কানাডার দ্বিতীয় বুহ্ততম প্রদেশ -কুইবেক প্রদেশের নির্বাচন কমিশন নেকাব বা রোরকা পড়ে ভোট কেন্দ্রে গেলে ভোট দিতে অনুমতি দেবে। এই সিন্ধান্ত ইতোমধ্যে পুরো প্রদেশে বিতর্কের ঝড় তুলেছে।
সবচেয়ে এগিয়ে এসেছে - লিবারেল পার্টি, যারা মাল্টিকালচারিজমের পক্ষের শক্তি বলে বিবেচিত। সেখানকার ক্ষমতাশীন লিবারেল সরকারের পরিবহন মন্ত্রী বলেছেন - প্রত্যেক ভোটারকে অবশ্যই তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।
বিরোধী দল বিচ্ছিন্নতাবাদী ব্লক কুইবেকুয়ার দ্রুত সিন্ধান্তটি পরিবর্তনের দাবী করেছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেছেন - এটা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত নয় এবং এই সিন্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
নবগঠিত দল এডিকিউ এর মুখপাত্র বলেছেন - এটা একটা ভয়াবহ ভুল।
কেন্দ্রিয় লিবারেল পার্টির নেতা স্টেফান ডিওন বলেছেন - কানাডার সকল নাগরিক নিজ দায়িত্বেই নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করবে। নির্বঅচন কমিশন অবশ্যই তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।
দেখা যাচ্ছে প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছে। তাহলে নির্বাচন কমিশন কেন এই সিদ্ধান্ত নিলো?
মজার বিষয় - কানাডার মুসলমান সমাজ বলছে - এরা এই কোন দাবী করেনি। কানাডিয়ান কাউন্সিল অব আমেরিকান ইসলামিক রিলেশানস এর মুখপাত্র সারাহ এলগাজার - “আমার জানামতে - নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্য ভাল। কিন্তু বিশ্বাসীদের গনতান্ত্রিক অধিকার চর্চার সুযোগ দেবার এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী হয়নি।“
.
এলগার মনে করে এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মুসলিম সমাজের উপর।
মুখ ঢেকে রাখা বা বোরখা পড়া ইসলামে বাধ্যতামূলক নয় - তারপরও এই বিষয়টা নিয়ে রাজনীতির পিছনে কি কোন গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত?
এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের আগে একটা বিষয় জানা প্রয়োজন যে, কুইবেক হলো কানাডার একটা প্রদেশ যার ভাষা হলো ফরাসী এবং তাদের সংস্কৃতি আর রাজনীতির উপর ফ্রান্সের প্রভাব বিশাল। ফ্রান্সের যখন নিকোলাই সারকোজির অনুসারীরা শক্তিশালী হচ্ছিল - ঠিক তখনই কুইবেকে নেতুন একটা রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। মাত্র ৩৩ বছর বয়স্ক নেতা নেতৃত্বে (ছবি) গত ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে সকল হিসাব নিকাশ উলটপালট করে দিয়ে একতৃতীয়াংশ আসন দখল করে। এদের নীতিমালার মধ্যে এন্টি ইমিগ্রান্ট অবস্থানটা সুস্পষ্ট। ইতোমধ্যে এই দল অভিবাস বিষয় বিভিন্ন ইস্যুতে যথেষ্ঠ বিতর্ক তৈরী করেছে - যা কানাডার ইতিহাসে নতুন।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে - নেকাব বিষয়ক বিতর্কটা এডিকিউর জন্যে যথেষ্ঠ জ্বালানী সরবরাহে সক্ষম হবে। উল্লেখ্য যে, মন্ট্রিয়লে প্রচুর আরবীয় ইমিগ্রান্ট বিশেষ করে লেবানিজ বসতি স্থাপন করেছে - এদের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার - যারা এই যাবত লিবারেল পার্টিকে ভোট দিয়ে আসছিলো। গত লেবানন- ইসরায়েল যুদ্ধে কানাডিয়ান সরকার যদিও ইসরায়েরের পক্ষাবলম্বন করেছিলো - কিন্তু কানাডিয়ান রেবানিজদের চাপে বিশাল উদ্ধার অভিযান চালাতে হয়েছে। যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন সামার ভ্যাকেশান চলার কারনে অনেক লেবানিজ-কানডিয়ানের স্ত্রী-সন্তান তখন লেবাননে অবস্থান করছিলো। যুদ্ধ শুরু হলে তারা আটকা পড়ে যায়। তাদের উদ্ধারের জন্যে ইসরায়েলকে বোমা হামলা কয়েকদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। বিষয়টা কুইবেকের ইহুদী সমাজ ভাল ভাবে নেয়নি - যারা মূলত ক্ষমতাশীন কনজারভেটিব পার্টির সমর্থক।
লেবান যুদ্ধের পর থেকেই শুরু হয় মুসলমানদের নিয়ে নানান বিতর্ক এবং তার থেকে সুবিধা নিতে থাকে নবগঠিত পার্টি এডিকিউ। এবারের বিতর্কেও এরা সুবিধা আদায় করে নেবে সন্দেহ নেই।
আর আমরা দেখবো - কিভাবে একটা মধ্যপন্থী সমাজ ধীরে ধীরে চরম পন্থা গ্রহন করছে। এখানে কানাডিয়ান মুসলিমদের বিরাট ভুমিকা রাখার সুযোগ আছে। তাদের এগিয়ে আসতে হবে এবং মানুষকে জানাতে হবে - “নেকাব” কোন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নয় - যা নাম মানলে আমাদের ধর্ম পালনের অধিকার লংঘিত হবে।
মন্তব্য
গৌনব্যাপারগুলো মুখ্য করে তুলে মুল ইস্যুগুলো আড়াল করে রাখার কৌশলী রাজনীতি ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সহমত।
পড়লাম। এটা সামহোয়্যাইনেও দেখলাম মনে হয়।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
বেহুদা এসব ভাল্লাগে বলেন?
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...
বানিজ্য ই বড় কথা । তা ধর্ম নিয়েই হোক। তাদের মানসিকতা
এরকমই !!!
নতুন মন্তব্য করুন