সুখী হতে হলে নাকি ধনী হতে হয়। কত টাকা থাকলে একজন মানুষ ধনী হয়? গুগল বলছে পরিমাণটা নাকি পঁচিশ মিলিয়ন ডলার। মানে এখনকার বাজারে প্রায় পৌনে দুইশো কোটি টাকা।
খবরে দেখলাম, ভারতের বাল্লেবাজ কাপ্তান ধোনি কোন এক কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে, সেই কোম্পানি আগামি দুই বছরে তাকে দুইশো কোটি রুপি দেবে। ধোনিকে ধনী না বানিয়ে এরা ছাড়বে না। আচ্ছা, ২০১১’র বিশ্বকাপটা না জিতলেও কি ধোনি সুখী হবে? ইংল্যান্ডের ফুটবল কোচের বেতনের তুলনায় স্পেনের কোচের বেতন কিছুই না। কিন্তু আজ কে বেশি সুখী?
আমাকে যদি বলা হয়, এখন আমি যে বেতন পাই তার চারগুণ দেয়া হবে যদি চাকরি পাল্টাতে রাজি থাকি, কিন্তু চাকরিটা হবে একজন নৈশপ্রহরীর। কোনো পেশাকেই খাটো করে দেখি না। কিন্তু এমন বোরিং চাকরি বোধহয় আমি করতে পারবো না। করতে পারলেও করে সুখ পাবো না।
কিন্তু নিজের জগতে সুখী একজন মানুষকে আমি চিনি যার চাকরি একজন নৈশপ্রহরীর।
বাসায় বন্ধু এসেছে। সে আবার কথা না বলে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। কথা বলতে দিলে তার মত সুখী মানুষ খুঁজে পাওয়া মুষ্কিল। পুরো ফ্যামিলিই তাই। তো কথায় কথায় সিঙ্গাপুরে বাড়িভাড়া, বাড়িকেনা এইসব প্রসঙ্গ এলো। সিঙ্গাপুরে স্থায়ী রেসিডেন্টশিপ থাকলে যে কেউ ফ্ল্যাট কিনতে পারে। বন্ধুটি কিছুদিন আগে রেসিডেন্টশিপ পেয়েছে।
জিজ্ঞেস করলাম, বাড়ি কিনবি না?
-দোস্ত, খবর তো কিছু রাখো না। গত রিসেশনে সব বড় বড় দেশগুলোতে বাড়ির দাম কমলেও এই ছোট্ট দ্বীপদেশে বাড়ির দাম হু হু করে বেড়েছে। আকাশচুম্বী দাম এখন ওজোন স্তর ফুটো করে মহাকাশচুম্বী হয়ে গেছে। তিন বেড রুমের একটা ফ্ল্যাট কিনতে লাগে মিনিমাম সাড়ে তিন লাখ সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার, কন্ডোমোনিয়াম কিনতে নিদেনপক্ষে ছয় লাখ। তাও না হয় হলো, কিন্তু কেনার মত বাড়িই তো পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যায়, পছন্দ হয় না। যেটা পছন্দ হয় সেটার লোকেশন ভালো না। শালার ফালতু একটা দেশ।
বুঝলাম, কেউ কেউ ফ্ল্যাট-বাড়ি এইসব কিনতে না পেরে অসুখী।
সে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা। আমার দাদা নিজ হাতে তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে নিজের শরিকদের থেকে আলাদা হয়ে গ্রামের একদম দক্ষিণ প্রান্তে তার বসতবাটিটা গড়েছিলেন। বেশ বড়সড় একটা বাড়ি। তিন দিকে মাটির সড়ক, বিশাল উঠোন, তার চেয়ে বিশাল বাহিরবাড়ি। দাদার খুব গাছের শখ ছিলো, জায়গাও ছিলো প্রচুর। হরেক রকমের আম, জাম, লিচু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর গাছ। উঠোন ভর্তি ছিল বাতাবিলেবুর ঝাড়। এত লেবু ধরতো যে প্রতি শনিবার বস্তা দুয়েক লেবু হাটে বেচে দিতেন, নইলে হাজারে হাজারে লেবু পচে পড়ে থাকতো। রাতে লেবুর ঝাড় ঘেষে খেলা করতো ঝোনাকির ঝাঁক। পুরো বাড়ি লেবুপাতার গন্ধে উন্মাতাল হয়ে থাকতো। আর ছিল তেজপাতার গাছ। একটা নয়, দুটো নয়, সাত সাতটা তেজপাতা গাছ। আমার ছোট চাচা প্রতি বছর কলম দিয়ে নতুন নতুন তেজপাতার গাছ রোপণ করতেন। মনে আছে, একটা ঘর ভর্তি ঝরে পড়া তেজপাতা রাখা হতো, বিক্রির জন্য। আর বাড়ির সীমানা ঘেঁষে রাস্তায় দাদা লাগিয়েছেন কাঁঠাল গাছ, সর্বমোট পঁচিশটা। জ্যৈষ্ঠ মাস আসলেই আমাদের জন্য ছিল এক মধুমাস। দাদীর ঘরে মাচা ভর্তি থাকতো পাকা আম-কাঠালে, বাড়ি গেলে ঘন্টায় ঘন্টায় হাতে তুলে দিতেন কাঁচামিঠা, নয়তো বেলি, নয়তো ফজলি আম, আমরা দু’হাতে ডলে তারপর আমের তলার একটা ছিদ্র করে চুষে খেতাম। কাঁঠাল কেউ খুব একটা খেত না, বেশিরভাগই বিলিয়ে দেয়া হতো।
আট বিঘা জমির উপর বানানো সেই বাড়ির সামনে আমার বাবা বিশাল পুকুর কাটলেন। চাচারা মাছ ছাড়লেন। সরপুঁটি, রুই, কার্প। গোসল করতে যাওয়ার সময় কেউ একজন জালটা নিয়ে যেতেন। একবারমাত্র ফেলা জালে সবার খাবারের মাছ হয়ে যেত। এক কোনায় শীতের মৌসুমে ছোট চাচা সবজি লাগাতেন। ফুলকপি, মুলা, লাল শাক, পেঁয়াজ, লাউ। মাঝে মাঝে এত বেশি ফলতো যে পালের গরুকে খাওয়ানোর পরও শেষ হতো না।
একদিন সেই বাড়িটা পড়ে গেল সরকারি জমি অধিগ্রহণের খাঁড়ায়। ঢাকা-জামালপুর রেললাইন বাড়ির এক কোণা দিয়ে ঢুকে ডায়াগোনাল বরাবর বের হয়ে গেল আরেক কোণায়, দাদার স্বপ্নের বাড়ি চিড়ে দু’ভাগ হয়ে গেল। বাবা খুব দৌড়ালেন, এমপির বাড়ি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, পত্রিকা অফিস, সড়ক ও জনপথ, চীফ ইঞ্জিনিয়ার-সার্ভেয়ার-ডিরেক্টর। বছরের পর বছর, তারও পরের বছর, তার পরের বছরও। কিন্তু বাড়ি-পুকুর-ঘর এমনকি বাতাবি লেবুর ঝাড়টাও দু’খন্ড হয়ে গেল, চিরদিনের জন্য।
আমার মায়ের অভিযোগ ছিল, আমার বাবা নাকি সংসার, বউ-ছেলেমেয়ে বাদ দিয়ে সারাজীবন শুধু তার গ্রামের বাড়ির পেছনে টাকা ঢেলেছেন, নিজের কথা ভাবেন নি। কথাটা অনেকাংশে মিথ্যেও নয়। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, বাড়িতে গ্রাম থেকে কেউ না কেউ আসছেই। হয়তো বাড়ির পাশের একটা জমি না কিনলেই নয়, হয়তো পুকুর কাটতে হবে, হয়তো শরিকদের সাথে দেনদরবার, কিংবা কুরবানি, অথবা শ্রেফ ছোটখাটো কোনো দরকার। দাদা কাউকে পাঠিয়েছেন, কিংবা কেউ যেচে নিজেই এসেছে। প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে। বাবা যেটুকু পেরেছেন করেছেন। শেষে তো ঐ বাড়ি অধিগ্রহণের ব্যাপারটা ছিলই।
বাবার খুব ইচ্ছে ছিল অসম্ভবকে সম্ভব করার। নিজের পৈত্রিকভিটাকে বাঁচাবেন, যে কোনো মূল্যে। হেরে গিয়ে বাবা একটু ভাবলেন। দেখলেন- নিজের ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে, গ্রামের প্রতি তার যে টান, সেটা তার শহুরে সন্তানেরা পাচ্ছে না। পাবার সম্ভাবনাও নেই। তার উপর ভালো পরিবেশ, নাগরিক সুবিধা, এগুলো তো ছিলই। নিজের ভাগের টাকা দিয়ে শেষমেষ ঢাকায় একটা ফ্ল্যাট কিনলেন। কিন্তু গ্রামের বাড়িটা বাঁচানোর যে অক্ষম প্রচেষ্টা বাবা চালিয়েছিলেন এবং তার জন্য যে সুখস্বপ্ন দেখতেন সেটা আর কখনোই তার কাছে ফিরে আসে নি। বাবা অসুখীই থেকে গেলেন।
মানুষ কিসে সুখী হয় সেটা বলার চাইতে বোধহয় কিসে অসুখী হয় সেটা বলা সহজ।
সুখ আর সন্তুষ্টি কি এক জিনিস? অনেকে সুখী হলেই কেবল সন্তুষ্ট, কেউ কেউ সন্তুষ্ট হলেই সুখী। কেউ মন্ত্রী হয়েও অসুখী, আবার কেউ কিছু না হতে পেরেও অল্পতেই সন্তুষ্ট। বুয়েটের ফুটবল টিমের মতো। দশ গোল খেলেও এরা সন্তুষ্ট থাকে, যাক বাবা খেলোয়াড়প্রতি একটার বেশি তো খায় নাই, তাই বা কম কি! প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফলাফল।
গবেষণায় দেখা গেছে যে মস্তিষ্ককে সুখী হওয়ার জন্য ট্রেইন করা যায়। এই ট্রেনিংয়ের একটা অংশ হলো ধ্যান। বিজ্ঞানের ভাষায় সুখ হচ্ছে মানবমস্তিষ্কের বাম প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের মধ্যে জমা হওয়া এক ধরনের স্বাস্থ্যকর আবেগ কিংবা ভালো লাগার অনুভূতি। দশ হাজার ঘন্টারও বেশি ধ্যান করেছেন এমন ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের এম আর আই স্ক্যান করে দেখা গেছে যে এদের সেই অনুভূতির পরিমাণটা অনেক বেশি। আর তাদের ডান প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সে জমা হওয়া ক্ষতিকর চিন্তার পরিমাণও খুব সামান্য। এইসব জ্ঞানগর্ভ হিসাবের মধ্যে ফেলে যাকে ধরা হচ্ছে জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষ সেই ম্যাথু রিকার্ডের মতে সুখী হওয়াটা একটা স্কিল (happiness is a skill)। চেষ্টাচরিত্র করলে আর লেগে থাকলে নাকি সুখী হওয়া যায়।
ম্যাথুর কাহিনিটা বেশ ইন্টারেস্টিং। ম্যাথু তরুণ বয়সেই ফরাসি শিক্ষিত এলিটদের মধ্যে নিজের জায়গা করে নেয়। এটা সেই ষাটের দশকের কথা। এমনকি জৈবরসায়নে তার একটা পিএইচডিও ছিল। কিন্তু তারপরেই তার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। সে সব ছেড়েছুড়ে হিমালয়ের পাদদেশ তিব্বতে গিয়ে বৌদ্ধধর্মের দীক্ষা নেয়া শুরু করে। শুরু হয় তার ধ্যানের সাধনা, সুখের নিমিত্তে, সুখের সান্নিধ্যে। এখন পর্যন্ত যত মানুষের মস্তিষ্কের এম আর আই করানো হয়েছে, তাদের মধ্যে দালাই লামার বিশেষ কাছের লোক হিসেবে পরিচিত এই ম্যাথুর মস্তিষ্কই সবচেয়ে বেশি সুখী বলে প্রমাণিত।
সুখ ব্যাপারটা কী- এর উপর দুই ধরণের মত আছে। একদলের মতে আরাম-আয়েশের আধিক্য আর যন্ত্রণার উপশমই হচ্ছে সুখ। যত বেশি আরাম আর যত কম যন্ত্রণা - তত বেশি সুখ। আরেকদলের মত হচ্ছে, সুখ ব্যাপারটা এত সরল না। সুখের সাথে আসলে আত্মোপলব্ধি, জীবনের মহত্তর যাত্রা, সার্থকতা এই সব জটিল হিসাব জড়িত।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, বাজিল বুকে সুখের মত ব্যথা। ১৯৯২ সালে জার্নাল অফ মেডিকেল অ্যাথিকসে একটা আগ্রহোদ্দীপক প্রবন্ধ ছাপা হয়। লেখকের নাম রিচার্ড বেনটল, ভদ্রলোক লিভারপুল বিশ্বাবিদ্যালয়ের একজন গবেষক। তিনি বললেন, সুখ আসলে একধরণের অসুখ। একে মানসিক অসুস্থতার একটা পর্যায় বলে গণ্য করা উচিত। বেনটলের একটা যুক্তি হচ্ছে, দেখা গেছে যে মনোবিদরা বিষন্নতাকে নিরূপণ করতে যে নিয়ম বা পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেন, সেই একই নিয়ম মেনে সুখকেও আলাদাভাবে নিরূপণ করা সম্ভব। তাহলে, বিষন্নতা যদি একটি রোগ হয়, সুখ কেন একই প্রজাতির রোগ হবে না? একই ধরণের রোগ বলেই না একই পদ্ধতিতে বিষন্নতা আর সুখকে নির্ণয় করা যাচ্ছে! একইসাথে মজার কিন্তু যথেষ্ট যুক্তিতে ভরপুর এই প্রবন্ধটির অ্যাবস্ট্রাক্টটা অনুবাদ করার লোভ সামলাতে পারছি না।
প্রস্তাব করা হচ্ছে যে সুখকে এক ধরণের মানসিক অসুস্থতা হিসেবে গণ্য করা হোক এবং ভবিষ্যতে সমস্ত প্রধান প্রধান ডায়াগনস্টিক ম্যানুয়ালে একে এই নতুন নামে লিপিবদ্ধ করা হোক - major affective disorder, pleasant type। প্রাসঙ্গিক গবেষণাগুলো ঘেঁটে দেখানো হয়েছে যে পরিসংখ্যানগতভাবেই সুখ একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার, এটির কিছু বিচ্ছিন্নভাবে গোষ্ঠীবদ্ধ উপসর্গ আছে, বিভিন্ন কগনিটিভ অস্বাভাবিকতার সাথে এর সম্পর্ক আছে, এবং সম্ভবত এটি আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অস্বাভাবিক আচরণকেই নির্দেশ করে। এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবশ্য একটা অভিযোগ উঠতে পারে যে সুখকে কেউ বিরূপভাবে নেয় না। কিন্তু, এই অভিযোগ বাতিল হয়ে যায় কারণ এটা বৈজ্ঞানিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক।
ফিরে আসা যাক টাকার প্রসঙ্গে। নিচের ছবিগুলো দেখুন। যেখানে জার্মানির মেলান্ডার পরিবারের সাপ্তাহিক খাবার খরচ ৫০০ ডলার, সেখানে নিচে নামতে নামতে শেষ ছবিটার নিচে দেখুন লেখা আছে - চাদের (এই নামেও যে একটা দেশ আছে সেটা জেনেছি মাত্র বছর কয়েক আগে) ব্রেইডজিং ক্যাম্পের আবুবকর পরিবার, তাদের সাপ্তাহিক খাবার খরচ মাত্র ১ ডলার ২৩ সেন্ট।
টাকাই বোধহয় শেষ কথা নয়। অন্তত আমার তাই ধারণা। আমার ধারণা, আমি যে আপনারে খুঁজিয়া বেড়াই তাকে পাওয়ার মধ্যেই সুখ নিহিত। তবে এত বেশি চিন্তা করে আসলে লাভ নেই, দরকারও নেই। কারণ, আর্গাইল যথার্থই বলেছেন, কেউ যদি বলে যে সে সুখী, ব্যস - সে সুখী।
কৃতজ্ঞতাঃ বুনোহাঁস (বানান শুধরে দেবার জন্য)। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে খাটো করলাম।
মন্তব্য
চটবেন না, একটু লঘু মন্তব্য করি। এখন বাজারের যা হালচাল দেখছি, সুখ কেবল হাচল থেকে সচল হতে পারলেই। আর লেখালিখির দাবি থাকে না...
আর ধোনির সুখ? সে ছোঁড়া তো বিয়েই করে ফেলল, আর কি...
এক্ষেত্রে বোধহয় ম্যাথুর কথাটাই প্রযোজ্য।
আর সচল হইলেই যে সুখ পাবেন এইটা একটা ভ্রান্ত ধারমা। প্রকৃত সুখ সিরিজ খেলাপিতে।
সেই হিসাবে আমি সবচেয়ে সুখী। এখন পর্যন্ত কোন সিরিজ শেষ করার রেকর্ড নাই আমার।
কি মাঝি, ডরাইলা?
তাইলে রিচার্ড বেনটলের মতে সচলদের মধ্যে আপনি সবচেয়ে অসুখীও। আপ্নের MAD আছে!
সব সুখী মানুষই তাইলে মানসিকভাবে অসুস্থ!
আমার ব্যাক্তিগত অভিমত হইলো সুখ ইকোয়ালটু জিরো এক্সপেকটেশন ফ্রম এভরিবডি। কারো কাছে কিছু আশা না করলেই দুঃখ দৌড়ায়া পলাইবো।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
এইটা একটা প্যারাডক্স। সুখী মানেই অসুখী!
কিংবা সুখই সুখীর বড় অসুখ।
সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী নাকি মানুষ যখন দারিদ্রসীমার উর্ধ্বে উঠে যায় তখন অর্থ-বিত্ত ইত্যাদি তার জীবনে সুখী হতে সামান্যই যোগ করে। দারিদ্রসীমার কাছাকাছি থাকা মানুষের চিন্তা থাকে শুধু একটাই- প্রতিদিন দু’বেলা অন্ন সংস্থান। এ চাহিদা মিটলেই সে জগতের সেরা সুখী। দারিদ্রসীমা থেকে যে যত উপরে, তার জীবনে চিন্তাভাবনা, জটিলতা ইত্যাদিও হয়তো ততো বেশি। সুখের পরিমাণও বোধহয় নির্ভর করে এ জটিলতাগুলোকে কে, কীভাবে মোকাবেলা করছে তার ওপর। মেডিটেশন এ মোকাবিলা করারই তেমন একটা মাধ্যম। আবার ধর্মীয় প্রার্থনাও অনেকটা হয়তো এ কাজ করে। কেউ নেই ভাবার চেয়ে আপনার পাশে কেউ আছে এমন চিন্তাভাবনার শক্তি বা পজেটিভ এনার্জি হয়তো বেশি।
বিস্তারিত জানি না, তবে দারিদ্রসীমার নিচে বা কাছাকাছি থাকা লোকের সংখ্যা বেশি বলেই হয়তো বছর কয়েক আগে হ্যাপিনেস ইনডেক্স নিয়ে এক রিপোর্টে বাংলাদেশের নাম আমেরিকারও অনেক ওপরে ছিলো।
এইটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। সিরাতের কোনো একটা ব্লগে সম্ভবত বেতন নিয়ে কোনো আলোচনায় এরকমই কিছু বক্তব্য এসেছিল।
নুন্যতম চাহিদাগুলো যতক্ষণ না পূরণ হচ্ছে ততক্ষণ মানুষের চিন্তা জুড়ে থাকে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের চিন্তা, যেগুলো পূরণ হলেই সে সুখী। কিন্তু সেই সুখবোধ বোধহয় বেশি স্থায়ী নয়। জীবনের স্ট্যান্ডার্ড বাড়লেই তাতে যোগ হয় আরো স্ট্যান্ডার্ড, আরো ভোগ-বিলাসিতার ইচ্ছা, নাগরিক সমস্যা, দুশ্চিন্তা। এদের অনেকগুলোই আবার আরো বেশি টাকা উপার্জনের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু তারপর আর বিত্তে সবকিছু পাওয়া যায়না। মানসিক শান্তি এমন একটা ব্যাপার। একটা পর্যায়ে গিয়ে মানুষকে আর মোটিভেটেড করা যায় না, যতই পুরষ্কৃত করুন না কেন।
কেউ কেউ আছেন যারা এটা শুরুতেই ধরে ফেলেন, অনেকের সারাজীবন লাগে বুঝতে।
বেতন নিয়ে ড্যানিয়েল ক্যাহনেম্যান এবং গ্যালপের গবেষণায় দেখা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ হাজার ডলার (মাসিক) এর উপরে বেতনে সুখ স্ট্যাটিক থাকে। বস্তুত তিন-চার হাজার ডলারের পর থেকেই প্রান্তিক সুখের পরিমান কমতে থাকে। সুতরাং টাকাই কেবল সুখনির্ণায়ক নয়।
বার্সেলোনা ফুটবল টিমে খেলতে নিলে আমি অনেক সুখী হমু
শীর্ষ ছবির আর পাদদেশীয় ছবির দুটা খুঁটিয়ে দেখলে ক্যামন যেনো লাগে, মনে একটু দর্শন জাগে...
_________________________________________
সেরিওজা
ঠিক! আমিও ভাবছিলাম, এই যে সপ্তাহে ৫০০ ডলার ব্যয় করার সামর্থ রাখা জার্মান পরিবার তারা এত মলিন, বিষন্ন চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন? অন্যদিকে ক্যাম্পে ক্যাম্পে দিন কাটানো আবুবকররাই বা এত সুখী কেন?
এইটা অবশ্য ক্যামেরাম্যানের কারসাজিও হইতে পারে
টপিকস টা সুন্দর, তার সাথে আপনার বর্ণনাও।
সুখ হল major affective disorder (MAD), pleasant type, তার মানে আমাদের সু্খী হওয়ার দরকার নাই। এটা চিন্তা করেই তো আমার সুখ পাইতেছে...
অনন্ত
- কুয়েতি পরিবারটা দেখছেন নি। মাশাল্লা, পুরাই "আল্লায় দিছে" টাইপ।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঈজিপ্ট আর ভূটানের টা কি দোষ করলো?
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
খুব দারুন আপনার চিন্তা। জন্ম থেকে তো দৌড়াচ্ছি প্রত্যেকে সুখের জন্য। শরীরে ব্যথা যাতে না পাই সেজন্য ছুরি কাঁচি লুকাচ্ছি শিশুর কাছ থেকে। পদে পদে নিয়ম কানুন যাতে নিরাপদ থাকি । এর পর আসছে একটু আরাম কেদারা, শীতাতপ বাড়ি যাতে চামড়ার আরাম হয় । কানের আরাম হয় গান শুনলে, চলছে গানের জলসা। এই আরামটা বোধ হয় সুখের বেসিক। তারপর একসময় সিনেমায় নায়ক নায়িকার চুম্বন দেখে নিজের শরীরের ভিতরে কোথাও একটু শিহরন খেলে গেল, নিজেই হরমোনের দোষে পাশের বাড়ির মেয়েটাকে দেখতেই হৃদয় নামের অনুভুতিটা বেড়ে গেল। এই হল নষ্টের গোড়া, এই অন্তর হৃদয় বা মনের সুখ চাইতে গিয়ে ক্রমাগত সংজ্ঞা বদলাতে হচ্ছে।
কখনো নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, সেটায় জিতে গেলে সুখ। ১০ টা ভোট থেকে ১০০ টা ভোট পাওয়ার আনন্দের তফাৎ। কখনো অন্য সবার সঙ্গে - যেহেতু সবাই নোবেল প্রাইজ পায় না, কোনমতে পেয়ে গেলে, মনের অসীম সুখ। যদি আমেরিকায় হয়, তাহলে প্রতিযোগিতা হবে সেই দেশের পয়সা, ধন, মানের লোকদের সঙ্গে আর যদি হটেনটট হয় তবে যে একটা জন্তু শিকার করছে ..তার সুখ যে করে নাই তার চেয়ে বেশি।
সুখটা ডাইনামিক ভাবে তার চাহিদা বাড়াতেই থাকে বাড়াতেই থাকে। প্রকৃতি একটা খেলা সেখানে খেলে। দৈবাৎ নানান দুর্ঘটনা, কষ্ট, নাটকীয় ঘটনায় সুখের অভাব, আরামের অভাব ইনজেক্ট করে সুখের চলতি রেখায়। আর তার হাতে মৃত্যুর মত তুরুপের তাশ তো রয়েছেই।
আধ্যাত্মিক লোকজন এই কাজটা ভাল করে। বাউলেরা অথবা সাধকেরা, তারা নেগেটিভ জিনিসকে সুখ বলো বুঝ দেয়ার জন্য মনের ব্যায়াম করতে থাকে। সুবিধা হলো খরচ কম, যেখানে আছে সেটা দিয়েই কাচ চলে।
সুখের সংজ্ঞা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে যারা চুড়ান্ত দু:খে থাকেও তাদের বেঁচে থাকার কিছু যুক্তি থাকে।
http://www.somewhereinblog.net/blog/ekattor/29198271
অট:
সুখে সংজ্ঞা যতক্ষন না শিওর হওয়া যাবে, ধর্মের বেহেশতটাও পোক্ত হবে না। কারণ যখন কেউ অর্থশালী হয় সে দরিদ্রের সরলতা দেখে মাথা কোটে। বেহেশতের আর্কিটেক্ট দু:খহীনতার মত বাগ দিয়ে শুরু করেছে। বেহেশতীরা খাবারে লবনের মত সুখে একটু দু:খ চায়, সেটা পাবে কোথায?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার অফটপিকে তোলা প্রসঙ্গটা কিন্তু ইন্টারেস্টিং! বিশেষ করে, দুঃখহীনতা কে একটা বাগ বলাটা মজা লেগেছে।
এতো সব তত্ত্ব-তালাশ বুঝিনা বাপু! যখন আমি কাঁদি তখন দুঃখী, যখন হাসি তখন সুখী। ব্যস সোজা হিসেব।
সুখী হবার সবচেয়ে বড় ফমুর্লা হচ্ছে চোখ বুঁজে থাকা। জগতের যাবতীয় সমস্যা থেকে চোখ সরিয়ে রাখতে পারলেই সুখী থাকা যায়।
কি মাঝি, ডরাইলা?
- আমার মতে সুখবোধ হইলো একটা সিস্টেম লস!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনার দাদাবাড়ির কথা শুনে মন খারাপ হলো খুব।
কিন্তু হঠাৎ করে সুখ নিয়ে এই জ্ঞানগর্ভ ডিসকোর্স! সব কিছু ঠিক ঠাক?
আর যে আবস্ট্রাক্টটার অনুবাদ দিলেন ওর লেখক নিশ্চিত অসুখী। পরিসংখ্যানগত ভাবে কোনো কিছু 'রেয়ার/অস্বাভাবিক' হলেই সেটা 'রোগ', এই রিজনিং ফান্ডামেন্টালি ফ্লন মনে হলো আমার। ওরকম ধরলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক ধারণাও 'অসুখ' হিসাবে চালিয়ে দেওয়া যাবে।
আর আমি যদি একটা চাকরি পাইতাম সেখানে কাড়িকাড়ি টাকা দেওয়া হয়। তারপর বলে 'যা খুশি তাই করো'। তাইলে আমি এখনকার চেয়ে সুখীতর হতাম
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
সবকিছু ঠিকঠাকই আছে, হঠাৎ করে ব্যাপারটা মাথায় জেঁকে বসলো তাই লিখে নামিয়ে দিলাম আর কি!
সুখকে অসুখ হিসেবে দেখলে ক্ষতি কী? আমরা সবসময় অসুখকে খারাপ ভাবি, কষ্টকর ভাবি। কিন্তু গবেষকদেরও যে একই লাইনে চিন্তা করতে হবে তা তো নয়। বরং সুখের মত ডেলিকেট একটা বিষয় নিয়ে ভাবতে হলে যথেষ্ঠ সৃজনশীল হওয়াই প্রয়োজন। লেখক সেটাই করেছেন। অসুখ মানেই যে খারাপ তা কিন্তু নয়। বরং কোন কিছুকে অসুখ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলে তাকে নির্ণয়, পরিমাপ, নিরূপণ ইত্যাদি বিষয়গুলোও সুনির্দিষ্ট করা সহজ হয়।
সুখী হওয়াটা একটা স্কিল, এই ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং লাগল। আসলেই হয়ত তাই। নিজেকে সুখী ভাবতে পারলেই সুখী হওয়া যায়।
দারুণ লেখা
নির্দ্বিধায় পাঁচ এবং ফেসবুকে শেয়ার মারলাম ভাইয়া। সচলায়তনে এরকম লেখা কম পাই, আর পেয়ে পড়ে এত্ত মজাও কম পেয়েছি। অনেক, অনেক ধন্যবাদ!
আরো চাই আরো চাই আরো চাই!!
জিকির শুরু করবো নাকি?
সুখ একটা ভ্রান্ত ধারমা। নির্দিষ্ট কোনোকিছুই আমাকে বেশিদিন সুখী করতে পারে না। নিয়ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই আমার সুখ।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
অসাধারণ লাগলো টুকরো টুকরো গল্প আর শেষের ছবিগুলো।
সুখ তুমি কী? - এটা খুঁজতে খুঁজতেই সারাটা জীবন চলে যায়, সুখের দেখা পাওয়া যায় না।
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
ইন্টারেস্টিং আলোচনা।
“মস্তিষ্ককে সুখী হওয়ার জন্য ট্রেইন করা যায়”, “সুখী হওয়াটা একটা স্কিল” এবং “সুখ একধরণের ডিসওর্ডার” কনসেপ্ট গুলিও মাজার।খুব কাছের দুজন ‘সুখী’ মানুষকে দেখে কিছু ব্যাপারে আমি নিজে কয়েকটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে (পৃথিবীর ৬০০ বিলিওন+ মানুষের মধ্যে ২ জনের স্যাম্পল অবশ্য একটু কম হয়ে গেল)। প্রথম কথা হল সুখ ব্যাপারটা ব্যাক্তির উপর নির্ভর করে (জেনেটিক ডিসপোজিসন হতে পারে অথবা তাঁরা MAD এ আক্রান্তও হতে পারে)। দুই, আর্থিক অবস্থাটাও ব্যাপার ছিল না তাদের জন্য (একজন ‘ফিলদি রিচ’ ছিল একসময়, তারপর প্রায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত হয়ে গেছল অপরজন নিম্ন-মধ্যবিত্তই ছিল সারা জীবন)। তিন, চোখ-কান বন্ধ করে সবকিছু থেকে দূরে রাখারও চিন্তা করত না তাঁরা। যিনি নিম্ন-মধ্যবিত্ত ছিলেন, তিনি অন্যের দ্বায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিতে কখনও দ্বিধা করতেন না। …… আচ্ছা, আমি যখন আমার ‘অ্যানালাইসিস’ শেষ করব, তখন বিস্তারিত লেখা যাবে।
পৃথিবীতে সম্ভবত সবচে সুখী মানুষ আমার বাপ
প্রথমতো যখন ইচ্ছা তখন ঘুমানোর ক্ষমতার জন্য
দ্বিতীয়ত গরমের সিজনে গরম না লাগার জন্য
আর আমি প্রায় সুখী উত্তরাধিকারসূত্রে দুটি যোগ্যতা পাবার জন্য
তবে পুরা সুখী হই যখন ঘুমের স্বাধীনতা পাই
...
-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
ঢাকায় এখন ফ্ল্যাট বাড়ির দাম প্রতি স্কয়ার মিটার ৬৩৯ সিং ডলার থেকে শুরু করে ৬,৩৯০ সিং ডলার পর্যন্ত। আর বাড়ির (মানে জমিসহ) দাম হিসাব করার ক্ষমতা এই অধমের নাই। আমাদের মহল্লার ১৬.৭৩ স্কয়ার মিটারের একটি দোকানের দাম উঠেছে ১,৪৯,০০০ সিং ডলার। এইবার কবি বলুনতো দেখি ফ্ল্যাট-জমির দাম ঢাকায় বেশি নাকি সিঙ্গাপুরে বেশি। আপনি হিসাব করতে না চাইলে আপনার সুখি বন্ধুটিকে জিজ্ঞেস করুন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সুখ থাকলেই সবাই সুখী হতে পারে না। দঃখের মাঝে থেকেও অনেকে দুঃখী নয়।
লেখাটা পড়ে সুখ পেলাম।
সুমিমা ইয়াসমিন
সুখ সর্ম্পকে অনেক কিছু জানলাম।
লেখাটা পড়ে বেশ ভালো লেগেছে।
নতুন মন্তব্য করুন