ঝুঁকি নেয়া শিখতে হবে

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: শুক্র, ২৫/১১/২০১১ - ১২:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কারণ, not taking a risk now can be the most risky decision you have ever made.

প্রিন্সটনে এসে শুরু থেকেই শেখার কোনো সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। নিয়মিত ল্যাবের কাজের বাইরে নানান সেমিনার আর কর্মশালায় হাজির হতে চেষ্টা করি। পিএইচডি এবং পোস্টডকদের জন্য আয়োজিত সেরকমই একটা কর্মশালায় গিয়ে উপরের ঐ কথাটি শুনে একটু চমকে উঠলাম। এভাবে ভাবা হয়নি কখনো।

গুরুজনেরা সত্যই বলেন, ফাঁকিবাজির কোনো বেইল নাই। যেটা পরীক্ষাপাশের জন্য দরকার হয়নি, সেটা বাস্তবতার ঠ্যাকায় পড়ে ঠিকই জীবনের কোনো না কোনো সময় অনেক পোড় খেয়ে শিখতে হয়, হচ্ছে কিংবা হবে। তাই এখন যতটুকু পারা যায় ফাকিবাজি কম করতে চেষ্টা করি। তবে এই আপ্তবাক্য আক্ষরিক অর্থে নিলে আবার সমস্যা। তাহলে কেবল কলুর বলদের মত খাটতে হয়। সবাই কি কেবল এক পা এক পা করে হেটেই হিমালয় জয় করে? দেয়ার মাস্ট বি সাম ইন্টেলিজেন্ট ওয়ে আউট।

তবে তার জন্য চাই সাহস। ঝুঁকি নেবার জন্য যতটুকু সাহস প্রয়োজন ততটুকু, কিংবা তার চেয়েও বেশি।

এইসব কথা সবাই জানেন। আমিও জানতাম। কিন্তু নতুন করে যেটা জানলাম সেটা হচ্ছে, গোটা বিশ্ব জুড়ে যে মহামন্দার ঢেউ লেগেছে তার ফলে এখন কেউই আর নিরাপদ নয়। এমন কঠিন সময়ে ঝুঁকি নেয়াটা শুধু সাহসের ব্যাপার না, আরো অনেক কিছু। এখন ঝুঁকিই জীবন, টিকে থাকতে হলে।

ভাগ্য ভালো যে পিএইচডি করেছিলাম। এখন নাকি ফিনান্সিয়াল কোম্পানিগুলো এমবিএ খেদিয়ে পিএইচডি ঢোকাচ্ছে নিয়মিত, অন্তত নিজের চোখে গত তিন মাসে যা দেখলাম তাতে ব্যাপারটা সত্যি বলেই মনে হলো। সেদিন মাত্রই বায়োইনফরমেটিক্সের উপর পিএইচডি পেয়েছে এমন এক ছেলেকে জিঙ্গাসা করলাম, তো চাকরি করতে যাচ্ছো কোথায়? বলে, একটা মিডিওকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি ওফার ছিল, কিন্তু যাচ্ছি ওয়াল স্ট্রিট। আমার মুখ হা হয়ে গেছে দেখে সে হেসে বললো, মজার ব্যাপার কি জানো, আমার চাকরিটা আসলে আগে এমবিএ’র লোকজন করতো। কিন্তু কোম্পানির কর্তারা গত দুই বছরে ধরা খেতে খেতে বুঝে গেছে যে চুলে জেল মেখে যারা অফিস করতে আসে তাদের দিয়ে এই মহাপ্লাবন থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা সাধারণতো জটিল সমস্যা সমাধানে বেশ পটু হয়, অন্তত তারা জানে কিভাবে এগুতে হবে, সেই প্রশিক্ষণ তাদের থাকে -তো এইসব ভেবে ঝুঁকিটা নিয়েই ফেললাম।

এরকম উদাহরণ অনেক। মোদ্দা কথা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই এখন আর গতানুগতিক ব্যাপারস্যাপারগুলো টিকে থাকছে না। ডাক্তারি পাশ দিয়ে অনেকে ব্যবসায় নামছেন, পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে অনেকে খাবারের দোকান খুলছেন, আবার অনেকে পুরোদস্তুর পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা করছেন যদিও গ্রাজুয়েশন করেছিলেন সাহিত্যে। বিষ্ময়কর হলেও সত্যি।

মানুষ এখন নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়, পারে, কিংবা বাধ্য হয়। একটা চাকুরিই তো আর জীবনের সব কিছু নয়।

চাকুরি পেতেও ঝুঁকি নিয়ে মাঝবয়সে নিত্যনতুন জিনিস শিখতে হচ্ছে অনেককেই। দুনিয়া পাল্টাচ্ছে দ্রুত। এক সময় হয়তো নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করা বিলাসিতার পর্যায়েই পড়তো, কিন্তু এখন সেটাই হতে পারে টিকে থাকার অন্যতম অবলম্বন।

আমার ঝুঁকি নেয়ার ব্যাপারটা আলাদা।

সারাজীবন স্বপ্ন দেখেছি নিজে কিছু করবো, যা শিখেছি তা দিয়ে নিজেই নিজের ভবিষ্যত গড়বো। নিজের হাতে একটা প্লান্ট বানাবো, নিজের পরিকল্পনা, নিজের ডিজাইন, নিজের লোক, নিজের কাজ, দেশের কাঁচামাল, দেশের লাভ, নিজের স্বাবলম্বন। কিন্তু বাস্তবতা আমাকে বুঝিয়েছে, আরে সেটা মস্ত বড় বোকামি, বড় বেশি ঝুঁকি, এতে কোনো লাভ নেই। এর চেয়ে এই বেশ ভালো আছি, প্রফেসরের মন জয় করতে পারলে চাকরিটা আরো কিছুদিন টিকিয়ে রাখা যাবে। তারপর একটা তেল কোম্পানিতে ঢুকতে পারলেই নিশ্চিন্ত। নিজের শিল্পকারখানা, নিজের দেশ, এইসব আসলে ভ্রান্ত ধারণা।

কিন্তু ঐ কর্মশালায় বসে আমি হঠাৎ করে যেন নতুন এক জগত আবিষ্কার করলাম। এতদিন যে জুজুর ভয় আমি পেয়ে এসেছি সেই আসলে ত্রাণকর্তা, আর এতদিন যাকে আমি নিশ্চিন্ত মনে পায়ের নিচের শক্ত মাটি বলে জেনে এসেছি সেই আসলে খাদের কিনারা।

আরো বুঝলাম, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্যিকারের সার্থকতা কেবল পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান বিতরণে নয়, মানুষ যে মন দিয়ে চিন্তা করতে শেখে, যে চোখ দিয়ে নতুন আলোর সন্ধান লাভ করে সেই মনের, সেই চোখের দুয়ার খুলে দেয় বলেই না কোনো কোনো বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠে।

আমার নিজের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা মনে পড়ে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে এমনভাবে গড়ে তুলেছে যে আমরা সহজে ঝুঁকি নিতে চাই না। আমরা পাঠ্যবই থেকে দাগানো অংশ ঠাঠা মুখস্থ করে পরীক্ষা দিতে যাই, কখনো সিলেবাসের বাইরের অংশটুকু পড়ার পেছনে এতটুকু সময় ব্যয় করি না, কারণ সেটা করলে আমাদের ভালো ফলাফলকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে হয়। আমরা সেটা করতে চাই না। আমাদের শিক্ষকরা কখনো ঝুঁকি নিয়ে পাঠ্যবইয়ের বাইরের জগতের পাঠ আমাদের দেন না। আমাদের বাবা-মায়েরা কখনো ঝুঁকি নিয়ে তাদের ছেলেমেয়েকে শিল্পী, খেলোয়াড়, নাট্যকার, কবি, ইতিহাসবিদ, কৃষক, কিংবা বাবুর্চি হতে বলেন না। তারা বলতে পারেন না তোমাদের যা মন চায় কর। আমরাও কেবল ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই, পড়তে চাই কেবল কম্পিউটার প্রকৌশল কিংবা ব্যবসা প্রশাসন, কারণ তাহলেই একটা চাকরি নিশ্চিত হয়। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি এক, হতে চাই আরেক, হই অন্য আরেককিছু।

কিন্তু এরকম তো হবার কথা নয়। আমি আমার স্কুল কিংবা কলেজকে দোষ দেই না। যে মাস্টারমশাইয়ের নিজের বেতন দিয়ে মাস চালানো দায়, যাকে সংসার চালাতে শিক্ষকতার বাইরেও নিজের জমিতে হালচাষ করতে হয়, টিউশনি করে অন্যের ছেলেকে পড়িয়ে তারপর নিজের ছেলের পড়ার খরচ জোগাতে হয়, তার কাছে থেকে ততোটা আশা করাও ঠিক না। কিন্তু আফসোস, আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ও আমার স্কুল-কলেজের মতই আমাকে ঝুঁকি না নিতে শিখিয়েছে, গ্রেড-রেজাল্ট-নিয়ম-কানুন-টোফেল-জিআরই এতসব কিছুর চাপে-প্রলোভনে-ভয়ে আমরা ঝুঁকি নিতে ভুলে গেছি, আমাদের ভুল করে ভুল পথে যাবার স্বাধীনতা আমরা বিকিয়ে দিয়েছি একটা সার্টিফিকেটের কাছে।

আমাদের শিক্ষালয়গুলো যদি নাও শিখায়, তবু আমাদেরকে ঝুঁকি নিতে শিখতে হবে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক।


মন্তব্য

নীল রোদ্দুর এর ছবি

ভাইয়া, এতো অসাধারণ বোধটা যদি আমাদের মাঝে সাধারণ হত, পৃথিবীটা অন্য রকম হত, যে অনেক কিছু করতে পারে, তাকে সিস্টেমের চাপে পড়ে হতাশ হতে বাতাসে মিলিয়ে যেতে হত না...

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সার্টিফিকেট মুখী, চাকুরী মুখী কেবল। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সফল ব্যবসায়ী অথবা নিদেন পক্ষে প্রতিসপ্তাহের আড্ডা সামাজিকতায় কিঞ্চিত অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য না থাকলে বন্ধু বা কাছের মানুষগুলো ঘুরে তাকাবে না। প্রতিদিন চুলে জেল মেখে অফিস না গেলে, ছেলে মেয়েকে নামী স্কুলে পড়াতে না পারলে, ফারহিনের বিয়েতে শারমিনের দামী শাড়ী গহনা না পড়ে গেলে, জীবনে সফল হলেন কোথায়? মেধাবী? মেধা ধূঁইয়ে কি পানি খাওয়া যাবে? না পেটে ভাত মাংশ জুটবে? সফলতা প্রকাশের একমাত্র উপায় শেষমেষ লোক দেখানো। সেটা স্টার ইমেজ থেকে শুরু করে ভালো চাকরী সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এর কাছেই আমরা বিক্রি করি স্বত্তা! এরপর আমাদের ছেলেমেয়েরা করবে। যাদের অজুহাত দিয়ে স্বত্তাবিক্রি কে বৈধ করার চেষ্টা চালানো হল, সেই উত্তরসূরীদেরও একই পথেই চলতে শেখানো। চেইন কি ভাঙ্গা সম্ভব? ঝুঁকি না নিলে?

মন যা চাই, তাই করার, করতে পারা, একেকটা অসম্ভব প্রায় কাজ সম্ভব করে ফেলার আনন্দটার বিনিময় যদি নিশ্চিন্ত চাকুরী হয়, তাহলে মনের সাথে অন্যায় কি করা হয় না? ঝুকি নিতে শিখতে হবে... ঝুঁকি নেবার মত সাহস অর্জন করতে হবে, আর নিজের উপর রাখতে হবে আস্থা! হাসি

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

ফারুক হাসান এর ছবি

"...Two roads diverged in a wood, and I,
I took the one less traveled by,
And that has made all the difference. "

---- The Road Not Taken, Robert Frost

নীল রোদ্দুর, আজকে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আপনি যা লিখেছেন, ঠিক তাই দেখলাম। আপনার মতই ঠিক করেছি, "ঝুঁকি নেবার মত সাহস অর্জন করতে হবে, আর নিজের উপর রাখতে হবে আস্থা!"

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আমাদের সমাজে বর্তমানে শিক্ষার মানের সূচক হচ্ছে, আপনি কত টাকা মাইনে পান! অর্থাৎ আপনার অর্থ উপার্জনের সক্ষমতা কতখানি। শিক্ষাগ্রহনের ফলে আপনার মনন, মানসিকতা বা মানবিকতার কতখানি উৎকর্ষ হল সেটা নিতানতই গৌণ। তাই প্রায় সকলেই ভাল চাকুরীর নিশ্চয়তায়ই বিষয় নির্বাচন করে, তার ভাললাগা থেকে নয়। বেশী বেতনের চাকুরী করলেই জীবনে সফলতা আসেনা। সফল তাঁরাই যাঁরা দেশ, জাতি, সমাজ, সংসারকে কিছু দিয়ে যেতে পারছে।
ধন্যবাদ। নিজে ঝুঁকি নিন, অপরকে ঝুঁকি নিতে উদ্বুদ্ধ করুন।

সুরঞ্জনা এর ছবি

লেখাটা পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আপনার ঝুঁকি নেয়ার প্রকল্পকে মন থেকে সাধুবাদ জানাই।
আর সফলতা কামনা করি।
আশা করি ধীরে ধীরে মানুষ ঝুঁকি নেয়ার ধারণা বন্ধুভাবে গ্রহণ করতে পারবে, নতুন দেখে পিছপা হবে না।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

খুবই একমত। ঝুঁকি নেয়ার মনোবৃত্তি আমাদের মাঝে একেবারেই নেই। আমাদের ধ্যান ধারণা হলো নিশ্চয়তার দিকে। নিশ্চয়তা খোঁজা। তাই আমরা উপদেশ পাই, অমুক করা না গেলে পিএইচডি করে নাকি লাভ নেই, অমুক করার খায়েশ না থাকলে মাস্টার্স করাই ইনাফ। সৃষ্টিশীলতার জন্যে, এগিয়ে যাওয়ার জন্যে ঝুঁকি নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। পরের বুলি শিখে নিশ্চয়তার ভ্রমই কেবল তৈরি হয়। একাগ্রতা আর উদ্যমই সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা।

ফারুক হাসান এর ছবি

একদম ঠিক বলেছেন।

ক্যালকুলেটেড রিস্ক নিতে পারাটা একটা বড় গুণ।

চিলতে রোদ এর ছবি

অনেক ভালো লাগলো আপনার লেখাটা পড়ে... একটি ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম। আপনার লেখাটি সাহস যোগালো নিজের সত্যিকারের 'ইচ্ছে'র পক্ষে। ধন্যবাদ হাসি

ফারুক হাসান এর ছবি

শুভকামনা রইল। হাসি

দ্রোহী এর ছবি

ভালো লাগলো। চলুক

তারেক অণু এর ছবি
MAHMUD এর ছবি

অসাধারন লেখা!
সকালে অফিসে এসে আপনার লেখা পড়ে মনটাই ভাল হয়ে গেল
এম বি এ খেদিয়ে পি এইচ ডি ঢুকানোর কথাটা একদম ঠিক সুইজারল্যান্ডেঃ গত মাসে আমার ল্যাবের একজন ভারতীয় ছেলে পোস্ট ডক ছেড়ে জুরিখ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে ঢুকেছে। সে মুলত ভারতের আই আই টি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে আমেরিকার ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি থকে মাস্টার্স এবং পি এইচ ডি শেষ করে সুইজারল্যান্ডে এসেছিল পানি সম্পদের উপরে পোস্ট ডক করতে!
সুইজারল্যান্ডে ব্যাঙের ছাতার মতো প্রাইভেট ইন্সটিটিউসন যাদের কাজ ২ বছরে কিছু টাকার বিনিময়ে একটা এম বি এ সার্টিফিকেট দেয়া। এই ট্র্যাডিশন এরা মুলত ইংল্যান্ড থেকে শিখেছে, অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে জেনেভা শহরের সেন্টারে দাড়ায়ে আমার একজন এম বি এ প্রয়োজন বললে বিভিন্ন শপিং মল থেকে লোকজন আসা শুরু করবে কারন এদের বেশির ভাগই পাস করে চাকরি পাচ্ছেনা কিংবা চাকরি ধরে রাখতে পারছেনা তাই মুলত দোকানদার
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা আমার কলিগকে গিজ্ঞাসা করেছিলাম কি জাতীয় কাজ সে করে জুরিখ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে, সে যা বলল তা হচ্ছে MATLAB দিয়ে বিভিন্ন এলগোরিদম তৈরি করা কোম্পানির রেভিনিউ বাড়ানোর জন্য।
ভারতীয় কলিগ ছাড়াও আরও দুজন আগামী মাসে সুইস ব্যঙ্কে জয়েন করছে যাদের ব্যাক গ্রাউন্ড বায়োলজি !!কিন্তু জেনেটিক এলগোরিদম নিয়ে কাজ করায় প্রচুর গানিতিক সমীকরণের সাথে উঠা বসা হয়ে যায় তাই জব পেতে অসুবিধা হয়না

ফারুক হাসান এর ছবি

ঠিক এই ব্যাপারটাই আমাকে এখন খুব ভাবাচ্ছে। যারা পিএইচডি করছেন তাদের একটা অভিযোগ হচ্ছে একাডেমিক চাকরি এখন পাওয়া খুব দুষ্কর। কিন্তু গুরুজনেরা ঠিকই বলেন, এক দরজা বন্ধ হলে অন্য দরজা ঠিকই খুলে যায়।

পিএইচডিওয়ালাদের সবচেয়ে বড় স্কিল হচ্ছে এনালাইটিক্যাল স্কিল। ফিনান্সিয়াল কোম্পানিগুলো এখন সেই স্কিলের মর্যাদা দিতে শিখছে। বাস্তব সমস্যা সমাধান আর রিসার্চের সমস্যা সমাধানের প্যাটার্ণ অনেক সময় একই হয়। তাই গবেষণার অভিজ্ঞতাকে এখন চাকঅরির বাজারে বেশ মূল্য দেয়া হচ্ছে বলেই মনে হয়।

আমি যে কর্মশালায় গিয়েছিলাম সেখানেও সবাই একই কথা বলছিলো। ইদানিং যারা পিএইচডি নিয়ে বেরুচ্ছেন, তাদের অনেকের চাকরিও হচ্ছে ঐ এনালাইটিক্যাল স্কিল থাকার কারণে।

হিমু এর ছবি

হাঙ্গেরিতে যেসব পদার্থবিদ ঠাণ্ডু যুদ্ধের সময় ন্যাটো জোটের স্টেলথ মোডে চলা বিমান শনাক্তকরণের জন্য গবেষণা করতেন, তারা সোভিয়েত ব্লকের পতনের পর ওয়াল স্ট্রিটে দলে দলে যোগ দিয়েছেন। ব্যাপারটা হলো এমন, স্টেলথ মোডে চলা বিমানগুলো নিজের শরীরটাকে রাডারের চোখে অনেকগুলো ছোটো পাখির ঝাঁকে পরিণত করতো। স্টক এক্সচেঞ্জেও তেমনি বড়সড় স্টক লেনদেন করা হয় অনেকগুলো ছোটো প্যাকেটে ভেঙে। সেইসব প্যাকেটের লেনদেন শনাক্ত করার অ্যালগোরিদম সেই পাখির ঝাঁকের ছদ্মবেশে চলা বিমান শনাক্ত করার অ্যালগোরিদমের মতোই।

ফারুক হাসান এর ছবি

সিস্টেমস বায়োলজি, জিনোমিক্স ইত্যাদি বিষয়ে ডাটা মাইনিংয়ের জন্য যেসব এলগরিদম রয়েছে সেগুলি এখন ফিনান্সিয়াল ডাটা মাইনিংয়ে হরদম ব্যবহৃত হচ্ছে।

আমার বিষয় অপটিমাইজেশন নিয়েও বলতে পারি। এরোপ্লেন কোম্পানিগুলি ডাইনামিক প্রাইসিং করে এই যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা করছে, তার পেছনে থাকে হয়তো গুটিকয়েক এনালিস্ট আর প্রোগ্রামার যাদের পিএইচডি ছিল অপ্টিমাইজেশন থিউরির উপর।

দ্যা রিডার এর ছবি

উত্তম জাঝা!

গৌতম এর ছবি

১. সাহিত্যে গ্রাজুয়েশন করে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করে কীভাবে? অ্যাঁ এটা কি সত্যিই সম্ভব? তাহলে আমিও করতে চাই, আমার খুব শখ একটা যন্ত্র বানানোর যেটা হাইপারডাইভ দিতে পারবে। চোখ টিপি

২. এরকম একটা ঝুঁকি আমি নিয়েছিলাম, নিয়েছিলাম মানে এখনো এই ঝুঁকির মধ্যেই আছি। বাংলাদেশে শুধু শিক্ষায় গবেষণা করে পেট চালানো দুষ্কর, কিন্তু পড়াশোনা শেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, কপালে যা-ই থাকুক, এই কাজটাই করবো। এখন পর্যন্ত সেটাই করে যাচ্ছি। কিন্তু কতোদিন পারবো তা বুঝতে পারছি না কারণ অপরচুনিটি এখানে খুবই কম!

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ফারুক হাসান এর ছবি

শুনে আমি নিজেও তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম। কিন্তু ঘটনাটা আসলেই সত্যি। ভদ্রমহিলার নামটা আমার এখন আর মনে নেই, কিন্তু তিনি প্রথমে ইংরেজি সাহিত্যের উপরই পিএইচডি করেছিলেন। অবশ্য বিজ্ঞান সম্পর্কে তার জ্ঞান যে একেবারে শূন্যের কোঠায় ছিলো তাও না। আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে মাইনর হিসেবে নিয়েছিলেন সম্ভবত রসায়ন। যাই হোক, পিএইচডির পর চাকরি পেলেন ক্যালটেকের পদার্থবিজ্ঞানের বিখ্যাত এক রিসার্চ ল্যাবে। তার দায়িত্ব ছিলো ল্যাব থেকে যে সমস্ত বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ লেখা হবে সেগুলো পড়ার পর তাদের ভাষাগত উৎকর্ষ সাধন। এই কাজ করতে গিয়ে ল্যাবের সব গবেষণা সম্পর্কে তার ব্যাপক ধারণা জন্মে গেল। কিছুদিন পর অবস্থা এমন দাড়ালো যে পেপার লেখার সাথে সাথে তিনি কলিগদের গবেষণাতেও সাহায্য করতে লাগলেন। বিজ্ঞানের উপর পড়াশোনা থাকায় খুব একটা কষ্টও হচ্ছিলো না। এভাবে চলতে চলতে একসময় একদিন প্রফেসরকে গিয়ে বলেই ফেললেন কথাটা, তিনি একটা ঝুঁকি নিতে চান নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে- ল্যাবে পদার্থবিজ্ঞানের যে গবেষণা হচ্ছিল তার উপর তিনি এতটাই আকৃষ্ট হয়েছেন যে এই ল্যাবেই তিনি আরেকটি পিএইচডি করতে চান, এইবার পদার্থবিজ্ঞানের উপর।

সেই মহিলা ঠিকই পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি পেয়েছিলেন এবং এখনো গবেষণা করে যাচ্ছেন। তার লেখা বৈজ্ঞানিক নিবন্ধগুলি নাকি খুবই সুখপাঠ্য (ইংরেজিতে পিএইচডি থাকলে যা হয়)।

শমশের এর ছবি

সহমত।
লেখায় চলুক

গাড়ি  এর ছবি

ঝুঁকি নেয়ার ইচ্ছা থাকলেও তার সুযোগ কতটুকু আছে তা বিবেচনার দাবি রাখে।

আজকে সিলিকন ভ্যালিতে যে কোন statup company কে finance করার জন্য প্রচুর ফার্ম আছে। আমাদের দেশে কোন ব্যাংক নতুন কোন কোম্পানি তে টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি হবে বলে আমি মনে করি না। বিনিয়োগের অভাবে অনেক পরিকল্পনা শুরুতেই থেমে যায়।

হিমু এর ছবি

আমাদের দেশে ঝুঁকিটা লোকে নেয় ভুল জায়গায়।

শেয়ার বাজারটা এখন একটা ক্যাসিনো হয়ে গেছে। সেই ক্যাসিনোতে জেনে বুঝেই লোকে ঘটিবাটি বেচে টাকা যোগাড় করে জুয়া খেলতে যায় দুইদিনে বড়লোক হয়ে যাওয়ার ধান্ধায়। তারপর যখন সর্বস্বান্ত হয়, তখন সরকারকে গিয়ে কলার চেপে ধরে। এই জুয়ায় যারা পয়সা পকেটস্থ করে, তারা সরকারের শালা-দুলাভাই, অতএব সরকার তখন পাবলিকের পয়সা দিয়ে এই ক্যাসিনোকে প্রণোদনা দেয়।

যে পরিমাণ টাকা নিয়ে লোকে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে, সেই টাকা যদি নতুন কোনো আইডিয়ার পেছনে খাটাতো, হয়তো দুইদিনে বড়লোক হতে পারতো না, পাঁচ দশ বছর লাগতো, কিন্তু ঐটুকু ধৈর্য ধরতে কেউ রাজি না।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তাসনীম এর ছবি

আমি শুনেছি স্টক মার্কেটে ইনভেস্ট করার জন্য বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো নাকি টাকা ঋণ দেয়। অথচ নতুন ব্যবসা করতে গেলে ব্যাঙ্কলোন পাওয়া দুঃসাধ্য।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রঙধনু এর ছবি

অসাধারণ লেগেছে। আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ভাইয়া, ঝুঁকি নেয়াটা অধিকাংশ মানুষই করতে পারে না। এটার মানেই যেখানে অনিশ্চয়তার ডাক, যেখানে ব্যর্থ হলেই আবার গেম রিস্টার্ট দেয়া যাবে না- সেখানে এই সাহসটা করা খুবই কঠিন আসলে... মন খারাপ

ফারুক হাসান এর ছবি

ক্যালকুলেটেড রিস্ক নিতে তো কোনো সমস্যা নেই। হয়তো আমরা বেশিরভাগ সময়ই ঝোঁকের মাথায় ঝুঁকি নেই, যার ফলাফল ভালো হয় না।

অনিশ্চয়তা নিয়েই তো এই পোস্ট। সময় যত যাচ্ছে বিশ্ব অনিশ্চিত হচ্ছে তত বেশি।

তার-ছেড়া-কাউয়া এর ছবি

ঝুকি নিয়ে কি পিএচডি টা করে ফেলার চেষ্টা করবো ? আপনার লেখা পড়ে নতুন করে মাথায় চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মন খারাপ

ফারুক হাসান এর ছবি

চিন্তার খোরাক জোগানোই তো এই পোস্টের উদ্দেশ্য হাসি

রু (অতিথি) এর ছবি

আমার তো পি এইচ ডি নাই, এম বি এ-ও নাই, আমার এখন কি হবে? ভাইরে আমি ঝুঁকি নিবো কী, রাজ্যের ঝুঁকি আমার উপরে এসে পড়ে। এদের থেকে মুক্তির উপায় জানা থাকলে বলেন।

ফারুক হাসান এর ছবি

মন খারাপ

অনিকেত এর ছবি

লেখাটা তুমুল লাগল ফাহা ভাই!

আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি এক, হতে চাই আরেক, হই অন্য আরেককিছু।

একেবারে হক কথা!

ভিন্ন প্রসঙ্গেঃ এত দেরী করে করে লেখা দেন ক্যান?

ফারুক হাসান এর ছবি

নতুন জায়গা, নতুন দেশ, নতুন মহাদেশ! একটু সময় লাগলো গুছিয়ে নিতে, তার উপর কামলা খাটতে হয় এখন। ছাত্রজীবনের সুখের সেই ব্লগময় দিনগুলি আর নাইরে ভাই।

তাপস শর্মা এর ছবি

দারুন একটা লেখা চলুক

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
ইকনমি চ্যাপ্টা হয়ে যাবার পর এখন টেক কোম্পানিগুলা হায়ারিং এর ব্যাপারে অনেক সতর্ক হয়ে গেছে। আগের মতো মাস্টার্স করে শুধু মাত্র একটা দুইটা বিশেষ কোর্স দেখিয়ে চাকরি পাওয়া মনে হয় একটু কঠিন হয়ে গেছে। সবাই এখন আল ইন ওয়ান টাইপের লোক খুঁজে। যে কিন আইডিয়া বের করে সেটাকে ডেভেলপ করে আবার টেস্ট ও করবে, পারলে সেইটা আবার বেচতেও সাহায্য করবে। পিএইচডি শেষ করার পর অ্যাপেল, স্যামসাঙ, এইচপি, টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট, ইন্টেল সহ অনেক গুলা কম্পানিতে ইন্টারভিউ দেয়ার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য হয়েছে। সারা দিন জুড়ে ১০/১২ জন লোকের সাথে ইন্টারভিউ দেয়া রীতিমতো মেন্টাল টর্চার মনে হয় আমার কাছে। ইন্টারভিউ এর অভিজ্ঞতা নিয়ে রীতিমতো বই লিখে ফেলা যায়। চিন্তাভাবনা করে শেষ পর্যন্ত এক তেল কোম্পানির চাকরীতে ঢুকেছি। সব মিলিয়ে লোভনীয় চাকরী, কাজে গবেষণার পরিমাণ বেশী। তবে এক বছর কাজ করে বুঝতে পারছি, শেকড় গজিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। ১২+৪+২+৪=২০ বছরের শিক্ষাজীবনে কত কিছুই যে শিখতে হয়েছে। কাজে লাগছে হয়তো তার খুবই একটা ক্ষুদ্র অংশ। এজনা সবাই বলে চাকরী জীবনের শুরুতে মাঝে মাঝেই জব বদল করতে, এতে করে বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা বাড়ে। কিন্তু একটা নিশ্চিন্ত চাকরী পেয়ে গেলে সবাই আস্তে আস্তে অলস হয়ে যায়। তখন ঝুঁকি নেয়ার ইচ্ছে টা আস্তে আস্তে চলে যায়।
আমার স্বপ্ন ছিল লেখক হব। স্বপ্ন মনে হয় অর্ধেক সত্যি হয়েছে। সাহিত্য না লিখে প্রোগ্রামিং কোড লিখি আরকি :p। তবে স্বপ্নটা এখনো সম্পূর্ণ মরেনি। একদিন অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে আসবো। তারপর দিনরাত খালি সচলায়তনে পদ্য লিখে যাবো দেঁতো হাসি

ফারুক হাসান এর ছবি

আপনার মন্তব্যটা খুব ভালো লাগলো।

অফটপিকঃ আপনি কি এক্সোনমবিলে আছেন?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বাহ বাহ পদ্য লিখবেন নাকি? আপনার পদ্যের অপেক্ষায় থাকলাম

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তিথীডোর এর ছবি

চমৎকার লেখা!

আমরাও কেবল ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই, পড়তে চাই কেবল কম্পিউটার প্রকৌশল কিংবা ব্যবসা প্রশাসন, কারণ তাহলেই একটা চাকরি নিশ্চিত হয়। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি এক, হতে চাই আরেক, হই অন্য আরেককিছু।

চলুক
কিছু-ই হতে পারছি না বলে আপাতত বিশাল সমস্যায় আছি।
আদৌ কী হতে পারব, তাও বুঝতে পারছি না। মন খারাপ
তবে, বাচ্চাকাচ্চা পাললে মেয়েকে যা খুশি পড়তে দিতাম, নিজের ইচ্ছে চাপিয়ে দিতাম না কখনো-ই।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ফারুক হাসান এর ছবি

কিছু একটা কি হতেই হবে?

অন্যকেউ এর ছবি

চমৎকার লেখা! চলুক

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

স্বাধীন এর ছবি

লেখাটার প্রতিটি বাক্যের সাথে সহমত। জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিটা নিতে যাচ্ছি। সব ছেড়ে ছুড়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেখা যাক কপালে কি আছে।

ফারুক হাসান এর ছবি

আপনার সিদ্ধান্তকে স্যালুট জানাই। কামনা করি আপনি সফল হোন।

ইফতি এর ছবি

অনেক ভালো একটা লেখা। আমার দিশেহারা আত্মবিশ্বাসের পালে একটু আশার হাওয়া দিল যে!

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

অ্যাঁ

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

চলুক

অনেক,অনেক শুভকামনা ।আপনার জন্য একটা কাহিনী একটু বলি : আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একদম শেষের দিকে ! কি একটা কারণে যেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের রুমে গিয়েছি । সময়টা শেষ বিকেল ছিল বলে ডিপার্টমেন্ট একদম চুপচাপ । স্যারও সম্ভবত ওই মুহূর্তে ততটা ব্যস্ত ছিলেন না বলে নানা বিষয় নিয়ে স্যারের সাথে অনেক কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম । কথাবার্তার এক পর্যায়ে কেন যেন জিজ্ঞেস করলাম --"স্যার, দেশে ফিরে আসলেন কেন ?" বহুবার শোনা প্রশ্নটা শুনে স্যার (সম্ভবত) একটু বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন -- "শোনো, দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্তটা ছিল আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত " ।

আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি --জীবনের একটা সময়ে যেয়ে আপনারও যেন একই রকম উপলব্ধি হয় !

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

ইফতি এর ছবি

এই ঘটনা শুনে তো ভাই আরও সাহস পেলাম। ধন্যবাদ, আমি উনার মত বড় কেউ না, তবুও ফিরে আসবো সীমিত সামর্থ্য নিয়েও ইনশাআল্লাহ্‌।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

বাহ্,একটু সংকোচ নিয়েও আমার কাহিনীটা লিখে ফেলা তাহলে সার্থক হলো ! অনেক, অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য !

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

নিটোল এর ছবি

অসাধারণ লেখা। চলুক

_________________
[খোমাখাতা]

সুমন এর ছবি

চাকুরী জীবন শুরুর আগে আমার ক্য‌ারীয়ার কে কয়েকটা মাইলস্টোনে সেট করি। সবগুলোই পরিকল্পনামাফিক হয়েছে। সর্বশেষ মাইলস্টোন ছিল ঝুকি। জীবনে একবার হলেও ঝুকি নিয়ে নিজে কিছু একটা করবো। ঝুকি আমি নিয়েছি এইতো কয়েকদিন আগে। চরম ঝুকি তবে অবশ্যই ক্যালকুলেটিভ। ভাল চাকুরীটা ছেড়ে দিলাম। জানুয়ারী থেকে শুরু হবে আমার সংগ্রাম। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের নির্মান কাজ।

চাকুরীটা ছেড়ে দেয়ার পর থেকে সবসময় খুব অস্থির লাগছিল। লেখাটা পড়ার পর ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে আমার সাহস আছে ঝুকি নেয়ার। যদি কোনদিন সফল নাও হই তবু কখনো আফসোঁস হবে না আমি অন্তত চেষ্টা করেছি। আমি ভীত হয়নি।

ফারুক হাসান এর ছবি

স্পিরিটটা ভালো লাগলো।

আমাজন ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বিজোস (http://en.wikipedia.org/wiki/Jeff_Bezos) একবার বলেছিলেন, মানুষের জীবন হচ্ছে কিছু চয়েসের সমষ্টি। জীবন সায়াহ্নে পৌছে অতীতের দিকে তাকালে দেখবেন যে এরকমভাবে নেয়া জীবন পালটে দেয়া কয়েকটি সিদ্ধান্তই আপনার জীবনের আসল অর্জন। সফল হোন বা না হোন, আপনার এই অর্জনকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না আপনার কাছে থেকে।

ইফতি এর ছবি

অভিনন্দন আগাম! সাফল্য পরে, চেষ্টার জন্য। আমিও এরকম একটা ঝুঁকি নিতে যাচ্ছি, লেখাটা পরে confused ভাবতা অনেকখানি উধাও হয়ে গেলো।

উচ্ছলা এর ছবি

ঝুঁকি নিতে নিতে মাথার চুল পেকে গেল। জীবনে 'কিছুই' অর্জন করতে পারিনি এই বদ-স্বভাবের কারনে; কোনো আফসোস নেই সেজন্য হাসি

আপনার লেখা দারুন ভাল লেগেছে চলুক

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ভালো লেখা। জীবনে একটা বড়ো ঝুকি নিয়েছিলাম সরকারী চাকুরী পেয়েও জয়েন না করে, ফুড ইন্সপেক্টর পদে। আজ দেখতে পাচ্ছি আমার সেই ঝুকিটা খেটেছে।

তবে এখন মনে উন্নতির জন্যে ঝুকি অপরিহার্য্য তবে আশপাশ থেকে ঝুকির লাইকলিহুড এবং সিগনিফিক্যান্সগুলো একটু বিচার করে তারপর ঝুকিটা নিলে ব্যার্থতার হার বেশ কমানো সম্ভব।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তাসনীম এর ছবি

দারুণ হয়েছে লেখাটা।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

শ্যামল এর ছবি

আমরাও ঝুঁকি নেই কিন্তু সেটা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আকামে এবং ভূল জায়গায়।
বরাবরের মতই দারুণ বিশ্লেষণ। দুস তুই একটা কামের লেখা লেখসস; আমার এখন ঝুঁকি নেয়ার সময়। দেঁতো হাসি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অসামান্য লেখা, ভাইয়া। ঝুঁকি নেওয়া নিয়ে কী বলবো... আমি নিজে তো কম নিলাম না। তবে ঝুঁকিগুলো সময় মতো রিটার্ন না দিলে জীবন অনেক কষ্টের, পরিতাপের। সেটা উৎরাতে পারাটাও অনেক বড় শিক্ষা অবশ্য।

আমার নিজের যা নীতি... যেকোনো পরিবেশ অতিরিক্ত আরামের হয়ে যাওয়া মানেই সেখানেই আমার বর্ধনের সুযোগ কমে গেছে। এমন অবস্থায় আয়েশ করে থিতু না হয়ে একটু নতুন কিছু খুঁজতে যাওয়াই দরকার। বড় ঝুঁকি ঝক্কিও বড়, তাই কাউকে তেমনটা করতে বলি না আমি। তবে এই যে আয়েশী না হয়ে যাওয়াটা, এই মাইক্রো-ঝুঁকি নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে আমাদের।

ফারুক হাসান এর ছবি

যেকোনো পরিবেশ অতিরিক্ত আরামের হয়ে যাওয়া মানেই সেখানেই আমার বর্ধনের সুযোগ কমে গেছে।

চলুক
খাটি কথা। আমি নিজেও এখন এরকম ব্যাপার বুঝতে পারছি।

ম. গ. এর ছবি

এই অসাধারণ লেখাটা পড়ে আম্রিকায় নিজের চলতি স্নাতোকত্তর শিক্ষা লাভের কিছু বিচিত্র ঘটনা লিখতে অনুপ্রাণিত হচ্ছি।

যদিও শোনাবে পিয়েরে ফার্মার উপহাসের মত (এখন সমাধানটা বলার সময় নাই...), কিন্তু বছর খানেকের মধ্যে যখন পায়ের তলায় মাটি আসবে, তখন না হয় লিখব।

ফারুক হাসান এর ছবি

ভাই, ব্যস্ততা তো থাকবেই। এর মধ্যেই লিখে ফেলুন ঝটপট!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এমবিএ খেদিয়ে পিএইচডি, এরপর পিএইচডি তাড়িয়ে প্রফেসর। দেঁতো হাসি

ঝুঁকি না নিলে মানুষ এখনো বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, যেখানে সবকিছুই পালটায়, সেখানে স্থবির হয়ে বসে থাকাটাই সবচেয়ে বড়ো ঝুঁকির। তবে ঝুঁকিটা 'ক্যালকুলেটেড রিস্ক' হওয়া দরকার, কোনোকিছু হিসাব না করে ঝাঁপ দেয়ার মানে নেই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ফারুক হাসান এর ছবি

ঝুঁকি বলতে আমি আসলে ঐ ক্যাল্কুলেটেড রিস্কটাই বুঝাতে চেয়েছি। ঝুঁকি নেবার জন্য এবং পূর্বশর্ত হিসেবে যে স্টাডির প্রয়োজন সেটা আমরা অনেক সময় করি না।

উপরে ইশতিয়াক রউফ যেটা বলেছেন, নিজের পরিধিকে বাড়ানোর জন্য আমাদের নিজেদের কমফোর্ট জোনের বাইরে যেতে হবেই।

ফারুক হাসান এর ছবি

বিশ্ববিখ্যাত সাইন্স জার্নালে আজকে প্রকাশিত পেশাগত জীবনের সন্ধিক্ষণ নিয়ে.এই লেখাটিও প্রাসঙ্গিক এবং কাজের।

সৌমিক জিসান এর ছবি

ভাইরে, ঝুঁকি নেয়ার সাহস থাকলেও কিন্তু মাঝেমধ্যে পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নিজের জীবন নিয়ে ঝুঁকি নেয়া যত সহজ, আমার ওপর নির্ভরশীল মানুষদের নিয়ে ঝুঁকি নেয়াটা তত সহজ না।

বন্য অরণ্য এর ছবি

বুয়েটে আরকিটেকচারে পাশ করে, মাসটারস করতে আসলাম থিয়েটার ডিজাইনে আলবারটা ইউনিভারসিটিতে,কানাডায়। একেবারে কোন রকম পুরব অভিজ্ঞতা ছাড়াই । সেই এক যাত্রা দুই বছর ধরে, ২০/২৫ জন বিশেষজ্ঞ টেকনিশিয়ান, পারফরমার, ডিরেক্টরের সাথে রিয়েল লাইফ প্রজেক্ট করা।।একেবারে ঝুকি নেবার সাধ পুরণ হল। গত দুই বছরে যা শিখেছি তার আগের দশ বছরেও তা শিখেছি কিনা সন্দেহ। মানুষ ঠেলায় পড়লে পারে না এমন কিছুই নাই, কেবল ঝুকি নিয়ে ঠ্যালা সৃষ্টি করাটা কঠিন কাজ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।