১
-----------------------------------------------------------------------
আজকাল আর ভালো লাগেনা। সব কিছুর ভারেই খুব ক্লান্ত লাগে। এক সময় কত জোর দিয়ে বলতে পারতাম, আমি আমার দেশ ছেড়ে কোথাও যাবো না।এখন কোথায় যেন একটু সন্দেহ লাগে, আসলেই কি পারবো আমি দেশে থাকতে ? কি আছে এই দেশে ? লাগামছাড়া দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, হত্যা আর হিংসার রাজনীতি, বন্যা, সিডর আর অসহ্য গরম। আর কিছু না হোক, মাঝে মাঝে চৈত্রের এই অসহ্য গরমে মনে হয়, ভালোই হত যদি কোন শীতের দেশে চলে যেতে পারতাম।
২
----------------------------------------------------------
এই ঘটণাটা নিয়ে আলাদা একটা লেখা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। আজ যখন লেখতে বসেছি, এক সাথেই দিয়ে দিতে মনস্থ করলাম।
সেদিন সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছি। রিকশা পরীবাগের ভেতর দিয়ে বের হয়ে, হাতিরপুল বাজারের দিকে যাচ্ছে। বাজারের খুব কাছেই কিছু লোক ঝুড়িতে ফুটপাতের উপর সামান্য পরিমানে কিছু সবজি নিয়ে বসেন বিক্রির আশায়। যতদূর বুঝি, এরা যথেষ্টই গরীব। এদের সাধ্য নেই প্রচুর পরিমাণে সবজি নিয়ে বিক্রি করতে বসার। তার উপর তারা বসে বাজারের অন্য একটা অংশে, যেটা আসলে বাজারের অংশ না। যাই হোক, রিকশা যখন ওই জায়গার সামনে সিগন্যালে দাঁড়ানো, হঠাৎ দেখলাম কোথা থেকে ২ জন পুলিশ এসে ওই লোকগুলিকে তুলে দিলো এবং সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, তাদের সবজির ঝুড়িগুলিতে লাথি মারতে আরম্ভ করল। দু লাথিতেই ঝুড়ির সামান্য সবজি সব গড়িয়ে পাশের নর্দমায় গিয়ে পড়ল।
পুরো ব্যাপারটা দেখেই আমার মাথা কেমন যেন একটা চক্কর দিয়ে উঠলো। খুব ছোটবেলা থেকে গৃহস্থের সংস্কারে মার থেকে শিখে এসেছি খাওয়ার জিনিশে ( আসলে সংসারের কোন কিছুতেই) পা দিতে হয় না। খুব সম্ভবত সেই “ঠুনকো সংস্কারের” কারণেই এই অস্বস্তি। যে দেশের অধিকাংশ লোকই দুবেলা পেট ভরে খেতে পারে না, আর সে দেশের পুলিশ লাথি দিয়ে সবজি ফেলে নর্দমাতে ! যে লোকগুলি তাদের জীবনধারণের জন্য রাস্তার ধারে সবজি নিয়ে বসে, তাদের কথাতো আর বলার অবকাশই নেই। প্রগতি আর সমৃদ্ধির এই সরকার যে এমন কত অসহায়ের একমাত্র সম্বল দোকান কিংবা বাজারকে উচ্ছেদ করেছেন, তা আশা করি আর নতুন করে বলার কিছুই নেই।
বেশ চলছে, চলুক। কেউ দু বেলা খেতে পারে না আর কেউ লাথি মারে সব্জিতে। আমার কি ?
৩
--------------------------------------------------------
সবকিছু মিলিয়েই খুব বিরক্ত আমি দেশের উপর, এই জাতির উপর। এই বিরক্তি নিয়েই বসে ছিলাম এই কয়টা দিন। এমনকি সচলায়তনে এই কয়দিনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কয়টি লেখা এসেছে তার একটিও আমি পড়িনি এক অজানা বিরক্তিতে। আজ একটু আগে ঢুকেই দেখলাম হিমুভাই এর জাতীয় সঙ্গীত পোস্টটা। কিছুটা অন্যমনস্ক ছিলাম, তাই কখন প্লে তে ক্লিক করেছি নিজেও জানিনা, হঠাৎ চমক ভাংগলো, অসাধারণ সুন্দর এক গলার সুরে, “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”। তন্ময় হয়ে পুরো গানটা শুনলাম। তারপর আবার প্লে দিলাম।গানটা শুনতে শুনতে কখন যে চোখে জল এসেছে নিজেও খেয়াল করিনি। হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম, এই অভিমান কতটা অযৌক্তিক। অন্যের জন্য তো আর নিজের মায়ের উপর রাগ করে থাকা যায় না। নাহ, সব কষ্ট আর রাগ চলে গেল।
যাক, যত যাই হোক, তবুও আমি বাঙ্গালী।
মন্তব্য
হ্যা..
.. আমরা সবাই বাঙ্গালী !
aa_bd@yahoo.com
ভালবাসি বলেই না অভিমান হয়
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
বাঙ্গালী বলেই অনুভূতি কথা বলে।
-নিরিবিলি
খুব ভাল বলেছেন।
দেশের উপর যখন নানা কারণে বিরক্ত হয়ে পড়ি তখন প্রাণপনে আমি ভাবতে থাকি আমাদের বই মেলা, পহেলা বৈশাখ, বসন্ত উ]সব, গৌরব ময় অতীতের কথা। ভাবি এমন আর কোন দেশে আছে? এত আবেগ প্রবন জাতি ই বা কোথায় আছে?মরি , বাচিঁ এই দেশেই থাকব।
ধন্যবাদ অনিন্দিতা ।
আপনার বুদ্ধিটা আসলেই ভালো। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমাদের দেশের মানুষের কি কোন শান্তি আছে ? সবকিছুর দাম আকাশে উঠে বসে আছে, যখন তখন বোমা হামলা হয়, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণ সবই তো মামুলি ব্যাপার। তারপরও দেখবেন প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুনে কত হাজার হাজার লোক, এই গরম এর মধ্যেও, বোমা হামলার ভয় নিয়েও রাস্তায় নামে, আনন্দ করে। কয়টা জাতির সৌভাগ্য হয় এমন আনন্দের !
আর আমার সবচেয়ে বড় গর্ব একুশে ফেব্রুয়ারি। স্বাধীনতার জন্য লড়াই অনেক জাতিই করেছে। কিন্তু আমরাই ইতিহাসে অনন্য যারা ভাষার জন্য লড়েছি, প্রাণ দিয়েছি। এই বিরল কৃতিত্বের জন্যও এক ধরণের ভালোবাসা আর গর্বে ভরে ওঠে বুক।
নাহ, আসলেই আমরা বাঙ্গালী।
----------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
এই পোলা
এই রকম বুড়ারোগ কবে থেকে ধরলো?
এরকম হাহুতাশমার্কা আর কোনো পোস্ট দেখলে রাস্তায় পেলে সোজা হাড্ডি গুড়া করে দেবো
আসোলে বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে স্টুডেন্ট পলিটিক্সকে মুরগি মিলন- কুত্তা সেলিমদের হাতে তুলে দিয়ে পুরা ইয়াং জেনারেশনকে কেঁচো বানিয়ে ফেলা হয়েছে
এরা এখন শুধু নিজের ভেতরে ডুব দিয়ে কুঁই কুঁই করে
০২
বাংলাদেশে থাকা যাবে না কেন?
১৫ কোটি মানুষ থাকে না?
ভাই বিশ্বাস করেন, দেশে থাকার ইচ্ছা আমার ষোল আনা। আমি মনে প্রাণে চাই, যত যাই হোক, যেন দেশেই থাকি। আর আমিও নিজেকে একই প্রবোধই দেই, ১৫ কোটি মানুষ পারলে আমিও পারবো।
ছাত্র রাজনীতির কথা আর কহতব্য না। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ, ছাত্রদল কিংবা জন্মসূত্রে অতিপ্রগতির ধ্বজাধারী ছাত্রফ্রন্ট , সবার নেতারাই এত মহান যে হতাশায়, রাজনীতির আশা আমি ত্যাগ করেছি।
------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
@ লীলেন আমি একদম একমত।
বিদেশে বা দেশে - শারীরিক ভাবে থাকা টা নয়, ভেতরের মনটা কোথায় আছে - সেটা ভেবে দেখুন - আসলেই "সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি" তে আছেন না? বাচ্চাদের স্কুলের সামনে দিয়ে হাঁটুন, মন ভালো হয়ে যাবে ছোট্ট কচিকাঁচাদের দেখে - ওরাও থাকে এখানে। মন ভালো করুন।
s-s আপনি আসলেই অদ্ভুত সুন্দর একটা কথা বলেছেন। আমি দেখেছি ধানমন্ডির ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলই হোক আর শ্রমজীবি শিশুদের ইউসেপ স্কুলই হোক না কেন, একসাথে এক ঝাক শিশুদের দেখলে মন আসলেই ভালো হয়ে যায়।
এত সুন্দর একটা মন্তব্যের জন্য আপনার অসংখ্য ধন্যবাদ।
-------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
---তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা।
নতুন মন্তব্য করুন