০২.০৪.
এশিয়ার প্রাচীন সভ্যতা গুলোর কথা বলতে গেলে সবার আগে নাম আসে মেসোপটেমীয় সভ্যতার । মেসোপটেমীয়া অঞ্চলটাকে যে সভ্যতার আঁতুড়ঘর বলা হয় - তা অনেকেরই জানা । মেসোপটেমীয়া অঞ্চলে সুমের, আক্কাদ, ব্যাবিলন, অ্যাসিরীয়া প্রভৃতি নগর কেন্দ্রীক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল । এসব নগরের সভ্যতা গুলো মিলিয়ে একত্রে মেসোপটেমীয় সভ্যতা বলা হয় । মানব জাতির ইতিহাসে দাড়ি নিয়ে সর্বাধিক আদ্যিখেতা করা হয়েছে সম্ভবত মেসোপটেমীয় সভ্যতায় । তাদের পুরুষেরা বড় দাড়ি রাখত । সম্ভবত জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারনেই তাদের ঘন দাড়ি হত । সেই দাড়ির যত্ন আত্তিই ছিল পুরুষের প্রসাধন চর্চার একটা বড় অংশ । দাড়িতে নানা রকম তেল মাখা হত, চুলের মত দাড়িও আঁচড়ান হত, দাড়ি কোঁকড়া করা হত । দাড়ি নিয়মিত ছাঁটা হত, ছোট করার জন্য না, পছন্দসই আকার দেয়ার জন্য । সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় প্রভৃতি সভ্যতার লোক কাহিনী থেকে শুরু করে তাদের ধর্ম বিশ্বাস পর্যন্ত সর্বত্র পুরুষ ও তার দাড়ি একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ । আশুর, মারদুক, আনু, নারগিল সহ মেসোপটেমীয় সভ্যতার সবগুলো দেবতারই বিরাট ঘন দাড়ি । দেবতার দল পার করে সাহিত্যে মানব চরিত্রগুলোও সবাই দাড়িমুখো । সুমেরীয় সভ্যতার বিখ্যাত উপন্যাস হল গিলগামেশের উপাখ্যান । এটাই সম্ভবত এযাবৎ আবিষ্কৃত প্রাচীনতম উপন্যাস । গল্পের দুই প্রধান চরিত্র হলেন উরুকের রাজা গিলগামেশ আর বনে জঙ্গলে প্রকৃতির মাঝে পশু-পাখির সাথে বেড়ে ওঠা আজব মানুষ এনকিদু ( ) । গল্পের শুরুতে এনকিদু কে দেখা যায় সারা গায়ে বিরাট লোম আর বিরাট চুল-দাড়ির অধিকারী এক আজব লোক । এক পর্যায়ে তাকে লোকালয়ে নিয়ে এসে সাফসুতরো করা হয় । চুল ছেঁটে ছোট করা হয় । কিন্তু তার বিশাল দাড়ি আগের মতই থেকে যায় । গিলগামেশ এবং এনকিদুর যত প্রতিকৃতি পাওয়া গেছে তাতেও দেখা যায় তাদের দুজনেরই ঈর্ষনীয় মানের দাড়ি ।
০২.০৫.
প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার কথা বলতে গেলে সাধারনত আর্যদের সমাজ সভ্যতা ইত্যাদি নিয়েই আলোচনা করা হয় । কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আর্যরা আসার আগেও এখানে যেই মানুষেরা বসবাস করত সেসব আদি বাসিন্দাদের কথাও আলোচনা করা দরকার । কিন্তু উপযুক্ত তথ্যের অভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে আর্যদের আসার আগের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা বেশ কঠিন । তবে আর্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু ধারনা পাওয়া যায় । রামায়ন, মহাভারত প্রভৃতি থেকে দেখা যায় যে দৈত্য, অসুর, রাক্ষস ইত্যাদি অনার্য চরিত্র গুলোর সব বড়সড় গোঁফের অধিকারী । যেমন রামায়নে রাবন । এ থেকে ধরে নেয়া যায় যে অনার্য জনগোষ্ঠীর পুরুষেরা বড় গোঁফ রাখতেন । হয়তো আর্য জাতির আগমনের অনেক আগে থেকেই বড় গোঁফ রাখার চল ছিল, যা আর্যরা এদিকে আসার পর তাদের চোখে পড়েছে । দাড়ির ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না । আর্যদের ধর্মে দীর্ঘকেশ দেবতার সংখ্যা কম নয়, আমনকি জটাধারী দেবতা, যেমন শিব, এর অস্তিত্বও রয়েছে । কিন্তু শিবের দাড়ি কিরকম ছিল ? আর্য সমাজে অভিযাত শ্রেনীর মধ্যে দাড়ি রাখার চল সম্ভবত ছিলনা । সারা ভারত জুড়ে রাজরাজড়াদের যত প্রাচীন ভাষ্কর্য দেখা যায় তাতে শ্মশ্রূমন্ডিত চেহারা চোখে পড়ে না । তবে সাধু-সন্ন্যাসীদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম । চুল-দাড়ি নিয়ে মাথা ঘামায় গৃহী লোকে, সন্ন্যাসীদের তাতে কিছু আসে যায় না । হিন্দু সন্ন্যাসের ধারনায় প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের মধ্যে এখানে একটা পার্থক্য চোখে পড়ার মত । খ্রীষ্টান সন্ন্যাসীদের ক্ষেত্রে দাড়ি কামানো আজকাল খুব সাধারন ব্যাপার, যদিও বাইবেলে দাড়ি না কামানোর দিকে অনেক ইঙ্গিত রয়েছে । কিন্তু হিন্দু সন্ন্যাসীরা এখনো দাড়ি কামানো ধরেননি । হিন্দু পুরোহিতেরা অনেকেই দাড়ি রাখেননা, অবশ্য পুরোহিত আর সন্ন্যাসী এক নন ।
এশিয়ার আরেকটি প্রধান সভ্যতা হল চৈনিক সভ্যতা । জিনগত কারনেই চীনের লোকেদের দাড়ি খুব একটা হয়না । কিন্তু তারপরেও প্রাচীন চীনের ধর্মবিশ্বাসে ও সংস্কৃতিতে দাড়ির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখা যায় । প্রাচীন চীনে দাড়িকে মনে করা হত জ্ঞান, অভিজ্ঞতার ও দীর্ঘায়ুর প্রতীক । বৃদ্ধ হওয়া মানেই অথর্ব হওয়া নয়, বৃদ্ধ হবার অর্থ প্রমানিত ভাবে দীর্ঘায়ুর অধিকারী হওয়া । দীর্ঘায়ুর দেবতা শৌ জি গং কে দেখা যায় মাথায় চকচকে টাক আর লম্বা দাড়ি বিশিষ্ট এক বৃদ্ধ রূপে । ভুত-প্রেত ও অশুভ আত্নাদের হাত থেকে রক্ষাকারী দেবতা ঝং গুই এরও রয়েছে বিশাল ঘন কাল দাড়ি । 'তাও' মতবাদের তিন প্রধান উপাস্য, যাদেরকে 'বিশুদ্ধতম তিনজন' নামে ডাকা হয়, তাদেরো দেখা যায় লম্বা দাড়ি । তিনজনের মাঝে অপেক্ষাকৃত বয়ষ্ক তাইকিং হলেন 'সম্মানিত জন', এর মাথায় টাক এবং দাড়ি সাদা । চীনের ধর্মবিশ্বাসে সবচেয়ে গরুত্ব বহনকারী জীব ড্রাগন । ড্রাগনেরাও কেউ দাড়ি ছাড়া নন । সামাজিক জীবনেও দাড়ির ভূমিকা কম নয় । চীনাদের মতে দাড়ি হল দীর্ঘায়ুর প্রতীক - একথা আগেই বলা হয়েছে । আর দীর্ঘায়ু হওয়া মানেই দীর্ঘ জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা এবং অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞানের অধিকারী হওয়া । কাজেই লম্বা দাড়িওয়ালা লোকেরা সামাজিক ভাবে বেশি মর্যাদা পাবে - এটাই স্বাভাবিক । আগেকার দিনে চীনের লোকেরা নিজেদের প্রতিকৃতি আঁকিয়ে নেয়ার জন্য যখন 'পোজ' দিতেন, বয়ষ্ক লোকেরা তাদের লম্বা দাড়িতে হাত রেখে দাঁড়াতেন অথবা এমন ভাবে বাতাসের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন যেন দাড়িতে হাল্কা বাতাস লাগে ।
(চলবে)
মন্তব্য
হুমম... তথ্যপূর্ণ লেখার জন্য ধন্যবাদ। দাড়ি নিয়ে এত্তো কিছু... ৫ দিন ধরে না কামানো দাড়িতে আমাকে কেমন লাগছে দেখে আসি, রীতিমত পোজ দিয়ে
~ ফেরারী ফেরদৌস
পাংখার তলে পোজ দিয়ে দাঁড়ান, যেন বাতাস লাগে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ক্লান্তিরা লেগে থাকে না কামানো দাড়ির গোড়ায়...
০২
হোচিমিনের দাড়িটা বেশ মজার
তার যে কোনো ছবির উপরে কাঁচি চালিয়ে তাকে একেবারে ক্লিন শেভ করে ফেলা যায়
তার দাড়িগুলো মুখ থেকে আলাদা থুতনির নিচে আলগা করে ঝোলানো
০৩
সিলেটে এক বিশাল পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুহম্মদ নূরুল হক
তার দাড়িগুলোও ছিল ওরকম থুতনির নিচে আলগা করে ঝোলানো
আমি একবার তার একটা সাদা কালো ছবির উপর কাটার ঘষে ঘসে তাকে ক্লিন শেভ করে ফেলেছিলাম বলে তার এক ছেলে আমাকে মারতে এসেছিল
০৪
তবে দাড়ি নিয়ে অত কথা বলার কোনো দরকার নেই
সোজা বলে দিলেই হয় পৃথিবীর সব মহামানবদের দাড়ি ছিল (আমিসহ) আর যার দাড়ি নেই কিন্তু মহামানব দাবি করে সে নকল মহামানব
৪. শয়তান দাড়ি রেখে নিজেকে মহামানব দাবি করলে ? আপনি, আমি, গোলাম আযম - তিনজনই দাড়িমুখো । আমাদের মধ্যে একজন মহামানব(আপনি), সেটা আমি নই । বাকি যে থাকল সেই ব্যাটা শয়তান ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
গোলাম আযমের দাড়িটা সেই তালিকায় পড়ে না কারণ ওটার সাথে গোঁফ নেই
গোফ ছাড়া শিম্পাঞ্জির মতো দাড়িকে বলে দুই নম্বরি দাড়ি
কারণ গোঁফটা মূলত দাড়িরই এক্সটেনশন। শুধু মাঝখানে মুখ ঢুকে যাওয়ায় ওটাকে দাড়ি থেকে একটু দূরে দূরে মনে হয় (ছিট মহলের মতো বিষয় আর কি)
শিম্পাঞ্জী দুঃখ পেতে পারে, এভাবে শিম্পাঞ্জীর সাথে তুলনা দেয়া ঠিক না । শিম্পাঞ্জী বলে কি তারা মানুষ নয় ? এখন যদি গোলাম আযমের সাথে এক পংক্তিতে ফেলার প্রতিবাদে শিম্পাঞ্জীরা আমাদের জেনুইন দাড়ি ধরে টানাটানি শুরু করে দেয় তখন ?!?!
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
স্বাগতম, হে দাড়িয়াল ভাই।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ধন্যবাদ
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
দারুন চলছে ! চলুক চলুক !
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
চীনা দেবতাদের ছবিও দিয়ে দিলাম, আরো একটু চলল
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
কাজী নজরুল করিয়াছ ভুল
দাড়ি না রাখিয়া রাখিয়াছ চুল
এটা যেন কার ছড়া?
কার লেখা জানি না, মনে হয় আমাদের মত জেনুইন দাড়ি ওয়ালা পোংটা কারো কাজ হবে । গুগল করে বের করেছি ছড়াটির আরো দুটি লাইন ।
ছড়ার উৎস
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
যার যা বুঝ
দাড়ি কাইট্টা রাহি মুছ।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
বেশতো । অনার্য অসুরের প্রতীক ।
কিন্তু "দাড়ি কাইট্টা মুছ" রাখার ব্যাপারে লীলেন ভাইয়ের মতামতটা শোনা হয়নি । দেখি লীলেন ভাই কি বলেন । এইটাকে কোন প্রানীর সাথে তুলনা দিবে কে জানে
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আমার দাড়ির বয়স ২০ বছর পূর্ণ হলে বুঝতে পারি যে আমি মহামানব নই। তাই হুড়মুড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে ছেনি চালিয়ে কেটে ফেলি। তাড়াহুড়োটা ছিল মূলত দুদকের ভয়ে। যদি এই অভিযোগে ধরে বসে যে 'মহামানব না হয়েও ব্যাটা দাড়ি বাগিয়েছে!'
অবশ্য গোঁফ রেখে দিয়েছি। এর মায়া দুদকও ছাড়াতে পারে নি।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
গোঁফ ছবিতেই দেখতে পাচ্ছি । কিন্তু গোঁফের সাথে মুখের নীচে , মুখের পাশে কি জানি আছে, পরিচিত জিনিস ।
মায়া বড় খারাপ জিনিস । মায়ার জালে আটকা পড়লে মহামানব হবেন কিভাবে ? গোঁফটাও ফেলেদিন, মায়ার বাঁধন ছিন্ন হয়ে যাক । তারপর আসলেই মহামানব হয়ে যাবেন । আবার নতুন করে দাড়ি গজিয়ে মুখ ভরিয়ে ফেলবে । চক্র পূর্ণ হবে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
এটা তো দুদক জন্ম নেবার আগের ছবি।
না গো, গোঁফ ছাড়া আমার মেয়ে মেয়ে লাগে!
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
হবে না, হবে না । এভাবে মোক্ষ লাভ হবে না ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
সচল হওয়ায় অভিনন্দন।
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল
ধন্যবাদ
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
নতুন মন্তব্য করুন