চলচ্চিত্রটা বেশ পুরোনো। অন্তত রিভিউ লেখার জন্য। এর মুক্তি কাল , ৩০শে অক্টোবর, ১৯৯৮।
চলচ্চিত্রের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়, আমেরিকাতে বর্ণবাদ। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এডওয়ার্ড নরটন , যিনি প্রাইমাল ফীয়ার এবং ফাইট ক্লাবের মত ছবিতে দারুন অভিনয় করেছেন। তিনি এ ছবিতেও দারুন সাবলীল। একই সাথে অবশ্য এডওয়ার্ড ফার্লং এর অভিনয়ও প্রায় মূল চরিত্রের দাবিদার।
আমেরিকান হিস্ট্রি এক্স ছবিটির মূল কৃতিত্ব এখানেই যে, এটি ভৌগলিক সীমাকে অতিক্রম করেছে। যদি আপনি একজন বাংলাদেশীও হন, তবুও আপনার মনে হবে, এটি আপনার আশে পাশেই ঘটে যাওয়া কোন একটি ঘটণা। তারুণ্যকে ব্যাবহার করে ( এক্সপ্লয়েট ) কিভাবে, সমাজকে ধ্বংস করা যায়, তার এক দারুন চিত্রায়ণ এই চলচিত্র। শ্বেতাংগরা কিভাবে কালোদের ( কালো বলতে শুধু নিগ্রোরাই নয়, যাবতীয় এশিয়ান এবং অশ্বেতাংগ জনগোষ্ঠীকেই বোঝানো হয়েছ ) ঘৃণা করতে শুরু করে, কিভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করে কালোরাই তাদের সব অশান্তির মূলে, তার একটা দারুণ নিদর্শণ এই ছবি। ঠিক একই ভাবে আমাদের দেশের তরুণদের বোঝানো হয়, কিভাবে ভিন্ন ধর্মালম্বীরা তাদের শত্রু, তাদের ধ্বংস করা উচিত। মূলত, সাম্প্রতিক কালে এই সিনেমাটি দেখতে গেলে, বার বার আপনার বাংলাদেশের সাথে এই সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়াটা প্রায় অবধারিত।
এই চলচ্চিত্রে বর্ণবাদের সমান্তরালে উঠে এসেছে, বর্তমান সময়ের পাশ্চাত্যের অস্থিরতা। পারিবারিক জীবনের সংকট খুব মসৃনভাবে ফুটে উঠেছে এ সিনেমাতে। আরেকটি উদ্বেগের বিষয় যা এখানে ফুটে উঠেছে, তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে অবাধ অস্ত্রের মালিকানা। এমন কি স্কুল পড়ুয়া কিশোররাও খুব সহজেই একটি অস্ত্রের মালিক হতে পারে। সেই সাথে নতুন প্রজন্মের মাঝে কিভাবে হিংসাকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। খুব সহজেই স্কুল পড়ুয়া কেউ, তার সহপাঠীকে খুন করতে পারে।
চলচ্চিত্রটির একটি মুন্সিয়ানার দিক হল, দু ধরণের কালার স্কীম ব্যাবহার। যদিও এটি একদম নতুন কিছু হয়। তবুও অতীতকে বোঝানোর জন্য সাদা কালো এবং বর্তমানকে বোঝানোর জন্য রঙ্গীন চিত্রায়ণ নিঃসন্দেহে দর্শকের বোঝার ক্ষেত্রে কিছুটা সাচ্ছন্দ্য এনে দেয়।
খুব সুন্দর একটি ট্যাগ লাইন এই চলচ্চিত্রে ব্যাবহার করা হয়েছে, His father taught him to hate. His friends taught him rage. His enemies gave him hope.
সামগ্রিকভাবে ছবিটি দারুনভাবে ভাবায়। গত শতকের শেষ দিকে নির্মিত এ ছবি, খুব সম্ভবত এ শতকের শেষ দিকেও তার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে না, বর্তমান পৃথিবীর পরিপ্রেক্ষিতে।
যদি না দেখে থাকেন, দেখতে পারেন বিনা দ্বিধায়। তবে ছবিটিতে কিছু ( এমন কি শুরুর দৃশ্যটিই) রগরগে যৌণদৃশ্য আছে, সেই সাথে নগ্নতা। তাই পরিবারের সাথে কিংবা ছোট-অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে নিয়ে না দেখাই সমীচিন হবে বলে বোধ হয়।
** ভাই বিশ্বাস করেন , আমি চলচ্চিত্রের কিসসু বুঝি না , কাজের ভুল ভ্রান্তি হইলে মাফ কইরা দিয়েন। সামনের বার আরো ভাল মত লেখার চেষ্টা কইরা দেখবো।
মন্তব্য
আমেরিকার প্রায় সবগুলো ছবিতেই এই বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গী থাকে
সবখানেই খারাপ চরিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে অ-সাদা লোকজনকে বেছে নেয়া হয়
এবং এটা শুরু হয়েছে সেই বার্থ অব এ ন্যাশন ফিল্ম থেকেই
'AMERICAN HISTORY X'...ছবিটা আমার প্রিয় ছবিগুলোর একটি, প্রথম দেখেছিলাম ২০০০ সালে। আমার মনে হয়েছে এটি আখেরে কালো মানুষের পক্ষের ছবি, যার ফলে সাধারণ হলিউড ফিল্ম থেকে এটি ভিন্নতার দাবী রাখে। বরং এর কালার স্কীম আর স্ক্রীপ্টের বর্ণনার ঢং দেখলে মনে হবে এটি য়ুরোপীয় ঘরানার কোন ফিল্ম! ছবিটার শুরুটা সত্যিই চমতকার, ছবিটিতে যতখানি নুডিটি এসেছে তা গল্পের প্রয়োজনেই। বিশেষ করে জেল খানায় গল্পের মূল চরিত্র Edward Norton-কে যেভাবে রেইপ করা হয় তা আজও জেলগুলির স্বাভাবিক চিত্র; এমন কি আমাদের দেশের বিচারেও এর বাস্তবতা আছে। আমেরিকায় যে পিউর ব্লাড বা নাতসিসম থেকে উদ্ভূত যে চেতনা দ্বারা তাড়িত হয়ে তরুন প্রজন্ম একসময় মেতেছিলো রক্তের হোলি খেলায়, তার নানা ঢঙ্গের প্রকাশ আমরা দেখি ব্রিটেনসহ নানা য়ুরোপীয় দেশেও। আজো বৃটেনের বি.এন.পি-কে এই ধারার উত্তরসূরী হিসেবে চিহ্নিত করা যায় ! ছবিটার শেষাংশের ট্রাজেডি, Norton-কে নিজের গ্যাং থেকে বের হয়েও হারাতে হয় ছোট ভাইটিকে; এই ট্রাজিক ঘটনা ইংগিত করে পরবর্তী আমেরিকার পরিণতি যার প্রভাব এখনো বহমান...যাইহোক ছবিটা দারুন! যারা দেখেননি জলদি দেখে যেলুন (ছবিটা কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য; শুধু নুডিটির জন্য নয়, ভয়ংকর সন্ত্রাসের জন্য ছবিটি অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেখা ঠিক হবে না)।
নতুন মন্তব্য করুন