কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম নারিকেল জিঞ্জিরা বেড়াতে । সুন্দর ছোট্ট দ্বীপটায় আমার দ্বীতিয়বার যাওয়া । প্রথম বার যখন গিয়েছিলাম তখন আমার ক্যামেরা ছিল না । সব কিছু দেখতাম চোখ বড় বড় আর মুখ হাঁ করে । আকাশের চেয়েও পানি বেশি নীল - তাই দেখে মনে মনে বলতাম, "ওরে কী ভীষণ নীল রে !" বিরাট আকারের প্রবাল দেখে বলতাম, "ওরে কত্ত বড় প্রবাল রে !" বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে ছেঁড়া দ্বীপে গিয়ে দেখতাম বিরাট বিরাট ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সেই বিরাট প্রবাল গুলোর উপর, তখন মনে মনে ভাবতাম "ওরে কত বড় ঢেউ রে !" আবার যখন রাতের বেলা ঠান্ডা নামত সেই সাথে ভীষণ বাতাস তখন ভাবতাম, "ওরে কী ঠান্ডা রে !"
এইবার আমারো একটা শিশুতোষ ক্যামেরা হয়েছে । নান্দনিক আলোকচিত্র আমার হাত দিয়ে বের হবার নয়, তাই আমি অন্য রাস্তা ধরলাম । দ্বীপের যেখানে যত আজব জীব দেখব সেগুলো ছবি তুলব ঠিক করলাম । আর বাড়ি ফিরে এসে সময় সুযোগ মত ভাল ভাল ছবি গুলো বেছে উইকিতে তুলে দিব ।
তৃতীয় দিন দেখা পেয়েছিলাম ছোট ছোট কয়েকটা সন্ন্যাসী কাঁকড়ার । শামুকের খোল পিঠে নিয়ে ভেজা প্রবালের উপর হাঁটা হাঁটি করছিল । আমি কাছে যাওয়া মাত্রই দৌড় দিয়ে সব পানির মধ্যে নেমে গেল । আমি প্রথমে বুঝিনি ব্যাপারটা কী, শামুক কেমনে এত জোরে দৌড়ায় ! তারপর কাছে গিয়ে নিচু হয়ে ভাল করে তাকিয়ে দেখি শামুকের খোলসের ভেতর থেকে যেই গ্যাস্ট্রোপড টা বেরিয়ে আসার কথা তার বদলে বেরিয়ে এসেছে আর্থোপড । মানে কিনা সন্ধিযুক্ত পা । তার মানে হল এর ভেতর সন্ন্যাসী কাঁকড়া ঢুকে বসে আছে, তারাই আমাকে দেখে দৌড় দিয়েছিল ।
আধা ডোবা প্রবালের পাশে ভেজা বালিতে চার হাত পা গেড়ে উবু হয়ে বসলাম আমার ক্যামেরাটা নিয়ে । এই মামুদের ছবি না তুলে উঠলে খুব খ্রাপ, বিরাট কবিরা গুনাহ হবে । কিন্তু ছবি তুলতে চাইলেই তো আর তোলা যায়না । ক্ষুদে প্রানীগুলো ভীষণ সাবধানী । পিচ্চি নিল পুঁতির মত চোখ বের করে একটু পর পর উঁকি মেরে আমাকে দেখে । দুই একটা পা একটু খানি বের করে, কিন্তু আমার হাত বা ক্যামেরা একটু নড়ে উঠলেই দেখি তারা পা গুলো গুটিয়ে ভেতরে নিয়ে নেয় ।
ধৈর্য্য ধরে বসে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ । ততক্ষণে বার বার ঢেউ এসে আমার পেট আর প্যান্টের সামনের দিক ভিজিয়ে দিয়েছে ভাল ভাবেই । বার বার ঢেউ এসে আমাকে ধীরে ধীরে নরম বালির মধ্যে গেড়ে দিচ্ছে একটু একটু করে । এরকম বেশ কিছুক্ষণ যথাসম্ভব নিশ্চল থাকার পর মামুদের ধারনা হল যে আমি হয়ত তাদেরক খেয়ে ফেলব না । খুব সাবধানে একজন নিজের অস্থায়ী বাড়ি খোলসটার ভেতর থেকে উঁকি মারতে বেরিয়ে আর ফিরে গেলনা । মাথার উপর এক জোড়া শুঁড় ছিল, সেই শুঁড় নেড়ে চেড়ে একটু অবস্থা বোঝার চেষ্টা করল । তারপর ধীরে ধীরে বের হতে শুরু করল । প্রথমে বের হল এক জোড়া দাঁড়া । তারপর অন্য পা গুলো । আর তারপরেই পলকের মধ্যে ঝটকা মেরে শামুকটা নিজের পিঠের উপর চড়িয়ে রওনা দিল যেদিকে তার মন চায় । তবে চলে যেতে যেতেও নীল পুঁতির মত চোখ গুলো দিয়ে আমার উপর নজর রাখল । বলা তো যায়না, আমার যদি আবার ক্ষুধা পেয়ে যায় । মানুষের উপর আবার ভরসা করা যায় নাকি ?
মন্তব্য
ছবি কমন্সে দিয়েছেন দেখলাম। সন্ন্যাসী কাঁকড়ার ইংরেজী নাম কি হারমিট ক্র্যাব?
হ্যাঁ, hermit crab হল সন্ন্যাসী কাঁকড়া । গত রাতে বাংলা উইকিতে এক প্যারা লিখে দিয়েছি সন্ন্যাসী কাঁকড়ার উপর ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
খালি সন্ন্যাসীরেই দেখলা, আর আজিব কাউরে দেখনাই ঐখানে?
যা কিছু দেখেছি শুনেছি, সবই বের হবে এক এক করে। ধৈর্য্য ধরেন ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ছবি আর বর্ণনা খুবই ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ শান্ত
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আরো ছবি কই?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আসছে ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ওরে কত সুন্দর ছবিলেখা রে।
ওরে, কি যে বলে রে !
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
সুন্দর ! সুন্দর !!
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ধন্যবাদ বুনোহাঁস ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ওরে... কতো কষ্ট কইরা তুলছে রে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমার চেয়ে বেশি কষ্ট করেছে সন্ন্যাসী কাঁকড়ারা ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ওরে... কতো কষ্ট কইরা তুলছে রে...
...............................
নিসর্গ
এরকম ছবিব্লগ আরো চাই।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
চেষ্টা করব, আমি খুব সুবিধার ফটোগ্রাফার না ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
চাই চাই চাই
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
সচলায়তনের জনৈক সন্ন্যাসীর কথা মনে পড়ে
গাছের পাতা.....
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
তিনিও কি শামুকের খোলস পিঠে নিয়ে ঘুরেন ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
- না, এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায় তিনি রমনী কাঁধে নিয়ে ঘুরেন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আর অবস্থা বেগতিক মনে করলে সেঁধিয়ে যান ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
সন্ন্যাসীর চেহারা তো ডাকুদের মত দেখি।। ঃ পি
***********************************************
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???
আজিব ব্যাপার ! এনকিদুর চোখে কিনা সন্ন্যাসীই পড়ে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
চোখটা নষ্ট হয়ে গেছে ভাই
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ব্যাটা তো মাস্তান কাঁকড়া, পরের খোল দখল করছে, সন্ন্যাসী হইলো কেমনে!
ছবি কথা দারুণ!
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ধন্যবাদ, খেঁকশিয়াল ।
এই কাঁকড়া গুলোর আলাদা ঘরবাড়ি থাকেনা । পিঠে করেই বাড়িটা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাই নাম সন্ন্যাসী ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
- তাইলে যাযাবর হওয়ার কথা না? সন্ন্যাসীদের তো ঘরবাড়ি নাই। আশ্রমে আশ্রমে থাকে। যাযাবরেরা নিজের বাড়িঘর সাথে নিয়ে রওয়া দেয়।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তাও কথা। কিন্তু hermit crab নামে ডাকে, তাই আমি বাংলায় লিখলাম সন্ন্যাসী কাঁকড়া ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ছবি ও লেখা দু'টোই চমৎকার। আরো থাকলে দ্রুত পোস্ট করুন।
----------------------------------------
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
----------------------------------------
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
ধন্যবাদ, দিব পোস্ট ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
সচিত্র গৃহী /সন্ন্যাসী কাঁকড়া কাহিনী চলতে থাকুক...
--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ তিথীডোর। কিন্তু কাঁকড়ার গল্প এখানেই শেষ। তবে নারিকেল জিঞ্জিরা ভ্রমনের অন্যান্য দিক নিয়ে আরো দুই একটা পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে। সেই অর্থে 'চলবে' ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
চমৎকার ছবি, চমৎকার লেখা! আরো চমৎকার এটা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
খুঁজে পেয়েছেন যখন, একটা প্যারা বা নিদেন পক্ষে কয়েকটা লাইন যোগ করে দিন না । বাংলা উইকিটা একটু মোটা তাজা হোক ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
নারিকেল জিঞ্জিরা নামটার শানে নযুল কি জানা যাবে? ছবি ব্লগ ভাল লাগল।
বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিনে প্রবাল দ্বীপটার নাম "সেইন্ট মার্টিন" দিয়েছিল ব্রিটিশরা । এলাকাটার আসল নাম হল "নারিকেল জিঞ্জিরা" । কোথাকার কোন ব্রিটিশ জাত, তাদের দেয়া নামের বেল নাই আমার কাছে । তাই আমি নারিকেল জিঞ্জিরা নামেই ডাকি ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ধন্যবাদ।
কাঁকড়ার কত ফটুক!! আমার যদি কেউ এমনে এতো সময় নিয়া যত্ন করে ফটুক তুলতো!! কাঁকড়ার কি ভাইজ্ঞ্য!! হিংসা আর হিংসা- কাঁকড়ার জইন্যে!!
বর্ণনা আর ফটুক- উভয়ই দারুণ লাগলো
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
ধন্যবাদ তারানা_শব্দ ।
যারা ছবি আঁকে তাদের ছবি কেউ তোলে না । ক্যামেরাতে যা ধরা পড়েনা তাও এরা এঁকে দেখিয়ে দিতে পারে, তাই ফটুরেরা হিংসা করে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
কাঁকড়ার চোখগুলো দারুণ সুন্দর!!!
সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
এসএফকে৫৫৫
আরে!!
চমৎকার!
সন্ন্যাসী কাঁকড়া নামটা অবশ্য সুকুমার রায়ের 'হ-য-ব-র-ল' তে প্রথম চোখে পড়েছিল। আপনি তো দারুণ সব পোস্ট করেন!
খুব পছন্দ হল।
নতুন মন্তব্য করুন