গণিত কাঠখোট্টা, গণিত বিরক্তিকর। কিন্তু সেই গণিতেই আছে কোমল, মায়াময় রহস্য আর টান টান শিহরণ। বলবো একটি ধাঁধার গল্প, ধাঁধাটি সরল আবার কঠিন। ঠিক যেমনটা মানুষের মন। গণিতকে ভালোবেসে মানষ পেয়েছে অমরত্ব, আবার তাকে পায়েও ঠেলেছে নিতান্ত অবহেলায়। এ গল্প তাই কেবল গাণিতিক নয়, মানবিকও।
.
.
.
.
.
.
.
শুরুটা হয়েছিল এভাবে।
সপ্তদশ শতাব্দীর কোনো এক স্নিগ্ধ ভোরে নিজের পড়ার ঘরে চেয়ারে হেলান দিয়ে বেশ মোটাসোটা একটি বই পড়ছিলেন ফরাসি বিজ্ঞানী পিয়ের দ্য ফের্মা (Pierre de Fermat)। বইটি গণিতের প্রাচীন গ্রীক সংকলন, 'এরিথমেটিকা'।
অনেক দিন ধরেই ফের্মা বইটি পড়ছেন। এতে এত চমকপ্রদ সব গাণিতিক সমস্যা আছে যে ফের্মা প্রায় প্রতিদিন আগের চেয়ে দ্বিগণ উতসাহ নিয়ে সেগুলোর সমাধান চিন্তা করেন। প্রতিবার এক একটি সমস্যার সমাধান খুঁজে পান, আর ভাবেন, আহ্ এর চেয়ে সুখ আর কি হতে পারে জীবনে, জগতের সবচেয়ে ধ্রুব সত্য গণিতের সেবা করতে পেরে ফের্মার মন দ্রবীভূত হয়ে যায়। বই থেকে চোখ তুলে প্রতিবার সামনে তাকান, সে চোখে থাকে আনন্দের তৃপ্তি, চিকচিক করে সত্যের প্রতি প্রার্থনার জল। তারপর লিখে রাখেন সদ্য আবিষ্কৃত গণিতের কোনো চিরন্তন প্রমাণ কিংবা কোনো গাণিতিক সমস্যার কথা, যাদের অনেকগুলোই পরবর্তী অজস্র গণিতবিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের এবং আনন্দের কারণ হয়ে থাকবে।
তারপরই প্রতিবার বিষন্নতা ভর করে জগতবিখ্যাত গণিতবিদ পিয়ের দ্য ফের্মার মনে।
এরকমই এক বিষন্ন সকালের একটু একটু করে ফুটে উঠা আলোয় ফের্মা একটি অসাধারণ সুন্দর কিন্তু বিদঘুটে সমস্যা নিয়ে ভাবছিলেন।
ভাবতে ভাবতে একসময় মুচকি হাসলেন ফের্মা। তারপর কলমদানি থেকে চমতকার কারকার্যখচিত একটি কলম তুলে কালির দোয়াতে চুবালেন। অভিজাত ফরাসি কায়দায় দোয়াতে কলমের গায়ে লেগে থাকা অতিরিক্ত কালিটুকু মুছে নিয়ে বইয়ের মারজিনের ফাঁকা অংশটায় লিখলেন,
'এই সমস্যার অসম্ভব সুন্দর একটি প্রমাণ আমার কাছে আছে। কিন্তু এই মার্জিনে সেটি আটবে না।'
গণিতের ইতিহাসে এত বড় ক্রুর রসিকতা বোধহয় আর কেউ করেন নি। কে জানতো পরবর্তী সাড়ে তিনশো বছর ধরে ফের্মার সেই অসম্ভব সুন্দর প্রমাণের পেছনে সবাইকে ছুটতে হবে!
ফের্মা বইয়ের মার্জিনে যে সমস্যাটার কথা লিখেছিলেন সেটা এত সহজ যে দশ বছরের যে ছেলেটি স্কুলে গণিত শিখে সেও বুঝতে পারবে,কিন্তু তা প্রমাণ করতে বাঘা বাঘা গণিতজ্ঞদের ঘাম ছুটে যাবে। আদতে সেই সময় কারোরই যে প্রমাণটা জানা ছিল না, তা বলাই বাহুল্য।
ফের্মা'র শেষ উপপাদ্য
আমরা সবাই পীথাগোরাসের উপপাদ্যের কথা জানি।
দারুণ আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, এই উপপাদ্য বলে যে অনেক ত্রিভুজই আমরা গড়তে পারবো যাদের প্রতিটি বাহু হবে পূর্ণসংখ্যা। অন্য কথায়, সংখ্যার জগতে এরকম তিনটি সংখ্যার অনেক সুখী পরিবারই পাওয়া যাবে যেখানে কনিষ্ঠ দুই পূর্ণসংখ্যার প্রতিটির বর্গের সমষ্টি তৃতীয়জনের বর্গের সমান। উদাহরণ,
কিন্তু ফের্মা বললেন যে সেটা ঠিক আছে, ঠিক থাকবে যদি আমরা কেবল সংখ্যাগুলোর বর্গ নেই। ঘন কিংবা তার বেশি সূচক নিলে এই নিয়ম ভেঙ্গে পড়বে। তার মানে, আমরা কখনোই এমন তিনটি পূর্ণসংখ্যা পাবো না যারা নিচের সমীকরণটি মেনে চলবে, যদি n এর মান তিন বা তার চেয়ে বেশি হয়!
উপপাদ্যটি এত সহজ যে, কারো বুঝতে তেমন কষ্ট হবার কথা নয়, কিন্তু গণিতবিদরা তো কেবল তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন না, তাদের দরকার গণিত দিয়েই প্রমাণ করা যে ফের্মার এই উপপাদ্যটি আদতেই সঠিক।
বিপত্তিটা ঘটলো সেখানেই।
উপপাদ্যটির কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারছিলেন না। আবার কেউ এমন কোনো উদাহরণও দিতে পারছিলেন না যে, ফের্মার উপপাদ্যটি ভুল।
এর মধ্যে আবার স্বয়ং ফের্মার এমন হেয়ালি! আরে বাবা, যদি জানাই থাকে তাহলে বলে ফেললেই হয়, তা না। রহস্য।
ফের্মার জীবিতাবস্থায় বইয়ের মার্জিনে লেখা সেই অবিষ্মরণীয় দুটি লাইন কারো নজরে আসে নি, ফের্মা নিজেও উপপাদ্যটির কোনো প্রমাণ আর দিয়ে যান নি। মূলত ফের্মার মৃত্যর পর তাঁর ছেলে যখন মার্জিনে লেখা নোটগুলো বই আকারে ছাঁপেন, তখনই সবাই রহস্যটির কথা জানতে পারে।
সেই থেকে বাঘা বাঘা পন্ডিত হয়রান,কিন্তু যে লাউ সেই কদু। গণিত হয়ে থাকলো রহস্যময়, তার চেয়েও রহস্যময় ফের্মার সেই উক্তি, যতক্ষণ পর্যন্ত না উনিশশো পচানব্বই সালে এন্ড্রু ওয়াইলস এসে বললেন, আমার মনে হয়, প্রমাণটা আমি পেয়ে গেছি!
এন্ড্রু ওয়াইলস
মন্তব্য
ফার্মার শেষ উপপাদ্য নিয়ে অনেক সাহিত্যও হয়েছে। একটা মজার গল্প পড়েছিলাম- 'দ্য ডেভিল এন্ড সাইমন ফ্ল্যাগ'। সাইমন শয়তানকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি শয়তান প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, তাহলে সাইমন শয়তানের দাসত্ব করবে। আর যদি না পারে শয়তান সাইমনকে অর্থ এবং সুখ-সাচ্ছন্দ্যের নিরাপত্তা দেবে।
সাইমনের প্রশ্ন ছিল- 'ফার্মার শেষ উপপাদ্যটি কি সঠিক?'
প্রশ্ন শুনে শয়তান ভ্যাবাচ্যাকা- 'কার শেষ কী বললে?'
গল্পটা এখান থেকে পড়ে নিতে পারেন। এর একটা বাংলা অনুবাদও একসময় পড়েছিলাম। কে করেছিলেন, এখন মনে নাই।
= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।
ভাগ্যিস গল্পটার লিংক দিয়েছিলেন! নইলে গল্পের শেষে কি হলো সেটা না জানতে পারলে মেজাজ সপ্তমে উঠতো।
চমৎকার লেখা, বিশেষত আপনার গল্পের ছলে বলার ভঙ্গিমা। যারা জানেন না এ ব্যাপারে, তাঁরা আশা করি বেশ মজা পাবেন পড়ে।
আচ্ছা একটা ব্যাপার, আমার জানা মতে ফার্মার শেষ উপপাদ্যের সমাধান এন্ড্রু উইলস দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু অনেক জটিল পদ্ধতিতে। আমি যতদূর মনে পড়ে এটাও শুনেছিলাম যে, উনি যেই পদ্ধতিতে তথা গণিতের যেই শাখাকে কাজে লাগিয়ে প্রমাণ করেছেন, সেটা ফার্মার সময় এত সমৃদ্ধ ( কিংবা আদৌ ) ছিলো না। অর্থাৎ কি না ফার্মার উপপাদ্যের প্রমাণ মিললেও, সেটা ফার্মার চিন্তাকৃত উপায়ে কি না, সেটা নিয়ে এখনো অনেক সন্দেহ রয়ে গিয়েছে।
*** আমার জানায় ভুল থাকতে পারে। আপনার পুরো লেখা পড়ার প্রতীক্ষায় থাকলাম।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনার ধারণা একদম ঠিক। ওয়াইলস ফার্মার শেষ উপপাদ্যের সমাধান দিয়েছেন অনেক জটিল পদ্ধতিতে। তাকে যখন এই প্রশ্নটিই করা হয়েছিল, তখন সে বলেছিল, its a twenteeth century proof. সুতরাং ফার্মার মত হতেই পারে না।
আর তাছাড়া এন্ড্রু ওয়াইলসের প্রমাণ পুরোটাই তো আর তার নিজের মৌলিক আবিষ্কার নয়, স্বাভাবিকভাবেই তিনি অনেককিছুর দারস্থ হয়েছেন যেগুলো পূর্ববর্তী গণিতবিদরা আবিষ্কার করে গিয়েছেন। আমি পরবর্তি পোষ্টে (যদি আদৌ আলসেমি কাটিয়ে উঠে লিখতে পারি) তাদেরকেউ আনার চেষ্ঠা করবো। বিশেষ করে গ্যালোসের কথা না বললেই নয়।
সুতরাং কেউ যদি দাবি করে যে, আমি ঠিকঠিক ফার্মার মত করে উপপাদ্যের প্রমাণ করতে পারবো, সেটি হবে নিতান্তই অবান্তর।
ফার্মার সত্যিকারের প্রমাণটি (যদি আদৌ সেটা থেকে থাকে) এখন আর জানার কোনো উপায় নেই। কারণ, ফার্মা নিজেই কখনো সেটি প্রকাশ করেন নি। আর এ কারণেই গণিত এত সুন্দর, আর রহস্যময়তায় ভরা। আর এ কারণেই তিনশো বছরের এই ধাঁধাঁ জন্ম দিয়েছে অসংখ্য কাহিনীর!
ওয়াইলসের সেই বহু পাতা জোড়া প্রমাণ কারুর জানা? থাকলে প্লীজ লিংক দিন।
অন্য কোনোভাবে ছোটো সুন্দর প্রমাণ থাকলে তা দিন।
এইখানে টিপি দিয়ে দেখতে পারেন।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: সাবধান, আর্টিক্যালটা মাত্র ১০৯ পৃষ্ঠার।
উপকারিতা: ফার্মার উদ্ধৃতিটা পাওয়া যাবে একদম প্রথম পাতায়
একটা ছোট গল্প লিখি।
ফ্রঁসোয়া দ্যু নন্ত এসে হৈহৈ করে উঠলেন, "পিয়েঘ! এ কী করছো তুমি এই সুন্দর অপরাহ্নে? একগাদা পুরনো কাগজের ধূলো ঘাঁটছো? ওদিকে বাইরে চেয়ে দ্যাখো, কী চমৎকার একটা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে! চলো, আজ মাদাম দ্য লা শা'র ওখান থেকে ঘুরে আসি।"
ফ্যঘমা মাথা নাড়লেন। "না ফ্রঁসোয়া, আমার অনেক অঙ্ক কষা বাকি।"
দ্যু নন্ত একটু অভিমানই করলেন বুঝি। আরামকেদারায় লম্বা হয়ে বসে বললেন, "তা কী এমন অঙ্ক কষতে চাও তুমি, যার কাছে মাদাম দ্যু লা শা'র আখড়ার সুন্দরীদের মাংসের আবেদন ম্লান হয়ে যায়, মঁসিয়ু দ্য ফ্যঘমা?"
ফ্যঘমা বাড়িয়ে ধরলেন আরিথমাতিকা। বিদঘুটে সেই সমস্যা। দু'টি পূর্ণ সংখ্যার কোন একটি নির্দিষ্ট ঘাতের যোগফল শুধু তখনই আরেকটি পূর্ণসংখ্যার সেই ঘাতের সমান হবে, যখন ঘাতের সর্বোচ্চ মান ২ হবে।
দ্যু নন্ত খানিক দেখলেন সমস্যাটা, তারপর গোঁফ চোমড়ালেন।
ফ্যঘমা উঠে দাঁড়ালেন, "ক্ষমা করো, ফ্রঁসোয়া! বছর দেড়েক ধরে মাথা ঘামাচ্ছি এ সমস্যা নিয়ে। আজ রাতের মধ্যে এর একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়বো।"
দ্যু নন্ত মুচকি হাসলেন। বললেন, "এক কাজ করলে কেমন হয়?"
ফ্যঘমা আবার বসে পড়লেন। "কী কাজ?"
দ্যু নন্ত পায়ের ওপর পা তুলে বললেন, "বইটার মার্জিনে দেখি তুমি অনেক হিজিবিজি কেটেছো। ... এ সমস্যা যখন দেড় বছরে সমাধান হয়নি, আজ রাতের মধ্যে হবে, সে ভরসা করা বোকামো। তারচেয়ে মার্জিনে লিখে দাও, এর খুব সহজ প্রমাণ তোমার কাছে আছে, কিন্তু সেটা লিখে শেষ করার জায়গা এখানে নেই।"
ফ্যঘমার মুখ ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। "ফ্রঁসোয়া! তোমার মাথায় তো বেশ বেরেন আছো দোস্ত!"
দ্যু নন্ত অট্টহাসি দিয়ে বললেন, "বেরেন আছে বলেই তো আমি সুন্দর সন্ধ্যাগুলি মদ আর মেয়ে নিয়ে কাটাই, ম্যাথমেটিক্স নিয়ে নয়!"
ফ্যঘমা একটা পৈশাচিক মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, "পরে যখন এই মন্তব্য ছাপা হবে, চিন্তা করে দেখেছো, লোকজন এই প্রমাণ নিয়ে কীরকম উতলা হয়ে পড়বে?"
দ্যু নন্ত বললেন, "উতলা হয়ে পড়বে, আর নিজেরা প্রমাণ খুঁজতে গিয়ে হোগামারা খাবে। ... যাই হোক, চটপট কথাটা লিখে শেষ করো, বেজায় তেষ্টা চেপেছে।"
ফ্যঘমা বললেন, "রোসো! ল্যাটিনে লিখতে হবে। এতো সোজা নয়। ... আমি মাঘতাঁকে ডেকে বলছি তোমাকে এক পাত্র লাল মদ দিয়ে যেতে।"
এই বলে তিনি লিখতে লাগলেন, "Cuius rei demonstrationem mirabilem sane detexi. Hanc marginis exiguitas non caperet."
হাঁটুপানির জলদস্যু
ঘটনা সত্যি হইলে ফার্মার আইপি সহ ব্যান চাই......
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ওররে!
এরপর আমার পোষ্ট আর প্রথম পাতায় থাকতে পারে না।
(কিন্তু এই পোষ্টের মন্তব্যেই এই গল্পটা থাকায় পোষ্টটি সরানো হলো না। )
পিয়ের দ্য ফার্মা তাহলে জাঁত ফরাসি উচ্চারণে পিয়েঘ দ্যু ফ্যঘমা? দাঁত ভেঙ্গে যাচ্চে যে!
http://bn.wikipedia.org/wiki/উইকিপেডিয়া:বাংলা_ভাষায়_ফরাসি_শব্দের_প্রতিবর্ণীকরণ
এই নীতিমালা অনুযায়ী বাংলা উইকিপিডিয়াতে কিন্তু পিয়ের দ্য ফের্মা নামই রাখা হয়েছে। আমি নিশ্চিত না। ভুল থাকলে উইকিতেও সংশোধন করতে হবে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
১.
লিংকটা তো খুব কাজের! থ্যাংকু বস।
আমি নিজেও একটু দ্বিধান্বিত। মনে হচ্ছে ফার্মা না হয়ে ফের্মা'ই হবে।
না কি ফ্যঘমে'ই সঠিক?
যাই হোক, পোস্টে ফের্মা করে দিচ্ছি।
হিমুর r=ঘ বানান যেমন ঠিক , গল্পটাও সত্যি হতে বাধ্য। এটাই সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা।
যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি তখন আমার ইংরেজীতে ডিগ্রীধারী বাবা বোধ হয় মনোযোগ পরীক্ষা করতে একদিন ফেঘমার এই সমস্যাটা আমাকে দেন, সাধারণ বীজগনিতের অঙ্ক হিসেবেই। তিন দিন চেষ্টা করে শুধু n=3 ,4 এর পরে আর এগুতে না পেরে আবার তাঁর দ্বারস্থ হলাম, আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে। তখন নিউম্যানের ওয়ার্লড অব ম্যাথেমেটিক্স বইটা আমার হাতে ধরিয়ে দেন। বহু ছেলে বুড়োর ঘুম নষ্ট করেছে ফেঘমার মিথ্যা দাবি।
পূর্ব পাকিস্তানে গণিতের অধ্যাপক ইয়াহইয়াহ একবার একটা ভুল প্রমাণ বার করে অল্প কিছুদিন খ্যাতি ধরে রেখেছিলেন, কারণ পদার্থবিদ/গণিতবিদ আব্দুস সালাম তাঁর ভুল ধরতে পারেন নি। বাংলাদেশে পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সদস্য প্রকৌশলী আহসান সাহেবও জোড়াতালি দিয়ে একটা ভুল প্রমাণ প্রচার করেছিলেন।
পুরস্কার কমিটির কাছে প্রতিদিন এত ভুল প্রমাণ রোজ় আসত যে একটা ছাপা ফর্ম ছিল ঃ আপনার প্রমাণের ... পাতায়... লাইনে একটি ভুল আছে।
যেহেতু ওপরের লেখা পড়তে পারছি না, এঁদের চেষ্টার উল্লেখ আছে কিনা জানি না।
আপনার মন্তব্যে বর্ণিত ঘটনাগুলো বেশ মজার।
তবে
ফের্মার দাবি মিথ্যা হবে কেন? আপনি কোন দাবিটির কথা বলছেন?
দাবিটির কথা তো আপনিও বলেছেনঃ
হিমুর গল্পেরও তা ভিত্তি এবং এন্ড্রু ওয়াইলসের প্রমাণের গোড়াতে ফেঘমার এই অসার মন্তব্য উদ্ধৃত আছে ।
ফের্মার নিজের একটা প্রমাণ থাকার দাবিটা যে মিথ্যা, সেটা কিন্তু প্রমাণ করার কোনো উপায় নেই।
আর ফের্মার মন্তব্যকেও কিন্তু আমি একদম অসাড় বলতে নারাজ। তাঁর দাবির কারণেই না এত রহস্য! এই মন্তব্যই কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী অনেক গাণিতিক আবিষ্কারের ড্রাইভিং ফোর্স হিসেবে কাজ করেছে।
শেষে তো ওয়াইলস প্রমাণ করেই দিয়েছেন, ফের্মার উপপাদ্যটি সঠিক।
খুব সুন্দর করে লিখেছেন। ধন্যবাদ এমন একটা পোস্ট দিয়ে অনেক কিছু জানার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
হিমু'র গল্পটাও বেশ লাগল।
গণিতের রহস্য আর সৌন্দর্য্য দেখলে মনে হয় সবকিছু বাদ দিয়ে সারাদিন গণিত নিয়ে পড়ে থাকি। কিন্তু কিছুদূর গিয়েই মস্তিষ্কে চাপ অনুভব করি। আর এগুনো হয়ে উঠে না।
বাংলা উইকিপিডিয়ায় দেথলাম ফের্মার শেষ উপপাদ্য নিয়ে কিছুটা লেখা আছে। লিংকটা দিলাম:
http://bn.wikipedia.org/wiki/ফের্মার_শেষ_উপপাদ্য
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
বাপরে বাপ পোলাপান কত কিছু জানে!
কতকিছু জানায়!
বুঝেছি তা বলতে পারব না তবে মজা পেয়েছি।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
লেখাটা ভেঙ্গে গেল কেন?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমিও কিছু বুঝতেছি না
কোনো ব্যাকআপ কিন্তু রাখি নাই! ওরে মোর ঈশ্বর!!!
চিন্তার বিষয়!
তবে এইরকম ভেঙ্গে যাওয়া লেখা থেকে আবার ইউনিকোডে ফিরিয়ে নেয়ার একটা কনভার্টার বানানোর কথা ভাবছিলাম অনেক দিন ধরে। এবারে একটা চেষ্টা করা যেতে পারে। আপনাকে জানাচ্ছি ঘন্টা কয়েক পরে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আপনার লেখার টাইটেল কি ছিল?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
টাইটেল ছিল, 'ফের্মার শেষ উপপাদ্য'
একটা পদ্ধতি করা গেছে। ঠিক করা যাবে মনে হয়।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
http://prdownloads.sourceforge.net/scintilla/wscite176.zip?download
এটা নামান।
রান করে ফাইল মেনু থেকে এনকোডিং utf-8 করে দিন।
লেখা এখান থেকে কপি করে ওখানে পেস্ট করে দিন। কাজ হয়ে যাবে।
আবার কপি-পেস্ট করে ব্যাক করে দিন।
আমি তো শুধু হিবিজিবি দেখি, কি ফন্ট এটা?
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
যেটা আন্দাজ করলাম, আপনি প্রথমে লিখা পাবলিশ করে পরে ইউনিকোড ইনকম্প্যাটিবল ব্রাউজার দিয়ে কিছু এডিট করে সেইভ করেছিলেন।
আমি কনভার্টারটা বানানো শেষ করে দেখলাম আরো কিছু ভ্যাজাল আছে। ৬০% কমপ্লীট ধরা যায়।
আলমগীর ভাইয়ের উল্লেখিত এডিটরটা দিয়ে খানিকটা ঠিক করার চেষ্টা করলাম। মূল ভেঙ্গে যাওয়া কোডটাও রেখে দিলাম যাতে আপনি চেষ্টা করতে পারেন।
দেখি কাল নাগাদ বাকিটা শেষ করতে পারি কিনা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আপনি ঠিকই ধরেছেন। একটা কারেকশন করে সেইভ সংরক্ষণ বোতাম চাপার পরই এই গজব নাজিল হয়েছে। এখন সচলে ঢুকেও দেখি সেরকমই আছে।
মুর্শেদ ভাই, আরো কিছু জানার থাকলে আমাকে জানাবেন। অনেক ধন্যবাদ আপনি এবং আলমগীর ভাইকে। খুব টেনশনে আছি, লেখাটা ফেরত পাওয়া যাবে কিনা!
পয়লায় ভাবলাম মন্তব্য লেখুম এইসব কি লেখছেন? বিদেশী ভাষা...
পরে দেখি না... তলানীতে বাংলা ভাষাও আছে... কিন্তু সেটাও আমার কাছে বিদেশীই ঠেকলো। যাও খানিক চেষ্টা করতাম ভাঙ্গাচুরা দেইখা আর আগাইলাম না। তরতরায়ে নামলাম মন্তব্যের ঘরে... সেখানেও দেখি অঙ্ক বিষয়ক... ভাবলাম ভাগি... এইটা আমার এখতিয়ার বহির্ভূত...
ভাগতে গিয়াই হিমুর গল্প পাঠ... এইবার ভালো লাগলো। নাহ্... অঙ্কের চেয়ে সাহিত্য উত্তম।
তবে কসম... আপনাদের জ্ঞান দেখে আমি অভিভূত...
আমি অনেক্ষন পর্যন্ত ভাবতেছিলাম এইটা ফার্মেসির কোনো বিষয়।
আমার ভাস্তিটা ফার্মেসী নিয়া পড়তেছে... তার কোনো উপকারে আসবে ভাইবা আরেক্টু হইলেই তারে লিঙ্ক পাঠাইতেছিলাম।
ইশ্কুলে পড়তে কালে উপপাদ্যের একটা সহজ বাংলা করছিলাম... সেইটা এইখানে রুচিসম্মত না হওয়ায় দিলাম্না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মুর্শেদ ভাই (এবং আলমগীর ভাই) কে অনেক ধন্যবাদ। এই মাত্র ভাঙ্গাচুরা লেখা ঠিক করা গেল।
নজরুল ভাই, এখন চেষ্ঠা করে দেখতে পারেন, পড়তে পারেন কিনা!
সাব্বাশ (আপনের পিছনে কালা যেটা আছে)।
ফের্মা (ফার্মি?) যদিও উপপাদ্যটির কোনো প্রমাণ আর দিয়ে যান নি, কিন্তু একটা মহা পেজগি লাগায় দিয়ে গেছিলেন... তিনি মার্জিনের বাইরে লিখা রাখছিলেন ... "এই সমস্যাটার একটা সুন্দর প্রমাণ আমার কাছে আছে, কিন্তু মার্জিনের এই অল্প জায়গার মধ্যে প্রমাণটা ধরবে না"। এইটাই বাকী পাবলিকরে খাইছে। সবাই ভাবছে ফার্মি যখন মার্জিনের মধ্যেই প্রায় প্রমাণ কইরাই ফালাইছিলেন, ব্যাপারটা নিশ্চয় খুব সোজা হইব। শ্যাস ম্যস বুঝছে ঠ্যালা।
ফার্মির উপপাদ্য নিয়া এক মজার ঘটনা পড়ছিলাম । এক গনিতবিদ (নামটা ভুইলা গেছি) নাকি আত্মহত্যা করব... তার লাইব্রেরিতে। দিন ক্ষন সব ঠিক। ভাবছে মরার আগে একটা ভাল বই পইড়া লই। আর পড়তে গিয়া কি কুক্ষণে (নাকি সৌভাগ্যক্রমে) ফার্মির উপপাদ্যটা চোখে পড়ছে, আত্ম হত্যারা আগে সল্ভ করতে বইয়া গেছে।।এর মধ্যে আত্মহত্যার টাইম গ্যাছে পার হইয়া। বউ আইস্যা দরজা ধাক্কায় কয়... এই ভর সন্ধ্যায় দরজা বন কইরা কি করতাছ... ব্যাটার আর মরা হয় নাই।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
প্রচুর আনইন্টারেস্টিং লেখার মাঝে একটা খুবই ইন্টারেস্টিং লেখা। এই রকম বিষয়ে আগ্রহ থাকলে সুডোকু নিয়ে লিখুন প্লীজ। অভিনন্দন।
গল্পে গল্পে ঘটনা বলার ঢং টা অনেক ভাল লেগেছে। জানা জিনিস, তবু অনেক মজা নিয়ে পড়লাম। ধন্যবাদ
প্রমাণ একটা আমার কাছেও আছে।
তবে কমেন্টবক্সের সাইজটা এতো ছোট!!! কি করবো বলুন?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
হাহাহা, পুরান পাগলে ভাত পায় না, নতুন বাদশার আমদানী
অনেক ইন্টারেস্টিং। ভাল লাগল। তবে এটাও কিন্তু প্রমাণ করার কোন উপায় নেই যে ফের্মার কাছে (মাথায়) আসলেই প্রমাণটা ছিল। এন্ড্রু ওয়াইলস এত বছর পর প্রমাণ করেছে মানে এই না যে ফের্মার দাবি সঠিক। এমনও তো হতে পারে সে নিছক মজার ছলেই কথাটা লিখে গিয়েছিল (সত্যিই যে এটার প্রমাণ আছে, তা না জেনেই!)।
তবে আপনার লেখা আমার খুব প্রিয় একটা সিনেমা, অ্যান্থনি হপকিন্স, গিনেথ প্যাল্ট্রো, জেক গিলেনহালের [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Proof_(2005_film)]প্রুফ[/url]-এর কথা মনে করিয়ে দিল। গণিতের প্রতি ভালবাসা আর হপকিন্সের ভক্ত হলে, সিনেমাটা দেখতে পারেন আগ্রহীরা।
___________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
আবার জিগ্স্! সময় পেলেই দেখে ফেলবো।
অনেক ধন্যবাদ। প্রমাণটার জন্য।
আমার করা প্রমাণটা আরো ভালো ছিলো।:-))
রাখাল বালক আর বাঘের গল্পটা অনেক ছোট বেলায় পড়েছিলাম। কিন্তু এখনো ভুলিনি
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
লেখা আর কমেন্ট পড়ে ধন্ধে পড়ে গেলাম।
ওয়েইলস যে ভিডিওর লিংক তাতে তো বেচারি আবেগ প্রকাশ ছাড়া সূত্র প্রমাণ বিষয়ে কোন কথা বললেন না।
ফের্মার কথা ঠিক না বেঠিক তার সর্বশেষ অবস্থা কী? এক কথায় উত্তর দিন, ফারুক ভাই।
কয়েক মাস (বছরও হতে পারে) দেশে উত্তরাঞ্চলে একজন দাবী করেছিল তিনি ফের্মার সূত্রের প্রমাণ বের করেছেন। বাংলা পেপারে ইংরেজী সূত্র হাবিজাবি হয়ে গিয়েছিল, তবু কাট-পেস্ট করে যা মনে হয়েছে, তিনি cosec সহ আরো কিছু ত্রিকোণমিতিক ফাংশন নিয়ে এসেছিলেন। আমার যদ্দূর মনে হয়, ম্যাটল্যাবে বসিয়ে একটু দেখেছিলামও, ঠিক এটে যায়।
ফের্মার উপপাদ্যটি সঠিক। এন্ড্রু ওয়াইলস তা প্রমাণ করেছেন। যদি n এর মান 2 এর বেশি হয় তাহলে a^n + b^n =/= c^n, যেখানে a,b,c সবগুলি পূর্ণসংখ্যা (integer).
কিন্তু, ফের্মার উপপাদ্যটি সঠিক হলেও, এই উপপাদ্য প্রমাণ করার কোনো পদ্ধতি ফের্মা রেখে যান নি, কেবল বইয়ের মার্জিনের সেই দুটি লাইন ছাড়া! একারণে এটি হয়েছিল একটি conjecture.
এখন আর এটা জানা সম্ভবপর নয় যে আদতেই ফের্মার কাছে উপপাদ্যটি যে সঠিক তার কোনো প্রমাণ ছিল।
নতুন মন্তব্য করুন