উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে । যাদের বাড়িতে ছোট ভাই-বোন বা আত্নীয় স্বজন আছে পরীক্ষার্থী, তারা হয়তো কেউ কেউ পরীক্ষার হলে যাচ্ছেন পরীক্ষার্থীর সাথে । সেই এলাকায় কোচিং সেন্টারের লোকজন কি ভীষন উৎসাহে লিফলেট বিলি করছে তা ভাল করেই জানেন । যারা পরীক্ষার্থীর সাথে যাচ্ছেন না, তাদেরও জেনে যাবার কথা পরীক্ষার্থী ছেলে বা মেয়েটিকে বাড়ি ফেরার সময় তার হাতে লিফলেটের বান্ডিল দেখে । আপনি পরীক্ষার্থী বা তার শুভাকাঙ্খী যেই হন, ঐ এলাকায় গিয়ে খালি হাতে ফিরতে পারবেন না । বিজ্ঞাপনী প্রচারনার এটা গেল একটা দিক ।
পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে আমার গ্রামীন ফোনের নম্বরে একটা sms পেলাম, তাতে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা জানান হয়েছে । ব্যাপারটা ব্যবসায়ীক দৃষ্টিকোন থেকে করা হলেও, আমার কাছে খারাপ লাগেনি ।
আমার নিজের ছোট ভাই এবার পরীক্ষার্থী । আজকে ছোট ভাই একটা sms দেখাল তার মোবাইল ফোনে(সাথের নম্বরটি sms যিনি পাঠিয়েছেন তার):
+8801711336824 Want to be a BUET student ? Get admitted into "SUNRISE" coaching centre & enjoy 2,500/= TK. discount on 8,500/= TK. till 31 May '08. First come first serve. SO RUSH NOW !!! |
জানল কেমনে যে এই মোবাইল নম্বরটি পরীক্ষার্থীর ? হয়তো জানে না, সবাইকেই এই sms দেয়া হয়েছে । কিন্তু সেক্ষেত্রে আমিও পেতাম । খোঁজ নিয়ে দেখেছি পরীক্ষার্থীরা অনেকেই এই sms পেয়েছে । কোন ভাবে পরীক্ষার্থীদের নম্বর যোগাড় করা হয়েছে, বুঝতে পারছি । উল্লেখ্য যে, আমার ভাই কোনকালে সানরাইজে পড়েইনি, তাদের সাথে তার পরিচয় নেই । কাজেই সানরাইজ নামের কোচিং সেন্টারটি যে তাদের পরিচিত ছাত্র-ছাত্রীদের কে sms দিচ্ছে এই ধারনাটা বাতিল করে দেয়া যায় । যাহোক এই গেল বিজ্ঞাপনের আরেক চেহারা ।
রাস্তার পাশে অনেক দেয়ালে সানরাইজের পোস্টার টাঙ্গানো হয়েছে, তাতে সানরাইজে পড়ে যারা বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় সফল হয়েছে তাদের নাম ও ছবি আছে । এটা ছিল কয়েক বছর আগের চিত্র । এবছর নতুন জিনিস দেখলাম । যারা এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তারাও নাকি অনেকেই ভর্তি হয়ে বসে আছে । পরীক্ষা শেষ করেই তারা বুয়েট ভর্তির কোচিং শুরু করে দিবে । সেই সব ছাত্র-ছাত্রীদের নামও (কলেজের নাম সহ) এবার তালিকা করে দেয়া হয়েছে । মনে হয় যারা সানরাইজের কথা বিশ্বাস করছেনা তাদেরকে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়বে ।
এখন কথা হচ্ছে, এই তালিকায় আমার ভাইও আছে, তার পূর্ন নাম ও কলেজের নাম দুটাই আছে পোস্টারে । একই নামের দুই জন মানুষ থাকতেই পারে - এটা ভেবে নিতে আমার বা আমার ভাইয়ের কোন আপত্তি ছিল না । কিন্তু কলেজের নামও যে মিলে গেল ! আর এটা কোন স্বনামধন্য কলেজ না যেখান থেকে প্রতি বছর এক হাজার ছাত্র পরীক্ষা দেয় । ঢাকা শহরের হিসেবে রীতিমত ছোট কলেজ, মাত্র দুই'শর মত ছাত্র ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে এবার । আর জানামতে ঐ কলেজ থেকে এই বছর এই নামের একজনই পরীক্ষা দিচ্ছে । বলে রাখা ভাল, আমার ভাই এখন পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ঠেলা সামলাতেই ব্যস্ত আছে, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চেষ্টা করব, কোন কোচিংএ ভর্তি হব এখনো খুব একটা চিন্তা ভাবনা করা হয়েছে বলে মনে হয় না । গিয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়া তো দূরের কথা ।
সানরাইজের বক্তব্য অনুযায়ী, আমার ভাই এখন সানরাইজ কোচিং সেন্টারের একজন নিবন্ধিত ছাত্র । বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার কোচিং শুরু করবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করেই । আপনি যদি এবার উচ্চামাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হয়ে থাকেন, আর বুয়েটের ছাত্র/ছাত্রী হবার ইচ্ছা থেকে থাকে, তাহলে আমার ভাইয়ের মত বুদ্ধিমান হোন, এবং অতি শীঘ্র ভর্তি হয়ে যান । আসন সংখ্যা সীমিত ।
মনে করা যাক আমার ভাই পরীক্ষার পর ভাবল, "আমি প্রকৌশলী হব না, চিকিৎসক হব ।" কিংবা ভাবল " পদার্থবিদ/গনিতবিদ/রসায়নবিদ হব " । অথবা ভাবল " চারুকলায় পড়ব " । আই,বি,এ তে পড়ার কথাও চিন্তা করতে পারে । ওর মাথায় কি আছে ও জানে । মোট কথা ভেবে দেখল সে প্রকৌশলী হবে না । সেক্ষেত্রে সানরাইজে তার ভর্তিটা নিয়ে কি করা যায় ? সানরাইজের sms অনুযায়ী কমপক্ষে ৬,০০০ টাকা খরচ হয়েছে তাকে সানরাইজের ভর্তি(?) করতে ।
ভাইকে কি আমি বলব যে এতগুলো টাকা অপচয় না করে কোচিংটা করতে । প্রকৌশলে ভর্তি হোক বা না হোক, পড়াটা কাজে লাগবে । যদিও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন অনেকাংশেই ভিন্ন হবে । নাকি সানরাইজে গিয়ে ভর্তি বাতিল করে টাকা ফেরত চাইব । ৬,০০০ টাকা তো কম না !
আশা করি আমার 'বুদ্ধিমান' ভাই তার মত বদলাবে না । সানরাইজে ভর্তির টাকাটাও গচ্চা যাবে না । পরীক্ষাটা শেষ করেই সানরাইজে গিয়ে কোচিং শুরু করে দিবে । ভর্তি তো আগে থেকে হয়েই আছে ।
মন্তব্য
আসলেই অবাক ব্যপার!! এদের গোয়েন্দা বাহিনী আছে মনে হয়!! কোচিং সেন্টার ওআলাদের এরকম করা টা নতুন কিছুনা। এস এম এস এর ব্যপার টা অবশ্য অভিনব!! দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যেই সাথে প্রচারনা আর প্রতারণা ও !!
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হুম। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে এখন গাজী প্লাস্টিক ট্যাংকও তৈরি হচ্ছে।
সানরাইজের এই অবাক ভর্তি তো সাধারণ ব্যাপার।
কি মাঝি? ডরাইলা?
হুমমম...
প্লাস্টিকের তৈরী সিন্থেটিক অ্যাডমিশন
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
নতুন মন্তব্য করুন