দূরবীন

এক লহমা এর ছবি
লিখেছেন এক লহমা [অতিথি] (তারিখ: রবি, ০৪/০৮/২০১৩ - ১২:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষ অতীতে চোখ চালিয়ে কদ্দূর পিছনে দেখতে পায়? বেশীর ভাগ ছবি-ই ফোকাসের বাইরে। তবু ডিজিটাইজ করে, পিক্সেল জুড়ে জুড়ে রেন্ডারিং করে নানা ভাঙ্গাচোরা টুকরো থেকে এক একটা ছবি বার করে আনা।

আর পাঁচটা দিনের-ই মত এক সকাল। আবার এক রকম নয়-ও। বই পড়া চলছে। বাবা এসে কোলে তুলে নিল
- চল।
- কোথায়?
- স্কুলে
বাবার কোলে চড়ে স্কুলে যাওয়ার পরে কি হয়েছিল পরিস্কার মনে পড়ে না। শুধু মনে পড়ে একটা ছিল নীচু বেঞ্চ আর একটা উঁচু। বাবা একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে উঁচু বেঞ্চ-টার উপর বসিয়ে দিয়েছিল। ঘরে আরো অনেক বাচ্চা ছিল। তারা সব নীচু বেঞ্চে বসেছিল। জ্বর হয়েছিল বলে আমার মাথাটা সোজা রাখতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই কারো দিকে বিশেষ তাকাইনি। একসময় কেউ একজন সামনে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়েছিল। কতকগুলো প্রশ্ন। মনের আনন্দে প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে গিয়েছিলাম। আর কখনো অত আনন্দে অত নিশ্চিন্তে কিছু লিখিনি। জ্বর একটু কমেছে তখন; বাবা বাড়ি ফিরেছিল কাঁধে বসিয়ে নিয়ে। ফিরে খুশীতে ফেটে পড়েছিল। মা-র কোলে আমায় তুলে দিতে দিতে জানিয়েছিল ভর্তির পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি। হাসি আর আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল বাড়িতে। খুব ভাল লেগেছিল সেদিন। বুঝতে পারিনি যদিও, প্রথম হওয়া কাকে বলে, কি করে হতে হয়। কিন্তু ভাল লেগেছিল খুব! তার পর সারা জীবন ধরে বুঝে চলেছি প্রথম হওয়া কাকে বলে বা আরো ঠিক করে বললে - প্রথম না হওয়া কাকে বলে। সেই প্রথম-বারের পর আর প্রায় কখনোই কোন কিছুতেই প্রথম হইনি। দেশভাগের ফলে সর্বস্ব খুইয়ে, উদ্বাস্তু হয়ে চলে এসে, একটা অজানা ভূখন্ডে মাথা উঁচু করে চলার লড়াই লড়তে থাকা বাবা আমার সবসময় আশা করে গিয়েছে এইবার, এইবার তার এই প্রথম সন্তান এই পরীক্ষাটায় প্রথম হবে। আর সেই চাপে চাপে আমার সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া, সমস্ত পরীক্ষা চিরকালের মত বিষ হয়ে গেল।
কোন আনন্দ যে কি ভাবে চিরবিষাদ হয়ে যায়!

কিছু আনন্দ আবার অদ্ভুত চল ধরে। এক সময় সেটা হয়ে ওঠে লজ্জার। তার পরে সেটা হয়ে যায় একটা স্নেহের ব্যাপার। এই যেমন ছাগলের লাদির ব্যাবসা।
[ ছাগু-র নয় কিন্তু। ছাগুর লাদি নিয়া ব্যাবসা অনেক বড় ব্যাপার। সে ব্যাপারে বিশদে আমি আগে জানতামনা, যদ্দিন না চরম উদাসের “এসো নিজে করি ০৮ - কিভাবে ত্যানা প্যাঁচাবেন ” পড়ি (http://www.sachalayatan.com/udash/47904)। সে এক অছাম কান্ড- কারখানা। আমার এ গল্প সিরেফ ছাগলের লাদি নিয়ে। ]
ক্লাস ওয়ান-এ পড়ি। এক বন্ধু শেখাল কি করে খাতার আয়তাকার সাদা পাতা ছিঁড়ে বর্গাকার করে নিয়ে এবার চার কোণা থেকে দুই কর্ণ বরাবর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ফালি দিয়ে, চার ত্রিভুজ-এর (আবার! কি জ্বালা!) আলাদা হয়ে যাওয়া আট কোনার একটা ছেড়ে একটা করে পেঁচিয়ে নিয়ে এসে (পারা যায় না আর!) কাগজের মাঝখান-টায় তলা থেকে কাঠির মাথায় বাঁধা একটা তার ঢুকিয়ে এনে (আমি কোন বিশেষ ইঙ্গিত করি নাই এখানে, করি নাই, করি নাই, করি নাই) সেই তারের মাথায় ঐ চার কোনা গেঁথে দিলেই চমৎকার একটি চরকি তৈরী হয়ে যায়! মুস্কিল হল ত্রিভুজের কোনারা তারের বন্ধন থেকে বের হয়ে আসতে চায়। এইখানে এল আমার অসামান্য কারিগরী দূরদৃষ্টি। বাড়ির রোয়াকে বসে কাজ চলছিল। একটি ছাগল সামনের রাস্তায় লাদি ফেলতে ফেলতে চলে গেল। ব্যাস! আমি একটি লাদি এনে তার-এর মাথায় গেঁথে দিলাম। আমার ব্যাবসা চালু হয়ে গেল! আমায় এনে দিতে হত দুটো কাগজ। একটা দিয়ে খরিদ্দারকে চরকি বানিয়ে দিতাম, আর একটা নিজের জন্য রেখে দিতাম। যারা কাগজ আনতে পারতনা তাদেরকে আমার জমান কাগজ থেকে বানিয়ে দিতাম। বিনিময়ে চানাচুর ঝুড়িভাজা ইত্যাদি। আমার ভলান্টিয়ার বাহিনী ছাগলের লাদি কুড়িয়ে আমাদের বাড়ির ভিতরের উঠানে এনে জড় করত। এই করে আমার একটা দল-ও তৈরী হয়ে গেল। তারপর যা হয়! ব্যাবসা বেশী বড় হলে আইন রক্ষকদের নজরে পড়ে যায় - পরিবেশ দূষণের দায়ে মা আমার ব্যাবসাটা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিল। সেই যে চোট খেলাম আমার ব্যাবসা বুদ্ধিটার-ই চোদ্দ্টা বেজে গেল!

দিনে দিনে দলটা বেশ বড় হয়ে গেল। ক্লাসে মনিটর বনে গেলাম। আঃ! নেতা হওনের স্বাদ-ই আলাদা!। নেতাগিরির প্রথম পাঠেই যা বুঝার বুঝে গেলাম - ছাড় দিতে হবে। আমায় টিফিন খাওয়ালে ক্লাসে অঙ্ক-খাতার মধ্যে লুকিয়ে গল্প বই পড়া যাবে। একবার জল খেয়ে এসে পরে পরেই বাথরুম? হবে। গিয়ে ফেরার নাম নেই? ঠিকাছে। কিন্তু সেই পুরানা কিসসা। ক্রিটিকাল সাইজের থেকে বড় হয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ ঢিলা মেরে যায়। মনিটরী-টা গেল। সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি - How not to monitor your class. নেতাগিরির ঐ শেষ। তারপর থেকেই আমজনতা।

ছোটবেলায় আম খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা।
নাঃ। সে গল্প আরেক দিন (যদি মডুরা অ্যালাউ করেন)।

একলহমা


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চরকি বানানোর বর্ণনা পড়ে মনে হচ্ছিলো কাগজের পারমানবিক বোমা টাইপ কিছু একটা বানাচ্ছেন। এতোটাই জটিল।
শেষ হওয়ার পরে দেখি সামান্য চরকি। কত্তো বানাইছি!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

সহজ জিনিষকে জটীল করে তুলেছি। ধিক্, ধিক্, শত ধিক্ এমন গল্প লিখিয়েকে! মন খারাপ
- একলহমা

রণদীপম বসু এর ছবি

ছাগলের লাদির ব্যবসা ! আহ্, অকালে একটা অভূতপূর্ব ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কষ্ট পেলাম ! হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

কষ্টের হাসি দিলেন ক'ন তাইলে! দেঁতো হাসি
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগল হাসি
আয়ন

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তানিম এহসান এর ছবি

আরও লিখুন, এত কম লেখা দিয়ে হবে না। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
লেখার ইচ্ছা তো আছে, পারব কি না কে জানে! আপনার উৎসাহ পেয়ে খুব ভাল লাগছে।
- একলহমা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
- একলহমা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

চরকি নির্মাণ প্রক্রিয়ার বর্ণনায় কয়েক চক্কর খেয়ে বুঝতে পারলাম এটা চরকি। দোষ বর্ণনার নয় চরকির। চক্কর খাওয়াটাই সতসিদ্ধ। ব্যবসাবুদ্ধিটা দারুণ। এরকম অবহেলায় কত প্রতিভা ঝরে যায়।

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

হ, সব দোষ চরকির! আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
"এরকম অবহেলায় কত প্রতিভা ঝরে যায়।" ওঁয়া ওঁয়া
- একলহমা

মেঘা এর ছবি

চরকি তো বিরাট জটিল কাজ! পারি না।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

অতিথি লেখক এর ছবি

হ, জটীল! চোখ টিপি
- একলহমা

মালাকাইটের ঝাপি এর ছবি

ছাগলের লাদির বানিজ্জ। আহা কি বুদ্ধি । সাধু সাধু
দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

খাইছে
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

মেঘাদিদির মন্তব্যের উত্তর এই খানে পোস্টায় দিছিলাম। আশা করি এইবার ঠিক জায়গায় বসাইছি।
- একলহমা

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

কি বানিজ্জটাই না করলেন!!! ব্লাকবেঙ্গল ছাগলরা খুশি হইয়া যাইত

অতিথি লেখক এর ছবি

খাইছে
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

ইস আপনি যদি ছাগলের লাদির বাণিজ্য ধরে রাখতে পারতেন তবে এখন আপনার জন্য কত সুবর্ণ সুযোগ ছিল!!!
খাইছে
ইসরাত

অতিথি লেখক এর ছবি

কন কি! অ্যাঁ
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
- একলহমা

স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট এর ছবি

ভালো হইছে। তবে, এত ছুটু কেন!

-------------------------------------------------
ভালবাসা কেবল নিজেকে দেয় এবং নিজ থেকে নেয়-
ভালবাসার যেমন নিজেরও কিছু নেই, তেমনি সেও কারো নয়;
কেননা, ভালবাসার জন্য শুধু ভালবাসাই যথেষ্ট।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
বড় ভাব, বড় কথা আসে না মাথায় - ছুডু মাথা।
- একলহমা

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

মজারু!!

আপনার বর্ণনা মাফিক চরকি বানাইতে গিয়া চক্করে পইড়া খাবি খাইলাম। তাইরপর একডা পেলেন বানাইয়া দিয়া পোলার হাত থাইকা রেহাই পাইলাম। - তবে ছাগলের লাদি লই নাইক্কা।

আহা, কি বেওসা যে বানাইসিলেন----

তানিম ভাইয়ের লগে গলা মিলাইলাম - এত কম লেখায় চইলত না। আরো চাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখার সময় বুঝি নাই যে এমন চক্কর খাওয়ান চরকি বানান-র প্রণালী নামাইছি, এমনি এমনি কি আর লম্বর কাটা যাইত! মন খারাপ
খাইছে
আপনাদের উৎসাহে কেরমে কেরমে ... ... হাসি
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

আয়নামতিদিদিকে লেখা প্রতিমন্তব্য এইখানে চলে এসেছিল। ঠিক করে দিলাম
- একলহমা

আয়নামতি এর ছবি

এ তো টুকুন লেখা!
সব্বাই যেভাবে জটিল জটিল বলছেন ব্যাপারটা মোটেও সেরকম নয়, বলেন একলহমাদি?
কাগজটা এভাবে নিয়ে সেভাবে ভাঁজ করে ঐভাবে গুঁজে দিলেই হয়ে যাবে চরকি। ঠিক না! দেঁতো হাসি
আপনার পেট ভর্তি অনেক কথা, অনেক লেখার রসদ রয়েছে হাতখুলে দিতে থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আয়নামতিদিদি, কোথায় ছিলা তুমি! এই সোজা কামটা কেউ কইরা উঠতে পারল না!
ভয় করে রে দিদি! তোমাদের সব্বার এত গুণ! আমার ত তেমন কিছু নাই! কি বলতে কি বলে বসে থাকব, লজ্জার সীমা থাকবে না!
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি কিন্তু চরকি বানাতে পারলাম না!

-নিয়াজ

রাত-প্রহরী এর ছবি

'দূরবীন' লিঙ্ক এর জন্য ধন্যবাদ। গুরু গুরু
এটা আগে পড়লে ১৪ই আগষ্ট / ১৫ই আগষ্ট নিয়ে জটিলতাটা আমার হতোনা।
আপনি আরো লিখুন। লিখে আমাদের ভাসিয়ে ফেলুন।
আপনার জন্য আমার শুভকামনা।

-------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।