চৈনিক নববর্ষের ছুটির সুযোগে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরে (NUS) আজ থেকে শুরু হয়েছে 'এন ইউ এস টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট'। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা এবং পাকিস্তান- ক্রিকেটের এই চার পরাশক্তির প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্রদের লড়াইয়ে প্রথম খেলাতেই বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট ব্যবধানে হারিয়েছে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট শ্রীলংকাকে। সম্ভবত বিদেশের মাটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে বাংলাদেশি ছাত্রদের অন্য আরেকটি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে হারানোর ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম। এই কথাটা বলছি এজন্য যে, যদিও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ক্রিকেট টুর্ণামেন্টে অংশ নিয়ে থাকেন (সিক্স-এ-সাইড কিংবা প্রীতি ম্যাচ), কিন্তু একদম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আদলে, প্রপার গীয়ার, হোয়াইটস মেনে এবং টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের বল দিয়ে, অফিসিয়াল রুলস মেনে খেলায় অংশ নেয়ার ঘটনা খুবই অপ্রতুল। বিশেষ করে, টুয়েন্টি-টুয়েন্টি খেলাই যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে।
০৭-১০ ফেব্রুয়ারী- চারদিনব্যাপী আয়োজিত টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ফর্মেটের রাউন্ড রবিন লীগ ভিত্তিক এই বাত্ সরিক টুর্নামেন্টের আজকেই ছিলো প্রথম দিন। দিনের প্রথম খেলাতেই বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় শ্রীলংকার। গতবারের পারফর্মেন্স বিবেচনায় এই খেলায় বাংলাদেশ স্বভাবতই ছিল আন্ডারডগ। প্রফেশনালিজমের দিক দিয়েও বাংলাদেশি দলের চেয়ে শ্রীলনকানরা এগিয়ে ছিল অনেকগুণ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সিঙ্গাপুরের ক্রিকেটে শ্রীলংকান বংশোদ্ভুত খেলোয়াড়দেরই আধিক্য এবং আধিপত্য দেখা যায়। অন্যদিকে দুয়েকজন স্নাতক পর্যায়ের ছাড়া এবার বাংলাদেশি দলটি গঠিত হয়েছে মূলত সিঙ্গাপুরে উচ্চতর পড়াশোনা এবং গবেষণায় নিয়োজিত ছাত্রদের নিয়েই। এদের প্রায় সবাই বুয়েট স্নাতক।
সকালে টসে জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় শ্রীলংকা (এবং এন ইউ এস ক্রিকেট দলের) দলপতি। সকালের ভেজা পীচ থেকে নতুন বলের এবং ধীরগতির আউটফিল্ডের সুবিধা আদায় করে নেয়াটাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশি অপেনিং ব্যাটসম্যানরা শুরু করেন বেশ সতর্কতার সাথেই। তবে পাঁচ ওভারের পর পরই প্রথম উইকেটটি হারায় বাংলাদেশ। এরপরই শুরু হয় বাংলাদেশি ইনিংসের সেরা পার্টনারশিপের। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১১ ওভারে ৮৫ রানের এই পার্টনারশিপটটিই মূলত বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসিয়ে দেয়। জাহিদ ফেরদৌস ইমন ৪২ এবং ওপেনার ফারুক হাসান ৩১ রান করেন। ২০ ওভার শেষে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৩৩ রান।
জয়ের জন্য ১৩৪ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামে শ্রীলংকান দল। শুরুর দিকে বাংলাদেশি পেসাররা ঠিক জায়গায় বল ফেলতে ব্যর্থ হলে শ্রীলংকান স্কোরবোর্ড বেশ স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠতে শুরু করে। এর বেশিরভাগই আসে অতিরিক্ত রান হিসেবে। কিন্তু ঠিক তখনই বাংলাদেশি দলের কান্ডারী হিসেবে আবির্ভূত হন মিডিয়াম পেসার এরশাদুল আলম স্বপন। তার নিঁখুত লাইন এবং লেন্থের এক অনুপম প্রদর্শনী শ্রীলংকা দলকে ঠেলে দেয় ব্যাকফুটে। তিনি তার ৪ ওভারের স্পেলে মাত্র ১১ রানের বিনিময়ে ৩টি মূল্যবান উইকেট তুলে নেন। আর তাকে যোগ্য সহায়তা দেন দলের অফস্পিনার ফয়সাল কবির শুভ (১/১৭)। সাথে সাথেই যেন জেগে উঠে মাঠের বাংলাদেশি বাঘেরা। জয়ের গন্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হয় যখন নিয়মিত বিরতে শ্রীলংকা দলের উইকেট পড়তে থাকে। অবশেষে ৯ উইকেট হারিয়ে তারা ১১৩ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। ২০ রানে জয়ী হয় বাংলাদেশ।
দলের খেলা দেখতে মাঠে স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি দেখিয়েছেন সিঙ্গাপুরে বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষকসহ অন্যান্যরা। ছাত্ররা জাতীয় পতাকা নিয়ে গ্যালারী মাতিয়েছেন। ছুটির দিন বলে কেউ কেউ আবার এসেছিলেন পরিবার সহ। তাদের কাউকেই হতাশ করেন নি বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা।
একই টুর্ণামেন্টের আগের আসরে বাংলাদেশ দল কোনো খেলাতেই জিততে পারে নি। এই জয় তাই নির্মল আনন্দ উপহার দিয়েছে সবাইকে। সিঙ্গাপুরের কোনো স্বীকৃত আসরে এই প্রথম জয়ের মুখ দেখলো বাংলাদেশিরা। সাধারণত দেশের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষে একটা দল দাড় করানোই যেখানে মূখ্য সমস্যা, সেখানে শ্রীলংকার মত ক্রিকেটের পরাশক্তিকে রীতিমত সুস্পষ্ট ব্যবধানে হারানো নিঃসন্দেহে একটি বড় খবর। এমনকি হয়তো এটাই বিদেশে এরকম কোনো দলের প্রথমবারের মত অন্য দেশী একটি দলকে হারানোর ঘটনা।
দলের দ্বিতীয় খেলায় শুক্রবার বাংলাদেশ মুখোমুখি হচ্ছে টুর্ণামেন্টের আরেক শক্তিশালী দল এবং বর্তমান চ্যাম্পিয়ান ভারতের। আর গ্রুপ পর্যায়ের শেষ খেলায় শনিবার বাংলাদেশকে খেলতে হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী দুটি দল ফাইনালে মুখোমুখি হবে ১০ ফেব্রুয়ারি (রবিবার)।
মন্তব্য
জনাব বিপ্লব রহমান এবং অমি রহমান পিয়াল সহ সাংবাদিকরা যেহেতু ব্লগে আছেন, তাদেরকে অনেকেই অনুরোধ করেছেন খেলার এই সংবাদটি প্রকাশের জন্য। এমনটি হলে আগাম ধন্যবাদ জানিয়ে রাখছি। যদি পরবর্তী যোগাযোগ কিংবা অন্য কোনো বিস্তারিত তথ্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাকে একটি ব্যক্তিগত মেসেজ পাঠাবেন, আমি আমার ইমেইল এড্রেস পাঠিয়ে দেব এবং টাচে থাকবো।
আর বিদেশে ছাত্রদের এটাই প্রথম কোনো জয় কিনা, সেটাও যদি নিঃসন্দেহ হওয়া যেত তাহলে দারুণ হতো।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
সাবাশ! বাংলাদেশ সাবাশ।
খুব নাচতে ইচ্ছে করছে। ধন্যবাদ সুন্দর একটা পোস্টের জন্য।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
পুতুল, আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ!
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
সুখের কথা, দৈনিক আমার দেশের আজকের সংস্করণে সংবাদটি ছাপা হয়েছে- এখানে দেখুন
দৈনিক সমকালেও খবরটা ছেপেছে। এখানে দেখুন
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
জয়ের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন।
সম্ভবত বিদেশের মাটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে বাংলাদেশি ছাত্রদের অন্য আরেকটি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী দলকে হারানোর ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে উপমহাদেশীয় ছাত্রাধিক্য রয়েছে সেখানে অনেক দিন থেকেই এ ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের ছাত্ররাও এতে বাংলাদেশ বা টাইগারস ইত্যাদি নাম দিয়ে অংশগ্রহণ করে এবং অনেক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। ২০০৬ সালে এরকম একটি বিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে আমি নিজেও অংশ নিয়েছিলাম। বাংলাদেশ শ্রীলংকা, যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিলে। এখানে দেখুন সে টুর্নামেন্টের বিবরণ (বাংলাদেশ দলের নাম দ্য টাইগারস)। এখানে ২০০৫ টুর্নামেন্টের কিছু ছবি আছে। ২০০৫-এ বাংলাদেশ উঠেছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে।
ইন্টারনেটে খুঁজলে এরকম আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের খবর পাবেন। আমি নিশ্চিত ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াতেও এ ধরনের অনেক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ছাত্ররা অংশ নিয়ে আসছে এবং ভালো ফলাফল করছে।
Anyway, keep it up
=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"
আপনার তথ্যবহুল মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। এরকম সংবাদগুলো একত্রে থাকুক এই পোস্টে।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
চমৎকার খবর!
কি মাঝি? ডরাইলা?
শাব্বাস বাংলাদেশ!
শুক্রবারের আপডেট:
দারুণ লড়াই করেও গতবারের চ্যাম্পিয়ান ভারতীয় দলের কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশি দামাল ছেলেরা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ১২৪ রানে অল আউট হয়ে যায়। এই রানকে পুঁজি করেই বাংলাদেশ বোলিংয়ে বেশ শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুললেও ভারতীয় শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ ১৮ ওভার শেষে জিতে যায়।
আজকে হারলেও বাংলাদেশের ভালো একটা সুযোগ আছে ফাইনালে উঠার। শর্ত একটাই, শেষ খেলায় পাকিস্তান দলকে হারাতে হবে। বৃষ্টি বাধা না হয়ে দাড়ালে কাল সকালেই খেলাটি অনুষ্ঠিত হবে।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
নতুন মন্তব্য করুন