গতকাল পালিত হলো মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা - পারমানবিক বোমা হামলার বর্ষপূর্তি। বোমা হামলার এবং আজকের মধ্য এই দীর্ঘ সময়ে পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমরা মানুষ হিসাবে অনেক বেশী সভ্য হয়েছি বলে দাবী করছি। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সেই ভয়াবহ পারমানবিক ধংসের থেকে কি শিখলাম আমরা - গোটা মানব সমাজ?
একদল যুদ্ধ ব্যবসায়ী প্রচুর মুনাফার লোভে তাদের তৈরী গনহত্যার অস্ত্রের একটা লাইভ-ডেমো বিশ্বকে দেখানোর ফলে আজও বিশ্বের পারমানবিক প্রযুক্তির রমরমা বাজার। আমরা দেখি ভারত এবং পাকিস্থান তাদের দেশের কোটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পুরন না করেই বিপুল ব্যয়ে পারমানবিক যুদ্ধাস্ত্রের মালিক হয়েছে। ছোট্র দেশ ইসরায়েল - যার অস্তিত্বের জন্যে প্রতি বৎসর আমেরিকান বিলিয়ন ডলারের সাহায্যের প্রয়োজন হয় - তারাও ভুখা-নাঙ্গা প্যালেষ্টাইনীদের ভয় দেখানোর জন্যে পারমানবিক অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলেছে। একসময় বলা হতো ঠান্ডা যুদ্ধে বিশ্ব ভারসাম্য রায় পারমানবিক অস্ত্র ভান্ডার গড়া জরুরী। এখন ঠান্ডা যুদ্ধ নেই। আমেরিকার আর তাদের মিত্ররা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলছে তাদের কোন ভৌগলিক সীমারেখায় চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। সুতরাং পারমানবিক অস্ত্রের মতো ভয়াবহ এবং ব্যয়বহুল অস্ত্রের ভান্ডার কি এখনও প্রয়োজন - এই প্রশ্ন পুনরায় উত্তাপন করার সময় কি এসেছে?
পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহারে ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করা ৬০ বৎসর পর এখন পৃথিবী কোথায় আছে তার কিছু তথ্য দেখা যাকঃ
* আমেরিকা পারমানবিক অস্ত্র গবেষনায় প্রতি বৎসর ২৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।
* এই মূহূর্তে পৃথিবীতে ১১,০০০ সক্রিয় পারমানবিক অস্ত্র আছে - যা হিরোসিমার হিসাবে ২৬০,৭০০,০০০ মানুষ মারতে সক্ষম। সক্রিয় বোমাগুলোর মধ্যে ৬৩৯০টা আমেরিকা, ৩২৪২ টা রাশিয়া আর ২০০ টা বৃটেনের দখলে আছে।
* আমেরিকার পারমানবিক স্থাপনার জন্যে সর্বমোট ১৫, ৬৫৪ বর্গমাইল জমি ব্যবহার করা হচ্ছে যা বাংলাদেশের চার ভাগের এক ভাগের সমান।
* আরো চারটি দেশ বর্তমানে পারমানবিক অস্ত্রের মালিক হয়েছে বা হচ্ছে - তারা হলো ভারত, পাকিস্থান, ইসরায়েল এবং উত্তর কোরিয়া।
* পাঁচটি দেশ পারমানবিক শক্তিধর দেশ হিসাবে নিজেদের দাবী করে - তারা হলো চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, বৃটেন এবং আমেরিকা।
* ১৯৫২ সালে Elugelab, Micronesia নামে একটি দ্বীপ পারমানবিক পরীক্ষার সময় বাস্পীভুত হয়ে যায়।
* সবচেয়ে ছোট পারমানবিক বোমাটির নাম “Davy Crockett" যার দৈর্ঘ্য ১৬ ইঞ্চি মাত্র।
* বর্তমানে চল্লিশটা দেশের পারমানবিক প্রযুক্তি অর্জন করেছে - যাদের মধ্যে মিশর এবং দক্ষিন কোরিয়া অন্তর্ভূক্ত।
* ইসরায়েল এই যাবৎ ২০০ টি পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসেস করেছে।
* আরব দেশগুলো এই পর্যন্ত একটিও অস্ত্রের গবেষনা করেনি।
* ভারত এই যাবৎ ১৫০টি পারমাণবিক অস্ত্রের প্রস্তুতি নিয়েছে।
* পাকিস্থান ৭৫টি অস্ত্রের প্রস্তুতি নিয়েছে।
* চেরনোবিলের পারমাণবিক বিপর্যয়ের তেজষ্ক্রিয় পদার্থ তার তেজষ্ক্রিয়তা হারাতে ৯০০ বৎসর সময় লাগবে।
(মূলঃ - BILL DIETRICH, Seattle Times staff reporter )
পাঠক, এতো গেল একটা আংশিকচিত্র - প্রকৃত চিত্র আরো কত ভয়াবহ তা কল্পনাও করা যায় না। ভারত আর পাকিস্থান পারমানবিক অস্ত্র বানানোর মতো একটা ভয়াবহ অপচয়ে মতো বিলাসিতা করেছে আর যখন ভুমিকম্পে লাখ লাখ মানুষ সাহায্যের আশায় বসে আছে - তখন তাদের জন্যে কোন সাহায্য করতে পারছে না।
একটা কথা পরিষ্কার ভাবে আমাদের বুঝতে হবে যে, পরামানবিক অস্ত্র কোন ভাবেই কোন পশুশিকার বা এলিয়েন ধ্বংশের জন্যে তৈরী হয়নি। এগুলো মানুষ নামক একটা প্রানীকুলের শ্রেষ্ঠ দাবীদার প্রানীরা নিজেদের ধ্বংশের জন্যেই তৈরী করেছে। এখন শুধু দরকার হিটলার বা ট্রুম্যানের মতো কয়েকজন অমানুষ - তারপর আর কোন মানুষকেই হয়তো এর প্রতিবাদের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে না। একদিকে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে রক্ষাবেক্ষন করতে ব্যর্থ ইউক্রেনে পারমানবিক স্থাপনাগুলো নিয়ে সমগ্র ইউরোপ শংকিত। অন্যদিকে ভুমিকম্প বা হারিকেনে কবলে পড়ে যদি কোন পারমানবিক স্থাপনা ধংস হয় - তা হবে একটা বিপর্যয়। এই বিশ্বে মানব সভ্যতার ধ্বংশের সবচেয়ে বড় হুমকী হলো এই বোমাগুলো। আশংকার বিষয় হলো - হিরোশিমা আর নাগাশাকির ভয়াবহ ধ্বংশলীলা দেখে যেখানে বিশ্বের বেশীর ভাগ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছে - ঠিক তখনই একদল মানুষ-রূপী পশু এই ধ্বংশলীলায় উৎসাহিত হয়ে আরো নতুন নতুন পারমানবিক অস্ত্র বানাচ্ছে আর বানানো পরিকল্পনা করছে। সাধারন মানুষ হিসাবে আমাদের ব্যথর্তা হলো আমরা সেই মানুষ মারার পরিকল্পনাকারী এবং কারিগরদের নিন্দা না করে বরঞ্চ আমাদের সমাজের সন্মাজনক মর্যাদা দিয়ে হিরো বানাচ্ছি। হিরোসিমা দিবসের কথা স্মরন করে সবাই মিলে এক সাথে বলে উঠি - মানব সভ্যতা ধ্বংশের হুমকী পারমানবিক বোমা তৈরী বন্ধ করতে হবে এবং তার সকল মজুদ ধ্বংশ করতে হবে।
আর মনের গভীর থেকে বিশ্বাস করি এবং আশা করি যেন মানুষের শুভ বুদ্ধি জাগ্রত হয় এবং হিরোসিমা আর নাগাসাকির মতো মানব সৃষ্ঠ দূর্যোগ আর কোথাও যেন না হয়।
( সংক্ষেপিত, মূল লেখাটি সদালাপ ডট কমে প্রকাশিত)
মন্তব্য
বকরী হুজুরেরা দেখা যায় সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় ।
এস্কিমোকে ধন্যবাদ একটি চমৎকার তথ্যবহুল লেখা পাঠের সুযোগ দেয়ার জন্য ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ধন্যবাদ ..জনাব।
লেখতে চাই ..কিন্তু কি লিখবো?
মানুষেরা যেন এস্কিমোদের মতো করে ভাবতে শেখে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আসলে এখানে ব্লগের এস্কিমো মানুষের মতো ভাবতে চেষ্টা করেছে।
ধন্যবাদ।
লেখতে চাই ..কিন্তু কি লিখবো?
খুব ভালো লাগলো আপনার লেখাটি।
এখন এই দিনের সবচেয়ে বড়ো রসিকতা বোধহয় এটাই যে হিরোশিমা দিবসে আমেরিকার সব মিডিয়া প্রচুর কাভারেজ দেয়, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আণবিক বোমাবর্ষণকারী কে তা উহ্য রাখা হয়।
মনে পড়লো, হিরোশিমার বিভীষিকা থেকে বেঁচে যাওয়া এক প্রত্যক্ষদর্শীর লেখা ছোটো একটি বই অনুবাদ করেছিলাম অনেককাল আগে। সাপ্তাহিক রোববার পত্রিকায় ছাপাও হয়েছিলো 'হিরোশিমা, আমার হিরোশিমা' নামে। শিরোনামটি কবি রফিক আজাদের দেওয়া। লেখাটি হারিয়ে গেছে। হাতের কাছে থাকলে কিছু অংশ তুলে দেওয়া যেতো।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
জুবায়ের ভাই,
এটা ঠিক না। লেখা হারিয়ে গেলেও আপনিতো আছেন। আবার লিখুন।
দেখুন ..বাজার অর্থনীতির চাপে মানুষকে সামান্য প্রানী বৈ কিছু বিবেচনা করা হবে না। সেখানে একটু আধটু কথা বলে যদি মনে শান্তি পাওয়া যায়, তাইবা কম কিসে।
লেখতে চাই ..কিন্তু কি লিখবো?
নতুন মন্তব্য করুন