বাবার ফোন

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: সোম, ১৪/০৯/২০০৯ - ১২:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকে বাবা ফোন করেছিল।

দেশের বাইরে আছি চার বছর। এই চার বছরে আমার বাপজান আমাকে নিজে থেকে ফোন করেছেন ঠিক চারবার। প্রথমবার আমার বউকে আমার কাছে পাঠানোর সময় ওকে প্লেনে তুলে দিয়ে, দ্বিতীয়বার দাদা মারা গেলে, তৃতীয়বার এই বছরের শুরুতে যখন আগেরদিন তাকে বলেছিলাম, পিএইচডি শেষ হলে একটা ভালো পোষ্টডকের সম্ভাবনা আছে, যদি হয় তাহলে তার মতামত কি। আর করলেন আজকে, ইফতারের পর পর।

বাংলাদেশ থেকে ফোন আসে কম, বেশিরভাগ আমিই করি। ওপারে রিং শুরু হলে আমার বুকে রক্ত চলাচল বাড়ে, একসময় বাপের গলা শোনা যায়, আস্তে। আমার সাথে ফোনে বাবা কখনো হ্যালো বলেন না, বলেন হুম। যে আলাপচারিতা শুরু হয় একটা 'হুম' দিয়ে, সেটা চালিয়ে যাওয়া নিতান্ত পীড়াদায়ক। আব্বা কেমন আছেন, ভালো, বাসার সবাই কেমন আছে, ভালো, আপনার শরীর কেমন, ভালো, তারপর বিরতি। মাত্র কয়েকটা শব্দের বিন্যাসে অদলবদল করেও যখন আর আলাপ এগুতে চায় না, তখন আমি দুই সেকেন্ড বিরতি নেই, বাবা বলেন, নে তোর মার সাথে কথা বল। মাকে পেয়ে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি। মাকে দিয়ে বাবাও কি তাই?

আমার নিজের মাঅন্তপ্রাণতা এবং আমার মায়ের তার বড় ছেলের প্রতি অতিরিক্ত, উপচে পড়া বাৎসল্যের খোলাখুলি প্রকাশ পারিবারিক মহলে ভালোমন্দ দুরকম প্রতিক্রিয়া নিয়েই উপস্থিত। স্ত্রী সবসময় খুনসুটি করে, তার নাকি হিংসা হয়, বউয়ের উপর মায়ের কথাকে প্রাধান্য দেই। আত্মীয়স্বজন অভিমান করে, হয়ত ততটা সামাজিক নই যতটা হলে কেউ আর বলে না, ও তো আমাদের ভুলেই গ্যাছে। তাদের অভিযোগ যত না আমার, তার চেয়ে বেশি মায়ের প্রতি। আমার নাগাল পেতে হলে মায়ের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব, নয়ত কঠিন।

এ নিয়ে বাবা কি ভাবেন, জানি না।

আমার বাবা গম্ভীর লোক, তবে আমি জানি তার সেন্স অসাধারণ। বাবা লাজুক নন, তবে গুটানো। ঠিক কী কারণ জানি না, কিন্তু প্রতিবার তার সান্নিধ্যে আমিও তার মত গুটিয়ে যাই। আমার নিজের সন্তান আসছে মাসখানেক পর। কখনো হয়ত ভেবেছিও, আমার বাবার মত বাবা হয়ত হব না আমি আমার ছেলের কাছে। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে আমার সময় স্থির, অবশ্যই মিশ্রণযোগ্য, তবু দুজনের মাঝে একটা মিহি হিমশীতল ব্যবধান। আগে মাসে দুমাসে ছুটিতে বাড়ি গেলে আর ছুটি শেষে চলে আসার আগে, এই দুই মুহুর্তের আলাপ ছাড়া একান্তে কথা বলা হয় নি, হয়ত চাইতাম দুজনই, সুযোগের অপেক্ষায় দুজনেই থাকতাম, কেবল হয়ে উঠেনি।

সেই ব্যবধান ঠেলে তিনি ফোন করেছিলেন আজকে।

বাসায় শেষ কথা হয়েছিল চারদিন আগে। ছোটভাইয়ের জন্মদিন, মা কেক বানিয়েছেন, ছোটবোন ঈদের ছুটিতে বাসায়, আর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মসজিদে দৌড়াদৌড়ি করে বাবার জ্বর। মাকে বললাম, আব্বাকে ডাক্তার দেখাও। মা বলল, সেরে যাবে।

রিটায়ার করার আগ পর্যন্ত পুরো সংসারে বিপুল প্রতিপত্তি নিয়ে আমার বাবা চলেছেন। দাদার বাড়ির যাবতীয় কাজ তার হাত ধরে হতে হবে, কিছু হলেই তাকে ডাকাডাকি, কিছু হলেই তার ছুটাছুটি। অত:পর হজ্ব করে এসে ঝুঁকেছেন ধর্মে এবং রিটায়ার করে হয়ে গেছেন সেমিনিষ্ক্রিয়য়। আগে তার কথা ছিল ধমক, স্নেহ, নির্ভরতা ও আদেশের মধ্যে ভারসাম্যের এক একটা অসামান্য নিদর্শন, এখন কেমন যেন দ্বিধাগ্রস্থ, মিয়ম্রান।

হয়ত সব বাবারাই তাই। কিন্তু আজকে তিনি ফোন করলেন।

গলা শুনেই বুঝলাম, জ্বর ভালো হয়নি, বেড়েছে। কদিন আগেই চাকরিতে ঢুকেছি, অসুস্থ গলায় জিঙ্গাসা করলেন, কিরে চাকরি টাকরি করতে পারতেছস ঠিকমতন? আমি তাকে বলতে পারি না, এই চাকরি কেবল আগের পড়াশোনারই একটা এক্সটেনশন, বললাম নতুন রিসার্স প্রজেক্ট, তাই কাজের চাপ একটু বেশি, কেমন আছেন আপনি?

তখনই বললেন, ভালো নেই রে, খুব জ্বর।

কী হলো জানি না, এই কন্ঠের কাছ থেকে এরকম শুনতে আমি অভ্যস্ত নই, বহুদিনের রুটিন ভেঙ্গে আমি অনেক কথা বললাম, যার কোনোকিছুই এই মুহুর্তে আমার আর স্পষ্ট মনে পড়ছে না। আমি কেবল ছুটতে চাইলাম, ঢাকতে চাইলাম, কেন তিনি তার আজীবন ধরে রাখা কাঠিন্য গলিয়ে ফেলছেন, কেন তিনি তার ছেলের কাছে নরম হয়ে পড়ছেন, কেন তার স্নেহের রেণু, জমানো বাৎসল্যের কৈশিক দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়ছে, কেন তার শাসনের জায়গায় জমছে আকুলতা?

কড়া পর্দা টেনে দিয়ে বাবা তার সময়ে সবসময় কী যেন লুকিয়েছেন, অথচ ক্রমশ সেই পর্দা উঠে যাচ্ছে, আজকে যেন সব ভেঙ্গে পড়ছে তার ছেলের উপর।


মন্তব্য

অনিকেত এর ছবি

ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে আমার সময় স্থির, অবশ্যই মিশ্রণযোগ্য, তবু দুজনের মাঝে একটা মিহি হিমশীতল ব্যবধান।

আগে তার কথা ছিল ধমক, স্নেহ, নির্ভরতা ও আদেশের মধ্যে ভারসাম্যের এক একটা অসামান্য নিদর্শন, এখন কেমন যেন দ্বিধাগ্রস্থ, মিয়ম্রান।

কেন তিনি তার আজীবন ধরে রাখা কাঠিন্য গলিয়ে ফেলছেন, কেন তিনি তার ছেলের কাছে নরম হয়ে পড়ছেন, কেন তার স্নেহের রেণু, জমানো বাৎসল্যের কৈশিক দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়ছে, কেন তার শাসনের জায়গায় জমছে আকুলতা?

ফারুক ভাই, লেখাটা সেই অর্থে 'মন-খারাপী' লেখা হয়ত বলা যাবে না। কিন্তু কেন জানি চোখটা বার বার ঝাপসা হয়ে এল---পড়তে পারছিলাম একেবারেই----

এই ভরদুপুরে আমার চারপাশটা আঁধার করে দিলেন, ফারুক ভাই---
হঠাৎ করেই বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়ে গেল চোখের চারপাশ---

আমাদের সবার কাহিনী কী অদ্ভূত রকমের এক রকম!!

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

আমাদের সবার কাহিনী কী অদ্ভূত রকমের এক রকম!!

অনিকেতদা, কিভাবে আমার মনের সব কথা লিখে ফেললেন?
মূল লেখাটা পড়তে গিয়ে প্রতিটি লাইনে লাইনে মনে হয়েছে আমার নিজের পুরাতন ডায়েরি পড়ছি। ফারুক হাসান - অস্বাধারণ লেখার জন্য বিশ লক্ষ্য তারা।

ফারুক হাসান এর ছবি

অনিকেত দা, সত্যিই আমাদের সবার গল্পই একইরকম। আপনার অনুভূতি আমাকে ছুঁয়ে গেল।

দুর্দান্ত এর ছবি

এভাবেই শুরু হয়। এভাবেই আমরা বড় হয়ে যাই।

ফারুক হাসান এর ছবি

এর চেয়ে বাস্তব আর কিছু হয় না বোধহয়

রেজওয়ান এর ছবি

খুব ছুঁয়ে গেল লেখাটি। আমারও অনুরূপ একটি অভিজ্ঞতা আছে।

আমার ভয় লাগে। প্রবাসে থাকি বলে কোথাও কি হচ্ছে যোগাযোগের ছেদ? কোথাও কি পিতা কখনও একা বোধ করছেন? তখনই আমার সেই বন্ধুটিকে তিরস্কার করার জন্য অনুতপ্ত হই, যে যুক্তরাষ্ট্রে একটি ভাল স্কলারশীপ পেয়েও যায় নি, বাবা মার একমাত্র সন্তান বলে।

বুঝি কোন কোন সময় পিতামাতার কাছে থাকা একান্ত দরকার নিজস্ব স্বার্থ ভুলে।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

ফারুক হাসান এর ছবি

আপনার অনুভূতি ঠিক আমারো। কোথায়ো একটা ছেদ পড়ে যায়, দূরে থাকলে।

অতিথি লেখক এর ছবি

উদ্ধৃতি,
আগে তার কথা ছিল ধমক, স্নেহ, নির্ভরতা ও আদেশের মধ্যে ভারসাম্যের এক একটা অসামান্য নিদর্শন, এখন কেমন যেন দ্বিধাগ্রস্থ, মিয়ম্রান।

হয়ত সব বাবারাই তাই।

হয়ত তাই, অনুরূপ অভিজ্ঞতা আমারও! আমার বেশির ভাগ কথায় হয় মায়ের সাথে। বাবার সাথে কথা খুব বেশি আগায় না, কেমন আছি, বাবা কেমন আছেন, দু-একটা কথা বলার পর, এক সময় ফোনটা মায়ের হাতে চলে যায়।
----------------
শিকড়ের টান

ভ্রম এর ছবি

অসাধারন লাগলো...

তানবীরা এর ছবি

আলাপচারিতা শুরু হয় একটা 'হুম' দিয়ে, সেটা চালিয়ে যাওয়া নিতান্ত পীড়াদায়ক। আব্বা কেমন আছেন, ভালো, বাসার সবাই কেমন আছে, ভালো, আপনার শরীর কেমন, ভালো, তারপর বিরতি। মাত্র কয়েকটা শব্দের বিন্যাসে অদলবদল করেও যখন আর আলাপ এগুতে চায় না, তখন আমি দুই সেকেন্ড বিরতি নেই, বাবা বলেন, নে তোর মার সাথে কথা বল। মাকে পেয়ে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি। মাকে দিয়ে বাবাও কি তাই?

আমি কিন্তু এটার জন্য খুব গিল্ট কনশাস নিয়ে বেড়াই, সামনা সামনি বাবার সাথে খুবি বকি কিন্তু ফোনে বাবা সহজ না। মাকে দিতে পারলেই বাঁচেন। অন দা কন্ট্রাটারি, দুলালের সাথে অনেক প্যাঁচাল পারেন।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ফারুক হাসান এর ছবি

ফোনে বোধহয় কথাগুলো জমে যায়। আর এক্ষেত্রে সন্তানের গিল্ট কনশাস থাকাটা দোষের কিছু নয়। বরং না থাকাটাই খারাপ।

মৃত্তিকা এর ছবি

মন খারাপ করা, খুব সুন্দর একটি লেখা। সুস্থ হয়ে উঠুক আপনার বাবা।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
ফারুক হাসান এর ছবি

লন যাইগা

আহমেদুর রশীদ [অতিথি] এর ছবি

.................

মামুন হক এর ছবি

মন ছুঁয়ে গেল, আমার বাপ অবশ্য উলটা, প্রচুর বকবক করেন আমার সাথে। তবুও একটা অপরাধবোধ তাড়া করে বেরায়...সুখে দুখে বাবার পাশে থাকতে না পারার।
ধুগোর মতো আমারও ইচ্ছা করে সব ছেড়ে দেশে চলে যেতে।

jana hoi ni এর ছবি

উদ্ধৃতি

আমাদের সবার কাহিনী কী অদ্ভূত রকমের এক রকম!!

যত লক্ষ্ কোটি তারা দেয়া যায়... সব গুলি দিলাম।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এখনো বাবা আগলে রেখেছেন- স্বার্থপর আমি তাই আপনার মত করে বাবাকে বুঝতে পারছি না ...
মন বিষণ্ণ লেখা।হাতছোঁয়া দূরত্বের বাবা এখনো দূরের রয়ে গেছেন...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

আমার সাথে দু'জনের-ই তো খাতির! ঝগড়া, তর্ক-বিতর্ক, আব্দার — দু'জনের সাথে সবই হয়। তারপরেও আজকাল মনে হয়; কোথাও না কোথাও একটা ফাঁক থেকেই যায় সম্পর্কে, সন্তানকে আগলে রাখার মানসেই হয়তো...

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের দেশে অনেকেই অনেকভাল লেখে তার পর ও কেন জানি হুমায়ুন আহমেদের মত মানুষের বস্তা পঁচা বই পরতে সবায় ব্যাকুল।

ধন্যবাদ লেখককে তার সাবলিল কথার জন্য।

গরীব
সাউথ কোরিয়া

দ্রোহী এর ছবি

আমাদের সবার গল্পই একই ধরণের!

বেয়াই, আমার বৌমার খবর কী?

ফারুক হাসান এর ছবি

বেয়াই, আপনাকে বলা হয় নাই, আপনার জন্য খারাপ খবর আছে। আপনার পোলার কোনো খবরই যেহেতু নাই, সেহেতু আপনের বৌমা বুঝতে পারছে যে তার শ্বশুর খালি হাওয়ার উপর কথা কৈতেছে, সুতরাং রিস্ক না নিয়া এইবারের মতন তার ভাইরে পাঠাইতেছে দুনিয়ায়। এইদিকে আমার পোলার মনে হৈতেছে ধৈর্য্য একটু কম। কেন আমাগোর বেয়াইয়ের এখনও মাইয়া হয় নাই সেই চিন্তায় দিনে দশবারো বার ফাল দিতেছে। সুতরাং বেয়াই থাকতে চাইলে তাড়াতাড়ি আমার বৌমারে পয়দা করেন। চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পটা পড়ে মনে হল এ যেন আমার বাবার গল্প। পড়তে পড়তে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল। ধন্যবাদ।

ফারুক হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে, পড়ার জন্য।

কাজী আফসিন শিরাজী এর ছবি

আমার বাবাও এমন। ঢাকায় থাকতে সপ্তাহে একবারও কথা হত কিনা সন্দেহ। আমার বাবা খুব ঠান্ডা মেজাজের মানুষ। আমার মতই চুপচাপ। তাই কথাই হত না। আমি বরাবরই মা ঘেঁষা। মায়ের কাছেই রাজ্যের গল্প আর আবদার বলতাম। বাবাকে কিছু বলতে হলে মা আমার মুখপাত্র হিসেবে কাজ করত।

আর যখন অস্ট্রেলিয়া আসি, সেদিন আমার মায়ের পাগল প্রায় অবস্থা। বাবা খুব স্বাভাবিক ছিলেন। পরে যখন এয়ারপোর্টে নেমে দেশে ফোন দিলাম, মা বলল... বাবা নাকি সেই রাতে আমি যে গেঞ্জিটা পরা ছিলাম সেটা বালিসের নিচে রেখে শুয়েছিল, হয়ত কেঁদেছেও। কী জানি!

যত বয়স বাড়ছে তত গোপন করার কৌশল শিখছি। আমিও সব কিছু গোপন একটা বাক্সে লুকিয়ে রাখতে পারি। তাই আমার কোন একটা লেখায় আমি লিখেছিলাম-

বাবা তোমার প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের শুরুটাও কী এমন জটিল ছিল! আমিও কী একদিন তোমার মত সব আবেগ গুম করে ফেলতে পারব! বাবা আমিও কী তোমার মতই বাবা হব... যেমন হয় সব বাবারা... দুর্বোধ্য এক চির অচেনা মানুষ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব [অতিথি] এর ছবি

ফাহা, আমি ভুল না জানলে আপনি সিঙ্গাপুরে থাকেন। ওখান থেকে সন্ধ্যায় প্লেনে উঠলে রাতে ঢাকা পৌঁছানো যায়। আমি জানি চাইলেও এই দূরত্বটা সব সময় অতিক্রম করা যায় না - অনেক অনেক ফ্যাক্টর বিবেচনা করতে হয়। তারপরও এখন থেকে একটা চেষ্টা রাখুন সম্ভব হলেই এই পথটা যত বেশি সম্ভব পাড়ি দেবার - কখনো সপরিবারে, কখনো একাই। আপনার নিয়তি আপনাকে প্রবাস জীবনে ঠেলে দিয়েছে - চাইলেও তাই ফেরা যায় না। তাই বাবার কাছে আরো একটু বেশি বার আসার চেষ্টা করুন, আরেকটু বেশি বার ফোন করুন। না হয় ঐ রুটিন কথাগুলোই বললেন। এক সময় দেখবেন ঐসব রুটিন কথার ফাঁকে অন্যসব কথাও ঢুকে পড়েছে। আস্তে আস্তে আপনি উনার সাথে একটা নতুন মাত্রার সম্পর্কে পৌঁছে যাবেন। ধীরে ধীরে উনি আপনার কাছে আপনার সন্তানের মত হয়ে যাবেন। আপনার সামনে এটা একটা সুযোগ, এটা হেলায় হারাবেন না প্লিজ। আপনার বাবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।

ফারুক হাসান এর ছবি

আপনার এই মন্তব্যটি সবচেয়ে মূল্যবান আমার কাছে। সবসময় আমিও তাই ভাবি, কিন্তু কী কারণে যে সম্ভব হয়ে উঠে না! এখন থেকে আরো বেশি চেষ্ঠা করা যাবে।

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমার বাবা আস্তে আস্তে শিশু হয়ে যাচ্ছেন। আমার ছেলের সাথে তার বয়েসের পার্থক্য এখন বড়জোড় এক বছর।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

ফারুক হাসান এর ছবি

এই ব্যাপারটাই যেন কেমন! একদিন আমরাও কী শিশু হয়ে যাবো আমাদের ছেলের কাছে?

অরুণ চৌধুরী, ঢাকা এর ছবি

ফারুক,
আপনার লেখা পড়ে মনে হল, ভাষায় দক্খতা আপনার বেশ ভাল ।
বিষয়টি মন স্পর্শ করে।
তবে বানানে সামান্য সর্তকতা হয়তো দরকার। যেমন,..পাড়ে রিং শুরু হলে আমার বুকের রক্ত চলাচল বাড়ে।
এখানে পার হবে, পাড় নয়।
যিনি এত ভাল বাংলা লেখেন, তার সাধারণ বানান ভুল প্রত্যাশিত নয়।

ফারুক হাসান এর ছবি

বানানটা ঠিক করে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমিও এটা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম।

তীরন্দাজ এর ছবি

ভীষন রকমের মনছোঁয়া এই লেখা আপনার! আমার বাবাও অনেকটা এরকমই ছিলেন।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ফারুক হাসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তীরু দা!

অনীক আন্দালিব এর ছবি

কি হলো আজ? দুটো লেখা পড়লাম, পড়ে মন খুব খুব খারাপ হয়ে গেলো!

এই লেখাটা পড়ে কেমন মনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে হয় না, মনে হয় কেউ বুকের মাঝে হাঁটু গেড়ে বসে খুব সুচারুভাবে ব্লেড দিয়ে কাটতে থাকে। প্রতিটা আঁচড় এক একটা দুঃখবোধ জমিয়ে ফেলে বরফের মত!

আপনার বাবার সাথে আমার বাবার মিল পেলাম। গুটানো, চুপচাপ মানুষটা এখন প্রায়ই একা একা বসে থাকেন লিভিং রুমে। আমি পাশের ঘরে থেকেও তার সাথে গিয়ে কথা বলি কম! (এমনই অপদার্থ আমি!)

স্বাধীন এর ছবি

খুব ছুঁয়ে গেল লেখাটি, মনে হচ্ছিল ঠিক আমার বাবার বিবরণই পড়ছি। আজ চারটি বছর ধরে তিনি শুধুওই অপেক্ষা করছেন কবে আমি ফিরে এসে উনাকে একটু মুক্তি দিব। তাই যে যাই বলুক, রেনেটের মত আমিও ঠিক করে রেখেছি পিএইচডি শেষ করে দেশে যাবই। অন্তত যতদিন বাবা/মা বেঁচে থাকবেন ততদিন থাকবোই।

রানা মেহের এর ছবি

এই লেখাটা পড়ে ভেতরে কেমন করে উঠলো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

একজন  [অতিথি] এর ছবি

অসম্ভব মন ছুয়ে যাওয়া একটি লেখা। আমার বাবা প্রায়ই আমাকে ফোন করে যখন রাখার সময় বলে দেশে চলে আয়, আর কতদিন, বুঝি মানুষটা আস্তে আস্তে নরম হয়ে যাচ্ছে। ভালো লাগে না কিছু তখন আর... আপনার লেখা পড়ে কখন যেন চোখে পানি চলে আসলো।

ভালো থাকবেন...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সিরাজী ভাই, লেখাটা অসম্ভব ছুঁয়ে গেল। মনে হলো যেন নিজেকে নিয়ে কোনো লেখা পড়লাম। আরো অনেকবার পড়ব লেখাটা। আপনার লেখা এমনিতেই ভালো লাগে, এইটা একটু বেশিই লাগল।

ভালো থাইকেন।

নিঘাত তিথি এর ছবি

কিছুদিন আগে বাবা এসএমএস করেছিলো, "বুড়ো হয়ে যাচ্ছি মা, সব কথা ইদানিং মনে থাকে না"....হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম, আপনি আবার কাঁদালেন, রোজকার মত...
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

তিথীডোর এর ছবি

মনছোঁয়া লেখা.......

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।