সদ্য নিষিদ্ধ হওয়া সাপ্তাহিক ২০০০ এর ঈদ সংখ্যায় ড.আহমদ শরীফের একটি লেখা ( আসলে লেখার অংশ বিশেষ) নিয়ে আমার মনে কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
লেখাটির শিরোনাম হচ্ছে, "ভাব-বুদ্বুদ", যা মূলত তার শেষ জীবনে লিখিত ডায়েরির অংশ বিশেষ। এ সম্পর্কে লেখক নিজে তার ডায়েরিতে লিখেছেন,
"আমার মৃত্যুর ৫/৭/১০ বছর পরে সামাজিক-শাস্ত্রিক পরিবেশ উগ্রতামুক্ত থাকলে আমার লেখা ভাববুদ্বুদ গুলো লোক উপকারহেতু গ্রন্থাকারে ছেপে দিয়ো ......"
যাই হোক মূল প্রসঙ্গে আসি। ড.আহমদ শরীফ সম্পর্কে আমার জানা অত্যন্ত সীমিত। তবে খুব সম্ভবত হুমায়ূন আজাদের কিছু লেখা থেকে যা ধারণা হয়েছিল এবং সমকালীন কিছু পত্রিকা পড়ে যা বুঝেছিলাম, উনি একজন বিদ্বান, চিন্তাশীল এবং প্রথাবিরোধী মানুষ। তাই এই ডায়েরির পাতায় এমন একটি লেখা পেলাম, যা আমাকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিল। লেখার অই অংশটুকু আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি :
শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা এবং জাতির পিতার পরিচিতি নিয়ে ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ সনে ঢাকা আসেন।উল্লেখ্য তিনি ১৯৭১ সনের ২৫শে ডিসেম্বর অবধি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য আলোচনা চালিয়ে গেছেন।তিনি স্বাধীনতা চাননি।তরুণেরা স্বাধীনতা তারুণ্যবশে আবেগ বশবর্তী হয়ে স্বাধীনতার দাবি ও সংকল্প তাঁকে দিয়ে জোর করে তার মুখে উচ্চারন করিয়েছিল তাঁর আপত্তি ও পরিব্যাপ্ত অনীহা সত্ত্বেও।তাঁর বাড়িতে স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিল তার হাতেই। মানুষের বিশেষ করে বাঙ্গালীর স্বভাব হচ্ছে হুজুগে।তাই তারা কাক শিয়ালের মতো না বুঝে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে মেনে নিল। সেভাবেই তার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য নিবেদন করল ...............
আমি জানি না , আমার মত ইতিহাস অজ্ঞ আর কেউ আছেন কিনা, থাকলে হয়ত তার মনেও এই প্রশ্নটিই আসতো।
ইতিহাস বিজ্ঞ সচলদের কাছে, এই ধোয়াশা পরিষ্কার করার আবেদন থাকলো।
মন্তব্য
ব্যাপারটা ওভাবেই ঘটেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রদের নায়কতা নিয়ে ডেভিড ল্যাডেনের ফরগটেন হিরো'স নামে একটা দারুণ রচনা আছে। বাংলায় বদরুদ্দীন উমর, আহমদ ছফা অনেক লিখেছেন। সম্প্রতি সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত 'বেহাত বিপ্লব' বইটাও গুরূত্বপূর্ণ। দেখতে পারেন।
.......................
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা মুজিব এর অবদান সম্পর্কে যা জানি, তার শতকরা ৯০ ভাগই ভুল ? মুজিব ব্যাক্তিস্বার্থে যুদ্ধ করেছেন ? ৭ই মার্চের ভাষণ দিয়েছেন ব্যাক্তিস্বার্থে ? এমন কি অনেক গুনী লেখক ও মুজিব বন্দনা করেছেন, তার মানে দাড়াচ্ছে, হয় তারাও সত্য জানে না কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলকে সবার সামনে তুলে ধরছেন ?
ব্যাপারটা কি আসলেই তাই ? আমি আবার ও সকল সচলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই ব্যাপারে জানাটা অত্যন্ত জরুরী অন্তত আমার জন্য, যার কাছে স্বাধীনতা উত্তর না হোক, স্বাধীনতাপূর্ব এবং স্বাধীনতাকালীণ মুজিব একজন সুপার-হিরো।
----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আমিও জানতে চাইছি।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
একটু আগেই নিজের লেখায় ওরিয়ানা ফাল্লাচির কথা বললাম... আবারো বলতেছি... তার ইন্টারভিউ উইথ হিষ্ট্রি বইটা পড়তে পারেন... যেখানে অন্য অনেক বিশ্বনেতার সাথে আছে ৪ জন রাষ্ট্র নায়কের ইন্টারভিউ... কিসিঞ্জার, ইন্দিরা গান্ধী, জুলফিকার আলী ভূট্টো আর শেখ মুজিব। অনেক প্রেক্ষাপটই উইঠা আসছে। বিতর্ক জমবো। বইটা হাতের কাছে নাই এখন... নাইলে কিছু কিছু উদ্ধৃতি দিতে পারতাম।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ব্যাপারটা নিয়ে কনফিউজড হবার কিছু নেই
শেখ মুজিব আর ছাত্র আন্দোলন কোনোভাবেই আলাদা আলাদা কিছু ছিল না
দুটো ছিল একটা আরেকটার পরিপূরক
ছাত্র আন্দোলন তখন কাজ করছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড়ো প্রেশার গ্রুপ হিসেবে যারা সরাসরি রাষ্ট্রীয় আইনকে অমান্য করেই পাকিস্তান বিরোধীতা করছিল এবং জাতীয় আন্দোলনকে উদ্বুদ্ধ করছিল
আর মুজিব এগোচ্ছিলেন পুরো জাতির দায় কাঁধে নিয়ে
ছাত্ররা যে কথা যেভাবে বলছিল মুজিবের পক্ষে সেই কথাগুলো সেইভাবে বলা কোনোভাবেই সম্ভব কিংবা উচিত ছিল না উপযুক্ত সময় আসার আগ পর্যন্ত
(স্মরণ করুণ সাতই মার্চ এর ভাষণ এবং এর পরের স্বাধীনতার ঘোষণার সময়ের ধারাবাহিক উত্তরণ)
কারণ তখনও পর্যন্ত কতগুলো বিষয় বিবেচনা করে মুজিবকে এগোতে হচিছল
১. পুরো জাতি এর আগে ভোট দিয়েছে মুজিবকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য
২. যেহেতু নির্বাচিতরা পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা পাচ্ছিল না সেহেতু পুরো জাতিকে স্বাধনীতা আন্দোলনের দিকে ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর করার জন্য সময়ের দরকার ছিল
৩. মুজিব যদি ছাত্রদের মতো আগেভাগেই সরাসরি পাকিস্তানকে অস্বীকার করতেন কিংবা সরাসরি তাহলে তখনকার আইন অনুযায়ী তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে পাকিস্তানিরা পুরো জাতির উপর দমন পীড়ন শুরু করে দেবার সুযোগ ছিল (প্রস্তুতি নেবার আগেই)
৪. মুজিবকে পুরো জাতির মনোভাব এবং মানসিক প্রস্তুতি বুঝে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তা এবং অনিবার্যতা উপস্থাপন করার জন্যও দরকার ছিল সময়
৫. যতক্ষণ পর্যন্ত না বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মেই মুজিবকে প্রতিপক্ষের সাথে আলোচনায় বসতে হয়েছে। কারণ আলোচনায় না বসা মানে পুরো জাতিকে অরক্ষিত করে ফেলা। সুতরাং আগের দিন পর্যন্ত আলোচনায় বসা কৌশলগতভাবেই ছিল মুজিবের এবং পুরো জাতির নেতা হিসেবে তার সঠিক পদক্ষেপ
৬. জোর করে পতাকা উত্তোলন এবং স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ানোর বিষয়টিকে অনেকেই খুব সাদামাটা হিসেবে দেখেন। বিষয়টি ইচ্ছা করেই করা হয়েছে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। মনে রাখতে হবে এর আগেই আগেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা মুজিবকে এবং আন্দোলনকে প্রায় বেকায়দায় ফেলে দেবার মতো অবস্থা তৈরি করেছিল। ছাত্রদের 'জোর করা' বিষয়টিকে রাখা হয়েছিল কৌশলগত ফাঁক হিসেবে। যাতে কোনো কারণে তখন আন্দোলন বিলম্ব হলে যাতে মুজিব অন্তত আরো কিছু সময় হাতে পান (নিজে সব স্বেচ্ছায় করে থাকলে প্রথম খড়গটাই নেমে আসতো তার উপর। এবং এতে করে পুরো জাতি হয়ে পড়তো নেতৃত্বহীন)। মুজিবকে কিছুটা সেফটি জোন দেবার জন্যই এই কৌশলটা করা হয়েছে
৭. মুজিবের আরেকটি বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে পাকিস্তানের হাতে বন্দী হবার সিদ্ধান্ত নেয়া। কারণ তিনি যদি পালিয়ে যেতেন তাহলে একদিকে যেমন পাকিস্তানিদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যেত অন্য দিকে তিনি ভারতে কিংবা অন্য কোথাও গিয়ে আশ্রয় নিলে সাহাজ্য করার বিনিময়ে ভারত তাকে অনেকগুলো চুক্তিতে সম্মত হতে বাধ্য করে ফেলত। এবং তখন তার পক্ষে সেসব চুক্তি না মেনে কোনো উপায়ও থাকতো না। কিন্তু মুজিব জেল খানায় থাকার কারণেই এই জাতি মিত্রবাহিনীর অনেকগুলো মিত্রচুক্তির অভিশাপ থেকে বেঁচে গেছে
মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে বোধহয় বাংলাদেশের মতো এতো অল্প সময়ে মিত্রবাহিনী তাড়ানোর ইতিহাস আর কোনো দেশে নেই। বহু দেশ অর্ধ শতাব্দি ধরে মিত্র বাহিনীর উপনিবেশ হয়ে আছে এখনও। এই কৃতিত্বটা পৃথিবীতে একমাত্র আমাদের জাতিরই (আমি যতদূর জানি)
নজরুল ইসলাম ভাই, বইটার কথা আমিও শুনছিলাম। মানে, স্কুলে পড়ি তখন বোধহয়, পত্রিকাতে একটা আর্টিকেল আসছিল এই ব্যাপারে। তখনি বইটার নাম প্রথম শুনি।
একটা ডায়ালগ এখনো খেয়াল আসে, ভুট্টো বলসিলো যে, মুজিব আসলে পাগল :P।
যাই, হোক তার মানে আপনিও বলতে চাইতেসেন, আহমদ শরীফ ঠিক ?
----------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সমসাময়ীকদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধেয়জনই ক্ষোভ থেকে কিছু কিছু কথা বলে ফেলেন মাঝে মাঝে। সেটাকে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই আগামাথা ছেটে ইতিহাসের উদ্ধৃতি করে ফেলি
মুজিব সম্পর্কে আহমদ শরীফের এই মন্তব্যকে বিবেচনা করা আগে আমি বলব আহমদ শরীফের অন্যান্য রচনায় তিনি তার কাছে কী কী প্রত্যাশা করেছিলেন সেগুলোর দিকে একটু নজর দিলে এই ক্ষোভের কারণটা বোধ হয় বোঝা যাবে
.......
আর বিদেশী কোনো লেখা কিংবা রিপোর্টকে বিবেচনা আনার আগে আমি অনুরোধ করবো কয়েকবার ভেবে নিন ওটা কারা এবং কেন করেছে?
কার পক্ষে করেছে?
কারণ মিডিয়া সব সময় সত্যকথা বলে না এটা মিডিয়াই আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছে
মাহবুব লীলেনকে ধন্যবাদ এত সুন্দর করে point দিয়ে বলার জন্য, দরকার ছিল ।
লীলেন ভাইয়ের সুন্দর বক্ত্যবের জন্য ধন্যবাদ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমি বইটার নাম ইউজ করছি কারন সেইখানে মুক্তিযুদ্ধকালীন বড় চারজন সক্রিয় নেতার দৃষ্টিভঙ্গি একযোগে পাওয়া যায় বইলা। বলছি যে সেইখানে ইতোমধ্যে কিছু বিতর্ক আলোচিতও হইছে। এই বইটাতে যা লেখা সকলই সত্য তাহা আমি কখনোই বলিনাই... বরঞ্চ বইটা বেশ বিতর্কিতই।
আর ইতিহাসের ঠিক বেঠিক বিচার করার দায় আমি নিতে পারিনা বইলা বোধ করি। আমি আমার চিন্তাটা শেয়ার করতে পারি কেবল।
আর একটা উদ্ধৃতি পইড়া আহমদ শরীফ সম্পর্কে মন্তব্য করাটা যৌক্তিক ভাবিনা আমি। আহমদ শরীফ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক প্রমূখেরা মুজিবের অনেক সমালোচনা করছেন। এখন তা পইড়া আমরা যদি ভাবি যে উনি মুজিবের বিরোধীতা করছেন তাইলে সেইটা ভুল। এই ক্ষেত্রে মাহবুব লীলেনের কথাটাই সত্যি... (সমসাময়িকদের ব্যাপারে)। আমরা তো এইটাও জানি যে বঙ্গবন্ধু প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের কাছে প্রায়ই আসতেন... ভাঙ্গা চৌকিতে বইসা বইসা উপদেশ শুনতেন... সমালোচনাগুলাও শুনতেন ভক্তিভরে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমি আরেকটু যোগ করতে চাই
যারা তখনকার ছাত্র আন্দোলন এবং মুজিবকে আলাদা করে দেখেন তাদেরকে একটু পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম কৌশলগত স্বাধীনতা আন্দোলন 'ফিলিস্তিন' এবং ইয়াসির আরাফাতের দিকে তাকাতে বলব। এবং এর সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুজিবের ভূমিকাকে কৌশলগতভাবে মিলিয়ে দেখতে বলব
ইয়াসির আরাফাত কী করেছেন? আর তার জাতির অন্যান্য গ্রুপগুলো কী করেছে?
যখন আরাফাত ফিলিস্তিনের নেতা হিসেবে বিশ্বের এবং ইসরাইলের স্বীকৃতি আদায় করে ফেলেছেন তখন কিন্তু তিনি আর কোনো অস্ত্রের নেতৃত্ব দেননি
তিনি এগিয়ে গেছেন কূটনৈতিক উপায়ে। আর তারই দেশের অন্য এক বা একাধিক গ্রুপ কাজ করেছে অস্ত্র হাতে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে
(অনেকে মনে করেন তারা আরাফাত বিরোধী। কিন্তু তা নয়। তারা আরাফাতেরই সমর্থপুষ্ট একেকটি প্রেশার গ্রুপ যারা আরাফাতের ছায়ায় বসে আরাফাতের উপর দায় দায়িত্ব না দিয়ে অস্ত্র হাতে লড়েছে)
আরাফাত ফিলিস্তিনে বসেও যদি অস্ত্রের নেতৃত্ব দিতেন তাহলে কী হতো?
মাত্র কয়েক ঘণ্টা মধ্যে ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব এবং স্বাধীনতার আশা গুঁড়িয়ে দিতে পারতো ইসরাইল
কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে আরাফাত অস্ত্রহীন হবার কারণে ইসরাইল যতবারই আক্রমণ করুক না কেন আরাফাতের স্বীকৃতি আদায় করা অবস্থানকে ছেড়েই করেছে। আর সেখানেই টিমটিম করে জ্বলেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার আশা আর আন্দোলন
এবং এই প্রকৃয়ায় আরাফাত প্রায় অসম্ভব জায়গা থেকে ফিলিস্তিনকে প্রায়-স্বাধীন করে নিতে পেরেছেন
ধরণ এবং বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ফিলিস্তিনই হচেছ আধুনিক বিশ্বের আধুনিকতম স্বাধীনতা আন্দোলনের উদাহরণ
যেখানে শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এগোতে হয়েছে কৌশলগতভাবে
কারণ বোকার মতো শুধু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ানো কোনো কৃতিত্বের কাজ নয়
আর আজকের যুগের স্বাধীনতা আন্দোন কোনোভাবেই রুশ বিপ্লব কিংবা চৈনিক বিপ্লবের মতো অস্ত্র ও শক্তি নির্ভর নয়। বরং অনেক বেশি কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক (ম্যান্ডেলার আফ্রিকা আরেকটা উদারহরণ। যেখানে তিনি যখন প্রথম প্রেসিডেন্ট হন তখনও কৌশলগত কারণে আগের শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্টকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করেছিলেন)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে অনেকেই শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করে আমার মনে হয় না বুঝেই খণ্ডিত করেন
৭১ এ আমাদের যুদ্ধটা ছিল আধুনিক বিশ্বের একটা স্বাধীনতা যুদ্ধ
যেখানে এর নেতাকে সামরিক নেতা হবার চেয়ে বেশি জরুরি ছিল রাজনৈতিক নেতা হওয়া
শেখ মুজিব সেটাই করেছিলেন
চমৎকার আলোচনা হচ্ছে! চলুক...
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
লীলেন ভাইয়ের কথাগুলা মনে ধরলো।
আলোচনা চলুক আরো।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
সেটা আমিও ভাবি না। আগেই বলেছি, উনার সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুব বেশি না। যতটুকু আছে, তাতে উনাকে আমি একজন বিদ্বান, সাহসী এবং চিন্তাশীল হিসেবেই মানি।
তা না হয় মানলাম, কিন্তু
এর ঐতিহাসিক সত্যতা কতদূর ? আমি আগেই বলেছি, আমার জ্ঞান সীমিত,তাই আমি কিছু খোঁজ খবর নিয়েছি, কিন্তু এর স্বপক্ষে কোন তথ্য পাইনি। আপনারা কি মনে করেন , আসলেই কি মুজিব ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত বসে ছিল, এই আশাতে ?
যদি তাই না হয়, তবে কি আপনি করেন, ড.আহমদ শরীফের মত লোকের এহেন "সমালোচনা" উচিত ? এই বক্তব্যের মাধ্যমেই কি তার কোন নিচু দিক ধরা পড়ে না ? আর যদি এই বক্তব্য সঠিক হয়ে থাকে, তবে কি আমাদের মুজিব কে পুর্নমূল্যায়ন করা উচিত না ?
আমি অন্তত এই সত্যটা জানতে চাই।
-----------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আলোচনায় বসতে হলেতো একটা ইস্যু লাগে।
তোমার কোনো এজেন্ডা আমি মানি না বললে তো আর আলোচনায় বসা হয় না।
তখন পর্যন্ত পাকিস্তানিদের সাথে শেখ মুজিবের (অথবা বাঙালিদের) আলোচনায় বসার মতো একটাই আনুষ্ঠানি প্রধান ইস্যু ছিল, আর তা হলো নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর।
এখানে অনেকে বলতে পারেন যে আন্দোলন কেন আলোচনার ইস্যু হলো না।
তার উত্তরে বলবো আন্দোলন তখনই আলোচনার ইস্যু হয় যখন তা যার বিরুদ্ধে করা হচেছ তার স্বীকৃতি পায়।
তখন পর্যন্ত বাঙালিদের আন্দোলনকে পাকিস্তানিরা কোনো স্বীকৃতি দেয়নি।
আর কেউ কি ভু্ট্টোর আলোচানার এজেন্ডাগুলো জানেন?
আমার যতদূর মনে পড়ে তার একটাই এডেন্ডা ছিল। আর তা হলো নির্বাচন উত্তর ক্ষমতা ভাগাভাগি।
কোনোভাবেই বাঙালিদের আন্দোলন নয়।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
১৯৭১ এর ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলোচনা চলছিল?
পাকিস্তানে কারাগারে আটক শেখ মুজিবকে বিচার করে যখন ফাঁসি দেয়ার আয়োজন করা হচ্ছিল সেই সময়টাও কি এই আলোচনার মধ্যে অন্তর্গত?
আহমদ শরীফ রাজনৈতিক আদর্শে চীনা-বামপন্থী ঘরানার। এই গোত্রের লোকজন তখন বাংলাদেশে বাম সশস্ত্র বিপ্লবের স্বপ্ন-কল্প নিয়ে উত্তেজিত ছিলেন। এই ফাঁকে কখন যে ৬ দফা হলো, কীভাবে কীভাবে শেখ মুজিব নেতা হয়ে গেলো, দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো আর নতুন একটা দেশও হয়ে গেলো, তা তারা তাদের পঠিত রাজনীতির বই দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারেন না।
এইসব ঘটনার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা তারা এখনও করে যাচ্ছেন।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকে শ্রেণীর বিপ্লবের রং চড়ানোর তাদের এই কষ্টকর চেষ্টা দেখলে হাসিও পায়। তারা তাদের আদর্শ-চিন্তায় গোঁড়া না হয়ে পোস্ট-মার্কিস্টদের নতুন ভাবনা-চিন্তাগুলো নিয়ে ব্যাখ্যাটা দাঁড় করালে হয়তো মনে শান্তি পেতেন।
তাদের প্রায় সমস্ত ব্যাখ্যার অবশ্যম্ভাবী শেষ বিন্দু হচ্ছে; এই স্বাধীনতা সত্যিকার স্বাধীনতা না। সর্বহারার অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন ছাড়া স্বাধীনতা অর্থহীন।
কিন্তু পপুলার রাজনৈতিক ডামাডোলে তাদের লালবই-চর্চিত গলা শোনা যায় না। তখন তারা জাতীয় পর্দার মূল নায়কদের নামে স্ক্যান্ডাল ছড়ান, শ্রোতা-দর্শকের দৃষ্টি নিজেদের দিকে টানতে। বর্তমান জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক স্বাধীনতার ভুল-ধারণা থেকে বের হয়ে এসে শোষিতের ব্যানারের নীচে এক হয়ে নতুন সংগ্রামে যোগ দিতে তারা আহ্বান জানান পত্রিকার পাতায়।
তাদের স্বপ্ন পূরণ হতে হলে, বর্তমান অবস্থার, বর্তমান নেতার বা বর্তমান অর্জনের একটা কালি-চুন মাখা ইতিহাস-সংস্করণ-বিশ্লেষণতো জনগণের সামনে রাখতে হয়।
একারণেই তারা এরকম ব্যাখ্যা রেখেছেন ও এখনও রাখছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে আস্থা না থাকলেও নিজেদের রাজনৈতিক বিশ্বাস ও ব্যাখ্যাকে তারা ধর্মীয় গোঁড়ামির মতো আঁকড়ে রাখতেন ও রাখেন। আহমদ শরীফের ব্যক্তিগত ডাইরি তার বা তাঁদের নিজস্ব বিশ্লেষণ থেকে দাঁড় করানো একরকম বিশ্বাসের প্রতিফলন। ঐতিহাসিক সত্য নয়।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
পারফেক্ট!
লীলেন ভাই ও শোহেইল ভাই'র মন্তব্যের পর আমার পক্ষ থেকে আপাততঃ কিছু যোগ করার নাই ।
ফারুক ওয়াসিফের মন্তব্যের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ধন্যবাদ বিগ সি
আপনার বিশ্লেষণে ব্যাপারটা কিছুটা পরিষ্কার হল আমার কাছে। কেষ্ট ব্যাটাই কেন চোর একটু আধটু বোঝা যাচ্ছে।
যতদূর মনে পড়ে, স্বাধীন বাংলাদেশেও সর্বহারারা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন না করে, "ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতিস্বীকার দিবস" বা এই ধরণের একটা কিছু পালন করত।
ধন্যবাদ সবাইকে।
---------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আজ উঠতে হচ্ছে। মাহবুব লীলেন অনেক যুক্তিসঙ্গতভাবে শেখ মুজিবকে ডিফেন্ড করেছেন। যদি অনুমতি দেন কাল কিছু প্রশ্ন করার আশা রাখি।
''''''''''''''''''''''''''''''''''''
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
এইখানে একটা বিষয় বুঝতে পারতেছিনা... যেহেতু আমি ভাব বুদ্বুদ বইটা পড়ি নাই। কিন্তু আপনে কি বস একটু খেয়াল কইরা দেখবেন ? সেইখানে কি ২৫ ডিসেম্বর লেখা নাকি ২৫ মার্চ লেখা ? ২৫ ডিসেম্বর কোনোভাবেই হইতে পারেনা। ২৫ মার্চই হইবো বইলা বিশ্বাস করি।
২৫ মার্চ পর্যন্ত আলোচনা অবশ্যই পাকিস্তানের ক্ষমতা কেন্দ্রীকই থাকবো। এইটাই স্বাভাবিক। নির্বাচন মোতাবেক উনি তখন পুরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ দাবীদার। তো এইটা নিয়া আলোচনা করতে অসুবিধা কি ? উনি এইটা নিয়া আলোচনা করার তলে তলে কি এইটাও বইলা রাখেন নাই যে তোমরা তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়া প্রস্তুত হও ? উনি কি এইটাও বইলা রাখেন নাই যে আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি...। তাইলে সমস্যাটা কোথায় ?
সবজান্তা ভাই... আমার মনে হয় এইটা ঐতিহাসিক ভুল না... ছাপার অথবা পড়ার ভুল... ডিসেম্বর নাকি মার্চ সেইটা নিশ্চিত হওয়াটা জরুরী। মার্চ পর্যন্ত হইলে আমি কোনো আপত্তি দেখিনা।
আর বিষয়টা যখন উঠলোই তখন আমার পুরানা একটা আগ্রহের কথা বলি... দুইটা বিষয় কখনোই খুব খোলাসা করা হয়নাই। মার্চ মাসে যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলতেছিলো সেইটার গতি প্রকৃতি নিয়া। আর বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধকালীন বন্দি জীবন নিয়া। এই দুইটা বিষয়ে আমার জানার আগ্রহ আছে... চেষ্টাও আছে... কিন্তু খুব কিছু করতে পারতেছিনা। দুইটা বিষয়েই যিনি সবচেয়ে ভালো বলতে পারতেন তিনি ডঃ কামাল হোসেন। তিনি মার্চের কয়েকটা বৈঠকেও ছিলেন আবার বঙ্গবন্ধুর বন্দী কালে তাঁরেই আইনজীবি হিসাবে চাইছিলেন। কিন্তু উনি কেন জানি ঐসব নিয়া কখনোই কিছু বলেন নাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমি কিন্তু যা আলোচনা করেছি সব ২৫ মার্চ ধরেই করেছি
আপনি বলার পরে খেয়াল করলাম ওখানে ২৫ ডিসেম্বর লেখা
এটা আমারও মনে হয় ২৫ মার্চ। কোনো কারণে প্রিন্টিং মিস্টেক হয়েছে সেই পত্রিকায়
ওটা ২৫ মার্চই হবে
শেখ মুজিবর রহমানকে ক্রিটিক্যালি মানে আগপাশতলা দেখে মূল্যায়ণ করা একটা প্রয়োজনীয় কাজ হতে পারে। কেন বাংলার মানুষের গণমুক্তি আন্দোলন মুজিবর রহমানের মতো লোকের হাতে গেল সে-সব প্রশ্নও যাচাই করা যেতে পারে। আবার শেখ মুজিব-ও একজন রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন সেটাও দেখতে হবে। কিন্তু এই মুর্হুতে জরুরি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদর আল শামস বাহিনীর লোকদের ও তাদের প্রেতাত্মাদের বিচার ও সমূলে উৎপাটন। এ কাজটা আগে করা চাই তারপর অন্য কিছু ... হঠাৎ করে আহমদ শরীফের জবানিতে শেখ মুজিবকে টেনে আনার উদ্দেশ্য কি সেটাও ক্রিটিক্যালি দেখার বিষয় হতে পারে।
তার আগে চাই রাজাকারদের আস্ফালন বন্ধ করা ...
বামপন্থীদের ভূমিকা নিয়া সকালেই অন্য পোষ্টে কমেন্ট করছি। হাসান মোরশেদ'র পোষ্টে... সেইটা এইখানে কপি পেষ্ট করলাম।
বামরা যতোটা না মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করছিলো তারচেয়ে বেশি আসলে তারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব নিয়া প্রশ্ন তুলছিলো। আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব তারা মাইনা নিতে চায়নাই বা তারা ভাবতো স্বাধীন বাংলাদেশ চালানোর মতো যোগ্য আওয়ামী নেতৃত্বের নাই আসলে।
মুক্তিযুদ্ধকালে তো সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বে বরিশালে একটা সরকারও গঠন করা হইছিলো বইলা শুনি।
আবার কমরেড আব্দুল হক সরাসরিই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করছে। ভূট্টোরে চিঠিও দিছিলেন তিনি।
আবার মেজর জলিল কর্ণেল তাহেররা কিন্তু আওয়ামীলীগের সাথে থাইকাই তাদের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চাইছিলেন।
তবে বামরা তাদের ৭১এর ভূমিকা যে ঠিক ছিলোনা তা অনেকাংশই স্বীকার করেন। আর জামাতীরা প্রস্তুতি নেয় নিজেদেরকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেওনের।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আজকে মুজাহীদ জামাতীদেরকে ঘৃণা জানাইতে গিয়া দুইটা বিষয় উইঠা আসছে... বঙ্গবন্ধু আর বাম।
আমার মনে হয় আমরা আপাতত এইসব বন্ধ রাখতে পারি... কারন এইসবরে জামাতীরা নিজেদের স্বার্থে ইউজ করে।
আমরা একাট্টা হই আসলে মুজাহীদ নিজামী গো: আজম গংদের বিরুদ্ধেই। তৎপরে বাকি ফয়সালা। আগে জানোয়ার খেদাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লীলেন ভাই চিরজীবী হন।
হইতে পারে। সেই ক্ষেত্রে হয় লেখক নিজে অন্যমনস্ক হয়ে ভুল লিখেছেন , নয় আমার কাছে সাপ্তাহিক ২০০০ এর যেই কপি আছে, তাতে ভুল লেখা আছে ( মানে এটা ২০০০ এর ভুল)। তবে বুঝতেই পারছেন, ২ টারই সম্ভাবনা কত কম !
হাহা, এই লেখাটা লেখার আগেই আমি জানতাম, এই বিষয়টা কেউ না কেউ তুলবেন এবং লেখার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। শুরুতেই বলে রাখি, আমি আগাপাশতলা একজন রাজাকার-জামাত বিরোধী লোক। এই লেখাটা লেখার আগে আমিও ভেবেছিলাম, লেখাটা উচিত হবে কিনা,এই সংকটময় মূহুর্তে! পরে ভেবে দেখলাম, এ প্রপাগান্ডাগুলিও বহুল প্রচারিত। বিশেষত আহমদ শরীফের মত লোকের মুখ দিয়ে যখন এগুলো নিসৃত হয়, তখন আমার মত ইতিহাস-অজ্ঞ তরুণের বিপথ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই, যারা জানেন এ সম্পর্কে তারা যদি ব্যাপারটা পরিষ্কার করেন, তবে আমার ধারণা উপকার অনেক বেশিই হয়। আর আমরাও কার কোন কথা ধরতে হবে আর কোনটা ধরতে হবে না, তাও বুঝতে পারি।
আশা করি, আমি আমার অবস্থানটা পরিষ্কার করতে পেরেছি।
আশা রাখি আমরা অন্তত সচলে যারা আছি, তারা একাট্টা ছিলাম এদের বিরুদ্ধে, একাট্টা থাকবোও।
ধন্যাবাদ সবাইকে।
-----------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
একই কথা আমারও মনে হয়েছিল, আখতারউজজামান ইলিয়াসের "চিলেকোঠার সেপাই" পড়ার পর।
আমি আসলে যা জানার জন্য এই পোস্ট টা করেছিলাম, তা আমি জেনে গেছি লীলেন ভাই এবং বিগ সি র লেখা থেকে। তাই আমার মনে হয়, এই ব্যাপারে আর আলোচনার দরকার নেই।
আসলেই এখন আমাদের জামাতকে ঘৃনা করার সময়। এ ব্যাপারে আলোচনা না হয়, আমরা পরে করব।
-----------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
It should be March 25, 1971, or perhaps December 1970. It was obviously a typographical error, or a lapse of memory in Dr Sharif's last days. In any case, Dr Sharif could not have known what kind of dialogue Mujib was holding in a condemned cell in December 1971 with who.
Apologies for my English. Bangla isn't working right here: see for example: bবaাnনংnনaা lলiিkকখtTতeে pপaাrরiি nনaা!!! Using the shabdik universal keyboard.
আমাদের প্রসঙ্গ দুটো, এক,স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবের অবদানের তত্যগত মূল্যায়ন অর্থাত্ তিনি কী করেছেন এবং দুই. তার কাজের বিচার অর্থাত্ তিনি কী করতে পারতেন। আর লক্ষ্যটা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধকে মিথ বা ষড়যন্ত্র দিয়ে ব্যাখ্যা না করে তার প্রকৃত শক্তি ও জটিলতাগুলোর সুতোগুলো ধরা। সেই শক্তি আজ কোথায় দূর্বল কোথায় সবল, সেই সুতোগুলো কীভাবে আরো প্যাঁচ তৈরি করে জাতীয় ইতিহাসকে ফাঁসাতে যাচ্ছে, তার প্রয়োজনেই।
তার মানে আজকের প্রয়োজনেই।
প্রথম কথা হচ্ছে যে পূর্ব বাংলা ১৯৭১-এ বিপ্লবী গণযুদ্ধে নেমেছিল, সেই পূর্ব বাংলা কিন্তু ১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সর্বস্ব নিয়োগ করেছিল। একমাত্র বাংলা এবং পাঞ্জাব প্রদেশেই মুসলিম লীগ সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জোরেই মুসলিম লীগ পাকিস্তানের সম্বাবনা ভারতবর্ষের বাদবাকি মুসলমানদের দেখাতে সাহস করে। এবং শেখ মুজিবও সেই আন্দোলনেরই তাজা কর্মী ছিলেন। ইতিহাসের রসিকতা কী অদ্ভুত, সেই বাংলা ও সেই শেখ মুজিবই আবার পাকিস্তানকে হত্যা করলো। সেই যে বলে, ছাগদাদার আর্ধেকটা বাঘে খেয়ে ফেললো, বাকি আর্ধেকটা সেই দুঃখে মরে গেল। বাংলার বাঘ পাকিস্তানের দেহকে যেভাবে টুকরা করেছিল, তাতে পাকিস্তানের পক্ষে আর বাঁচা সম্ভব ছিল না। বাঁচেও নাই। কবরের দিকে যেতে যা সময় লাগে সেটাই তারা ১৯৭১-এর পরে পার করছে।
এবং শেখ মুজিব তখন ছিলেন মুসলিম লীগের রক্ষণশীল সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের কর্মী। আর সোহরাওয়ার্দীদের বিরুদ্ধে ছিলেন আবুল হাশিমের মতো প্রগতিশীল তরুণ নেতা। বাংলার অখণ্ডতা ঠেকাতে আবুল হাশিম-শরত বোস প্রমুখের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ১৯৪৭ এর পর আবুল হাশিম পরাস্থ হয়ে রাজনীতি ছেড়ে দেন। কিন্তু শেখ মুজিব টিকে থাকেন। আবুল হাশিমরা পরাস্থ হলেও নিষিদ্ধ ঘোণিত কমিউনিস্ট পার্টি কাজ চালাতে থাকে আওয়ামী লীগের ভেতর। তার বাইরে স্বতন্ত্র ছাত্র-যুব সংগঠনও করে তারা। পাকিস্তানকে প্রথম আঘাত তারাই করে ১৯৫২-তে ভাষা আন্দোলনে এবং তার আগের হাজং বিদ্রোহের সশস্ত্র লড়াইয়ে।
১৯৫২-এর পরপরই কমিউনিষ্টরা বুঝে যায় যে, বাংলাকে স্বাধীন না করলে মুক্তি নাই। ভাষা আন্দোলনের অগ্রসর কর্মীরা ভাষা মতিন, অলি আহাদদের পরের কার্যক্রম দেখলে সেটা মনে হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠন করে বাঙালিদের সব দল এক হয়ে মুসলিম লীগকে পূর্ব বাংলা থেকে ঝাড়-বংশে উচ্ছেদ করে স্বাধীনতার শর্ত তৈর করে। তখন স্বাধিকার আন্দোলন দুটো ধারায় চলতে শুরু করে। একদিকে কমিউনিষ্ট প্রভাবিত ছাত্ররা সশস্ত্র গণযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাকে স্বাধীন করার পথ, আরেকদিকে জাতীয় নের্তৃত্বের সাংবিধানিক পথে পূর্ণ স্বাত্তশাসনের মাধ্যমে অখণ্ড পাকিস্তানের জায়গায় ফেডারেল পাকিস্তানের পথ। এই ধারাই ২১ দফার প্রবক্তা। কিন্তু যেই তখনকার সরকার ২১ দফা মানতে অস্বীকার করলো অমনি মাওলানা ভাসানী ১৯৫৬-তে ঘোষণা করলেন, এরকম চললে বাঙালিরা আলাদা রাস্তা ধরবে, এক সঙ্গে থাকবে না। শেখ মুজিব তখন সোহরাওয়ার্দীর প্রধান শিষ্য এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্র্দী বললেন ৯৮ ভাগ স্বাধীনতা তো দেয়াই হয়েছে। সেসময়েই কাগমারি সম্মেলনে আমেরিকার সঙ্গে সামরিক চুক্তির (এখনকার ওয়ার অন টেরর চুক্তির মতো) পক্ষে-বিপক্ষে আওয়ামী লীগ ভাগ হয়ে যায়। মুসলিম+মার্কিন+পাকিস্তানপন্থিদের নেতা থাকেন সোহরাওয়ার্দী ও মুজিব আর বিপক্ষে থাকেন মাওলানা ভাসানী। তিনিই তখন ন্যাপ গঠন করেন। আওয়ামী লীগের ভেতরকার কমিউনিস্টরাও তখন মস্কো-চীন ভাগ হয়ে গেছে। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় এর আগেই তারা আওয়ামী লীগে ঢোকে। মস্কোওয়ালারা চলে যায় মুজিবের সঙ্গে আর চীনারা ভাসানীর সঙ্গে।
আসে ১৯৬২ সাল। এরই মধ্যে একদল জঙ্গি ছাত্র বেঙ্গল লিবারেশন ফোর্স নামে একটি বাহিনী খাড়া করে। তখন আইয়ুবশাহীর চতুর্থ বছর। তারা বুঝেছিল তাদের লড়তে হবে সেনাদের সঙ্গেই। স্বাধীনতার দুউ পথের পার্থক্য তখন আরো স্পষ্ট হলো।
এর মধ্যে দুটো ঘটনা ঘটে। পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট হয়ে পড়ে এবং ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একমাত্র বাঙালিরাই বীরের মতো লড়ে পাকিস্তানের ইজ্জত রাখে। কিন্তু তারা দেখতে পায়, যুদ্ধে পূর্ব বাংলা অরক্ষিত ছিল। সেটা তাদের মনে দাগ কাটে। প্রণীত হয় ছয় দফা। যার প্রণোদনা এসেছিল বামপন্থি শিক্ষক নাজমুল করিমের বই থেকে।
ইতিহাসের লীলা সত্যিই বিচিত্র। এক > যে বাংলা পাকিস্তানকে প্রতিষ্ঠিত করলো সে দেখলো পাকিস্তান তাকে রক্ষা না করে চুষছে। দুই> যে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলো, সেই দ্বিজাতিত্ত্বওয়ালারাই প্রমাণ করলো পাকিস্তানের দুই অংশের জনগণ সমান নয়। এ থেকে আওয়ামী লীগ বামপন্থিদের প্রেরণায় তৈরি করলো বাঙালিদের দ্বিজাতিত্ত্ব যে, পূর্ব ু পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ এক জাতি নন! তিন > যে সেনারা ১৯৬৫ সালে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করলো, তাদেরউ কেউ কেউ আগড়তলায় গিয়ে ভারতের সহযোগিতা চাইলো। চতুর্থ লীলাটি শেখ মুজিবের নিজের সঙ্কট ও উত্তরণের বিষয়ে। সেটিতে পরে আসছি।
আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবসহ ৩৪জন সশস্ত্র অভুত্থানের পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেফতার হন। তারা এটা অস্বীকার করেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ তিনি জেলে ছিলেন। তখনই ঘটে ১৯৬৯-এর মহাগণঅভুত্থান। ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিকের ঐক্যে তখন যে জঙ্গি আন্দোলন হয়, তা-ই রচনা করে ৭১-এ গণযুদ্ধের ভিত। ১৯৫২ সালের পর এবারও শেখ মুজিব সংগ্রামের কেন্দ্রে ছিলেন না, প্রধান নেতাও ছিলেন না। ভাসানী ও তোয়াহা এবং ছাত্রনেতারাই আন্দোলন চালান। তারা ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করে শেখ মুজিবকে মুক্ত করেন। কিন্তু শেখ মুজিব আবারো তার অতি চেনা পথ অর্থাঃ নির্বাচনের পথে হাঁটলেন। অথচ বামপন্থিদের একটা বড় অংশ (সিরাজ শিকদারের গ্রুপ) এবং ছাত্ররা মিলে তখনই স্বাধীন পূর্ব বাংলার কর্মসূচি ঘোষণা করলো। তারা বাহিনী গঠনের কাজে মন দিলেন আর শেখ মুজিব প্রস্তুতি নিলেন নির্বাচনের। ভাসানী ও চীনাপন্থিরাও নির্বাচন বাদ দিয়ে গণসংগ্রামের জমিন তৈরিতে লেগে গেলেন। কমিউনিষ্টরা নির্বাচন বর্জন করলো। মনে রাখা দরকার, তখন ভাসানী ও শেখ মুজিব কে কার থেকে বেশি জনপ্রিয় তা বোঝা যেত না। তবে গ্রাম শহরে সংগঠন বড় ছিল কমিউনিষ্টদের। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় (জামাত ইত্যাদি বাদে) শেখ মুজিব নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করলেন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগেই উপকূলীয় অঞ্চলে বিরাট ঘূর্ণিঝড়ে বেশ কয় লাখ মানুষ মারা গেলে ভাসানী সেখানে ত্রাণ থেকে ফিরে এসে বিবৃতি দিলেন,'ওরা কেউ আসেনি'। আমাদের মনে আছে তিনিই ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানকে ওয়াআলাইকুম আসসালাম বলে বিদায় দিয়েছিলেন।
নির্বাচন হলো কিন্তু ওরা টালবাহানা করতে লাগলো। ঐ টালবাহানাটা ছিল সামরিক প্রস্তুতির জন্য। জনগণের আর কিছুই দেখার ছিল না। ভাসানী হন তাদেরই প্রতিনিধি এবং তারা নির্বাচন বর্জন করেন।
১৯৭১ এর ৩ জানুয়ারি, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি আবার রমনা রেসকোর্স ময়দানে গণআবেদন তৈরির জায়গায় ফিরে আসে। এদিন সেখানে আইনসভার সকল পূর্ব পাকিস্তানী সদস্যদের সভা ডাকেন শেখ মুজিব। তিনি তাদের শপথ পাঠ করান যে, তারা আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবিনামার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন। (খেয়াল করুন যে, তিনি দুটো পক্ষ হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন) এই দুই দাবিনামা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে জনগণের পক্ষ থেকে দেয়া আমানত।
আজ যদি ফিরে দেখি, ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ জুড়ে যা ঘটছিল, তাতে ফেডারেল পাকিস্তানের সম্ভাবনা বাস্তবে অস্তমিত হয়ে যায়। কিন্তু তখন এটা পরিষ্কারভাবে ধরা দেয়নি, বিশেষত শেখ মুজিবের কাছেও মনে হয়নি যে, পাকিস্তানের মধ্যে ছয় দফা’র বাস্তবায়ন সম্ভব না। মুজিব তার যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা নিয়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, কারণ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি তার আস্থা, নির্বাচনী রায় এবং জনগণের সমর্থনে তিনি এটাই করতে পারতেন এবং বুঝতেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বের দোরগোড়ায়। (এটাই তার করার ছিল। কারণ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির শীর্র্ষবিন্দু চিরকালই অসহযোগ এবং নির্বাচনের আশ্রয় নিয়েছে।যদিও এ পথে কোনো রাষ্ট্রই প্রকৃত স্বাধীনতা পায় নাই। বাংলাদেশও তার প্রমাণ)।
তার আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ঠ কারণ ছিল, কিন্তু আচম্বিতে নতুন ধাক্কা এল।
১৯৭১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন যে, জাতীয় পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে ৩ মার্চ, ঢাকায়। এর দুদিন পর ১৫ ফেব্রুয়ারি জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা করেন যে, যতক্ষণ না আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসহৃচির কারণে সৃষ্ট সমস্যা অপসারিত হচ্ছে, ততক্ষণ তার দল জাতীয় পরিষদের সভায় যোগ দেবে না। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে শেখ মুজিব ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আবারও ছয় দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন আদায়ে তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি আরো ঘোষণা করেন যে, বাঙালিদের উচিত তাদের অধিকার ও স্বার্থহানিকর যে কোনো চক্রান্ত রুখে দাঁড়ানো। পরের দিন তার বলা সেই চক্রান্ত প্রকাশ্যে মুখ দেখালো। ইয়াহিয়া খান তার মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দিয়ে জেনারেলদের বৈঠক ডাকলেন এবং নিজের মতো করে নিজের পথে সঙ্কট সমাধানে আগুয়ান হলেন।
দুদিন পর, ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখে, শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বললেন, অধিকার আদায় ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় পুর্ব পাকিস্তান দরকার হলে লড়াই করবে। ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে, শেখ মুজিব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সকল সদস্যের কাছে ঢাকা অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেন। কিন্তু পরের দিন ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দেন।
এ সংবাদে ফুঁসে উঠলো ঢাকা ও চট্টগ্রামের জনতা। লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকার পূর্বাণী হোটেলের সামনে জড়ো হলেন। সেখানে তখন আওয়ামী লীগের কাউন্সিল চলছিল। জনতা সেখানে দাঁড়িয়ে দাবি তোলে যে, শেখ মুজিব যেন এখনই জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেন। তারা পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দেয়। এদিকে ছাত্রনেতারা সংগ্রামের প্রস্তুতির জন্য একটি শীর্ষ কমিটি গঠন করে। এর নাম দেওয়া হয় স্বধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ (এসবিকেসিএসপি)। এর নেতা হলেন, নুরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আ স ম আব্দুর রব এবং রুহুল কুদ্দুস মাখন। তারা স্বাধীনতার সংগ্রামে যৌথভাবে নেতৃত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৭১ সালের মার্চে এসে এই প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রস্তুতি প্রধান ধারা হয়ে ওঠে (যদিও শেখ মুজিব প্রথমে চাইছিলেন নিয়মতান্ত্রিক স্বায়ত্তআসন)। এই দাবির শক্তি ও জনসমর্থন সাংবিধানিক নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে ছিল না, ছিল তার বাইরে। সেখানেই এর বীজ রোপিত হয় এবং ছাত্রনেতাদের শুশ্রুষায় তা বড় হয়ে ওঠে। মার্চের ২ তারিখে গোটা পূর্ব পাকিস্তানে স্বতষ্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়। সারা ঢাকা এবং এর আশেপাশের এলাকা থেকে মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমবেত হয়। সেখানে জনতা জাতীয় স্বাধীনতার ধ্বনি তোলে এবং স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ধীর স্থির গাম্ভীর্যের মধ্যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র পরিষদের ভিপি ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আব্দুর রব বিপুল হাততালি ও কানফাটানো ‘জয় বাংলা’ ধ্বনির মধ্যে জাতীয় পাতাকা উত্তোলন করেন।
আর এভাবেই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন, জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন ইত্যাদির পরও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা ধীরে ধীরে অস্তমিত হতে থাকলো। আর যতই সে সম্ভাবনা কমে যাচ্ছিল ততই খুলে যাচ্ছিল সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দুয়ার। জাতি তখন সেই দুয়ার দিয়ে সেই পথে পা রাখতে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। পরের দিনগুলোর ঘটনাবলী অনিবার্যভাবে এবং অবিশ্বাস্য গতিতে সেই সংঘাতের দিকেই ধাবিত হচ্ছিল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামা পাথরখণ্ডের মতো। যতই তা নামতে থাকে ততই তার বেগ,গতি ও আঘাত করার মতা বাড়তে থাকে। আর ২৫ মার্চ রাতে তা মুখোমুখি হয় সামরিক জান্তার। সেই সন্ধ্যাতেও শেখ মুজিব গোল টেবিল আলোচনা চালিয়ে গেছেন।
এবং সেই রাতেই প্রমাণ হলো তিনি ভুল পথে ছিলেন। বলা হয় তিনি ভারতের কাছে যেতে চাননি। কিন্তু যেতে কি হয় নি, যেতে কি হতো না? তিনি লোকক্ষয়ের ভয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু মানুষ কি মারা যায়নি? প্রস্তুতি থাকলে এত লোক মারা যেত না। পৃথিবীর কোন দেশের কোন স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা 'যার যা কিছূ আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো বলে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে হাতি লাঠি ধরিয়ে দিয়েছেন!লাঠিও ধরিয়ে দিতে পারতেন!!! পৃথিবীর কোন নেতা যুদ্ধ ঘোষণা করে ঘরে বসে থেকেছেন আত্মসমর্পণের জন্য? কারণ তার চোখে তখনও প্রধামন্ত্রীত্বের স্বপ্ন লেগে ছিল। তিনিন তখনও মার্কিনের বন্ধু ছিলেন এবং তাদের কাছে সমাধান চাইছিলেন (সম্প্রতি প্রকাশিত সিআইএ-এর ডক্যুমেন্ট দেখুন)।
ইয়াসির আরাফাত সম্পর্কে দেয়া তথ্য সঠিক নয়। তাদের শুরুই হয়েছে সশস্ত্র যুদ্ধ দিয়ে। ইয়াসির আরাফাত নিজেকে জাতীয় ও সামরিক নেতাই ভাবতেন। আমৃত্যু তিনি সামরিক পোশাকই পরে ছিলেন। পিএলও-তে একাধিক গ্রুপ ছিল, কোনোটা মার্কসিস্ট, কোনোটা মাওবাদী, কোনোটা শ্রেফ জাতীয়তাবাদী। আরাফাতের মহত্ব এই যে, তিনি সবাইকে নিয়ে পিএলও নামের জাতীয় মঞ্চ বানিয়েছিলেন। তার দল ফাতাহ-র অধীনস্থ করতে চান নি। তার মৃত্যুর পর যেই ফাতাহ এককভাবে সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিতে চাইল তখনই ঐক্য ভেঙ্গে গিয়ে হামাস প্রধান হয়ে উঠলো, এবং জনগণও হামাসের পেছে দাঁড়াল। আরাফাত আর মুজিবের পরিণতি একেবারে বিপরীত। আরাফাত চিরটাকাল যুদ্ধ করে এসে আলোচনার টেবিলে এসে পরাস্থ হয়েছেন। শেষ বৈঠক অসলো-তে তিনি ফিলিস্তিনের জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ইসরাইলকে অনেক জমি ছেড়ে দিয়ে, তার জাতির গণহত্যাকারী শিমন পেরেজ ও আইজ্যাক রাবিনের সঙ্গে নোবেল নিলেন এবং পরিণত হলেন তালপাতার সেপাই-য়ে। আর শেখ মুজিব সারাটা জীবন গণআন্দোলন, আলোচনা ও নির্বাচন করে এসে যুদ্ধের দাবি মেটাতে না পেরে কারাবরণ করলেন। আর তার কমরেডরা জাতিকে একা অরক্ষিত রেখে যে যেভাবে পারে ভারতে চলে গেলেন। জাতি দেশেই থেকে সমাজকে বাঁচিয়ে রেখেছে, সন্তানদের পাঠিয়েছে রণাঙ্গনে। আর মরতে মরতে ধর্ষিত হতে হতে অপেক্ষা করেছে, ছেলেরা আসবে, যুদ্ধ করবে, দেশ বাঁচাবে। আর জাতি তার জাতীয় নেতাকে ছাড়াই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে ফেলল। এই যুদ্ধে যে সঙ্কল্প, যে ত্যাগ ও যে বিভীষিকা বাঙালিদের পার হতে হয়েছে, তা তিনি কোনোদিন বুঝতে পারেন নাই। পারলে ক্ষমা করতেন না, কেবল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকেই প্রতিষ্ঠা করতে চাইতেন না। তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব চেয়েছিলেন, তা-ই পেয়েছেন। কিন্তু জাতি জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ করে কী পেল?
আর বামপন্থি রাজনীতির একাংশ একাত্তরে নেতৃত্ব দিতে না পেরে মরলো, আর বাকিটা মারা পডলো শেখ মুজিবেরই হাতে। আজকের এরা তো মিল্লাত বাম। টাইগার বাম হওয়ার সাধ্য তাদের নাই। আর আমরা যারা প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসকে প্রশ্ন করতে শিখি না, তারা হলো বিধি বাম। যা জানি তা-ই সত্য, তার বাইরে সত্য নাই। কিন্তু 'সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম'।
আর ইতিহাসের পঞ্চম লীলাটি এই যে, যারা স্বাধীনতার পথের প্রথম পথিক হয়ে ত্যাগ স্বীকার করেছে। আজ তাদের ভূমিকা স্বীকৃত নয়। আর যে রাজাকারেরা গণহত্যা চালিয়েছে তারা আজ সেরা 'দেশপ্রেমিক'। এ রাজনীতির আলোচনা অন্যদিন করা যাবে। নিশ্চয়ই এখনকার প্রধান প্রসঙ্গ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। সেই লম্বা পথের যাত্রায় ইতিহাসের সরাইখানাই একটুকু বিরতি। সরাইখানাটি বিষন্ন, অন্ধকার, শোনায় অজানা দুঃখের কাহিনী। জীবনানন্দ দাশ তো বলেইছেন, ইতিহাস খুঁড়লেই রাশি রাশি দুঃখের খনি। আর যদি তা ভেদ করে যেতে পারি, তাহলে আছে 'অবিরল শুশ্রুষার মতো শত জল ঝরনার ধ্বনি। সে ধ্বনির বেদ হারাতে চাই না, তাই এই কহন। ক্ষমা করবেন।
""""""""""""""""""""""""""""""""""""
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ফারুক
লেখা পইড়া মনে হইলো তোমার খাটুনিটা কামে দিছে...যেই বিশাল জবাব দিছো!
মুক্তিযুদ্ধের আইকন(?) হিসাবে শেখ মুজিবের গুরুত্ব যতোটুক, তার রাজনৈতিক গুরুত্ব বা ভূমিকা ততোদূর যায় কি না সেই বিষয়টা নিয়া প্রশ্ন সজীব রাখনটা জরুরী...আর লীলেনকৃত ইয়াসির আরাফাতের বিষয়টা আমারো চোখে লাগছিলো...তয় তুমি অনেক গুছাইয়া বিষয়টারে বিবৃত করছো...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
খুব সুকৌশলে ৭ই মার্চকে এড়িয়ে যাওয়া হলো বলে মনে হলো --- এখানে দেয়া ব্যাখ্যায় খাপ খায় না বলেই হয়তবা।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
ধন্যবাদ ভাস্কর'দা।
যদ্দেশে যদাচার।
আপনে এরকম মৌন হয়ে গেলেন কেন?
............................................................
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
যুদ্ধপরাধীদের বিচার নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। আশা করি অচিরেই তা হবে। তবে যথাসময়ে হলে এ বিচার নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ থাকতো না। কেন ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত পৌণে চার বছর সময় পেয়েও আওয়ামী লীগ এবং বাকশাল সরকার তা করেনি এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর নেই। মুজিবকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি জয় বাংলার সঙ্গে জয় পাকিস্তান বলেছিলেন। কেন? ২৫ মার্চ দুপুর পর্যন্ত তিনি ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা চালিয়ে গেছেন। কেন? সবাই পালিয়ে গেল, মুক্তিযুদ্ভে অংশ নিল আর তিনি পাকিস্তান বাহিনীর হাতে ধরা দিলেন। কেন? ধরার আগে স্বাধীনতার কোন ঘোষণা তিনি দেন নি। কেন? পশ্চিম পাকিস্তানে তাঁর যখন বিচার হচ্ছিল, সেই লায়ালপুর ট্রায়ালে তিনি যে জবানবন্দী দিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। কেন? তাজউদ্দিনের দুঃখ ছিল, মুজিব ভাই কখনো ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনতে চান নি। কেন? তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র নিষিদ্ধ করে বাকশালী শাসন কায়েম করেছিলেন। কেন? - এ সব প্রশ্নের উত্তর আমরা আজ এড়াতে পারি ঠিক। কিন্তু একদিন না একদিন এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হবে এবং অন্ধ রাজনৈতিক আবরণ ভেদ করে সঠিক ইতিহাস লেখা হবে।
নতুন মন্তব্য করুন