"সাপ্তাহিক ২০০০" এর সাপ্তাহিক প্রতারণা এবং একটি সহজ সিদ্ধান্ত

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: বুধ, ২৬/০৯/২০০৭ - ৪:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘটনার শুরু ঠিক তিন সপ্তাহ আগে। সকাল বেলা হকার সাপ্তাহিক ২০০০ দিয়ে গেল। আমাদের বাসায় আবার পত্রিকা নেওয়ার সিস্টেম একটু আলাদা। বাসার নিচে কলাপসিবেল গেট থাকার কারনে, সকাল বেলা পত্রিকা তোলার জন্য বারান্দা দিয়ে নিচে দড়ি ফেলি, হকার তাতে পত্রিকা বেঁধে দেয়। তো সেই বুধবার আমি দড়ি ফেললাম, তুলতে যেয়ে দেখি একটু বেশিই ভারী লাগছে। টান টান উত্তেজনার ভিতর দিয়ে দড়ি টেনে তুলি দেখি সাপ্তাহিক ২০০০ টা বেশ মোটা। কিন্তু ভিতর এর পাতা উল্টাতেই উত্তেজনা দপ্ করে নিভে গেল। ও মা, এ কি ! সারা পত্রিকা ভর্তি “বাংলালিংক- সাপ্তাহিক ২০০০ ফ্যাশন প্রতিযোগিতা” নামক প্রতিযোগিতায় কোন দোকান ১ম/২য়/৩য় হয়েছে তাদের নাম এবং সেইসব পোশাক পরিহিত মডেলদের লাস্যময়ী এবং হাস্যময়ী ছবিতে পরিপূর্ণ। একেতে রঙ্গিন ছবি, তায় ছবির পাতাগুলো বেশ মোটা কাগজের। এইসব দেখার পর যেকোন স্বাভাবিক সুস্থ লোক যেই কাজ করবেন, আমিও তাই করলাম। দ্রুততার সাথে দামটি খুঁজে বের করলাম। দাম দেখে তো আমি অজ্ঞান হওয়ার সামিল ! ৭০ টাকা !! প্রসংগত বলাই বাহুল্য, সেই সংখ্যায় সাপ্তাহিক ২০০০ এর সাধারণ সংখ্যাগুলোতে যে ধরণের লেখা, যেই পরিমাণে থাকে তাও ছিল না।

আমি প্রায়ই চেষ্টা করি স্বয়ংসম্পূর্ন হতে মানে টুকি টাকি খরচ যেমন ইন্টারনেট এর বিল, ম্যাগাজিন বিল এগুলো নিজের টিউশনির বেতন থেকেই দিতে। কাজেই, ৭০ টাকা দিয়ে এমন একটা “বাংলাদেশী সানন্দা” পাওয়ার পর নিজের একটু অস্বস্তি লাগছিলো। সাপ্তাহিক ২০০০ এ সাধারণ অবস্থায়ও ফ্যাশন পাতা দেয়,কিন্তু একে তা বিনামূল্যে তাও আবার মাসে একদিন। কোন দিন পড়েছি বলেও মনে হয়না।কিন্তু এবার পুরো ৭০ টাকা !! যাক, তবুও মেনে নিলাম, শত কষ্টেও দেঁতো হাসি

এর পরের সপ্তাহটা ছিলো অসাধারণ ! ১২০ টাকা ছিল দাম, কিন্তু পুরোটাই সাহিত্য ঠাসা। দাউদ হায়দারের সেই উপন্যাস থেকে শুরু করে আরো অনেক বিখ্যাত লেখকের চমৎকার সব গল্প, উপন্যাস, আত্নজীবনী, স্মৃতিকথা এমনকি প্রবন্ধ। গত সপ্তাহের ৭০ এর শোক পুরাই শেষ তখন।

আসল ক্লাইমেক্স এ যাওয়ার আগে, সাপ্তাহিক ২০০০ রাখার মূল পটভূমিটাও একটু বলে নেই। সাপ্তাহিক বিচিত্রা এবং শাহাদৎ চৌধুরীর নাম অনেক আগের থেকেই জানতাম। এও জানতাম তিনি এখন সাপ্তাহিক ২০০০ বের করছেন, কিন্তু কখন পড়া হয়নি। বুয়েটে ঢোকার পর প্রথম সেমিস্টার এর ক্লাস ও ল্যাব এর ফাঁকের অলস সময় কাটানোর জন্য, যখন শেরে বাংলা হলের কমন রুম এ চলে যেতাম, তখনি একদিন অনেক পত্রিকার ভীড়ে সাপ্তাহিক ২০০০ ও চোখে পড়ল। পত্রিকাটি ভালই লাগত, বিশেষত তেল গ্যাস, ভি ও আইপি এবং জামাত বিরোধী লেখাগুলো অসাধারণ লাগতো। এই ভাবেই একদিন নিয়মিত বাসায়ও রাখতে শুরু করলাম,কিন্তু বিপত্তি বাধঁলো এর পর ই।

“মানুষ চায় আকাশ জোড়া আর বিধাতা দেয় বেগুন পোড়া”। তা আমার জন্য বেগুন পোড়া বরাদ্দের দিন ছিল আজ ২৮শে সেপ্টেম্বর। ক্লাস শেষে বাসায় এসে দেখি, এই সপ্তাহের সাপ্তাহিক ২০০০। হাতে নিতেই মনে হল দারুন এক থাপ্পর মারলো কেউ! “বাংলালিংক-সাপ্তাহিক ২০০০ ঈদ বাজার পরিক্রমা” এবারের বিষয়! ভিতরে সেই “থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়”। সেই একই রকম ভাবে লাস্যময়ী মডেলরা বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের জামা গায়ে ঝুলিয়ে রূপ ছড়াচ্ছেন। এইবার অবশ্য কতৃপক্ষ অতোটা নির্দয় না। এই সংখ্যার দাম সদয় হয়ে রেখেছেন ৪০ টাকা , মাত্র !

ব্যাপারটা আমার কাছে একটা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই না। সেই একই সাপ্তাহিক ২০০০ আর বাংলালিংক। ভিতরে সেই ফ্যাশন হাউসের বস্ত্র কীর্তন। আর অন্য দিকে পাঠকের পকেট কাটা। আমার প্রশ্ন একটাই, সাপ্তাহিক ২০০০ কি সানন্দা ? সাপ্তাহিক ২০০০ এর ফ্যাশন পাতা আছে তা আমরা জানি, ফ্যাশন জগতে তাদের অনেক অবদান আছেও তাও তাদের সূত্রেই জানতে পেরেছি। কিন্তু আমার মত, যারা সাপ্তাহিক ২০০০ কে একটা লেখালেখি ভিত্তিক পত্রিকা হিসেবে জানতাম, তাদের জন্য এটা একটা বিরাট ধাক্কা। এক বার হয়ত মানা যায়, কিন্তু ২বার যখন এই জিনিস হয়, তখন তাকে আর ধাপ্পাবাজি বলতে দ্বিধা থাকে না।

আমি সহজেই একটা সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি একটু আগে। আর সাপ্তাহিক ২০০০ রাখবো না। আমার অনেক কষ্টের টাকা দেঁতো হাসি , এইভাবে নষ্ট করার মানে নেই ! হয়ত সাপ্তাহিক ২০০০ এর কিছুই আসবে যাবে না, তবে আমি হয়ত অনাগত ভবিষ্যতের বেশ কিছু প্রতারণার হাত থেকে মুক্তি পাবো।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দাউদ হায়দারের সেই উক্তির সাথে কোন সর্ম্পক আছে?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ondhokar এর ছবি

good observation!

সবজান্তা এর ছবি

@ মাহবুব ভাই, না দাউদ হায়দার এর সাথে কোন সম্পর্ক নেই।

@অন্ধকার, ধন্যবাদ।

ওহ, ভালো কথা সচলায়তনে এটাই আমার প্রথম লেখা দেঁতো হাসি
---------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ওহ সুস্বাগতম সুস্বাগতম।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

বিপ্লব রহমান এর ছবি

স্বাগতম।

...সাপ্তাহিক বিচিত্রার স্মার্টনেস সাপ্তাহিক ২০০০ রপ্ত করতে পারেনি।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সবজান্তা এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে, স্বাগতম জানানোর জন্য।

আসলে আমি খুবই হতাশ। ৭০ বা ৪০ টাকা আসলে ব্যাপার না। এই টাকায় যদি আমি পড়ার মত কিছু পেতাম, আমি খুশিই হতাম। কিন্তু এইভাবে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছাতাই গছানোর ফলে পত্রিকা কতৃপক্ষের নৈতিকতাবোধ নিয়েই আমার সন্দেহ জেগেছে।

দীর্ঘদিন যাবৎ সচল হওয়া সত্বেও, কোন লেখা জমা দেইনি ভেবেছিলাম, ভাল কিছু লেখে জমা দিব, কিন্তু আজকে সাপ্তাহিক ২০০০ পড়ে, এমনই মেজাজ খারাপ হল যে, এই জঘন্য লেখা দিয়েই শুরু করতে হল।

এখন আফসোসই লাগছে মন খারাপ
----------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।