বাসায় বসার ঘরে নতুন বাহারী কার্পেট বিছানো হয়েছে । তার উপর বসে নিজেকে 'আলাদ্দিন' কল্পনা করে খেলছে পিচ্চি । খেলার বর্তমান পরস্থিতি হল আলাদ্দিন তার যাদুর গালিচায় করে উড়ে চলেছে বিরাট এক পাহাড়ের ওপর দিয়ে । পাহাড়ের ওপাশে মনে হয় কিছু একটা আছে, কী যে আছে তা আলদ্দিনই একমাত্র জানে আর জানে তার কল্পনাশক্তি ।
এমন সময় পাশের বাড়ির মিনি এল তার সাথে খেলতে । কিন্তু মিনিকে খেলায় নিতে তার খুব একটা আগ্রহ নেই । তাই ঠিক করল কথায় ভুলিয়ে ভালিয়ে মিনিকে ফিরত পাঠিয়ে দিবে । আর তাও যদি রাজি না হয় তবে খেলায় নিবে, কিন্তু পাত্তা দিবে না যেন মিনি নিজে থেকেই খেলা ফেলে পালায় ।
" কি করছ ? ", জিজ্ঞেস করে মিনি ।
" দেখছ না, আমি যাদুর গালিচায় চেপে উড়ে যাচ্ছি কোহকাফ পাহাড়ের উপর দিয়ে । "
" ওহ, তুমি আলাদ্দিন খেলছ ? কালকে আমিও টেলিভিশনে দেখেছি আলাদ্দিনকে কোহকাফের উপর দিয়ে গালিচায় চেপে উড়ে যেতে । কিন্তু তোমার জ্বীন কই ?"
" আমি খেলছি না, আমি সত্যিকারের আলাদ্দিন । জ্বীন এখন চেরাগের মধ্যে । " এই বলে ধাতব একটা জিনিস দেখাল পিচ্চি, জিনিসটা অবশ্য দেখতে চেরাগের মতই । কাজেই মিনি এটাকে চেরাগ হিসেবে কল্পনা করতে সম্মত হল ।
" সত্যিকারের আলাদ্দিন, ঐ কালকের টেলিভিশনেরটার মত ? ওরকম সবকিছু করতে পার ? " জিজ্ঞেস করে মিনি ।
" হুঁ সব কিছু ।"
" আমিও খেলি তোমার সাথে ? "
" না, আমি এখন খুব জরুরী আর কঠিন একটা কাজ করতে যাচ্ছি । আর আমি এখন কালকে রাতে টেলিভিশনের মত কোহকাফ পাহাড়ে যাব না , যাব পাহাড়ের ওপাশে । তুমি ভয় পাবে, তোমাকে নেয়া যাবে না । "
" কিন্তু সত্যিকার আলাদ্দিনের সাথে তো ঐ মেয়েটাও যায় সবখানে । আমিও যাব । আমি ভয় পাবনা । "
অকাট্য যুক্তি, সত্যিকার আলাদ্দিন হলে তো সাথে একটা মেয়েও থাকতে হবে । অগত্যা রাজী হতেই হয় । " ঠিক আছে, কিন্তু কোন কথা বলবা না । আমি যেভাবে বলব সেভাবে খেলা হবে, আচ্ছা ? "
" আচ্ছা । আমরা কি আসল আলাদ্দিনের মত করে সবকিছু করব ? "
" হুঁ "
" পাহাড়ের ওপাশে কি আছে ? " কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর জিজ্ঞেস করে মিনি ।
" অনেক বড় বড় দৈত্য । ওদেরকে শায়েস্তা করতেই যাচ্ছিলাম । "
" কখন পৌঁছাব ? "
" এসে পড়েছি, ঐ দেখ কি বিশাল বিশাল দৈত্য । ওদের গায়ের রঙ সবুজ । চোখ গুলো লাল । দাঁত গুলো হলুদ । মাথায় খাড়া দুটো শিং ... ( ইত্যাদি ইত্যাদি বিস্তারিত বর্ননা দিতে থাকে ক্ষুদে আলাদ্দিন ) "
বর্ননা কিছুক্ষন ধৈর্য্য ধরে শুনে মিনি । কিন্তু বর্ননা থামার কোন লক্ষন দেখতে না পেয়ে একসময় বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, " এখন কি সত্যিকার আলাদ্দিনের মত মারামারি হবে ওদের সাথে ? "
" হ্যাঁ, তুমুল মারামারি হবে । " সত্যিকার আলাদ্দিনের দৃঢ়তা নিয়ে জানায় পিচ্চি ।
" কিন্তু দৈত্য হবে কে ? খেলায় তো আমরা মাত্র দুই জন । "
" বললাম না, এটা খেলা না - আমি সত্যিকার আলাদ্দিন । আমরা উপর থেকে নিচে নামব না , জ্বীনকে পাঠাই ওদেরকে ধোলাই করে আসুক । " একটু রাগী স্বরেই কথাগুলো বলে পিচ্চি ।
চেরাগ ঘষে বের করা হল দুই শিশুর কল্পনা প্রসূত জ্বীনকে । দৈত্যবধের আদেশ পেয়েই "জো হুকুম মালিক" বলে চলে গেল জ্বীন । জ্বীনের সাথে মাটিতে দৈত্যকূলের মারাত্মক মারামারি হল । গালিচায় বসে আকাশ থেকে জ্বীনের মাধ্যমে যুদ্ধটা পরিচালনা করতে থাকে পিচ্চি । আর মাঝে মাঝেই মিনিকে মনে করিয়ে দেয়, " দেখেছ, বলেছিলাম না আমি সত্যিকার আলাদ্দিন ।"
এক পর্যায়ে মারামারিটা শেষ হয় । দৈত্য ফিরে এসে চেরাগে ঢুকে পড়ে । আলাদ্দিনের আদেশে গালিচা রওনা দেয় বাগদাদ নগরীর দিকে । এতক্ষন পিচ্চির সব কথা মেনে নিলেও
এবার আর চুপ করে থাকতে পারে না মিনি ।
" হচ্ছে না তো , সত্যিকার আলাদ্দিনে এখন বিকাল বেলা আর একটা বাজনা বাজাতে হবে "
কথা ঠিক । সত্যিকার আলাদ্দিনে সবসময় বিকালের অস্তগামী সূর্যের সামনে অভিযানের ইতি টানা হয় । পশ্চিমে অস্তগামী সূর্যের দিকে গালিচায় করে উড়ে যায় আলাদ্দিন ও তার সঙ্গিনী । সেই সাথে বাজতে থাকে মার্কা মারা বাজনা ।
" হুঁ , এখন বিকাল । ঐদেখ সূর্য ডুবছে । প্যাঁ প্যাঁ-প্যাঁ প্যাঁ প্যাঁ-প্যাঁ প্যাঁ-প্যাঁ-প্যাঁ-প্যাঁ ... " মুখ দিয়েই বাজনা বাজায় পিচ্চি । ফাঁপরে পড়ে আলাদ্দিনের পাশাপাশি যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীর কাজটাও তাকেই করতে হয় ।
" হচ্ছে না, হচ্ছে না !" আবার বাঁধা দেয় মিনি । " সত্যিকার আলাদ্দিনে বাজনা যখন বাজতে থাকে ওরা চুমু খায় তখন । "
" ধুত্তোর ছাই !! গুষ্ঠি মারি সত্যিকার আলাদ্দিনের !! আমি পারবনা সত্যিকার আলাদ্দিনের মত এতকিছু করতে । আমি সত্যিকার আলাদ্দিন কে বলেছে তোমাকে ? শান্তিতে একটু খেলতেও দিচ্ছ না । বেশি শখ থাকলে একা একা খেল । আমি এই খেলায় নাই । " , রাগে গজ গজ করতে করতে বলে পিচ্চি ।
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মিনি । আসলেই তো ! মুখ দিয়ে বাজনা বাজানর সাথে সাথে চুমু খাওয়া আসলেই কঠিন, এটা আগে ভেবে দেখা হয় নি ।
মন্তব্য
হাহাহাহা কি কিউট, খুব খুব সুন্দর লিখেছেন। আরো লিখেন
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ধন্যবাদ মুমু আপু
- এনকিদু
হা হা হা!!
আরে চুমু টা খাইয়েই দিতা!!!
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
এখনো এরা চুমুর মর্ম বুঝে না । অনিকের গল্পের মত । আরেকটু বড় হোক, তারপর দেখা যাবে । তবে এদেরকে বড় করার কোন ইচ্ছা আমার নাই, রনবীর টোকাই যেরকম । আর তাছাড়া পোলাপান যেই পাকনা, বড় হলেই টাউট হয়ে যাবে । ছোট আছে, ভালই আছে ।
- এনকিদু
হা হা
দারুন লিখেছেন! মুখ দিয়ে বাজনা বাজানোর সময় আসলেই কী চুমু খাওয়া যায় না?
লেখা দৌড়াক। আশা করছি খুব দ্রুতই আপনাকেও সচল দেখতে পাব।
এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পারেন । এক্সপেরিমেন্ট শেষে একটা রিপোর্ট লিখে জমা দিয়েন সচলায়তনে, আমরা ব্লগে সাহিত্য টাহিত্যের পাশাপাশি গবেষনা পত্রও পড়ব ।
- এনকিদু
ধন্যবাদ
ভাইরে, আসল গল্পটা আরো মারাত্নক ছিল । জিনিসটা রম্য রচনা হলেও শিশুপাঠ্য না । আর ঐ জিনিস আমার পক্ষে লিখা সম্ভব না । হিমু ভাই হলে পারত । তাই অনেক চিন্তা করে আলাদ্দিনের গল্প আর চুমু পর্যন্ত টেনে ছেড়ে দিয়েছি ।
- এনকিদু
খুব ভাল লাগল।
ধন্যবাদ
-এনকিদু
আপনার পিচ্চি, দাদা, প্রচন্ড তালেবর ! মজার লেখা -
আমার পিচ্চি !
হে হে
আমি নিজেই তো এখনো পিচ্চি
- এনকিদু
আসল তালেবর তাহলে আপনি ?! আপনার 'পিচ্চিনামা' যখন বিখ্যাত হবে তখন এই আপনিই হয়তো সুর বদলিয়ে পত্র পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেবেন - "আমি নিজে পিচ্চি অবস্থায় যে পিচ্চি চরিত্র রচনা করতে পেরেছিলাম বাংলা পিচ্চি সাহিত্যে তা নজিরবিহীন, 'আমার পিচ্চি' অমর ! "
আহহারে! আমার ছোট্রবেলায় আলাদিনের কার্টুন ডিজনি বা বিটিভির কোন কারিগরি ত্রুটির কারনে সম্প্রচার করা হইল না??? মনে বড় কষ্ট... ঃ(
মনজুর এলাহী
নতুন মন্তব্য করুন