ঢাকাইয়া পিচ্চি

এনকিদু এর ছবি
লিখেছেন এনকিদু (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/০৫/২০০৮ - ৮:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আড়াই বছর আগের কথা । রাত নয়টার দিকে একটা রিক্সা করে রওনা দিয়েছি নীরব হোটেলের দিকে, সাথে আমার বন্ধু সাজিদ । পুরান ঢাকার নীরব হোটেল, ভর্তা-ভাজির জন্য বিখ্যাত । সাজিদ বা আমি দু'জনের কেউই আগে নীরবে খাইনি, ঠিকানাও জানিনা । শুনেছি সবাই একনামে চিনে এই হোটেল - এই ভরসায় রাস্তায় নেমেছিলাম । কপাল ভাল একজন রিক্সাওয়ালাকে পাওয়া গেল যে ঐ হোটেলটা চিনে ।

আমরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে বকশি বাজার হয়ে সামনে এগিয়ে যাই । বংগবাজার পর্যন্ত আসার পর রিক্সাওয়ালা মামু জানায় তার নাকি খুব একটা ভাল মত নীরবে যাওয়ার রাস্তাটা মনে নেই, তবে কাছাকাছি গেলে খুঁজে বের করে ফেলতে পারবে ।

আমরা বয়ান্ন বাজার আর তিপ্পান্ন গলির পুরান ঢাকায় ঢুকে পড়ি রিক্সা নিয়ে । যেতে যেতে মাঝে মাঝে রিক্সাওয়ালা মামু তার কলিগদেরকে (অন্যান্য রিক্সাওয়ালা মামুরা) জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে থাকেন ঠিক পথেই যাচ্ছি কিনা । একসময় এক রিক্সাওয়ালা বলে, "ঐ তো সামনে আরেকটু গেলেই " । কিছুদূর যাওয়ার পর আরেক রিক্সাওয়ালা বলে , "ঐতো পিছে ফালায়া আইছেন" । আমরা আবার পিছাই । আরেক রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করি । উত্তরে আবার সেই একই কথা "ঐ তো সামনে" । আমরা আবার আগাই । এরকম দুই তিনবার পেন্ডুলামের মত ছন্দিত সপন্দনে স্পন্দিত হবার পর আমরা বুদ্ধি করে এই দুই বিন্দুর মাঝামাঝি এক জায়গায় রিক্সা থামাই । আমরা বুঝে গেছি এই গলিতেই কোথাও হোটেলটা আছে, কোন কারনে তার সাইনবোর্ডটা আমাদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে । এবার হাঁটা হাঁটি করে হোটেলটা খুঁজে বের করার পরিকল্পনা আমাদের ।

সাজিদ রিক্সার ভাড়া দিতে থাকে । আমি রিক্সা থেকে নেমে ডানে বামে তাকাই । গায়ে গায়ে লাগান অসংখ্য বাড়ি, দোকান আর হোটেলের মাঝে কোনটা নীরব কে জানে । "নীরব" লেখা কোন সাইন বোর্ড ও দেখতে পাই না । আমরা যেখানে থেমেছি সেখানেই একটা বাড়ির দাওয়ার উপরে বসে ছিল তিন চারটা পিচ্চি । এরা স্থানীয় পোলাপান, এদেরকেই জিজ্ঞেস করা যাক । আমি তাদের মধ্যে একজনকে ডেকে জিজ্ঞেস করি নীরব হোটেলটা কোনদিকে ।

খাস ঢাকাইয়া ভাষায় উত্তর আসবে জানতাম । আমার মাথার ভেতর ঢাকাইয়া থেকে প্রমীত বাংলা করার কম্পাইলারটাও চালু করাই ছিল । ঢাকাইয়া ফরম্যাট শোনার জন্য কানদুটাও টিউন করেই রেখেছিলাম । ঢাকাইয়া উচ্চারনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু প্রস্তুত ছিলাম না ঢাকাইয়া attitude এর জন্য । তাই উত্তরটা আমাকে পরিষ্কার বোল্ড করে দিল ।

পিচ্চির উত্তর ছিল,

" কোন ইস্কুলে লেখাপড়া করছেন, পড়বার পারেন না ? ঐযে সাইনবোর্ডে লিখা থুইছে । "

এই কথা বলে আমার নাকের ডগায় সাইনবোর্ডটা দেখিয়ে দিল । সাইনবোর্ডটা দ্বীতিয় তলায় । আমরা একতলায় আশা করে নীচের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম এতক্ষন তাই দেখতে পাইনি । "ওহহ তাইতো", জবাবে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারলাম না ।

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সাজিদকে বললাম, " আমরা এখনো উত্তর বঙ্গের জোলাই র‌য়ে গেছি, ঢাকা তো দূরে থাক পুরান ঢাকার পোলাপানেই আমাদেরকে একলাইন কথায় বোল্ড করে দেয় । "


মন্তব্য

জুবাঈর সাঈদ এর ছবি

বস্ তো সৃষ্টির উল্লাসে সচলায়তন ভাসিয়ে দিচ্ছেন। দারুন হচ্ছে - চালিয়ে যাও ...

অতিথি লেখক এর ছবি

নীরব হোটেলের নাম দেখেই লেখাটা পড়তে নিলাম।সাথে সাজিদ নাম দেখে ভাবছিলাম আমারই কোন বন্ধু হয়ে যায় কিনা। পুরান কথা মনে করিয়ে দিলেন। কতদিন যাই না।
-উলুম্বুশ

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

কী মনে করালেন রে ভাই!
গাউসিয়ায় ফেরিঅলা পিচ্চি লুছনি(গরম পাতিল ধরার মোটা ন্যাকড়া) বিক্রির জন্য উৎপাত করছে। কিনবো না শুনে বলে-
হঃ, ধরবেন তো আঁচ্লা দিয়া আর পুইড়া কয়লাডা অইবেন

অতিথি লেখক এর ছবি

নুশেরা আপু, আপনার উচিৎ ছিল পিচ্চির এইরকম উপস্থিত বুদ্ধির স্বীকৃতি স্বরুপ দরকার না হলেও একটা লুছনি কিনে ফেলা । অবশ্য লুছনি মনে হয় একটা কিনা যায় না, একজোড়া কিনতে হয় । প্রতিভাবানকে স্পন্সর করলেন আর কি ।

- এনকিদু

তিথীডোর এর ছবি

হঃ, ধরবেন তো আঁচ্লা দিয়া আর পুইড়া কয়লাডা অইবেন

খাইছে হো হো হো খাইছে

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই আমার বাড়িও তো উত্তরবংগ মন খারাপ সবাইরে একসাথে পঁচায়া দিলেন দেখি!!! যাই হোক বেশি চাল্লু হয়া লাভ নাই,জোলা হইয়াই ভালা আছি।লেখা ভাল লাগছে। মনে মনে পাঁচ দিলাম।

~~~টক্স~~~

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই টক্স,
আসেন কোলাকুলি করি । কোলাকুলি
আমরা 'জোলা' - এইটা আসলে কিন্তু প্রসংশা চোখ টিপি

- এনকিদু

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হাহাহা মজা পেলাম বেশ। দেঁতো হাসি এত ঝামেলার পর নীরব হোটেলের খাওয়া দাওয়া কেমন হোল? আসলেই উত্তর বঙ্গের ছেলেরা নরম সাদাসিধা হয় আমার বাবার মত হাসি
--------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অতিথি লেখক এর ছবি

মুমু আপু,
খাওয়া দাওয়া খারাপ হয়নি, ভালই হয়েছিল । জনপ্রতি মাত্র ২৮ টাকায় এক গাদা ভর্তা ভাজি হাবি জাবি খেয়েছিলাম ।

আসলেই উত্তর বঙ্গের ছেলেরা নরম সাদাসিধা হয় আমার বাবার মত

আর মেয়েরা কি চালাক-চতুর হয় ? কোন চ্যানেলে যেন একটা টেলিফিল্ম বা নাটক দেখেছিলাম, ছবিয়ালদের করা কাজ । ক্যারম বোর্ড খেলাকে ঘিরে । ঐ গল্পে এক বগুড়ার মেয়ে ছিল । সেই রকম খান্ডারনী রে ভাই ! বগুড়ার মেয়েদের সুনাম অবশ্য আজকে-কালকের না, অনেক প্রাচীন কাল থেকেই ।

- এনকিদু

মুশফিকা মুমু এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি আমি বগুরার মেয়ে আর আর একথা জানবো না চোখ টিপি
চালাক চতুর হওয়া ভালোই খারাপ কিছু না খাইছে
আম্মু অবশ্য আমাকে বগুরার মেয়ে বলতে চায়না, আব্বুকে বলে আমি আম্মুর দেশের মেয়ে গড়াগড়ি দিয়া হাসি , কারণ মেয়েরা নাকি মার কাছ থেকে বেশি পায়, আব্বু হাসে। আব্বু বলে আমার ভালো সব কিছু বগুরার মেয়ে বলেই আর আম্মুর কথা ময়মনসিংহের বলে। দোষের বেলায় আবার উলটো টা খাইছে
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍বর্ণনা পড়ে মজা লেগেছে দেঁতো হাসি

আচ্ছা ভাই, "এনকিদু" কী? খায় না পিন্দে?
বড়োই কৌতূহল জানতে!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

দ্রোহী এর ছবি

আচ্ছা ভাই, "এনকিদু" কী? খায় না পিন্দে?
বড়োই কৌতূহল জানতে!

এনকিদু হইতেছে একধরনের কদু। বিশ্বাস না হইলে লিংক দ্যাখেন হাসি


কি মাঝি? ডরাইলা?

অতিথি লেখক এর ছবি

সন্ন্যাসী দাদা,
বুঝতে পেরেছি, রুশ, ইউক্রেনীয়, স্লাভিক গল্প পড়েছেন গাদা গাদা কিন্তু মেসোপটেমীয় সাহিত্য পড়া হয়নি খুব একটা । গিলগামেশের উপাখ্যানটা কোথাও থেকে জোগাড় করে পড়ে ফেলুন । এটাই সম্ভবত জানামতে সবচেয়ে প্রাচীন লিখিত উপন্যাস । পোড়া মাটির ফলকে লেখা ছিল কিউনিফর্ম লিপিতে । ঐ গল্পের একটি চরিত্র এনকিদু । আর হাতের কাছে বই পত্র না পেলে গুগল আর উইকি তো আছেই । গল্পটা ভাল লাগবে আশা করি ।

- এনকিদু

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍জানার কোনও শেষ নাই... মন খারাপ

বান্দাকে অজ্ঞানের তিমির থেকে জ্ঞানের পথে নিয়ে আসার কারণে আপনাকে এবং দ্রোহীকে অজস্র ধন্যবাদ।

গল্পটা, মনে হয়, পড়া হবে না আমার। মিথোলজিতে উত্সাহ বোধ করিনি কখনওই মন খারাপ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- উত্তরবঙ্গ আড় বুড়িগঙ্গার পুলাপাইন না খালি, এইটা হইলো ঘোর কলিকাল।
বেশ কয়েক বছর আগে আমার আড়াই-তিন বছইরা ভাইগ্না একদিন আমারে ঠাশ কইরা কয়, "মামা, হাইছোনাতো ব্যাঙের মতো!"

আমি টুপ কইরা আসমান থাইকা পইড়া ভাবা ধরলাম, ব্যাঙ কি আসলেই হাসে? আর হাসলেই বা কেমনে হাসে? গাঁও গেরামের পোলা হইয়া জীবনে ব্যাঙের হাসি দেখলাম না আর এই পিচ্চি কিনা ঢাকা শহর থাইকা একদিনের জন্য বাইর না হইয়াও ব্যাঙের হাসি চিন্না ফেলসে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
আপনারে মন্তব্যের জন্য দুইটা জাঝা জাঝা দিলাম ।

টেনিদার গল্পে একটা ডায়লগ ছিল, ঢাকাইয়া পোলা হাবুল সেন বলত । কথাটা হল "ভাইয়া ব্যাং" । "আমাগর সবাইরে ইঞ্জেকশন দিয়া ভাইয়া ব্যাঙ্গের মত চিত কইরা ফালাইয়া রাখল" - এরকম একটা লাইন ছিল । আমার মনে হয় হাবুল সেনের 'ভাইয়া ব্যাং' এর সাথে আপনার ভাগ্নের ব্যাঙ্গের কিছু একটা সম্পর্ক আছে । হাবুল সেন আর আপনার ভাগ্নে দুইজনেই তো ঢাকাইয়া পোলা ।

- এনকিদু

দ্রোহী এর ছবি

পিচ্চির দোষ কী? বুয়েট ক্যাম্পাস চিনবেন মাগার নিরব হোটেল চিনবেন না। ঠিকই আছে। মারে নাই যে সে জন্যে মনে মনে ধন্যবাদ দেন। হাসি


কি মাঝি? ডরাইলা?

:) এর ছবি

আমিও তাই কই। নিরব না চিনলে ক্যম্নে কী?

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ হ্যাঁ তাতো বটেই । এই পিচ্চিরা আছে বলেই না আমার মত জোলারা ঢাকা শহরে এসে নীরব হোটেল খুঁজে পায় । নাইলে তো আমি কবেই পুরান ঢাকার গোলক ধাঁধাঁয় হারিয়ে যেতাম ।

- এনকিদু

সৌরভ এর ছবি

হাহ হা।
সেইরম।
হায় "নীরব", হায় বকশীবাজার, হায় আউল্লাহ, হায় বুয়েট।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আহ্ নিরব হোটেল... গভঃ ল্যাবের মাঠে ফুটবল খেইলা ভ্যান নিয়া গান গাইতে গাইতে নিরব হোটেলে গিয়া খাওয়া... তারপরে আবার ভ্যান নিয়া বেইলী রোডে ফেরা... কি সব দিনের কথা মনে করায়ে দিলেন...

তখন ঝগড়া কইরা পুরান দল ছাড়ছি... কিন্তু থিয়েটার তো ছাড়ি নাই... নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে এপ্লাই কইরা বইসা রইছি দুই বন্ধু... আমি আর সুমন আনোয়ার (লীলেনদা চিনবো)। তো তখন বিকাল থেকা রাইত পর্যন্ত বেইলী রোডে আড্ডা... এক রাইতে বেইলী রোড ফাঁকা হওনের পরে আমরা দুইজনে উঠলাম... ফুটপাতে দুই পিচ্চি ঝগড়া করে... এটা আরেকটারে কয়... 'তর মায়েরে আমি ... ... ...'
সেইটা শুইনা অপর পিচ্চির জবাব 'এহ... তুই আমার মায়েরে ... ... ...তারবি?' টাশকি যা খাইছিলাম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

স্পর্শ এর ছবি

মজার লেখা! চালাও ফুল স্পিড এ! দেঁতো হাসি
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
এক্কা... দোক্কা... তেক্কা...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখিত কদু ভাই সরি এনকিদু ভাই আপনার কোলাকুলি ব্যাক করতে আসছিলাম।জোলা যদি প্রশংসা হয় তাইলে কওনের কিচ্ছু নাই।
লেখাডা সত্যই ভাল আছিল।

~~~টক্স~~~

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।