১. কৃষি
সম্প্রতি প্রথম আলোর “আলু চাষে টানা দুই বছরের লোকসানে শঙ্কিত কৃষক”১ এবং কালের কন্ঠের “হিমাগারের ৯ লাখ টন আলু নিয়ে বিপাকে জয়পুরহাটের কৃষক”২ শিরোনামের সংবাদ দু’টি পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
একই সমস্যা হচ্ছে মুন্সিগঞ্জ, দিনাজপুর, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ১,২,৩,৪,৫,৬।
যেখানে আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময়েই খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি থাকে, সেখানে কয়েক বছর ধরে কৃষকরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আলু উৎপাদন করছেন। গত চার বছর ধরে বাংলাদেশে আলুর বাম্পার ফলন হচ্ছে। দেশের বাৎসরিক আলুর চাহিদা পঞ্চাশ লাখ টনের কম। অথচ, বাংলাদেশ হিমাগার অ্যাসোসিয়েশনের হিসেব মতে, ২০১০ মৌসুমে আলুর উৎপাদন হয়েছিলো সর্বমোট ৮৪ লাখ টন।৭ ২০১১তে এসে সেই উৎপাদন হয়তো তার থেকেও বেশি হয়েছে। এই বছর কেবল মুন্সিগঞ্জ জেলাতেই প্রায় ১২ লাখ টন আলুর চাষ হয়েছে। একই পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছে দিনাজপুরে, বগুড়া ও জয়পুরহাটে। সব মিলিয়ে দেশে প্রতিবছর উদ্বৃত আলুর মজুতের পরিমাণ প্রায় ৪০ লাখ টন।
অথচ, আমাদের কৃষকরা পরপর গত দুই বছর আলু চাষ করতে গিয়ে লোকসান দিয়েছেন। লোকসানের কারণ হচ্ছে আলুর কম বাজার মূল্য। যে দামে বিক্রি করলে কেবল উৎপাদন খরচটা ফিরে পাওয়া সম্ভব, আলুর বাজার মূল্য তার চেয়েও কম। দাম কম হওয়ায় কৃষকরা আলু বিক্রি না করে হিমাগার রেখে দিচ্ছেন। দিন যাচ্ছে, কিন্তু দাম বাড়ছে না। হিমাগার মালিকরা বলছেন, বাজারে আলুর চেয়ে কম দামের আর কোন সবজি নেই। বাজারে ১২ টাকা দরে কেজী আলু বিক্রি হলেও হিমাগারগুলোতে আলু বিক্রি হচেছ ৬ টাকা কেজী দরে। এদিকে মাসের পর মাস হিমাগারে আলু রাখার কারণে তার ভাড়াও বাড়ছে। বস্তাপ্রতি ২৫০-৩০০ টাকা হিমাগার ভাড়া দেবার পর আলু বিক্রি করে কৃষকদের লোকসান হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকা২। অনেক সময় ভাড়া শোধ করতে না পারায় কৃষকদের আলু নিয়ে নিচ্ছেন হিমাগারের মালিকপক্ষ।১
যেখানে আমরা অন্যান্য অনেক খাদ্যশস্য চড়ামূল্যে বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটাই, সেখানে অতিরিক্ত আলু উৎপাদন করে কৃষকদের বিপাকে পড়ার বিষয়টা হতাশাজনক তো বটেই, একইসাথে আমাদের কৃষিঅর্থনীতির বাজে ব্যবস্থাপনাকে প্রকটভাবে সামনে নিয়ে আসে। কৃষিজাত পণ্যের যোগান শৃংখলের (supply chain) প্রতিটা ধাপে সরকারী-বেসরকারী সহায়তার পরিমাণ বলা যায় যৎসামান্য। আমরা সময়মত কম মূল্যে কৃষকদেরকে বীজ ও সার সরবরাহ করি না, প্রয়োজনীয় হিমাগার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করি না, আবার উৎপাদিত শস্যের বাজারের নিশ্চয়তাও দিতে পারি না। শুধু তাই নয়, এ বছর অবহেলার কারণে প্রায় ৫ লাখ টন আলু রপ্তানির সুযোগ হারিয়েছি আমরা।৮
আলু চাষী এবং সংশ্লিষ্টদের একটা বড় অনুযোগ১ ,২ হচ্ছে, আলুর বিপর্যয় রোধে সরকার আলু সংরক্ষনের ব্যবস্থা এবং সেই সঙ্গে ভূর্তকি দিয়ে চালের পাশাপাশি সরকারী মূল্যে রেশনের মাধ্যমে আলু বিক্রির ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন। তাদের মতে, সরকার এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহন করলে দ্রত হিমাগারগুলোর আলু বিক্রি হবে, আলু চাষী এবং ব্যবসায়ীরা লোকসানের হাত থেকে রেহাই পাবে।
ভর্তুকি দেয়াই একমাত্র সমাধান নয়। আমাদেরকে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।
২. শিল্প
খাদ্যশিল্পে আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
চিপস, স্ন্যাকস, ফ্লেক্স, ফ্রাই ইত্যাদি নানান ধরণের খাদ্যদ্রব্য হিসেবে আলু জনপ্রিয়। আভ্যন্তরীণ বাজারের কথা না হয় বাদ দিলাম, চিপসের চাহিদা বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, ভূটান, ভারত, পাকিস্তান, কোরিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের নানান দেশ, এমনকি আমেরিকাতেও রয়েছে। বোম্বে সুইটস (BSCL) আলুর চিপস প্রক্রিয়াজাত করে ঐসব দেশে হরদম রপ্তানি করছে।৯ আলুর তৈরি চিপস, স্ন্যাকস ইত্যাদিকে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে খুব সহজেই ছয় মাস থেকে এক বছর সংরক্ষণ করে রাখা যায়। আলুর অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে এই কাঁচামালের যে নিশ্চিত সরবরাহ এবং দেশে-বিদেশে আলুপণ্যের যে বাজার ও চাহিদা রয়েছে সেইসব বিবেচনা করে আমি আলুজাত খাদ্যশিল্প নিয়ে খুব আশাবাদী। খাদ্যশিল্পে আলুর ব্যবহার বাড়ালে আমরা আমাদের আলুচাষীদেরকে যেমন বাঁচাতে পারবো, সাথে সাথে বিপুল পরিমাণে অর্থ উপার্জনের পথও খুলে যাবে। এটা একটা দারুণ win-win অবস্থা।
বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনীত প্রস্তাব করছি, আসুন আলুর খাদ্যশিল্পে বিনিয়োগ করে লাভবান হই। আলু প্রক্রিয়াজাত করে নানাবিধ খাবার বানানোর জন্য যে কারখানার প্রয়োজন তার আকার, খরচ ইত্যাদি অন্যান্য বৃহৎ শিল্পের তুলনায় বলতে গেলে খুব বেশি না। একজনমাত্র মাঝারি কিংবা কয়েকজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী মিলেই একটা কারখানা দাড় করানো সম্ভব। এমনকি বড় আকারের বিনিয়োগের উদাহরণ বাংলাদেশেই রয়েছে। ২০০৫ সালেই বেসরকারি উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে (চাঁদপুর পাটোয়ারি পটেটো ফ্লেক্স, বিক্রমপুর পটেটো ফ্লেক্স, আক্কেলপুর ফ্লেমিঙ্গো পটেটো ফ্লেক্স ও মুন্সীগঞ্জ ইউরোপা পটেটো ফ্লেক্স) প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় চারটি পটেটো ফ্লেক্স কারখানা।৭ যদিও নানাবিধ কারণে পাঁচ বছরেও তারা উৎপাদন শুরু করতে পারে নি, কিন্তু মূল বক্তব্যটা হচ্ছে, বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এরকম কয়েকজন মিলেই পটেটো ফ্লেক্স কারখানা দেয়া সম্ভব। যারা ক্ষুদ্র বা মাঝারিমানের বিনিয়োগকারী, তারা এত বড় স্কেলে চিন্তা না করে মাঝারিমানের কারখানা দিতে উদ্যোগী হতে পারেন। একটু সময় লাগবে হয়তো, কিন্তু এই শিল্পে বিনিয়োগ যে লাভজনক এবং অন্যান্য যে কোনো বিনিয়োগের তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য।
ইচ্ছে থাকলে আমরা আসলে খুব সহজেই আলুশিল্পকে দাড় করিয়ে ফেলতে পারি। আসুন, শেয়ার বাজারে বোকার মত অযাচিত ও অযৌক্তিকভাবে টাকা বিনিয়োগ করে লোকসান না দিয়ে, সবাই আরেকটু পরিশ্রমী ও উদ্যোগী হয়ে উঠি। যে ৩৩ লাখ লোক শেয়ার বাজারে নিজেদের সর্বস্ব খুঁইয়েছেন, তাদের প্রত্যেকে যদি মাত্র এক হাজার টাকা বিনিয়োগ করতেন আলুশিল্পে, তাহলেও আজ আলুচাষীদের নিয়ে এত হতাশাজনক খবর পত্রিকায় আসতো না।
মন্তব্য
আসুন, শেয়ার বাজারে বোকার মত অযাচিত ও অযৌক্তিকভাবে টাকা বিনিয়োগ করে লোকসান না দিয়ে, সবাই একটি পরিশ্রমী ও উদ্যোগী হয়ে উঠি।
সহমত।
...........................
Every Picture Tells a Story
আলু ধানের মতো না। বাম্পার ফসল হলে গোলা ভর্তি করে সারাবছর খাবে। আলুর প্রধান সমস্যা গুদামজাত করণ। যে পরিমান আলু উৎপাদিত হয় সেই পরিমান হিমাগার নেই দেশে। যে কয়টা আছে তার মালিকের একাংশ মনোপলি ব্যবসা করে। সস্তায় আলু কিনে কৃষকদের ঠকায়, বেশীদামে বাজারে ছেড়ে ক্রেতা ঠকায়।। ফলে বাম্পার ফসল ফলিয়েও নিয়ে কৃষক বিপাকে।
আলু রপ্তানী চলছে গত কয়েক বছর ধরে। কিন্তু সেখানেও সঠিক রপ্তানী ব্যবস্থাপনার অভাবে রপ্তানী আয় ফেরত আসছে না। অনেক সময় আলু মালয়েশিয়া/দুবাই পৌছাতে পৌছাতে অর্ধেক পচে যায়।
আলু নিয়ে খুব ভালো পরিকল্পনা নেই সরকারেরও। উৎপাদন পরবর্তী বাজারজাতকরন/ রপ্তানী প্রক্রিয়াকে সহজ করলে কৃষক ন্যায্য মূল্য পেত। কিন্তু সরকারের কার্যক্রম বেশী করে আলু খান, ভাতের উপর চাপ কমান, এই শ্লোগানেই শেষ মনে হয়।
সরকার বিনা খরচে আরেকটা কাজ করতে পারে। আলুকে আমাদের জাতীয় তরকারী ঘোষণা করতে পারে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনার সাথে সহমত যে হিমাগারের অভাব একটা বড় সমস্যা।
খুচরা বাজারে আসতে আসতে আলুর দাম কয়েকগুণ হচ্ছে মূলত মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের জন্য। এদের মধ্যে হিমাগার মালিকদের অংশগ্রহন কেমন আমি নিশ্চিত না। হিমাগার মালিকরা কি সব আলুই কিনে নেন? আমি নিশ্চিত না। আমার ধারণা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষকরা হিমাগার মালিকদের কাছে শুরুতেই আলু বিক্রি না করে বস্তাপ্রতি ভাড়া হিসেবে গুদামজাত করেন। এভাবে কয়েক মাস রাখা সম্ভব। তারপর অফসিজনে দাম বাড়লে তারা বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এখনকার অবস্থা হয়েছে অন্যরকম। আলুর পাইকারি দাম কম। যে কারণে হিমাগার মালিকরাও আলু কিনছেন না, কিংবা কিনলেও তাদের কাছে কৃষকরা বাধ্য হচ্ছেন পানির দামে বিক্রি করতে।
আখের মত যদি কৃষকরা আলুও সরাসরি কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে পারতো, তাহলে হয়তো অবস্থা অন্যরকম হতো। সরাসরি, বিদেশে রপ্তানির পরিমাণ বাড়লেও একই সুফল পাওয়া সম্ভব। সব ব্যবস্থাই থাকতে পারলে খুব ভালো হতো।
এখানে আমার সহকর্মীরা অনেকে সুইস। আগেরদিন খেতে বসে, তারা আফসোস করছে আলু নিয়ে। আমাদের যেমন দীর্ঘ্য দিন ভাত না খেলে প্রাণ আনচান করে। ওদেরও তেমন আলু না খেলে ভালো লাগে না। বলছিলো, মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হলে আলু সিদ্ধ করে খেয়ে নেয়!
আমাদের সংস্কৃতি ঠিক 'কনজিউমার কালচার' নয়। ফলে নতুন উদ্যোক্তাদের নতুন কোনো পণ্য নিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হয়। এ ভয়েই সহজে নতুন কিছু হয়ে ওঠে না বলে আমার ধারণা। ব্যাপারটা নিয়ে আরো ভেবে দেখতে হবে...
আর এই দেশের নীতিনির্ধারকরা সুদূর ভবিষ্যতেও জনকল্যাণমূখী হবেন কি না নিশ্চিত নই। ব্যবসাবানিজ্যের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকেই হয়তো এগিয়ে আসতে হবে। অবশ্য ব্যবসা বানিজ্যের পরিবেশও নীতিনির্ধারকরা সৃষ্টিহতে দেবেন কি না কে জানে!!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
বিদেশে আলুর চাহিদা সবসময়ই আছে। পরিশ্রম করলে ও আন্তরিক হলে ব্যক্তি/বেসরকারী পর্যায়েও নানান দেশে একটা সাপ্লাই চেইন দাড় করে ফেলা সম্ভব। বোম্বে সুইটস এই কাজটাই করে। আসলে যারা বলেন যে আমাদের দেশে করে খাওয়ার মত কিছু নেই, তারা এই ব্যাপারগুলো জানেন না বা ভাবেন না। সবসময় সরকারের ইচ্ছার উপর ভরসা না করে নিজেরা উদ্দ্যোগী হলে অনেক কিছুই সম্ভব। কেবল আলু নয়, এর আগে সচলায়তনে তোমার মধু ও হিমু ভাইয়ের কচুরিপানা নিয়ে যে লেখা এসেছে সেগুলোও নানান বিচারে পটেনশিয়াল ক্ষেত্র। দেশীয় বিনিয়োগে ইচ্ছুক মানুষের কাছে এগুলি আকর্ষনীয় ক্ষেত্র বলেই আমার ধারণা।
আমার এক প্রাক্তন ছাত্রের বাপ কৃষিজ শিল্পোদ্যোগের সাথে জড়িত ছিলেন। ছাত্রকে একবার বললাম, বাংলাদেশে আলুর চিপসের ব্যবসার ভবিষ্যৎ কেমন? তার বাবার মতে, চিপসের মার্কেট সম্পৃক্ত। রপ্তানির ক্ষেত্রেও তিনি আশাবাদী নন। আমরা হয়তো উৎপাদন করতে পারবো, কিন্তু মার্কেটিঙে নাকি আমরা বেজায় কাঁচা।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর বাঙালি থাকে, আমরা যদি তাদের লক্ষ্য করেও আলুর চিপস রপ্তানি করি, খারাপ হতো না। অন্তত আলুচাষীদের কিছুটা হলেও সুবিধা হতো।
এখানে দেখি কার্টোফেলপুরে বলে এক বস্তু পাওয়া যায়, আলু সেদ্ধ করে আরো হাবিজাবি মিশিয়ে তারপর সেটাকে ঘুঁটে পাউডার বানিয়ে ফেলা হয়। পরে একটু গরম পানি মিশিয়ে দিলেই ইনস্ট্যান্ট আলুভর্তা হয়ে যায়। কষ্ট করে আর আলু সেদ্ধ করে চেপেচুপে ভর্তা বানাতে হয় না। চপ ভাজতে গেলে এই জিনিস বড়ই কাজে আসে। এর শেলফ লাইফও অনেক লম্বা দেখলাম (অবশ্য সেটা প্যাকেজিং টেকনিকের ওপর নির্ভর করে)।
আমরা এই কার্টোফেলপুরে-ও তো রপ্তানি করতে পারি?
মায়ানমারের সাথে নাকি আলু রপ্তানি নিয়ে কথাবার্তা চলে, কোনো অগ্রগতি হলো কি না জানি না।
আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থাপনা এমনভাবে করতে হবে, যাতে হিমাগারের হাঙ্গামাতেই যেতে না হয়। এটা গ্রিড আর জ্বালানি সরবরাহের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে। আলুর প্রক্রিয়াকরণের সময় অনেক কম, এটা আলুর স্বাভাবিক আয়ুর মধ্যেই করে ফেলতে হবে।
আমি একটা জিনিস বুঝি না, আমাদের দেশে কি কোনো কৃষি অর্থনীতিবিদ নেই? তাঁরা কি আলুচাষীদের কোনো ফোরামের আওতায় এনে এই তথ্যগুলো দিয়ে চাষীদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারেন না? আমরা যদি চাহিদার দ্বিগুণ ফলাই, দাম পাবো কীভাবে? অন্তত অর্ধেক আলুচাষীকে আলুর বদলে অন্য কিছু চাষ করতে হবে তো।
মার্কেটিংয়ে আমাদেরকে আসলেই দক্ষ হতে হবে।
আরেকটা ব্যাপার যেটা সব খাদ্যশিল্পের ক্ষেত্রেই অনেকে বাধা হিসেবে মনে করেন। সেটি হচ্ছে, গুণগত মান ও স্বাস্থ্যকর দিক। সেদিন আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল। সে দেশে শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী। খাদ্যশিল্পের কথা উঠলেই সে তার অনাগ্রহের কথা জানালো। তার মতে, খাদ্যশিল্পের ঝুঁকিটা হচ্ছে একবার গুণগত মান নষ্ট হলে তা ভয়ংকর ব্যাপার হয়ে দাড়াতে পারে, মানুষের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলা হয়। এজন্য আইনগত ব্যাপারস্যাপারো আছে যাতে বিনিয়োগকারীরা জড়াতে চান না। কিন্তু, সব শিল্পের জন্যই তো পরিবেশগত, স্বাস্থ্যগত ইত্যাদি ব্যাপারগুলো প্রযোজ্য, তাই না?
পরিবেশের পশ্চাৎ মেরে ছারখার হয়ে চিংড়ি চাষ করতে তো আগ্রহী লোকের অভাব দেখি না। ঐটার রিস্ক তো আরো অনেক অনেক বেশি!
আমি হয়তো বুঝাতে পারি নাই। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আসলে স্বাস্থ্য, পরিবেশ এইসব নিয়ে বিনিয়োগকারীরা ভাবে না। সবার ভাবনা হচ্ছে, অযথা যদি ঝামেলা হয়? চিপ্স খেয়ে মানুষ মরলে তো জেলে যেতে হবে। এইটা টিপিক্যাল ক্ষুদ্র ও মাঝারিমানের বিনিয়োগকারীদের মাইন্ডসেট। রাঘব-বোয়ালেরা তো যা কিছু করেই পার পেয়ে যান। স্বাস্থ্য নিয়া যদি সবাই এতই ভাবতো, তাহলে তো এত নকল জিনিস বের হতো না।
যতটুকু বুঝলাম আলুকে নিয়ে ক্ষুদ্র আর মাঝারী শিল্প গড়ে তুলতে পারলে লাভজনক হতে পারে। প্রায়ইতো দেখি হকাররা রাস্তায়, ট্রেনে, বাসে লোকাল আলুজাত পন্য বিক্রি করেন। এবং এর ভোক্তারাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই তা গ্রহন করেন। যাই হোক এত বড় একটা সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে ভালো হতো। তার জন্যে বোধহয় সরকারেরও কিছু ইনিশিয়েটিভ নেয়া উচিত। আর এ ধরনের লেখাগুলো ছড়িয়ে দিলেও বেশ উপকার হয়। কে জানে কবে কোন বুদ্ধিমানের চোখে পড়বে!!
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আমরা যদি একটু সৃষ্টিশীল এবং উদ্যোগী হই তাহলে এই বাংলাদেশেই অনেক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র আছে যাতে সাফল্য অর্জন সম্ভব। ব্যবসা বললেই তা কেবল পিতৃক সূত্রে প্রাপ্ত কাপড়ের দোকানদারি নয়, নতুন নতুন ব্যবসা আমরা দেশেই করতে পারি, স্বল্প কিংবা মাঝারী বিনিয়োগ করেও।
আমাদের দেশে কৃষক মনে হয় সারা জীবনই ভুক্তভোগী! একবার বেগুন পরেরবার আলু অথবা অন্য কোনবার পেঁয়াজ নিয়ে সঙ্কটে পড়ে যান। সরকার শুধু বাম্পার ফলনের কৃতিত্ত নিয়েই খালাস!
সহমত।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে তুলে ধরার জন্য ফারুক ভাইকে ধন্যবাদ।
love the life you live. live the life you love.
নতুন মন্তব্য করুন