অতদিনে সকালের ুধা বিকেলে নিবারণের অভ্যাসটা গড়ে ফেলেছি। নিজের চারপাশের আবরণও অনেকটা শক্ত হয়ে ওঠেছে। ‘ুধা নেশা’ মানে না খেয়ে নেশা করা। চারদিকে একটা ঘোর।
ততদিনে আল্লামা ভাইয়ের ‘বেড়া তে খেয়ে ফেলেছে’ (সিমির উপর নজর রাখার দায়িত্ব ছিল সাগরের, শেষমেশ প্রেমই করে ফেললো তারা), ততদিনে ছুট্টি ভাইও প্রেম জুটিয়ে ফেলেছে- ইঙ্গো মার্কিন জুটি, এরই মাঝে অমিতও ব্যান্ড স্কোর মানে এ+ পেতে পেতে কান্ত হয়ে পড়েছে। আর অভি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিজেকে ভাবতে শুরু করেছে প্রবল শক্তিমান কিছু, মোরশেদ একটু একটু করে জাতীয়তাবাদী আদর্শ রপ্ত করে ফেলেছে, পিয়ালরা বাম থেকে ডানের দিকে ছুটতে শুরু করেছে।
সুশান্ত’দা, অভি ভাই, আল্লামা ভাইরা ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়েছে! ছাত্র লীগের পলাশ (পল্টু) ভাই রাজনীতি ছেড়ে হঠাৎ করেই প্রেম করতে শুরু করেছে; আমরা শুরু করেছি মার খেতে। বাস থেকে ধরে এনে পেটাও তাকে! ‘অমুক শালা আ’লীগের দালাল, তমুক আমাকে বলেছিল- মতায় গেলে দিখিয়ে দেবে”।
এমন এক সময়ের কথা। তখন হঠাৎ করেই ক্যাম্পাসটা কেমন নিরানন্দে ভরে গেছে। মনে হচ্ছিল হঠাৎ করে কোনো এক রাস ক্যাম্পাসটা দখল করে ফেলেছে। সবার হাসতে মানা, আড্ডা দিতে মানা, সন্ধ্যার পর প্রেমিকা যুগলের লেপ্টে থাকা মানা; অতশত মানার মাঝেও মন ছিল সবার, মানতে চাইছিল না কেউ!
পালা বদলের খেলায় শাহপারণ হল এখন অন্যদের দখলে। সব অপরিচিত মানুষের মাঝে পরিচত মুখ খুঁজি। ফাহিম ভাই যেন কেমন করেই নেতা হয়ে গেল (এখন জার্মানি), কঙ্কালসার সুমন পালও (স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংকে কাজ করেন) সেই দলে। সঙ্গে আছেন রাতুল ভাই, সৌমিত্র পালিত (এখন ইটালি না জার্মানী যেন স্কলারশিপ নিয়ে পড়ছেন) সব একদলে। এই লোকগুলো হল যখন ভ্যাকেন্ট করে দেয় তখন এই কন্ট্রাস্ট আদর্শের লেনিনদের মুনিম ভিলা আর দত্ত নিবাসেই এসে উঠতো। ফিজিক্সের সোহাগ (গ্রামীণ ফোনের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার) সেও ছিল তাদের সাথেই। ভাবতে অবাক লাগে মুহূর্তের মধ্যে চেনা মুখগুলো অচেনা হয়ে গেল। অচেনা মুখগুলোর রূঢ় আচরণে হৃদয়ে রক্তরণ। আমি ভুলতে পারি না।
যাক ওসব মান-অভিমানের কথা বলে কি লাভ! কি লাভ নতুন করে হৃদয়ে রক্ত ঝড়াতে। কি লাভ আদর্শ-ফাদর্শের বুলি আউড়িয়ে। কি লাভ! তার চেয়ে অনেক ভালো অর্ণবের লেপ ধোয়ার সেই কাহিনীটা বলি; কেউ কি কখনো আপনার লেপ ধুয়েছেন।
রোববারে ল্যাবরেটরিতে কাজ করা বাধ্যতামূলক। টানা দুই ঘণ্টার ল্যাব। শনিবারটা থাকতো বন্ধ। শুক্রবারও সেই বন্ধের তালিকায়। মাসটা ছিল এই এখন যেমন, ঠিক তেমন। শীত আসি আসি করছে।
অর্ণব; আমার বন্ধু, ফিজিক্সের সবচেয়ে মেধাবী (স্যাররা বলতো মাথায় নাকি ওর হাঁস হাটাহাটি করে)!
অর্ণবের নোংরা রুমটা ছিল সবার আড্ডাস্থল। কারণ একটাই তাকে একটু বিরক্তি উপহার দেয়। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাপড় চোপড়, শাহপরাণ হল, ক নং-১১৭।
একদিন সকালে হঠাৎ করেই তার রুমে গিয়ে হাজির তুষার, আযাদসহ আরও কয়েক বন্ধু। গিয়েই আড্ডা জুড়ে দিল। আড্ডার পসমঙ্গ ছিল ‘আমাদের লেপ ধোয়া’। সবাই তাদের লেপ ধুবে। যেহেতু অর্ণব আড্ডাতে অ্যাটেন্ড করতো না, সেহেতু সে সবার কথা ‘কানটা একটু বাকা করে ঘুরিয়ে’ শুনতো। তুষার তার লেপ ধুবে- সঙ্গে নিয়ে এসেছে দুই টা সার্ফ এক্সেল। আযাদও ধুবে। কারণ ওর না লেপটা হ্যাভি নোংরা হয়ে গেছে!- শুনছিল অর্ণবও।
কিছুণ বাদে আড্ডা ভাঙলে সবাই সবার রুমে চলে গেল। আর আমাদের অর্ণব সোজা চলে গেলে শাহপরাণের মামার দোকানে। ‘মামা, তিনটা সার্ফ এক্সেল দেও তো’। পাবনার ছেলে অর্ণব। যেই সার্ফ এক্সেল নিল অমনি সোজা বাতলিতে ভিজিয়ে দিল তার লেপ।
‘বুঝেছিস অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম লেপটা ধুতে হবে। এখন দেখবি আমার দেখা দেখি তুষার, আযাদ, ফারুক এরা সবাই ওদের লেপ ধুবে। বুঝলি সবাই আমাকে ফলো করতে চায়। তো করুক না, সমস্যা কি!’ লেপ ভেজাতে ভেজাতে এই বলছিল পাশের রুমের সোহেলের কাছে অর্ণব। এরই মধ্যে অর্ণবের লেপ ভিজে জটলা পাকিয়ে গেছে তুলা।
আর এই কথা যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো সবাই দেখতে এলো অর্ণবের সমস্যাটা কি!
তার পর থেকে অর্ণবের নাম হয়ে গেল লেপ ধোয়া অর্ণব। এলএইচ (লেডিস হল) এর মেয়েরা অর্ণবের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শুনিয়ে শুনিয়ে বলতো- এই শুনছিস, আমার না লেপটা নোংরা হয়ে গেছে। ফিজিক্সের অর্ণব ভালো লেপ ধুতে পারে, পারলে একটু চিনিয়ে দিস তো।
মন্তব্য
পদার্থ বিদ্যার ছাত্র তো?
ঠিক পদার্থের মতোই কাজ
মাঝে মাঝে কিছু ব্যাপার আমি দেরিতে বুঝি--
তার মানে অর্ণব কি এই ধরণের ছেলে ছিল (নিজেকে জাহির করা টাইপ)?
নাকি অন্য বন্ধুরা তার ধরনটা বুঝতে পেরে বোকা বানানোর জন্যই এটা করেছে?
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
ধন্যবাদ! ধন্যবাদ অমিত আহমেদ ও প্রকৃতি প্রেমিক দু'জনকেই।
অমিত আহমেদকে বলছি- না, অর্ণব ও রকম নিজেকে জাহির করা টাইপের কিছু ছিল না। সে ছিল নিতান্ত সাধারণ। তার বোকামিগুলো অন্যের কাছে নিজেকে জাহির করা টাইপের মনে হতো কেবল।
***********************************************
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...
আমাকে? প্রশ্নটা কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমিক ভাইয়ের ছিল।
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
যাক প্রশ্ন যেই করেন না কেন উত্তর দিয়ে দিয়েছি। হা.. হা..
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...
নতুন মন্তব্য করুন