ঈশপের গল্পগুলি একই সাথে সমকালীন এবং চিরকালের। বারে বারে পড়ার মত গল্পগুলিকে একালের বাংলা ভাষায় আমার নিজের মত করে ধরে রাখার ইচ্ছের ফসল এই লেখা।
অনুবাদ ইংরেজী পাঠের অনুসারী, আক্ষরিক নয়। সাথে আমার দু-এক কথা।
গল্পসূত্রঃ R. Worthington (DUKE Classics)-এর বই এবং আন্তর্জাল-এ লভ্য http://www.aesop-fable.com -এ ইংরেজী অনুবাদের ঈশপের গল্পগুলি।
গল্পক্রমঃ R. Worthington-এর বইয়ে যেমন আছে।
----------------------------------------------------------------
(৭৬)
The Fox and the Leopard
শেয়াল আর চিতাবাঘ
এক শেয়াল আর এক চিতাবাঘের মধ্যে তর্ক চলছিল কে বেশী সুন্দর তাই নিয়ে। চিতাবাঘ তার গায়ের একটার পর একটা বাহারী ছবির মত দাগ দেখিয়ে প্রমাণ করতে রইল তাকে দেখতে কত সুন্দর। শেয়াল তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “রাখ তোর গায়ের দাগ, আসল সৌন্দর্য চেহারার নয় মগজের, যেটা আমার আছে, তোর নেই।”
প্রাচীন বচনঃ কে কি পরে আছে তাই দেখে তাকে বিচার করতে নেই।
আমি বলিঃ ধূর্তামিকে মগজের সৌন্দর্য বলে চালানো বিশেষজ্ঞরা যে কোন উপায়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে ছাড়বেই।
(৭৭)
The Mountain in Labour
পাহাড়ের বাচ্চা হবে
একদিন একটা পাহাড় খুব কাঁপছিল। অনেক আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। সব দিক থেকে লোকেরা এসে জড় হল পাহাড়ের নীচে। সবাই চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, ঘটনাটা কি? পাহাড়ের ছানা-পোনা হবে নাকি? তবে ত ভয়ংকর কিছু জন্মাবে! কি হবে এখন? একটু পরে সবাই দেখে কিছুই হল না, শুধু পাহাড় থেকে একটা ইঁদুর দৌড়ে বেড়িয়ে এল।
প্রাচীন বচনঃ ফালতু ব্যাপার নিয়ে মাতামাতি করার কোন মানে হয় না।
আমি বলিঃ ফালতু ব্যাপার নিয়ে মাতামাতি করার নাম টক-শো। সেখানে বিশেষজ্ঞরা পাহাড় কাঁপিয়ে ইঁদুর ছাড়েন।
(৭৮)
The Bear and the Two Travelers
এক ভালুক আর দু’জন একসাথে বেড়ানো লোক
দু’জন লোক একসাথে বেড়াতে বের হয়েছিল। হঠাৎ তারা দেখে একটা ভালুক তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। সঙ্গীদের একজন চটপট একটা গাছে উঠে পড়ে ডাল-পালার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলল। অন্যজন দেখল ভালুকের হাত থেকে আজ আর তার রক্ষা নেই। সে সটান মাটিতে শুয়ে পড়ল। ভালুক এসে তার গায়ে বারে বারে নাক ঠেকিয়ে, সারা শরীর শুঁকে শুঁকে দেখল। লোকটা এই গোটা সময়টা নিশ্বাস বন্ধ করে যতটা পারে মড়ার মত হয়ে পড়ে রইল। ভালুকটা একটু পরে তাকে ফেলে রেখে চলে গেল। এমন হতে পারে যে, ভালুক মরা কোন কিছু খেতে চায় না। একসময়, ভালুকটা চলে গেছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর, গাছে চড়া লোকটা গাছ থেকে নেমে এল। মাটিতে শুয়ে থাকা বন্ধুর কাছে গিয়ে ঠাট্টার সুরে সে জিজ্ঞেস করল যে ভালুকটা তার কানে কানে কি বলে গেল। তার বন্ধু উত্তর দিল, “ভালুক আমায় একটা উপদেশ দিয়ে গেল। সে বলে গেলঃ যেই সঙ্গী তোমায় বিপদের মুখে ফেলে সরে পড়ে, তার সাথে কোথাও বেড়াতে যেও না।”
প্রাচীন বচনঃ বিপদে বোঝা যায় কে সত্যিকারের বন্ধু।
আমি বলিঃ যারা বিপদে পড়ার আগে বুঝতে পারে না কে বন্ধু আর কে বন্ধু নয়, তাদের পক্ষে বাঁচা কঠিন হয়ে যায়।
(৭৯)
The Sick Kite
অসুস্থ চিল
একটা চিলের খুব অসুখ করেছে, বাঁচে কি বাঁচে না অবস্থা। চিল তার মা’কে ডেকে বলল, “মা গো! কেঁদো না, তুমি বরং ঠাকুর দেবতাদের ডেকে বলো আমার অসুখ সারিয়ে দিতে।” তার মা উত্তর দিলো, “হায় রে! এমন স্বভাব তোর! যখন যেই দেবস্থানে খাবার উৎসর্গ করা হত, তুই ছোঁ মেরে নেমে এসে কিছু না কিছু তুলে নিয়ে যেতিস। এমন কোন ঠাকুর-দেবতা নেই যার সাথে তুই এই কাজ করিস নি, যাকে তুই রাগাস নি। এখন কোন দেব-দেবী তোকে দয়া করবে বল?”
প্রাচীন বচনঃ সম্পদের সময়ে বন্ধুত্ব করা থাকলে তবেই বিপদের সময় সেই বন্ধুদের সাহায্য চাওয়া যায়।
আমি বলিঃ ক্ষমতাবানদের পিছনে লাগলে তারা আর দরকারের সময় অনুগ্রহ করবেন না। তাই, যদিও মিডিয়ার কাজ ছোঁ মেরে সব রকম খবর সংগ্রহ করা, তারা আজকাল হিসেব করে খবর যোগাড় করেন।
(৮০)
The Wolf and the Crane
নেকড়ে আর সারসের গল্প
একবার এক নেকড়ের গলায় এক টুকরো হাড় আটকে গিয়েছিল। নেকড়ে তখন এক সারসকে ডেকে আনল। নেকড়ের মুখের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে লম্বা ঠোঁট দিয়ে গলা থেকে হাড় বার করে নিয়ে আসতে হবে। নেকড়ে সারসকে বলল যে কাজটা ঠিক মত করতে পারলে তাকে সে অনেক পুরস্কার দেবে। সারস হাড়টা বের করে এনে তার পুরস্কার চাইল। নেকড়ে তখন শয়তানী হাসি হেসে দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, “ভাল করে ভেবে দ্যাখ কি বলছিস। নেকড়ের মুখ-এর ভিতর থেকে, তার কামড় না খেয়ে, নিশ্চিন্তে মুন্ডু বার করে আনতে পেরেছিস। তুই ত বিরাট পুরস্কার এর মধ্যেই পেয়ে গেছিস!”
প্রাচীন বচনঃ শয়তানের সেবা করলে পুরস্কারের আশা কোরো না। যদি কোন ক্ষতি না সয়ে বেঁচে যেতে পার, সেটাই সৌভাগ্য মেনো।
আমি বলিঃ শয়তান যখন বিপদে পড়ে লোভ দেখায়, যতই বোঝাও, বোকার দল টোপ গিলবেই। নিজেদের জান-মান-ভবিষ্যৎ বাজি রেখে শয়তানের সুবিধা করে দেবে। তার পর নিজেরা ত ঠকবেই সেই সাথে শয়তানের জোর বাড়িয়ে সকলের সর্বনাশ ডেকে আনবে।
মন্তব্য
৭৬ নম্বরে চিতা কিন্তু শেয়ালকে খানিকটা 'মারধোর' ও করতে পারত। অনেক সময় অধিকতর শক্তিশালী কাউকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করাটা বৃথা যায়- এরা গায়ের জোরে জিততে চায় সবকিছু।
বরাবরের মতই ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা
[মেঘলা মানুষ]
হ্যাঁ, সেইটাও ঠিক!
আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ইয়ে দাদাভাই, ৭৭ নাম্বার গল্পে বাচ্ছার জায়গায় বাচ্চা হবে, তাই তো?
কথা সত্যি।
বরাবরের মত তোমার কথাগুলোই ভাল লাগল বেশি।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
বাচ্ছা --> বাচ্চা
অবশ্যই, সফিনাজ-দিদি! ঠিক করে দিয়েছি।
... ...
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এবারের গল্পগুলো বেশী পরিচিত, তারপরও ভালো লাগলো।
ইয়ে, একটা টাইপো ছিল - ৭৬ নম্বরে " কে কি পড়ে আছে তাই দেখে তাকে বিচার করতে নেই।" এখানে বোধহয় 'পরে' হবে।
৭৭ নম্বর গল্পটাই কি "পর্বতের মুষিক প্রসব" প্রবাদের পেছনের কথা? (চউ দার পেছনের কথা না কিন্ত!)
____________________________
৭৬ নম্বর - ঠিক করে দিয়েছি এখন। অনেক ধন্যবাদ, প্রোফেসর!
৭৭ নম্বর - হ্যাঁ, এই গল্পটাই আমি ছোটবেলায় "পর্বতের মুষিক প্রসব" নামে পড়েছি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আপনার বলা কথাগুলো ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন