এলএনজি বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ || পর্ব ২ - কাতার বনাম কনোকোফিলিপ্স

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: সোম, ১১/০৭/২০১১ - ৭:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের অন্যতম জ্বালানী সম্পদ। প্রতিদিন উৎপাদিত বিদ্যুতের শতকরা ৭০ ভাগই আসে এই গ্যাস পুড়িয়ে। কিন্তু চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে গ্যাসের জোগান আমরা দিতে পারি না। দৈনিক গ্যাসের ঘাটতির পরিমাণ ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের এই ক্রমবর্ধমান ঘাটতি ও ভবিষ্যত চাহিদা পূরণে সরকার যে সমস্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে, নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, কিংবা নেয়ার কথা বলছে সেগুলো কতটা সমন্বিত, বাস্তবমুখী এবং উপযোগী – সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়। দেশের জ্বালানী অব্যবস্থাপনার সামগ্রিক চিত্রকে না টেনেও কেবলমাত্র সাম্প্রতিককালে নেয়া দুইটি উদ্যোগের দিকে তাকালেই প্রকট সমন্বয়হীনতা সম্পর্কে কিছুটা আঁচ পাওয়া সম্ভব। উদ্যোগ দুটি হচ্ছে – (১) এলএনজি আমদানির উদ্দেশ্যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, এবং (২) কনোকোফিলিপ্সের সাথে করা পিএসসি চুক্তিতে এলএনজি রপ্তানির বিধান।

এলএনজি বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানির ক্ষেত্রে যেটুকু জানা যায় তা হচ্ছে সরকারের লক্ষ্য ২০১২ সালের মধ্যে এ সম্পর্কিত সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। কিন্তু তার মানে এই না যে, আমরা ২০১২ সালেই কাতার থেকে গ্যাস পাওয়া শুরু করবো। প্রক্রিয়া সম্পন্ন বলতে আমার যেটুকু ধারণা সেটা হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে সম্ভবত গ্যাস আমদানি চুক্তি সম্পাদন ও টার্মিনাল স্থাপনকাজ শুরু করতে বিদেশি ইপিসি কোম্পানি নিয়োগ দেয়া। কাতার থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এলএনজি হিসেবে আমদানির লক্ষ্যে কিছুদিন হলো একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে। আর চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি রিসিভিং টার্মিনাল নির্মাণের উদ্দেশ্যে সরকার পরামর্শক (ইপিসি কিংবা নির্মাতা নয়, কেবল পরামর্শক) হিসেবে এক অস্ট্রেলীয় কোম্পানিকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে।

LNG BD
ছবি ১: কাতার থেকে বাংলাদেশঃ এলএনজি'র সম্ভাব্য সাপ্লাই চেইন

অন্যদিকে, কনোকোফিলিপসের সাথে করা পিএসসি চুক্তি এখন একটি মূখ্য আলোচনার বিষয়। যদিও এই চুক্তির সবকিছু সরকার প্রকাশ করেনি কিন্তু ২০০৮ সালে প্রকাশিত মডেল পিএসসি থেকে যেটা ধারণা করা হয় সেটা হচ্ছে, প্রাপ্ত এবং উত্তোলিত গ্যাসের ‘বাড়তি’ পরিমাণ পেট্রোবাংলার অনুমতি সাপেক্ষে (?) কনোকোফিলিপ্স এলএনজি হিসেবে রপ্তানি করতে পারবে। যদিও এলএনজি একটি ব্যয়বহুল প্রযুক্তি কিন্তু আবিস্কৃত গ্যাসের মজুদ কয়েক টিসিএফ পর্যায়ের হলেই সেই ‘বাড়তি’ গ্যাস থেকে এলএনজি উৎপাদন করে মুনাফা অর্জন সম্ভব। এর একটি কারণ হচ্ছে বর্তমান বাজারে এলএনজির মূল্য পাইপলাইন গ্যাসের চাইতে কয়েকগুণ বেশি।

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি এলএনজি রপ্তানি করে কাতার ও ইন্দোনেশিয়া, সবচেয়ে বেশি আমদানি করে জাপান। এলএনজি বাণিজ্য মূলত কয়েকটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং এর ক্রেতা মূলত প্রথম বিশ্বের ধনী দেশ। আমার জানামতে, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে একইসাথে এলএনজি রপ্তানি ও আমদানি টার্মিনাল নেই। অথচ, সরকারের যে গ্যাস নীতি এবং পদক্ষেপ তাতে এখন সেই সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, গ্যাসের দৈন্যন্দিন ঘাটতি মেটাতে প্রায় ২০০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে (যে টাকা আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছে হাত পেতে আনবো) একটি আমদানি টার্মিনাল বসাবো। সেই টার্মিনাল হবে গভীর সমুদ্রে। তার উপর টার্মিনালটি হবে ভাসমান। ৯০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসিয়েই তবে সেই গ্যাসকে চট্টগ্রামে আনা সম্ভব। যে ৯০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হবে সেটি কিন্তু কনোকোফিলিপ্সের অনুসন্ধান ও উৎপাদন করা গ্যাস আনতে নয়। সেটি কাজে লাগবে কেবল কাতার থেকে আসা গ্যাস স্থলভাগে আনতে। সুতরাং কনোকোফিলিপ্সের গ্যাস নিতে হলে আমাদের আরেকটি পাইপলাইন বসাতে হবে কনোকোফিলিপ্সের আবিস্কৃত গ্যাসক্ষেত্র বরাবর।

দ্বিতীয়ত, যেহেতু উত্তোলিত 'বাড়তি' পরিমাণ জমিয়ে রাখা সম্ভব নয়, সেটা তখন তুলে দিতে হবে কনোকোফিলিপ্সের হাতে। গভীর সমুদ্র থেকেই সেই গ্যাস পরে এলএনজি হয়ে বিদেশে রপ্তানি হবে, যার মুনাফা যাবে কনোকোফিলিপ্সের কোষাগারে। এক মিলিয়ন বিটিইউ শক্তির এলএনজির বাজার মূল্য কখনো কখনো ১৪ ডলার বা তারো বেশি। আমরা সেই ১৪ ডলার দিয়ে কাতার থেকে এলএনজি কিনবো। আর আমাদের গ্যাস বিক্রি করে বিদেশি কোম্পানি উল্টো ১৪ ডলার পকেটে ভরবে।

এটা ঠিক যে গভীর সমুদ্রে গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তার উপর না পাওয়ার ঝুঁকি তো আছেই। অন্যদিকে আমাদের গ্যাসের চাহিদা মেটানো জরুরী। সেই দিক হিসেব করলে হয়তো মনে হবে যে এলএনজি আমদানি করাটা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে এলএনজি আমদানি-রপ্তানি একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। একটি এলএনজি সাপ্লাই চেইন তৈরিতে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন। এ কারণে আমদানি-রপ্তানি চুক্তি হয় দীর্ঘমেয়াদি, সাধারণত বিশ-পঁচিশ বছর মেয়াদি। এ ধরণের চুক্তি দেশকে ক্রমাগত আমদানি নির্ভরতার দিকেই ঠেলে দেবে যা থেকে আমরা আর বেরিয়ে আসতে পারবো না। অথচ, এলএনজি টার্মিনাল তৈরিতে যে ২০০০ মিলিয়ন ডলার আমরা খরচ করবো সেই টাকা দিয়ে বাপেক্সকে কি আরো শক্তিশালি করা কি সম্ভব ছিলো না?

গ্যাস নিয়ে এহেন সমন্বয়হীন পদক্ষেপের কারণে আমরা আজকে দুই দিকেই লোকসানে পড়তে যাচ্ছি। গ্যাস কিনতে গিয়ে, গ্যাস তুলতে গিয়ে।

********************************************************************************************

এলএনজির উপর প্রথম পর্বটি লিখেছিলাম এক বছর আগে। আলস্যে আর লেখা হয় নি। মন খারাপ যারা এলএনজির উপর প্রাথমিক ধারণা পেতে চান তাদের পড়তে ভালো লাগবে আশা করি।

পর্ব ১

********************************************************************************************

পাদটীকা


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দারুণ...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারাপ কোয়াস এর ছবি

"বাকির লোভে নগদ পাওনা কে ছাড়ে এ ভুবনে" আমাদের দেশের সব সরকারই মনে হয় এই নীতি অনুসরণ করে।


love the life you live. live the life you love.

অবাঞ্ছিত এর ছবি

আমি যতদূর বুঝছি কাতার থেকে আমদানীর পাইপলাইন না বসিয়ে এল.এন.জি স্টোরেজ বানালেই এই সমস্যা হতো না...

কিন্তু সেক্ষেত্রে সাগরে গ্যাস পাওয়া যদি না যায় তখন ঠিক কি হবে বা কি করণীয় হতে পারে?

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

ফারুক হাসান এর ছবি

১.
আপনার পয়েন্টটা ঠিক ধরতে পারি নাই। আপনি কি রিসিভিং টার্মিনাল সংবর্তী অফশোর স্টোরেজের কথা বলছেন? নাকি চট্টগ্রামে অনশোর স্টোরেজ? যাই হোক, গ্যাসের যেমন স্টোরেজ বা সংরক্ষণ একটি সমস্যা তার বিপুল আয়তনের জন্য, তেমনিভাবে এলএনজি স্টোরেজও একটি সমস্যা হতে পারে এর অতি নিম্ন তাপমাত্রার জন্য (মাইনাস ১৬৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড)। গভীর সমুদ্রে ভাসমান রিসিভিং টারমিনাল বানালে সেখান থেকে এলএনজিকে আগে গ্যাসে রূপান্তর করে তারপর পাইপলাইন দিয়েই আনতে হবে। যদি এলএনজি হিসেবেই চট্টগ্রামে আনতে চান তাহলে সেই পাইপলাইন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক হবে না, কারণ তার ইনসুলেশন খরচ হবে মারাত্মক রকমের বেশি।

সুতরাং গভীর সমুদ্রে টারমিনাল বসিয়ে তারপর অনশোর এলএনজি স্টোরেজ করা ফিজিবল অপশন না।

২.
সাগরে যদি গ্যাস পাওয়াও যায় সেই গ্যাস গ্রীডে আসতে ৫/৭ বছর লাগবে। অন্যান্য উৎস বাদ দিয়ে একেবারে এলএনজির মত একটি ব্যয়বহুল শক্তির দিকে ঝুঁকে পড়াটা বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

আমি আসলে বোঝার চেষ্টা করছিলাম কি পদক্ষেপ নেওয়া যুক্তিসঙ্গত ও ফিজিবল? কাতার থেকে এল.এন.জি ট্রান্সপোর্টেশন পাইপলাইন তৈরি করাটা ব্যায়বহুল হবে.. আবার সেই আমদানীকৃত গ্যাসও স্টোর করতে হবে.. এদিকে কনকোফিলিপসের উত্পাদিত গ্যাস দেশে স্টোর করা যাচ্ছে না বলে বিদেশে চলে যাবার ভয়..

আমার পয়েন্টটা ছিলো যে কনকোফিলিপস যে গ্যাস তুলবে, সেটার প্রাথমিক দাবি যখন বাংলাদেশের, যে "বাড়তি" গ্যাস বিদেশে চলে যাবে বলে ভয়, সেটা দেশেই স্টোরেজ বানিয়ে স্টোর করলে কি কাতারকে বাইপাস করা যেতো না? সেক্ষেত্রে তো আমার মনে হচ্ছে কনকোফিলিপসের সাথে চুক্তিও এতটা বিতর্কীত থাকতো না?

আমি যতদূর বুঝি অফশোর ড্রিলিংও খুব একটা কম খরচ সাপেক্ষ নয়.. বিশেষ করে যেখানে কিছুই না পাওয়ার একটা ঝুঁকি আছে.. সাথে সেইফটি একটা বড় ফ্যাক্টর.. বি.পি.কে দেখলে বোঝা যায় অনেক বছরের অভিজ্ঞতাও এইসব ক্ষেত্রে সবসময় এনাফ না.. এমন কোনো ব্লান্ডার হয়ে গেলে সেটা সামলানোর মতন লোকবল প্রযুক্তি আর সবচেয়ে আগে অর্থবল থাকতে হবে.. সেই ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে নাকি আমার জানা নাই.. তর্ক করা যেতে পারে "এগুলা কেনো নাই?" সেই উত্তরও আমার জানা নাই.. বাংলাদেশে রাজনীতি আর প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে, প্রফেশনালদের ট্রেনিংএর কি ব্যবস্থা আছে/নাই, বরাদ্দকৃত টাকা কোথায় যায় কিভাবে যায় এইসব আমার জানা নাই..... যতদূর শুনলাম ট্রেনিংএর জন্য নাকি কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ... টাকার যে পরিমান শুনলাম এখানে তা দিয়ে হয়তো শ'খানেক দক্ষ প্রকৌশলিকে ট্রেনিং দেওয়া যেত.. কিন্তু সেই ট্রেনিং অ্যাপ্লাই করার সুযোগ কতটা আছে দেশে তা আমার জানা নাই.. অ্যাপ্লাই না করতে পারলে আমি যতদূর বুঝি ট্রেনিংএর সুফল বেশিদিন থাকে না..

আরেকটা বড় ব্যাপার হলো অভিজ্ঞতা.. কনকো ব্যবসা শুরু করেছে ১৮৭৫ এ আর ফিলিপস ১৯০৫ এ... আর বাংলাদেশে পি.এস.সি নামক বস্তুটার বয়স দেখছি দুই দশক মতন.. সেদিক থেকে দেখতে গেলে দেশে যে যথেষ্ট দক্ষ জনবল নেই তা আমাকে অবাক করে না.. সেক্ষেত্রে কনকোফিলিপসের তোলা গ্যাস দেশে স্টোর করে দেশের কাজে লাগানো আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছে..

আচ্ছা, এল.এন.জি কে বিদ্যুত হিসেবে গ্রিডে দিতে যে জেনারেশন প্ল্যান্ট দরকার তা কি বাংলাদেশে আছে?

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

ফারুক হাসান এর ছবি

আপনার প্রথম পয়েন্টটির ব্যাপারে মনে হয় বিস্তারিত লেখার অবকাশ আছে, যেহেতু এর আগেও আমাকে অনেকেই এই প্রশ্নটি করেছেন। প্রথম কথা, গ্যাস আমদানির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে কম খরচের মাধ্যম হচ্ছে পাইপলাইন। কিন্তু কাতার থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আনা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কোনোভাবেই আকর্ষণীয় নয়। প্রথমত, কাতার থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব অনেক বেশি। যে পরিমাণ গ্যাস আমদানি করবো তার বিপরীতে এত দীর্ঘ পাইপলাইন বসাতে বিপুল খরচ পড়বে। দ্বিতীয়ত, সেই পাইপলাইন বসাতে হবে আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারত ভূখন্ডের উপর দিয়ে। রাজনৈতিকভাবে সেটা করা এবং সেই পাইপলাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি কল্পনাবিলাস ছাড়া আর কিছুই নয়। তৃতীয়ত, গ্যাস পরিবহনের জন্য অসংখ্য কম্প্রেসর লাগবে, যার কারণে অপারেটিং কস্টও হবে অত্যধিক।

তাহলে উপায় কি? পাইপলাইনেই গ্যাস আনার নিয়ত থাকলে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আনা ছাড়া গতি নেই। আর যদি নিয়ত হয় কাতার থেকেই গ্যাস আনতে হবে, তাহলে এ মুহূর্তে একমাত্র উপায় হচ্ছে এলএনজি করে আনা।

দ্বিতীয়ত, গ্যাসের স্টোরেজ একটি কঠিন সমস্যা। এর প্রধান কারণ গ্যাসের আয়তন। প্রাকৃতিক গ্যাসকে গ্যাস হিসেবে স্টোর করতে হলে সেটার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে যেখানকার গ্যাস সেখানেই রাখা, মানে উত্তোলন না কর খনিতেই রেখে দেয়া। একবার উত্তোলন করলে হয় সে গ্যাসকে সাথে সাথে পাইপলাইনে ছেড়ে দিতে হবে না হয় কম্প্রেস করে কিংবা তরল (এলএনজি) করে ট্যাংকে ভরে ফেলতে হবে। কম্প্রেস করা অত্যন্ত খরুচে ব্যাপার এবং সেফটি একটি প্রধান ইস্যু। যে বিপুল পরিমাণ গ্যাস উত্তোলিত হয় তাকে কম্প্রেস করে ট্যাংকে রাখার জন্য যে ট্যাংক বানাতে হবে সেটিও ফিজিবল হবে না। অন্যদিকে, এলএনজি করে যদিও সাধারণ চাপে ট্যাংকে সংরক্ষণ করা যায়, তবু সেটা বেশিদিন করা সম্ভব নয়। কারণ, গ্যাসকে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত ঠান্ডা করলেই সে কেবল তরল থাকে। এত কম তাপমাত্রায় সারাক্ষণ রেফ্রিজারেশন করাও ফিজিবল না।

তাই গ্যাসকে উত্তোলিত করা হয়ে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে ব্যবহার করার জন্য পাইপলাইনে দিয়ে দেয়া হয়। পাইপলাইনে পরিবহন না সম্ভব হলে তাকে কম্প্রেস করে কিংবা তরল করে ট্যাংকারের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়।

সুতরাং একবার উত্তোলিত হলে সেই 'বাড়তি' গ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের তেমন সহজ কোনো প্রযুক্তি না থাকায়, আমাদেরকে সেটা হয় গ্রহন করতে হবে, বিক্রি করতে হবে, না হয় অন্যের হাতে তুলে দিতে হবে। চয়েস ইস আওয়ার্স। এই অবস্থায়, শ্রেষ্ঠ পন্থা হচ্ছে কেবলমাত্র চাহিদা অনুযায়ী খনি থেকে গ্যাস তোলা, তার বেশি নয়।

তৃতীয়ত, আপনি যে অভিজ্ঞতার প্রশ্নটি তুলেছেন সে ব্যাপারে আমার কথা হচ্ছে, আপনি মালেয়শিয়ার দিকে তাকান। তেলগ্যাস সেক্টরে তাদের অভিজ্ঞতা বিপি'র মত না হলেও তারা আজ সফল। পেট্রোনাসের মত জায়ান্ট কোম্পানি তারা দাড় করে ফেলেছে। আসলে, ইচ্ছে থাকলে সবই হয়।

আপনার শেষ পয়েন্ট। এলএনজি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাংলাদেশের জন্য কোনো সমস্যা না। কারণ, এলএনজি তো প্রাকৃতিক গ্যাসেরই তরল রূপ। রিসিভিং টার্মিনালেই তাকে সাগরের পানির তাপের সংস্পর্শে এনে গ্যাসে পরিণত করে ফেলা হবে। তারপর সেই গ্যাস আমাদের গ্যাস গ্রীডে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সুতরাং পাওয়ার প্লান্টের এলএনজিকে গ্যাস হিসেবেই পাবে।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরেছেন... আপনার সাথে একমত.. কাতার থেকে গ্যাস আনার কোনো দরকার নাই দেশেই গ্যাস থাকতে..

তবে একটা ব্যাপারে আমার দ্বিমত আছে - "আসলে, ইচ্ছে থাকলে সবই হয়।" ব্যাপারটা আসলে সব ক্ষেত্রে খাটে না.. যেমন (কেবল উদাহরণ মাত্র) গ্যাস স্টোর করে রাখার ইচ্ছা থাকলেও উপায় হচ্ছেনা, তাইনা?

শেষ পয়েন্টটা ঠিক পয়েন্ট ছিলোনা, প্রশ্ন ছিলো.. আমাদের দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি বর্তমানে কত মেগাওয়াট (নাকি গিগাওয়াট)? এই "বাড়তি গ্যাস" স্টোর বা রপ্তানী না করে বিদ্যুত উত্পাদন প্ল্যান্ট বানিয়ে দেশের বর্তমান বিদ্যুত চাহিদা মেটালে কেমন হয়? যা বুঝলাম কো-জেনারেশন প্ল্যান্ট টাইপের জিনিস অলরেডি দেশে আছে.. সেহেতু সেই খাতে দক্ষ জনশক্তিও আছে ঠিক? তাহলে সেদিকে যাওয়া হচ্ছেনা কেন?

সব শেষে পেট্রোনাস খুবই ভালো উদাহরণ... তবে পেট্রোনাসের উদ্ভব, গণতান্ত্রিকতা আর ইতিহাস নিয়ে আমার তেমন ধারণা নেই... তবে যতদূর জানি মালয়েশিয়ার কনকোফিলিপসের বেশ বড়সড় অপারেশন আছে। এখানে ওদের পি.এস.সি এর উদাহরণও আছে.. আমাদের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে মিল আর অমিল কতটা.. কেবল তাহলেই একমাত্র সঠিক তুলনা করা যাবে।

মালয়েশিয়াতে কিন্তু এক্সনমবিল, শেল সহ আরো অনেক "বিদেশী" কোম্পানী আছে এদের সাথে পেট্রোনাসের সম্পর্ক কি, কিভাবে পেট্রোনাস আজকের পর্যায়ে আসলো, সেখানে এদের কি ভূমিকা ছিলো এগুলো জানাও বোধহয় জরুরী। আমি যতটুকু বুঝলাম পেট্রোনাসের শুরু হয়েছিলো গ্যাস বিদেশে রপ্তানী দিয়ে.. আর যা বুঝলাম মালয়েশিয়ার ইন-হাউস অফশোর ড্রিলিং ক্যাপাবিলিটি আছে.. সেগুলোর শুরু কিভাবে হলো, টাকা কিভাবে আসলো, অভিজ্ঞতা কিভাবে আসলো,

এখানে মালয়েশিয়াতে শেলের অবস্থান ও ইতিহাসের ছোট একটু বর্ণনা আছে আমার কাছে মনে হয় এগুলোও গুরুত্বপূর্ণ । একটু তুলে দেওয়ার লোভ একেবারেই সামলাতে পারছি না -

"A series of firsts

Malaysia's first oil well was discovered by Shell on Canada Hill in Miri, Sarawak in 1910. Shell's Miri No. 1 was spudded on 10 August that year, and began producing 83 barrels per day in December. Today, the oil well, fondly known as the Grand Old Lady, is a state monument.

After the discovery of oil in Miri, Shell built Malaysia's first oil refinery in 1914. In the same year, Shell laid a submarine pipeline in Miri, a breakthrough in the technology of transporting crude to tankers at that time.

In 1960, Orient Explorer, the first mobile drilling rig ever used in Malaysia, arrived in Sarawak waters and began to explore off Baram Point. This eventually led to the discovery of Sarawak's first offshore field, Baram, in 1963.

The discovery of substantial reserves of natural gas offshore Sarawak in the 1960s represented a turning point for Shell. A natural gas liquefaction venture was formed, Malaysia LNG (Liquified Natural Gas) in Bintulu. "

উল্লেখ্য, পেট্রোনাসের জন্ম ১৯৭৪ এ... আমার নিছক নাইভ কমন সেন্স কেনো যেনো বলছে পেট্রোনাসের উন্নতির জন্য যে ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার আর "নো(know) হাউ" দরকার ছিলো, সেগুলো মালয়েশিয়াতে অলরেডি এক্সিসটিং ছিলো.. যে সুবিধা আমি যতদূর বুঝি আমাদের দেশে নেই।

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

ফারুক হাসান এর ছবি

১।
প্রযুক্তিগত বাধা থাকতেই পারে কিন্তু এর মধ্যেও দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করার সদিচ্ছা থাকলে তা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ও দূরদর্শী পরিকল্পনার গুরুত্ব অনেক। বিপি, কনোকোফিলিপ্স কিংবা পেট্রোনাস - এদের কেউই প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা একদিনে লাভ করে নি। আমাদেরো সেই সুযোগ ছিলো। কানাডার আলবার্টাতে যে অয়েল স্যান্ডস পাওয়া যায় সেখান থেকে পেট্রোলিয়াম প্রডাক্টস বের করে আনার জন্য কানাডার সরকার কিন্তু কোনো বৈদেশিক কোম্পানিকে হাতে পায়ে ধরে নিয়ে আসে নি। এ সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত বাধা দূর করতে নিজেরাই পুরোদমে গবষণা থেকে শুরু করে ইন্সটিটিউট পর্যন্ত দাড় করিয়ে ফেলেছে। সময় লেগছে, কিন্তু এক সময় সফলও হয়েছে। আমাদের হাতেও সময়, সুযোগ, প্রতিভা ছিলো এবং এখনো আছে। কিন্তু আমরা এদের মধ্যে কখনো সমন্বয় করতে পারি নাই তেমনভাবে। সে রকম ইচ্ছে থাকলে বাংলাদশের ভূগর্ভস্থ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাপেক্সের তো এতদিনে আর কারো সাহায্যেরই প্রয়োজন হবার কথা না। কিন্তু নিচে বাকী বিল্লাহই তো কমেন্টে বলেছেন, অনুসন্ধানকৃত গ্যাস উত্তোলনের জন্য বাপেক্সকে সাইড লাইনে বসিয়ে ভাড়া করা হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানী। এত বছর ধরে বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে, এখনো বাপেক্সের উপর কর্তাদের ভরসা নাই?

২।
গত বছরের হিসেবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল প্রতিদিন ৬০০ থেকে ১২০০ মেগাওয়াট। এখন সম্ভবত আরো বেড়েছে। কিন্তু ঘাটতি মেটানোর প্রশ্নে "বাড়তি গ্যাস" আনলে প্রশ্ন হচ্ছে সেই বাড়তি গ্যাসের পরিমাণ কত হবে। বর্তমানে গ্যাসের ঘাটতি প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। "বাড়তি গ্যাস" তার চেয়ে বেশি হলে কিন্তু সেই গ্যাস গ্রহন করাটা সমস্যা। তখন গ্যাসের অন্য ব্যবহার খুঁজতে হবে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পাওয়ার প্লান্ট বাংলাদেশে অপ্রতুল। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রপ্তানির ক্ষেত্রে আবার অবকাঠামো একটা সমস্যা। শিল্পোন্নত দেশ হলে হয়তো নানান শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যেতো, কিন্তু আমাদের সেই ব্যবস্থা নেই। আর সংরক্ষণের কথা তো আগেই বলেছি।

৩।
আমরা সাগরে কতটুকু গ্যাস পাবো সেটাই নিশ্চিত নয়। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে বড় ধরণের রিজার্ভ আবিস্কৃত হলে কোম্পানির লক্ষ্য থাকবে বেশি করে গ্যাস উত্তোলন করা যাতে "বাড়তি গ্যাস"য়ের পরিমাণ বেশি হয়। যেহেতু বাংলাদেশের সেই পরিমাণ গ্যাস গ্রহন করার অবকাঠামো, প্রযুক্তি এবং প্রয়োজন নেই, সেহেতু সেটা তখন তুলে দিতে কোম্পানির হাতেই। পিএসসি২০০৮য়ের এটা একটা বড় সমস্যা।

৪।
টেকনোলজিক্যাল নো হাউ কিংবা ইনফ্রাস্ট্রাকচার - এদেরকে প্রিরিকুইজিট না ধরে বরং পাশাপাশি ভাবলেই কিন্তু উন্নতি সম্ভব। আমাদের অবকাঠামো না থাকতে পারে। কিন্তু কোথায়ো না কোথায়ো তো শুরু করতে হবে। আর এর জন্যই প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা যাতে নিজের পায়ে একসময় দাঁড়ানো যায়।

সচল জাহিদ এর ছবি

এখনি কোন মন্তব্য নয়, পড়ছি। প্রথম পর্বের মত লম্বা চা বিরতিতে যাওয়া যাবেনা।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

guest_writer এর ছবি

দারুণ হয়েছে লেখাটি। আগে আমার কাছে ব্যাপারটা অনেক গোজামিল লাগত। এখন বেশ পরিস্কার মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ ফারুক!

চন্দ্র কথা

নৈষাদ এর ছবি

ফারুক, এলএনজি নিয়ে আপনার প্রথম পর্ব, এই লেখাটা এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। পড়া হয়েছে আগেই, ইচ্ছাকৃত ভাবে মন্তব্য করা হয়নি। এলএনজি নিয়ে আপনার লেখার সূত্র ধরেই আরও কিছু পড়া হয়েছে।

মূল্যের বিবেচনায় এলএনজি গ্যাস আমদানীর সিদ্ধান্ত আপাত অদ্ভুতই মনে হয়েছে। তবে আমার মনে হয়েছে সরকার এটা করেছে ‘ডায়ার ডেসপারেসনে’। একটা জিনিস বুঝতে হবে, বাংলাদেশে এই মূহূর্তে গ্যাস সংকট চলছে, এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়বে যদি না আমরা কোন বিকল্প ব্যবস্থা/নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার না করি।

গ্যাসের সংকট যেটা সরাসরি আমাদের জিডিপির উপর প্রভাব ফেলছে, সেটা সমাধান তো সরকারকে করতে হবে। আপনি হয়ত পড়ে থাকবেন, একসময় সরকার মায়ানমার থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আনার প্রস্তাব বিবেচনা করেছিল, কিন্তু সেটা ফলপ্রসু হয়নি। এমনকি কনোকো যদি গ্যাস আবিষ্কারও করে তবুও জাতীয় গ্রিডে আসতে ৬/৭ বছর ন্যূনতম। হয়ত বিকল্প হিসাবে এই ব্যবস্থা। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা কনফিউজড (ডিপ-সিতে যেখানে সর্বোচ্চ হয়ত ৪/২০ থেকে ৪/৫০ ডলার প্রতি ইউনিট খরচ হতে পারে, সেখানে আমদানীতে পরবে ১২-১৪ ডলার) তবে সরকার নিশ্চয়ই ফিজিবিলিটি স্টাডি-ফাডি করেছে।

কনোকোফিলিপসের ব্যাপারে ‘বাড়তি’ গ্যাস এখনও কল্পনা। দেখা যাক কী হয়। সরকার খুব তাড়াতাড়িই ব্যাপক আকারে চতুর্থ রাউন্ড বিডিং শুরু করছে (সমুদ্র এবং স্থলভাগে)। আমি ‘বেশ কিছু জিনিস দেখার’ অপেক্ষায় রইলাম।

মালয়েশিয়ার পেট্রোনাসের কথা বলেছেন। সিঙ্গাপুরও ওয়েল এন্ড গ্যাস এক্টিভিটির ‘হাব’ হিসাবে অতুলনীয় (একজন ইয়োরোপিয়ান আইওসির ইয়োরোপিয়ান সিইওর ভাষ্য আনুসারে সিঙ্গাপুর ইয়োরোপ থেকে অনেক এগিয়ে।) আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ইস্ট/ফার-ইস্টের দেশগুলির সাথে আমাদের তুলনা করিনা। আমাদের তুলনা করতে হবে এই সাব-কন্টিনেন্ট (ভারতে ওএনজিসি) কিংবা ইয়োরোপের সাথে। মনে রাখতে হবে মালয়েশিয়া/সিঙ্গাপুর কিংবাএসব দেশের সরকার/রাষ্ট্রব্যবস্থা পুরো কিংবা সাম ফর্ম অভ বেনিভোলেন্ট ডিক্টেটরশীপ। আমাদের সরকার/রাষ্ট্রব্যবস্থা ভিন্ন।

ফারুক হাসান এর ছবি

আপনার মতামত জানার ইচ্ছে ছিলো।

এলএনজি আমদানির ব্যাপারটা আমার কাছেও মনে হয়েছে একটা ডেস্পারেট পয়েন্ট থেকে নেয়া সিদ্ধান্ত। ভাবতে অবাক লাগে একসময় অনেক জ্ঞানীগুণী লোক বলতেন, বাংলাদেশ গ্যাসের উপর ভাসছে। অথচ, এখন দেখুন কি অবস্থা। এতটা অদূরদর্শীতা কীভাবে সম্ভব?

এলএনজি আমরা কবে পাবো সেটাও বড় প্রশ্ন। আমার তো মনে হয় না ২০১৩র আগে পাওয়া যাবে। সেই সময়ে বা তার পরে আমাদের গ্যাসের চাহিদা কেমন হবে সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এলএনজি চুক্তিগুলো এমন যে একবার করে ফেললে আপনি চাইলেই সহজে তা পরিবর্তন করতে পারবেন না। প্রথমত, এলএনজি অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রযুক্তি বলে আমদানিকারক দেশ তার বিনিয়োগের নিশ্চয়তা বিধানে চুক্তি করবে দীর্ঘমেয়াদি। সবচেয়ে খারাপ সিনারিও হচ্ছে, দেশে বড় ধরনের গ্যাস রিজার্ভ পাওয়া গেলেও চুক্তির কারণে অতিরিক্ত ডলার গুণে বছরের পর বছর সেই এলএনজি গিলতে হবে। আবার যদি উল্টোটা ঘটে, মানে যদি আমাদের গ্যাসের চাহিদা আরো বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রেও আমরা পরবর্তীতে খুব বেশি এলএনজি আমদানি করতে পারবো না। এর কারণ, রপ্তানিকারকের সীমাবদ্ধতা ও কমিটমেন্ট। এর সাথে যোগ হবে দেশের এলএনজি রিসিভিং টারমিনালের সম্প্রসারণজনিত বাধা। চাইলেই সেটা সম্ভব না। বিশেষ করে, গভীর সমুদ্রে।

নৈষাদ এর ছবি

আপনার এই লেখা থেকে আরেকটা অস্বস্তিকর জিনিস জানতে পারছি, এবং তা হল এলএনজি আমদানীর চুক্তি সাধারনত দীর্ঘস্থায়ী হয়। এবং ফলাফলের আভাস আপনি দিয়েছেন। ফাইনান্স করছে আবার ওয়ার্লব্যাংক, নিশ্চিত ভাবেই শর্তযুক্ত সাহায্য। আরেক ফাঁদে পরে কিনা কে জানে!!!

বাকী বিল্লাহ এর ছবি

স্থলভাগের বর্তমান মজুদ ও সম্ভাব্য মজুদ গ্যাস দিয়ে সামনের সংকট মোকাবেলার বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করাই যুক্তিযুক্ত ছিল। সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্রে ভাল একটা মজুদ আবিস্কৃত হয়েছে, যার অনুসন্ধান হয়েছে বাপেক্সের হাতে। কিন্তু দূর্ভাগ্য হচ্ছে সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্রটি থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য পিএসিস'র আওতায় বহুজাতিককে যুক্ত করা হচ্ছে। একটি প্রস্তুত গ্যাসক্ষেত্র থেকে বিনিয়োগ করে মুনাফা তুলে নেবে তারা। আর নিজেদের পয়সা বিনিয়োগ না হওয়ার কারণে আখেরে বড় ধরণের আর্থিক খেসারত দিতে হবে আমাদের। পরিকল্পনায় ঘাপলাবাজি না থাকলে আসন্ন সংকট সহজেই সমাধান করা যেত। স্থলভাগে আমাদের আরো বেশকিছু দারুণ সম্ভাবনাময় ব্লকে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শুরু করা যায় নাই, তার জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থকড়ির সরবরাহ বাপেক্সের জন্য নিশ্চিত করা দরকার।

নৈষাদ এর ছবি

স্বীকার করি এলএনজি আমদানীর পরিকল্পনা অসলে খুবই উচ্চাভিলাশী (বানান!)। তবে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের কোন বিকল্প নেই।

সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্রের ব্যাপারটা জানতে চাচ্ছি, কোথাও নিশ্চিত কোন খবর পাচ্ছি না (পেট্রোবাংলা/বাপেক্সের ওয়েবে কিছুই নেই)। গত বছরের আগস্ট/সেপ্টেম্বরের দিকে সাইজমিক সার্ভেতে সম্ভাব্য ৩ টিসিএফের একটা স্ট্রাকচারের সম্ভবনার কথা জেনেছিলাম। তারপর কী হল? এক্সপ্লোরেটরি ড্রিলিং কিংবা এপ্রাইজাল ড্রিলিং এর কোন খবর পাচ্ছি না। ২ডি সাইজমিকের স্ট্রাকচারের অস্তিত্ব কিন্তু আসল রিজার্ভের নিশ্চয়তা দেয় না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।