ক্রিমিয়ায় ঘুম নাই

দুর্দান্ত এর ছবি
লিখেছেন দুর্দান্ত (তারিখ: রবি, ০২/০৩/২০১৪ - ৫:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০০৮ সালের মে মাস। পোল্যান্ড আর সুইডেন এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর সভায় একটা প্রস্তাব পেশ করে। আদতে ছয়টা প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্র, আরমেনিয়া, আজারবাইজান, বিয়েলারুশ, গিয়র্গিয়া, মলদোভা ও উক্রাইন এর সাথে বানিজ্যিক, অর্থনৈতিক, অবাধ যাতায়ত ইত্যাদি সংক্রান্ত একটা বহুমূখি অংশিদারিত্ব চুক্তি ছিল ঐ প্রস্তাবের উদ্দেশ্য়।

প্রস্তাবে অনেক মিঠা মিঠা কথা ছিল। মানবাধিকার, প্রগতি, টেকশই উন্নয়ন। কিন্তু এইধরনের সুন্দর সুন্দর কথায় ভরা প্রস্তাবে স্বৈরাচারী সরকারের দেশ বিয়েলারুশ কিভাবে পাত্তা পায়, তার কোন সিজিল জওয়াব পাওয়া যায়না। বিয়েলারুশরে একলা ফালায়া বাকীদের সাথে পেয়ার মোহব্বত করলে উই গোস্বা কইরা রুশিয়ার দিলে পল্টি খাইতে পারে, নাকি পারেনা? এইসব চিন্তা ভাবনা আর পেরেশানি বিস্মিল্লা থেইকাই ইউরপিয়ানগো দিলের গহীনে লুক্কায়িত আছিলো নাকি আছিলো না, আর এই প্রস্তাবের পেছনে রুশিয়া একটা বড় অদৃশ্য় চলক ছিলো নাকি ছিলোনা, এইসব আমরা জানিনা।

নিজ নিজ অবস্থাভেদে একেক ইউনিয়ন সদস্য় এই প্রস্তাব সম্বন্ধে এক এক রকম আইডিয়া করল। কালো সাগর তীরের দেশগুলির মধ্যে একাধিক গুরুপিং এর এন্তেজাম আগের থিকাই বলবত আছিল, এর মধ্যে আতকা এই প্রস্তাবে রোমানিয়া আর বুলগেরিয়া একটু থতমত খায়া যায়। ইউরোপের মুরুব্বী, মানে ডয়শলান্ড আর ফঁস, ইউনিয়নের অন্য় সদস্য়গরে এইসব বিষয়গুলো ভাল কইরা ভাইবা চিন্তা দেখতে বলে, কারন তারা মনে করে উক্রাইন হইল আখাইকাগো দেশ, উইর খাইতে দিলে শুইতে চায় খাইসলত, এই প্রস্তাব রাখলে হালায় এইটারে আস্তা ইউনিয়্ন সদস্যপদের নিমন্ত্রন হিসাবে ভ্রম করবো, নিসন্দেহ।

আর রুশিয়াতো প্রথমেই মনে করবো ইউরোপিয়ানরা আইছে অগো পাড়ায় ফিল্ডিং মারতে।

কিয়েভ পড়ল মাইন্কা চিপায়। এই প্রস্তাবে তার আলাদা কইরা কি ফায়দা হইব, সেইটা তার মাথায় ঢুকতেছিলনা। এমনিতেই ইউরোপিয় ইউনিয়নের সাথে তার ভিসামুক্ত যাতায়ত আর শুল্কমুক্ত বানিজ্য় নিয়ে আলোচনা চালু আছে। এখন বাকী শুধু কলমা পইড়া পুরো সদস্য হওয়া। ইউনিয়নের সদস্যরা যেসব পররাষ্ট্রিক, কোউশলগত আর সামরিক (?) সুবিধাগুলা পায়, সেগুলাই যদি না পাওয়া গেল, তাহলে আলাদা কইরা ইসব বহুমূখি অংশিদারিত্বফারিত্ব নিয়া সে কি ফালাবে?

এইসব সিরিংখলার মধ্যে উক্রাইনি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ২০ বিলিয়ন দাম হাঁকাইলো। দেখি বেটারা কি কয়। ইউরোপিয়ানরা মিন মিন কইরা সাকুল্যে ৬১০ মিলিয়ন দর উঠাইলো, তার উপর আবার নানান কিসিমের দাবী-দাওয়া, গিলা-শিকোয়া। ওইদিকে মস্কো থিকা গুরুগম্ভীর আওয়াজ উঠলো সহজ শর্তে ১৫ বিলিয়ন। ইয়ানুকোভিচ এমনিতেই নিম-রুশিয়ান। সে আর ঝামেলায় না গিয়া ২০১৩ এর নভেম্বর বিস্মিল্লা বইলা ইউনিয়নের প্রস্তাবে না কইয়া দিল। এই প্রত্যাক্ষানের পেছনে রাজনৈতিক কারন ছারাও ইয়ানুকোভিচের ব্যাক্তিগত কারন ছিল। ইউরোপিয় ইউনিয়নের দাবী মানলে, কারারুদ্ধ বিরোধীদলীয় নেত্রী ইউলিয়া তিমোশেন্কোরে ছাইড়া দিতে হইত। ইয়ানুকোভিচরে জীবন গেলেও ঐ মহিলারে জেলখানার বাহির হইতে দিবনা।

রাস্তায় নামলো উক্রাইনি পাবলিক।

পয়লা পরথম আন্দোলন শান্তিপুরনই আছিল। কিন্তুক এর আকার প্রকারে ইয়ানুকোভিচ গেল ডরায়া। ১৪ই জানুয়ারী একটা আইন পাশ করলো সে। আইনের বিধানের মধ্যে অনুমতি ছাড়া তাঁবু খাটানো যাইবোনা, মাইক লাগানো যাইবোনা, খামাখা মুখোশ বা হেলমেট পরা যাইবেনা, এধরনের আউল ফাউল বিধান ছিল। পাবলিক তো বোকা না, তারা ঠিকই বুঝতে পারছিল কেম্নে কি। তারা গেল আরো ক্ষেইপা। মিছিলে মিছিলে চারিদিক কাপায়া তারা কিয়েভ নগর ভবন দখলে নিল। ইয়ানুকোভিচ সরকার তখন আর উপায় না দেইখা আন্দোলন নিয়্ন্ত্রন আইন তুইলা নিল।

কিন্তু ততক্ষনে দই জইমা গেছে।

আন্দোলনের দাবী আরো বুনিয়াদী চেন্জ মানে একেবার সাংবিধানিক ভাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমানোর দাবীর দিকে হেইলা গেছে।

১৮ই ফেব্রূয়ারী সারা কিয়েভে গন্ডগোল শরু হইয়া গেল। পুলিশ আর জনতার সনঘাতে ৮২ জন শহীদ হইল। হাজারেরো অধিক আহত হইল। ১৯, ২০, ২১ ফেব্রুয়ারীতে পরিস্থিতির আরো খারাপের দিকে যাইতে থাকলো। ২৩ ফেব্রুয়ারী ইয়ানুকোভিচ পালায়া রাশিয়া গেলগা। এইসব ডামামোডের মধ্যে পহেলা মার্চ, পুতিনের সরকার উক্রাইনে রুশ সেনাবাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিল। ঠান্ডা যুদ্ধের পরে এই প্রথম রাশিয়া তার জামাজুমা খুইলা সিনা চেতায়া পশ্চিমের নাকের ডগায় আইসা খাড়াইল

এখন দেখা যাক কার চোখের পলক আগে পড়ে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

হ রে ভাই, মেলাদিন পর আবার একপিস আন্তর্জাতিক মানের বিনুদন। পপ্পন নিয়া বয়া রইচি। স্যাম চাচা তো ফুন দিছে। দেখি শ্বেতভালুক কি জবাব দেয়।

--ইমরান ওয়াহিদ

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখকের কূটনৈতিক প্রজ্ঞা অসাধারণ ।

ইয়ে মানে , গিয়র্গিয়া জিনিস টা কি ?

রাজর্ষি

দুর্দান্ত এর ছবি

শুক্রিয়া। আংরেজীতে যেইটারে জর্জিয়া বলে, ঐটাই হইল গিয়র্গিয়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

এখন তো শোনা যাচ্ছে ইউক্রেনের সরকারবিরোধী আন্দোলন হাইজ্যাক করে নিয়েছে উগ্র-ডানপন্থী, নিও-নাজিরা!

Emran

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইখানে দুইটা কথা আলাদা কইরা নজরে আসতেছে :

এক. ইউক্রেন হইতেছে রাশিয়ার ঢাল। সেই রমোনভ আমল থিকা বিপ্লবটিপ্লব আর এম্রিকার দালাল ইয়েলেৎসিন যুগ পার কইরা পুতিনামল পর্যন্ত এই বাস্তবতার কোন পরিবর্তন হয় নাই। দোষ ভুগোলের।

দুই. এম্রিকা এগারো সেপ্টেম্বরের আগ থিকাই পুতিনের রাশিয়ার উপর চেইতা রইছে। তারউপর হালে পুতিন মিয়া নানান ঘিরিঙ্গি কইরা এম্রিকার মুখের গ্রাস সিরিয়া কাইড়া নিছে। রাশিয়ারে একহাত দেইখা নেওয়ার জন্য তারও গোয়া কামড়াইতেছে।

এই দুইটা পয়েন্ট সকাল থিকা আবার আমার মাথা কামড়াইতেছে।

শেষ পর্যন্ত কিছুই না হোক।

দুর্দান্ত এর ছবি

ভুগোলের দোষ, কথা সইত্য। কিন্তু নগদের ক্রাইসিস কিন্তু ঠাস কইরা চালু হয় নাই। পুতিন ২০০৮ সাল থেইকাই ক্রাইমিয়ানগো পাসপোর্ট দিয়া টিয়া লাইন ক্লিয়ার কইরা রাখছিল। ঐদিকে পশ্চিমারা সিরিয়ায় টাল্টিবাল্টি করসে বইলাই পুতিন হাতের তাস ফেলল। ঐদিকে সিরিয়া যাবে, এইদিকে পুরা কালোসাগর রাশিয়া দখলে নিবে। শুনছি পরের খেলা হবে উত্তর আফ্রিকায়।

সাফি এর ছবি

ভাল লাগসে পড়ে। এত বিস্তারিত জানতাম না। এখন পপ্পন নিয়া বইলাম।

Kerry: Russia behaving "in 19th century fashion by invading another country on completely trumped up pre-text"

আয়নামতি এর ছবি

এরকমের একটা গুরুত্বপূর্ণ লেখায় এত বানান ভুল কেন রে ভাই!

হুদাই সারাহ্ পালিনরে সব্বাই বেহুদা কয়ে হাসাহাসি করছিল। সে কিন্তু ঠিকই জান্তো, ওবামা প্রেসিডেন্ট হইলে পুতিন জর্জিয়ার মত ইউক্রেনের দিকে হাত-পা সহ পুরা শরীরেই ঢুকে যাবার পিলান করবে। দেখতেছেন কথা কত সত্য! আম্রিকার অবস্হাটা দেখলে হাসিই পায়। সোচি(sochi) অলিম্পিকচলাকালীন ইউক্রেনের খবরপরিবেশকারী সাংবাদিকদের চেহারা ছিল দেখবার মত দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুণ লেখা । কি হয় কে জানে ? চিন্তিত

তাহসিন রেজা

সত্যপীর এর ছবি

আপডেট দিবেন্না? নৌকাচীফের পল্টির ব্যাপারটা খুইলা কন। নৌকাবাহিনী চীফের কথা না শুনার কারণই বা কি?

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

কোন এক পেছনপাকারে খোমাখাতায় কইতে দেখলাম, এদেশের মিডিয়া এই খবরের গুরুত্ব বুঝতাছেনা, ভুরাজনোইতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর অসীম গুরুত্ব, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, ব্লা ব্লা ব্লা

----ইমরান ওয়াহিদ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, বুঝেছি, আজও অফিসে কাজে ফাঁকি দিয়ে লেখা হয়েছে, তাইতে এত টাইপো। তা এত দিনেও কি ল্যাপিটা বদলায়নি! যাক, অনেকদিন পরে পুরনো বন্ধুর দেখা পেয়ে মনটা ভাল হয়ে গেল।
লেখা ও বিশ্লেষণ দারুণ হয়েছে। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।