মেতেছি অলিম্পিকে।
কম্পিউটেশনাল কাজ করতে হয় বলে ল্যাবে সারাক্ষণ কম্পিউটারের সামনেই থাকি। ওয়েবকাস্টে ইউনিভার্সিটির ওয়েবপেজ থেকেই টিভি দেখার ব্যবস্থা আছে। আর ডুয়াল মনিটর থাকায় সুবিধা হয়েছে বেশ। একটা স্ক্রীণে অলিম্পিকের লাইভ টেলিকাস্ট ছেড়ে দিয়ে অন্য স্ক্রীণে কাজ করা- এক ঢিলে দুই পাখি আর কি।
বাসায় তো কথাই নেই। খেতে টিভি, ঘুম পাড়াতে টিভি, ঘুম ছাড়াতেও।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই চীন যে বাজিমাত করবে তা জানতাম। তাই সেদিন হাতে আর কোনো কাজ রাখিনি। ল্যাবেই ছিলাম। চীনারা যে কত পরিশ্রমী তাতো জানেনই। এমনিতেই কি চীন এতগুলো সোনা পাচ্ছে! আমার ল্যাবমেট লি জে সকাল নয়টায় ল্যাবে আসে আর রাত এগারোটায় ফেরত যায় ঘুমোতে। সপ্তাহে সাতদিন। নিজের দেশে অলিম্পিকের এমন ফাটাফাটি উদ্বোধন হচ্ছে, ল্যাবমেট অন্যান্য দেশের অন্য সবাই মিলে যেখানে হা করে গিলছি প্রতিটা ডিসপ্লে, তখন লি জে একমনে তার প্রোগ্রামিংয়ের কাজ করছে।
শেষমেষ থাকতে না পেরে সেও এসে যোগ দেয়। সেই শুরু।
জিমনেস্টিক্সে চীনের প্রাধান্য আর প্রতিভা দেখে অবাক হতে হয়। ভারোত্তোলন, ডাইভিংয়েও ওরা সেরা। শুরুর দিকেই এই ইভেন্টগুলো থাকায় চীন পদক তালিকায় আমেরিকা থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখেই প্রাধান্য করছে। তবে আজ থেকে শুরু হয়েছে এথলেটিক্স। এইবার ব্যবধান কমবে।
চীনের জয়জয়কার কেবল থেমে গেছে বাস্কেটবলে। বহুল প্রতীক্ষিত চীন-আমেরিকা দ্বৈরথে চীন গো-হারা হেরেছে। জমছে না ফুটবলও। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হিসেবে আরো জোশ খেলা দেখার শখটা এখনো মিটছে না।
মাঝখানে ফেদেরার বেচারা হেরেছে।
আচ্ছা, মাইকেল ফেল্পস ব্যাটা মানুষ না মেশিন? তবে ভালো লাগছে যে আটটা সোনা পাওয়ার মিশন কেবল বাগাড়াম্বরই ছিলো না। আটে আট সোনার পদক গলায় ঝুলানো কেবল ওর পক্ষেই সম্ভব। গতকাল চ্যানেল ফাইভের এক ধারাভাষ্যকার বেশ রসিকতা করলেন। তার মতে কালকে ছিল এই অলিম্পিকের এক অবিস্মরণীয় দিন, কারণ- সেদিন ফেল্পস কোনো সোনা জেতে নি।
কালকে ওর কোনো ইভেন্টের ফাইনাল ছিল না, তাই।
লি জে কিন্তু একদম খুশি নয়। আজকে বলছিলো, এই ফেল্পস ব্যাটাকে চীন সরকার কেন যে ভিসা দিল! এখন পর্যন্ত ফেল্পস একাই জিতেছে আমেরিকার জেতা সোনার প্রায় অর্ধেক। আটটার আরো দুটো তো বাদই আছে। সেগুলোও যে জিতবে না তার পক্ষে বাজি ধরার লোক হয় পাগল নয় খেলা বোঝে না। লি জে এটাও বলছিলো, যেখানে কোনো কোনো দেশের জীবতদশায় একটা সোনার ভাগ্য হয়নি, সেখানে ফেল্পস ক্যামনে একাই আটটা জেতে?
ধরে নিয়েছি, কালকে সকালেও লি জে'র কালো মুখ দেখতে হবে।
ফেল্পসকে ওর বন্ধু এসএমএস পাঠিয়েছে, ড্যুড, বিরক্ত ধরে গেছে, আর কতোবার দিনে তোর সোনার পদক নিয়ে পোজ দেয়া কদাকার চাঁদবদনখানা দেখতে হবে টিভিতে!
সিঙ্গাপুরও আছে অলিম্পিকে। তবে তার চেয়ে বেশি চ্যানেলগুলোয়। খেলোয়াড়দের পারফরমেনস্ যাই হোক এত বেশি ওদেরকে প্রমোট করছে যে মাঝে মাঝে বিরক্ত ধরে যায়। যে ব্যাটা শুটিংয়ে ২৩তম হয়ে ব্যাক-টু-প্যাভিলিয়ন, তাকেও দেখানো হচ্ছে নিউজে, চাংগি বিমানবন্দরে ফুলের মালা গলায়। সাতারে সেমিতে যেতে পারেনি তো কি হয়েছে, হিটে তো প্রথম ! হিটেও প্রথম হয়নি তো কি হয়েছে- জাতীয় রেকর্ড তো পড়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর টাও লি নামের যে তন্বী মেয়েটি সিঙ্গাপুরের ইতিহাসেই প্রথমবারের মত কোনো সাতারের ইভেন্টে ফাইনালে সাতরালো- তাকে নিয়ে মাতামাতি তো বিশাল বললে কম বলা হয়। প্রভাবশালী মন্ত্রীরা ফুড ক্যান্টিনগুলোর লোকজমায়েতে মিশে টাও লি'র পঞ্চম হওয়া সেলিব্রেট করলেন, প্রেসিডেন্ট বেইজিংয়েই ছিলেন, গেমস ভিলেজে গিয়ে দেখা করে আসলেন। জন্ম নিলো এক স্পোর্টস সেলিব্রেটির- কোনো পদক ছাড়াই।
তবে আজকেই পদক নিশ্চিত করেছে টেবিল টেনিসের মেয়েরা, দুর্দান্ত খেলে কোরিয়াকে হারিয়ে দলগত ইভেন্টে ফাইনালে উঠেছে। ১৯৬০ সালের পর এই প্রথম এবং মোট মিলিয়ে দ্বিতীয় কোনো পদক পাচ্ছে টিম সিঙ্গাপুর।
ভাবছি কালকে কোনো ছুটি ঘোষনা না হয় আবার এই দ্বীপদেশে!
মাঝে মাঝে এও ভাবছি, এরকম পিঠ চাপড়ানো যদি আমাদের দেশের খেলোয়াড়রা পেত, তাহলে কত কিছুই না হতে পারতো!
মন্তব্য
ঠিক !!!
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
কিন্তু আমরা যে পিঠ চাপড়ানোর বদলে পুলিশ দিয়ে পেটাই!
হা হা। মজা হৈছে। আমিও এখন মাইকেল ফেল্পস হইতে চাই, তবে সাঁতরিয়ে নয়- খানাখাদ্য খেয়ে। ওজন বেড়ে যাচ্ছে দেখে ইদানীং বাসায় খাবার-দাবার নিয়ে হেভি গ্যাঁড়াকলের মধ্যে আছি। সবকিছুতেই বউয়ের কড়াকড়ি- এইটা খাওয়া যাবে না, ওইটা খাওয়া যাবে না । নিউজে দেখলাম ফেল্পস ব্যাটা নাকি দিনে দশ হাজার ক্যালরি খাবার খায়- আটটা ডিম, পিতজা, পাস্তা আরো কত কি। শুনে আমার শোক উথলায়ে উঠল; বউরে কইলাম- শান্তিতে খানাপিনা করতে পারি না- এইজন্যই আমি মাইকেল ফেল্পস হইতে পারলাম না - আমাকেও দিনে দশ হাজার ক্যালরি খাইতে দাও, দ্যাখো কেমনে আটটা গোল্ড মেডাল নিয়া আসি ।
= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।
আপনের আইডিয়া জটিল। দেখেন, ফেল্পসের নাম ভাঙ্গাইয়া কদ্দুর কি খাইতে পারেন! যদি একলা না পারেন, তাইলে ভাবীকে বলে আমাদেরও দাওয়াত দেন, জামাতের সাথে ঘরে ঘরে ফেল্পস হয়া উঠি
ফেদেরার বেচারার যে কি হইল কিছু মাথায় ঢুকে না; ফেদেরার খেলা ভুলে গেল নাকি প্রতিদ্বন্দ্বীরা খেলা শিখে গেল বুঝি না।
আপনার এই সিরিজটা বেশ ভাল; পড়ে আরাম লাগে।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
ভিনগ্রহের টেনিস আর কত!
ফেদেরারকে হারিয়ে দেয়া আমেরিকান জেমস ব্লেইক বলছিলো, নাতিনাতনির কাছে গল্প করা যাবে যে বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড়কে সে অলিম্পিকে হারিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু তারপর আর হয় নি, সেও হেরে গেছে সেমিতে গনজালেসের কাছে।
সিরিজটা ভালো লাগছে জেনে ভালো লাগলো রাফি। আপনিও নিয়মিত লিখতে থাকুন। শীঘ্রই সচল হয়ে যাবেন আশা করি।
হুম। ও ওইদিন হিটে দ্বিতীয় হয়েছিল।
ফুটবল ম্যাচগুলো দেখে অতিশয় বিরক্ত লাগছে। এতো মন্থর গতি।
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল
আজকে কিছুক্ষণ আগে ফেল্পসের সাত নম্বরটা হলো। দলগতভাবে জেতা দ্বিতীয় সোনাটার পর এটাতেই যা একটু প্রতিযোগিতা হলো। পিছিয়ে থেকেও শেষমেষ সেকেন্ডের একশো ভাগের একভাগ সময়ই পার্থক্য গড়ে দিল সোনা আর রূপার।
আমি শিউর, আটটাই জিততে চলেছে ফেল্পস।
আর অলিম্পিকের ফুটবল মনে হয় এরকমই। বিরক্তিকর।
আমাদের পুলিস্রা খুব ভালো করে শুটার আসিফের পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলো। আর্কী চাই?
-
সিরিজ ভালো হচ্ছে।
ভাবছিলাম ক্রসফায়ার গেমটা যতদিন না অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ততদিন বাঙালীর ভাগ্যে কোনো মেডেল নাই।
-
পিঠ চাপড়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ বস্
আপনি অলিম্পিক নিয়ে এরকম আরো দুচারটে নামিয়ে ফেলুন, আমাকে আর কষ্ট করে হাইলাইটস দেখতে হবে না তাহলে।
লেখা ভাল হৈছে।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
লেখা পড়ে আর হাইলাইটস দেখে কি অলিম্পিকের উত্তেজনা রক্তে নেশা ধরাতে পারে? আজ আর ঘন্টা দুই পরে (বিডি টাইম রাত ৮:৩০) ১০০ মিটার স্প্রিন্টের ফাইনাল। এই মাল মিস কইরেন না। নইলে ঐ ১০ সেকেন্ডের জন্য আবার ৪ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
বিশ্বরেকর্ডধারী ইউসেইন বোল্ট মাত্রই সেমিতে হেসেখেলে ৯.৮৫ সে. টাইমিং করলো। এরপর আসাফা পাওয়েল আর টাইসন গে তো আছেই।
একেবারে মাক্ষি এক স্প্রিন্ট ফাইনাল হবে মনে হচ্ছে!
মাত্রই শেষ হলো বেলজিয়াম-ইতালি কোয়ার্টার ফাইনাল। আমার অভিজ্ঞতায় এত চরম ঘটনাপূর্ণ ফুটবল বোধহয় কমই দেখেছি। বেলজিয়াম ইতালিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে সেমিতে উঠেছে। কিন্তু যারা এই খেলা দেখেননি, তাদের মিস করার আছে অনেক কিছুই। ভালো ফটবলের প্রদর্শনী তো ছিলোই, তার উপর দুই লাল কার্ড, দুই প্রান্তেই গোলকিপারের পরিবর্তন (ইতালির কিপার অবশ্য লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছেড়েছে), বলতে গেলে শুরু থেকেই দশজন নিয়ে খেলা বেলজিয়ামের বারবার লিড নেয়া, দুই পেনাল্টি, রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আবীরের প্রতিমন্তব্যে বলেছিলাম, অলিম্পিক ফুটবল বিরক্তিকর। আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি।
ক্রিকেটারদের পারফমেন্স দ্যাখেন! বেশি পিঠ চাপড়ালেই তারা কমান্ডো হয়ে যায়!
লেখা ভালো লেগেছে।
কী ব্লগার? ডরাইলা?
ভালো কথা মনে হয়েছে, আপনার দুই ভাই ফকরুদ্দিন-মইনুদ্দিন সিরিজ কিন্তু চালাচ্ছেন না, এটা ভারী অন্যায়।
নতুন মন্তব্য করুন