কিছুদিন আগে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি লেখাতে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, দেশের স্কুল কিংবা কলেজ পর্যায়ে ক্রমহ্রাসমান বিজ্ঞানের ছাত্র সংখ্যা নিয়ে। মূলত সেখান থেকেই এই লেখার জন্য অণুপ্রানিত হওয়া। আমি ভুল ক্রমেও কোন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ নই। যে লেখছি এবং লেখবো এ বিষয়ে তার সবটাই নিজের ছাত্র জীবনের এবং পেটের দায়ে করা প্রাইভেট টিউশনির অভিজ্ঞতা থেকেই তুলে আনা।
বিজ্ঞান শিক্ষাতে অনীহার ক্ষেত্রে এককভাবে কোন একটি ফ্যাক্টরকে দায়ী করা যাবে না। অনেকগুলি কারনেই বিজ্ঞান শিক্ষার এই দুর্দশা।শুরুতেই আজ আমরা যে দিকটিতে আলোকপাত করতে চাই, সেটি হচ্ছে উপযুক্ত বই এর অভাব।
একদম প্রাথমিক শ্রেনী থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনী পর্যন্ত আমাদের দেশে বিজ্ঞান এবং গণিতের সেই অর্থে ভালো কোন বই নেই। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় একদিন লাইব্রেরীতে একটি পাঠ্যবই খুঁজতে যেয়ে, একটি চমৎকার গণিতের বই পেয়ে গিয়েছিলাম। একটু নাড়াচাড়া করেই বুঝে উঠি যে, এটি আসলে বিদেশে তথা উন্নত বিশ্বের একদম নিচু ক্লাসের বাচ্চাদের গণিতের বেসিক কিছু ধারণা শেখানোর বই। এক পাতা , দু পাতা করে উল্টাতে উল্টাতে মন্ত্রমুগ্ধের মত প্রায় ১০ মিনিট ধরে বইটা নাড়াচাড়া করে বুঝতে পারি, কেন আমাদের দেশে গণিতের এই দুর্দশা। ছোটবেলা থেকেই আমাদের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক বিশেষত গণিতের পাঠ্যপুস্তক পড়ার অভ্যাস নেই বললেই চলে। আমরা সরাসরি অনুশীলনীতে চলে যাই, অংক করা শুরু করি। মূল অধ্যায়ে কি লেখা আছে তা আমরা কখনই পড়ি না। অবশ্য না পড়ার পেছনেও একটা চমৎকার কারণ আছে। বইগুলির আলোচনা এতটাই নীরস ভাষায় এবং কঠিণ করে লেখা থাকে যে, নিতান্ত ধনুক ভাঙ্গা পণ ছাড়া সেটি ধৈর্য ধরে পড়ে যাওয়া বেশ কষ্টের। এই বইগুলি পড়ে সে ক্লাসের একজন ছাত্র ( সাধারণ মেধামানের ) কিছু বুঝতে পারবে, সে আশা করাটা একদমই অনুচিত। তাই খুব সাধারণভাবেই এটা ধরে নেওয়া হয় যে, গণিত শেখবার জন্য অবশ্যই প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে যেতে হবে। এখানে হয়ত প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন প্রাইভেট শিক্ষক ? কেন স্কুল শিক্ষকই যথেষ্ট নয় ? এর উত্তরে বলা যেতে পারে, বর্তমান সময়ে স্কুল শিক্ষকদের মেধা মনীষা এমন পর্যায়ে পৌছে গিয়েছে ( অধিকাংশ শিক্ষকের ) যে তাদের কাছ থেকে কিছু শেখাটাও বিপদজ্জনক কারণ ভুল শেখার থেকে না শেখা উত্তম।একদম প্রাইমারী পর্যায়ের একটা বাচ্চা যখন অংকগুলিকে না বুঝে মুখস্ত করে যেতে থাকে, স্বাভাবিক ভাবেই গণিতের প্রতি তার আকর্ষণ কমে যেতে থাকে। মাধ্যমিক পর্যায়ে এসব সমস্যার সাথে যোগ হয়, অংকের নিয়ম সংক্রান্ত জটিলতা। মাঝে মধ্যেই শিক্ষকেরা ফতোয়া দিয়ে বসেন, অমুক নিয়মে অংক করলে তিনি নম্বর দেবেন না, উনার নিয়মটাই একমাত্র ঠিক , ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ের জন্যও সাইড নোট না দিলে নম্বর কাটা যাওয়া ইত্যাদি। এ সকল কারণেই একজন ছাত্রের নম্বর কমে যায়। ফলশ্রুতিতে, মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হলেও হতোদ্যম হয়ে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান ত্যাগের নজিরও কম না। উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য অবশ্য কারন সম্পূর্ণভাবে বাজে মানের বই। খুবই চমৎকার উদাহরণ হতে পারে, বিন্যাস সমাবেশের অংক। উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞানের ছাত্র মানেই, একবার হলেও বিন্যাস সমাবেশের অধ্যায়ে যেয়ে একটু ধাক্কা লাগা। কেউ হয়ত এক ধাক্কাতেই পার করে আসেন, কেউ বা সেই ধাক্কা সারা জীবনেও পার হতে পারেন না। দ্বিতীয়োক্ত দলকে খুব বেশি দোষ দেওয়া যায় না, কারণ এত সুক্ষ্ম ধারণার একটি অধ্যায়কে মোটামুটি সব বইতেই এত মোটা দাগে লেখা হয়েছে, বিশেষত ভাষার মারপ্যাঁচ দিয়ে এতটাই ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়েছে যে সেটা বুঝতে পারা আসলেই কৃতিত্বের ব্যাপার। এছাড়া বলবিদ্যার মত বিষয়ের বইতেও যথেষ্ট পরিমান সচিত্র আলোচনা নেই। শুধু রয়েছে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা কিছু চর্বিত চর্বন সমস্যা। ফলশ্রুতিতে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে শিখে আসা বলবিদ্যা ভুলে যেতে অধিকাংশ ছাত্ররই ৬ মাসের বেশি লাগে না।
এতো গেল গণিত। বিজ্ঞানের অবস্থাও তথৈবচ। নতুন পাঠ্যক্রম আসার আগে মাধ্যমিক কিংবা নিম্ন মাধ্যমিক শ্রেনীর বইগুলি ভর্তি ছিল “এসো নিজে করি নামক এক তামাশা” । পরবর্তীতে বইগুলি পরিবর্তন হলেও সেগুলো খুব যে সুফল বয়ে এনেছে এমন নয়। বিজ্ঞান শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করে তোলার মূল উপায় হচ্ছে, তাত্ত্বিক দিকের পাশাপাশি সমান গুরুত্বে তার প্রায়োগিক দিক আলোচনা করা। কিন্তু আমাদের দেশের কোন স্তরের বইতেই বিজ্ঞানের প্রয়োগ দেখানো হয় না, হলেও তা যৎসামান্য।
উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে পদার্থবিজ্ঞানে কিছু অধ্যায় ছিলো যা ছাত্ররা মোটামুটি কেউই ঠিক মত বুঝতে পারতো না। তার মধ্যে আলোর সমাবর্তন, অপবর্তন, পৃষ্টটাণ ইত্যাদির কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। বইগুলির মানও এমন কিছু আহামরি নয়। বহুল অনুসরিত একটি পদার্থবিজ্ঞান বই মূলত ইংরেজীতে লিখিত একটি বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞান বইএর হুবহু বঙ্গানুবাদ।কিন্তু ইংরেজী বইটি সম্মান শ্রেনীর জন্য লিখিত, কিন্তু আমাদের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেনীতে এর চেয়ে বেশি সচিত্র ব্যাখ্যা দরকার যার কিছুই সেই বইতে নেই। এমন উদাহরণ আছে অসংখ্য। রসায়ণ নিয়ে ছাত্রদের ভীতি বেশ অকৃত্রিম। এমনিতেই বিষয়টা যারপরনাই নীরস এবং কিছুটা কঠিণও। সেই সাথে যখন আমাদের ‘সুললিত (!! ) ’ ভাষার ব্যাখ্যা যোগ হয়, তখন সম্পূর্ণ বিষয়টাই ছাত্রের মাথার উপর দিয়ে যায়। প্রাইমারী কিংবা নিম্ন মাধ্যমিকেও অবস্থা তথৈবচ। বইগুলিকে আপ্রাণ চেষ্টা করে অনাকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে।
তবে শুধু মাত্র বই এরই দোষ না, বিজ্ঞানের প্রতি বিমুখতার পেছনে আসলে অনেকগুলি কারণ রয়েছে। আশা করছি, রয়ে সয়ে সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারবো।
আজ আপাতত এটুকুই।
মন্তব্য
তাড়াহুড়ার মধ্যে লেখাটা লেখতে হল ( কারন না হলে আর লেখা হয়ে উঠছিলো না )। এ কারণে, লেখাটা একটু খাপছাড়া ঠেকতে পারে এবং বানান ভুল থাকাটাও স্বাভাবিক।এর জন্য দুঃখিত।
আশা করছি পরবর্তী কিস্তিগুলি তুলনামূলকভাবে আরো নির্ভুল এবং সুচিন্তিত হবে।
----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
উচ্চ মাধ্যমিকের রসায়নের কথা মনে পড়লেই কান্না পায়! আমি ইউনিভার্সিটির চার বছর আবারও নতুন করে পড়তে রাজি আছি, তবু ইন্টারমিডিয়েট আবার দেড় বছর পড়তে পারব না! এই আজাব যেন জীবনে একবারই আসে প্রতিটি মানুষের জীবনে!
উচ্চমাধ্যমিক মূলত একটা হিজিবিজি শ্রেণী। রাজ্যের পড়া পড়তে হয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম সময়ে। শুধু মাত্র পাঠ্য বিষয়ের ভলিউম দিয়েই এই জটিলতা বোঝানো যাবে না সম্পূর্নভাবে। উচ্চমাধ্যমিক শ্রেনীতে পঠিত অধিকাংশ বিষয় ( গণিত এবং বিজ্ঞানের) বেশ নতুন ( পূর্বের ক্লাসের তুলনায় ) এবং কিছুটা কঠিণও বটে। ক্যালকুলাস, বিন্যাস সমাবেশ, দ্বিপদী কিংবা জটিল সংখ্যার মত গুরুত্বপূর্ন জিনিসগুলি খুব কম সময়ের মধ্যেই আমাদের শিখতে হয়। একই কথা খাটে পদার্থবিজ্ঞান কিংবা রসায়ণের ক্ষেত্রেও। রসায়ণে জারন বিজারন, জৈব যৌগ কিংবা শ্রেনী রসায়নের মত ব্যাপারগুলি আমাদের খুব কম সময়েই আত্নস্থ তথা মুখস্ত করতে হয়।
আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, আমরা কি কিছুটা চাপ মাধ্যমিক শ্রেনীতে সরিয়ে আনতে পারি কিনা ? অবশ্য কিছুটা Trade off ইস্যু এখানেও আছে। পাঠ্যক্রম হয়ত কিছুটা কঠিণ করাই যায় কিন্তু তা পড়ানোর শিক্ষক কি দেশে আছেন ? বর্তমান পাঠ্যক্রম পড়াতেই দেশের অধিকাংশ শিক্ষক অপারগ সেখানে আরো আধুনিক পাঠ্যক্রম আদৌ বৃহদাকারে আমাদের কোন উপকারে আসবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আমেরিকায় ছোটদের বইতে দেখি ১০০ পাতার বই হলে ৫০ পাতা জুড়ে আছে ছবি আর বোঝানো। আমাদের বইতে ২ পাতা বুঝিয়ে বাকি পাতায় থাকত পাতাপিছু দশটা করে অঙ্ক। কোনটা ভাল জানি না ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আহ্ , যদি সেই দুই পাতাই ঐ ক্লাসের শিক্ষার্থীরা নিজেরা পড়ে বুঝতে পারতো !
------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
বাঙালিরা কোন সভ্যতা হয়ে উঠতে পারেনি মনে হয় কেবল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকার কারণে। কেন আমরা বিজ্ঞান শিখতে পারিনি?
এই সিরিজটা থেকে তার একটা কারণ বেরিয়ে আসতে পারে। চালিয়ে যান।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
চেষ্টা করবো। তবে শুধু আমার চেষ্টাতেই হবে না, সেই সাথে দরকার আপনাদের সুচিন্তিত মতামত তথা অংশগ্রহণ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
-------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
দারুণ লিখেছেন। একমত।
প্রাইমারী স্কুলেই অনেক সমস্যা রয়ে যাচ্ছে। বইয়ের মানের পাশাপাশি শিক্ষকদের মান বড় প্রশ্ন। নিয়োগে যোগ্যতা চাওয়া হয় - এইচএসসি পাশ। শিশুর মনস্তত্ব বোঝা এবং সে অনুযায়ী বই থেকে জ্ঞান দেয়ার দক্ষতা তাঁদের অনেকেরই নেই।
একেবারে খাঁটি কথা বললেন রে ভাই...
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
জট্টিল
জোস হইয়াছে কমরেড ! ছোট কেন, আর লেখ ।
- খেকশিয়াল
ধন্যবাদ ধূসর গোধুলি, খেকশিয়াল, আনোয়ার সাদাত শিমুল এবং পরিবর্তনশীল !
--------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আমার মনে হয় এই সবকিছুর পেছনে একটা অর্থনৈতিক কারন জড়িত। শিক্ষকতা একটা নোবল প্রফেশনের দোহাই দিয়া এই পেশাজীবিদেরকে অর্থহীন রাখা হইছে। একটা শিক্ষিত লোক এখন শিক্ষক হইতে চায় না। যার কোনও একটা ছোট চাকরিও জোটে সেই আর শিক্ষক হইতে চায় না। আবার উল্টাচিত্রও আছে... কেউ কেউ যারা নোবলতার গণ্ডি পার হয়া কোচিং ব্যবসায় লালায়িত হইছেন তাদের কথা বলতেছি। সমস্যা হইলো এই দুই দলের কারো পক্ষেই ভালো শিক্ষাদান সম্ভব না।
সব মিলায়ে আমাদের টোটাল শিক্ষা ব্যবস্থাটাই হয়া গেছে একটা ভয়ঙ্কর ফালতু জায়গা। সেখানে শিক্ষকেরা আক্ষেপ করেন তাদের মেধার পূর্ণ মূ্ল্যায়ন এই দেশ জাতি করতে পারলো না বলে, তারা গরীব থাকলো বলে। আর তাদের সম্মুখবর্তী কচিকণ্ঠ ছাত্ররা আক্ষেপ ভরে তাকায়ে থাকে পাশের জানালা দিয়া তাদেরই সমবয়সীরা গাড়িতে চইড়া স্কলাসটিকায় যায় বইলা। এত আক্ষেপ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ইসলাম , আপনার কথাটা মর্মান্তিক ভাবে সত্যি। লেখাটির পরবর্তী পর্বে যখন শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা করবো, আশা করি এই বিষয়ের প্রকৃত চিত্রটিও সামনে চলে আসবে।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
এ প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলে রাখি, আমার ধারণা ইংরেজি শেখার ব্যাপারে যে ভয় কিংবা অনিহা আছে তাও কিন্তু বাজে ফর-টুডে বই গুলোর জন্যই। আমার ব্যক্তিগতভাবে এই বইগুলো ছুঁয়ে দেখতেও মন চাইত না। পরবর্তিতে আমাদের স্কুলে ফান্ডামেন্টাল ইংলিশ বলে একটা বই পড়ানো হত যা কিনা সিলেবাসের বাইরে। এই বইটি পড়ে আমরা এত মজা পেতাম যে পরবর্তীতে বইটি অনেকদিন আমার ব্যক্তিগত বুক শেলফে তুলে রেখেছিলাম।
সে সময় এক টিচার ছিল যিনি কিনা আমাদের উদ্ভট এবং আপাতদৃষ্টিতে আনইউসফুল প্যারাগ্রাফ লেখাতেন। যেমন- আইস ক্রিম কিংবা ম্যাসড পোট্যাটো। এগুলো লিখতে গিয়ে কিন্তু ভোকাবোলারি যেমন বাড়ে তেমনি শিখতেও মজা পাওয়া যায়। এতসব বলার কারণ হচ্ছে আমি বলতে চাচ্ছি চাইলে স্কুলগুলোও বাড়তি বই পড়িয়ে বিষয়বস্তুতে রসকস আনতেই পারেন।
রাবাব, তোমার যুক্তিটা ভালো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একজন শিক্ষক কখন এই বাড়তি পাঠ্য পড়ানোর কষ্টটা করবেন ? স্কুল শুধু পাঠ্য দিলেই যে হবে তা নয়, শিক্ষককেও তা যত্ন নিয়ে পড়াতে হবে। কিন্তু শিক্ষকদের যে নিম্ন বেতনের স্কেল তাতে যে সকল শিক্ষক শিক্ষকতা করে জীবন ধারণ করেন, তাদের কি motivated হওয়ার আদৌ কোন কারণ আছে ?
পরবর্তী পর্বে শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা করার সময় চেষ্টা করবো এই বিষয়ে কিছুটা দিক তুলে ধরতে ।
--------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
জানি না আর কারো সাথে মিলবে কি না... তবে ছোটবেলায় আমাদের ভাই বোনদের মধ্যে দারুণ একটা মজা হতো... বছর পয়লায় নতুন বই... সেই বইগুলোতে ক্যালেন্ডারের পাতা কেটে মলাট লাগানো... সেগুলো সাজিয়ে রাখা... ঈদের নতুন জামা পাওয়ার মতো ব্যাপার ছিলো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আর কারো সাথে মিললো কিনা জানি না, আমার সাথে পুরো মিলে গেল !
-------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
হাহা মলাট দেবার জন্যে আমি ভাল ভাল ক্যালেন্ডারের পাতা সিলেক্ট করে রাখতাম ।
- খেকশিয়াল
মিলছে মিলছে! সব থেকে সুন্দর ক্যালেন্ডারটা দখল করার জন্য মারামারি লাগত!
আমাদের যে বইগুলিই খারাপ, তা নয়, পরীক্ষা নেয়ার পদ্ধতি ভয়াবহ খারাপ। একগাদা হাবিজাবি জিনিস লিখতে দেয়া হয় বাচ্চাগুলিকে। ওগুলি ঠাঠা মুখস্থ করতে হয় তাদের, নিজের মতো করে গুছিয়ে লেখার সুযোগই দেয়া হয় না। বইয়ের মতো না হলে নম্বর কাটা। সৃজনশীলতার সুযোগই পায় না বাচ্চারা। শিক্ষকরাও প্রশ্ন তৈরিতে কোন বাড়তি সৃজনশীলতা প্রদর্শনের খাটনিতে যান না, কেন যাবেন? তারচেয়ে লেখো এনোফিলিস আর কিউলেক্স মশার মধ্যে পার্থক্য কী।
আমি একটা প্রস্তাব করছি, জানি না সাড়া পাবো কি না। রাগিব ভাই আর শিক্ষানবিস এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। আসুন, একটা উইকি বই লিখি। বাচ্চাদের জন্য বিজ্ঞান শিক্ষা। সহজ বাংলায়। মিষ্টি করে বোঝানো থাকবে সব কিছু। যা শুধু ভাষায় বোঝানো মুশকিল, তা ছবি এঁকে সম্পূরণ করা হবে। কেমন হয়?
হাঁটুপানির জলদস্যু
কথাটা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও খাটে, সত্যি বলতে কি আরো বেশিই খাটে !
বিশ্বকাপের পর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাতে অর্থহীনভাবে তুলকালাম হয়ে গেল, তার পর দিন আমরা কিছু বন্ধু দাঁড়িয়ে ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বাইরে, পলাশী বাজারে। সবেই খবর এসেছে যে হল ভ্যাকান্ট করতে হবে। এমন সময় দেখতে পেলাম আমাদের বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক শিক্ষক আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছেন। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের যা অবস্থা তাতে যে কোন শিক্ষকেরই কোন ছাত্রকে পেলে মার দেওয়ার কথা। কিন্তু উনি কোন ক্ষোভ প্রকাশ না করে, সুন্দর ভাবে জানতে চাইলেন আমাদের মতামত কি এ ব্যাপারে। আমরা যখন নিজেদের দোষ স্বীকারের পাশপাশি সিস্টেমের গলদ নিয়ে কথা বলছিলাম, তখন উনি স্বীকার করেছিলেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়, তা মোটেই উপযুক্ত নয়। উনি বলেছিলেন যে প্রশ্ন হত হবে বুদ্ধিদীপ্ত, যাতে মুখস্ত এর কিছু নেই, এবং দরকারে প্রশ্নের সাথে প্রয়োজনীয় সূত্রগুলিও দেওয়া থাকবে, যাতে অর্থহীন ভাবে কিছুই মুখস্ত না করা লাগে। কিন্তু একটু বিরতি দিয়ে নিজেই বললেন, "একজন শিক্ষক যে করবেন, কিন্তু সেই মোটিভেশনটা কোথায় ? এত স্বল্প বেতনে একজন লেকচারার এর পক্ষে কি এত পরিশ্রম স্বতঃস্ফূর্তভাবে করা সম্ভব ? "
আমি জানি না, কে কিভাবে উনার বক্তব্যকে নিবেন, তবে উনার এই সৎ এবং সাহসী কথাটা আমার খুবই পছন্দ হয়েছিল।
-------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ব্যাপারটা কাকতালীয়। ঠিক উইকি বই হিসেবে না, এমনিতেই এমন কিছু একটা করার পরিকল্পনা আমার মাথাতে আছে বেশ কিছু দিন ধরে ! সময়ের অভাবে করা হচ্ছে না।
এমন প্রকল্প কেউ শুরু করলে তাকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমার মত সামান্য লোক যদি কোন ভাবে সাহায্য করতে পারি তো জানাবেন, সাধ্যমত চেষ্টা করবো।
----------------------------------------------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আলোচনাটা একটু অন্যদিকে নিয়ে যাই।
প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিটি শ্রেণীর জন্য একটি নির্দিষ্ট টার্গেট থাকা দরকার যে টার্গেট অনুসারে ঠিক করা হয়- ওই শ্রেণীর বিষয়বস্তু থাকবে। শ্রেণীভিত্তিক এই টার্গেটগুলোকে বলা হয় 'শ্রেণীভিত্তিক অর্জনউপযোগী প্রান্তিক যোগ্যতা'। আর একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর অর্থাৎ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ইত্যাদি যে যোগ্যতাগুলো অর্জন করতে হয়, সেগুলোকে বলা হয় 'প্রান্তিক যোগ্যতা'।
আমাদের দেশে প্রাথমিক শ্রেণীর জন্য 'শ্রেণীভিত্তিক অর্জনউপযোগী প্রান্তিক যোগ্যতা' এবং 'প্রান্তিক যোগ্যতা' নির্দিষ্ট করা রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি 'শ্রেণীভিত্তিক অর্জনউপযোগী প্রান্তিক যোগ্যতা' এবং 'প্রান্তিক যোগ্যতা'র বিপরীতে কিছু নির্দিষ্ট লার্নিং আউটকাম বা 'শিখনফল' নির্দিষ্ট করা আছে এবং প্রাথমিক শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকগুলো সেভাবেই রচিত।
কিন্তু মাধ্যমিক শ্রেণীর জন্য এখনো কোনো ধরনের প্রান্তিক যোগ্যতা নির্দিষ্ট করা হয়নি। বহুকাল আগে যে শিখনফলগুলো নির্দিষ্ট করা হযেছিলো, শুধু সেগুলো দিয়েই কাজ চলছে। অর্থাৎ আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষা চলছে আদপে কোনো রকমের টার্গেট ছাড়াই। যেখানে মাধ্যমিক স্তর পাশ করার পর শিক্ষার্থীরা কী শিখবে, সেটিই নির্দিষ্ট করা নেই, সেখানে কতোটুকুই বা আশা করতে পারি?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
দরকার ছিলো এ সিরিজের। সবজান্তা ভাইকে ধন্যবাদ। মন্তব্য থেকেও পরবর্তি পর্ব গুলোর আইডিয়া আসবে নিশ্চই। লেখক ও মন্তব্যে পরিপক্ক জাঝা
আমি একজন উচ্চমাধ্যমিকের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক। আমাদের দেশের শিক্ষার এই অবস্থার জন্য আপনার এই বিশ্লেষণ একেবারে ঠিক। তবে স্কুলের শিক্ষকদের এই বিষয়ে দোষী করা তাও মেনে নিলাম কারন এই ব্যাপারটা আমার চোখ এড়িয়ে কখনও যায়নি। তবে সমস্ত শিক্ষক এই দোষে দোষী নয়। ছাত্রদের পড়ানো আমাকে সর্বদাই আনন্দিত করে এবং আমি এই পেশার জন্য গর্বিতও বটে। আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আনা অবশ্যই দরকার যাতে অনেক শিক্ষক যারা শুধু মোটা টাকা রোজকার করার জন্যই শিক্ষকতা করতে আগ্রহি তাদের এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দূরে রাখা যাবে। আপনাদের এই আলোচনা চালিয়ে যান এটা সমাজ ও শিক্ষা ব্যাবস্থাকে উদ্বুদ্ধ করতে বাধ্য। তবে সব শিক্ষককে দোষীসাব্যস্ত করাটা ঠিক নয়।
নতুন মন্তব্য করুন