ভালোবাসা...তোমাদের জন্য

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন এলোমেলো ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: রবি, ০২/০৮/২০০৯ - ১০:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ধূর! এই কামলাগিরি আর ভালো লাগে না।
দিন শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে তমাল নিজের মনেই কথাটা ভাবছিলো আর গালি দিচ্ছিলো নিজের ভাগ্যকে। কেন যে সুখে থাকতে ভুতে কিলায় মানুষকে!! কি কুক্ষনেই না ডিবি টা করেছিলো!!!

আবু ভাইয়ের পরামর্শটা ভেবে দেখছে। ভালই মনে হচ্ছে। চার বছরের চুক্তি। থাকা খাওয়া, পড়াশোনা সব খরচ ওদের। উপরি হিসাবে আছে বেতন, বেনিফিটস্‌ । বাবা –মাকেও একটু সাহায্য করতে পারবে। বাসায় এখনও বলেনি। বাবা মনে হয় কিছুতেই রাজী হবে না।
অবশ্য মাকে ম্যনেজ করতে পারলেই হল। বাকীটা ঠিক সামাল দিয়ে নেবে।
প্রিয়াঙ্কাকেও বলা দরকার। কথাটা শুনে ও নিশ্চয়ই ভীষন রাগ করবে…
হিঃহিঃহিঃ প্রিয়াঙ্কার রাগ রাগ মুখটা কল্পনা করে, তমাল নিজের মনেই ই হেসে উঠে।

সে যে বসে আছে একা একা… সেল ফোনটা বেজে ওঠে। রিং শুনেই বুঝে ফোনটা কার।

-কি কর?
- তোমার কথা ভাবি।
- ইসস্‌ চাপা মেরো না । পুরা দিন কোন খবর নাই।
-আমি তো জানিই তুই ঘুম থেকে উঠেই আমাকে কল করবি।
- তোর মন্ডু!! DGM

-তোর সামনে আয়না আছে??
- হা আছে। কেন??
- দেখ তো তোর গালটা কতোখানি ফুলেছে???
- উফ্‌ !! তুমি কি কখনো একটু সিরিয়াস হতে পারো না??
- পারি তো। দেখতে চাও? একখানা সিরিয়াস সিদ্ধান্ত নিসি… সেইটা নিয়া আমার বিজ্ঞ প্রিঙ্কুর সাথে কিঞ্ছিত শলা পরামর্শ করতে চাই।
- কি সিদ্ধান্ত???
- ঠান্ডা মাথায় শুনবা। অর্ধেক শুনেই কান্নাকাটি করবা না।
- তুমি বড়লোক কোন সাদা মেয়ের প্রেমে পড়স?? তাকে বিয়ে করতে চাও????
- তুমি জানলা কেমনে??
- সত্যি??? তাইলে আমার সাথে এতদিন প্রেম করলা কেন???
তমাল অপর প্রান্তে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। এই মেয়েটা এত বোকা কেন? আর কেনই বা তার মত একটা গুড ফর নাথিংকে এত্ত ভালোবাসে??? কোন সন্দেহ নাই পৃথিবীর সব থেকে আজব জিনিষ হল এই মাইয়া মানুষ!!

- বউ???
নিজের অজান্তেই তমালের গলা গভীর হয়ে আসে। সেই একশব্দেই প্রিয়াঙ্কার সব ভয় উধাও হয়ে যায়। তমাল আমেরিকা চলে যাওয়ার পর থেকে যে তার কি হল? সবসময়ই মনে একটা চোরা শঙ্কা কাজ করে। যদিও জানে তমাল, ওর জন্য সব করতে পারে।
- কি?
কান্না আর লজ্জা মাখা কন্ঠ শুনে, প্রিয়াঙ্কার নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগে। জানে, পরে অবশ্যই এই রেফারেন্স টেনে তমাল ওকে খেপাবে।
- কান্নাকাটী বন্ধ কর। আমার কথা শুন।
- বল্
- আবু ভাইয়ের পরামর্শটা মনে ধরসে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি , U.S. Airforce এ জয়েন করবো।

২ Lackland Air Force base, San Antonio, TX

সমুদ্র থেকে অল্প দূরে, এয়ার বেস্‌টাকে দেখে তমালের মনটা অকারনেই বিষন্ন হয়ে উঠল।
সন্ধ্যা ৭ টায় রিপোর্ট করার পরই ওদের হাতে একটা নিত্যদিনের কর্ম তালিকা ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সারি সারি ৫০ টা বিছানা, সাথে একটা করে লকার। ওদের স্কোয়াড্রেনে ৫০ জন। অধিকাংশই সাধারন নিম্নবিত্ত আমেরিকান। ওর মত হাইফেনেটেড কাউকে চোখে পড়ল না।
- হেই ম্যান । বিশালদেহী এক আফ্রিকান- আমেরিকান তমালের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।

ঠিক সাড়ে ৩ টায় ককর্শ ভাবে বিউগল বেজে উঠল। ১০ মিনিটে তৈরী হয়ে নিচে যেতে হবে। এক সেকেন্ড দেরী হলেই শুরু করতে হবে বুক ডন। হায় জীবন !!! সকালের অমানুষিক ড্রিলের পর ৩ মিনিটের ব্রেকফাস্ট। ১৫ মিনিটের শাওয়ার ব্রেক। কিন্তু একি স্টল নাই তো!!! পোলাপান দেখি টপাটপ পানির নীচে দাড়াঁচ্ছে আর বেরিয়ে আসছে, কারো দিকে তাকানোর সময় নাই। যাহ আছে কপালে ভেবে তমাল কাপড় ছাড়তে লাগল। বন্ধুদের কাছে মিলিটারীদের সম্পর্কে শোনা গল্পগুলো মনে পড়ে গেল।

৭ দিন শেষ, আরো ১০৫ দিন বাকী। রবিবারে বাসায় ফোন করা যাবে। ট্রেইনিং ইন্সট্রাকটর হাতে একটা ৪ মিনিটের কার্ড আর ঠিকানা লেখা কাগজ ধরিয়ে দিল। আচ্ছা এই কার্ড টা দিয়ে কি ঢাকায় প্রিঙ্কুর সাথে কথা বলা যাবে??
সাত- পাঁচ ভাবতে ভাবতে বাসায়ই ফোনটা করল তমাল। জ়লদি তুনাকে ঠিকানাটা লিখতে বলল। তার ছোটবোনটা এত্ত গাধা কেন?? একটা সামান্য ঠিকানা লিখতে ৩ মিনিট ১০ সেকেন্ড লাগে??
মার গলাই তো শোনা হল না??
- তুনা মাকে দে তো। প্রন্ত্
- মা আমি ভাল আছি। আমার জন্য দোয়া কর। চিঠি লিখ… মা, মাগো…

খুট্‌ করে লাইনটা কেটে গেল। মার গলা তো শোনাই হল না। রিসিভার হাতে তমাল স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল ফোন বুথে। গত এক সপ্তাহের জমা করা কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে বাড়ি দিতে থাকলো তার প্রতিটি কোষে। ডর্মের প্রতিটা ছেলে আজ চুপ; প্রতিটা বিছানা থেকেই আসছে চাপা ফোঁপানোর শব্দ।

মার প্রথম চিঠিটা তমালের হাতে আসল ঠিক তিন দিন পর। সাদা একটা খাম। অথচ মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বস্তু। কখন ৯ টা বাজবে?? চিঠিটা পড়তে পারবে?? ক্লাসে বসে একটু পর পরই হাত দিয়ে বুক পকেটে চিঠিটার অস্তিত্ব অনুভব করছিলো।
চিঠির আনন্দেই যেন রাতের খাবারের সময় তমালের ঠোঁটের কোনায় পানি গড়িয়ে গেল দু'ফোটা। কহুকে যেন ট্রেইনিং ইন্সট্রাক্ট্রর উড়ে চলে এল। এক ধাক্কায় উলটে ফেলে দিল খাবারের ট্রে। সেই সাথে কানের কাছে ছুটে চলল অশ্রাব্য খিস্তি খেউর। তমালের মনে হল ওর কানে যেন কেউ গরম সীসা ঢালছে। পা দুটো সিমেন্টে গাথাঁ। খাবার ঘর থেকে বের হয়ে মনে হল, আবার খাওয়ার জন্য সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে???

(হয়তো চলবে... এখনো জানিনা)


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

না চললেও সমস্যা নাই।
এটুকুই ভাল্লাগছে... চলুক

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চল্লে ভাল্লাগবে।

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি

ভালো লাগলো। চলুক!!

...............................................................................
আমি অতিথি তোমার দেশে.....

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

চলুক!

ছায়ামূর্তি [অতিথি] এর ছবি

দারুণ হচ্ছে... চলুক

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

চলুক!

--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এটুকুই একটা গল্প হয়ে গেছে...
ভালো... চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।