রোজার মাসটা খুব কষ্টে গেল । বিনা মাশ্রুমে আড্ডা দেয়া লাগল সারা মাস । আমরা ঊনত্রিশটা রোজার মধ্যে অর্ধেক দিনই প্রায় আড্ডা বসিয়েছিলাম আজিজের পাশে কঞ্চিপায় । কঞ্চিপা হল আজিজের পাশে একটা চিপার নাম, সেখানে একটা চায়ের টং আছে । সেখানে আমাদের কয়েকজনের বাঁধা ধরা জায়গায়ও আছে বসার । তারেক বসে একটা বেঞ্চের দুই দিকে দুই পা দিয়ে, দেয়ালে হেলান দিয়ে । আমি সাধারনত তারেক আর চুলার মাঝামাঝি একটা জায়গায় বসি । শাহেনশাহ বসে বেঞ্চের পায়ার ঠিক উপরে, নাহলে বেঞ্চটা ভাঙ্গার সমূহ সম্ভাবনা ।
যাহোক, রোজার মাসে মাশ্রুম না পেলেও অজস্র কাপ চা আর অনেক শলা সিগারেট পুড়িয়েছি আমরা । এই সুযোগে চায়ের টঙ্গের খালা ব্যপক আয় করে নিয়েছেন । আশা করি এইবছর তার ঈদটা ভাল হয়েছিল ।
এক কালে রায়হান আবীর ইচ্ছে ঘুড়ি উড়িয়ে মজার মজার ব্লগ দিত, আজকাল আর দেয়না । ওর ঘুড়িটা কোন গাছের আগায় আটকেছে হয়ত । তবে ইদানিং উদ্যোগী কবি তারেক নিজেই ঘুড়ি নিয়ে নেমেছে । কিছু দিন ধরে নিজের বাড়ির ছাদে ঘুড়ি উড়িয়ে কয়েকটা বিকেল পার করেছে তারেক । ওদের বাড়িটা ছয়তলা, চার পাশে অন্য সব গুলো বিশ তলা দালান । ঐ সব দালানের ছাদে যেই বালিকারা বিকালে বায়ুসেবনে আসে, তারেকের ঘুড়ি তাদের চোখে পড়েনা । অথবা চোখে পড়লেও, ছয়তলার বাসিন্দাকে না দেখার ভান করে তারা পাশে বিশ তলা দালানের বালকদের খুঁজতে থাকে । শ্রেনী সচেতন বুর্জোয়া বালিকাদের এহেন আচরণে বিরক্ত তারকে এখন দালানের ছাদ ছেড়ে খোলা মাঠে ঘুড়ি উড়াবে ভাবছে । সামনে কোন একদিন যাব হয়ত আমরা কোন মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ।
মামুন ভাইয়ের আমাদের জন্য চকলেট এনেছিলেন মাহাসাগরের ঐপাড়ের এক দেশ থেকে । প্রথম যেদিন দেখা হল সবাইকে চকলেট দিলেন । প্রহরী আর দুষ্ট বালিকার ভাগের চকলেট শাহেনশাহ'র জিম্মায় রাখা হয়েছিল, কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেই জিনিস আর তাদের হাতে পৌঁছায়নি । "পরহস্তে চকলেট" একটি পচনশীল দ্রব্য হওয়ায় পচন শুরু হওয়ার আগেই তার সদগতি করা হয়েছে ।
সেদিন মামুন ভাইয়ের সম্মানে আয়োজন করা হয়েছিল একটা আড্ডা । সেখানে অনেকদিন পর বিপ্লব ভাইয়ের সাথে দেখা হল । উনি আসলেই জীবিত নাই । কেমনে বুঝলাম বলি । ইফতারের সময় আমরা সবাই ভাগাভাগি করে খাচ্ছিলাম । আমার টেবিলে ছিলেন আনিস ভাই, সবজান্তা বিপ্লব ভাই আর সুহান । খাওয়া দাওয়ার মাঝে হঠাৎ খেয়াল করলাম, বিপ্লব ভাই অনুমতি নিয়ে খাওয়া দাওয়া করছেন । ধরা যাক আমার কাছ থেকে বেগুনী নিতে চান, জিজ্ঞেস করলেন "বেগুনীর অর্ধেকটা নিই ?" । একটু পর হয়ত দেখা গেল সবজান্তার কাছ থেকে খেজুর নিতে চান, তখন আবার জিজ্ঞেস করলেন "একটা খেজুর নিই ?"
ওনার জীবিত কালে অনুমতি নিয়ে অর্ধেক বেগুনী খাওয়ার সম্পর্ক ছিলনা । সে আমলে আস্ত বেগুনীই তুলে নিয়ে খাওয়া যেত । অনেকটা শেরশাহ'র শাসনামলের মত ।
আমার ধারনা নিধি কোন ভাবে টের পায় কারা কারা বিয়াকুল । জীবিতদের মধ্যে সে শুধু বিয়াকুল লোক জনের কোলে যায় । এই ধারনাটার সত্যতা যাচাই করার জন্য আজকে কয়েকবার নিধিকে ডাকা ডাকি করলাম, একবারও আমার কোলে আসল না । তার কান্না কাটি থামনর জন্য নজরুল ভাই একটা বেলুন ফুলিয়ে দিয়েছিলেন, কিছুক্ষণ খেলার পর বেলুনটা ফেলে অন্য ঘরে চলে গেল । পরে এক সময় আমি সেই বেলুনটা দেখিয়ে নিধিকে ডাকলাম, পাত্তাই দিলনা ।
আরবী পুরাণে বলে, শিশুরা নাকি ফেরেস্তা (দেবদূত) দেরকে দেখতে পায় । ভাল লোক যারা, তাদের আশে পাশে ফেরেস্তারা অদৃশ্য হয়ে ঘুরে বেড়ায়, শিশুরা তাদের দেখতে পায় । এই কারনেই নাকি ভাল লোকেরা ডাকলেই শিশুরা তাদের কোলে যায় ।
এই ধারনার আদলে আজ মাশ্রুম পুরাণে আমি লিখে দিচ্ছি, শিশুরা বিয়াকুল লোকের কোলেই যায় । এবং এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত সত্য, বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন বিষয়ের ইঙ্গিত গুলো যেমন বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত, ঠিক সেরকম ।
আজকে বিমানে চড়ে তাইওয়ানে ফিরে যাচ্ছেন মামুন ভাই । মাত্র কয়েক দিনের জন্য দেশে এসেছিলেন এইবার । এই অল্প কয়েকটা দিনের মধ্যে প্রত্যেক দিনই শাহেনশাহ আর আমার সাথে দেখা হয়েছে তার । একটা মজার রেকর্ড হয়ে থাকল, আর কেউ কি এর আগে সংক্ষিপ্ত সফরে দেশে এসে আত্নীয় পরিজনদের সময় না দিয়ে প্রত্যেকদিন একদল আজব লোকের সাথে আড্ডা মেরে নষ্ট করেছে ? যেই লোক গুলোকে এর আগে জীবনেও কোনদিন দেখেনি, যাদের সাথে পরিচয় একটা কি-জানি-কি নামের ব্লগ সাইটে । খোঁজ নিয়ে দেখা দরকার । তবে আমার জানা মতে এখন পর্যন্ত এই কৃতিত্বের অধিকারী একমাত্র মামুন ভাই ।
ভাল থাকবেন মামুন ভাই, আপনার যাত্রা শুভ হোক । আবারো আমাদের দেখা হবে আশা করি । সচল থাকুন, সচল রাখুন
মন্তব্য
কেন জানি না, তবে আমি কখনো বাংলাদেশ গেলে অবশ্যি আপনার সাথে দেখা একবার করতে চাইবো
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
খুবই ভাল লাগল । আশা করি দেখা হবে । পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে কঞ্চিপায় বসে এক বিকেল আড্ডাও হতে পারে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
বিপ্লব ভাইয়ের এমন হাল কেন? মামুন তো এরকমই করবে জানতাম।
লোকটা আর জীবিত নাই
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
হায় জীবন... হায় চকোলেট...
-----------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
এনকিদু, আমার কাছে শুধুমাত্র এক বাক্স চকোলেট 'রাখতে' দিয়েছিলেন মামুন ভাই। ওটাতে কী তবে দু'জনের ভাগ ছিল?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
'রাখতে'-ই তো দিয়েছিলেন, তাইনা... তো সেটা গেলো কোথায়... ঝাতির সাথে সাথে আমিও ঝান্তে চাই...
----------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
নিধি রে তো কতবারই কোলে নিলাম, কিন্তু আমার বিয়ের ফুল তো ফুটলো না! উল্টো জ্যোতিষী বাবা কইছে, আমার বিয়া ম্যালা দেরিতে।
....................................................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
ওটা জ্যোতিষ বাবা না, মামুন ভাইয়ের কেরামতি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
...........................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
মামুন ভাইয়ের যাত্রা শুভ হোক । সচল থাকুন, সচল রাখুন ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আড্ডা মিস করম আরো কিসুদিন...। চিটাগাং বেড়াইতে আসছি- এইখানে খালার নেট পাইয়া সোজা সচলে ঢুকলাম- সচলায়তন আসলেই আজব জিনিস...
---------------------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
হাঁ তোমাকেও রোগে ধরেছে । আর কোন গতি নেই ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
এঙ্কিদু একটা ভয়াবহ ধরনের খ্রাপ লুক, কিন্তু একই সাথে আড্ডাবাজিকে ভিন্না মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার পথিকৃত। ওর সাথে সারাদিন ধরে আড্ডা দিলেও কোন ক্লান্তি এসে ভর করেনা। আবার দেখা হবে ভাইডি। ধন্যবাদ প্রতিদিন আমার সাথে সময় দেয়ার জন্য।
মামুন তো মামুন, সেদিন অরুণ চৌধুরী বললো তাঁরও নাকি এখন সকালে নেট খুলেই সচলায়তন না দেখলে চলে না।
কয়টা দিন খুব মজাই হইলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আহারে, আফসোস করলাম বহুত, মামুন ভাই সহ আপনেরা বহুত মজা করলেন, আমি বেহুদা দৌড়াইলাম
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
দারুণ লেখা, জব্বর আড্ডা হয়েছে ক'দিন বুঝলাম।
মিলার কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়, আপনার মাশ্রুম নামা জোস
পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা
একটু অস্বাভাবিক শোনাতে পারে, কিন্তু সত্যি, আমার পর্যবেক্ষণমতে খুব কম লোকই আছে, যারা যেভাবে কথা বলে, ল্যাখেও ঠিক সেভাবেই। আপনি সেরকম বিরল একজন।
এই লেখাও ওইরকম সহজ চমকেই সুন্দর। আপনাকে দেখতে পাওয়া যায় ঠিকঠাক, যথারীতি।
লেখা নিয়েই বললাম, ঘটনাক্রম নিয়ে আর কিছু না বলি, ঝাতিকে বিভ্রান্ত ক'রে আমার কী লাভ, না?
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
তোমাদের পেটে পিলে হোককককক
**************************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
পান্থ'র পেটে হৈছে, পিলে!
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
পান্থ কি ভুলে মামুন ভাইয়ের পাঠান 'মাথায় দেয়ার' জিনিস খেয়ে ফেলেছিল ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
নতুন মন্তব্য করুন