মানছি।
'ফেইসবুক' নামক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবপেজটা নেটওয়ার্কিংয়ে দারুণ সফল। এটাও মানছি, আমি নিজেও এখন ফেসবুকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, সামাজিক যোগাযোগের একটা সহজ মাধ্যম পেয়ে।
হারিয়ে যাওয়া কতক বন্ধুকে ফেসবুকে আবার আবিষ্কার করা গেছে, স্থাপিত হয়েছে পুন:যোগাযোগ। চলমানদের সাথে বেড়েছে হৃদ্যতা।
মেসেজিংয়ের নতুন ডাইমেনশন এখন ফেসবুক।
ই-শুভেচ্ছা, ই-কার্ড, ই-উপহারের নিত্য নতুন জোয়ারে সবাই ভেসে যাচ্ছি অবিরাম।
ফেসবুকের কল্যাণে।
মাউসের বুকে এক টিপিতেই পাঠিয়ে দিচ্ছি বন্ধুদেরকে নতুন দেখা কোনো ভিডিওর লিংক, নতুন পড়া জোকস, ইন্টারেস্টিং কোনো ছবি।
সবচেয়ে বড় সুবিধা যেটা হয়েছে তা হলো, অনেক ছবি আপলোড করা যায় একসাথে মুহুর্তের মধ্যেই। জগতে এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফ্রেন্ডদের কত কত ছবি দেখছি, তার শেষ নেই।
মানছি, ফেইসবুক বাড়াচ্ছে বন্ধুত্মের উষ্ণতা!
কিন্তু, ইদানিং আমি বিরক্ত ।
মনে পড়ে কিছুদিন আগে ফেসবুকে আরিফ জেবতিকের প্রোফাইলফটো-কাম-আবেদনপত্রটা। প্রোফাইলে কিছুদিন নিজের ছবির বদলে একটা চিঠি আপলোড করে রেখেছিলেন তিনি। চিঠির বক্তব্য ছিল- সুপারওয়াল নামক যন্ত্রণার হাত থেকে তিনি রেহাই চান। তাই দয়া করে কেউ যেন তাকে বারবার ঐ জিনিস না প্রেরণ করেন!
ফেসবুকবাসীরা সবাই জানেন, সুপারওয়াল (superwall)কি জিনিস। আরিফ জেবতিকের মতন আমিও যারপরনাই বিরক্ত এই এপ্লিকেশনটার উপরে। প্রথম প্রথম খুব ভালো লাগতো যখন কেউ আমাকে সুপারওয়ালে কিছু পাঠাতো। আহ্, কত ভালোবেসেই না বন্ধুআমার এই জিনিস শেয়ার করছে!
এখন এত বেশি ভালোবাসা পাই যে বিরক্ত ধরে যায়।
এদিকে বন্ধুরাও সবাই select all চেপে এক টিপিতে শতমানুষের কাছে ভালোবাসা পাঠিয়ে দেয়। ফেসবুক ওপেন করলেই দেখি এত্ত এত্ত ভালোবাসা।
এছাড়া ব্যবহারকারীমাত্রই জানেন, এরকম আরেকটা আছে। যাকে বলে ফানওয়াল (funwall)।
ফানওয়াল যে কী ফান, তা এখন বুঝতে পারছি।
কয়েকদিন আগে সবাই একই জিনিস আমাকে পাঠাতে লাগলো ফানওয়ালে। একটা টেডিবিয়ারের ছবি সাথে মেসেজ- সেই টেডিবিয়ার নাকি দুনিয়া ভ্রমণে বের হয়েছে। ভল্লুকছানাটার আবার একটা নামও দেয়া হয়েছে- mortimer.
তো এখন সবার দায়িত্ব হচ্ছে mortimerকে দুনিয়ার আনাচে কানাচে পাঠাতে হবে। এ ওকে পাঠায়, ও একে পাঠায়, আর আমি মাঝখানে ফানওয়ালে প্রায় পঞ্চাশবার একই ছবি রিসিভ করি। অযথাই।
আরো আছে। invitation for a cause. কোনো গ্রুপে ইনভাইটেশন পেতে কার না ভালো লাগে! কিন্তু এমন সব ফাউল গ্রুপ থেকেও মাঝে মাঝে ইনভাইটেশন আসে যা কি বলবো!
তারপর আছে কুইজ। বন্ধু 'অ' এই ম্যুভি কুইজে ৯৩% সঠিক নম্বর পেয়েছে- তুমিও একটা টেরাই মাইরা দেখো কত পাও- এই জাতীয় আহবান।
প্রথম প্রথম ভালো লাগতো। এখন ধুত্তরি বলে বসি।
আমি মাঝে মাঝেই চিন্তা করি যে, সুপারওয়াল এবং ফানওয়াল এই দুই জায়গায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় বিশটা করে যে মেসেজ, ফটো, জোকস ইত্যাদি ইত্যাদি রিসিভ করি, তাদের মূল স্রষ্টা আসলে কারা? তার চেয়েও বড় চিন্তা, বেহুদা এইসব আবজাব থেকে বাঁচার উপায় কি?
সন্দেহ নেই সবকিছুই এক অপরকে অপর একের সাথে এনগেজ রাখার নানান ফন্দি ফিকির।
কিন্তু মজমা আর ভালো লাগে না।
নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় ফেসবুকে না ঢুকলেই না, আবার এইসব আবর্জনার যন্ত্রণায় প্রতিদিন একটু একটু করে বিরক্ত হচ্ছি, তা বলাই বাহুল্য।
মন্তব্য
আগে ছিল হাই-ফাইভের যন্ত্রণা।
এখন শুরু হলো ফেসবুক। বিরক্ত হয়ে অ্যাকাউন্টই ডিলিট করে দিয়েছি। ক'দিন আগে এক দোস্তের বাগদান হলো, মেইল করে বলে - ফেসবুকে ছবি আছে, দেখে নিস। আমি বললাম - 'আমি ফেসবুকে নাই'। পরে অ্যাকাউন্ট খুললাম - ঐ ছবি দেখার জন্য। দেখেই আবার অ্যাকাউন্ট ডিলিট।
আপনাদের কার কি অভিজ্ঞতা জানি না, আমি এবং আমার পরিচিত আরও কয়েকজন কিছু লোকের নিত্য ফালতু মেইলে বিরক্ত। শেষে ব্লক করে দিয়েছি। ছিল কিংবা এখনো আছে এরকম কয়েকজন হলো -
মেইল বক্সে ফিল্টার নাই? ফিল্টার দিয়া সব ফেসবুক ভেজাল দূর!
ফেসবুকের হোমে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ছাড়া সব ইগনোর।
হুম, এই একটা জিনিস ফেসবুক শিখাইলো।
ক্যামনে ইগনোর করা লাগে।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
মাঝে মাঝে মনে হয়, আগেই সব ভালো ছিলো।
হাতে চিঠি লিখতাম, যারে লিখতাম সে যত্ন কইরা পইড়া আরো যত্ন কইরা তুইলা রাখতো। ঈদে বড়জোড় দুইএকটা কার্ডের চালাচালি। কষ্ট কইরা কত ডিজাইন, আঁকিবুকি। কী নিদারুণ আনন্দই না হইতো!
কেউ কোথায়ো একটা কৌতুক পড়লে সেইটারে গুড় মাখাইয়া এমন রসালো কইরা মজমায় বয়ান করতো যে দশ বছর আগে শোনা জোকসও কইতারি এখন।
হায় ইন্টারনেট, দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ!
পরথমে আইলো ই-মেইল। সাথে আইলো স্প্যাম।
তারপর আইলো ইয়াহু গ্রুপ। হুদাই অন্যের প্যাচাল হুনতে হুনতে ক্যালান্ত।
তারোপর আইলো হাউ-ফাইভ, ৩৬০ ডিগ্রি, ট্যাগড, মাই স্পেস......
অহন এই ফেসবুক।
কারে কারে ঈদ মোবারকবাদ জানাইলাম, তা নিজেই কইতারি না। খালি টিপছি select all.
যেই জোকস যখন পড়ি, তার পরই ভুলি। দিনে ফেসবুকে ১০ টা কইরা জোকস পাঠাইলে কিছু মনে থাকে?
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
ফেসবুক অল্প কদিনেই আমার কাছে এক ভার্চুয়াল আতংক। এটি এত এত অপশন সামনে এনে ধরেছে যে, সবকিছুর সাথে তাল মিলাতে গেলে জগতের নন্দন-দর্শন সব হারাম হয়ে যাবে।
তবু এই অ্যাকাউন্টটা আমি ডিলিট করতে চাই না, কারণ এর প্রতি অত্যাগ্রহকে আমি ডিলিট করেই রেখেছি। যতটা পারা যায় একে কম সময় দেই। এটাই স্বস্তির উপায়।
...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
অনেক প্রাইভেসি অপশন আছে, সেগুলার সদব্যবহার করলে সব লাইনে থাকে। আর আমি কখনো কারো ফানওয়াল, সুপারওয়াল, ইত্যাদি হাবিজাবি এপ্লিকেশনের আবদার গ্রাহ্য করি না।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমি অবশ্য সুপারওয়ালে গণপোস্ট মোকাবেলায় অন্য পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলাম। কেউ ভালোবেসে কোন চেইনবার্তা পাঠালে সেটা একটু টুইস্ট করে সবার কাছে আবার পাঠাই। যেমন নিরীহ ভালুক মর্টিমারের বার্তাটিকে ঘুরিয়ে আংরেজিতে লিখলাম, ভালুকসোনা মর্টিমার বিশ্বভ্রমণ করতে চায়। তোমার কাছে এলে গুল্লি করে চুতিয়াটার পোঁদ উড়িয়ে দিও!
তবে মনে হচ্ছে এতে কাজ হবে না। সুপারওয়াল বুঁজিয়ে দেয়া যেতে পারে অবশ্য।
হাঁটুপানির জলদস্যু
বুঁজিয়ে দেয়াই মনে হয় বুজ(বুদ্ধি)মানের কাজ হবে।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
এক্কেরে মনের কথা কইছেন। যন্ত্রনা মনে হয় এইটা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমি আজ পর্যন্ত কারো সুপারওয়ালের লেখা পড়িনি। সাথে সাথে ইগনোর।
ফেইসবুকে ঢোকা মানেই বেহুদা সময় নষ্ট। কামের কাম অল্পই, আজাইরা কামেই সময় যায় গিয়া।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
কামের কাম ?
হাঁটুপানির জলদস্যু
কামরাঙা লেখকের কাছে আপনি আর কী চান!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
তক্তা ধরে পেরেক মারতে মারতে আপনার বদভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে !
হাঁটুপানির জলদস্যু
ইগনোরের উপর রাখেন সবাইকে। আমি প্রথম দিক থেকে মেম্বার, তাই ক্লোজড, কলেজ নেটওয়ার্ক হিসেবে ফেসবুককে দেখার ভাগ্য হয়েছে। প্রত্যেকেই চেনা, বিশ্বস্ত। ওপেন করে দেওয়ার পর প্রথম দিকে খুশি হয়েছিলাম, কারণ আমার চেনা অনেকের খোঁজ পাওয়া গেছিল অনেক কাল পর। কিন্তু এই অ্যাপ্লিকেশন গুলো দিয়েই মেরে দিল!
কথা প্রচলিত আছে যে অ্যাপ্লিকেশনের উছিলায় অনেক প্রাইভেট তথ্য বের করে নেওয়া হচ্ছে। সাধু সাবধান।
সাধু এবং সন্ন্যাসী দুইকেই সাবধান হইতে হইবেক।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
আমার প্রফাইল পিকচরা এতো ভদ্র না ।
এইটার কপিরাইট উন্মুক্ত । যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন ।
ঐপাড়ায় এই নিয়া একটা পোস্টও দিছিলাম । দেখতে পারেন । বরাবরের মতো ঐপোস্টও একটু চাছাছোলা টাইপ । আমি পোস্টের কথামতো এরেওরে
ঘ্যাচাং মারি ।
বাই দ্য ওয়ে, উপরের সন্নাসীদের কারো কারো কাছ থেকে আমি ভাল্লুক গিফট পাইছিলাম যদ্দুর মনে পড়ে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সন্ন্যাসী কৈলে হগ্গলে আমারে মনে করে, তাই জানাইয়া রাখতে চাই যে, ফেইসবুকে একদিন বৈসা কান ধর্সি, ঐদিকে যামু না। ঐখান থিকা আমি কখুনো কাউরে কুনোকিচ্ছু পাঠাই নাই।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি লাগে তাই ভেগেছি ফেসবুক থেকে।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
নতুন মন্তব্য করুন