১.
এরকম ডোবার জলের মতন স্থির হয়ে থাকা নিস্তরঙ্গ সময় বেশ ভালোই কাটছিলো। কিন্তু গেল সপ্তাহের শেষে বাধ সাধলেন অধ্যাপক মহাশয়। ফেসবুকের এপাতা ওপাতা ইতংবিতং করে উল্টে পাল্টে দেখে, দুনিয়াময় ছড়ানো ছিটানো বন্ধুদের হাবিজাবি ছবিতে কমেন্টানো সেরে, ক্রিকইনফোর পাতায় চোখ বুলিয়ে, ইউটিউবে নুসরাত ফতেহ আলীর কনসার্টে গাওয়া আফরিন-আফরিন শুনে, হুদাই ঘন ঘন সচলায়তনে ইন-আউট ইন-আউট খেলা শেষে রাত সাড়ে আটটায় যখন ল্যাবের ডেস্ক ছাড়বো ছাড়বো করছি তখনি তার মেইল, তাতে লেখা- তড়িত প্রয়োজন, পেট্রোনাসে টক, বিশ মিনিটের একটা প্রেজেনটেশন, প্রস্তুত কর, কালকে সকালের মধ্যে, অবশ্যই।
অধ্যাপকের সাথে আমার এই একটা বিষয়ে দারুণ মিল। দুজনেই জরুরি কাজের বেলায় 'ডু ইট এট দ্য লাস্ট মোমেন্ট' থিউরিতে বিশ্বাসী। পার্থক্য একটাই- হোক কাজটা আমার কিংবা তার, রাতের ঘুম হারাম হয় কেবল আমার ।
তবু খেটেমেটে কাজটা করে দেয়া গেল। স্লাইডগুলোতে চোখ বুলানোর ধরন দেখে মনে ধরেছে বলেই মনে হলো। নতুন করে বেশি কিছু বদলাতে বললেন না আর।
ভাবলাম, যাক বাঁচা গেল। সপ্তাহের বাকিটা সময় প্রফেসর আউট অফ টাউন, সময়টা কাটবে পাংখা। কিন্তু হায়! মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক।
যাবার আগে আগে একশো একটা কাজ ধরিয়ে বললেন, আই নো ইউ ক্যান ডু ইট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন হয়ে গেল। বাংলাদেশি বেশ কয়েকজন ছিলেন এবার। মাশীদ আপু তাদের একজন। অনেক দিন পর তার সাথে দুপুর রাতে আড্ডা দেয়া গেল। সেই একই ফর্ম। দুনিয়াতে কিছু কিছু জিনিস কখনোই বদলায় না। কিংবা বদলালেও বাটা'র ডিজাইনের মতন এতই সুক্ষ্ম যে ধরা যায় না। কিন্তু ভালো লাগে।
রাত জাগাটা বিরাট প্রব্লেমিটি হয়ে দেখা দিচ্ছে। আগে কেবল ফার্স্ট আওয়ারের কাজকর্মগুলোই মিস হতো, এখন আবার দেখি শরীরও জানান দিচ্ছে- রাত জাগা ভালো নয়। তারপরও প্রতিরাতেই শুতে যেতে আগের দিনের চেয়ে আধাঘন্টা দেরি হচ্ছে। এভাবে কোথায় গিয়ে ঠেকবে কে জানে।
প্রতিদিনই ভাবছি, আজই শেষ। রাত বারোটা তো ঘুম।
এখন রাত বাজে সোয়া তিনটা।
২.
ছুটি উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাস অনেকটাই ফাঁকা। শাটল বাসগুলোতে ভীড় নেই, ক্যান্টিনগুলো রাতে দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়, টিউটরশীপের অহেতুক ঝামেলা নেই। আর দিন পনেরো এরকম নির্ঝঞ্ঝাট থাকা যাবে। তারপর আন্ডাদের (আন্ডারগ্রেডদের) আবার হৈচৈ, প্রাণের উচ্ছাস!
ভাবছিলাম এই ফাঁকে কয়েকটা অনেকদিনের ভেবে রাখা কাজ করে রাখবো। তার একটা ছিল, অনেকদিন ভেবেছি সনি কে নিয়ে একটা লেখা লিখবো। আমাদের সনি। ক্লাসমেট সনি। সন্ত্রাসীদের বুলেটে হারিয়ে যাওয়া সনি। এতদিন পর প্রায় ভুলে যাওয়া সন্ত্রাসবিরোধী প্রতীকের নাম সনি।
সনির মৃত্যুকে ঘিরে একটা আন্দোলন হয়েছিল বুয়েটে। সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন। অতি সাধারণ (এবং সুবিধাবাদী) ছাত্র হয়েও আমার দেখা সেই আন্দোলনের গল্প শোনাতে একটা লেখা লিখতে চেয়েছি বহুদিন। সময়ের সাথে সাথে স্মৃতিও ক্ষয়ে যায়। তাকে ধরে রাখা দরকার বোধ করেছি।
কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম সেই সময়ের কিছুটা স্মৃতি আমি এবং আমার আশেপাশে যারা আছে তাদের সবকটা জোড়া দিয়ে একটা ছবির মত তুলে রাখবো এলবামে।
এরই মধ্যে ভূতের ছায়া দেখে ভয় পেয়ে গেল প্রেতাত্মার দল। ঠিক যেমনটা দেখেছিলাম সনির মৃত্যুর পরদিন। বুয়েটের দেয়ালে দেয়ালে প্রথম প্রকাশিত কাঁচা হাতে লেখা প্রথম প্রতিবাদ দেখে যেমনটা ভয় পেয়েছিল তখনকার বুয়েট খামছে ধরা প্রেতাত্মারা।
সাধারন চোখেও দেখি ঠিক ঠিক মিলে যাচ্ছে সব। একই কায়দায় ভয় পাচ্ছে ওরা। আমি জানি একই রকমভাবে এরপর ওরা ফেলবে ওদের সতর্ক পদক্ষেপ। ভয় আবার পাবো আমরাও, তারপর একইভাবে একে অপরকে জড়িয়ে ধরবো, শক্ত হব, মার খাবো, তারপর একদিন সনির খুনিরা ঠিকই হয় দেশছাড়া নয় ফাসিতে ঝুলবে।
মন্তব্য
আছি................
কী ব্লগার? ডরাইলা?
সবাই কেমন যেন শক্ত হয়ে আছেন রে ভাইয়েরা!
ব্লগ পড়তে চাই, ব্লগ।
সন্ন্যাসী, একটা গোল রুটি ছাড়েন তো!
ছেড়েছি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
পড়লাম,
যথারীতি পাঁচ তারকা
একদিন সনির খুনিরা ঠিকই হয় দেশছাড়া নয় ফাসিতে ঝুলবে।
সনির খুনীরা তো শুনেছি বিদেশে বহাল তবিয়তেই আছে!
= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।
হ রে ভাই। পাশার দানও পাল্টেছে।
আরো কত কী।
সনিকে নিয়ে আপনার লেখার অপেক্ষায় ......
আমিও
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
নতুন মন্তব্য করুন