লেখক -
চিঙ্গিস আইতমাতভ
বরং বলি, চিঙ্গিস টোরেকুলোভিচ আইতমাতভ, টোরেকুলপুত্র চিঙ্গিস আইতমাতভ।
স্তালিন জমানায় দেশের শত্রুদের নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রীয় খুনীবাহিনী এন কে ভি ডি-র হাতে নিহত সোভিয়েত কর্মী টোরেকুল আইতমাতভের ছেলে চিঙ্গিস আইতমাতভ - যিনি বাবাকে কখনো ভোলেননি।
‘যন্ত্র-বিশারদ’ আইতমাত কিম্বিলদিয়েভ এর ছেলে সমাজতন্ত্রী টোরেকুল -এর ছেলে যাঁর পাহাড় ও স্তেপ-এর আখ্যান নামে গল্প-ত্রয় পেয়েছিল লেনিন পুরস্কার- সেই চিঙ্গিস আইতমাতভ।
কির্গিজিয়ার একাধিক সোভিয়েত-বিমুখ জেলায় টোরেকুল-এর বুদ্ধিমত্তা আর দৃঢ়তায় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল জোতদার-জমিদার-কুলাকদের হাত থেকে জমি ছিনিয়ে এনে সাধারণ কৃষকের যৌথখামার।
আরাভান-এর গ্রামে গ্রামে তাঁর নামে গান বাঁধা হয়েছিল -
আইতমাতভের শোনো ডাক
নিজের ভাগ্য গড়ো নিজের হাতে
এই দেশ এই জমি তোমার আমার।
সেই টোরেকুল-এর অপরাধ? স্তালিন জমানায় অপরাধ করতে লাগত না। যাঁকে জেলে ভরা হয়েছে তাঁর প্রতি খারাপ কথা না বলাই যথেষ্ট হত নিজের জেলে যাওয়ার জন্য - খুন হয়ে যাওয়ার জন্য। আর তার সাথে নিজে যদি অন্যদের ঈর্ষা জাগানোর মত বুদ্ধি-ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন তবে ত হয়েই গেল। তার পরেও ছিল খুনি-বাহিনীর কোটা পূর্ণ করার দায়। কোটা পূরণ করে উঠতে না পেরে কত খুনি যে এক সময় নিজেই খুন হয়ে গেছে!
একটা চিঠি, একটা লেখা - রাশি রাশি বুলেট ঝরিয়ে দিত। শব্দ অসীম ক্ষমতা ধরে। চিঙ্গিস আইতমাতভ এটা বুঝেছিলেন খুব ছোটবেলা থেকে, বুঝেছেন বারে বারে। এবং, প্রয়োগ করেছেন এই অমোঘ অস্ত্রকে অতি যত্নে, অব্যর্থ অভিঘাতে। বিদায় গুলসারি এই অস্ত্রচালনার অংশ - পিতৃতর্পণ - আরও বেশী কিছুই হয়ত।
স্থান -
পাহাড় আর স্তেপ
দক্ষিণ সাইবেরিয়া থেকে বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে ঘুরতে কিরগিজ উপজাতি ছড়িয়ে পড়েছিল মধ্য এশিয়া জুড়ে। নবম শতাব্দীতে উইঘুরদের পরাজিত করে সম্ভবতঃ তাদের সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত বিস্তার ঘটেছিল। তারপর থেকে মার খাওয়া আর ছুটে বেড়ানোর ইতিহাস। কখনো মঙ্গোল, কখনো চৈনিক, কখনো উজবেক আগ্রাসনে কির্ঘিজরা মিশে গেছে নানা জাতিসত্ত্বায়। এই মিশ্রণ পার করে নিজেদের কির্ঘিজ বলেই পরিচয় দিতে পারা মানুষগুলো অবশেষে জায়গা খুঁজে নিয়েছিল পাহাড় আর স্তেপের চারণভূমিতে। রেশম ব্যবসার পথ ধরে যুগে যুগে এখান দিয়ে নানা জনজাতির চলাচল, নানা সামরিক অভিযান। কখনো সম্রাট আলেকজান্ডার এসে থেমে গেছে এই কেন্দ্রভূমির কোন শহরে - আলেক্সান্দ্রিয়া এশ্চেট-এ, কখনো তালাশ নদীর প্রান্তরে চৈনিক বাহিনীকে থামিয়েছে আরবের সৈন্য বাহিনী। আগ্রাসন-এর পর আগ্রাসন-এ তাড়া খেয়ে বেড়িয়েছে এখানকার অধিবাসীরা।
এই তাড়া খাওয়া জীবন থেকে উদ্ধার পাওয়ার গল্প প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলেছে কির্গিজ মহাকব্যে। মানাস মহাকাব্যে বীরশ্রেষ্ঠ মানাস তিন পুরুষ ধরে লড়াই করেন খিতান আর ঐরাত মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে; সঙ্ঘবদ্ধ করেন চল্লিশটি উপজাতিকে। আজকের স্বাধীন কির্গিজ প্রজাতন্ত্র এই মহাকব্যের আলোয় তুলে ধরে নিজের সত্ত্বাকে। সে দেশের পতাকায় চারণ-জীবনের তাঁবুর প্রতীক-কে ঘিরে থাকা সূর্যের গায়ে ফুটে থাকে চল্লিশ রশ্মি।
কির্ঘিজিয়ার দুই বীর। একজন উপকথার - মানাস - শত্রু সংহার করেন ঘোড়ায় চড়ে তরবারি হাতে। অন্যজন বাস্তবে - চিঙ্গিস আইতমাতভ - লড়ে যান শব্দ সাজিয়ে লেখার পর লেখায়। কির্ঘিজিয়ার রাজধানীতে দু'জনের প্রতিমূর্ত্তি উদ্বুদ্ধ করে আজকের প্রজন্মকে।
কাল -
স্তালিন যুগ (এবং তার পর)
কির্ঘিজদের মার খাওয়া চারণজীবন মুক্তির আশায় উচ্ছ্বসিত উঠেছিল জার সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার উত্থানে। পরম উৎসাহে তারা বরণ করেছিল সোভিয়েত আদর্শকে। আর তারপর পেয়েছিল চরম বঞ্চনা আর মর্মান্তিক আশাভঙ্গ - স্তালিনের সোভিয়েত রাশিয়ার থেকে।
স্তালিনের রাশিয়া প্রবল গতিতে এগোতে চাইছিল নূতন মানুষ গড়ায় - সোভিয়েত মানুষ গড়ায়। যে কোন দেরীকে দেখছিল সন্দেহের চোখে। বিপরীত মত তো পরের কথা, যে কোন প্রশ্নকে ধরা হচ্ছিল দেশদ্রোহিতা হিসেবে - শাস্তি - ‘মরিবে সে জনা, অথবা নির্বাসনে’।
অনেক আশা নিয়ে সোভিয়েতে যোগ দেয়া মধ্য এশিয়ার দেশগুলির কাছে এ ছিল হঠকারিতা, আহাম্মুকী! নূতনকে বরণ করতে অতীতকে আমূল ভুলতে হবে, ছুঁড়ে ফেলতে হবে! কেন? এ ত নিজের পূর্বপুরুষদের প্রতি, সত্ত্বার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা!
তারা প্রশ্ন তুলেছিল কেউ কেউ। নীরব সমর্থন ছিল সেই সব প্রশ্নে অনেকের। শাসকের কাছ থেকে নেমে এসেছিল চরম আঘাত। নির্মম ভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল কির্ঘিজিয়ার বৌদ্ধিক অগ্রবাহিনীকে। যাতে কোনদিন আর সেখানে কেউ সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা কথা বলার চিন্তা পর্যন্ত না করতে পারে।
কিন্তু, ফাঁক থেকে গিয়েছিল।
সাধারণতঃ দেশের শত্রু বলে যাঁদের চিহ্নিত করে দেয়া হত তাদের আত্মপরিজনরাও রেহাই পেত না। নিঃশেষে উচ্ছেদ। টোরেকুল-এর পরিবার পরিজনদের উপরেও নেমে এসেছিল অত্যাচার আর তুলে নিয়ে গিয়ে হাপিশ করে দেয়ার খড়্গ। সম্ভবত চিঙ্গিস-এর দুই কাকা খুন হয়ে যান। একবার আর একটু হলেই চিঙ্গিস-ও হারিয়ে যেতেন। কির্ঘিজিয়ার সৌভাগ্য, জেরাকারীরা শেষ ধাপটার আগে রেহাই দিয়েছিল। আর ভুল করেননি চিঙ্গিস। অপেক্ষা করেছেন স্তালিনের মৃত্যুর। যত্ন করে শিখেছেন রাশান ভাষা, আয়ত্ব করেছেন শব্দের প্রয়োগ। ভাষার মায়াজালে শাসককে রেখেছেন বিভ্রান্ত করে। অবশ্য রাশিয়াও বদলে যাচ্ছিল।
স্তালিনোত্তর যুগের মুগ্ধ সোভিয়েত শাসকরা একের পর এক তাঁকে দিয়েছেন চূড়ান্ত সম্মান। স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধতা হালে পানি পায়নি সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বরাভয় হস্তচালনে। ‘বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ’-এর প্রচারে অভিযুক্ত ‘দেশের শত্রু’ তরিকুল-এর ছেলে চিঙ্গিস আইতমাতভকে - প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্ত করেছেন সোভিয়েত রাশিয়ার শেষ প্রেসিডেন্ট, মিখাইল গর্বাচেভ। যিনি চিঙ্গিস আইতমাতভ-কে বন্ধু বলে গণ্য করতেন; যিনি এনেছিলেন পেরেস্ত্রইকা, গ্লাসনস্ত, মুক্ত বাতাস। যে বাতাসে পাল তুলে একদিন স্বাধীন হয়েছিল কির্ঘিজিয়া। স্বাধীন কির্ঘিজিয়ায় চিঙ্গিস আইতমাতভ অপবাদ মুক্ত করেছিলেন বাবার নাম।
গল্প -
বিদায় গুলসারি
গুলসারি - সে তো সোনালী ঝুমকা ফুল? প্রায় তাই। ওই রকম সোনালী রং-এর এক ছটফটে ঘোড়া। জন্মের পরেই সে তুলে নিয়েছিল এক দুলকি চাল। জাত দৌড়বাজ। অপেক্ষা শুধু ঠিক লোকটির। এসে গেল সে ও - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ফেরত তানাবাই বাকাসভ।
এ সব অবশ্য আমরা জানছি তানাবাই-এর স্মৃতি চারণ থেকে। আজকে দুজনে মিলে চলেছে আলেক্সন্দ্রভকা থেকে তানাবাই-এর বাড়ি, স্তেপের প্রান্তর আর পাহাড় পার হয়ে। কিন্তু পার হওয়া কি আর হয়ে উঠবে? গুলসারি যে বুড়ো হয়ে গেছে, তানাবাইও।
তানাবাই চলছে আর ভাবছে - নানা কথা - গুলসারির, নিজের। তার ভাবনার সূত্র ধরে উঠে আসে আদর্শ বাস্তবায়নের নামে নেতৃত্বের অবিমৃষ্যকারী হঠকারী সিদ্ধান্তের পরিণতির বিবরণ। ধান্দাবাজদের হাতে সৎ মানুষদের লাঞ্ছনা আর বিতাড়ন। সাম্যবাদ-এর আদর্শ ধরে রাখার জন্য শেষ নিঃশ্বাসটা পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার সাথে সাথে অবিচারের শিকার বন্ধুর জন্য কিছু করতে না পারার যন্ত্রণার কাহিনী।
আইতমাতভের গল্পের অন্যতম সম্পদ তার চিত্রকল্প। কথায় ছবি আঁকেন।
“… পরে সে নদী থেকে আঁজলাভরে জল পান করল। ঠাণ্ডা কনকনে জল, তার সঙ্গে মুড়মুড়ে পাতলা বরফের টুকরো। জল কলকল শব্দে তার কাঁপা কাঁপা আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে গলে যাচ্ছিল, আবার সে জল তুলে মুখে দিল, জল পড়ে গা ভিজে গেল।" - মনে হয় যেন পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে পাচ্ছি।
আছে চিরন্তন অসহায়তার গল্প। লেখকের নিজের জীবনের অপূর্ণ প্রেমের বেদনা এ গল্পের কেন্দ্রীয় মানুষটিও ভোগ করেছে। আইতমাতভ প্রেমে পড়েছিলেন কির্গিজ নাট্যমঞ্চের বিখ্যাত অভিনেত্রী বিউবিউসার। কিন্তু বিবাহিত চিঙ্গিস-এর এই বিবাহ-বহির্ভূত প্রেম দল ভালো চোখে নেবে না তাই আইতমাতভকে বাঁচাতে বিউবিউসা আইতমাতভকে ফিরিয়ে দেন। তানাবাইকেও ফিরিয়ে দেয় বিউবিউজান।
ছোট্ট করে আঁকা হলেও দাগ রেখে যায় তানাবাই-এর স্ত্রী জায়দার। যে রাতে জায়দার জোর করে তানাবাইকে রওনা করিয়ে দেয় তার বন্ধু চোরোকে দেখতে যাওয়ার জন্য - ভোলা যাবে না।
আর চোরো। নরম মনের হাল-না-ছাড়া মানুষ। ভালো মানুষ সমাজতন্ত্রী। দলের অনুশাসন মেনেও সোজা কথা সোজা ভাবে বুঝতে অভ্যস্ত তানাবাইকে পার করে নিয়ে চলে যা-হওয়ার-ছিল আর যা-হয়ে-চলেছের দুস্তর ফারাকের দিনগুলো। শেষে আটকে যায় সমাজতন্তের আষ্টেপৃষ্ঠে সেঁটে বসা আমলাতান্ত্রিক ধান্দাবাজদের জটীল গোলকধাঁধায়।
কিন্তু শুধু এইটুকুই নয়। আইতমাতভের আরও অনেক গল্পের মতই বিদায় গুলসারি-ও আমাদের কিছু মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। যে জীবন দোয়েলের, ফড়িং-এর ঘোড়া-চারণের, ভেড়া প্রতিপালনের তার থেকে যে জীবন নাগরিকের, ট্রাকচালকের, পরিকল্পকের, পরিদর্শকের - তা কি প্রকৃতই আরও উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন? না কি আসলেই খারাপ, ফাঁকিবাজি? সত্যি-ই কি যৌথ-ব্যবস্থা ব্যক্তিনির্ভরতার দুর্বলতাকে কাটিয়ে ওঠার উপায়?
তাঁর সব গল্পেই আইতমাতভ নিয়ে আসেন কির্গিজিয়ার কোনও না কোনও লোকগাথা। এই গল্পেও অত্যন্ত কৌশলের সাথে ব্যবহার করেন এক শিকারির কাহিনী। শিকারির পরিণতি লোকগাথাটিতে যেমন বাস্তবেও তাই হয়েছে।
আইতমাতভ এ লেখায় সোভিয়েত ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলিকে, নির্মমতাগুলিকে সুচারুভাবে তুলে ধরেছেন। কির্গিজ এবং রাশিয়ান দুই ভাষাতেই পারদর্শী আইতমাতভ তার আরও অনেক গল্পের মত বিদায় গুলসারিকেও লিখেছিলেন দুটি ভাষাতেই। কির্গিজে এবং রাশান-এ। রাশান ভাষায় ‘বিদায়' লিখলেও কির্গিজে তিনি ব্যবহার করেছিলেন ‘জানিবারিম’ - আত্মা, জীবন, আত্মশক্তি। কেন? কির্গিজ পাঠককে আত্মশক্তিতে উদ্বুদ্ধ করতে? আমার জানা নেই। রাশিয়ায় দীর্ঘদিন কাটানো ব্রিটিশ সাম্যবাদী লেখক, অনুবাদক, অধ্যাপক জেমস রিওর্ডান লিখেছিলেন ‘আইতমাতভ একটি প্রহেলিকা’। ব্যাখ্যা করতে গিয়ে থেমে গিয়েছিলেন এই বলে যে উনি দুটি ভাষাতেই গল্প লিখতেন। যেটা বলেননি সেটা হল আইতমাতভ কি করে ক্রুশ্চেভ থেকে শুরু করে ব্রেজনেভ, আন্দ্রপভ হয়ে গর্বাচভ পর্যন্ত সকলের মুগ্ধতা, প্রশস্তি আদায় করে নিয়ে এক-ই সাথে উদারনীতিবাদীদের-ও সোৎসাহ সমর্থন পেয়ে গিয়েছেন।
বলতে থাকলে কথা ফুরাবে না। পাঠক বরং বইটা হাতে নিন।
চিঙ্গিস আইতমাতভ আর তাঁর সৃষ্টিগুলিকে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা লিখেছেন। চলচ্চিত্রও হয়েছে। আমি যা লিখলাম তা সবই আন্তর্জাল থেকে পাওয়া। লভ্য তথ্যের/কাহিনীর সামান্যই এখানে এসেছে। আগ্রহী পাঠকের জন্য উইকির বাইরের কয়েকটি লিঙ্ক নীচে দিলাম।
*******
প্রসঙ্গান্তরেঃ প্রিয় বন্ধু ষষ্ঠ পাণ্ডবের উৎসাহে সেই সাথে আয়না-দিদির খুশী-ভরা প্রত্যাশার মুখ চেয়ে এই কিছু-মিছু লেখা হল। আমার প্রাপ্তি হল অনেক। দীর্ঘদিন ধরে ভেবে আসা অনেক অনুমান, প্রশ্নকে মিলিয়ে নেয়া গেল। আনন্দে কাটল কয়েকটা দিন। অনেককাল বাদে সারারাত ধরে কিছু লেখা হল।
মন্তব্য
Чыңгыз Тореку́лович Айтматов = চিঙ্গিজ তরিকুলোভিচ আয়েৎমাতুফ। আমরা 'চিঙ্গিজ আইৎমাতভ' বলে, শুনে অভ্যস্ত। বাকি দুনিয়ার মতো আমরাও নাহয় তাই বললাম।
লেখাটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল লেখক পাঠকদেরকে একটা একটা করে ক্লু তুলে দিচ্ছেন - যা থেকে রহস্যের সমাধানের দায়িত্ব পাঠকের, ইতিহাসের এক একটা পর্বের ঘুলঘুলি খুলে দিচ্ছেন - যার দ্বার খোলার দায়িত্বও পাঠকের। এটা একটা ভালো পদ্ধতি। এতে তথাকথিত 'স্পয়লার'-এর ঝামেলা থাকে না, আবার নেপথ্যের বিষয়গুলোকে আলোচনায় আনা যায়।
একজন মানুষ আইৎমাতভ, একজন লেখক আইৎমাতভ, একজন রাজনীতিবিদ আইৎমাতভ এবং একজন কিরগিজ আইৎমাতভ কী করে অসম্ভব বৈরী পরিবেশ সামলে নিজেকে কিরিগিজ ইতিহাসে আর বিশ্বসাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন সেটার আলোচনা করা না হলে 'বিদায় গুলসারী' নিয়ে আলোচনাটা অসম্পূর্ণ থাকতো। ভূমিবিচ্ছিন্ন তাত্ত্বিকদের তত্ত্ব বাস্তবায়ণের খাঁই মেটাতে ভূমিসংলগ্ন মানুষকে কী চরম মূল্য দিতে হয় সেই আলোচনাটা না থাকলেও গুলসারী নিয়ে কথন অসম্পূর্ণ থাকতো। সবদিক সামলে এমন ব্যালেন্সড গ্রন্থালোচনা আসলেই কঠিন।
বাংলায় গুলসারী পড়তে গিয়ে অরুণ সোমের দুই হাতফেরতা অনুবাদের ভাষায় যখন আমরা অভিভূত হয়ে যাই তখন বোঝা যায় আইৎমাতভের ভাষা কি প্রচণ্ড শক্তিশালী, বিস্ময়কর! এতে অনেকের মধ্যে আইৎমাতভ মূল ভাষায় পড়তে না পারার আক্ষেপ থাকবে।
পুনশ্চঃ মস্কোতে বৃষ্টি হলে যারা এক কালে পল্টনে বা আলিমুদ্দিনে ছাতা মেলে ধরতেন সেসব রাজনৈতিক দেউলিয়ারা বোধকরি কখনো আইৎমাতভ পড়েননি। অথবা পড়ে থাকলেও তার মাথামুণ্ডু কিছু বুঝেছেন বলে তাদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ছাতাওয়ালারা তাদের ছাতার নির্দেশে খালি দালাল, সংশোধণবাদী আর বেদাতী লেখকদের খুঁজে বেড়াতেন আর খৈনি ডলতে ডলতে তাদের লিস্টি বানাতেন বসে বসে। সেগুলাও সবসময় পড়তেন বলে মনে হয় না। মিনার মাহমুদের সাপ্তাহিক বিচিন্তায় বেরুনো এরকম একটা বিশাল লিস্টি এই মুহূর্তে মনে পড়ছে। হা হা হা!
****************************************
দেশে দেশে যুগে যুগে নানা উদ্দেশ্যে নানা কায়দায় এই লিস্টি ধরে ধরে নিকেশ/অত্যাচার ইতিহাসের একটি সাধারণ উপাদান।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
লেখকের নামের বানান এবং তার উচ্চারণ নিয়ে খানিকটা সময় ব্যয় করেছিলাম। ইংরেজি, রাশান, কির্গিজ - নানারকম বানান পাওয়া গেল। শেষে কির্গিজস্তান-এর রাজধানী বিশেক-এ ওনার বাবার সমাধিস্থলে ওনার নিজের জন্যও যে সমাধিফলক আছে তাতে যে নাম লেখা আছে তার একটা ছবি পাওয়া গেল। সেখানে যে বানান লেখা আছে তা এইরকম।
AЙТМAТОВ
ЧЫҢГЫЗ
ТӨРӨКҮЛОВИЧ
মুস্কিল হল, কির্গিজ-এ উচ্চারণ শোনানোর সাইট-এর সন্ধান পাইনি। ফলে Т-এর উচ্চারণ ট হবে না ত হবে সেইটা আমার জানার বাইরে রয়ে গেছে। তেমনি ТОВ তভ হবে না তুফ হবে সেসব-ও জানতে পারিনি। আর মজা লাগল Ө-কে নিয়ে। কোথায় বসছে তার উপরে নির্ভর করে সে ও/অ হচ্ছে বা এ হচ্ছে। যাকগে, যেমন তুমি বলেছ - চিঙ্গিজ তরিকুলোভিচ আয়েৎমাতুফ-কে আমরা 'চিঙ্গিজ আইৎমাতভ’ বলেই সন্তুষ্ট থাকব।
স্তালিন-জমানা এবং তার প্রভাবে সোভিয়েত-এর পরিণতিকে বুঝতে চিঙ্গিজ আইৎমাতভ খুব-ই দামী চাবিকাঠি। পারলে এই নিয়ে আরও লিখতাম।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নামের বানানের ক্ষেত্রে আমি আদি নাস্তালিক রূপকে ভিত্তি ধরে বাংলায় উচ্চারণ লিখেছি। যেখানে খোদ কিরগিজ ভাষাটার লিখিত রূপ, শব্দ প্রকরণ, বিশেষ্যের রূপ ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে আদি রূপকে ঘাড় ধরে পালটে সিরিলিক (বলা উচিত রুশ) চেহারা দেয়া হয়েছে সেখানে একটা নামের বানানে, উচ্চারণে আমাদের সামান্য পদস্খলনে কী আর আসে যায়!
- আপনি যে পারেন সেটা তো প্রমাণিত। আর আপনি যে জানেন সেটাও স্পষ্ট। সুতরাং একটু সময় নিয়ে লিখে ফেলুন। আপাতদৃষ্টিতে এখন এগুলোর উপযোগিতা কম বলে মনে হলেও আসলে এগুলোর উপযোগিতা ব্যাপক। যতদিন কর্তৃত্ববাদীরা ক্ষমতা বলয়ে থাকবে, যতদিন কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্যের ঘাড় ধরে ভালো করে দেবার লোকদেখানো চেষ্টা করবে ততদিন পর্যন্ত এই বিষয়গুলো প্রাসঙ্গিকতা হারাবে না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এমন কিছু মিছু'র তুলনা হয় না দাদাই! "বিদায় গুলসারি" নিয়ে লেখার জন্য আন্তরিক ভালোবাসা জানাচ্ছি।
লেখাটা অন্য রকম ভালোলাগা দিলো। গল্পের ভেতরে গল্প এসেছে। সে গল্পও আবার সবটা বলে দেয়া হলো না। আগ্রহী পাঠক নিজ গরজে জেনে নিন সেরকম অদৃশ্য তাগাদা রেখে থেমে যাওয়া হলো। নিঃসন্দেহে, পাঠককের আগ্রহ তাতে উস্কে ওঠবে।
তুমি যেভাবে "বিদায় গুলসারি" নিয়ে ভেবেছো, সে ভাবনা ধরে হেঁটে না গিয়ে, বইটা পড়লে এতটা খোলাচোখে নিবিড় পাঠ সম্ভব হতো কিনা সন্দেহ। তাতে আপাত নিরীহ এই বইয়ের শব্দের ভেতরে মুখ গুঁজে থাকা ইতিহাসটাও অপঠিতই থেকে যেতো। এতসব কিছুর জন্য সাধুবাদ
লিংকগুলোর জন্য
এরাম রাত জাগিয়ে আর কোন কোন বই তোমারে পড়িয়ে এমন চমৎকার কিছু মিছু লেখিয়েও নেয়া যায় ভাবতেছি
"আপাত নিরীহ" - ঠিক, পুরোপুরি ঠিক। আসলে আদৌ নিরীহ নয়। চিঙ্গিজ আইৎমাতভ-এর কোন বই-ই নিরীহ নয়, জামিলা-ও নয়। আর একবার পড়ে দেখবে নাকি?
এই লেখায় মন্তব্যের সংখ্যা দেখার পরও এইরকম কিছু মিছু আর লেখানোর কথা ভাবলে, ভাবতে পারলে তুমি?
যাকগে যাক, তোমার আর ষষ্ঠ পাণ্ডবের তো ভাল লেগেছে বলেছ। এতেই চলে যাবে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কয়েক সপ্তাহ খাটাখাটুনি করে লেখা আমার পোস্টে '০'-টি মন্তব্য পড়েছে এমন ইতিহাস আছে। তাতে কী হয়েছে! আমি জানি, আমি কেন লিখি, আমার কেন লেখা উচিত। আপনার ক্ষেত্রে কারণটা কি সেটা আপনি জানেন। সুতরাং কেউ মন্তব্য করলেন কি না করলেন সেটা নিয়ে হয়তো একটু মন খারাপ হতে পারে, কিন্তু লেখা বন্ধ হতে পারে না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাণ্ডবদার কথায় হাঁভুট যুক্ত করলাম। আমি এক ঘন্টায় লেখা পোস্ট দিয়ে পঞ্চাশের উপর মন্তব্য পেয়েছি আবার মাসকয়েকের খাটাখাটনির পরে বিশখানা বই ঘেঁটে লেখা পোস্টে হ্যারিকেন। পাঠকের মন বুঝা বড় দায়। ব্যাপার্স না।
আর মন্তব্যই শেষ কথা না, মানুষ পড়ল কিনা তা মাপার আরও নিক্তি আছে। আপনার পোস্ট দেবার পর দিন দুয়েক যে "পাঠকপ্রিয় লেখা"র ব্যানারে ঝুলছিল সেইটা চোখ এড়িয়ে গেলে ছৈলত ন।
লিখে চলুন হাত খুলে। চিঙ্গিস কুবলাই চুগতাই আমীর তৈমুর ইত্যাদি আর কী কী জানেন সব আস্তে আস্তে ছাড়েন।
..................................................................
#Banshibir.
"দিন দুয়েক যে "পাঠকপ্রিয় লেখা"র ব্যানারে ঝুলছিল সেইটা চোখ এড়িয়ে গেলে ছৈলত ন।" - দেখেছি
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
লেখাটা প্রথমবার পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম। কিছুই জানতাম না, প্রায় কিছুই জানতাম না চিঙ্গিজ আইৎমাতভ এর জীবন সম্পর্কে। তাঁর বাবার কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে রইলাম। অবশ্য এতটা হতবাক হবার কীই বা ছিল? এখন তো এই "পরম কল্যাণকর" সোভিয়েতের দ্বারা নিজের কর্মীদেরই গায়েব করে দেবার খবর অনেকেই জানেন।
প্রথম অভিঘাত কাটলে আবার এসে পড়ে গেছি এই লেখা, বেশ কয়েকবার। অনেক কথা মনে জমা হচ্ছে, কিন্তু বলতে পারছি না প্রায় কিছুই।
মনে পড়ে যাচ্ছে "গোত্রান্তর" বলে একটা বইয়ের কথা। অনেকদিন আগে পড়া, এখন খুঁজেও পাচ্ছি না, কেবল ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়ছে তুলো চাষের জন্য নদীতে বাঁধ দেবার কাহিনি। একজন চরিত্র, তরুণ, নাসিরুদ্দিনভ, সে থাকতো পামীর মালভূমিতে, পৃথিবীর ছাদে। তাকে এনেছিল এই বাঁধের কাজে। তার নিজের দেশ এক আশ্চর্য জায়্গা। সেখানে ঘোড়ার পিঠে তুলে জমি পাচার করে দেওয়া যেত।
কারুর কি মনে পড়ছে বইটার কথা?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তুলিদিদি, জমা কথা বলতে থাকুন - আরও অনেকে তখন বলতে থাকবেন। জানা যাবে অনেক কিছু।
গোত্রান্তর (ম্যান চেঞ্জেস হিজ স্কিন) - লেখকঃ ব্রুনো ইয়াসেনস্কি। পড়া হয়নি।
পোলিশ লেখক, রাশিয়ায় চলে যান। ক্ষমতার সিঁড়িতে যায়গাও পান।তারপর প্রথমে নিকেশ-প্রথার জোরদার সমর্থক, অল্পকিছুদিনের মধ্যেই নিজে বন্ধুবান্ধব সহ বন্দী, নিহত।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এঁরও দেখি সেই গায়েব হয়ে যাওয়ার কাহিনি! এঁদের প্রত্যেকের জীবন নিয়ে উপন্যাস লেখা যায়। অবশ্য শেষে সব একই, গায়েব।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এঁর জীবন নিয়ে জমাটি চলচ্চিত্র হয়ে যায়; কিন্তু শেষ তৃতীয়াংশ ভয়াবহ এবং করুণ। মন বিষণ্ণ হয়ে যায়।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এক জীবনে ব্রুনো যে নৃশংসতা দেখিয়েছেন তাতে তার পরিণতি তো এমনই হবার কথা। ফ্রান্স-জার্মানীতে তার জীবন, ক্লারার সাথে তার নিষ্ঠুর আচরণ - এগুলোর জন্য সাধারণের মনে এমনিতেই তার ঠাঁই হয় না। প্রথম দিককার কিছু লেখা বাদ দিলে রচিত সাহিত্যের বেশিরভাগ নির্ভেজাল পার্টি সাহিত্য। এমনকি Je brûle Paris-ও আসলে 'দুর্গেশনন্দিনী'র বিপরীতে লেখা 'রায়নন্দিনী'।
আর্থার কোয়েস্ৎলারের 'ডার্কনেস অ্যাট নুন' নিয়ে কি চলচ্চিত্র বানানো হয়েছে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ব্রুনো ইয়াসেনস্কি'র 'গোত্রান্তর' (ЧЕЛОВЕК МЕНЯЕТ КОЖУ বা মানুষ ত্বক পালটায়)-এর কথা খুব মনে আছে। স্তালিন আমলে তাজিকিস্তানের ভাখ্শ নদীতে বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কাহিনী।
সেখানে অনেকগুলো অ্যানেকডোট আছে যেগুলো লক্ষণীয়। যথা
- স্তালিন আমলেও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন পিছিয়ে ছিল তাই এই প্রকল্পে মার্কিনী আর বৃটিশদের সহযোগিতা নিতে হয়েছে।
- প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও সোভিয়েতকরণের নামে কার্যত সবকিছুর রুশীকরণ চলছিল। 'মরিয়ম' অনায়াসে 'মেরি পলোজভা' হয়ে যায়।
- মধ্য এশিয়া নিয়ে ব্রিটিশদের বিশাল রাজনৈতিক পরিকল্পনা ছিল - ব্রিটিশ ভারতকে উত্তর দিকে বাড়াতে বাড়াতে পশ্চিম তুর্কিস্তান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া (রিভার্স কুশান সাম্রাজ্য!)। শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
- নাসিরুদ্দিনভদের শেষ পর্যন্ত মরতেই হয়, সেটা সোভিয়েত দেশে হোক আর অন্য কোথাও হোক। আর মরিয়মরাও তাদের সরলতাকে পুঁজি করে ঠকিয়ে যায় দেশে দেশে, কালে কালে।
আরও অনেক আছে। সেসব বললাম না। যাদের গরজ আছে তারা নিজেই বইটা পড়ে নেবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এ গল্পে করিম নাসিরুদ্দিনভের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারি না, খুব অন্যায় মনে হয়।
স্কুলে পড়া বয়সে যখন ও বই পড়ি, তখনও বড্ড খটকা লাগতো নামগুলো নিয়ে। "মরিয়ম মরিয়ম" করে কেমন ভালোবেসে ডাকছে করিম, কিন্তু অফিশিয়ালি তার নাম মারিয়া। সমস্ত নামগুলো রুশী করে ফেলছে, কেমন যেন জোর খাটানো মনে হত। পামীরের ছেলেকে সমতলে নামিয়ে এনে কাজ করানো, অনভ্যস্ত ধুলোর মধ্যে, এটাও কেমন যেন অন্যায় মনে হত।
ওরে বাবা, বৃটিশরা রিভার্স কুশান সাম্রাজ্য করতে চাইছিল নাকি? ব্রিটিশ, রুশ কেউ কারুর চেয়ে কম যায় না দেখি! যে লাউ সেই কদু। সবাই চায় দখলদারি। আর সব দোষ হয় নন্দঘোষের।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
"প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও সোভিয়েতকরণের নামে কার্যত সবকিছুর রুশীকরণ চলছিল। 'মরিয়ম' অনায়াসে 'মেরি পলোজভা' হয়ে যায়" - ঠিক, এবং আরও গভীর। জটীল।একদিকে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বটা চলছিল স্বাতন্ত্র্যকে ঘুচিয়ে ঘন্ট বানানো হবে না কি তার বিপরীত অবস্থান নেওয়া হবে - “বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান"- যুক্তরাষ্ট্র - সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে চোরাস্রোত চলছিল - ধম্মের কি হবে গা? ইন্সটিটিউট অফ রেড প্রফেসর্স-এ তুমুল গবেষণা চালানো তুখোড় লোকগুলো হয়ত সঠিক দিশাটা পেয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু জীবিত ট্রটস্কির থেকে তার ভুতের শক্তি অনেক বেশী। সেই ভুতের ভয়ে আক্রান্ত স্তালিনের রাশিয়া সুলতান-গালিয়েভের উচ্ছেদ আর নিকেশ-এর মাধ্যমে স্বাভাবিক বিকাশের বারোটা বাজিয়ে দিল।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এশিয়ায় দুটো পদ্ধতি কাজ করে। এক, ভারত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রধানত বৈচিত্র্যকে অক্ষুণ্ন রাখা হয়। এবং বৈচিত্র্যই এখানে ঐক্যের শক্তি যোগায়। দুই, চীন পদ্ধতি। এই পদ্ধতি মূলত নৃতাত্ত্বিক সাম্রাজ্যবাদ। ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। রাশিয়া দেশটা ইউরোপও না এশিয়াও না। রাশিয়া নিজেই একটা মহাদেশ যেখানে কয়েকশ' জাতির মানুষ আছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন নামেই ইউনিয়ন, আদতে রুশ সাম্রাজ্য। রুশ ঔপনিবেশিকতার যে ইউনিক বৈশিষ্ট্য আছে, আশেপাশের সবকিছুকে আত্তীকরণ করা, সেই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ীই সোভিয়েত ইউনিয়ন আদতে রুশ সাম্রাজ্য। সেখানে কেন্দ্রের ক্ষমতায় সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিকোলাইয়ের ছেলে নাকি কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বেসারিওনের ছেলে সেটা এহ বাহ্য।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পণ্ডিতি করার অপচেষ্টা করবো না এক লহমা। এমন লেখার জন্যই সচলায়তনে আসি।
---মোখলেস হোসেন
অনেক ধন্যবাদ মোখলেস-ভাই।
আপনি কিছু বললে সেটা পণ্ডিত মানুষের মত না হলে ক্ষতি নেই কিছু। তাই যেমন ইচ্ছে করছে তাই-ই লিখে ফেলতে আমন্ত্রণ রইল।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
মন্তব্য করতে একটু লম্বা সময় নিলাম। বইটা হাতে ছিল না। পরে দুজন সহৃদয় সচল আয়নামতি ও ষষ্ঠপাণ্ডবের বদান্যতায় বইটা পাওয়া গেল। তারপর কদিন ধরে চুপচাপ পড়লাম আর ভাবলাম। এই বই এত দেরীতে পড়ে কিছুটা আক্ষেপ লাগলেও আরেকটি বিষয় ভেবে ভালো লাগলো কম বয়সে পড়লে হয়তো অনেক কিছু বোঝা যেতো না। এই এত বছরে দুনিয়ার অনেক হালচাল বদলে গেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেছে সেও তিন দশক হয়ে গেল। নতুন সময়ে এসে সেই পুরোনো সময়ের বাস্তবতাকে আরো যেন পরিষ্কার দেখা গেল। জামিলা, প্রথম শিক্ষক ও গুলসারি - তিনটি গল্প তিন রকমের ধাক্কা দিয়ে জানান দিল ঐতিহাসিক বাস্তবতাগুলো যদি সাহিত্যে লিপিবদ্ধ করা না হয় তাহলে চলমান ইতিহাস বুঝতে অনেক অসুবিধা হতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্র যেসব বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছিল, সেই বাস্তবতার কিঞ্চিত সারাংশ যে এই ত্রয়ীতে লুকিয়ে আছে সেটা আপনার কাছ থেকে ইঙ্গিত পেয়ে গল্পপাঠে আরো সহজ হয়ে গেল। গল্পের মূল রসের সাথে ওটা ছিল বাড়তি পাওনা। এমন চমৎকার বিশ্লেষণধর্মী লেখাগুলো সচলায়তনের সম্পদ হয়ে থাকে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
বিদায় গুলসারি আমি যখন পড়ি তখন সমাজতন্ত্রের রথ বাহ্যতঃ প্রবলবেগে ছুটছে। তাই পাঠান্তে ধাক্কাটা লেগেছিল ভাল মতই। পাঠের পরের আলোচনায় চোখ-কান খোলা রাখা অগ্রজ বন্ধুদের কাছ থেকেও কিছুটা ইশারা পাওয়া গিয়েছিল। তারপর থেকে সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে এই লেখা বেশ একটা ধ্রুবতারার মত কাজ করেছে।
বইটা আবার ফিরে পড়তে পাওয়ার অপার আনন্দলাভ হল - অবশ্যই ষষ্ঠপাণ্ডবের সহৃদয় বদান্যতায়।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
লেখায় মন্তব্য হয় না বলে মনে করবেন না লেখা কেউ পড়ছে না। অনেকেই পড়ছে। এবং আমার মত পাঠক যারা কদাচিৎ মন্তব্য করে তারা এ ধরণের লেখা পড়ে বেশ তৃপ্তিও পাচ্ছে। আপনাকে একটা মজার কথা বলি- আজ থেকে বছর দুই আগে আমি ফেসবুকে একটা গ্রুপে লেখা শুরু করি। লেখা শুরু করা মাত্রই বেশ কিছু পাঠক জিজ্ঞাস করে বসল- "আপনি কি সচলায়তনের সোহেল লেহস?" এদের কাউকেই কখনো আমি সচলায়তনে কমেন্ট করতে দেখিনি। অথচ তারা সচলায়তনে আমার লেখা পড়েছে এবং আমাকে চিনে রেখেছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন লেখায় মন্তব্য না হলেও পাঠক কিন্তু ঠিকই আপনার লেখা পড়ছে
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
ধন্যবাদ!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন