দ্বীপবাসী দিন ৯

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: রবি, ০৪/০৪/২০১০ - ৭:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বহুদিন হয় এই সিরিজের কোন পোস্ট দেই না। আসাশিমুলের কথায় মনে পড়লো আবার, মনে হলো আবার জাগিয়ে তোলা যায় সিরিজটাকে।


মাঝে বেশ অনেকটা সময় কেটে গেছে, ঘটে গেছে অনেক কিছু। বাবা হওয়া, ছেলের মুখটা প্রথমবার দেখে বুকটা আনন্দে ভরে যাওয়ার মুহূর্ত, শেষ ডিগ্রিটাও কেমন কেমন করে যেন কনফার্ম হয়ে গেল একদিন, বাড়ি বদলালাম, চাকরি, দেশে ঘুরে আসা। কেন জানি আনন্দের ব্যাপারগুলো আমাদের মস্তিষ্ক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মনে রাখে, প্রতিটা ডিটেইল সহকারে, তীব্রতা আর শিহরণ জমাট বাধে ভাষ্কর্যের মত।

মাঝের কষ্টের ব্যাপারগুলো এখন মনে পড়ছে না বলে সুখী লাগছে নিজেকে।

সামনে বেশ ফাঁকা জায়গা, একটা সরুমত পাড় বাঁধানো চ্যানেল, ওরা বলে রিভার, তার উপর কোণাকুণি বড় রাস্তা, তিন দিক থেকে এসে মিলেছে এক জায়গাটায়, তার পরেই একপাশে টিলা, টিলার উপর পুলিশফাঁড়ি কিংবা প্রশিক্ষণকেন্দ্র, জানি না। চোখের কোণ ঘেঁষে অন্য পাশে আকাশ ছুঁয়েছে শহরবাড়িগুলো। এপাড়ে এগারো তলা বাড়ির সামনে টানা বারান্দা। ভেতরে আমরা।

টানা বারান্দার কেবল আমাদের বাড়ির সামনেই গুচ্ছ গুচ্ছ গুল্ম, লতা, ফুল আর সবজির গাছ। গোলাপ, জবা, কলা, মরিচ, বেগুন। শখের। প্রতিদিন এক বৃদ্ধাকে দেখি গাছগুলোর যত্ন নিতে। হয়তো বাড়িওয়ালির মা কিংবা আত্মীয়া, আমার স্ত্রী জানতে পারে।

ড্রয়িংরুমের একটা জায়গা ছেলের জন্য বরাদ্দ, অর্ক'জ কর্ণার। ম্যাট পাতা, খেলনা, গাড়ি, ডগি, ঝুনঝুনি, এইসব। ওপাশে টিভি, মাঝে মাঝে ওকে বসিয়ে কার্টুন দেখি। মাত্রই একটু আধটু বসতে শিখেছে। জানলা দিয়ে টুকরো টুকরো বাতাস এসে ভিজিয়ে দিয়ে যায় আমাদের। বারান্দার গাছগুলো দুলে উঠে, তাই দেখে ছেলেটা হাসে, দাঁত উঠেনি এখনো, অষ্ফুট স্বরে জানান দেয় তার ভালো লাগছে। বুকটা ভরে যায় ছেলের ভালো লাগায়, ওকে আদর করি, চুমু খাই, দিনে কয়েকশো বার।

বাসা থেকে বের হলেই সামনে লিফট। বোতাম চেপে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকার মুহুর্তগুলোতেও ছুঁয়ে যায় দ্বীপের চিলতে হাওয়া, সকালে আর্দ্র, দুপুরে হলকা, বিকেলে কোমল।

রাতে ফিরতে ভালো লাগে। জানি ছেলেটা মায়ের গালে গাল ঘেঁষে রাত জেগে অপেক্ষায় আছে, অপেক্ষায় আছে ওর ছোট্ট মুখের হাসি, চোখের ঝিলিক।

ব্যস্ত নেইবারহুড। শহরবাড়িগুলি, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, এম্পিথিয়েটার, কার পার্ক, ফুড কোর্ট, স্টেশনারি দোকান, বৃক্ষ, যান্ত্রিকতা।

ছুটির দিনগুলোতে বিকেলে আমরা হাঁটতে বেরোই। স্ট্রলারে বসিয়ে দরজাটা খুললেই ছেলেটা বুঝে ফেলে এখন তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। মুখটা ভরিয়ে তোলে সেই হাসিতে, মা-বাবা দুজনে মিলে স্ট্রলার ঠেলে ওকে বাইরে নিয়ে আসি।

এম্পিথিয়েটার, খেলার মাঠ কিংবা রাস্তা পেরিয়ে ফুটপাত ধরে টুকটুক করে এগিয়ে যাওয়া। ছেলে রাস্তায় ছুটে যাওয়া গাড়িগুলোর দিকে চেয়ে থাকে একদৃষ্টিতে। গাছের গায়ে দৌড়ে লুকায় একটা বিড়াল। আমরা বিকেলে জগিং করতে বের হওয়া ছেলে-প্রৌঢ় আর নারীদের দেখি, আর হাঁটি।

এই।


মন্তব্য

সুরঞ্জনা এর ছবি

আপনি আমার প্রিয় কবিদের একজন। খুব ভাল লেগেছে আপনার কবিতা।
এই লেখাটা পড়ে মন ভাল হয়ে গেল।
ছোট একটা মানুষ আপনাদের জগৎ টা কেমন ভরিয়ে রেখেছে।
হাসি
..........................................................................
জগতে সকলই মিথ্যা, সব মায়াময়,
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয় ।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

ফারুক হাসান এর ছবি

সুরঞ্জনা, আপনার মন্তব্য পড়ে অনুপ্রাণিত হলাম। ভবিষ্যতে আরো পড়বেন আশা করি হাসি

কাকুল কায়েশ এর ছবি

লেখা খুব চমৎকার হয়েছে!

স্ট্রলারে বসিয়ে দরজাটা খুললেই ছেলেটা বুঝে ফেলে এখন তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। মুখটা ভরিয়ে তোলে সেই হাসিতে

সো কিউট! পিচ্চিকে আমার আদর দিও!
========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

ফারুক হাসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কায়েশ ভাই, আদর দিবো তো অবশ্যই!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সবকিছু শুধু মস্তিষ্কেই নয়, মিডিয়াতে রেকর্ড করে রাখেন, যতটা পারেন। সন্তানের এই হাসি, একই কান্না কোনদিনই ফিরে পাবেন না। অনেক অনেক দিন পরে পুরনো ভিডিও দেখতে খুবই ভালো লাগবে। আমি যে দুয়েকটা ভিডিও আছে সেগুলোই ঘুরে ফিরে বারবার দেখি। সেসময় কানাডায় নতুন এসেছি। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তার মধ্যেও প্রায় ৪শ ডলার দিয়ে ৩.১মেগাপিক্সেলের একটা ক্যামেরা কিনি। সেটা দিয়ে করা কিছু অতি লো-কোয়ালিটির ছোটছোটো কয়েকটা ভিডিও আছে। সেগুলো মাঝে মাঝে দেখি। আফসোস হয় কেন যে একটা ভিডিও ক্যামেরা তখন কিনিনি।

ফারুক হাসান এর ছবি

খুব জরুরী একটা কথা বলেছেন। নাহ্, যে করেই হোক একটা ভিডিও ক্যামেরা কিনতে হবে। আমার ক্যামেরা অবশ্য আছে, ঝটপট ছবিও তুলছি। কিন্তু ভিডিওর উপর কিছুই না তা।
মোটামুটি সাধ্যের মধ্যে কিন্তু ভালো মানের ভিডিও ক্যামেরার কোনো মডেলের সাজেশান আপনার থাকলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না। না হলে হয়ত আলাদা পোষ্টই দিয়ে বসবো কোনটা কেনা যায় তা নিয়ে।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

খুব মিষ্টি একটা লেখা। ভরা ভরা একটা ফিলিংস হলো।
তবে ''বুকটা আনন্দে ভেঙ্গে যাওয়া'' ??
টাইপো বোধহয়।

..........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ফারুক হাসান এর ছবি

থ্যাংকু, ঠিক করে দিলাম।

তিথীডোর এর ছবি

কেমন মায়াকাড়া লেখা! চলুক পিচ্চির নাম কি অর্ক? ওর জন্যে অনেক অনেক আদর...

আপনার জন্যে:
ঘেঁষে
দাঁড়িয়ে
হাঁটি
মুহূর্ত
পোস্ট
> "মুখে অস্ফুট একটা স্বরে"
এটা কি এরকম হবে?

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ফারুক হাসান এর ছবি

আমি অর্ক ডাকি মাঝে মধ্যে। মা নাম রেখেছে ফাইয়াজ, সেটাই ডাকনাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে।

ঁবিন্দু নিয়ে আমার সমস্যা আজীবন। আশা করে আছি এটা কমবে ভবিষ্যতে। আপনাকে ধন্যবাদ, ভুলগুলো ঠিক করে দিলাম।
হাসি
"মুখে অস্ফুট একটা স্বর"কে যদি আপনি আলাদা কোনো কিছু ভাবেন যে জানান দিতে পারে তাহলে সেটাই ঠিক। তবে আপনার কথার পর মনে হচ্ছে শুধু "অস্ফুট স্বরে" লিখলে সহজবোধ্য হবে লাইনটা। তাই লিখলাম এখন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ফাইয়াজ সুন্দর নাম। আমার এক দোস্তের ছেলের নামও ফাইয়াজ হাসি

নাশতারান এর ছবি

আমিও কিছু যোগ করি।

বাঁধানো, হাঁটতে, অস্ফুট

প্রতিদিন এক বৃদ্ধাকে দেখি গাছগুলোর যত্ন নিতে দেখি। (একটা দেখি কাটা যাবে)

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

পুতুল এর ছবি

খুব সুন্দর লিখেছেন। সময় করে আঁচলকে নিয়ে লিখতে হবে একদিন। ছেলেকে আদর, ছেলের মাকে শুভেচ্ছা।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ফারুক হাসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
আঁচলকে নিয়ে তাড়াতাড়িই লিখে ফেলুন হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পিচ্চিদের কান্ডকারখানা দেখা অতি আনন্দের।
আবার ওসব দেখে ওদের মা-বাবার চোখের ঝিলিক দেখাটাও বেশ উপভোগ্য।

মর্ম

নাশতারান এর ছবি

অর্ক'র জন্য অনেক অনেক আদর হইল।

যেখানে যেখানে ওর কথাগুলো এসেছে আপনার অনুভূতির আর্দ্রতা ছুঁয়ে গেছে সেখানে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- পোলার ফটুক দেন মিয়া। আমার উকিল মেয়ে জামাইরে চোখে চোখে রাখি! কওন তো যায় না, বাপের মতো 'ইয়ে' টাইপের হয়ে গেলে মেম্বরের মাইয়াটার কপাল পুড়বো!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এক্কেবারে দায়িত্বশীল পিতার দিনলিপি

মূলত পাঠক এর ছবি

শেষের "এই"তে এসে ধাক্কা খেলাম নিরুচ্চার। দারুণ!

জানি দাড়িবুড়োর সাথে তুলনা করলেই লোকে রে রে করবে, তাও বলি, পুনশ্চ'র কবিতার কথা মনে এলো। শান্ত ছবি, আপনমনে বয়ে যাওয়া গাঁয়ের মেঠো রাস্তা। গরমের দুপুরে ছায়ায় বসে সে দিকে তাকিয়ে থাকা।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

লেখা ছুঁয়ে গেছে মন্তব্যের ঘরে তা প্রকাশ করে গেলাম।
..................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।