বুনো জাম

এক লহমা এর ছবি
লিখেছেন এক লহমা [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২৮/০৭/২০১৩ - ৫:৪২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পূর্বকথা - মাইর খাওনের প্রস্তুতি।
সচলায়তনে বিভিন্নজনের, অচল-হাচল-সচল-এর নানা লেখায় নির্বিচারে নির্বিকারে মন্তব্য কইরতে থাকায় তাদের কারো কারো কাছ থিকা নিজের কিছু লেখালিখি হাজির করনের দাবী আসতে থাকে। (পিটানোর ইচ্ছা মৌলিক অধিকারের মৈধ্যে পড়ে, তাই না? পিটানোটা নয় কিন্তু, ভূতে পিটাইলেও না, মাইণ্ড ইট! ) বিপদ হইল এদিক সেদিক দুই-চাইরটা কবিতা লিখা ছাড়া আমারে দিয়া আর কিছু হয় বইলা এখনো পর্যন্ত কোন জোরদার প্রমাণ নাই। অথচ বার কতক জমা দিয়া বুঝছি আমার হেই হাবিজাবি কবিতা সচলের মানের উপযুক্ত হয় না। এই আব্বর তাইলে অহন করে কি? মনে আইল একটা লাইন টেস্ট করন বাকি আছে। অনুবাদ। ফালায় রাইখা কাম কি!

মডুদের কষ্ট দিতে খারাপ লাগে। টেকাটুকা নাই, আবর্জনা ঠেইলা কুল পায় না। যাউক গা, এইটা বাতিল কইরা দিলে আর ঝামেলা নাই। আর কষ্ট দিমু না।

************************************************

বুনো জাম

[Wild Plums by Grace Stone Coates]

প্রথম কোন জাম খাওয়ার আগেই আমি দু’বার জেনে গেছিলাম জিনিসটা কি।

পয়লা বার ছিল যখন ‘সানডে স্কুল’-এর দিদিমণিরা জাম কুড়াতে গেল; বাবা কাঁধ ঝাঁকিয়ে চুপ করে হেসেছিল। বাবা বলেছিল যে ওগুলো হচ্ছে বুনো জাম, আর বুনো জাম আকারে যেমন ছোট, খেতেও তেমনি যাচ্ছেতাই রকম বিচ্ছিরি। তারপর আমাদের শুনিয়েছিল দেশের বাইরে থাকার সময় তার নানা রকমের বাহারী ফল খাওয়ার গল্প।

বাবা মা দুজনেরই খুব অবাক লেগেছিল যে গৌরী কাকিমা আর স্কুলের দিদিমণি দুজনে মিলে তপুর মার সাথে জাম কুড়োতে গিয়েছিল! কাজটা যে ঠিক হয়নি আমি জানতাম, কিন্তু কেন ঠিক হয়নি সেটা জানতাম না। সেই জন্য একবার নিজে গিয়ে বুঝে নিতে চেয়ে ছিলাম। কাকিমারা আমাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে মাকে ডেকেছিল সঙ্গে যাওয়ার জন্য। মা তাদের বোঝাল যে আমরা বুনো জাম খাই না কিন্তু বাবা জানিয়ে দিল তার থেকেও বড় কথা - জামের বীচি থেকে কি হতে পারে কেউ জানে না! একবার গিলে ফেললে শেষে কিছু একটা শাপ-টাপ লেগে গিয়ে চিরকালের মত নরকে পচে মরতে হতে পারে। (সেই প্লাম না কোন ফলের বীচির একটা গল্প আছে, ঐ রকম আর কি!)

তপুর মা বলল - “কি যে কন! বীচি পেটে যাইব কেন? থু থু কইরা ফালায়া দিবেন তো!” বাবা কিছু না বলে নিঃশব্দে কাঁধ ঝাঁকিয়ে তার সেই বিশেষ হাসিটা ঝুলিয়ে দিল যেটা মা একদম দেখতে পারত না।

যে সব লোকেদের বাবা পছন্দ করত না তাদের সাথে সে কথা বলত খুব মেপে মেপে, সবচেয়ে ভদ্র আর বাছাই করা সুন্দর সব শব্দ সাজিয়ে। মা আমায় বুঝিয়েছিল যে বাবা ছোটবেলায় বাইরে বাইরে বড় হয়েছিল বলে ঐ সব সময় বাবার ভাষা ঐ রকম বিশেষ কায়দার হয়ে যেত।

মহিলারা চলে যাওয়ার পর বাবা আর মার মধ্যে কথা কাটাকাটি লেগে গেল। কথা চলছিল খুব চাপা গলায় যাতে আমি শুনতে না পাই। একসময় মা আমায় বাইরে খেলতে পাঠিয়ে দিল। বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে শুনলাম মা বলছে যে একা একা কোনায় পড়ে থাকার চেয়ে বুনো জাম খেয়ে গোল্লায় যাওয়া ভাল!

দ্বিতীয় বার আমি এই জামের কথা জেনেছিলাম তপুদের বাড়িতে, যখন তপুর মা জাম মাখছিল। সে বলল যে ঘরময় এখানে ওখানে জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় আমাদের সে ভিতরে ডাকতে পারছে না। তপুদের বাড়িতে কোন চেয়ার থাকত না। বড়ররা প্যাকিং বাক্স টেনে নিয়ে বসত, ছোটরা কুকুর বিড়ালদের পাশাপাশি সোজা মাটিতে। ওদিকে আবার, আমাদের চেনাজানাদের মধ্যে শুধু ওদের বাড়িতেই একটা এলসেশিয়ান ছিল - কোথা থেকে কে জানে! আমার ইচ্ছে ছিল বাড়িটার ভিতরে ঢোকার। এর আগে আমরা কখনো ওদের বাড়ি যাইনি। এখন এসেছি কারণ ওরা আমাদের থেকে একটা হাল আমলের মাটি চষবার যন্ত্র ধার নিয়েছিল আর বাবা সেটা ফেরৎ চাইতে এসেছিল। বাবার একদম পছন্দ ছিলনা তার যন্ত্রপাতি খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকে। বাড়ির বাইরে বাবা একটা চালা-ই বানিয়ে নিয়েছিল সেই সব রাখার জন্য। কিন্তু তপুরা কাজ শেষে যন্ত্রটা জমিতেই ফেলে রেখেছিল।

আমরা যখন ওদের বাড়ি হাজির হলাম তপুর মা তখন আমাদের দিকে পিছন ফিরে দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে ছিল - মোটাসোটা মহিলা, একটা চাদর গায়ে। সেটা আবার পিঠের দিকে ছেঁড়া ছেঁড়া মত।

তপুর বাবা বেরিয়ে এলে বাবা তার সাথে কথা বলতে রইল। সে লোক বেশ লম্বাপানা, ঝুঁকে পড়ে কথা বলছিল। তপুর মা ও ঘর থেকে বেরিয়ে আমাদের গাড়িটার পাশে এসে দাঁড়িয়ে রইল। আমাদের গাড়িতে বাবা, মা ছিল সামনের সীটে, আমি আর তোর্সা আপু পিছনে। আপু বড় বলে ওর পাগুলো ছিল অনেক লম্বা। ছড়িয়ে দিলে ডগা দিয়ে সামনের সীট ছুঁয়ে ফেলত। আমি পারতাম না। এখন পা ছড়াতে গিয়ে আপু সামনে, মা’র সীটে ঠ্যালা লাগিয়ে বসল, আর মা’র কাছে বকা খেয়ে গেল লাথালাথি থামানর জন্য। আমার পা ছোট বলে বাবার সীটটা ছুঁতে পারছিল না আর তার মানে আমি কিছুই করছিলাম না, ফলে আমায় কিছু থামাতেও হল না। রাগে আপু আমায় একটা চিমটি কেটে দিল।

আমি কাউকে কিছু না জিজ্ঞেস করেই টানা-হ্যাঁচড়া করে গাড়িটা থেকে নেমে পড়লাম। তোর্সা আপু মাকে নালিশ করতে শুরু করে দিয়েছিল কিন্তু নজর রেখে যাচ্ছিল আমি ঠিক কি কি করছি। আমি আসলে চাইছিলাম তপুর মা’র পিছনে গিয়ে দাঁড়াতে। মহিলার পায়ে কোন মোজা ছিল না। আর ‘সানডে স্কুল’-এর মেয়েরা বলত যে সে কাপড়ের নীচে আর কিছু পড়ে না। আমি দেখতে চাইছিলাম কথাটা ঠিক কি না।

মা আমায় ডেকে গাড়িতে ফিরিয়ে নিল। একেক সময় আমায় কিছু না জিজ্ঞেস করেই মা ঠিক ধরে ফেলত আমি কি ভাবছি। গাড়িতে ওঠার সময় মা আমার ড্যানা ধরে রইল, শক্ত করে, আর ফিসফিস করে বলতে থাকল “কি লজ্জা! কি লজ্জা!” মা’র মুখটা বাঁকা বাঁকা দেখাচ্ছিল কারণ যতক্ষণ মা আমার হাতটা ধরে ছিল মা চাইছিল হাসি হাসি মুখে তপুর মা’র দিকে তাকিয়ে থাকতে। আমি কত করে বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু সে কিছু শুনতেই চাইলনা। আমায় থামিয়ে দেওয়ার ফলে আমি মার সাথে মিলিয়ে নিতে চাইছিলাম যে মা যেটা ভাবছিল আমি সেইটাই করতে যাচ্ছিলাম কি না। কিন্তু শেষে আর সাহসে কুলালো না।

তপুর বাবা বলল যে সে নিজে এসে সক্কাল বেলায় যন্ত্র-টা ফেরৎ দিয়ে যাবে। আমার বাবাটি যদিও চাইছিল সেটা নিজের সঙ্গে নিয়ে আসতে, তখন তখন-ই; কিন্তু তপুর বাবা বলতে রইল যে সেটা হতেই পারে না, বিশেষ করে যেখানে তাদের কত অসুবিধার মধ্যে এই ধার-টা তারা পেয়েছে ইত্যাদি, ইত্যাদি। সে কথা দিল কালকে সে নিজে তাদের পিক-আপ ট্রাক-টায় চাপিয়ে যন্ত্র-টা নিয়ে আসবে এবং আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে যাবে। কাল তারা আবার অনেক জাম আনতে যাচ্ছে আর তাই আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে তাদের এমনিতেই যেতে হবে।

পরের দিন সকালে জলখাবারের পর বাবা, মা, আর আমি রান্নাঘরে বসে ছিলাম। তোর্সা আপু থালা কাচিয়ে নিয়ে মুরগীদের খাওয়াতে গিয়েছিল। লোক জনেরা কথা বলতে থাকলে আপু কিছুতেই চুপচাপ বসে থাকতে পারত না। তার সব সময় ভাল লাগত কিছু না কিছু করতে করতে ঘুরে বেড়াতে। মা-বাবা নিজেদের মধ্যে কথা বলে যাচ্ছিল আর আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। রোদের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর চোখ সরিয়ে নিলে সারা উঠানময় সকালের নানা ঝকমকে আলোর ঢেউ খেলতে থাকত। বাবা বলত আসলে সেগুলো খেলত আমার নিজের চোখের ভিতর, বাইরের উঠানে নয়। ফলে আমি আর বাবাকে সেগুলো দেখতে ডাকতাম না। সেদিন যখন ঢেউগুলো দেখছিলাম, মোটকা তপু হেঁটে এল একটা বেগুনী ঢেউ-এর মধ্যিখানের গলিটা ধরে। তপু ছেলেটা আমার থেকে যেমন চেহারায় বড়-সড় ছিল, তেমনি বোকামিতেও। কেউ ওকে কিছু বললে ও মুখ হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকত, কোন জবাব দিত না। চুল আঁচড়ানর কোন বালাই ছিল না আর সঙ্গে কোন রুমালও রাখত না। যা-ই হোক, মা তাকে ভিতরে আসতে বলল। আর সে গলিটার শেষে একটা পুরান পিক-আপ ট্রাক-এর দিকে আঙ্গুল তুলে দেখাল। তারপর বলল - “জাম!” আর দৌড়ে পালিয়ে গেল গলিটা ধরে।

মা-বাবা দুজনে রাস্তার দিকে সবে যেতে শুরু করেছে, আমি দৌড়ে তাদের ছাড়িয়ে সামনে চলে গেলাম। লজঝড়ে গোদা গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে কাঠালতলীর গলির মুখটায়। তপুর বাবা বসে আছে ড্রাইভারের সীটে, হাত স্টিয়ারিংয়ে ফেলা আছে। পাশে তপুর মা, একটা কুচো ছানা কোলে। তাদের মধ্যিখানে বসে আছে তপুর পরের বোন রুপু। ট্রাকের পিছনে কয়েক পুরু চাদর পেতে গৌরী কাকিমা আর দুজন মহিলা যাদের আমি চিনি না। তাদের এপাশে ও পাশে গুছিয়ে বেশ কিছু কাচ্চা-বাচ্চা। আর হ্যাঁ, যন্ত্রটা কোথ্বাও ছিল না।

“উইঠা আসেন, উইঠা আসেন, একটু ঠেইসাঠুইসা বইসা পড়েন, হইয়া যাইব নে। আমরা সব নাজিমগড়ের পশ্চিমের পুরান বাগানটায় জাম পাড়তে যাইতে আছি। পোলাপানেরা অইখানে মনের সুখে হল্লা করতে পারবে। এমনিতেও অখন তো করবার কিছু নাই, উইঠা আসেন, উইঠা আসেন। আমরা অনেক বিছ্না-পত্তর নিয়া নিছি।”

তপুর বাবা একদৃষ্টে গাড়ির সামনের দিকে তাকিয়ে বসে ছিল। যখন-ই তপুর মা কথার মাঝে দম নেওয়ার জন্য থামছিল সে বলে যচ্ছিল - “বলছিলাম তোমারে এনারা কেউ যাইব না। কিন্তু তুমি ত থামবা না! ” আর তপুর মা তাকে থামিয়ে দিচ্ছিল “ফের শুরু হইল, চুপ যাবা তুমি! ”

তপুর মা যতক্ষণ আমাদের ডাকছিলেন পুরো সময়টা আমি দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। জানি না আর কেউ কখনো এত লম্বা সময় দম বন্ধ করে থেকেছে কি না! আমি আজকে যে জামাটা পড়েছিলাম সেটার একটা সুন্দর লেসের কলার ছিল - সামনের দিক থেকে লাগাতে হত। ওটার ডানদিকের বোতামটা লাগাতে ভুলে গেছিলাম, তাই বাঁদিকের কাঁধ থেকে ঝুলে রয়েছিল। এখন পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিলাম আমার বুকের ধুক্পুকুনির চোটে সেই ঝুলতে থাকা কলারটা কাঁপতে লেগেছে।

ট্রাকটার পিছনের ডালাটা নামিয়ে রাখা ছিলো। সেটার ভিতর-গায়ে ওপরে ওঠার জন্য একটা ব্যবস্থা মতন আছে। আমি অপেক্ষা করছিলাম কখন মা তার পা-টা সেখানে তুলবে, গাড়ির পিছনের আড্ডাটায় ‘ঠেসেঠুসে‘ ঢুকে পড়বার জন্য আর বাবা তাকে কনুইয়ের কাছে ধরে টুক করে একটু উপরের দিকে ঠেলে দেবে। সব্বাই একটু হেসে উঠবে আর বিস্তর হল্লা লাগিয়ে দেবে। মেয়েদের ট্রাকের পিছনে চড়বার ব্যাপারে সব সময় এইটা ঘটে। মাকে আমি এর আগে কখনো কোন ট্রাকের পিছনে চাপতে দেখিনি, কিন্তু জানি এইরকমটাই হবে। আমার বরং চিন্তা হচ্ছিল যে আমায় না নিয়েই বাবা গাড়িতে উঠে পড়বে কি না। বাবা তো কোন রকম হাসাহাসি কি ঠাট্টা-ইয়ারকি ছাড়াই গাড়িতে চড়ে বসবে। তখন আমাকে তার আগে তুলে নেওয়ার কথা সে ভুলে যাবে কি যাবে না! তবে পিছনে বসা বাচ্চাগুলো নিশ্চয়ই আমাকে দেখতে পাবে, ঝুঁকে পড়ে হাত বাড়িয়ে দেবে আর আমার একটা হাতে ধরে ফেলে আমাকে ঝোলাতে ঝোলাতে নিয়ে যাবে। কিন্তু তোর্সা আপু - তোর্সা আপুর কি হবে তবে?

তারপর বাবার গলা শোনা গেল, আর আমার জান ফিরে এল।

বাবা বলে যাচ্ছিল, “দেখেন, আপনারা যদি জামবাগানের অনেকটা ভিতরেও যেতে পারেন, যেটা না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশী, তা হলেও কিন্তু জাম যোগাড়ের কোন ঠিক-ঠিকানা নাই। এইবারের মরসুমটা শুখাই গেছে বেশী। ফলে জাম যদি জোটেও সেগুলি দেখা যাবে খুব-ই কষ্টা আর মানুষের খাওয়ার মত হবে না।”

আমার বাহারী কলার পুরাই ঝুলে গেল - নিশ্চল এক্কেবারে। হৃদয় স্তব্ধ। বাবা আবার সব পন্ড করে দিচ্ছে।

তপুর মা বলল, “কিছু না হউক ভাল ভর্তা ত অইব।” আর তপুর বাবা আবার জানিয়ে দিল - “বলছিলাম তোমারে এনারা কেউ যাইব না। কিন্তু তুমি ত থামবা না! ” সে এবার ট্রাক ছাড়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলো।

আমি মা’র মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না, জানি তো কি দশা হয়েছে তার। কি করি! এই সময় হাসি-হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে থাকা দরকার যাতে সে ঘাবড়ে না যায়। কিন্তু অবাক কান্ড, মার মুখ দেখে মনে হোল না কোন ঝাঁজ আছ সেখানে। মুখটা দেখে আমার মনে হল যেন মসৃণ কাঁচের কিছু ধরে আছি, কিছু বুঝতে পারার আগেই আমার মনটা সেটার থেকে ফস্কে গেল। মা হাসছিল।
“সত্যি বলছি আজকে আপনাদের সঙ্গে যাওয়ার মত অবস্থায় নেই আমরা,” বলল সে। “আমাদের ডাকলেন বলে খুব ভাল লাগল। আশা করি আপনাদের বেড়ানটা খুব ভাল হবে আর প্রচুর জাম পেয়ে যাবেন।”

কথা বলতে বলতে মা এককবার টুক করে আমার দিকে তাকিয়ে নিল। তারপর আমার কাছে ঘেঁষে এসে আমার হাতটা তুলে নিল। তপুর মা’র ও চোখ পড়ল আমার উপর। “এই পিচ্চিটা আইতে পারে না আমাগ সাথে? বাচ্চারা বাইরে খেলতে ভালবাসে।”

মা’র হাত আরও চেপে এল আমার হাতের উপর। “আমি সঙ্গে নেই, নাঃ। তা ছাড়া,” আমার লেসের কলারটার দিকে একটা সাংঘাতিক নজর চালিয়ে, “এর আজকে ঠিক-ঠাক জামা-কাপড়-ও পড়া নেই।”

“ওঃ, আমরা খাড়য়া আছি, ও বদলায় নিকনা ওই বিয়াবাড়ির সাজ।” তপুর মা বলল নরম গলায়। কিন্তু মার মুখ লাল হয়ে গেল আর মাথা ঝাঁকিয়ে না করে দিল।

তপুর বাবা স্টিয়ারিঙ-য়ে হাত বোলাচ্ছিল আর মাঝে মাঝে সামনে, পাশে তাকিয়ে গাড়ি ছাড়বে-ছাড়বে করছিল। তার সর্ব্বশেষ “বলছিলাম তোমারে”-টা চাপা পড়ে গেল গাড়ির ভূড়ুম আর সম্মিলিত বিদায়ী হল্লার নীচে, আর ধূলোর ঝড় তুলে রাস্তা দিয়ে ছুটে চলে গেল তাদের লজঝড়ে গোদা গাড়িটা।

বাড়িতে ফেরার পথে শক্ত মুঠোয় মা আমার হাতটা ধরে রইল। ঘরে ঢোকার পর সে ফিরল আমার দিকে। “তুই সত্যি সত্যি যেতি আজকে ওদের সাথে -” থেমে থেমে শেষ করল সে, “ওই লোকগুলোর সাথে? ”
“ওরা তো আজকে সারাটা রাত বাইরে কাটাবে,” বললাম আমি
মা কাঁপছিল। “তুই যেতি কি না ওদের সাথে?”
“গৌরী কাকিমা ছিল ওদের সাথে,” আমি একটা বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করলাম, আমি ঠিক-ই বুঝতে পারছিলাম সেই কথা গুলো - সমস্ত কথা গুলো - যেগুলো মা বলে উঠতে পারে নি।
“যেতি কি না?”
“হ্যাঁ।”
মা অনেকক্ষণ ধরে জানালা দিয়ে, মাঠ ধরে দূর দিগন্তের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর আমার মুখের মধ্যে উৎসুক হয়ে খুঁজল কিছু। “কে জানে, হয়ত তাতে ভাল ই হত,” বলল সে। “ভালই হত হয়ত,” তারপর মুখ ফিরিয়ে খাবার টেবিলটা পরিস্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

পরের দিন খেলছিলাম রাস্তায়। বিকেলটা বেশীরভাগ দিন-ই আমি কাটিয়ে দিতাম বুড়ো বটগাছটার নীচে বা কারখানার পিছনের খাঁড়িটার পাড় ধরে, যেখানে বড় বড় জল-ফড়িং আর নীলচে মথগুলো ঠিক নাগালের বাইরে বাইরে চক্কর খেতে থাকত। কিন্তু এই দিন আমি রাস্তাটার পাশ ধরে খেলে যাচ্ছিলাম। মা আমায় কখনো এটা কখনো ওটার জন্য থেকে থেকে বাড়ির মধ্যে ডেকে নিচ্ছিল। তিন বারের বার তার মুখ দেখে মনে হল যেন স্বস্তি পাচ্ছে না কোন কারণে।
অবশেষে বলে ফেলল সে, “তপুরা গেলে আবার জাম চেয়ে বোসো না যেন।”
মা জানত যদিও যে, আমি চাইব না।
“দিতে চাইলেও নিও না কিন্তু।”
“কি বলব আমি?”
“বোলো, লাগবে না আমাদের।”
“জোর করে যদি?”
“না করে দেবে।”

তপুদের গাড়িটা যখন নজরে এল ঢিমে তালে আসছিল সেটা। পুরান গাড়ি, আর নাজিমগড় কমটা পথ না - তিরিশ কিলোমিটার, পুরো দলটাই ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। আমি ভেবেছিলাম গাড়িটা পাশ দিয়ে যাবার সময় একটু গল্প করে নেব, কিন্তু আমার কাছাকাছি আসার ঠিক আগে তপুর বাবা বোধ হয় অ্যাকসিলারেটরে চাপ লাগিয়ে দিল আর গাড়িটা কেমন হঠাৎ করে হড়বড়িয়ে ছুট্টে চলে গেল।

ট্রাকের পিছনটায় বাচ্চারা আমার দিকে মুখ করে বসে ছিল। তারা হাসছিল আর হাত নাড়ছিল। তপু নীচু হয়ে একমুঠো জাম তুলে নিল। গাড়িটার মেঝে জামে ঠাসা - কম করে অর্ধেকখানা ভরে গিয়েছিল। সে মুঠোভরা জামগুলো আমার দিকে ছুঁড়ে দিল; তারপর আরেক মুঠো। আমি কুড়িয়ে নিতে পারার আগেই সেগুলো ছিটিয়ে গেল পুরু ধূলোর আস্তরের উপর, ছোট ছোট গোল্লা পাকিয়ে লুকিয়ে গেল প্রায়।

জামগুলো ছিল ছোট ছোট, লাল লাল। আমার আঙুলের মধ্যে টের পাচ্ছিলাম তাদের টাটকা-গরম ছোঁয়া। আমার জামার সামনেটায় মুছে নিলাম সেগুলোকে তারপর চালান করে দিলাম জামার উপরে চাপান অ্যাপ্রনটার পাশ-পকেটে। লাগালাম দৌড়, গোপন রহস্যটা সামলে নেয়ার জন্য একটা মুহুর্ত শুধু থামলাম, বুকটা লাফাচ্ছে পাগলের মত, তারপর আবার ছুটলাম মাকে জানাতে আমার সদ্য আবিষ্কার।

মা আমায় ধরে থামিয়ে দিল, “ওরা তোমায় দেখেছে ওগুলো কুড়োতে?”
আমি পরিস্কার দেখতে পেলাম তপুটার মত দাঁড়িয়ে আছি আমি, মুখ হাঁ হয়ে ঝুলে গেছে, নড়ন চড়ন নেই। আমার হাসি পেয়ে গেল। হাসতে রইলাম যতক্ষণ না পকেট থেকে দুটো জাম গড়িয়ে বেরিয়ে এল। “ও হ্যাঁ, ধূলোয় মাখামাখি হওয়ার আগেই আমি এগুলো তুলে নিয়েছিলাম। আর ওদের ধন্যবাদ-ও জানিয়ে দিয়েছি, অনেক চেঁচিয়ে বলেছি যাতে ওরা ঠিকমত শুনতে পায়।”

মাকে তবু খুশী দেখাচ্ছিল না। “ফেলে দাও ওগুলো,” বলে দিল সে। “তোমার দিকে রাস্তায় ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে এমন জিনিষ নিশ্চয়ই খেতে চাইবে না তুমি?”
আমার কথা আটকে গেল। আমি মার পাশে ঘেঁষে এলাম আর ফিস্ ফিস করে জিজ্ঞেস করলাম, “ও গুলো রেখে দিতে পারি না আমি?”

মা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। আবার ফিরে আসার আগে মনে হল অনন্ত কাল কেটে গেছে। মা আমায় তার দু’হাতে জড়িয়ে নিয়ে বলল, “কলে নিয়ে গিয়ে খুব ভাল করে জলে ধুয়ে নাও। আস্তে আস্তে খাবে আর খোসাটা গিলে ফেলো না। বেশী খেতেও পারবে না তুমি, তেতো লাগবে, আর বুঝতে পারবে ওগুলো খাওয়ার মতো জিনিষ-ই নয়।”

আমি চুপ করে ঘর থেকে বের হয়ে এলাম, আমি তো জানি কোনদিন তাকে বলে উঠতে পারব না যে, আমার জিভে তাদের স্বাদ কি চমৎকার, বন থেকে আনা টাটকা মধুর মত, রোদের আঙ্গুলে মেশানো উত্তাপ জড়িয়ে আছে সেই স্বাদে, আর মিশে আছে ঝুঁকে আসা ডালের নীচের থোকা থোকা জলের রহস্য।

কারণ, আসার পথে আমি একটা জাম খেয়ে নিয়েছি।

************************************************

উত্তরকথা - কেন এই গল্প।

যদিও বই পড়তে ভালবাসি, অল্প কিছু বাংলা বই পড়া থাকলেও ইংরেজী বই প্রায় কিছুই পড়িনি আমি। কয়েক বছর আগে একটি অসামান্য উপহার পাই আমার এই মার্কিন মুলুকে বড় হওয়া কন্যার কাছ থেকে। The Best American Short Stories of the Century. পর্যায়ক্রমে পড়া আমার ধাতে নেই। উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে যেটায় চোখ আটকে যায় সেটাই পড়তে শুরু করে দিই। খানিকটা পড়ার পর হয়ত আবার অন্য আরেকটা খুলে বসি। কখনো কখনো একসঙ্গে দু-তিনটে গল্প পড়া চলতে থাকে। এই গল্পটা এক-বসায় শেষ না করে সরতে পারিনি। শেষ করার সাথে সাথে ইচ্ছে হয়েছিল অনুবাদ করে সমমনা মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে দিই, আনন্দটা ভাগ করে নিই। আমার আরো অজস্র ইচ্ছার মত এটাও সময়মত তলিয়ে গিয়েছিল। সচলায়তনের অনুপ্রেরণায় এখন সাহস করে এই প্রয়াস নেয়া গেল। মূল ইংরজীতে অতি সহজ সরল চলের গল্প। বাংলাতেও সেই মেজাজ-টাই রাখার চেষ্টা করেছি, কোন কারিকুরিতে যাইনি। শুধু চেনাজানা পরিবেশে গল্পটাকে বসানোর চেষ্টা করেছি। সেটা করার কারণ একটাই। পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল নাম-ধাম-সময় বদলে দিলে এ যেন আমাদের-ও চারপাশের আবহমানের গল্প। অনেক শ্রেষ্ঠ গল্পের-ই সম্ভবতঃ এটা একটা বড় বৈশিষ্ট্য থাকে। জানি না অনুবাদে সেটা ফোটাতে পারলাম কি না। মূল গল্প গুগল করলে অন লাইনেও পড়তে পাওয়া যায়।

লেখিকার সম্বন্ধে wiki লিঙ্ক এইখানে (http://en.wikipedia.org/wiki/Grace_Stone_Coates)

- একলহমা


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

ভুল জায়গায় চলে এসেছিল। দেখি ঠিক জায়গায় বসান যায় কি না! মন খারাপ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গল্পটা এক কথায় দারুন। আমিও এক বসায় পড়ে ফেল্লাম।এবার আপনি এরকম আরো কিছু গল্প অনুবাদ করে ফেলুন।
কিছু সরল বানান ত্রুটি আছে, পরেরবার একটু দেখবেন। কিছু বাক্যও আরেকটু সরল হতে পারে হয়তো। 'কলারটা কাঁপতে লেগেছে'র চেয়ে 'কলারটা কাঁপছে' পড়তে কি বেশি আরাম হতো?
অবশ্য এসব নিয়ে ভাববেন না, মন উজাড় করে অনুবাদ করতে থাকুন।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ নজরুলভাই।

বানান ত্রুটি: এটি আমার ছোটবেলা থেকে চালু থাকা রোগ। বহুবার করে পড়ার পরেও নজর এড়িয়ে যায়। এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে আর এক সমস্যা। অ্যাপল-এ ওয়ার্ড ডকুমেন্ট-এ বাংলা অঙ্কুর আর সচলায়তন-এ ফোনেটিক এই দুই-এর মধ্যে ছোটাছুটি করতে করতে (দুটিতে লেখার ধরণ দু'রকম) একেক সময় পাগল পাগল লাগতে থাকে। পরের লেখায় অবশ্যই চেষ্টা করব আরো যত্ন নিতে।

বাক্য সরলীকরণ: নিশ্চয়ই। এত লম্বা অনুবাদ এই প্রথম করলাম। ফলে যতবার গল্পটা পড়েছি ততবার-ই আগের থেকে সরল হয়েছে। আমি নিশ্চিত আরো কয়েকবার পড়লে কোন একবারে 'কলারটা কাঁপতে লেগেছে'-টা 'কলারটা কাঁপছে' হয়ে যেত! এবং এইরকম আরো অনেক লাইনেই ঘটত।

এত যত্ন করে এই লেখা পড়ার জন্য, কি আর বলব, অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

- একলহমা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। শুরুর ডিসক্লেইমারটা দেবার কোন দরকার ছিল না। ওটা পড়তে গিয়েই বুঝে গেছি পোস্টটা আপনার। ফলে আপনার মন্তব্য পড়ে যে পূর্বধারণা পাঠকের মনে তৈরি হয়ে আছে সেটা গল্প শুরু হবার আগেই সামনে হাজির হয়েছে। এতে পাঠক সতর্ক হয়ে গেল আর গল্পের ব্যাপারে প্রত্যাশা বেড়ে গেল। আপনিই আপনার জন্য কাজটা কঠিন করে তুললেন।

২। অনুবাদে দুটো নীতির যে কোন একটা ফলো করুন। হয় গল্পটা অরিজিন্যালের ফর্ম-কনটেন্ট-ক্যানভাসে রাখুন অথবা তাকে দেশীয় ক্যানভাসে ট্রানসফর্ম করুন। এখানে দুটোর সমন্বয়ে একটা জিনিস হওয়ায় অনুবাদের আড়ষ্টতা বেড়েছে। মূল গল্পটা পড়া পরবর্তী আপনার অনুভূতিটা আঁচ করতে পারছি। কিন্তু দুটি ভিন্ন ভাষা হিসেবে বাংলা ও ইংরেজির স্পিরিটের পার্থক্যে গল্পটার মূল স্পিরিটটা বাংলায় অনুবাদ করা সম্ভব না বলে মনে হচ্ছে।

৩। শেষের ঠ্যাঙনোটটারও দরকার ছিল না। অবশ্য গল্প আবিষ্কারের গল্প বা মূল লেখকের পরিচয় ঠ্যাঙনোটে দেয়া যায়, কিন্তু 'কেন আমি এমনটা করলাম' - এই কৈফিয়ত দেবার দরকার নেই।

৪। আপনার মন্তব্যসমূহ পড়ে আমার সাধারণ ধারণা হচ্ছে আপনার অ্যানালাইটিক্যাল অ্যাবিলিটি ভালো, আপনার রসবোধও ভালো। আপনার গদ্য ভালো হবার কথা। আপনাকে মৌলিক লেখার জন্য অনুরোধ করছি। আর আপনি যদি পদ্যে স্বচ্ছন্দ হন তাহলেও অসুবিধা নেই। কবিতাও আমরা খুব পছন্দ করি।

নিয়মিত লেখালেখি চালিয়ে যান।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

সচলায়তনে নীড়পাতায় এই আমার প্রথম প্রকাশ। দেখে অবধি মনের কি অবস্থা সে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তেমনি সম্ভব নয় লেখা, তার মানসিক প্রস্তুতি আর উদ্বেগ-এর ব্যাপারটা বোঝানো। আর সেই লেখায় আপনার এই দীর্ঘ মন্তব্য, সমস্ত দুশ্চিন্তা কাটিয়ে সাদরে ডেকে নেওয়া - আমি, কি ভাবে যে বলি, একান্তই অভিভূত।
(১) শুরুর ডিসক্লেইমার: এ ত শুরুর-ও শুরু, তাই এসেছিল। আর আসবে না।
(২) সম্পূর্ণ একমত। যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে এই অবস্থায় অরিজিন্যালের ফর্ম-কনটেন্ট-ক্যানভাসেই রাখার ইচ্ছা রাখছি
(৩) ঠ্যাঙনোটটা: তাই হবে। আর কোন কৈফিয়ত-এর কারবার নেই।
(৪) আমার আসলে একটা সমস্যা হয়েছে। আমি কবিতা ছাড়া বিশেষ কিছু লিখিনি, লিখি না। কিন্তু কবিতা নিয়েও আমার এতদিনকার লেখার ধরণ আর আমায় টানছেনা। আমা‌য় এখন যা ভাবাচ্ছে, টানছে তা হল প্রতিকবিতা। সেও কবিতা-ই বটে, কিন্ত একটা বিশেষ ফর্ম-এর কবিতা। সেটা নিয়ে আমার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সচলায়তনকে ভারাক্রান্ত করা বোধ হয় উচিত হবে না, তাই না? আপনার অনুরোধ আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। আমি অবশ্যই আমার যা সাধ্য হবে করব।
- একলহমা

মর্ম এর ছবি

অনুবাদের সবচেয়ে কঠিন কাজ বোধ হয় ভাষাটা ঝরঝরে করে আনা- যতটুকু হলে 'অন্যদের' জন্য লেখাটা 'আমাদের' জন্য হয়ে যায় সেটুকু। আটকে আটকে গেলাম অনেক জায়গায়- পরের বার হয়ত আরো স্বচ্ছন্দ লাগবে।

ষষ্ঠ পান্ডব তো বলেই ফেলেছেন যা বলার- বাড়তি কিছু বলার নেই। আমি অনুরোধ করি একটা।

'দিনলিপি' ধরণের কিছু লিখবেন? আমার ধারণা সেটা অনেক সুখপাঠ্য হবে। গদ্য তখন এমনিতেই হবে। কবিতার কথা হয়ত আর কেউ বলবে, সে দিকটা আমার অজানা। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

বেশ একটা "লাল খাতার লেখা" স্টাইলে লিখেছেন - তবে আরেকটু বড় বাচ্চার লেখা তা বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট। ভালো লাগলো।

কিন্তু একটা ব্যপার - এদেশী প্রেক্ষাপটে বাসায় মেয়েরা পায়ে মোজা পরে না, আর "কাপড়ের নীচে আর কিছু পরা" ব্যপারটা "সানডে স্কুলে" আলোচনা করা জিনিসটাও আরোপিত মনে হয়েছে।

লিখতে থাকুন, লিখতে থাকুন।আপনার লেখার হাত এত চমৎকার যে আর কিছু না হোক, আপনার করা মন্তব্যগুলো একসাথে করে দিয়ে মাঝখানে দুই এক বাক্যের সংযোগ সূত্র দিয়ে দিলেই তো সুন্দর লেখা হয়ে যায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
"কিন্তু একটা ব্যপার - এদেশী প্রেক্ষাপটে বাসায় মেয়েরা পায়ে মোজা পরে না, আর "কাপড়ের নীচে আর কিছু পরা" ব্যপারটা "সানডে স্কুলে" আলোচনা করা জিনিসটাও আরোপিত মনে হয়েছে।" - হ্যাঁ মূল গল্পে এইটা থাকলেও আমি গল্পের যে রূপটা দাঁড় করিয়েছি তাতে এইটা মিশ খায় না। অন্য কিছু করা অবশ্যই উচিত ছিল। মন খারাপ
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

আব্দুল্লাহ এ এম

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
- একলহমা

আশালতা এর ছবি

প্রথম লেখা প্রকাশের জন্য অভিনন্দন। হাততালি

কবিতা আর অনুবাদ এই দুইই মহা কঠিন কাজ মনে হয় আমার কাছে। আর এই দুই কাজই তো করে ফেলেছেন। আপনি তো মহাএলেমদার লোক! মৌলিক লেখা আপনার জন্যে কোন ব্যাপার নাকি? লিখে ফেলুন লিখে ফেলুন। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

অতিথি লেখক এর ছবি

আশালতা-দিদি, অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
এত উৎসাহ দিলেন। কি যে করি!
আপনের একটা লেখা কবে আইসবে?
- একলহমা

আয়নামতি এর ছবি

যাক লিখলেন তাহলে! অভিনন্দন প্রথম লেখার জন্য। নিয়মিত আপনার লেখা পাবো নিশ্চয়ই।
শুভকামনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আয়নামতি দিদি দেঁতো হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আপনার সাথে আমার মাঝে মাঝেই স্বগত-সওয়াল-জবাব চলে ধাক্কা দিয়ে জলে ফেলে সাঁতার শেখানোর ভয়ানক উৎসাহের জন্য। আপনি তো পাড়ে দাঁড়িয়ে - এই ত হচ্ছে, এই ত হচ্ছে - বলে হাততালি দিচ্ছেন। আমি এদিকে হাবুডুবু খেয়ে হাঁসফাঁস! কে জানে আর কখনো পাড়ে ভিড়তে পারব কি না!
- একলহমা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।