কিছুদিন আগে শাহেনশাহ'র জন্মদিন ছিল । তার পরিকল্পনা ছিল ধানমন্ডিতে এক নামকরা রেস্তোরাঁয় আমাদের খাওয়াবেন । ব্যক্তিগত ভাবে আমার কোন আপত্তি ছিলনা । কিন্তু আসরে উপস্থিত লোকজন সবাই নানারকম গাঁইগুঁই শুরু করলেন । তাদের কথা থেকে মোটামুটি যা বুঝলাম, এখন অনেক রাত - নয়টা বাজে প্রায় । এখন ধানমন্ডিতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করা পোষাবে না । আর তাছাড়া আগে থেকে জানা ছিলনা, তাই সবাই নাকি ইফতারেই পেট ঠুসে খেয়েছে । শেষে প্রস্তাব দেয়া হল মোট বাজেট থেকে সবার জন্য মাথা পিছু যা বরাদ্দ তাই আমাদের হাতে হাতে দিয়ে দেয়া হোক, পরে যে যার সুবিধা মত খেয়ে নিবে । ধানমন্ডিতে খাওয়াতে আমার ব্যক্তিগত ভাবে কোন আপত্তি না থাকলে, নগদ প্রাপ্তির কথাটা চিন্তা করে মনে মনে জনতার পক্ষাবলম্বন করলাম । শাহেনশাহ চাইলে নাকি অর্থপ্রাপ্তির রসিদও দেয়া যাবে, টুটুল ভাই বললেন । কিন্তু তাতেও শাহেনশাহর মন গলে না দেখে সবজান্তা প্রস্তাব দিলে জনপ্রতি একশটা টাকা অন্তত দিক । যাওয়া আসার খরচটা উঠবে তাহলে । তাতেও শাহেনশাহ তেমন আগ্রহ প্রকাশ না করায় বিরক্ত হয়ে নজরুল ভাই জন্মদিনের উপহার ফেরত নিয়ে নিলেন ।
শেষে অনেক গুঁতাগুঁতি ঠেলাঠেলির পর সবাই ফকিরাপুলে শর্মায় খেতে রাজি হল । আমরা শর্মা হাউস আবার তারেকের বাসার কাছেই, তারেক নিয়মিত এখানে খদ্দের ধরে আনে । সেই সুবাদে এদের কাছ থেকে কমিশন ও পায় । সেই কমিশনের টাকায় রামায়ন মহাভারত এসব পড়ে । যাহোক, সেই তারেক বুদ্ধি দিল মেক্সিকান চিলি বার্গার নাকি খেতে ভাল । তো আমি সেই জিনিস খাব বললাম । পাশে বসা লীলেন ভাইও একই জিনিস খাবেন । তার পাশে সবজান্তাও একই কথা বলল । বেয়ারা অর্ডার নিয়ে চলে যাওয়ার পর আমি আমার মোবাইল থেকে গুগলে ঢুকে সেই খাবার জিনিসটার ছবি বের করলাম একটা । চেহারা দেখে লীলেন ভাইয়ের মেজাজ খারাপ, এই জিনিস নাকি খাবেননা । না বুঝে অর্ডার দিয়েছি, এটা খাবনা - এসব বায়না করা শুরু করলেন । কিন্তু এখন তো আর এসব বলে লাভ নেই, শাহেনশাহ বোঝানর চেষ্টা করেন ।
একটু পর বেয়ারা মুখ শুকনা করে এসে জানায় ঐ জিনিস আজকে আর দেয়া যাবেনা । এই কথা শুনে আমরা খুশিতে হৈ হৈ করে উঠি ।
আজকে অনেক দিনের পুরান এক বন্ধুর সাথে দেখা হল । কলেজ শেষ করার পর মাঝখানে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় দেখা হয়নি । আজকে মাশ্রুমের আড্ডায় তাই আমি তার সাথে মশগুল হয়ে পড়ে থাকি গত পাঁচ বছরে আমার এদিকে ঘটে যাওয়া ঘটনা শোনাতে আর তার ওদিকের ঘটনা গুলো শুনতে । আড্ডায় উপস্থিত বাকি তিনজনের কথা ভুলে অনেকক্ষন ধরে চলে আমাদের এই সব প্যাচাল । তারপর এক সময় শাহেনশাহ বাড়ি ফেরার জন্য তাড়া লাগান শুরু করলে টের পাই প্যাচাল পাড়তে পাড়তে অনেক সময় পারে করে ফেলেছি ।
তারকে, সবজান্তা আর শাহেনশাহ'র কাছে এই সুযোগে ক্ষমা প্রার্থনা করি আজকে একটা শুরু হতে যাওয়া রসাল আলাপ কে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আমার এই বন্ধুটার সাথে মজে যাওয়ার জন্য । তবে মাশ্রুমনামার চরিত্রদের যদ্দূর চিনি, আমার অংশগ্রহন না করায় আলাপের রস খুব একটা কমার কথা না । উলটা মাথাপিছু রসের পরিমান বেশি পড়ায় তারা মনে হয় আরো আয়েশ করে রসিয়েছেন ।
কখনো অনেক দিনের চেনা কারো চেহারা ঠিক অনেক দিন আগের মতই দেখায়, যেন বয়সের সাথে চেহারা মোটেও বদলায়নি । আমার পিচ্চি বয়সের এক বন্ধু আছে, দুইজন এক সাথে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলাম । সাদা শার্ট, নেভীব্লু হাফ প্যান্ট আর সাদা কেডসের সাথে হাঁটু পর্যন্ত মোজা পড়ে স্কুলে যেতাম আমরা । সেই বন্ধু বড় হয়ে লম্বায় আমার থেকে কয়েক ইঞ্ছি উঁচু হয়ে গেল, চোখে চশমা উঠল, সেই সাথে দাড়ি গোফ হেনতেন তো আছেই । কিন্তু মাঝে মাঝে আমি এখনো সেই সাদা শার্ট, নেভীব্লু হাফপ্যান্ট আর সাদা কেডসের সাথে হাঁটু পর্যন্ত সাদা মোজা পড়া পিচ্চি ছেলেটার চেহারাই দেখি ।
এটাতো গেল স্কুল শুরুর সময়ের বন্ধুর কথা । কলেজের শুরুতে যেসব বন্ধু হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রেও অবস্থাটা প্রায় একই রকম । শুধু পার্থক্য হল সেরকম বন্ধুদের দিকে তাকালে আমি সেই সতের বা আঠার বছর বয়সের চেহারাটাই দেখি । আজকে যেমন আজিজ মার্কেটের নীচে অপেক্ষারত মেহদী কে দূর থেকে দেখলাম যখন, মেহদী পকেটে হাত ঢুকিয়ে পায়চারি করছিল । কলেজের থাকতে ওর চেহারায় যেরকম বালকসুলভ গুডবয় ভাবটা ছিল, তার জায়গায় একটা লোকসুলভ ভাব এসেছে কিন্তু সেটাও গুডলোক । এর চেহারা থেকে কোনদিন গুডবয় ভাবটা সরবে বলে মনে হয়না এবং এই কারনেই হঠাৎ আমার মনে হল মেহদী আসলে সেরকমই আছে ।
মেহদী আমাকে দেখেই বলল, "তুই তো একেবারে ব্যাটা হয়ে গেছিস !" মেহদীর চেহারা থেকে গুডবয় ভাবটা যেরকম কোন ভাবেই সরেনা, আমার চেহারায়ও গুডবয় ভাবটা কোন ভাবেই আসে না ।
মন্তব্য
কোন মেহেদী? পৌণেডাক্তার সচল মেহদী?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
নজ্রুল ভাই পরে জনগণ (!) এর চাপে পড়ে আমার উফার ফেরৎ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন ;)
ওইটা ফকিরাপূল না, হাতিরপুল শর্মা হাউস।
নাহ, আমরা মাইন্ড খাইনাই, বরঞ্চ তারেক কেন কবিতা না পড়ে কবি জীবনি পড়ে তা নিয়ে বেশ কড়া আলোচনা হয়েছিলো কড়া চা'য়ের মত। :p
একটু আগে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পেলাম, উপহারটা নাকি আদৌ তার দেয়া ছিলনা । সেক্ষেত্রে ফেরত নেয়ার প্রশ্নই আসে না । ঐটা একটা স্টান্টবাজি ছিল মাত্র ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
তারেক এখন কোথায়? অনেকদিন দেখিনা।
...........................
Every Picture Tells a Story
এই মূহুর্তে মনে হয় তারেক বাড়ি আছে, রামায়ন মহাভারত কিছু একটা পড়ছে । আর মাঝে মাঝে আমাদের আড্ডা বসলে, তখন আড্ডায় থাকে । এগুলো বাদ দিলে সারা দিনের মধ্যে কিছু সময় ইঞ্জুরি টাইম ধরে নিতে হবে যখন তারেক খাদ্য গ্রহন, হজম, নিষ্কাশন ইত্যাদি প্রাকৃতিক কাজ গুলো করে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
তারেকের কথা আসলে অন্য কারনে জানতে চেয়েছি।
তারেক বেশ আগে আমাকে সাক্ষী রেখে জিফরানের বাবার থেকে একটা বই ধার এনেছিলো, সেইটা ফেরত দিয়েছে কীনা তা জানা দরকার।
...........................
Every Picture Tells a Story
এই কথাটা বলার মাধ্যমে, তারেকের এইখানে উদয় হওয়ার যৎকিঞ্চিত সম্ভাবনাকেও একদম মেরে ফেললেন :D
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
মাশ্রুম খাইতে মন চায়।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আপনারে মাইনাচ । আপনার খালি মনেই চায়, পেট চায় না । পেট চাইলে ঠিকি এসে হাজির হতেন ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ওই, তথ্যগত ভুল আছে। আমি মেক্সিকান চিলি বার্গার খেতে চাই নাই কখনোই। আমি সবসময়ই চিকেন শরমার পক্ষে ছিলাম।
পুনশ্চ: কী ব্যাপার ! আজকে আসার কথা থাকার পরও আসলি না কেন ?
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আইলসামি তে কামড়াইল । কালকে আবার বসা হবে আশা করি ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
শাহেনশাহ তেমন আগ্রহ প্রকাশ না করায় বিরক্ত হয়ে নজরুল ভাই জন্মদিনের উপহার ফেরত নিয়ে নিলেন ।
একটু পর বেয়ারা মুখ শুকনা করে এসে জানায় ঐ জিনিস আজকে আর দেয়া যাবেনা । এই কথা শুনে আমরা খুশিতে হৈ হৈ করে উঠি ।
হাহাহাহাহাহ
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
সিমন ভাইয়ের কাছে তাহলে কিছু পাওনা রয়ে গেছে দেখছি...মুহাহাহা।
আমি আসছি !!!
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
নতুন মন্তব্য করুন