এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কাছে প্রত্যাশা ছিল অন্তত তিনটি জয়। বাংলাদেশ দলকে ধন্যবাদ, আস্থার প্রতিদান দেবার জন্য। যারা দলের দুঃসময়েও পাশে থাকার মত প্রকৃত সমর্থন যুগিয়েছেন তাদের জন্য এই প্রতিদান আরো বিশেষ কিছু।
বলছি পরাজয়ে কষ্ট পাওয়া জনতার কথা। প্রচুর কথাবার্তা হয়েছে আমাদের আবেগময় সমর্থন নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে পরাজয়ের পরও যারা চোখের জল আর মনের হতাশা লুকিয়ে রেখে বলেছেন, জয়-পরাজয় দুয়েই দলের পাশে আছি – তারা আমার কাছে নমস্য। অন্তত ৫৮ রানে অলআউট হবার পর তো অবশ্যই।
কিন্তু আমার মত কেউ কেউ হয়তো এত কঠিন হতে পারি নাই। আজ এই সরল স্বীকারোক্তিতে আমার কোনো লজ্জা নেই। মূলত চেয়েছি মনের ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলতে। প্রিয় সম্ভাবনার খুন হতে দেখতে ভালো লাগে না। তখন সমালোচনা করি। ফেসবুকে, আড্ডায়, কোলাহলে, ফোনে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সমালোচনা করা কঠিন। এই সমালোচনা বলতে আলু-কালু পত্রিকার সমালোচনার কথা বলছি না, এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। বলছি, সাধারণ সমর্থকদের যে সমালোচনা, তার কথা। কিন্তু ঐ যে বললাম, কিছু বাতিল মাল অবস্থা এমন বানিয়েছে যে মনের কথাটুকুও বলা কঠিন, সমালোচনা তো দূরের কথা। দলের পরাজয়ের সমালোচনার পর জয়ের হিল্লোলে অংশ নিতে গেলে দুধের মাছি বলে মেনে নিতে হয় নিজেকে। মনে করার চেষ্টা করি কি কারণে করেছি পরাজয়ের কারণ খুড়াখুড়ি?
কিন্তু দলকে সমর্থন যদি করতে পারি, তাহলে সমালোচনা কেন করতে পারবো না?
সমালোচনা করার সবচেয়ে সঠিক সময় কোনটি? যখন সাফল্য এসে ধরা দেয় তখন? নাকি যখন কোনো কিছুই ঠিক মত কাজ করে না, যখন ব্যর্থতার সময় তখন? নাকি যখন প্রত্যাশার বুদবুদ হঠাৎ করে চুপসে যায়, বড় বেশি অসহায় মনে হয়, তখন?
প্রকৃত সমালোচনা আমরা কেন করি? হিংসায়? ক্ষোভে? বিভ্রান্তিতে? নাকি বিশ্লেষণের আশায়?
তিনটি জয়ের ধারণা আমাদের মত বোধকরি স্বয়ং ক্রিকেট দলেরো ছিল। শুরুতে মনে হয়েছিল যে এই তিনটি জয়ের পরম্পরায় কোয়ার্টার ফাইনাল খেলাটাও নিশ্চিত হয়ে যাবে- বলা যায় একটি বিশেষ পাওয়া, একটা মাইলফলক, টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার এক দশক পূর্তিতেও আশানুরূপ ফল না করার ক্ষতে এক প্রশান্তির প্রলেপ। যদি বলি এই কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সম্ভাবনার দিগন্ত রেখাটাই আমাদের প্রত্যাশার পারদে লাগিয়েছে নতুন মাত্রা, তাহলে কি খুব ভুল বলা হবে?
দলের কথা জানি না, কিন্তু আমরা আমজনতা শুরুতেই মনে মনে টার্গেট করেছি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে, মনে করেছি তারা আমাদের চেয়ে বলশালী নয়, এই মনে করার পেছনে দাড় করিয়েছি তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম, রাংকিং, (হেরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত) মনে হয়েছে তাদেরকে জয় করা সম্ভব (ছিল)। তারো আগে আমরা হেরেছি ভারতের কাছে, শেষ পর্যন্ত লড়াই করে। এই লড়াইয়ের আভাস, ঐ হার না মানা মনোভাবের ঢেউ আমাদের প্রত্যাশার ভেলায় অতিরিক্ত হাওয়া যুগিয়েছে, নিয়ে গেছে বাস্তবতার উপকূল থেকে আরেকটু দূরে। আয়ারল্যান্ডের সাথে জয় দিয়ে আমরা ক্যালিব্রেট করার চেষ্টা করেছি আমাদের প্রত্যাশার স্কেলকে। আয়ারল্যান্ড চমৎকার একটা দল। কিন্তু তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়।
আর তাই কেন এই টুর্নামেন্টে রাকিবুলকে নিয়ে, আশরাফুলকে নিয়ে, মুশফিককে নিয়ে দলের কোনো জমাট পরিকল্পনা ছিল না, কেন নাফিসকে শুরুতে খেলানো হয় নি, অধিনায়ক কেন টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে পত্রিকায় কলাম লিখবেন, বিসিবি কেন খেলোয়াড়দের কোড অফ কন্ডাক্টের মধ্যে রাখবে না, কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে কোনো পরিকল্পনার ছাপ দেখা যায় নি – এরকম অনেক প্রশ্ন, সমালোচনায় আমি নিজেও অংশ নিয়েছি। দল হারলে সমালোচনা করেছি। হয়তো প্রত্যাশার যে পটভূমিতে দাড়িয়ে আমরা সমালোচনা করেছি সেটা আমলে নেই নাই, সমালোচনার বয়ানে সেটা শুরুতেই পরিষ্কার করি নাই। হয়তো সেই অর্থে আমরা প্রকৃত সমালোচক হয়ে উঠতে পারি নাই। আমরা আমাদের মনের ক্ষোভই ঝেড়েছি কেবল।
যারা দলের শ্রেষ্ট অর্জনের বেলায় কিংবা চূড়ান্ত ব্যর্থতার সময়ে – দুই সময়েই দলকে সমালোচনার উর্ধ্বে রেখেছিলেন তারা আদতেই প্রকৃত সমর্থক। যারা বোধবুদ্ধি হারিয়ে দলের দুঃসময়ে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছেন তারা নির্লজ্জ, বেহায়া আর স্বার্থপর। কিন্তু এর বাইরেও যারা দলের দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরতে চেয়েছেন, মনের আশংকাকে ব্যক্ত করেছেন, দলের সমালোচনা করেছেন, ভেবেছেন যে তাদের সেই সমালোচনাটুকু গঠনমূলক, তারা সৎ, তাতে সন্দেহ নেই।
আজ এবং গত শুক্রবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রকৃত-অপ্রকৃত সব সমর্থকের হৃদয়ই আনন্দে ভাসিয়ে দিয়েছে। সকল সমালোচনা সকল অবিশ্বাস দূর করে, সকল বঞ্চনার সকল জঞ্জালের স্তুপ থেকে প্রকৃত বিজয়ীর ন্যায় পুরো দল মাথা তুলে দাড়িয়েছে। ভাবছি, আমরা কোয়ার্টারে যাই বা না যাই, তোমাদের কাছে অনেক পেয়েছি।
আমরা আয়ারল্যান্ড জয় করেছি, নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য পাওয়া জয়ে হর্ষধ্বনি দিয়েছি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষের জয়ে কাঁদতে পেরেছি।
বলেছি, জয়তু! জয়তু বাংলাদেশ দল!
মন্তব্য
জয়তু! জয়তু বাংলাদেশ দল!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
জয়তু বাংলাদেশ দল
সাথে আছি, পাশে আছি...
থাকবো।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সাথে আছি, পাশে আছি - জয়, পরাজয়ে।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
সমালোচনা করার সবচেয়ে ভালো সময় সাফল্য যখন ধরা দিচ্ছে, তখন। জয়রথে ছুটতে থাকা একটা দলের সাফল্যতৃষ্ণাকে জিগীষায় পরিণত করতে- কখনোই তুষ্ট না হবার শিক্ষা দিতে জয়ের পরেই ভুলত্রুটি খুঁজে বের করা উচিৎ।
ভালো লাগলো লেখাটা। অনেক হতাশ, অন্ধকার সময় গেছে একটা সপ্তাহ। কিন্তু তা থেকে আমাদের বাঘেরা যেভাবে বের হয়ে এলো তাতে অবলীলায় আরও অনেক বড় স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছি আমরা। যে দল অমন দুরবস্থা থেকে ফিরে এসে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারে, তারা স্পিনজালে সাউথ আফ্রিকাকে আটকাতে পারবে না? অবশ্যই পারবে! যারা বি গ্রুপ থেকে কোয়ালিফাই করে তারা কোয়ার্টারে নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তানের মতো ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া দলকে হারাতে পারবে না? এভাবেই স্বপ্নগুলো পাখা মেলছে আবার... এবং এর পেছনে পুরো কৃতিত্ব আমাদের দলের। অনেক সমর্থকের (?) মতো আমিও অনেক রাগ করেছি, রাগ ঝেড়েছি। মাঠের খেলা দিয়েই আমাদের ভুল ধরিয়ে দিয়েছে ক্রিকেটাররা।
দলের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে এখনও। সব দলেই থাকে। তবে আমাদের যেই দৃঢ়তা, পারষ্পরিক বিশ্বাস, এবং ঐক্য আছে, তা আর কোনো দলে দেখি না। খাদের মুখ থেকে ফিরে এসেছে দল। নিজেরাই নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নেবে এখন থেকে।
গতকাল বাংলাদেশের কাছ থেকে একটা "প্রোফেশনাল" পারফর্মেন্স দেখলাম মুগ্ধ হয়ে। গ্যালারির জন্য খেলা না, রানরেটের জন্য খেলা না, দুই খেলা পর কী হবে তা নিয়ে চিন্তা না, স্রেফ মনোযোগের সাথে খেলে ম্যাচ জিতে নেওয়া। তামিম দ্রুত আউট হয়ে যাওয়া নিয়েও চিন্তার কিছু নেই। সাউথ আফ্রিকার হুঁশিয়ার হয়ে যাওয়া উচিত... তামিম ধোলাই আসন্ন। তামিমের অনুপস্থিতিতে দলের দায়িত্ব নেওয়ার কাজ অনন্য ভাবে করলো ইমরুল। উইন্ডিজের বিপক্ষে মনে হয়েছিল তামিম-সাকিব বাদে কেউ নিজের অ্যাসাইনমেন্ট জানে না। কী দ্রুত সেই সমস্যা শুধরে নিলো ইমরুল-জুনায়েদ-নাফীস।
এগিয়ে চলো বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে যতদূরই যেতে পারি না কেন, কঠিন গ্রুপে ৩টি খেলা জিতে আমাদের সকল প্রত্যাশা পূরণের জন্য ধন্যবাদ, অভিনন্দন।
আজ ব্যাটসম্যানেরা ওভারঅল ভালো ব্যাটিং করেছে। যথারীতি বোলাররা জয়ের ৯০% কাজ করে দেয়ার পরেও ব্যাটসম্যানরা যে তালগোল পাকায়, তা আজ অনেক কম ছিলো। শাহরিয়ার নাফিসের ব্যাটিং বিশেষভাবে প্রশংসাযোগ্য। এক ম্যাচে সুযোগ পেয়ে সে প্রথমেই মেরে খেলার চেষ্টা করছিলো। সেটা না করতে পারায় উইকেট থ্রো করে নি; বরং নিজের খেলাকে অ্যাডাপ্ট করেছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইংল্যান্ডের সাথে জিতলে আমাদের নকআউট রাউন্ড নিশ্চিত। তবে পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত রানরেটে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। ইংল্যান্ড, ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারের সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং আমাদের সমস্ত মনযোগ সাউথ আফ্রিকা ম্যাচে দেয়া উচিত। স্পিন দিয়ে তাদেরকে আটকানো খুব কঠিন কিছু না। আমাদের ব্যাটিংটা ভালো হলে আশাকরি জিততে পারবো।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মুশকিলটা হল এই, রানরেটের হিসেব কষলে আমাদের অবস্থা কিছুটা বেগতিক। কারণ, তিনটি ম্যাচ জেতার পরও রানরেট পজিটিভ হয়নি, শেষ ম্যাচে হারলে সেটা আরও খারাপ হবে। বাকি দলগুলো এখন বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে, তাই রানরেটের হিসেবে শেষতক আমরা বাদ পড়ে যেতে পারি।
তবে সাকিব স্পষ্ট করেই বলেছেন, বাংলাদেশের ভাগ্য এখন তার নিজের হাতেই। শেষ ম্যাচে জিতলে আর কারো পরোয়া না করলেও চলে। তবে কালকের দ.আফ্রিকা- আয়ারল্যান্ড ম্যাচের পর আমাদের শ্যেন নজর রাখতে হবে উইন্ডিজ-ইংল্যান্ড খেলার ফলাফলের ওপর। উইন্ডিজ জিতলে ওইদনই আমরা বিজয়োল্লাস শুরু করে দিতে পারি। তবে বাস্তবতা বলে, সেটার জন্য অপেক্ষায় না থেকে এখনই প্রোটিয়াস বধের ছক কাটা। ওদের স্পিন অ্যাটাক খারাপ করেনি, কিন্তু আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে স্টেইনের গতি। তবে ব্যাটিং এ স্পিনের বেশ কজন ভাল খেলোয়াড় আছে ওদের, আমাদের বাঁহাতি স্পিনারদের ভালই পরীক্ষা দিতে হবে। ক্যালিস, ডি ভিলিয়ার্স হতে পারে মূল ত্রাস। তবে আজকের ম্যাচের ধারা বজায় থাকলে এটা হলফ করে বলা যায়, ওদের আমরা ছেড়ে কথা বলবনা। ২০০৭ এ যখন ভিনদেশের মাটিতে জিতেছি, তবে এবার নিজ দেশে কেন নয়?
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
রানরেট একেবারেই হিসাবের বাইরে। রানরেট বিচারে আমরা আয়ারল্যান্ডের সাথেও পাল্লা দিতে পারবো না। উইন্ডিজ বাদে আর কোনো দল ৬ পয়েন্টে থাকা সম্ভবও না। অতএব, ইংল্যান্ডের পরাজয় কিংবা সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় ছাড়া কোনো উপায় নেই।
ঠিক। আপনি না থাকাতেই তো আমি শর্ককাট পোস্ট দিয়ে জিতিয়ে আনলাম
যেহেতু দলে আছে, তাই আমি আশরাফুলেরও পাশে আছি
-অতীত
জয়তু! জয়তু বাংলাদেশ দল!
নতুন মন্তব্য করুন