প্রথমেই আত্মপক্ষ সমর্থনে বলে রাখা ভালো, আমি মোটেই সেই নাঁক উচা উন্নাসিক বাঙ্গালীদের দলে নেই, যারা কথায় কথায় বলে, “এই বাঙ্গালী জাতিকে দিয়ে কিছুই হবে না” । বরং আমি আসলেই বিশ্বাস করি যে, অবশিষ্ট মানব সম্প্রদায়ের মত বাঙ্গালীর ও সম্ভাবনা অসীম।
কিন্তু মাঝে মধ্যে এমন বিরক্ত লাগে, তখন মনে হয়, আমাদের স্বভাব চরিত্র ঠিক না হলে আমরা জীবনেও উঠতে পারবো না।
ঘটণার শুরুটা একটা বাংলা ভিত্তিক ফোরামে। অনেকেই হয়ত চিনবেন, আমি নামটা আলাদা করে বলতে চাচ্ছি না। যাই হোক মূলত বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ভিত্তিক সেই ফোরামে আমি বেশ আগ্রহের সাথে যোগদান করেছিলাম। এমনিতেই প্রযুক্তি বিশেষত ইন্টারনেট নিরাপত্তা, নেটওয়ার্কিং ইত্যাদি বিষয়ে আমার বেশ আগ্রহ আছে। যোগ হবার পর আমার দারুন লাগছিলো। মায়ের ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ব্যাপারটা যে কতটা অসাধারণ, তা আমি সেখানে না গেলে বুঝতাম না। এ জন্য অবশ্যি সেই ফোরামের মডারেটর এবং বাকি সবাই একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
সমস্যার শুরু, নেটোওয়ার্কিং ভিত্তিক একটা সমস্যা নিয়ে। কেউ একজন একটা সমস্যা জানিয়ে একটা পোস্ট করেছিলেন। আমার যৎসামান্য জ্ঞানে তার উত্তর জানা ছিলো দেখে, আমি তার জবাব দিয়েছিলাম। প্রশ্নটা খুব বেসিক লেভেলের হওয়াতে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, প্রশ্নকর্তা এই ব্যাপারে অতটা সম্যক অবগত নন।তাই চেষ্টা করেছিলেম যতটা সম্ভব সহজ ভাষায় উত্তরটা দিতে। দেওয়ার পর দেখলাম, প্রশ্নকর্তার উত্তরটি বেশ ভালো লেগেছে। ব্যাপারটা হয়ত এখানেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু তখনি আবির্ভাব হল এক বিজ্ঞ পন্ডিতের। উনি প্রশ্নটির সাথে ছোট আরেকটি লেজ লাগিয়ে প্রশ্নটি করলেন। আগেই বলেছি যে, প্রশ্নটি কিছুটা বেসিক লেভেলের হওয়াতে, এটা খুব সহজেই অনুমেয় যে, এই প্রশ্ন যিনি করবেন, তিনি এই ব্যাপারে ততটা সম্যক অবগত নন। যতটা সহজে উত্তর দেওয়া যায়, ততটাই ভালো হয় তার জন্য। আমিও তাই সেইভাবেই উত্তর দিয়েছিলাম। কিন্তু আসল মজা দেখলাম তার পর। আমার সেই পোস্ট এর পর পন্ডিত ব্যক্তি নিজেই বিশদ এক পোস্টে তার নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিলেন। প্রকারন্তরে আমাকেও বুঝিয়ে দিতে ছাড়লেন না, তিনি এই ব্যাপারে আমার চেয়ে বেশি বুঝেন।
তা তিনি বুঝতেই পারেন। আমি একজন সামান্য যুবক।শখের বশে এগুলো নিয়ে ঘাটি। আমার জ্ঞান সামান্য হবে, এ কথা নতুন নয়। কিন্তু তার মানসিকতা টা আমাকে দারুন বিরক্ত করেছে। আপনি যদি নিজেই জানেন তবে অন্যকে প্রশ্ন করার মানে কি ?
আমার সাদা চোখে তো আমি যা বুঝি, নিজেকে জাহির করাই এর এক মাত্র উদ্দেশ্য।আমি আমার এই স্বল্প নেট জীবনে বেশ কিছু প্রযুক্তি ফোরামের সাথে কাজ করেছি, যাদের মূল ব্যক্তিরা সবাই বিদেশি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের। এরা এত কিছু জানতো, কিন্তু আমি ঘুনাক্ষরেও কোন দিন এদের মধ্যে জাহির করার প্রবনতা দেখি নি। কোন প্রশ্ন করলে যতটা সহজ ভাবে তার উত্তর দেওয়া সম্ভব হত, তাই দিতো। কিন্তু আমার বলতে দুঃখ হচ্ছে, শুধু এই ফোরাম নয়, অন্য অনেক ফোরাম এমন কি বাস্তব জীবনেও বাঙ্গালির মধ্যে এই বিনয়ের অভাব চোখে পড়ার মত। হয়ত বাঙ্গালী বলে মোটা দাগে সবাইকে এক গোত্রীয় করা ঠিক হচ্ছে না। তবে বাঙ্গালীর মধ্যে, এই স্বভাব একটু বেশি বলেই মনে হয়েছে।
হয়ত এই ঘটণাটি তেমন “সিগনিফিক্যান্ট” কিছু না, কিন্তু আমার কাছে এক বিরাট বড় মাইলফলক। আমি প্রথমবারের মত অনুভব করলাম আমাদের পিছে পড়ে থাকার একটা বড় কারন। আমাদের দেশে অনেক গুনী লোক আছেন, এমন কি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক শিক্ষকই , যথেষ্ট বিনয়ী নন বলেই আমার ধারণা।তারা এমন অবজ্ঞা আর তাচ্ছিল্যের সাথে মানুষের সাথে কথা বলেন, যেনো আমরা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক !
ব্যাপারটা যে ব্যক্তি কিংবা দেশ কারো জন্যই মংগলজনক না, আশা করি তা তারা বোঝার চেষ্টা করবেন।
মন্তব্য
লেখাটা আসলে তাৎক্ষণিক একটা ক্ষোভ থেকে লেখা। সবাই হয়ত এক মত হবেন না, আর এটাই হয়ত এক মাত্র কারন না আমাদের অনুন্নতির।
আমার বিরক্তি থেকে উৎপাদিত এই লেখা যদি আপনাদের বিরক্তি উৎপাদিত করে থাকে, তবে ক্ষমাপ্রার্থী।
----------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সবজান্তা, এই সমস্যাটা শুধু বাঙ্গালীদের না। গোটা ভারতবর্ষের লোকজনই নিজেকে পণ্ডিত ভাবে। ব্যাপারটা আমি ধরতে পারি দেশ ছেড়ে বাইরে আসার পর। আমাদের মাস্টার্স কোর্সে ২ খানা পাকি আর ২ খানা ইন্ডি ছিল। তাদের কথা বার্তার বেশিরভাগ অংশ জুড়েই থাকতো, কে কত ভাল কি করতে পারে, ওই টিচার কিছুই জানে না, আসলে ব্যাপারটা এই হবে........... ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রথম প্রথম খুবই বিরক্ত লাগতো, মনে হতো এমন করছে কেন? তারপর একটু মনে করে দেখলাম, হুবুহু একই জিনিষ দেশে ইউনিভার্সিটিতে অনেক দেখেছি, এমনকি হয়তো নিজের অজান্তে করেও এসেছি। নিজেরা নিজেরা তো, তাই চোখ সয়ে গিয়েছিলো।
এটা বুঝতে পারার পর আমি বাঙ্গালী কম্যুনিটির লোকজনদের একটু খেয়াল করে দেখলাম... ভারতবর্ষীয় এই মানসিকতা বেশিরভাগ লোকের মধ্যেই বিদ্যমান। আমি জানি না, আপনার সাথে বা অন্যদের সাথে আমার মত মিলবে কিনা, তবে আমার উপলব্ধি "আমরা বেশিরভাগই এই রোগে আক্রান্ত, জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে", সম্ভবতঃ আমি নিজেও এর বাইরে নই। হাজার হলেও, একহালি ইন্ডি-পাকির সাথে গা ঘষাঘষির একটা মাজেজা আছে না....?
"তুই আর এমন কী জানিস, আমি তোরচে বেশি জানি" গোছের একটা ভাব প্রকাশের প্রবণতা থাকে অনেকের মধ্যে। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। প্রদর্শনমোহ অবশ্য কারো কারো মধ্যে রোগের পর্যায়ে চলে যায়, তার ঘনিষ্ঠজন বা বন্ধুস্বজনকে তখন বিপত্তিতে পড়তে হয়।
সাবঅপটিমাইজেশন বলে একটি শব্দ হয়তো অবগত আছেন, বা ভবিষ্যতে এ নিয়ে বিশদ জানবেন। যখন সামগ্রিক লক্ষ অর্জনকে বিপন্ন করে কেউ নিজের ব্যক্তিগত লক্ষ অর্জন বা লক্ষমাত্রা বর্ধন করে, তখন ব্যাপারটা সাবঅপটিমাইজেশন হয়ে দাঁড়ায়। বাঙালির উন্নতি না করার পেছনে এটা কখনো কখনো কাল হয়ে দাঁড়ায় বলে আমি মনে করি। অন্যান্য জাতির মধ্যেও যে এ বস্তু নেই, তা বলছি না, কিন্তু বাঙালি জাতির মধ্যে এ প্রবণতা প্রায় সারাটা জীবন ধরে লক্ষ করেছি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
সাবঅপটিমাইজেশন!
হুম ।
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমার ধারণা এই বেশী বোঝার প্রবণতাটা বাঙালীদের মধ্যেই বেশী - তবে দক্ষিণ ভারতীয়দের মধ্যে প্রায় নেই। আমার ধারণা দীর্ঘকাল ধরে জ্ঞানের পৃথিবীতে অবহেলিত থাকার ফলে একটা কমপ্লেক্স হিসাবে এটা তৈরী হয়েছে। ধীরে ধীরে পরের জেনারেশনে ঠিক হয়ে যাবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
তবে ব্যাপারটাকে অতিসরলীকৃত করে, সব বাঙ্গালীকে এক গোত্রে ফেলাটা বোধহয় ঠিক হবে না।
হাম-বড়া ভাব দেখানো বাঙ্গালী যেমন আছে, তেমনি অনেক বিনয়ী বাঙ্গালীও কিন্তু আছে। সুইডেনে এক পরিচিত বড় ভাই আছেন, যাকে আমি টেক-গুরু বলেই মানি। অসম্ভব রকম মেধাবী, যোগ্য এই ব্যক্তির কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি, কিন্তু কোনদিন ই তার মধ্যে বিনয়ের অভাব দেখিনি।সব সময়ই দাবী করেন, তিনি কিছুই পারেন না !
এত দূরেই বা যাই কেন , আমাদের সচলেই তো রাগিব হাসান ভাইএর কত লেখা পড়েছি। এত গুনী একজন মানুষ, কিন্তু উনার কোন লেখা পড়েই বোঝার উপায় নেই উনি কত ভাল একজন ছাত্র, কত গুনী একজন লোক !
বাকিরা কেনো যে এদের দেখে কিছু শেখে না, সেইটাই প্রশ্ন !
------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ওহো তবে বোধহয় ভুল জায়গায় এসে পড়েছি..... চরি, চরি !!
..হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে...
আমার মতে বাঙালীদের উন্নতি না হওয়ার আরেকটা কারণ হলো নিজের অঙ্গানতাকে অস্বীকার করা। একজন মনীষী বলেছিলেন যে অঙ্গানতা যত না লজ্জার কথা তার চেয়ে অনেক বেশি লজ্জার কথা হচ্ছে শিখতে না চাওয়া। আমাদের বাঙালীদের লজ্জা এমনিতেই কম,তাই কোন কিছু শিখতে না চাওয়ার মধ্যেও যে লজ্জা আছে সেই বোধটুকুও আমাদের নেই।
সু
নতুন মন্তব্য করুন