তার সাথে দেখা হয় বাসে, ভীড়ে, নানা অনুষ্ঠানে।
প্রতিবেশী ভদ্রলোক ফর্সা, একটু মেদ আছে, গোলগাল চেহারার সাথে মাথার টাক মানিয়ে গেছে বেশ। সবসময় বোধহয় একটু ঘামেন। কথা হয় কদাচিত্। হলেও কেমন আছেন,ভালো আছি- এই জাতীয়। কিংবা বাজারে আগুন, দেশের যে কী হবে, ছেলে মেয়েগুলোর পড়াশোনায় মন নেই, না মশাই, আপনি জানেন না, আসলে ঘটনা হচ্ছে এই... ইত্যাদি, যেটুকু সময় লাগে এইসব বলতে, কখনও দেখা হয়ে গেলে, ভীড়ের বাসে ঝুলতে ঝুলতে, শেয়ারের রিকশায় বসে কিংবা কারো বাচ্চার জন্মদিনের কেক কাটার ফাঁকে কোনো কথা না খুঁজে পেয়ে।
সেদিন দুপুরে ভাত খেয়ে গা এলিয়ে সিগারেটে টান দিচ্ছি এইসময় আমার স্ত্রী বলল, শুনেছো, সালাম সাহেব কেমন মানুষ বলত, সংসারে মন নাই নাকি!
সালাম সাহেব, মানে যার কথা বলছিলাম, ফর্সা গোলগাল চেহারার টাকওয়ালা নিপাট ভদ্রলোক, দুই বাসা পরেই ফ্যামিলি নিয়ে ভাড়া থাকেন, আমাদের মতই, যার সাথে আমার কখনো একান্ত কথা হয়নি কোনো।
যদিও এইসব পরচর্চার আহবান আমার ভালো লাগে না তবু অতীত অভিজ্ঞতায় বউকে চটানোর সাহস পাই না। গলায় খুব আগ্রহের টান রেখে বলি, কেন? কি হয়েছে, খুলে বলত!
জানা গেল, সালাম সাহেবের বউ পরকীয়া আসক্ত।
তারপর একদিন আগের মতই ভীড়ের বাসে আমার দেখা হয়ে যায় সালাম সাহেবের সাথে। ঘর্মাক্ত কেরাণীর ভাবলেশহীন ফর্সা মুখ। হাতে ছেলের জন্য কেনা স্লেট। এ যুগেও তাহলে স্লেটরা বেঁচে আছে!
দুজনের গন্তব্য একইদিকে তাই বাস থেকে নেমে আগের মতই শেয়ারে এক রিকশায় চড়ে বসি দুজন। সালাম সাহেবের গায়ের গন্ধ আমার নাঁকে এসে লাগে, হয়তো আমারটাও তার নাঁকে।
কিছু মুহুর্ত চুপচাপ কেটে যায়। তারপর আমার মনে পড়ে, যার পাশে বসে আছি তার বউ পরকীয়ায় আসক্ত।
কেমন একটা খিটমিটে অস্বস্তি এসে ভর করে আমার মেজাজে। ধুর, আর লোক পেলাম না, যার বউ ঢ্যাং ঢ্যাং করে অন্যের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে আমি তার সাথেই কিনা শেয়ারে রিকশায় বসে বাড়ি ফিরছি! লোকটার গায়ের ঘামের গন্ধে আমার গা গুলায়। রিকশাওয়ালা ছোকড়াকে ধমক দিয়ে বলি, ঐ ব্যাটা, জোড়ে চালাইতে পারসনা?
আচ্ছা, লোকটা কি বুঝতে পারল যে আমি আড়ষ্ট হয়ে গেছি। কোনো কথা বলছে না। হয়ত ভাবছে তার টান খাওয়া সংসারের দুঃখের কথা। হয়ত সে ভালো মানুষ, বউকে এখনো বিশ্বাস করে, হয়ত বোকা বলে সুখে আছে, এখনও জানে না বউয়ের কান্ড। হয়ত তার আদৌ বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
একবার মনে হয়, সো হোয়াট। আমার কি। কিন্তু তারপরও মৃদুভাসী লোকটার পাশাপাশি বসে আমি তার পারিবারিক জীবন নিয়ে ভাবতে থাকি।
একবারো মনে হয় না যে আমার বউ মিথ্যা বলতে পারে।
মন্তব্য
আমরা অনেকেই কোন ঘটনা তলিয়ে দেখার আগেই বিশ্বাস করে বসি।
আপনার গল্পটি খুব সুন্দর লিখেছেন।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
ভালো লাগলো।
সবকিছুরই আসলে দুটো দিক থাকে।
আমরা দেখি শুধু একটাই।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
চমৎকার!
ভালো লাগলো।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
খুব সুন্দর করে সত্যি একটা কথা লিখেছেন!
(বিপ্লব)
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
অসাধারণ ... মনস্তত্বটা একদম সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সত্যিই তাই-------আমরা যে কোন মানুষকে দেখতে শিখি নিজের চোখে-------নিজের আপন লোকের চোখে------যার অস্তিত্ত্ব নিয়ে ভাবনা তার চোখকে আমরা পুরোপুরি উপেক্ষা করে যাই
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
ঠিক বলেছেন।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
আহ্!! দারুন লাগলো...
---------------------------------
এভাবেই কেটে যাক কিছু সময়, যাক না!
স্ত্রী সত্য বলে থাকলেও পুরুষটিকে ঘৃণার কারণটা আমার কাছে বোধগম্য হয়ে উঠলো না। এমনকি তাঁর পরকীয়াপ্রবণ স্ত্রীকেও ঘৃণার পক্ষপাতী আমি নই।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজেকে জয় করার অর্থ বিজয় না পরাজয়?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
খুব খুব অসাধারন লাগল। একটা ঝাঁকি খেলাম খুব হয়ত ভুক্তভোগী বলে।মানুষ কত সহজে যে এভাবে টিকি টাও না ছুঁয়ে সব ছিনিয়ে নিতে পারে তা খুব অবাক লাগে ভাবতে।কুৎসা করে যে আর শোনে যে দুজনই সমান দোষী।
আপনার জোশ আরো বাড়ুক।আরো বেশি বেশি দারুণ সব লেখা পাই আমরা এই কামনা করি।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
এই গল্প আরো এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো ।
xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সন্ন্যাসী
এখানে ঘৃনার অপ্রয়োজনীয়তা
বড় ব্যাপার নয়।
বড় হচ্ছে মানসিকতা।
কত অদ্ভুত কারণে আমরা আমাদের
দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টে দিতে দিই
তার বর্ণনা।
ফারক হাসান
গল্পটা চমত্কার
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
একদম ঠুস করে মাথায় গুলি করলেন, লাল সেলাম
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
থ্যাংকু!
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
নতুন মন্তব্য করুন