অনলাইনে বেশকিছু বাংলা দৈনিক পত্রিকা ঘেঁটে বুঝলাম, তালিকা করলে একদম প্রথম জায়গাটি পাবে বাংলাদেশ, যদি তালিকাটি হয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে ইন্টারনেট বা আন্তর্জাল প্রশিক্ষণ বিষয়ক। ফেসবুকে বন্ধুদের লেখা স্ট্যাটাসে লাইক মারবেন কীভাবে থেকে শুরু করে কীভাবে মেইল করবেন, কীভাবে ভিডিও দেখবেন জাতীয় টিপস পেতে আজই যে কোনো বাংলা দৈনিকের অনলাইন সংস্করণ খুলে বসে পড়ুন। আপনার বয়স, শিক্ষা যাই হোক না কেন, সপ্তাহখানেকের প্রশিক্ষণে আপনি হয়ে উঠবেন একজন আন্তর্জাল বিশেষজ্ঞ। অবশ্য এই প্রশ্নটা দয়া করবেন না যে আপনি যদি অনলাইনে কীভাবে পত্রিকাটি পড়া যায় সেই জ্ঞানটি রাখেন তাহলে ঐসব হাজারো টিপসগুলিও যে আপনি জানেন সেই বোধটুকু পত্রিকাওয়ালাদের আছে কিনা। কারণ সবার তো আপনার মত ইন্টারনেট নেই যে তারা নেট ঘেঁটে নিজে নিজেই সব শিখে ফেলবে। তাদেরকে শেখানোর জন্য পত্রিকাগুলোর একটা দায়িত্ব আছে না! (যাদের ইন্টারনেট নেই তারা টিপসগুলো কোথায় প্রয়োগ করবে সেই প্রশ্ন করলে আপনি একটা মহামূর্খ, আগে ইন্টারনেটের সের কত টাকা সেটা জেনে তারপর প্রশ্ন করবেন)
দৈনিক সমকালের 'প্রযুক্তি প্রতিদিন' পাতাটি নামে প্রযুক্তি বিষয়ক হলেও এর মূল আবেদন সেই এক, আদি ও অকৃত্রিম কম্পিউটার বিষয়ে। এর বাইরেও যে হরেক প্রযুক্তি থাকতে পারে, তা বোধহয় বিভাগীয় সম্পাদক সাহেব জানেন না। এই বিভাগে ছাপানো গত কয়েকদিনের প্রকাশিত লেখাগুলি দেখুন।
|
শুধু কম্পিউটার ও আন্তর্জালের টুকিটাকি ভিত্তিক এরকম একটি ফিচার পাতার নাম 'প্রযুক্তি প্রতিদিন' কী করে যুক্তিযুক্ত হয় তা বোধগম্য নয় (খুব সম্ভবত সমকালের এই পাতাটি প্রথম আলোর 'কম্পিউটার প্রতিদিন' পাতার মতই কিছু একটা, কিন্তু তাই বলে নামটা তো আর একই রাখা ভালো দেখায় না )।
সেই হিসেবে দৈনিক যুগান্তর অন্তত নামকরণে সততা দেখিয়েছে। তাদের নিয়মিত পাতাটির নাম 'আইটি বিশ্ব'। বিজ্ঞান কিংবা প্রযুক্তি বিষয়ক আর কোনো পাতা এই পত্রিকায় বরাদ্দ নেই। অবশ্য সাপ্তাহিক ফিচার হিসেবে একটি বিষয় আছে 'যুগান্তর ডট কম' নামে। নামেই বলে দিচ্ছে- এই পাতাটিও আন্তর্জাল বিষয়ক। এর সর্বশেষ সংযুক্তি হচ্ছে নিচের লেখাগুলি-
মজার বিষয়টা কি খেয়াল করেছেন? কোনো এক অদ্ভুত কারণে ডট কম সম্পর্কিত লেখার মধ্যে বেরসিকভাবে একটা অন্য প্রযুক্তির (সৌর বিদ্যুৎ) লেখা ঢুকে গেছে! কিংবা আসলে ব্যাপারটা হয়তো অন্য কিছু। হয়ত ডট কমের মধ্যেই দুনিয়ার তাবত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিহিত। কে জানে!
দৈনিক প্রথম আলোর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সাধারণ বিজ্ঞান কিংবা প্রযুক্তির উপর দৈনিকভাবে কোনো বিশেষ পাতা বরাদ্দ নেই। তবে শুধু কম্পিউটারের উপর দৈনিক প্রকাশ করার জন্য পুরো একটি বিভাগ আছে, 'কম্পিউটার প্রতিদিন' নামে। অবশ্য পত্রিকাটি তার কম্পিউটার প্রেমের চরম আদিখ্যেতা দেখানোর পর মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার মত যে কাজটি করেছে সেটি হচ্ছে 'বিজ্ঞান প্রজন্ম' নামের আরেকটি ছোট্ট পাতা প্রকাশ। এতে সর্বশেষ যে লেখাগুলি প্রকাশ পেয়েছিল তাদের শিরোনাম হচ্ছে-
কিছু লেখা সুখপাঠ্য। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতাটি খুবই অনিয়মিতভাবে প্রকাশ পায়, সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছিল ৫ই সেপ্টেম্বর। ভবিষ্যতে কবে আবার প্রকাশ পাবে তাও অনির্ধারিত। আরেকটা দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আর্কাইভিংয়ের দুর্দশা। বিজ্ঞান প্রজন্মে পূর্বে প্রকাশিত অন্যান্য লেখা খুঁজে পাবার কোনো সহজ তরিকা এখন পর্যন্ত দেখতে পাইনি।
যা দেখলাম, সামগ্রিকভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে বেশিরভাগ পত্রিকারই তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। বেশিরভাগ খবরই আন্তর্জাল থেকে কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠিত অনলাইন সংবাদপত্র থেকে বাংলায় রূপান্তরিত (একটু কথ্য ভাষায় বললে যাকে বলে 'মেরে দেয়া')। কম্পিউটার ও আন্তর্জালের খবরের বাইরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে সপ্তাহে মামুলি একটা দুটো লেখা প্রকাশ করেই বেশিরভাগ দৈনিক এই বিভাগের দায়িত্ব সম্পন্ন করে ফেলে। মজার ব্যাপার হলো, কোনটা যে বিজ্ঞান আর কোনটা যে প্রযুক্তি- এই প্রাথমিক ব্যাপারটাও প্রায়শই গুলিয়ে ফেলা হয়। ধারনা করি যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বেশিরভাগ লেখাগুলোই আসে ফ্রি ল্যান্সার প্রদায়কদের কাছ থেকে, সুতরাং কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে সমমনা বেশকিছু লেখা এক পাতাতে পাওয়ার মত সৌভাগ্য পাঠকের কখনই হয় না। এই সব বিভাগের দায়িত্বে যারা থাকেন তারাও বোধ করি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের পারদর্শিতা রাখেন না। যে কারণে বিনোদন পাতার চেয়েও হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখা যায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক পাতাগুলির।
মন্তব্য
ঘটনা সত্য। প্রযুক্তির অন্যান্য বিষয় যেমন জ্বালানী ছাড়া জেনারেটর উদ্ভাবন ইত্যাদির জন্য প্রথম পাতা বরাদ্দ।
আরোও একটা বিষয় আছে। এইটা প্রযুক্তি (aka আইটি) পড়ুয়াদের মধ্যেও দেখি। ওরা কম্পিউটার বলতে পিএইচপি আর টুকটাক ট্রাবলশুটিং বোঝে। কয়েকটা ওয়েব সাইট ফোরাম ইত্যাদির বাইরে চিন্তা করতে পারে না।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কম্পিউটারের ভাল খবর থাকলেও কথা ছিল, কিন্তু একেকদিন দেখি একেক ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ নিয়ে বিজ্ঞাপনধর্মী প্রতিবেদন! তার উপরে খবর ভুল ভ্রান্তিও আছে, যেমন ফেসবুক আসলেই মোবাইল নিয়ে কাজ করছে - সূত্র
"বিজ্ঞানীদের ঈদ" এই থীমের ফিচার এই পাতায় প্রতি ঈদে প্রকাশিত হয়। আমি ঠিক বুঝিনা, ব্যাপারটা যে বেখাপ্পা ধরনের, সেটা বিভাগীয় সম্পাদক বুঝে কিনা। তবে বেশ কিছু ভালো লেখাও কিন্তু এই পাতায় বের হয়।
সজল
মেরে দেওয়া খবরের বাহিরে যদি আর কিছু থাকে তা হলো বিজ্ঞাপন। তবে বর্তমান যুগে প্রযুক্তি বলতে প্রধানত আইটি প্রযুক্তিকে বুঝায়। সেই জন্যই হয়ত বা সবাই আইটি নিয়ে এত মাতামাতি করে। তাছাড়া আইটি ভিত্তিক তথ্য সহজলভ্য তাই কেউ আর ঝামেলাতে যেতে চায় না
তাহলে আর সেটা বাংলায় পুনরায় ছাপানোর প্রয়োজনটা কি? এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা যে ভাবে গুগ্লিয়ে সংবাদ খুঁজে বের করেন, পাঠকও তো সেটা পারেন।
আপনার ইদানিংকালের পোস্টগুলো আগের চেয়ে বদলে গেছে। বেশ একটা গবেষণা ভাব। এইটা পড়ে মজা পেলাম।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক। ক্রমশ রস-কসহীন হয়ে যাচ্ছি বোধহয়।
প্রযুক্তির পেছনে যে বিজ্ঞান সে আলোচনাও কোথাও পাবেন না! আমরা মনে হয় ব্যবহারিক জ্ঞান নিয়ে তৃপ্ত!
ভালো বলেছেন।
আমি খুব সন্দিহান যে এইসব কম্পু ও ইন্টারনেট বিষয়ক লেখা আসলে কয় জনে পড়ে। এর চেয়ে বিজ্ঞানের নানান খবর প্রকাশ করলে সেটাই কি পাঠকপ্রিয়তা পেত না? দেশের কোনো সংবাদপত্র বা সংবাদসংস্থা এ ধরণের কোনো ফিল্ড স্টাডি কি করেছে? 'পড়াশোনা' পাতাটি থাকা সার্কুলেশনের জন্য জরুরী। খুব সম্ভবত একই চিন্তা মাথায় রেখেই কম্পিউটার বিষয়ে খবর ছাপানো হয়। কিন্তু যা ছাপানো হয় সেটার প্রতি পাঠকের আগ্রহ কতটুকু? পাতার পর পাতা ফেসবুক, ইয়াহুর নানান এপ্লিকেশন ব্যবহারের টিপস আর ল্যাপ্টপের বিজ্ঞাপন না দিয়ে সেই স্পেসটা পাঠককে বিজ্ঞানমুখী করার জন্য ব্যয় করা কি খুব কষ্টসাধ্য কোনো ব্যাপার?
এইখানে অবশ্য আরেকটি প্রশ্ন এসে যায়, দেশে সেরকম মানের যথেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক, সাংবাদিক ও অনুবাদক আছে কি না। আমার নিজস্ব মতে তা যথেষ্ঠ পরিমানেই আছে। সদিচ্ছাটাই আসল। প্রকাশের ইচ্ছা থাকলে বিজ্ঞান প্রদায়কের অভাব হবে না।
দারুন একটা পয়েন্ট ধরেছেন তো!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
প্রথম আলোর "বিজ্ঞান প্রজন্ম" সাপ্লিমেন্টে আমি আজ পর্যন্ত্য শুধু কমপিউটার নিয়েই লেখা দেখেছি। পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, রসায়ন, গণিতের(এর জন্য অবশ্য আলাদা পাতা আছে) প্রায় কিছুই আসতে দেখিনি, আজ পর্যন্ত্য জীববিজ্ঞান নিয়ে কিছু ছাপিয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। জনপ্রিয় বিজ্ঞান বা পপুলার সায়েন্স নিয়ে ইংরেজি পত্রিকার তো অভাব নেই, সেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে একটি বিষয়ের কোন নিবন্ধ অনুবাদ করে দিলেও তো একটা কাজের কাজ হত।
এখানে দুটো বিষয় আছে। প্রথমটা হচ্ছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাম্প্রতিক সংবাদ পরিবেশন। অন্যান্য পাতায় যেমন সাম্প্রতিক আলোচিত সংবাদগুলো প্রকাশিত হয়, তেমনি বিজ্ঞান সংবাদও নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা উচিত (একটা উদাহরণ হতে পারে বিডিনিউজ২৪ এর বিজ্ঞান পাতাটি)। দুঃখজনক হচ্ছে, বাংলা পত্রিকায় বছরে একবার নোবেল প্রাইজ কে কে পেল সেটা আর হঠাৎ হঠাৎ নাসার মহাকাশ অভিযানের খবর ছাপানো ছাড়া আর তেমন কিছু থাকে না।
দ্বিতীয়টা হচ্ছে, ফিচারধর্মী বা আলোচনামূলক লেখা, যেগুলো আসলে সংবাদ নয়, বরং জ্ঞানধর্মী। এই লেখাগুলোর মূল্যও অনেক, যদিও কখন কোনটা প্রকাশ পাবে তা ঠিক করবেন বিভাগীয় সম্পাদক। এ ধরণের লেখা বলতে গেলে পাওয়াই যায় না। যা পাওয়া যায় তাতে থাকে কে কীভাবে ঈদ উদযাপন করলেন তার বৃত্তান্ত।
আমার মতে বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতাটা নিয়মিত করলে সবচেয়ে ভালো হয়। তবে, শীঘ্রই প্রথম আলোর বোধহয় সেরকম কোনো ইচ্ছা নেই।
আসলে কাণ্ডজ্ঞানের অভাব ঘটলে বিজ্ঞান-চিন্তায়ও গণ্ডগোল বেঁধে যায়। আমাদের দৈনিকগুলায় বিজ্ঞান পাতা চালু করার আগে একটা কাণ্ডজ্ঞান পাতা আগে খোলা দরকার ছিলো !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
(গুড়)
নতুন মন্তব্য করুন