদই দিলাম, নারীর অবস্থান এতই নীচুতে যে এমনকি নিজের সন্তানের নির্দেশও তিনি মানতে বাধ্য। এইসব শিক্ষিত(!!!) কে আপনি মায়ের অধিকার বোঝাতে চান? ওই অধিকার বুঝতে হলে ন্যূনতম মানবিক অনুভূতি থাকতে হয়, এগুলোর (এদের নয়) সেই অনুভূতি কোনকালে ছিলো না।
খুব অবাক লাগে যখন দেখি যে হুমায়ুন আজাদের "পাক সার জমিন সাদবাদ" পড়লে মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে, কার্টুনিস্ট আরিফের "মোহাম্মদ বিড়াল" মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়(শুধু জামায়াতী না, সাধারণ ধার্মিকদের মধ্যেও এ নিয়ে ক্ষোভ দেখেছি), তসলিমা নাসরিনের বইও মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়(হুমায়ুন আজাদ তসলিমার চেয়েও তীব্রভাবে ধর্মের সমালোচনা করেছেন, তবে স্রেফ নারী হওয়ার কারণেই মনে হয় তসলিমার প্রতি মানুষের ক্ষোভটা বেশি), কিন্তু আমিনীরা এক হাতে কোরান আর আরেক হাতে লাঠি নিয়ে রাস্তায় মারামারির মত নাপাক কাজ করলে কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগতে দেখি না। এ এক আজব অনুভূতি, এই ধর্মানুভূতি।
হাহা মাধ্যমিক শ্রেণীর ধর্ম বইটা আরেক বার পড়ে দেইখেন, মৌলবাদী ধর্মীয় বইয়ের সাথে বিন্দুমাত্র পার্থক্য পাবেন না। ২০০৯ সালের ইসলাম ধর্ম বইটা পড়ে যা যা শিখলাম,
১) কাফের, মানে ইসলামে অবিশ্বাসীরা হল “অকৃ্তজ্ঞ”, “অবাধ্য”, “জঘন্য”- পৃঃ ৪
২) পৃঃ ৯ তে বলা হয়েছে মুমিনদের জন্য আখিরাতে বিশ্বাস করা বাধ্যতামূলক, কারণ পুরস্কার আর শাস্তির ভয় না থাকলে মানুষ কখনও ভাল কাজ করতে পারে না। বইটিতে অবশ্য স্বীকার করা হয়েছে যে পরকালের পরোয়া না করেও কিছু কিছু মানুষ সৎভাবে জীবনযাপন করে, কিন্তু তারা আসলে পরিপূর্ণ ভাল মানুষ না।
৩) শিশু-কিশোরদেরকে ভয় দেখিয়ে ঈমানদার বানানোর জন্য বইটি জাহান্নামের খুব সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছে, সরাসরি উদ্ধৃত করলাম, “পাপীরা জাহান্নামে ক্রমাগত অগ্নিদগ্ধ হবে। শরীরের চামড়া আর গোশত ঝলসে খসে পড়বে। আবার পরিবর্তন করে নতুন চামড়া আর গোশ্ত দেওয়া হবে যাতে দাহনযন্ত্রণা শেষ না হয়। জাহান্নামবাসীরা উষ্ণ রক্ত ও পুঁজের সাগরে হাবুডুবু খাবে। যাক্কুম নামে জাহান্নামের এক কাঁটাময় দুর্গন্ধযুক্ত উদ্ভিদ হবে তাদের খাদ্য। তীব্র পিপাসায় তাদের পান করতে দেওয়া হবে উত্তপ্ত পানি। আরও দেওয়া হবে পুঁজরক্ত মিশ্রিত দুর্গন্ধময় পানি। পাপীরা জাহান্নামে অনন্তকাল ধরে অগ্নিদগ্ধ হতে থাকবে।” এটা হল একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের স্কুলের পাঠ্যবই। ধর্মীয় এপোলজিস্টরা প্রায়ই দাবি করে জাহান্নামে বলে সব অবিশ্বাসীদেরকে পাইকারী দরে রপ্তানি করা হবে না, মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রদেরকে অবশ্য ঠিক উলটোটাই শেখানো হয়- “Then, for such as had transgressed all bounds, and had preferred the life of this world, The Abode will be Hell-Fire;” (79:37-39)। ধর্ম বইটার লেখক দেখলাম ডক্টরেট ডিগ্রীধারী, তিনিও কি "ইসলামবিদ্বেষী"দের মত না জেনে-বুঝে আউট-অব-কনটেক্সট কোরানের উদ্ধৃতি দেন, সেটাই এখন প্রশ্ন।
৪) হালাল খাবারের গুণগান গাইতে গিয়ে বলা হয়েছে, "“আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে হিংস্র প্রাণীর দেহে এমন সব জীবাণূ আছে যা মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকর, কাজেই তা আমাদের জন্য হালাল হতে পারে না। এছাড়া হারাম খেলে মন্দ অভ্যাস ও অসচ্চরিত্রতা সৃষ্টি হয়, ইবাদাতে আগ্রহ থাকে না এবং দুয়া কবুল হয় না”(পৃঃ ৪৪)। এসব কথা শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করিয়ে একটা বিজ্ঞানমনস্ক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাটা আসলেই হাস্যকর।
৫) পৃঃ ৫৪তে বলা হয়েছে যে ইসলামের শত্রু কাফেরদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে জিহাদ করতে হবে এবং এর স্বপক্ষে এই আয়াতটি দেওয়া হয়েছে, “O Prophet! strive hard against the unbelievers and the Hypocrites, and be firm against them. Their abode is Hell,- an evil refuge indeed.” (৯:৭৩)। এই কথাটা হিযবুত তাহরীর এবং সমমনা সংগঠনগুলো তাদের প্রকাশনাগুলোতে প্রচার করলে অপরাধ হয়, অথচ একই কথাটা স্কুলে পড়ানো একদম বৈধ! পৃঃ ৫৬তে বলা হয়েছে প্রতিবেশী হিসেবে মুসলমানদের দু’টো((মুসলমান হিসেবে এবং প্রতিবেশী হিসেবে) এবং অমুসলমানদের মাত্র একটি অধিকার আছে(প্রতিবেশী হিসেবে)। আমি এখান থেকে শিখলাম- অধিকারের দিক থেকে সব মানুষ সমান না।
৬) নারীদের প্রসঙ্গে এই বইয়ের সিদ্ধান্তটা পুরো বইয়ের সবচেয়ে বড় নেতিবাচক দিক। আর দশটা ইসলামী বইয়ের মত এখানেও সেই প্রাক-ইসলাম আরবে নারীদের উপর অত্যাচারের বিবরণ এবং ইসলামোত্তর আরবে নারীর অবস্থার উন্নয়ন নিয়ে বকৃ্তা দেওয়া হয়েছে, তবে আধুনিক যুগে নারীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে তা সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। পৃঃ৬৯ এ লেখা আছে,
“And stay quietly in your houses, and make not a dazzling display, like that of the former Times of Ignorance; and establish regular Prayer, and give regular Charity; and obey Allah and His Messenger. And Allah only wishes to remove all abomination from you, ye members of the Family, and to make you pure and spotless.”- (৩৩:৩৩)
এই সূরার আগের আয়াতগুলো লক্ষ করলে দেখা যাবে এই নির্দেশটি আসলে শুধুমাত্র মোহাম্মদের স্ত্রীদের জন্য প্রযোজ্য, তবে বইতে এই কথা লেখা নেই[আয়াতটার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের সময় মোহাম্মদের স্ত্রীদের নিয়ে কুৎসা রটানো কাফেরদের মাইন্ডগেমস বন্ধ করা, কিন্তু মওদুদি তাঁর জগদ্বিখ্যাত "তাফহীমূল কোরান" এ বলেছেন যে এই নির্দেশ আসলে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রযোগ্য, মুসলমানরা সবসময় কাফের-মুরতাদদের বিরুদ্ধে লড়ছে কিনা!)। বইতে আয়াতের উপরে লেখা আছে, “মেয়েদের বিনা প্রয়োজনে বাইরে ঘুরে বেড়ানো উচিত নয়”। সারা দেশের মাধ্যমিক শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের মত আমিও এখান থেকে শিখলাম- “বন্যেরা বনে সুন্দর, মেয়েরা রান্নাঘরে”।
৭) পৃঃ ৬৪তে তাকওয়া বা খোদাভীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, “পক্ষান্তরে যার মধ্যে তাকওয়া নেই, সে নিষ্ঠাবান ও সৎকর্মশীল হতে পারে না। তার সব কাজকর্মই হয় লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে। অন্তরে তাকওয়া না থাকলে মানুষ যে কোন দুর্বল মুহুর্তে পাপকর্মে লিপ্ত হতে পারে”। এখান থেকে আমি শিখলাম- মহাত্মা গান্ধী, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের মত তাকওয়াহীন ব্যক্তিদের কর্ম ছিল স্রেফ প্রবঞ্চনা।
৮) দেশপ্রেমের উদ্দেশ্য কি? মাধ্যমিক ধর্মবইয়ের মতে, “দেশকে হিফাযত করতে না পারলে ধর্মকে হেফাযত করা যায় না, দেশের মানুষকে রক্ষা করা যায় না, তাদের স্বার্থ রক্ষা করা যায় না”-পৃঃ ৭৩। বিজয় দিবসে বরাহছানারা যেসব র্যালি বের করে, সেটা জামায়াত আইওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করলেও বরাহছানারা কিন্তু খাটি দেশপ্রেমের কারণেই র্যালি করে, তাদের দেশপ্রেমের হেতুটাও উপরেই দেখা যাচ্ছে।
স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীরা যা শিখে, সারা জীবন সেগুলো তারা সচেতন কিংবা অবচেতন মনে মেনে চলে। স্কুল-কলেজেই যখন ছেলেমেয়েদেরকে ধর্মশিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মানবিক বোধটাকে ভোতা করে দেওয়া হচ্ছে, তখন ভবিষ্যতে এরা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে আমিনী গংকে সমর্থন করে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।
মাধ্যমিক ধর্ম বইটা এখানে পাবেন, তবে আমি যেহেতু ২০০৯ সংস্করণ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি, তাই রেফারেন্সগুলো নাও মিলতে পারে।
অসাধারণ অ্যানালাইসিস! এইটা নোট করে রাখি। কাজে লাগবে।
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
কোরান-সুন্নাহ্'র হিসাব পরে, আগের কথা আগে। আমিনীর মতো আদম হরতাল ডাকার সাহস পায় কী করে? আর সে হরতাল ডাকলে সেই হরতাল পালিতই বা হয় কী করে? বাংলাদেশে কি বেতের আকাল পড়ছে?
এমনে না বুঝলে আমিনীদের বেত মারফত এই তথ্যটা বুঝায়ে দেয়া জরুরী— অরা 'গণপ্রজাতন্ত্রী' বাংলাদেশের নাগরিক, ইসলামিক রিপাবলিক বাংলাদেশের না। সুতরাং, নো তেরিবেরি। তার আগে আওয়ামী লীগ আর হাসিনার'ও এইটা অনুধাবন করা জরুরী। কোরান-সুন্নাহ্'র কথা উঠলেই হেগেমুতে একাকার করে ফেলা ঠিক না।
ধর্ম পালনে সংবিধানে কোনো নিষেধ নেই। কিন্তু ধর্মকে সংবিধানের ছত্রে ঢুকিয়ে দেয়া নিষেধ। এটা যে করবে, যারা করবে তারা পরিষ্কার রাস্ট্রদ্রোহী। এইটা বুঝার মতো, মানার মতো শক্ত মেরুদণ্ড না থাকলে রাস্ট্রকার্য পরিচালনা করার কোনো অধিকারই কারো নাই।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সংবিধানে স্পষ্ট করে সমধিকারের কথা বলা থাকলে নারী নীতির প্রয়োজনটা কিসের?
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
নারী-পুরুষ সম অধিকার হলে বিয়েতে শুধু ছেলেরা কেন দেনমোহর দিবে
নতুন মন্তব্য করুন