ইউটিউবে ডুব

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/১১/২০১০ - ১:১৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকের ব্লগরব্লগরের বিষয়বস্তু ইউটিউব, কিন্তু কোনো ভিডুর লিংক দিতে পারলাম না বলে চরি।

ইউটিউব আমার কাছে এক ইয়া বিশাল আন্ডারওয়ার্ল্ড। মেজাজ বিলা তো রোয়ান এটকিন্সন লিখা সার্চ দিয়া কানে হেডফোন লাগায়া বসলাম মাড়ির ব্যায়ামে। সেদিন দেখতেছিলাম, একটা স্ট্যান্ডআপ কমেডি। ডেভিলের সাজ নিয়া সে 'দ্য হেল'এ সবাইকে ওয়েল্কাম করতেছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির দোজখীদেরকে মাইকিং কৈরা সারিবদ্ধ করার এক মজার কমেডি। হাহাপগেড।

নানান পাব্লিকের কাছ থাইকা সোফটানো সিনেমাগুলান দেইখা শেষ করার পর মাঝে মাঝে খিদে লাগলে ইউটিউবেই খোঁজ-দ্য-সার্চ লাগাইতে খুব টেস লাগে। সিনেমা দেখার শুরুর দিকে হিচকক লোকটারে কেন জানি একদম পছন্দ হৈত না। গেল সপ্তাহের আগের সপ্তাহে মন মেজাজ খুব বেজাড় আছিল, কাজকামের পাহাড় ঠেলতে ঠেলতে ঠেলতে ঠেলতে ঠেলতে ঠেলতে ঠেলতে আবিস্কার করলাম, ইটস শো টাইম। বেস্ট হান্ড্রেড মুভিজ এভার লিখতেই দেখি গণ্ডায় গণ্ডায় লোক লিস্ট বানায়া মার্কেটে হাজির। একটারে ধরলাম। এইটা দেখছি, দেখছি, দেখছি,...আররে এইটাতো দেখা হয় নাই! দেখি এক লোক হাতে ক্যামেরা বাগায়া চাইয়া আছে। চেহারাছবি ভাল, কিন্তু এই লোকের কোনো সিনেমা আগে ক্যান দেখি নাই! পরে এক ভিডুতে কারে যেন বলতে দেখলাম যে সেই লোক হিচককের পিয়ারের লুক আছিল, ভাই-বেরাদর গোছের আর কি! জ্ঞানী লুকের জন্য ইশারাই কাফি, নাম বলতেছি না তার। আমাগো জেনারেশনের ব্যান্ড গুরুর নামে নাম।

যাই হোক, দেখতে বইলাম, দ্য রিয়ার উইনডো। কাহিনী বিস্তারিত বলবো না, বলতে চাইলেও এখন পারবো না, তিন ব্লক দূরের এক বাসায় শুন্তেছি কোনো এক দুগ্ধপোষ্য কানতেছে, রাত বাজে সোয়া দুইটা।

তো ভাবলাম, গুরুর প্রতি অনেক অবিচার করছি, আর না। গত কিছুদিন অঞ্জলি দিলাম সাইকো, ভার্টিগো, দড়ি, যেই লোক বেশি জাইন্যা ফেলছিল- এইসব দেইখা। সবই টিউবে। একদিন টিউবাইতেছি, দেখি সাদাকালো আমলের ভিডু। গুরু কিছু বাণী ছাড়তেছেন। হোয়াট ইজ দ্য ডিফারেন্স বিটুইন সাস্পেন্স এণ্ড মিস্টরি। একদম কামেল লোক। দেরিতে হৈলেও, টিউবের চিপাকাঞ্চিতে গাঞ্জা খাওয়া অবস্থায় হৈলেও তারে ধরতে পারছি।

আরেক ওস্তাদ লোক টিউবে পাওয়া যায়, নাম রিচার্ড ফাইন ম্যান। অনেকেই তারে দেখতারে না- ফ্যাট বয় আর লিটল ম্যানের লগে তার খাতির আছিল বইলা। যাই হোক, লোকটার রস আছে। বিজ্ঞানের কঠিন কথা মিস্রির ছুড়ির ডগায় পরিবেশন করিতে তিনি ব্যাপক সিদ্ধ আছিলেন।

আমার দোস্ত আছিল সাবু। মানে আছে এখনো, কালের অমোঘ পরিহাস, আজ মোরা দুনিয়ার এপিঠ আর ওপিঠে, আজ আমার ঘরে আধার আর তোমার ঘরে আলো, এমন বিস্তর দূরত্বে কে দেবে আশা, কে দেবে ভালোবাসা..., এহেম। যাই হোক, সাবুর সাথে থাইকা গীটার জিনিসটা খুব মনে লাগছিল, মানে এখনো লাগে। টিউবে এক পোলা আছে, নাম সুংঘা জুং। এই পিচ্চির হাতে বিলি জিন বাজানো শুইন্যা মাইকেল বস আবার জিন্দা হইলেও আশ্চর্য্য হমু না। আর বোহেমিয়ান র‌্যাপসডির পুরাটা ক্লাসিক্যাল গিটারে যে লোক তুলছে (এই দুনিয়ায় এইটাও সম্ভব!) তারে দেখলে তো আপ্নেরা টাশকি খাইবেন। আরেক বুড়া আছে, বয়স মিনিমাম সত্তুর। সে বাজায় য়্যানি'স সং। শোনার পর ডেনভার গুরুরে না দেখলে কি চলে!

গীটার শুনতে শুনতে একদিন আবিস্কার করলাম কার্লো ডমেনিকনি। দুইজন লোকরে নিজে নিজে আবিস্কার কইরা আমি শান্তি পাইছি, এদেরকে না শুনলে জীবনটা বৃথা যাইত। প্রথমজনের নাম তো বললাম, কার্লো। আর দ্বিতীয়জন হইলো Ennio Morricone. এই লোক সম্পর্কে বিশ্বাস করেন টিউবের বাইরে কোনো কিছু পড়ি নাই , শুনি নাই, দেখি নাই। এই লোক আমার আত্মীয় লাগে না, হ্যাতে আমারে দুই পয়সার জিলাপিও কোনোদিন কিন্যা খিলায় নাই। কিন্তু, বস, একটা কথা কমু। এই লোকের অন্তত দুইটা থিম মিউজিক না শুইন্যা মইরেন না। একটা হইল, এ ফিস্টফুল অফ ডলারস, আরেকটা হৈল ফর এ ফিউ ডলারস মোর। দুইটাই ওয়েস্টার্ণ মুভি। দুইটাই আরেক গুরু ক্লিন্ট ইস্টউডের সেইরকম হিট তিন সিনেমার দুইটা। তিন নম্বরটা হৈল ভালটি, খারাপটি আর কাগু। টিউবেই পাওয়া যায়।

দেখা যাইতেছে যে ইউটিউবে আমি নানান কিসিমের মানুষ আর জিনিস খুঁইজা বেড়াই। যখন যারে ভালো লাগে, জাত বিচার করি না। এক রাইতে দেখি এমি ওয়ানহাইজ নামের এক জেনানা বলিতেছে, উইল ইউ স্টিল লাভ মি টুমোরো? নাউজুবিল্লা বইলা শুনতে বইসা গেলাম। আবার আরেক দিন দেখি, এক লোক সান গ্লাস মাইরা গাইতেছে, প্রেমিকদের জন্য গান, ইংরেজিতে অবশ্যই ;)। এক বিকালে মনে হৈল, আচ্ছা, ড্রিউ ব্যারিমুর কি আগের মতই আছে, নাকি ছেমড়িটা মোটায়া গেল- একটু চেক করি। এক সন্ধ্যাবেলায় এক ক্লাশে গিয়া মেজাজ নারিকেল গাছে চড়লো। ফেরত আইসা দেখি ঐটাও একখান আছে স্ট্যানফোর্ড ইউনির টিউবে। কৈ যাই!

আমার পোলার বয়স শনৈ শনৈ বাড়তেছে। তার কীর্তিকলাপের সিভি বহুত লম্বা, আজকে সেদিকে না যাই। কিন্তু ওর একটা ভিডু আমি টিউবে তুইলা রাখছি, যাতে অফিস থাইক্যা দেখন যায়। কিছুদিন পর দেখি, খালি আমি দেখি না, আরো ক্যাডা ক্যাডা জানি দেখে।

পোলার নাম এমন কিছু রাখি নাই যে ঐ নামে দুনিয়ায় একজনই থাকবো। কিন্তু তারপরো টিউবে সেই নামে যখন সার্চ দিয়া লুকে ভিডু দেখে, দুনিয়াটারে আসলেই বদলাইছে মনে হয়।


মন্তব্য

স্বাধীন এর ছবি

ইউটিউব নিজেও ভালা পাই। সেই দিন খান সাহেবের ফাইনান্স-ব্যাঙ্কিং এর লেকচার শুনলাম ইউটিউবে। পোলাটার মাথা পরিষ্কার আর বুঝায়ও ভাল। একটানা ২০ টা না ২৪ টা লেকচার শুইন্যা ফেললাম। কোন খান দিয়া পাঁচটি ঘন্টা চইল্যা গেল টের পাইলাম না। এই লেখাটাও ভালু পাইলাম।

ফারুক হাসান এর ছবি

খান সাহেবও কামেল আদমি। একদিন তার গ্যাসের মাস আর মোল ফ্র্যাকশন ক্যাল্কুলেশনের ভিডু দেইখা আমার মনে পড়িয়া গেল ওয়েবি'র ২১৬ নম্বর রুমের কথা। সেকেন্ড সেমিস্টারে এক ভাইয়া লেকচারার ঐ রুমে ঐ জিনিস পড়াইছিল।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

এ ফিস্টফুল অফ ডলারস,ফর এ ফিউ ডলারস মোর আর কার্লো ডমেনিকনি শুনলাম।
আপনার সাথে পূর্ণ সহমত। ১ম দুইটা না শুইনা কারোই মৃত্যুবরণ করা উচিত না। কার্লো মনে হইলো ক্লাসিকালের বস।

তিনটা চমৎকার মিউজিকের খোঁজ দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।


love the life you live. live the life you love.

ফারুক হাসান এর ছবি

ইউটিউব আমাদের আসল দুনিয়ার মতই আসল-ভ্যাজালে ভর্তি। শুনলে একটু কষ্ট করে খুঁজে ভালো কোয়ালিটির সাউন্ডট্র্যাক শোনাই ভালো। প্রয়োজনে প্লেলিস্টে যোগ করে নিলেন না হয়! এ ফিস্টফুল অফ ডলারস-য়ের এই ভার্সনটার কোয়ালিটি ভালো।

আর রোমান্স-ডি-আমোরের এই ভার্সনটা- (যদিও এই চৈনিক বালিকা নিজের মত ইম্প্রোভাইজ করে একটো স্লো বাজাইছে- মনে হয় যেন এটা এর ক্ল্যাসিকাল ভার্সনের বলিউডি সংস্করণ ;)। ক্ল্যাসিকাল রোমান্স-ডি-আমোর শুনলে অন্যরকম শোনায়, চাইলে শুনতে পারেন। ইউটিউব এর ভিডুতে ভরপুর)

দুর্দান্ত এর ছবি

ব্রোকব্যাকের এই বাজনা আর ছিনাড়ীগুলা বেশ ঢ়োমান্তিক। চোখে পানি আইসা যাই। এক দুই দশক পরে এই ছবিকেই পোলাপান ওয়েস্টার্ন ছবি হিসাবে দেখবে বলে আমি আশাবাদী।

অতিথি লেখক এর ছবি

বুইজজা ফেলাইসি...জেমস স্টুয়ার্ট এর কথা বলছেন....!!! লেহা ভালো পাইলাম...!!!

tofayel71@gmail.com

অতিথি লেখক এর ছবি

বস ঈদ এর আগের রাতে দিলেন তো মাথাডা পুরা খারাপ করা...কি শুনলাম এইগুলা...!!!A Fistful of Dollars এবং For A Few Dollars More শুনে মনে হচ্ছে আমি এই দুনিয়াতে নাই...!!!

tofayel71@gmail.com

সাঈদ [অতিথি] এর ছবি

তিন নম্বরটা হৈল ভালটি, খারাপটি আর কাগু
হা হা

শিশিরকণা এর ছবি

ইউটিউবে একটা প্লেলিস্ট পাইছি এনিও মরিকোন বসের। মিলিয়নের উপরে ভিউ! ছেড়ে দিয়ে কাজের মধ্যে ডুবে যাও।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

জব্বর পোস্ট!!

অতিথি লেখক এর ছবি

রিচার্ড ফাইন ম্যান। অনেকেই তারে দেখতারে না- ফ্যাট বয় আর লিটল ম্যানের লগে তার খাতির আছিল বইলা।

আসলে হবে ফ্যাট ম্যান আর লিটল বয়। স্লিপ অব কিবোর্ড নিশ্চয়ই।
মরিকন এর গান শুনলাম। শুনে ফিদা হয়ে গেছি বললে মিথ্যে বলা হবে।
যাই হোক, লিখা ভাল লাগল।

সাত্যকি

ফারুক হাসান এর ছবি

মাই মিস্টেক

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এনিও মরিকোনির সাউন্ডট্র্যাকদ্বয় আমার খুব পছন্দের। ঐ মুভি ট্রিলজীও একাধিকবার দেখা হইসে...

আর ইউটিউব আসলেই দারুণ কাজের জিনিস। খেলার হাইলাইটস দেখতে ওইটাই ভরসা।

_________________________________________

সেরিওজা

ওডিন এর ছবি

' ভালটি, খারাপটি আর কাগু' এর সাউণ্ডট্র্যাকটা, দ্য এক্সটেসি অফ গোল্ড, আমার শোনা সেরা সাউন্ডট্র্যাকগুলার মধ্যে একটা!

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

ফারুক হাসান এর ছবি

এই লোকের কাজ সত্যিই অসাধারণ লাগে আমার কাছে।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

লেখাটা ভালু পাইলাম! টিউব আসলেই কাজের জিনিস! দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

কৌস্তুভ এর ছবি

রোয়ানসায়েবের স্ট্যান্ড-আপ তেমন দেখি নাই, আপনার পরামর্শ শুনে দেখতে দেখতে অনেকগুলোই দেখে ফেললাম। একগোছা খাতা দেখতে বসে মেজাজটা বিলা ছিল, ভারতীয় রেস্তঁরামালিককে দেখে প্রচুর হেসে নিলাম। একগোছা থ্যাঙ্কিউ ভাই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ওরে, ইউটিউব দেখার জন্য নেটস্পিড লাগে, সেটা কই পাই?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।